ছোটগল্প- ঘুণপোকা

14 33
Avatar for Saroj43
3 years ago

মাঝ দুপুর। দিনকাল প্রচুর গরম। মনে হচ্ছে সূর্যের তাপে আগুন ধরে যাবে। মোর্শেদ পাটোয়ারী ভাই বাসে বসে আছেন প্রায় আটত্রিশ মিনিট যাবৎ। আজ অফিসে কাজ নেই তাই দুপুরেই বাসায় ফিরছেন। রাস্তায় বেশ জ্যাম। জ্যাম বলতে ঢাকার প্রধান সড়কে যেসব সিগন্যাল গুলো থাকে সেগুলো। বাস যাত্রীরা সবাই বিরক্ত হয়ে আছে। কেউ কেউ অতিরিক্ত গরমে বাস থেকে নেমে হেঁটেই পথ চলছে। এতো গরমে সবাই অতিষ্ট। মোর্শেদ ভাই চুপচাপ বাসে বসে আছেন। উনার এসবের ভেতর কোনো চিন্তা বা দুঃচিন্তা নেই। দুনিয়াতে কি ঘটছে এখন, সে সব নিয়েও তার মাথা ব্যথা নেই। ঘটতে থাকুক যত ঘটতে পারে।

আচমকা একজন হ্যাংলা রোগা ধরনের একটা লোক এসে মোর্শেদ ভাইয়ের পাশের সিটে বসলো। লোকটার গা থেকে আতরের সুগন্ধি আসছে। গন্ধটা সবারই চেনা, জেসমিনের সুগন্ধি। এতক্ষন পর্যন্ত সবই ঠিক ছিলো। এবার ঘটলো বিপত্তি, অতিরিক্ত সুগন্ধির কারনে মোর্শেদ ভাইয়ের বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে আসবে একটু পরেই। লোকটা আবার পান চিবুচ্ছে। ঠোঁট অন্ধকার লাল হয়ে আছে। মোর্শেদ ভাইয়ের অস্থিরতা দেখে লোকটা হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো, ভাইজানের কি অসুবিধা হইতেছে।

লোকটার মুখে সাধু ভাষা মিশ্রিত কথা শুনে মোর্শেদ ভাই অবাক হয়ে গেলেন। বললেন, না কোনো অসুবিধা নেই।

উনি কোনো রকম ভাবে সহ্য করে বসে থাকলেন। হঠাৎ জ্যামের মধ্যে একজন বয়স্ক লোক বাসে উঠলেন। লোকটা এসে মোর্শেদ ভাইয়ের সিটের কাছেই দাঁড়ালেন। এই সুযোগে মোর্শেদ ভাই বয়স্ক লোকটাকে সিটটাতে বসতে দিয়ে উনি সরে এলেন। মনে মনে হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। এই আতরের গন্ধে উনি খুব বিরক্ত বোধ করছিলেন। বয়স্ক মুরুব্বি লোকটাও খুব খুশি হলেন।

বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় চারটা বেজে গেলো। দুই বেড রুম আর একটা বিরাট ডাইনিং রুমের ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটটা বিরাট এক ডিসকাউন্ট পেয়ে মোর্শেদ ভাই কিনে ফেলেন। উনার বাবা মা থাকেন গ্রামের বাড়ি। মাঝে মাঝে এসে থেকে যান। এই বিশাল ফ্ল্যাটে সে একাই থাকে। শিমুল নামে তার এক চাচাতো ভাই থাকে। তার আবার মাঝেমাঝে উধাও হয়ে যাওয়ার অভ্যাস আছে। যুবক মানুষ। মাথায় সব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা ঘুরে।

রাতে খাবার পর একটা বই নিয়ে বসলেন মোর্শেদ ভাই। বই পড়ার অভ্যাস আগের থেকেই ছিলো। তবে ব্যস্ততার কারণে সব সময় বই পড়া হয় না। আজকে সকালে এক লাইব্রেরীর সামনে দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় চোখে পরে যায়। সোনার পালঙ্ক। সেই বইটা নিয়েই বসলেন।

