মার্কিন যুক্তরাষ্টে এক কৃষ্ণাঙ্গের বিনা অপরাধে ৩৬ বছর জেল-কাটার গল্প।
১৯৮২ সালের ৯ ডিসেম্বর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা রাজ্যের ব্যাটন রুজ শহরে জেনিফার থম্পসন নামে এক শ্বেতাঙ্গ নারী নিজ বাসায় ধর্ষণ এবং ছুরিকাঘাতের শিকার হন। সেই অপরাধে অভিযুক্ত হন ২২ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ আর্চি উইলিয়ামস। যদিও ঘটনার সময় তিনি নিজের বাসায় ঘুমাচ্ছিলেন। এমনকি যিনি ঘটনা ঘটিয়েছিলেন তার আঙুলের ছাপের সাথে উইলিয়ামসের আঙুলের ছাপও মেলেনি। কিন্তু থম্পসন তাকেই ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত করেন।
কারণ সেই নারী বলেছিলেন ধর্ষকের কাঁধে পুরনো ক্ষতের দাগ আছে। এরপর যখন উইলিয়ামসের শার্ট খুলতে বলা হয় তখন দেখা যায় তার কাঁধেও ক্ষতের দাগ। তখন তাকে ধর্ষণ এবং হত্যা চেষ্টার অপরাধে যাবজ্জীবন জেল দেওয়া হয়। কিন্তু উইলিয়ামস একে-তো কৃষ্ণাঙ্গ, সেই সাথে গরিব। মামলায় লড়ার মতো সামর্থ্য তার ছিলো না। যার ফলে তার জেলে কেটে প্রায় ৩৬টি বছর।
জামিনের অযোগ্য সাজা হওয়ায় তার পক্ষে এই সময় একবারের জন্যও জেলের বাইরে আসার সুযোগ হয়নি। উইলিয়ামসের মা ছেলের সাথে দেখা করার জন্য বাসা পরিবর্তন করে জেলখানার কাছাকাছি চলে যান। তিনিও ১৯৯৯ সালে মারা যান। আর ২০০৩ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি একা হয়ে যান উইলিয়ামস। জেলখানায় তার সাথে দেখা করতে আসার মতো আর কেউ ছিলেন না। কিন্তু তিনি আশা হারাননি। তার বিশ্বাস ছিল তিনি একদিন ন্যায় বিচার পাবেন।
১৯৯৫ সালের মার্চে এক দশকের বেশি সময় জেলে-কাটানোর পর উইলিয়ামস তার হাতে লেখা একটি নোট 'ইনোসেন্স প্রজেক্ট' এর প্রতিষ্ঠাতা বেরি শেকের কাছে পাঠান। তবে এরপরও তিনি সহসা মুক্তি পাননি। তাকে লড়াই করতে হয়েছে আরো দুই যুগ। ১৯৯৯ সালে উইলিয়ামস আরো একবার তার হাতের ছাপ মিলিয়ে দেখার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু প্রসিকিউটর তার সেই অনুরোধ আমলে নেননি। এদিকে তিনি গরিব হওয়ার কারণে কোনো আইনজীবীও তার পক্ষে লড়াই করেনি। অপরদিকে ধর্ষণের শিকার হওয়া সেই নারীর স্বামী ছিলেন বেশ প্রভাবশালী।
উইলিয়ামস যে অভিযোগে ৩৬ বছর জেল-কেটেছেন তার প্রকৃত অপরাধী ছিলেন স্টিফেন ফোর্বস নামের এক ব্যক্তি। যিনি উইলিয়ামসের সাথে একই জেলেই ছিলেন। ফোর্বস নিজের মুখেই কমপক্ষে পাঁচটি ধর্ষণের কথা শিকার করেছিলেন। কিন্তু তিনি ১৯৯৬ সালে মারা গেলেও মুক্তি মেলেনি উইলিয়ামসের। কারণ ফোর্বস যে সেই ধর্ষণের সাথে জড়িত ছিলেন তা খোলাসা করে বলে যাননি।
পরবর্তীতে ইনোসেন্স প্রজেক্টের আইনি সহায়তায় ২০১৯ সালে মার্চে আরো একবার আঙুলের ছাপ মিলিয়ে দেখা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ডেটাবেস থেকে বিচারক নিশ্চিত হন এই অপরাধের সাথে উইলিয়ামস জড়িত নন। জড়িত ছিলেন সেই ফোর্বস। অবশেষে ৫৮ বছর বয়সে মুক্তি পান উইলিয়ামস। কিন্তু তার জীবন থেকে হারিয়ে যায় ৩৬টি বছর। যার মূল্য হিসেবে প্রদান করা হয়েছে আড়াই লাখ ডলার। কিন্তু জীবনের এতগুলো বছরের মূল্য কী কখনো অর্থ দিয়ে নির্ধারণ করা সম্ভব?
বিশ্বের প্রতিটি দেশেই আইন তৈরি করা হয় অভিজাত, ধনী এবং সংখ্যাগরিষ্ঠদের স্বার্থে। যুক্তরাষ্ট্রকে তার ব্যতিক্রম ভাবার কোনো সুযোগ নেই। শুধু আমেরিকা নয়। কালো রঙের মানুষের প্রতি নাক সিটকানোর স্বভাব প্রত্যেক সাদা চামড়ার মানুষের আছে। ইউরোপের ফুটবলে কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলারদের কলা দিয়ে ঢিল ছুড়ে বানর হিসেবে ব্যঙ্গ করা হয়। বালোতেল্লির মতো উগ্র স্বভাবের মানুষও বর্ণবাদের শিকার হয়ে বাচ্চাদের মতো কেঁদেছেন। অথচ তারাই মানবতার গল্প শোনায়।
বর্ণবাদ নিয়ে জিম্বাবুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে বলেছিলেন,,
এ-কোনোদিন যাবার নয়। যতোদিন সাদা গাড়ির চাকা থাকবে কালো, যতোদিন সাদা হবে বিয়ের পোশাক আর কালো হবে মৃত্যুর পোশাক। যতোদিন কালো থাকবে শোকের আর সাদা হবে শান্তির প্রতীক।
know.. Many people are in prison without doing any crime... Maximum people are in the prison for their crime. I love your article. Thank you so much. I want more article