গল্পঃ প্রতিশোধ (২য় পর্ব)
জাফর চৌধুরি বাড়িতে যেয়ে রাইফাকে ডাকে,
- মা রাইফা?
- জ্বি আব্বা
- একটা কথা জিজ্ঞেস করবো সত্যি করে উত্তর দেবে?
- কি কথা আব্বা?
- রাতুল এর সাথে তোমার কি সম্পর্ক?
জাফর চৌধুরির এই কথা শুনে রাইফা ভয় পেয়ে যায়। এবং ভয়ে ভয়ে কাপা গলায় বলে,
- কেন আব্বা হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?
- এতো কথা না বলে যা বলছি তার উত্তর দাও।
- কেন আব্বা আপনি তো জানেনই রাতুল আমার ছোট বেলার বন্ধু।
- প্রথমেই বলছি মা মিথ্যা কথা বলবে না। ও কি তোমার শুধু বন্ধুই নাকি আরো অন্য কোনো সম্পর্ক আছে?
- আর কি সম্পর্ক থাকবে আব্বা। ও তো শুধু আমার বন্ধুই।
- আচ্ছা ঠিক আছে যাও এই বন্ধুত্ব যেনো শুধু বন্ধুত্বই থাকে তার চেয়ে বেশি কিছু যেনো আর না হয়।
রাইফা আর কোনো উত্তর না দিয়ে তার রুমে চলে গেলো। ভাবতে লাগলো আব্বা হঠাৎ এসব জিজ্ঞেস করলো কেন? এসব বলার মানে কি? তাহলে কি উনি আমাদের সম্পর্কের সত্যিটা জেনে গেলো?
পরের দিন রাতুল এবং রাইফা ইউনিভার্সিটিতে গেলো। এবং রাইফা রাতুলকে তার বাবার কথা সব খুলে বললো। রাতুল এই কথা শুনে অনেক ভয় পেয়ে যায়। কারন রাইফার পরিবার এবং বাবার ভয়েই রাতুল প্রথমে তার সাথে প্রেম করতে রাজি হয় নাই। রাতুলের পরিবার গরিব হলেও জাফর চৌধুরি রাতুলকে খুব স্নেহ করতো এবং রাতুলও তাকে খুব শ্রদ্ধা করতো। রাইফার বাবা যদি আমাদের কথা সত্যিটা জেনে যায় তাহলে কিভাবে তার সামনে মুখ দেখাবো? কিভাবে তার সামনে যাবো? আমাদের কথা জানার পর সে আমার সাথে কেমন আচরণ করবে? আমাকে কি আস্ত রাখবে?
এসব ভেবে রাতুল খুব ভয় পেয়ে গেলো। এবং রাইফাকে বলে দিলো রাইফা তুমি আমাকে ভুলে যাও। আমাদের সেই সম্পর্ক কখনো মেনে নেওয়া যাবে না। তোমার বাবা অনেক রাগী। তবুও উনি আমাকে অনেক স্নেহ করে। কিন্তু আমাদের এই কথা জানার পর আমার প্রতি উনার আর স্নেহ থাকবে না। হয়তো আমাকে অনেক শাস্তি দেবে তখন।
রাতুলের এসব কথা রাইফা মেনে নিলো না। তার একটা কথাই, যা হবার হবে কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়তে পারবো না। কথা অনুযায়ী তারা তারা আবার তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক আগের মত চালিয়ে গেলো।
অনেক দিন পর একদিন রাতুল ইউনিভার্সিটিতে গেলো না। কিন্তু রাইফা একাই গেলো। সেই দিন ইউনিভার্সিটি থেকে আসার সময় হঠাৎ রাইফার পথ আটকিয়ে সামনে দাঁড়ায় রাজন।
রাজন হল আকমল চেয়ারম্যানের ছেলে। রাজন সব সময় বাবার পাওয়ায় দেখিয়ে এলাকায় বখাটে ছেলেদের নিয়ে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়। এবং নেশা করে যার তার সাথে মাড়ামাড়ি করে। নিয়মিত এলাকার সব মেয়েদের ইভটিজিং করে। যাকে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। এবং প্রস্তাবে রাজি না হলে সব সময় বিরক্ত তো করেই সুযোগ পাইলে গায়েও হাত দেয়। এলাকার কোনো মেয়ে তার জ্বালায় শান্তিতে বাড়ি থেকে বের হতে পারে না। ভালোভাবে স্কুল-কলেজে যেতে পারে না। মেয়ে দেখলেই প্রেমের প্রস্তাব অথবা ইভটিজিং করবেই। কিন্তু এলাকার সব মেয়েকে করলেও এতো দিন রাইফার সাথে এরকম করে নাই। কারন জানতো রাইফা হলো তার বাবার বন্ধুর মেয়ে। সেই সম্মানে তাকে কিছু বলে নাই।
কিন্তু আজকে হঠাৎ করে পথ আটকিয়ে সামনে দাড়ালো এবং বললো,
- আপু আজকে উনি কই?