পড়তে পড়তে রাত প্রায় দেড় টা বেজে গেলো। ঘড়িতে সময় দেখে মোর্শেদ ভাই বইটা রেখে দ্রুত শুয়ে পড়লেন। সকালে অফিসে যেতে হবে। বিছানায় শোয়ার কিছুক্ষণ পর একটা অদ্ভুত আওয়াজ শুনতে পেলেন। আওয়াজটা ধীর গতি থেকে ক্রমাগত বাড়তে লাগলো। মোর্শেদ ভাইয়ের কানে বিষের মত লাগছিলো। কারন চোখটা প্রায় ঘুমে লেগে এসেছিলো। মনে হচ্ছে কেউ গুলি বর্ষণ করছে। আশেপাশে কোথাও বেশ যুদ্ধ লেগে গেছে। নাহ এভাবে আর থাকা যায় না। উনি দ্রুত বিছানা থেকে উঠলেন। বাতি অন করে খোঁজ শুরু করলেন, কোথা থেকে আওয়াজ টা আসছে! অনেকক্ষন পর উনি আবিষ্কার করলেন আওয়াজ টা আসছে বুকশেলফ থেকে। একটা ঘুণপোকা কাঠ কাটছে সেটার কুটকুট ধরনের একটা আওয়াজ আসছে। এই রাতবিরাতে শব্দ টা বেশ প্রকট ভাবে আসছে। রাতের বেলায় এমনিতেও শব্দের মাত্রা থাকে বেশি। মোর্শেদ ভাই অনেকক্ষন বুকশেলফের পেছনের দিকটায় আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিলেন,যেন পোকাটা বের হয়ে যায়। কিন্তু সে তো আর বের হবার না। পোকাটা তার মত কাজ করেই যাচ্ছে। কাঠ কাটছে আর আওয়াজ বের হচ্ছেই। কিছুক্ষন আঙ্গুল দিয়ে টোকানোর পর একটা সময় পোকাটা থামলো। মোর্শেদ ভাইয়ের মনে একটু শান্তনা ফিরে এলো। এরপর উনি টয়লেটে গেলেন। ফ্রেশ হয়ে এসে আবার শুয়ে পরলেন।

অফিসে এসে অল্প কিছুক্ষন কাজ করতেই একটু ক্লান্তি লাগছিলো মোর্শেদ ভাইয়ের। রাতে ঘুম হয়নি ভালো। নিয়ম থেকে একটু অনিয়ম হলেই পরেরদিন খুব কষ্ট পোহাতে হয়। স্বাভাবিক ব্যাপার।

উনি পিয়নকে ডেকে বললেন, ভাই এক কাপ কফি দিও তো।

কফি খেলে হয়তো মাথাটা ফ্রেশ হবে। ঘুমঘুম ভাবটা কেটে যাবে।

এভাবে ব্যস্ততায় দিনটা কেটে গেলো। অফিসের কাজ শেষ করে বের হতে হতে সাতটা বেজে গেলো। তার মানে আজ বাসায় ফিরতে রাত হবেই।

শিমুল বাসায় ছিলো। ওর কাছেও চাবি থাকে। রাতের রান্না টা সেরে সে টিভিতে নিউজ দেখছিলো। রান্নার হাত তার মোটামুটি ভালোই। মোর্শেদ ভাই বাসায় ফিরলেন নয়টার দিকে। একটু দ্রুতই বাড়ি ফিরেছেন। অনেক সময় দশটাও বেজে যায়। এসে দেখলেন শিমুল বাসায় আছে। রান্নাও রেডি। যাক এটা দেখে উনি ভীষন টেনশন মুক্ত হলেন। মনে মনে অনেক খুশি হলেন। গতকাল রাতে ঘুম হয়নি পুরো। আজকে ঘুমিয়ে পুষিয়ে নিতে হবে।

রাতে খেয়ে, কিছুক্ষণ পায়চারি করে। সোনার পালঙ্ক বইটা নিয়ে বসলেন, এগারো পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়া হয়েছিলো। এরপর কিছুক্ষন পড়ার পর বইটা রেখে ঘুমিয়ে পরলেন। সুন্দর ঘুম, সাথে সাথেই ঘুমের জগতে ঢুকে গেলেন।

