কেটে গেছে বেশ কয়েকটা বছর।ইয়ান আজ ডাক্তারি পড়ছে।স্পর্শাও এখন কলেজের গন্ডি পার করেছে।ভার্সিটিতে ভর্তির জন্য কোচিং করছে স্পর্শা।ইয়ানের ভার্সিটি আর স্পর্শার কলেজ প্রায় কাছাকাছিই।যাতায়াতের সুবিধার জন্য স্পর্শার কলেজের কাছে দুইটা রুম ভাড়া করে থাকছে ইয়ান আর স্পর্শা।ছোট্ট একটা সংসার হয়েছে দুজনের।হ্যাঁ টুনাটুনির সংসার যদিও ওরা এখনো আগের মতোই আছে।স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা আজও ওদের মাঝে অনুপস্থিত।তবে বন্ধুত্বটা যেন আবার ফিরে এসেছে ওদের মাঝে।ইদানীং স্পর্শার পেছনে রিয়াদ নামের একটা ছেলে ঘুরছে।এই বিষয়টা ইয়ানের চোখ এড়ায়নি।ছেলেটার হাব ভাবে বোঝা যাচ্ছে ছেলেটা স্পর্শাকে পছন্দ করেছে।ইয়ান শুধু এই অপেক্ষায় আছে ছেলেটা স্পর্শাকে কবে প্রপোজ করবে!যেইদিনই প্রপোজ করুক সেইদিন ছেলেটা বুঝতে পারবে স্পর্শা কি ধরনের মেয়ে।এই কয়েকবছরে স্পর্শাকে ভালোই চিনেছে ইয়ান।এই মেয়ের সেকেন্ডে সেকেন্ডে মুড চেঞ্জ হয়।তবে রোমান্টিকতাটা এই মেয়ের মধ্যে নেই।তাই তো আজ পর্যন্ত এই মেয়েকে দিয়ে একটাও প্রেম হয়নি।যদিও স্পর্শার অন্যছেলের সাথে সম্পর্ক ইয়ান কিছুতেই মেনে নিবে না।
স্পর্শা ফ্রেশ হয়ে এনাকে ফোন দেয়।হ্যাঁ সেই এনা। স্পর্শার স্কুল জীবনের বন্ধু।
-কিরে স্পর্শা খবর কি?
-এই তো সো সো।আইমিন মুটামুটি।
-রিয়াদের খবর কি?ও তোকে প্রপোজ করছে?
-করলেই কি?আগের গুলার মতো এইটাকেও বিদায় করবো।এই নিরামিষ মাইন্ড নিয়ে আমার রিলেশন হবে নাকি?
-ইয়ান ভাইয়া জানে নাকি এই বিষয়টা?
-জানবেনা কেন?এখন কথা শেয়ার করার মানুষ নাই।জানিসই তো পেটে কথা থাকে না।প্রতিদিন কি হয় সব ওকে বলে দেই।
ফোনের ওপাশ থেকে আচমকা অট্টহাসিতে হেসে উঠে এনা।স্পর্শা এনার এই হাসির কারণ কিছুতেই খুঁজে পায় না।
-কিরে হাসতেছিস কেন?
এনা উত্তর দেয় না।ফোনের ওপাশ থেকে অনবরত সে হেসে যাচ্ছে।স্পর্শা এবার এনাকে ঝাড়ি দেয়।ঝাড়ি দিয়ে বলে,,,
-এই বলদ!হাসতেছিস কেন বল!
-তোদের কাহিনী মনে পড়ছে তাই হাসি আসলো!আগে কেমন ছিলো তোদের রিলেশন মাঝখানে কেমন হলো আর এখন কেমন হয়েছে!পুরাই সিনেমার কাহিনী।সিগারেট খাওয়া নিয়ে যে কাহিনী হইছিলো!আল্লাহরে।বাই দ্যা ওয়ে ইয়ান ভাইয়া পরে সিগারেট খাওয়া ছাড়ছে?
-ছাড়তে চায় নাই।কিন্তু ছাড়তে বাধ্য হইছে।
-কি করছিলি?
-সিগারেটের ফিল্টারে মরিচ মাখায় রাখতাম!মুখে নিলেই জ্বলতো।পরে বাধ্য হয়ে ছাড়ছে।তুই ই বল।ডাক্তারি পড়তেছে আবার সিগারেট খায়।এই সিগারেট খোর ডাক্তার কি না পেশেন্টকে বলবে,আপনার ধুমপান করা যাবে না!কেমন দেখায় না?
-শয়তানি বুদ্ধি তোর মাথায় গিজগিজ করতাছে।তা টুনির বাপ কি ইয়ান ভাইয়াকেই বানাবি নাকি ডিভোর্স!
স্পর্শার লম্বা শ্বাস নেয়।তার পর বলে,,,
-আমি না দোটানায় আছি।একদিক দিয়া আমি বিয়েটা এখনো মানি না।আর অন্যদিক দিয়া ইয়ান ভাইয়াকে অন্য মেয়ের সাথে দেখলে আমার কেমন জানি লাগে!
-ওমাগো!ইয়ান ভাইয়ার প্রতি দুর্বলতা!
-কি জানি!কেমনে কি!
এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ আসে।দরজার ওপার থেকে আওয়াজ আসছে
-আপু দরজা খুলো।
স্পর্শা গিয়ে দরজা খুলে।ওর ছাত্রী এসেছে।পাশের বাসার মেয়েটা।ক্লাস ওয়ানে পড়ে।নাম ফুল।একেবারে পাকনা বুড়ি।এখনকার বাচ্চা তো!তাই এত পাকনা!স্পর্শা কল কেটে দেওয়ার আগে এনাকে বলে,,
-আমি পড়াবো এখন।পরে কথা বলবো নি।আল্লাহ হাফেজ
-আল্লাহ হাফেজ
স্পর্শা কল কেটে দেয়।ফুলকে এ বি সি ডি লিখতে গিয়ে রান্না ঘরের দিকে যায়।কিছুক্ষণ পর পুডিং নিয়ে আসে।ফুলকে খাইয়ে দিয়ে বলে,,
-দেখোতো আপু কেমন হয়েছে?
এই মেয়েটাকে খাইয়ে স্পর্শা খুব আনন্দ পায়।ফুল হচ্ছে স্পর্শার রান্নার বিচারক।আগে স্পর্শা কিছুই রান্না করতে পেতো না।প্রথম দিকে এসে সেই হুলুস্থুল কান্ড হয়েছে। সেগুলো মনে পড়লে এখন হাসিতে পেট ফেটে যায়।
ইয়ান ভার্সিটি থেকে এসে দেখে স্পর্শা জানালায় পা দিয়ে বিছানায় শুয়ে কানে ইয়ারফোন গুজে গান শুনছে।ইয়ান আর কিছু বলে না।ফ্রেশ হয়ে ফ্রীজ খুলে খাবার বের করার জন্য।এই বাসায় উঠার পরে মিসেস নীলার আর মিসেস ইরা ওদের জন্য রান্না করে পাঠিয়ে দিয়েছিলো।যাতে ওদের কোনো অসুবিধা না হয়।গরম করবে আর খেয়ে উঠবে।শুধু ভাতটা রান্না করতে হবে।আজ দুইদিন হলো এই বাসায় শিফট করেছে স্পর্শা আর ইয়ান।ইয়ান খাবার গরম করে ভাত খুজতে থাকে।কিন্তু পায় না।স্পর্শার কান থেকে ইয়ারফোন টান দিয়ে খুলে বলে,,
-এই ভাত রান্না করো নাই?
-ভাত?ভাত খাবো কে?
-আমি।খুদা লাগছে।ভাত কই রাখছো বলো।
-ইয়ে মানে,,,
-কি?
-আমি তো ভাত রান্না করতে পারি না।
-কি?
স্পর্শার মুখে এমন কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ে ইয়ান।মেয়ে বলে কি?সে ভাত রান্না করতে পারে না?দুপুর ৩টা বাজে।তাহলে তো স্পর্শাও খায় নি।ইয়ান আবার বলে,,
-ভাত রান্না করতে পারো না তো দুপুরে কি খাইলা?
-নুডলস খাইছি।খুব ভালো বানাই আমি নুডলস।সেই মজা লাগে।
-নিজে তো খাইছো!আমার যে খুদায় পেটে ইঁদুর দৌড়াইতেছে তার খবর রাখো?
-দৌড়াইতেছে ভালো কথা।নুডলস বানায় খান।
-নুডলস খেয়ে দুপুর চলে?সেই কোন সকালে খেয়ে গেছি।
-আমি কি করবো আমি তো ভাত রান্না করতে পারি না।
ইয়ান হেঁচকা টান দিয়ে স্পর্শাকে তুলে।আর বলে,,
-আসো তোমায় ভাত রান্না শিখাই।কালকে থেকে ভাত রান্না করবা!
-শিখাইতে লাগবো না। ইউটিউব আছে।ওয়েট করেন আপনি।
-যা করবা তাড়াতাড়ি করো।
স্পর্শা চাল ধুয়ে কড়াইতে বসায়।মনে মনে বলে,,
-ইউটিউব!আমার এম্বি নাই আমি ইউটিউবে কিভাবে দেখবো ভাত রান্না।কমন সেন্স থেকে বানাইতেছি।চাল সেদ্ধ হইলেই হলো।
চাল কিছুটা সেদ্ধ হলে স্পর্শা চামচ দিয়ে বারতি পানি তুলে ফেলে দেয়।মনে মনে নিজেকে নিয়ে খুব গর্ব হচ্ছে স্পর্শার!আজ সে ভাত রান্না করছে।কত বড় হয়েগেছে সে!ভাত রান্না হয়ে গেলে কড়াই সহ গরম ভাত নিয়ে ইয়ানের সামনে হাজির হয় স্পর্শা।কড়াইতে ভাত দেখে ইয়ান আকাশ থেকে পড়ে।
-কড়াইতে ভাত?কড়াইতে কেউ ভাত রান্না করে?
-খাওয়া গেলেই হইছে।খুদা লাগছে চুপচাপ খান।আমি গান শুনি।
খেতে গিয়ে ইয়ান দেখে চাল আধ সেদ্ধ হয়েছে।স্পর্শাকে আবার ডাক দেয় ইয়ান।স্পর্শা ইয়ানের কাছে গিয়ে বলে,,
-কি হয়েছে?
ইয়ান আর কিছু বলে না।জোর করে স্পর্শাকে ভাত খাইয়ে দেয়।স্পর্শা ভাত মুখে নিয়ে পুরো বোকা বনে যায়।থ মেরে ইয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে।তা দেখে ইয়ান বলে
-কি বুঝলা?
স্পর্শা মুচকী হাসি দিয়ে বলে,,
-চাল হাফবয়েল হয়েছে।কষ্ট করে একটু খেয়ে নেন।ফার্স্টটাইম তো!পরে ইনশাআল্লাহ ঠিক হবে।
চলবে,,,,
Nice post