- উনি মানে? উনি কে আবার? পথ ছাড়েন আমার যেতে দেন আমাকে।
- আরে আপু এরকম করেন কেনো? পথ তো ছাড়বোই কিন্তু তার আগে কিছু কথা শুনে যান।
- এখন কোনো কথা শুনার সময় আমার নাই। আমাকে যেতে দেন।
- সম্মান করি বলে ভালো লাগে না তাইনা আপু? সম্মান করে মনের কথা বলি না বলে কি অন্য ছেলেদের সাথে প্রেম করতে হবে? তাহলে আমরা আছি কেন? প্রস্তাব দেই নাই তো কি হইছে আপনার মন চাইলে আমাকে বলতেন আমি রাজি হয়ে যেতাম।
- কি সব ফালতু কথা বলছেন সরেন এখান থেকে আমাকে যেতে দেন।
- যাবেই তো আপু। তবে শুনে রাখেন রাতুলের সাথে যেনো আপনাকে আর না দেখি। তাহলে কিন্তু পরিনাম খারাপ হবে। কারন আমি আপনাকে ভালোবাসি। আর আপনি শুধু আমারই বউ হবেন। অন্য কারো হতে পারবেন না। কথাটা মনে থাকে যেনো।
এই কথা বলে রাজন সরে যায়। এবং রাইফাও বাসায় ফিরে যায়। রাইফা বাসায় যেয়ে তার বাবার কাছে রাজনের সব কথা বলে দেয়। মেয়ের কথা শুনে জাফর চৌধুরি আকমল চেয়ারম্যানের বাড়িতে চলে যায় চেয়ারম্যানের কাছে নালিশ করতে। কিন্তু বাড়িতে ঢুকেই দেখতে পেলো রাজনকে। এবং তাকে বললো,
- তুমি আমার মেয়ের সাথে এরকম ব্যাবহার করছো কেন?
- আংকেল রাইফাকে আজকাল রাতুলের সাথে বেশি দেখা যায়। খুব সন্দেহ লাগছিলো। তাই নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরিক্ষা করে দেখলাম ওদের সামনে যেয়ে। সত্যি সত্যি ওদের মধ্যে প্রেম চলছে। তাই আমি বড় ভাই হিসেবে রাইফাকে একটু শাসন করতে গেছিলাম আংকেল। এখন আপনিই বলেন এটা কি আমার দূষ।
রাজনের কথা শুনে জাফর আর কোনো উত্তর দিলো না। এবং আকমল চেয়ারম্যানের সাথেও দেখা করলো না। তখনি সে বাড়িতে চলে গেলো। বাড়িতে যেয়ে রাইফাকে বললো,
- আজ থেকে তোমার রাতুলের সাথে থাকা বন্ধ। এবং বাড়ির বাহিরেও যাওয়া বন্ধ।
- কিন্তু কেন বাবা হঠাৎ এরকম কথা কেন? আমি কি করছি?
- তুমি কিছুই করো নাই কিন্তু আমি যা বলছি তাই মানবে। না হলে পরিনাম অনেক খারাপ হবে।
রাইফা কিছুই বুঝতে পারলো না সে এখন কি করবে। রাতুলের সাথে কথা না বলে কিভাবে থাকবে? রাতুলকে না দেখে কিভাবে থাকবে? সে কোনো উপায় না পেয়ে সোজা চলে যায় রাতুলের বাড়িতে। যেয়ে রাতুলকে বলে,
- রাতুল তাড়াতাড়ি চলো আমরা পালাবো।
- রাইফা তুমি এগুলা কি বলতেছো হঠাৎ! কি হইছে খুলে বলো?