রাস্তায় অনেক ভিড়। মেশিন দিয়ে রাস্তায় পাথর ভাঙা হচ্ছে। বিকট শব্দ পেয়ে মোর্শেদ ভাই এগিয়ে গেলেন। দেখলেন, একটা মেশিন দিয়ে একজন লোক বড় বড় পাথর টুকরো করছে। পাথর ভাঙার শব্দটা বেশ প্রকট হয়ে আসছে। মোর্শেদ ভাইয়ের কানে বোমার মত বিস্ফোরণ হয়ে ফুটছে, কিন্তু উনি কিছুই বলতে পারছেন না। হঠাৎ উনার ঘুম টা ভেঙে গেলো। দ্রুত লাইট অন করে চারদিকে খুঁজতে লাগলেন কিসের আওয়াজ হয়। সেই বুকশেলফের ঘুণপোকার কাঠ কাটার কুটকুট শব্দ টা। ঘড়িটা দেখে নিলেন একবার। রাত বাজে তিনটা তেত্রিশ। মনে মনে খুব বিরক্ত হয়ে বললেন, শালার ঘুণপোকা। ওর কি কাঠ কাটার আর উপযুক্ত সময় মিললো না। উনি উঠে গিয়ে গতরাতের মত বুকশেলফের পেছনে আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিতে লাগলেন। বেশ কিছুক্ষণ এরকম টোকা দেয়ার পর কাঠ কাটার কুটকুট শব্দটা বন্ধ হয়ে আসলো। শব্দটা বন্ধ হয়ে আসলে মনে একটু শান্তনা ফিরে পেলেন। এরপর ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার বিছানায় ফিরে আসলেন। লাইট অফ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু ঘুম আসছে না। ঘুণপোকা টা আবার কাঠ কাটা শুরু করেছে। আবারও সেই মহাবিরক্তিকর কূটকুট কূট কূট আওয়াজটা শুরু হয়েছে। মোর্শেদ ভাই বিরক্ত হয়ে দ্বিতীয় বালিশ টা দিয়ে কানে চেপে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করলেন। এরকম করতে করতে ভোর পাঁচটা বেজে গেলো। ঘুণপোকার কাঠ কাটাও বন্ধ হয়ে আসলো, মোর্শেদ ভাইও ঘুমুতে পারলেন। তবে বেশিক্ষন নয়। ছয়টায় তাকে উঠে পরতে হলো। যান্ত্রিক শহর সব কিছু হিসেব করে চলতে হয়।

এভাবে পরপর তিন দিন একই রকম ঘটনা ঘটলো। মোর্শেদ ভাই কোনো সমাধান পাচ্ছেন না। ঘুণপোকাটা কোথায় কোন অংশে কাঠ ঠুকছে বোঝা যাচ্ছে না। এদিকে রাতে ঠিক মত ঘুমাতে না পেরে উনার অফিস করতেও সমস্যা হচ্ছে। কাজে মন দিতে পারছেন না। মনিটরে তাকালে চোখে ঝিমুনি আসে। সামনের মাসে জেনারেল মিটিং। কাজ সব গোছানো না হলে বিরাট বিপদ হবে। চাকরি নিয়েও টান দিতে পারে। অপরদিকে শিমুলও তিনদিন যাবৎ বাসায় নেই। সে আবার উধাও হয়েছে। বিপদের উপর মহাবিপদ।

সিনিয়র ম্যানেজার ফয়সাল সাহেব অফিস টাইমের আধা ঘণ্টা আগেই চলে আসেন। এ কারণে তার বেশ সুনাম। উনার বাসা অফিসের বেশ কাছেই। তাই উনার টেনশন কম। উনি বেশ চৌকস ব্যক্তি। সব সময় চোখ কান সজাগ। কে কি করছে বা বলছে সব উনি নিমিষেই বুঝে ফেলেন। বলতে গেলে একজন কর্পোরেট রোবট।

উনি লক্ষ্য করেছেন মোর্শেদ ভাই ঝিমুচ্ছেন। উনিও কোম্পানির একজন সিনিয়র অফিসার। তাই সরাসরি কিছু বলতে পারেন নি। ইশারা ইঙ্গিতে দুবার হাসিমুখেই পিয়ন কে কফি দিতে বলেছেন। মোর্শেদ ভাইও বুঝেছেন যে ম্যানেজারের নজর পরেছে। এই নজর বুলেটের মত তীক্ষ্ণ। অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

অফিস শেষ করে দ্রুত বাসার দিকে রওনা দিলেন না। রাস্তায় হাটলেন আর দোকান, ফুটপাত সবখানে ঘুনপোকা মারার ওষুধ খুঁজতে লাগলেন। কিন্তু আজকে কোথাও মিললো না। এমনিতে সব সময় চোখের সামনেই থাকে। একেই বলে কপাল!

বাসায় ফিরে দেখলেন শিমুল এসেছে। রান্নাও করছে। যাক আজকে একটা বিরাট কাজ থেকে বাঁচা গেল।

রাতে খাবার সময় মোর্শেদ ভাই শিমুলের কাছে জানতে চাইলো, তোর কাছে ঘুণপোকা দমন করার কোনো মেডিসিন আছে রে? মানে খুব সহজেই দমন করা যায় এমন কোনো মেডিসিন বা কীটনাশক আছে নাকি?

শিমুল খেতে খেতে উত্তর দিলো, আপাতত নেই। আর এতো রাতে ব্যবস্থাও করা যাবে না। কিন্তু ঘুণপোকা কোথায়?

