Mitta opobad

0 2

♥♥মিথ্যা অপবাদ♥♥

//part_27//

সন্ধ্যায় আশাকে হলুদ দেওয়ার জন্য বর পক্ষ হতে কনে বাড়ি যাচ্ছি।। আশাদের বাড়ি এসে দেখি সুমি আপু সাথে দুলাভাই চেয়ারে বসে আছে।।। দুলাভাই আমার সামনা সামনি?????

মুহর্তের মধ্যে যেন দুলাভাইয়ের হাসিমাখা মুখটা চুপ্সে গেছে।আমি দুলাভাইয়ের সামনে গিয়ে মুখে হাসি নিয়ে বললাম?

-- কেমন আছেন দুলাভাই?(আমি)

দুলাভাই আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে কান্না করতে শুরু করে দিল।দুলাভাইয়ের এমন ব্যবহারে আমি হতবম্ভ প্রায়।দুলাভাই কাদছে কেন?

--কাদছেন কেন দুলাভাই,,আমাকে ত অপবাদ দিয়ে বাসা থেকে বের করিয়ে দিলেন। সুখে আছেন ত?(আমি মুখে হাসি নিয়েই বলছি)

--আসিফ আমি ভুল করেছি আমাকে মাফ করে দাও।(দুলাভাইয়ের কথা সুনে আপুও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)

-- কি ভুল করছেন আপনি?আপনি আর মিথিলা মিলে আমার জিবন থেকে বাবা মায়ের আদর কেড়ে নিয়েছেন।এগুলোকে কি ভুল বলবেন?(আমার চোখ দিয়েও পানি চলে আসলো)

-- আসিফ তোমার সাথে কথা আছে,,সুমি আমাকে একটা নিরব জায়গাতে নিয়ে যাও।(দুলাভাই)

দুলাইয়ের সাথে নিরব জায়গায় আসলাম।সুনতে চাই দুলাভাই কি বলতে চায়।

-- আসিফ,,,তোমার বাসা থেকে বের হতে মিথিলার হাত ছিল না।মিথিলা তোমাকে অনেক ভালোবাসতো।কিন্তু আমার কথায় মিথিলা সব করতে বাধ্য হয়েছে?(দুলাভাই বলছে আর কান্না করছে)

-- কি বলছেন আপনি,মিথিলা বাধ্য হয়েছে?(মিথিলাকে নিয়ে কত ভুল ধারনা করেছিলাম,,,)

-- হুম,,আমি মিথিলাকে প্রথমে প্রেমের অফার দেই।তার পর আমার সাথে শারিরিক সম্পর্কে জড়ানোর জন্য নানা ভাবে ভয় দেখাই।এক পর্যায় মিথিলার বোনকে মেরে ফেলার হুমকিও দেই।সেই ভয়ে মিথিলা শুধু একবারের জন্য রাজি হয়ে যায়।নিজের বোনকে বাচাতে।আর সংসার রক্ষা করতে।।(দুলাভাই কত নিম্নমানের মানুষ ছিল,,,আপু পাশে থেকে এই কথা সুনে আটকে উঠে।আর চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে)

-- যখন আমার আর মিথিলাকে তুমি দেখে ফেলো,,আমি ও মিথিলা অনেক ভয় পেয়ে যাই।তারপর মিথিলাকে এই অভিনয়টা করতে বলি।মিথিলা ভয়ে এইসব কিছু করেছে।পরে যখন তুমি বাসা থেকে চলে গিয়ে ভিডিওটা দেখাও।আমি ভয় পেয়ে মিথিলাকে নানা ভাবে ভয় দেখাতে শুরু করি যেন মিথিলা এই সত্যটা কারো কাছে না বলে?(দুলাভাই)

-- আপনি এত নিচে নামতে পারলেন?আপনার জন্য আমার প্রথম ভালোবাসা,মিথিলাকে হারিয়েছি।যাকে ভালোবেসেছিলাম তাকে ঘৃনা করেছি।সাজানো সংসারটা অন্ধকার নেমে এসেছে।আমার মা দিনরাত কেদেছে।আমি এই বয়সে বাসা ছেড়েছি।কিন্তু আজ কেন সব কিছু বলছেন?(আমি চোখের পানি ফেলে বলছিলাম)

-- আজ আমি বুজতে পারছি পাপ বাপকেও ছাড়ে না। সেদিন একটি এক্সিডেন্টে আমার পা চলে যায়।শুধু আল্লাহর কাছে বলছিলাম। আমাকে যেন সত্যিটা বলা পর্যন্ত বাচিয়ে রাখে?<(দুলাভাই)

