#বেলী_ফুলের_মালা
#পর্ব_২৭
আবিরের মা খাবার প্লেটে বেড়ে দিলো, আবির সেটা নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলো। সুমনা রাগে গজগজ করতে করতে অর্ধেক খাওয়া হতেই প্লেট রেখে উঠে গেলো।
আবির রুমে গিয়ে রুহীকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিলো। প্লেট রেখে এসে দেখলো রুহী শুয়ে পড়েছে। ভীষণ মন খারাপ লাগছে আবিরের, রুহী কি ওর উপর রাগ করলো? রুহী ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে আর কিছু না বলে বেলকনিতে চলে গেলো।
বন্ধু সায়ান কে বেশ কয়েকবার ফোন দিলো, কিন্তু ওর নাম্বার বন্ধ। ফেসবুক আইডি ও ডি এক্টিভ, গত বেশ কয়েক মাস ধরে সায়ানের সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারছে না আবির। বাধ্য হয়ে সায়ানের রুমের একজনের নাম্বারে ফোন দিলো সে জানালো সায়ান আরও একমাস আগে দেশে চলে গেছে। এবার আবির আরও অবাক হলো, যে সায়ানের ওকে ছাড়া এক মুহুর্তও চলতো না সে এতগুলো দিন আবিরের সাথে যোগাযোগ বন্ধ রাখলো? বিষয়টা কেমন অস্বাভাবিক। পাশাপাশি আরও একটা বিষয় আবিরকে বেশ ভাবাচ্ছে। দেশে তো এসেছে একমাস আগে, তাহলে তার আগে আবিরের ফোন তুলতো না কেন?
আবির যখন ইউ. কে. থেকে দেশে ফিরলো, তখন সায়ানও কয়েক মাসের ছুটিতে ওর সাথে এসেছিলো, ওকে ছাড়া থাকতে পারবে না বলে। সেই সায়ান দেশে এসেছে এক মাস হয়ে গেছে অথচ আবির সেটা জানেই না। এসব ভাবতে ভাবতেই আবিরের চোখের কোণায় থেকে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। উদাস চোখে অনেকক্ষণ বাইরে তাকিয়ে থেকে রুমে চলে গেলো। রুহীকে নড়াচড়া করতে দেখে বুঝতে পারছে ও জেগে আছে।
আবির রুহীর মাথার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই রুহী চমকে চোখ খুলে তাকালো। আবিরের দিকে এক নজর তাকিয়েই আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো। আবিরের বুকের বাঁম পাশ টা চিনচিন করে ব্যাথা করছে। একদিকে প্রাণের বন্ধু সায়ান কে নিয়ে দুশ্চিন্তা, তার উপর আবার রুহীর সাথে বাজে ব্যবহার করার জন্য অনুতাপ।
- রুহী.....(আবির)
-......... (চুপ করে চোখ বন্ধ করেই শুয়ে আছে)
- রুহী, আমি সরি। আমি ইচ্ছা করে অমন করি নি রুহী। তুমি ফোন রিসিভ করছিলে না তাই আমার খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো।(ধরা গলায় আবির)
আবিরের চোখ থেকে দুফোঁটা পানি রুহীর মুখের উপর পড়তেই রুহী তড়িৎ গতিতে উঠে বসলো।
- রুহী, আই এম এক্সট্রিমলি সরি... (রুহীর হাত দুটো চেপে ধরে)
- চুপ, একদম কান্না করতে না। ছি ছি পুরুষ মানুষ নাকি কাঁদে।
রুহী আবিরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। আবির যে এতো করে থামতে বলছে তবুও ওর থামার নাম নেই।
- রুহী, আমি কিন্তু এখন বাসা থেকে বেরিয়ে যাবো।(আবির)
আবিরের কথা শুনে রুহী সাথে সাথেই চুপ করে গেল।
- এই তো লক্ষী বউ.... (রুহীর চোখ মুছে দিয়ে আবির)
- হুমম, হয়েছে। (হালকা হেসে রুহী)
- রুহী, আমাকে ছেড়ে কখনও চলে যাবে না তো...?(দু-হাতে রুহীর মুখে আলতো করে ছুঁয়ে)
রুহী শুধু মুচকি হাসলো, কিছু বললো না।
- এগারোটা বাজে, চলো ঘুমিয়ে পড়ি।(রুহী)
- হুমম।
আর কোনো কথা না বাড়িয়ে আবির চুপচাপ শুয়ে পড়লো। এখন আর কথা বলতে মোটেই ইচ্ছা করছিলো না। মাথায় শুধু একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে, সায়ান কেন ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো? ওর কোনো সমস্যা হয় নি তো? পরক্ষণেই আবার মনে হচ্ছে, না... ও তো দেশে এসেছে এক মাস, তার আগেই তো যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো। তখন তো ওর কোনো সমস্যা হয়েছিল না।