আর বলিস না! বুকশেলফে একটা ঘুণপোকা প্রতি রাতে কুটকুট করে কাঠ কাটে। রাতে ঘুমাতে পারি না। কি যে এক যন্ত্রনা।

হুম, খেয়ে একটা সমাধান বের করছি।

শিমুল খাওয়া দাওয়া শেষ করে তার ঘরে রাখা একটা তেলাপোকা মারার স্প্রে ছিলো। সেটা মোর্শেদ ভাইকে দিয়ে বললেন, আপাতত এটা দিয়ে কাজ চালান। কাজ না হলে কাল সকালে একটা ব্যবস্থা করা যাবে। মোর্শেদ ভাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। যাক বাঁচা গেলো। এখন এতে কাজ হলেই হয়! একটা অস্থায়ী সমাধান তো পাওয়া গেলো।

রাতে ঘুমানোর আগে বুকশেলফের পেছনে ভালো করে তেলাপোকা নিধনের স্প্রে করলেন। কীটনাশকের মত একটা ঝাঁঝালো গন্ধে ঘর ভরে গেলো। তাতে অবশ্য উনার তেমন বিড়ম্বনা হচ্ছে না। এরপর একটা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে নিলেন। বেশ কয়েকদিন এই যন্ত্রনায় ঘুম হচ্ছে না। আজকে ঘুম দিতেই হবে। মোর্শেদ ভাই আজ আর বই পড়লেন না দ্রুত শুয়ে পরলেন। অফিসের কাজের কথা চিন্তা করতে করতে কিছুক্ষন এপাশ কতক্ষন ওপাশ হয়ে নীরবে ঘুমের জগতে ডুব দিলেন।

হঠাৎ একটা বিকট শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো। চোখ মেলেই দেখলেন, একটা তেলাপোকা ছুটাছুটি করছে। শিমুলের এক হাতে লাঠি আরেক হাতে স্প্রের বোতলটা। সে তেলাপোকাটাকে মারার চেষ্টা করছিলো সেইজন্যই বোধহয় এরকম বিকট শব্দ হয়েছে। কিন্তু তেলাপোকা আসলো কোথা থেকে? শিমুলই বা ঘরে ঢুকলো কিভাবে? মোর্শেদ ভাই বিস্মিত হয়ে গেলেন! সে শিমুলের দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে আছেন, তার মুখে কোনো কথা নেই। কথা মুখে আসছেও না।

এদিকে শিমুল একবার লাঠি দিয়ে তেলাপোকা তাড়াচ্ছে আবার তেলাপোকা নাশক স্প্রেও করছে। মোর্শেদ ভাইয়ের দিকে একবার তাকিয়ে শুধু বললো, ভাই আপনি ঘুমান। তেলাপোকা ঘুণপোকা সব পালিয়ে ভাগবে। মোর্শেদ ভাই ওর কথা শুনে চুপ করে শুয়ে পরলেন। সাথেসাথে লাইটও অফ হয়ে একদম ঘন অন্ধকার হয়ে গেলো চারিদিক।

এরপরের দিন মোর্শেদ ভাই দুটো ঘুমের ট্যাবলেট খেলেন। গতরাতের কথা মনে করতে লাগলেন। কিন্তু সবটা মনে আসছে না। মনে মনে ভাবলেন, তাহলে মনে হয় স্বপ্নই ছিলো। স্বপ্ন হলেই ভালো। অফিসে এমনিতেই চাপ যাচ্ছে, আর বেশি চাপ নেয়া যাবে না।

বইটা হাতে নিয়ে কয়েক পৃষ্ঠা পড়ার পর তার চোখে ঘুম ঘনিয়ে আসলো। কোন সময় ঘুমালেন মনে নেই। মাঝ রাতে সেই ঘুণপোকার কাঠ কাটার শব্দ কানে যেতেই উঠে পরলেন। উনার চোখে রাজ্যের ঘুম। ঘুমঘুম চোখেই দেখলেন উনার সামনে একটা কম বয়সী ছেলে দাঁড়িয়ে আছে, স্যার ওষুধ ছিটিয়ে দিয়েছি, আর কাঠ কাটবে না।

মোর্শেদ ভাই পুরো হতভম্ব চোখে তাকিয়ে রইলো। এই ছেলেকে খুব চেনা চেনা লাগছে, অফিসের কেউই তো হবে মনে হয়। পাশ থেকে আরেকজন ডাক দিলেন, মোর্শেদ ভাই কাজগুলো শেষ হয়েছে তো?

