সর্বপ্রথম বর্ষ গননা শুরু হয় চাঁদের আবর্তন লক্ষ্য করে। চাঁদ পৃথিবীর একটি উপগ্রহ। যা পৃথিবীকে কেন্দ্র আবর্তিত হওয়ার সাথে নিজ অক্ষে কেন্দ্র করেও আবর্তিত হয়। আবার পৃথিবী চাঁদকে সংগে নিয়ে রবিকক্ষ বা রাশিচক্র দিয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
চাঁদ যে সময়ে একবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে ঠিক একই সময়ে নিজের অক্ষকে কেন্দ্র করে একবার আবর্তিত হয়। ফলে চাঁদের এক অংশই সবসময় পৃথিবী হতে দেখা যায়। অর্থাৎ আমারা সবসময় চাঁদের একই অর্ধাংশ দেখি।
আবার এ অর্ধাংশের যে অংশটুকুতে সূর্যের আলো পড়ে সে অংশটুকু আমরা দেখতে পাই। এ আলোকিত অংশটুকুকে চন্দ্রকলা বা তিথি বলা হয়।
চন্দ্রকলার বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়েছে। যেমন- আমাবস্যার পরের রাতে চাঁদ দেখা যায় না। একে প্রতিপদ বলা হয়। প্রতিপদের পরের দিন সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে খুবই সরু একফালি বাঁকা চাঁদ অল্প সময়ের জন্য দেখা যায়। একে দ্বিতীয়ার চাঁদ বলা হয়। এভাবে তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী এবং চতুর্দশীর চাঁদ দেখা যায়। দ্বিতীয়া হতে চাঁদের আলোকিত অংশের পরিমাণ সমানভাবে বৃদ্ধি পেতে পেতে চতুর্দশীতে সবটুকু আলোকিত হয়ে গোলাকার থালার আকৃতি ধারণ করে, একে পূর্ণিমার চাঁদ এবং রাতটিকে পূর্ণিমা রাত বলা হয়। ইতোমধ্যে চৌদ্দ দিন অতিক্রান্ত হয়ে যায়। এজন্য একে শুক্লপক্ষ বলা হয়।
পূর্ণীমার পরদিন হতে চাঁদের ক্ষয় অর্থাৎ আলোকিত অংশের পরিমান সমভাবে কমতে থাকে। এভাবে এক রাতে আকাশে চাঁদ দেখা যায় না। এ রাতকে আমাবস্যা বা আমাবস্যার রাত বলা হয়। এ পক্ষকে বলা হয় কৃষ্ণপক্ষ।
এ চন্দ্রকলার বৃদ্ধি এবং হ্রাস দেখে প্রাচীন কালের মানুষ দিন, মাস এবং বৎসর গননা শুরু করে।
তারা সূর্যাস্তের পর নতুন চাঁদের উদয়ের সময় হতে পরবর্তী সূর্যাস্ত পর্যন্ত এক দিন ধরা শুরু করে।
এভাবে একটি একটি নতুন চাঁদ উদয়ের পর শুক্লা এবং কৃষ্ণপক্ষের পর আবার নতুন চাঁদ উদয়ের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত ২৯ বা ৩০ দিন হয়। একে এক মাস ধরা হয়। এ এক মাসের মধ্যে একটি করে পূর্ণিমা এবং আমাবস্যা থাকে।
এ সময় যেহেতু চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, তাই পৃথিবীর সাথে সাথে সূর্যকেও প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবী প্রতি ৩০ দিন বা ৩০ দিন ৬ ঘন্টায় রাশিচক্রের একেকটি রাশি অতিক্রম করে। যা চন্দ্রের এক মাসের প্রায় সমান। অর্থাৎ, পৃথিবী এবং চাঁদের সূর্যকে একবার আবর্তনে সময় ১২ মাস। তাই ১২ মাসকে এক বৎসর ধরা হয়। তবে দিনের হিসেবে চাঁদের ৩৫৪/৩৫৫ এবং পৃথিবীর ৩৬৫ / ৩৬৬ দিন।
প্রাচীন কালের মানুষ গননায় পারদর্শী ছিল না, তাই তারা নতুন চাঁদের উদয়, বৃদ্ধি এবং হ্রাস দেখে মাস এবং বৎসরের হিসেবে করত। অর্থাৎ, ২৯ / ৩০ দিনে এক মাস এবং ১২ মাসে এক বৎসর।
এ সম্পর্কে কোরআনে সূরা তাওবাহ্ ( আয়াত - ৩৬) উল্লেখ করা হয়েছে - " আকাশ - মন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহ্ বিধানে আল্লাহ্ নিকট মাস গননায় মাস বারটি। "
যেহেতু, এ গননায় চাঁদ- ই মূল, এজন্য একে চান্দ্র বর্ষ বা চান্দ্র সন বলা হয়। এটাই পৃথিবীর প্রথম বর্ষপঞ্জি।
Gained a lot of knowledge about year counting from your article