-- আমার আব্বু,আম্মু পরিবারের সবার সামনে বলতে পারবেন?(আমি)

-- হুম,, তুমি এই পরিবারের জন্য এত ত্যাগ করলা।চাইলে তুমি সব কিছু দেখিয়ে দিতে পারতা।তুমি তা কর নাই,,,আর আমি তোমার মত ছেলেকে আমার পাপের শাস্তি দিয়েছি।আমি চাই তোমার পরিবারকে সব কিছু বলে যেন আমার মরন হয়।(দুলাভাই)

-- আচ্ছা তাহলে,,বিয়েটা শেষ হওক,,আপনি আব্বু,আম্মু পরিবারের সবার সামনে সত্যটা বলবেন।(আমি)

-- হুম,,,ঠিক আছে,,,,(দুলাভাই)

সুমি আপু কান্না করছিল।আর বলছিল,,,আমার জিবন,,সংসার বাচানোর জন্য তোরা দুজন এত বড় ত্যাগ করলি।ভাই জানিস আশার থেকে যখন তোর সাথে হয়ে যাওয়া কাহিনিটা জানতে পারি।একবার ও ভালোভাবে কথা বলি নাই।বিয়েতেও মিথিলার সামনে যাই নাই।।মিথিলাকে শুধু কাদতে দেখেছি,,,,।কিন্তু আমরা কেউ জানতাম না আসল সত্যটা কি?

আপুকে বলেছিলাম,-- আপু কান্না কর না,,,সব ঠিক হয়ে যাবে।যার পাপের শাস্তি সে পাবে।মাঝখান থেকে পরিবারের বন্ধন্টা নষ্ট হয়ে গেলো।আমরা না হয় আবার সেই বন্ধনটা জোড়ে দিয়ে দিব।।

আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষন কান্না করে।।,,,

-- এই আসিফ,,,এখানে কি করছো,,,হলুদ দিবে না?(রিমি)

-- আপু আসি,,,পরে কথা হবে?(আমি)

আপু মাথা নেড়ে সায় দিল।

আমি আশাকে হলুদ দিচ্ছিলাম আর বলছিলাম,,,

-- আশা তোর আনন্দের দিনে আমিও আজ খুশির খবর পেলাম?(আমি ফিসফিস করে বললাম)

-- কি খুশির খবর,,রিমির কি বাচ্চা হবে?(আশা)

-- আরে না,,,দুলাভাই সব স্বীকার করেছে।বাকি কথা ফ্রি হলে ফোন দিস বলব?(আমি কথা গুলো বলছিলাম আর হলুদ লাগানোর কাজ সেড়ে নিয়েছি)

--আচ্ছা,,(আশার আনন্দ যেন আরো বেড়ে গিয়েছে)

আমরা সবাই,,বাসায় এসে রিদয় ভাইয়াকে হলুদ লাগিয়ে।বসে রইলাম,,কিন্তু বসে থাকতে দিচ্ছে কই,,,। dj চলছে,,,,রিদয় ভাইয়ার ফ্রেন্ড আমাদের ফ্রেন্ড সব গুলো একসাথে। কিন্তু আমার মনে লাফালাফি করার মত আনন্দ নেই।।সুযোগ বুজে কেটে পরি।

আর ভাবতে থাকি,,মিথিলা ত আমাকে ভালোবাসতো শুধু আপুকে বাচাতে এত কিছু করতে হলো।।মিথিলা হয়ত সেদিন কলেজে সব কিছু বলতে চাইছিল।কিন্তু আমি কিছুই বলতে দেই নাই।।মিথিলার মনে কি চলছিল,,,আমি জানি না।তবে আমার সাথে যেহেতু এত কিছু চলেছে।মিথিলার সাথে কিছু কম চলে নি।।

হয়ত গল্পে প্রকাশ পায় নি মিথিলার কষ্ট,ত্যাগ আর ভালোবাসা।।

-- কি ব্যপার আসিফ,,একা বসে আছো কেন?(রিমি)

রিমিকে দেখেই জড়িয়ে ধরে,,সবকিছু বললাম,,,,,রিমিও অপরাধ বোধ করছে না জেনে কত খারাপ কথা বলেছিল রিমি,,মিথিলাকে।

