মেইন সুইচ
খালি বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছে মোঃ সাগর,
সকালে বিদ্যুৎ চলে গেছে, কিন্তু তার কারন বুঝতে পারেনি।
কালকে রাতেও এখানে একটা মেইন সুইচটি ছিল। আজ সেটি নাই, বাবার হাতের লাগানো ছিল এটি। বাবার রেখে যাওয়া অনেক স্মৃতিগুলো আস্তে আস্তে সব হারিয়ে যেতে বসেছে, প্রথমে বাবার মেকানিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট গুলো বিক্রি করা হয়েছে। এরপর বাবার রেখে যাওয়া স্মৃতি ঘরটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। পরিবারের সবাইকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। সাগর শহরে ব্যবসা করতো, করোনা মহামারির প্রভাবে ঘরে চলে আসে।
আজ তার খুব মনে পড়ছে তার মায়ের কথা।
সাগর ও তার বড় ভাই ছাড়া সবাই বাড়ির বাইরে।
বড় ভাই পুকুর পাড়ে তিন জনের জায়গা দখল করে একা একা বাড়ি করেছে বউ বাচ্চা দের নিয়ে ওখানেই থাকবে, যদিও জায়গা জমি ভাগ বাটোয়ারা হয়নি এখনো। সব ভাইয়েরা আসলে ভাগ হবে, সাগরের ন্যায্য পাওনা বুঝে নিবে সে আশায় বসে আছে।
বড় ভাইয়ের নতুন বাড়িতে ঘরের পুরাতন মেইন সুইচটি দেখে সাগরের ধাক্কা খাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু সাগর ধাক্কা খায়নি, কারণ সে আসার পর থেকে দেখেছে বড় ভাইয়ের এইসব ছোটলোকি কাজ, আর চুপচাপ সয়ে যাচ্ছে লোকলজ্জার ভয়ে।
সাগরের মা বলতো, দুনিয়াতে কোন কিছু আশা করিসনা পরকালে পাবি। পরের হক খেয়ে দুনিয়াতে মজা লাগলেও আখেরাতে পার হতে পারবেনা।
সাগর একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে খালি বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছে।
খালি বোর্ডের দিকে তাকাতে তাকাতে তার বড় ভাই চলে আসলো, বললো কি দেখছ? সব নিয়ে যাব, এতদিন তোরা শহরে ছিলি, আমি পাহারা দিয়ে রেখেছি সব।
এই সময় চাচার বাড়ির গেইটের ফাঁকে নড়াচড়া দেখতে পেল, বুঝলো ভাই এমন কেন করছে? পেছন থেকে কল কাড়ি নে নাড়ছে!
সাগরের মনে পড়ে গেলো এমন করে ভাইয়ের হাতে ছুরি দিয়ে পাঠিয়েছিল পেছনে লোকানো ঐ ডাইনিটা, একের পর এক অশান্তির জেরে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয় তারা। সেই দিন বড় ভাই ছুরি নিয়ে তেড়ে এসে আঘাত করতে চেয়েছিল সাগরের বড় ভাই ইমরানকে। পাড়ার মানুষ সেইদিন তামাশা দেখেছিল, সাগরের মা খুব সম্মানি ও ধৈর্যশীল মহিলা ছিলেন।
সাগরের মা'তো এই পরিবারের মেইন সুইচ, তিনি যখন টিকতে পারেনি এই পরিবারে সেখানে ধাতব একটি মেইন সুইচ টিকবে কি করে?!
Very nice And important topic