মোর্শেদ ভাই সেদিকেও তাকালেন। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলেন না। কে এই লোক, চেনাচেনাও তো লাগে। ফয়সাল সাহেবের মতই তো দেখা যায়।

লোকটা আবার বললো, আপনার চোখে অনেক ঘুম, ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে কাজ করা যাবে। এদিকে কাঠ কাটার কুটকুটকূট শব্দটা একটু কমে এসেছে।

মোর্শেদ কিছুই বলতে পারলেন না। চুপচাপ আবার শুয়ে পরলেন।

সকালে বাসের সিটে বসে বেশ বিড়ম্বনায় পরলেন মোর্শেদ ভাই। সিট টা সুবিধার না। তার উপর কানের মধ্যে একটা আওয়াজ আসছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন ড্রিল করার মেশিন দিয়ে লোহা ফুটো করছে। বিরক্তিকর শব্দ। কিন্তু এই রাস্তায় এই কাজ কে করবে? আওয়াজ টা তাহলে কোথা থেকে আসছে? মোর্শেদ ভাই বসেই চারিপাশে খুঁজতে শুরু করলেন। রাস্তায় জ্যাম থাকায় গাড়ি ধীর গতিতে চলছে। ড্রাইভারের সিটের বাপাশে গিয়ার বদলানোর স্টিয়ারিংটা কাঁপছে। কাপার কারনে ঠকঠক ঠক ঠক একটা শব্দ তৈরি হচ্ছে। মোর্শেদ ভাই এক ধ্যানে সেদিকেই তাকিয়ে রইলো। বাসও ধীর গতিতে চলতে লাগলো। এই অবস্থায় বসে থাকতে তার অস্থির লাগছে। মাথাটাও হালকা ধরেছে। অফিসে পৌঁছাতে আরো বিশ ত্রিশ মিনিট সময় লাগবে।

ফয়সাল সাহেব লক্ষ্য করলেন মোর্শেদ ভাই উনার ডেস্কে বসে স্বস্তিতে নেই। আঙ্গুল দিয়ে কিছুক্ষন পরপর মাথার চুলগুলো টানছেন, চোখ কচলাচ্ছেন। তার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে রাতে উনার ঘুম হয়নি। মনে হচ্ছে খুব যন্ত্রণার মধ্যে আছেন।

মোর্শেদ ভাই তার ডেস্কে বসে কাজ করছেন কিন্তু কাজে মনোযোগ দিতে পারছেন না। মাথায় কি যেন এক অসহ্য যন্ত্রনা কাজ করছে। মনে হচ্ছে মাথার ভেতর কিছু একটা ঢুকে গেছে। হাতের কাজ টা অল্প একটু বাকি। এটা শেষ হলেই হয়। মাথাটা কোনো মতে স্থির করে কাজে মন দিলেন। কাজ করতে করতে হঠাৎ তার কানে সেই কুটকুট কূট কূট শব্দটা ভেসে আসলো। মোর্শেদ ভাই খুঁজতে লাগলেন কোথা থেকে আওয়াজ টা আসছে। উনি উনার ডেস্কের উপর নিচ টোকা দিয়ে দেখলেন। কোথাও কিছুই পেলেন না। ফয়সাল সাহেব তার ডেস্কের দিকে এগিয়ে আসলেন। উনি কারো ডেস্কে গেলে সবাই দাঁড়িয়ে যায়।

কিন্তু মোর্শেদ ভাই দাঁড়ালেন না। উনি লক্ষ্য করছেন যে ফয়সাল সাহেব উনার ডেস্কের সামনেই দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু মোর্শেদ ভাই আওয়াজ টা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন।

ফয়সাল সাহেব একটু বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার মোর্শেদ ভাই। এনিথিং রং? কিছু কি খুঁজছিলেন?

মোর্শেদ ভাই উনার দিকে না তাকিয়েই বললেন, তেমন কিছু নয় স্যার। মনে হচ্ছে কোথাও ঘুণপোকা কাঠ কাটছে!

ফয়সাল সাহেব বিস্ফারিত চোখে তার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলেন, ইজ্জতের ইস্যু হয়ে দাঁড়ালো। ঘুণপোকা অফিসে ঢুকলো কিভাবে? মোর্শেদ ভাই আপনি আমার রুমে আসুন তো একটু।

মোর্শেদ ভাই একটু সময় নিয়ে ফয়সাল সাহেবের রুমে গেলেন। ফয়সাল সাহেব বেশ বিরক্ত হয়ে আছেন উনার কাজে এবং কথায়।