রুহী আবিরের গলা জড়িয়ে ধরে বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো, আর শোয়া মাত্রই ঘুম। যতই দুশ্চিন্তা হোক রুহী যদি ওর বুকের উপর মাথা রাখে, কেমন যেন ম্যাজিকের মতো সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়। কথাটা ভেবেই মুচকি হাসলো আবির। তারপর রুহীর কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
অভ্যাস অনুযায়ী আজও রুহীর দেড়টায় ঘুম ভেঙে গেলো। এক ঘন্টা পড়ার পর আর পড়তে ভালো লাগছে না। এদিকে ঘুমও আসছে না। তাই ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলো। সাথে সাথেই রুহীর চোখ ছানা বড়া। রাত পৌনে তিনটায় আভা অনলাইনে? তাড়াতাড়ি বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো, আভার রুমের লাইট অফ। লাইট তো সাড়ে দশটার সময়ই অফ দেখেছিলো রুহী। তার মানে আভা তখনও ঘুমায় নি। বাতি যেহেতু অফ, সেহেতু ও পড়ছেও না। গত তিনদিন ধরে আভাকে অনেক রাতে অনলাইনে দেখছে রুহী। অথচ সাড়ে দশটা বাজতেই বাতি অফ করে শুয়ে পড়ে। সবাই ভাবে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আসলেও কি আভা অনলাইনে থাকে? নাকি নেট অন করে রেখে ঘুমিয়ে পড়ে বিষয়টা রুহীর মাথায় ঢুকছে না। তাই দরজা খুলে পা টিপে হেঁটে আভার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ভেতর থেকে চাপা গলায় আভার কথা শোনা যাচ্ছে। তখন কিছু না বলে রুহী রুমে চলে গেলো। আভা কি কারও সাথে রিলেশনশিপ এ আছে? ভাবতেই অস্থির লাগছে ওর। যদি তাই হয়, তাহলে তো আবির ওকে মেরেই ফেলবে। এসব আবির একদম পছন্দ করে না। কাঁপা হাতে কয়েক গ্লাস পানি খেয়ে রুহী ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো।
আবিরকে কি বলবে? না থাক.... আগে নিজে নিজে প্রবলেম টার সমাধান করতে হবে। এই মুহূর্তে নিজেকে বেশ ম্যাচিউর মনে হচ্ছে রুহীর কাছে, একটা সংসারে কত দায়িত্ব থাকে, কত কিছু আগলে রাখতে হয়। আভা রুহীর এক বছরের সিনিয়র। বয়সে ছোট হলেও ও আভার বড় ভাবি। সে হিসাবে আভাকে ভুল পথ থেকে সরিয়ে আনা ওর দায়িত্ব।
কি করবে কিছু মাথায় আসছে না। অনেক ভেবে আভাকে মেসেঞ্জারে ফোন দিলো। অন্য কারও সাথে কথা বলছে ও। তাই ফোন কেটে দিয়ে চুপ করে বসে রইলো। তখনই আভা কল ব্যাক করলো....
- হ্যাঁ ভাবি বলো....(কাঁপা গলায় আভা)
- ঘুমিয়ে পড়েছিলে নাকি?(নিচু স্বরে রুহী)
- না না না ভাবি... ওই যে আমার এক বান্ধবী আবার ফোন দিলো তাই ঘুম ভেঙে গেল। (ঢোক গিলে আভা)
- ওওওওও
- কে কে কেন? কিছু বলবে? কিছু হয়েছে কি?(আভা)
- না, তেমন কিছু না। তুমি একটু বাইরে আসো, আমি আসছি।(রুহী)
- আ আ আচ্ছা ভাবি।(আভা)
রুহী বুঝতে পারছে আভা মিথ্যা কথা বলছে। তবুও ওকে এখনই কিছু বলা যাবে না। হিতে বিপরীত হতে পারে, তার চেয়ে বরং ওর উপর নজর রাখতে হবে।
- কিছু কি হয়েছে ভাবি? ভাইয়া কোথায়?(ভয়ে ভয়ে বললো আভা)
- না না কিছু না তো, আমার হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। আর ঘুম আসছে না, ভাবছি ছাদে যাবো। একা তো আর এত রাতে যাওয়া যায় না, তাই ভাবলাম তোমাকে ফোন দেই।(স্বাভাবিক ভাবেই রুহী)
আভা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। যাক..!!!! রুহী তাহলে ওকে সন্দেহ করে নি।
- ওওওও বেশ ভালো করেছো। আমারও ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর আর ঘুম আসছে না। (আভা)
অনেক্ক্ষণ ছাদে বসে দুজন গল্প করলো। কিন্তু রুহী একবার ওই বিষয়ে কথা বলল না। পরে দুজনেই রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু রুহীর আজ আর কিছুতেই ঘুম আসছে না। রূপার কথা মনে পড়ছে শুধু, আর মনে হচ্ছে আভা কোনো ভুল মানুষকে বেছে নেয়নি তো....?
be continue.... 💖💖
💞চেষ্টা করবো রাতে আরেক পার্ট দিতে। 🙂🤗💞
3
7
বেলি ফুলের মালা গল্পটি অনেক সুন্দর হয়েছে। আমি আপনার পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর গল্প উপহার দেওয়ার জন্য।