আমার ব্যাগ ভর্তি চিঠি। খুব অগোছালো হাতের লেখায় লেখা মোট একশ তেরটা চিঠি। রোজ গুনে দেখতাম। পড়তে পড়তে চোখ ভিজে যেতো। কোচিং থেকে ফিরে প্রথম কাজ ছিলো ওর চিঠি পড়া এবং যত্ন করে সেই চিঠির উত্তর লেখা। কখনো চিঠির ভেতরে থাকতো একটা শুকনো গোলাপ কিংবা গ্লিটার পেনে আঁকা হিজিবিজি নকশা। প্রতিটা লাইন পড়তাম আর একটা করে হার্টবীট মিস হতো। লেখা এমন আহামরি কিছু না, দিন কিভাবে কেটেছে, কার কার সাথে দেখা হয়েছে, সামনে পরীক্ষা নিয়ে কি ভাবছে আর আমাকে ছোট্ট করে লেখা ভালোবাসি।

হ্যাঁ আমার প্রথম প্রেম। খুব অগোছালো এলোমেলো কিশোর-কিশোরীর প্রেম। সাত মাস পরেই ভেঙে চূর্ণ হয়ে গেলো আমার পৃথিবী। মনে আছে বাথরুমের আয়নায় নিজেকে দেখেও চোখ নামিয়ে নিচ্ছিলাম বারবার, ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠা আমাকে দেখার সাহস আমার ছিলো না। কান্নার শব্দ আম্মু শুনে ফেলবে, এই ভয়ে মুখে হাত চেপে ধরেছিলাম। পানির শব্দে চাপা পড়া কান্নার স্রোত আমাকে ভাসিয়ে নিচ্ছিলো নিরন্তর অন্ধকারে। সন্ধ্যায় আলো নিভিয়ে বসেছিলাম। আম্মু কেমন করে যেন টের পেয়ে গেলো আমি ভালো নেই। বুঝে গেলো তার পনের বছরের কিশোরী মেয়েটা হঠাৎ করে শূন্যতায় হারিয়ে গেছে। অপমানে, যন্ত্রণায়, কুঁকড়ে যাওয়া বাচ্চাটার পাশে তাকে খুব দরকার। আম্মু ঠিকই বুঝেছিলো। তাই খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলো। অভিশাপ দেয়নি, সান্ত্বনা দিয়ে কাছে টেনে নিয়েছিলো। বন্ধুরাও একটু একটু করে প্রলেপ লাগিয়েছিলো আমার পুড়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাসে।

জীবনে ঘুরে দাঁড়িয়েছি, ঝড়ের মত এসেছে নতুন ভালোবাসা। চলার পথে বহুবার মুখোমুখি হয়েছি ওর। ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছে। ধীরে ধীরে বুঝেছি, আমরা দুজন খুব আলাদা তাই এক সাথে থাকা হয়নি। কিন্তু অনুভূতিগুলো তো মিথ্যে ছিলো না। তাই এখনো যখন হঠাৎ কল করে জিগ্যেস করে, 'কেমন আছো?' তখন ভালো লাগে। সেখানে ভালোবাসা থাকে না, থাকে নিছক পুরাতন বন্ধুর আকুতি। টুকটুকে বৌ হয়েছে ওর। ওদের দুজকে বেশ লাগে এক সাথে।

আমাকে কেউ যদি জিগ্যেস করে ভালোবাসা মানে কি, আমি সব সময় যে কথাটা বলি, ভালোবাসার কোনো মানে হয় না। ভালোবাসা সময়ের সাথে সাথে বদলায়, কেউ স্মৃতি হয়ে যায়, কেউ হয় বর্তমান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে মানুষটি হৃদয় জয় করে পাশে থাকে, সমস্ত উষ্ণতা দিয়ে জড়িয়ে থাকে, যে অতীতের ভুলে নিজের শুদ্ধতার ছাপ একে দেয়, সেটাই ভালোবাসা আর অতীতটা ছিলো ভালোবাসার অনুশীলন।

জরুরী হলো চলে যাওয়া সম্পর্কের মাঝে যেন ঘৃণা না থাকে, সুসম্পর্ক না থাকুক অন্তত কখনো দেখা হলে যেন মুখ লুকিয়ে পালিয়ে যাবার মত তিক্ততা তৈরি না হয়। মেয়েটা যেন মাগী আর ছেলেটা যেন প্রতারক না হয়। বন্ধুত্ব না হোক, অন্তত এক টুকরো হাসিতে মিশে থাকে স্বাভাবিক আন্তরিকতা।

6
$
User's avatar
@sumaiyakter posted 3 years ago

Comments

আমারো এরকুম ব্যাগ ভর্তি চিঠি ছিলো।আমিও রোজ কাঁদতাম। এখন আর কাঁদি না মন শক্ত হয়ে গেছে,চিঠি গুলা ও পুরে পেলছি।ভালো আছি এখন খুব ভালো আছি।

$ 0.00
3 years ago