মোর্শেদ ভাই বসেন। আচ্ছা বলুন আপনার সমস্যা হচ্ছে কি? বেশ কিছুদিন যাবৎ দেখছি আপনি কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে থাকেন। কাজেও তেমন মনোযোগ দিচ্ছেন না। কোনো সমস্যা হলে বলুন, আমাকে শেয়ার করুন। ভয় বা লজ্জার কিছু নেই।

মোর্শেদ ভাই একবার ফয়সাল সাহেবের দিকে আবার আশেপাশে তাকাচ্ছেন। একদিকে স্থির দৃষ্টি দিতে পারছেন না। বললেন, না ভাই তেমন কিছু না। এই একটু টেনশনে আছি তো তাই।

ফয়সাল সাহেব, সিনিয়র ম্যানেজার। উনাকে এই মাত্র ভাই বললেন তাও উনার সামনে এতে বেশ হতভম্ব হয়ে গেলেন। বুঝতে পারলেন, ব্যাপার টা সুবিধার না। উনি হেসে বললেন, আরে মোর্শেদ ভাই টেনশনের কি আছে এই জীবনে। তা বিয়েশাদী তো মনে হয় এখনও করেননি। দ্রুত করে ফেলুন।

মোর্শেদ ভাইয়ের কানে আবারও সেই কুটকুট শব্দটা ভেসে আসলো। খুব সুক্ষ একটা আওয়াজ। মনে হচ্ছে দূর থেকে শব্দটা ভেসে ভেসে আসছে। উনি আবার খোঁজ শুরু করলেন। ফয়সাল সাহেব উনার খোঁজাখুঁজি দেখে কিছুটা শঙ্কিত হয়ে উঠলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার কি হয়েছে?

স্যার ঘুণপোকা মনে হয় কাঠ কাটছে। এটা বলেই উনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। এরপর নিজের ডেস্কে ফিরে গেলেন। কানে কুটকুট শব্দটা ভেসে আসতে লাগলো। উনার চোখের সামনে সব কিছু কেমন যেন খন্ড খন্ড চিত্রের মত হয়ে আসছে। উনার পাশের ডেস্কে ইয়াং বয়সী আতিক নামের ছেলেটা জিজ্ঞেস করলো, স্যার কোনো সমস্যা হচ্ছে।

ওর কথায় সৎবিত ফিরে পেলেন। উঠে ওয়াশরুমে গেলেন। মুখ আর মাথা ভালো করে পানি দিয়ে ধুলেন। ফিরে এসে বাকি কাজ টা সেরে ফেলে আতিককে কাজটা বুঝিয়ে দিলেন, আতিক ভাই আমার মাথা ধরেছে বেশ। আপনাকে একটা দায়িত্ব দিচ্ছি। কাজটা একটু চেক করে দেখবেন কোনো ভুল-ত্রুটি হয়েছে নাকি। এরপর এটা সিনিয়র ম্যানেজার স্যার কে দিয়ে দিবেন। আমি বের হচ্ছি। বাসায় চলে যাবো।

আতিক বোকার মত তাকিয়ে আছে। সে কাজ টা বুঝে নিলো ঠিকই কিন্তু মোর্শেদ ভাইয়ের হাল দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না।

মোর্শেদ ভাই কাজটা বুঝিয়ে দিয়ে খুব দ্রুত বেরিয়ে গেলো। আতিক তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। অফিসের আর বাদ বাকি কর্মকর্তারা সবাই যে যার মতন ব্যস্ত। সিনিয়র ম্যানেজারও ব্যস্ত।

রাস্তা বেশ ফাঁকা। বাসে করে বাসায় পৌঁছাতে বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু মোর্শেদ ভাই অর্ধেক রাস্তায় বাস থেকে নেমে হাটা শুরু করলেন। মনে মনে ভাবছিলেন, হাটলে মনে হয় শরীর টা ক্লান্ত লাগবে। রাতে ঘুম হবে ভালো। মাথার ভেতর কূটকুটে শব্দটাও বেরিয়ে যাবে। মোর্শেদ ভাই শহরের পথ ধরে সোজা হাটতে লাগলেন।

বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলো। বাসায় ঢুকে লাইট অনে করে সোফায় বসে পরলেন। জুতো টা কোনো মতে খুলে রাখলেন। তার শরীর ক্লান্তিতে ছেড়ে দিয়েছে। আজ আর শিমুল আসেনি। মনে হয় আবার উধাও হয়ে গেছে। মোর্শেদ ভাই খেয়াল করলেন ছোট টেবিলের উপর একটা শিশি তার নিচে একটা চিরকুট লেখা, ঘুণপোকা মারার ওষুধ। খুব ভালো কাজ করে। রাতের খাবার তৈরি করা আছে।