- এখন এতো সময় নাই তুমি তাড়াতাড়ি চলো আমরা পালাবো। অনেক দূরে চলে যাবো যেখানে আমাদের কেও খুজে পাবে না।
- কিন্তু আমি জাফর চাচার সাথে এরকম বেইমানি কিভাবে করবো? আর আমি চলে যাওয়ার পর যদি উনি আমার পরিবারের সাথে কিছু করে?
এসব কথা বলতে বলতেই কোথা থেকে যেনো ডাক এলো রাইফা...
রাইফা পিছনে তাকিয়ে দেখে তার বাবা জাফর চৌধুরি। রাইফা আর রাতুল ভয়ে কেও কোনো কথা বলছে না। দুজনেই মাথা নিচু করে আছে। জাফর চৌধুরি তখন মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যায়।
সন্ধ্যার পর জাফর চৌধুরি রাজনকে ও তার দল নিয়ে যায় রাতুলের বাড়িতে। হাতে মোটা মোটা লাঠি নিয়ে যেয়ে বাড়িতে পা রেখেই রাতুলকে ডাকে। ডাক শুনে রাতুল ঘর থেকে বেড় হলেই রাজন তার মাথায় লাঠি দিয়ে জোরে একটা আঘাত আঘাত করে। রাতুল মাটিতে পড়ে যায়। তারপর রাজনের দলের বাকিরা সবাই ইচ্ছা মত একের পর পর এক আঘাত করতে থাকে রাতুলের শরীরে। বৃষ্টির মত লাঠির আঘাত পড়তে থাকে রাতুলের শরীরে। রাতুলের চিৎকার শুনে তার মা বাবা দৌড়ে আসে এবং কাদতে কাদতে বলে তোমরা আমাদের রাতুলকে মারছো কেন? কি করছে ও? এভাবে মারছো কেন অকে? আল্লাহর দোহায় লাগে অকে আর মাইরো না। বখাটের দল গুলো রাতুলের মা বাবার কথায় কান না দিয়ে অবিরত মারতেই থাকে। অনেকক্ষণ মারার পর রাতুল জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তারপর জাফর চৌধুরির নির্দেশে মারা বন্ধ করে। ছেলেকে মেরে অজ্ঞান করার পর তার মা বাবাকে জাফর চৌধুরি বলে যায় তোমাদের ছেলেকে আজকের মত বাচিয়ে দিলাম। কিন্তু অকে যদি এরপর আর এলাকায় দেখি তাহলে আর বাচানো হবে না। সুতরাং ছেলেকে আজকে রাতের মধ্যেই এলাকা থেকে বিদায় করবে।
রমিজ মিয়া ও তার স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়ে। তাদের বড় ছেলে হলো রাতুল। যাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন তাদের। আজ সেই ছেলেকে মেরে অজ্ঞান করে ফেলেছে৷ এবং এলাকা ছাড়া করতে বলছে। কোথায় পাঠাবে তাদের ছেলেকে ভেবে পাচ্ছে না তারা। তবুও যে পাঠাইতেই হবে কারন এলাকার মাতাব্বর জাফর চৌধুরি বলে গেছে। না পাঠাইলে তাদের ছেলেকে সত্যি সত্যি চিরকালের জন্য হারাইতে হবে।
জাফর চৌধুরি মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য দেওয়ানা হয়ে যায়। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি হঠাৎ করে এরকম ভালো ছেলে কোথায় পাবে যার সাথে মেয়ের বিয়ে দেওয়া যায়। মাতাব্বর সাহেবের একমাত্র মেয়ে যে কোনো ছেলের সাথে তো আর বিয়ে দেওয়া যায় না। অবশ্যই ভালো ছেলে লাগবে। কিন্তু হঠাৎ করে এখন এরকম যৌগ্য ছেলে কোথায় পাওয়া যাবে? জাফর চৌধুরি এই বিষয়ে পরামর্শ করার জন্য চলে গেলো আকমল চেয়ারম্যানের কাছে।
চলবে...
7
10
Nice