ছাদের এক কোনায় আনমনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে মেয়েটি। ভাবছে মানুষের জীবন কতো অদ্ভুত। মানুষ যা ভাবে তা কখনও পায় না।কতই না স্বপ্ন দেখে মানুষ। সব স্বপ্ন কি পূরণ হয়। কিছু অপূর্ণতা রয়েই যায় তাদের জীবনে।
তার জীবনটাও না কতো অদ্ভুত। কী ভেবেছিলো আর কী পাচ্ছে সে। জীবন কী এভাবেই সারা জীবন পরীক্ষা নেবে তার?
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে দুচোখ ভিজে উঠেছে বুঝতেও পায়নি সে।
শ্যামলা বর্ণের মেয়েটি। কিন্তু চোখগুলো খুব সুন্দর। আর চেহারাটাও খুব মায়াবী। আজ সে কালো রঙের একটা শাড়ি পরেছে। শাড়ি পরতে তার খুব ভালো লাগে। আর খোলা চুলগুলো, বাতাসে যেন এলোমেলো খেলছে।
মেঘলা দিনে তার আকাশ দেখতে খুব ভালো লাগে। তখন আকাশটাকে দেখলে তার মনে হয় তার সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে। আকাশটাকে কখনও কখনও মনে হয় তার মতো। একেবারে শান্ত।
অনেকক্ষন এভাবেই ভেবে চলেছে সে। হঠাৎ পিছন থেকে কারো ডাকে চিন্তার জগৎ থেকে বের হয় সে। পিছনে তাকিয়ে দেখে ২৪/২৫ বছরের একটা মেয়ে হাসি মুখে তার দিকে এগিয়ে আসছে।
"কীরে আপু, কখন থেকে তোকে খুঁজছি। আর তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস?"
"কেন, আজ আবার কী হলো?"
"আজ যা হয়েছে না। সেটা বলার জন্যই এলাম।"
"আচ্ছা, চল নিচে গিয়ে শুনবো।"
মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় সন্তান সামিয়া। আর লামিয়া ছোট। তাদের বাবা জুনায়েদ ইসলাম আর মা তানিয়া ইসলাম। ৩/৪ বছর হলো চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। মাথা গোঁজার মতো যাও একটা ঠাঁই ছিল, তাও পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে হারাতে হয়েছে তাই ভাড়া বাসাই তার একমাত্র ঠিকানা। পরিবারের টানাপোড়েনে চলছে তাদের জীবন। অনার্স শেষ করেই একটা স্কুলে ঢুকে সামিয়া। আর সাথে আছে কয়েকটা টিউশনি। লামিয়াও বসে নেই। পড়াশোনার পাশাপাশি সেও ৩/৪ টা টিউশনি করে। কিন্তু কিছুদিন ধরে সে বুকে একটু ব্যাথা অনুভব করে। যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। ভেবেছিলো কমে যাবে। কিন্তু উল্টো বেড়েই চলছে ব্যাথা। তাই আর সহ্য করতে না পেরে একদিন একাই ডাক্তারের কাছে চলে যায়।
"কয়দিন ধরে ব্যাথা হয় আপনার?"
"৪/৫ মাস ধরে।"
"৪/৫ মাস? তো আপনার তো আরো আগেই আসা উচিত ছিলো।"
"ভেবেছিলাম সামান্য হবে ব্যাথাটা তাই। কিন্তু ভাবতেই পারিনি এটা দিন দিন বেড়ে যাবে।"
"তাই এখন এসেছেন, তাই তো?আপনি তো দেখছি নিজের প্রতি অত্যন্ত কেয়ারলেস। যাইহোক, আপনাকে কিছু ওষুধ দিচ্ছি আর একটা টেস্ট দিলাম। ওষুধগুলো খেতে থাকেন। এরপর ২ সপ্তাহ পর টেস্ট করিয়ে রিপোর্টটা নিয়ে আসবেন।"
"ধন্যবাদ আপনাকে।"
সামিয়া বাসায় গিয়েও কাউকে কিছু বলে না।আর বলবেই বা কি, সংসারই চলছে কোন রকমে। বাসায় এসেই বাবা - মার কথা শুনে---
"মাস শেষই হলো না, অথচ সব টাকাও শেষ হতে চলেছে। কি যে করবো বুঝতে পারছি না।"
"তোমরা সংসার কতোটা কষ্টে চালাচ্ছো যে, দেখেও কিছু করতে পারছি না। আর এই পেনশনের টাকায় কী বা হয়।"
সামিয়াকে দেখে বাবা-মা কথা থামিয়ে দেয়।
"আরে সামু। কখন এলি রে মা?"
"মাত্রই এলাম। কিন্তু তোমাদের এতো চিন্তিত মনে হচ্ছে?"
"তেমন কিছু না। তুই রুমে গিয়ে বিশ্রাম নে।"
সামিয়া তো শুনেছে সবই। তাই আর কথা বাড়ায়নি। তারও হাত যে প্রায় খালিই এখন। কীভাবে কী করবে সে।
এভাবে কেটে গেলো ২ সপ্তাহ।
চলবে.........
Nice post