মোর্শেদ ভাই ওষুধের শিশি টা নিয়ে ঘরে গেলেন। ওটাকে বুকশেলফের এক কোনায় রেখে দিলেন। এখন আর কিছু করতে ইচ্ছে করছে না। মাথাটা ধরে আছে। শরীরও বেশ ক্লান্ত। অফিসের প্যান্ট শার্ট পরেই শুয়ে পরলেন বিছানায়। শোয়া মাত্রই উনি অতল ঘুমে ডুবে গেলেন।

মাঝ রাত, হঠাৎ কুটকুট কুট কুট... শব্দটা প্রকান্ড ভাবে কানে আসতেই ঘুমটা ভেঙে গেলো। সময় অনেক হয়েছে। কিন্তু কটা বাজে বলা মুশকিল। মোর্শেদ ভাই ঘড়ি দেখার চেষ্টা করলেন। একি, ঘড়িটার এই অবস্থা কেন? সব ডিজিট গুলো উল্টানো পাল্টানো। কে করেছে এই কাজ। মোর্শেদ ভাই উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করলেন, এই কাজ টা কে করেছে, কে?

কোনো সাড়া শব্দ নেই। মোর্শেদ ভাই আবার উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করলো, কে করেছে এই কাজটা। আচমকা মিরাকল ঘটলো। সব ধরনের শব্দ বন্ধ হয়ে গেলো। চারিপাশে একদম নিস্তব্ধ হয়ে আসলো। আলোও কমে আসলো। ঠিক যেমন জোছনার আলোর মত। মোর্শেদ ভাই দেখলেন একটা মানুষের আকৃতির মত দেখতে কিছু একটা তার সামনে বসে আছে। বসে বসে চেয়ারটা দোলাচ্ছে। কিন্তু সেটা মানুষ নয় বুঝাই যায়। কেমন যেন কালো এক ধরনের পোকায় ঘেরা একটা মানবীয় আকৃতির কিছু একটা বসে আছে তার সামনে ঠিক চার পাঁচ হাত দূরে যেখানে বুকশেলফ টা রাখা। পোকার মত আবার পোকা মনেও হচ্ছে না। ঝিমঝিম একটা শব্দ ভেসে আসছে কেবল। আলো স্বল্প তাই বুঝাও মুশকিল।

মোর্শেদ ভাই জিজ্ঞেস করলেন কে আপনি? কিন্তু কোনো উত্তর আসলো না। সে তার মত বসে চেয়ার দোলাচ্ছে। মোর্শেদ ভাই বসা থেকে উঠতে পারছেন না। সামনের দিক টা একটু ঝুকে চোখ দুটো আঙ্গুল দিয়ে কচলিয়ে ভালো করে দেখার চেষ্টা করলেন, লোকটা আসলে কে! মোর্শেদ ভাইয়ের ভয় হচ্ছে না কিন্তু বেশ অস্থির লাগছে। মাথার উপর ফ্যানও ঘুরছে না। অনবরত ঘামতে শুরু করলেন। একি এ তো দেখি ফয়সাল সাহেবের মত দেখতে। আবার একটু ভালো করে দেখার চেষ্টা করলেন, নাহ নাহ না, একে তো কোম্পানির ডিরেক্টরের মত দেখাচ্ছে। এ কিভাবে সম্ভব? উনি তো দেশের বাইরে আছেন।

উনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, এইযে মিস্টার কে আপনি?

বলার সাথে সাথেই ঝিমঝিম শব্দটা বেড়ে গেলো। মোর্শেদ ভাই উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না। বসে থাকা অবস্থায় আকৃতিটা উনার কাছে একটু এগিয়ে আসলো, মনে হলো যেন স্কেলেটরের মত অটোমেটিক সামনে এগিয়ে আসছে, কোনো শব্দ বিহীন। মোর্শেদ ভাই তাকিয়ে আছেন। এখন উনার মনে হচ্ছে স্কুলের সেই বিজ্ঞানের শিক্ষকের মত, নামটা মনে আসছে না। কিন্তু উনি এখানে কি করে এলেন? উনি তো অনেক দিন আগেই মারা গেছেন। লোকটা দীর্ঘদিন লিভারের রোগে ভুগছিলেন। আশ্চর্য্য এসব কথা মনে আসছে কেন? তাও এই সময়।