আপনিও কিন্তু কিছু কম বলেন নি।তাই বলেছিলাম কোনো কিছুর সত্যটা না জেনে মন্তব্য করবেন না।প্রতিটি মানুষের লুকিয়ে থাকা কিছু সত্য থাকে।কেউ সাধুর বেশে খারাপ কাজ করে বেড়ায়।আর কেউ সাধুর পাপে নিজে শাস্তি পায়।

রিমি ও অনেক খুশি এবার তাহলে আমার বাসায় যাওয়া হচ্ছে।,,আশা রাত ১ টার পর ফোন দিয়েছিল,,, সব কিছু বলেছি।। কাল আশা আর রিদয় ভাইয়ার বিয়ে।বিয়ে পর্যন্ত না হয় একটু কষ্ট করে থেকে যাই।তার পর আব্বুকে জড়িয়ে ধরে বলবো।খুব ভালোবাসি আব্বু,,।তোমার ছেলে এমন কাজ করতে পারে না।আমি জানি যার প্রতি ভালোবাসা বেশি থাকে তার দেওয়া কষ্ট গুলো ও অনেক বেশি হয়।।।

রিমির সাথে রিমির সাথে রোমান্স হয় ঠিকই কিন্তু আমি মুখ খুলে বলতে পারি না।লেখক একটু লাজুক টাইপের কিনা তাই।,,,আর পাঠক ত আমার বাসার লোকজন আছেই,,,।

খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে,,বিয়ের অনেক কাজ,রিমি আশাদের বাসায় চলে গেছে সকালেই।বেস্ট ফ্রেন্ড আশা আর রিমি।রিমির পাশে যেমন আশা ছিল ঠিক রিমিকেও থাকতে হবে।।বিয়েটা অনেক ধুমধামেই এগিয়ে যাচ্ছে দুই পরিবার অনেক খুশি। বর নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম,,,বিয়েটা খুব ভালোভাবেই আনন্দের সাথে কেটে যায়।।রাতে আশা মানে রিদয় ভাইয়ার বউ নিয়ে বাসায় চলে আসি।। বাসর ঘর সাজানো হয়েছে।কিন্তু আশাকে কোনো কিছু দেওয়ার কথা মাথায়ই আসে নাই।

আমি রিমি কাছে গিয়ে,,,

-- রিমি আশাকে কি দিয়েছো?(আমি)

-- কেন তুমি কিছু দেও নাই?(রিমি)

-- মনে ছিল না,,,,রাত ত অনেক হইছে।।(আমি)

-- এক কাজ করো আমাদের বিয়ের গিফট গুলো দিয়ে দেও?(রিমি)

-- পাগল হইছো,,,রাখো আমি এখনি যাচ্ছি।।

রিমির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে,,,অনেক কিছু একসাথে গিফট পেকেটে নিয়ে আসি।।আমাদের বিয়েতে পাওয়া কোনো কিছুই ছিল না।রুচিশীল জিনিসপত্র ছিল।কিন্তু আমি বলব না।

বাসায় এসে,,দেখি,, আশা রুমে বসে আছে,,রিদয় ভাইয়া ফ্রেন্ডের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। আমরা সেই সুযোগে গিফট দিয়ে আসি।।আশা বলেছিল এত লেইট করে কেন?স্পেশাল কিছু দেড়িতেই পাওয়া যায়।

জানতে চাইলো ফাহিম,আর রাহুলের মত কিছু কিনা।তাহলে এগুলো আর খুলবে না।রাহুল আর ফাহিমের গিফট নাকি খাটের নিচে রেখে দিছে।

ভালো হওক আর খারাপ।।

অবশেষে,,রিদয় ভাইয়া আসার পর আমরা ভলে যাই। সুখের হওক তাদের জবনের পথ চলা সেই দোয়া করে।

পরের দিন সকালে,,আশা আর রিদয় ভাইয়ার জন্য নাস্তার টেবিলে অপেক্ষা করছি।আমাদের সময় যেমন হয়েছিল।।।

আশাকে পেয়ে আংকেল আন্টি অনেক খুশি,,,আশা কেমন মেয়ে ওরা ত জানেই।।

আপু ফোন করে বললো,,,কাল নাকি বাসায় যাবে,,আমাকেও আসতে বললো।অনেক সপ্ন জমে চোখে।

মিথিলাকে দেখতে যাবো,,,মিথিলার কোনো ভুল ছিল না সব কিছু দুলাভাই বলেছে।সব বলব মিথিলাকে।মিথিলার চোখ গুলো কি আমাকে দেখে ছল ছল করে উঠবে??মিথিলা আমাকে দেখে কি অবাক হবে না।।হবে হয়ত।