আকৃতিটা আবারও কিঞ্চিৎ কাছে এগিয়ে আসলো। এবার মোর্শেদ ভাই তাকিয়ে দেখে পুরো হতভম্ব হয়ে গেলেন। এসব কি ঘটছে! এবার লক্ষ্য করে দেখলেন গ্রামের সেই কমিশনারের মত দেখতে একদম অবিকল। লোকটার গাছ থেকে একবার মোর্শেদ ভাইয়ের বন্ধুরা মিলে নারিকেল চুরি করেছিলেন। আরে কমিশনার সাহেবও তো বেঁচে নেই। উনি যেন কিভাবে মারা গিয়েছিলেন? মোর্শেদ ভাই মনে করার চেষ্টা করলেন। মনে আসছে না। মাথাটা আবার খুব করে ধরলো। অসহ্য লাগছে। জায়গা থেকে নড়তেও পারছেন না। আকৃতিটাকে জিজ্ঞেস করলেন, কে আপনি কে আপনি? কথা বলুন। প্লিজ।

পরক্ষনেই সেই বুকশেলফ থেকে আবারও কুটকুট কূট কূট শব্দ টা আসতে লাগলো। ঘুণপোকার কাঠ কাটার শব্দ। এটাই ঘুণপোকার কাজ। কাঠ কাটা। কাটা নয় ফুটো করা। ওই তো কাছেই ওষুধটা ছিলো। ওটা দিতে মনে নেই। শব্দটা মোর্শেদ ভাইয়ের কানে বিষের মত বাজতে লাগলো। খুব অসহ্যকর অবস্থা। উনি বসে থাকতে পারছেন না। তার অস্বাভাবিক লাগছে, অস্থির লাগছে। মাথা দিয়ে ঘাম ঝরছে না এখন। মনে হচ্ছে উনার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আকৃতিটার দিকে তাকিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেন, প্লিজ বলুন কে আপনি।

পোকায় মোড়ানো আকৃতিটা সেই আগের মত নেই। বদলে গেছে মুহূর্তেই। বদলে একটা সত্যিকারের মানুষের রূপ নিয়েছে।।কিন্তু চেহারা বুঝার ক্ষমতা নেই। ক্ষীণ আলোক। বাইরে থেকে কেউ মনে হয় ডাকছে! মোর্শেদ ভাই দরজা টা খুলুন। শিমুলের গলাই তো মনে হচ্ছে! কিন্তু সে এতো রাতে কোথা থেকে আসলো? ঘড়িতে কয়টা বাজে এখন? সেটাও দেখার উপায় নেই। আচমকা আলো টা বেড়ে গেলো। দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলেন। সময়ের কাটা তিনটায় এসে থেমে আছে। শুধু একটাই কাটা। আর কাটা গুলো নেই। আশ্চর্য্যজনক বিষয়! ভাবতে ভাবতে দেখলেন উনার সামনে এক লোক বসে আছে। লোকটাকে তার চেনা চেনা লাগছে। মুহূর্তেই মোর্শেদ ভাই চমকে উঠলেন, লোকটার মুখাকৃতি অবিকল মোর্শেদ ভাইয়ের মতই দেখতে!

অবচেতন মনে উনি ভাবতে লাগলেন, এগুলো কি সত্যি ঘটছে নাকি সব কল্পনা?

রাত বাড়ছে কি স্থির হয়ে আছে বুঝাও যাচ্ছে না। বাইরে কোনো বাতাস নেই। চারিদিকে সব নিস্তব্ধতায় মোড়া। কুটকুট কূট কূট শব্দটাও বন্ধ হয়ে গেছে। মোর্শেদ ভাইয়ের চোখ দুটোও গভীর এক ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আসছে।

10
$ 0.00
Avatar for Saroj43
3 years ago

Comments

Wow like seriously, I don't understand this language but with all this article, am really sure in interesting, good 👍. More elbow to your shoulder, let have a better conversation, don't forget to subscribe me, like and comment with me Mr sajo

$ 0.00
3 years ago

Ok dear thanks

$ 0.00
3 years ago

খুব ভালো হইছে

$ 0.00
3 years ago

Thanks

$ 0.00
3 years ago

অনেক সুন্দর গল্প। এইভাবে লেখা চালিয়ে যান

$ 0.00
3 years ago

Thanks

$ 0.00
3 years ago

গল্পটি অনেক ভালো লেগেছে। খুব সুন্দর করে গুছয়ে লিখেছেন।

$ 0.00
3 years ago

Thanks

$ 0.00
3 years ago

Nice story

$ 0.00
3 years ago

Thanks

$ 0.00
3 years ago

Excellent

$ 0.00
3 years ago

Thanks

$ 0.00
3 years ago

খুব ভাল ও ভিন্ন ধরনের সুন্দর একটি গল্প।চালিয়ে যাও প্রিয় বন্ধু😍

$ 0.00
3 years ago

Thanks

$ 0.00
3 years ago