আংকেল আন্টিকে বিষয়টা জানালাম,,।আব্বু,আম্মু বলতে বলেছিল কিন্তু আমার লজ্জাটা একটু বেশি ত বলতে পারি না।।

রাতে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছি,,,,আড্ডায় বাড়িটা মেতে উঠেছে।আশা,রিদয় ভাইয়া,রিমি আর আমি।নানা রকমের কথা আর আড্ডাতে অনেক রাত করে ফেলেছি।

রাতে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।রিমি আমার কাদে হাত রেখে,, বললো,

-- আসিফ কাল যদি সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যায়।তোমার আব্বু আম্মু আমাকে মেনে নিবে ত?(রিমির কথায় যুক্তি আছে।)

কিন্তু আমার মনে হয় মেনে নিবে।রিমির পরিবার আমাকে এমন সাহায্য করেছে।প্রথম থেকে রিমি আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে।এইসব জানার পর হয়ত রিমিকে খুব ভালো ভাবেই মেনে নিবে।

-- কেন নিবে না।তুমি কোনো দিক দিয়ে কম আছো নাকি।।দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।।।(আশা দেখিয়ে)

-- আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।কাল সব কিছু ঠিকঠাক হলে আমার কথা বলবা কিন্তু?(রিমি)

-- হুম বলবো,,,চিন্তা করো না।।এখন ঘুমাও প্লিজ।(আমি)

-- হুম,,(রিমি আমাকে জড়িয়ে ধরলো)

-- রিমি গরম লাগছে।তুমি জানো না রোমান্স শুধু শীতকালের জন্য?(আমি)

-- রোমান্সের কোনো কাল নেই।ভালোবাসা থাকলে সবকাল ঈ রোমান্স কাল অকে?(রিমি)

-- তাই নাকি।,,,

তার পর আর কি রোমান্সের জগতে,,,

সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে মোবাইলে দেখি।সুমি আপুর অনেক গুলো ফোন।।হয়তো আপু বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।।আমি কল ব্যাক করে,,,

-- হ্যলো আপু বলো?(আমি)

-- আসিফ,,তুই কই,,তোর দুলাভাই ত উপর থেকে নামার সময় সিড়ি থেকে পড়ে যায়।মাথা দিয়ে প্রচন্ড বেগে রক্ত বের হচ্ছিল। হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।।(সুমি আপু কান্না করছে মনে হচ্ছে)

-- আমি আসছি? (আমি)

তারাতারি করে হাসপাতালে ছোটলাম।যখনি বাসায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে তখনি বিপদ চলে আসে।।হাসপাতলে যাওয়ার পরই সুনতে পাই দুলাভাই আর নেই।।সবাই কান্না করছে।সুমি আপু নিজেও।জানি না লোক দেখানো কি না।

এখন আমি ভাবছি এই সত্যটা জেনেও কি বাসায় ফিরতে পারলাম না।।

চলবে,,,

বিদ্রঃভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।।

1
$ 0.00

Comments

মানুষ সবকিছু সহ্য করতে পারে। কিন্তু কাছের কোন মানুষের দেয়া মিথ্যা অপবাদ সে কখনোই সহ্য করতে পারে না। গল্পের লেখক কে অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর সুন্দর গল্প আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য। এ ধরনের গল্প আমরা আরো দেখতে চাই।।

$ 0.00
4 years ago

সব সহ্যসীমার বাইরে মিথ্যা অপবাদ। মিথ্যা অপবাদ সহ্য করা খুবই কষ্ট। মিথ্যা অপবাদের কারণে মানুষ খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। ধন্যবাদ গল্পের লেখক কে।

$ 0.00
4 years ago

আমি একজন মানুষ। আর একজন আদর্শ মানুষ কখনোই মিথ্যাকে আশ্রয় করে থাকে না, মিথ্যা কে তারা অপছন্দ করে। মিথ্যার প্রতিবাদ করে। ধন্যবাদ গল্পের লেখকে এমন একটি সুন্দর গল্প লিখার জন্য

$ 0.00
4 years ago

আমরা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হলেও অনেক সময় এক মানুষ আরেক মানুষের উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হ্যনস্ত করে থাকে যেটা সত্যি খুবই দুঃখজনক।

$ 0.00
4 years ago