গল্প :- বাসর রাতের কান্ড
পর্ব :- ২ & শেষ
লেখা :- hasan
.
.
....আচ্ছা! আপনার সাথে কখনো আমার শারীরীক সম্পর্ক হয়েছে?
.
কথাটা শুনে আরোহী অবাক হয়ে গেল!
.
অবাক হওয়ার কিছু নেই। বলেন হয়েছে কি না?
-না হয়নি?
.
আপনাকে কখনো জড়িয়ে ধরা তো দূরের কথা বিয়ের পর ঠিকমতো আপনার হাতটাও ধরার মতো সুভাগ্য আমার মতো অভাগার কপালে জুটেনি। আর আমি আজ শুনলাম আপনি অন্তঃসত্ত্বা। আমি কোন নষ্টা মেয়েকে স্ত্রীর পরিচয় দিতে পারবো না। আমি আপনাকে ডির্ভোস দিবো।
.
আরোহী আমার কথাটা শুনেই কান্না করে দিল। বিছানা থেকে নেমে আমার পা দুটি ঝাপটে ধরে বলতে লাগল- আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমাকে তাড়িয়ে দিয়ো না। আমি সত্যি এমন কাজ করিনি। বিশ্বাস করুন আমাকে।
- হা, হা কিসের বিশ্বাস? যাকে আমি একটিবার স্পর্শ পর্যন্ত করিনি। সে যদি প্রেগনেন্ট হয় তাহলে কীভাবে বিশ্বাস করি?
- প্লিজ তোমার পায়ে পড়ি মিথ্যা অপবাদ দিয়ো না আমায়।
- তাহলে তুমি বলতে চাচ্ছো ডাক্তারের রির্পোট মিথ্যা?
- আরোহী কোন কথা বলছে না। চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে।
- আমি না খেয়ে অফিসে চলে গেলাম।
- রাতে বেলা শুয়ে আছি। হঠাৎ বুকটা ভারী ভারী লাগতেছে। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি কথা আমাকে জরিয়ে ধরে আছে ছোট বাচ্চার মতো তার চোখের পানিতে আমার বুক ভিজে যাচ্ছে।
- এই কি করছো তুমি? তোমার মতো নষ্টা মেয়ের আমাকে জরিয়ে ধরার কোন অধিকার নেই। কার সাথে এমন বাজে কাজ করছো। নাকি যে ছেলেটাকে বিয়ের দিন মাইর দিয়েছিলাম তার সাথে?
- প্লিজ বিশ্বাস করো, ছোট বেলা থেকেই তোমাকে এটা সেটা নিয়ে রাগাতাম। একদিন আমার বান্ধবী জেরিন আমাকে বলে। সে নাকি তোমাকে ভালবাসে। তোমাকে দেওয়ার জন্য একটা চিঠিও দেয়। সেদিন চিঠিটা আমি তোমাকে দেয়নি। কেন যেন আমার খুব কান্না পাচ্ছিল। তাই জেরিন কে বলে দিয়েছি, তুমি অন্য কাউকে ভালবাসো। জানো সেদিন থেকেই তোমাকে ভালবেসে ফেলি। কিন্তু কখনো তোমায় বলতে পারিনি। তুমিতো সারাক্ষণ আমার সাথে ঝগড়া করতে। জানো যার সাথে বিয়ে ঠিক ছিল আমার,সে ছেলেটা আমার বান্ধবী নিধির বয়ফেন্ড। তাদের দুজনকে পালানোর টাকাটাও আমি দেয় তোমাকে পাওয়ার জন্য । আর তুমি যেন আমাকে ভালবাসো.. সে জন্য বিয়ে বাড়িতে বোরকা পড়ে ওই ছেলেটাকে অভিনয় করতে বলি। বিশ্বাস করো সত্যি তোমায় অনেক ভালবাসি।
- ঠাস! লজ্জা করে না পাপ মুখে আমাকে ভালবাসার কথা বলতে। তুমি মনে করেছো। তোমার সাজানো গোছানো মিথ্যা কথা আমি বিশ্বাস করবো? কখনোই না।
- আরোহী আমার কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
-আমি শুয়ে পড়লাম। সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততায় শরীরটা নিতিয়ে পড়েছে। চোখ জোড়া বন্ধ করতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
- পরের দিন আরোহী কে নিয়ে ডির্ভোসের আবেদন করে আসলাম।আরোহী শুধু আমার দিকে করুণ চোখে চেয়ে আছে। আরোহী কি আর বলবে। আমার জায়গায় যে কেউ হলেও এটাই করতো।
- বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে, টিভি দেখতে ছিলাম। এমন সময় দেখলাম আরোহী শাওয়ারে গেল।
- রাতে শুয়ে আছি।হঠাৎ পাশের রুম থেকে চাঁপা কান্নার আওয়াজ আসছে।
- আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি, রাত প্রায় দু'টা ছুঁই ছুঁই! বিছানা থেকে উঠে, পাশের রুমের দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম!
- আরোহী জায়নামাযে বসে মোনাজাতে কাঁদছে। আর বলছে ' হে পরম করুণাময় আল্লাহ্ তায়ালা। সারাজাহানের অধিপতি, তুমি তো জানো আমি ফুলের মতো পবিএ। কোন পরপরুষের সংস্পর্শে যায়নি। তবুও আজ আমার গর্বে সন্তান। হে আল্লাহ্, আমার করুণাময় আল্লাহ্ । আমি আমার স্বামীকে নিজের থেকে বেশি ভালবাসি। তুমি তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ো না আমায়। আমার সম্মান তুমি রক্ষা করো। সতি নারীর সম্মান তুমি রক্ষা করো। আমিন।
- আরোহীর কান্না দেখে নিজের অজান্তেই চোখের কোণে জল এসে পড়ে। কারণ পাগলীটাকেও যে আমি বড্ড বেশি ভালবাসি। মনে মনে ভাবলাম অনেক হয়েছে আর না। খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। ভালবাসার মানুষ এতো কষ্ট দিতে হয় না। আরোহী রুমে আসার আগেই, আলমারী থেকে সবুজ পাড়ের কালো তাঁতের শাড়িটা বের করলাম। কথা রুমে আসতেই বললাম' যাও শাড়িটা পড়ে আমার সামনে আসো'।
- আরোহী এতো রাতে আমার পাগলামী দেখে কিছুটা বিস্মিত হলো। কারণ আজ কোর্ট থেকে আসার পর এই প্রথম কথা বললাম।
- আরোহী কিছুক্ষণ পর শাড়ি পড়ে আসলে। তার মাঝে অন্য এক আরোহী কে দেখতে পায়।
- নষ্টা মেয়ের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমি তো নষ্টা তাই ভেবেছি, তোমাকে মুক্তি দিয়ে যাবো। আমি সুসাইড করবো।
- আরোহীর মুখে সুসাইডের কথাটা আমার কলিজায় এসে বিঁধলো। মুখটা চেপে ধরলাম। এই কি বলছো? তোমাকে ছাড়া আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো। আমাকে ক্ষমা করে দাও। তোমার গর্ভের সন্তানটা আমার।
- আরোহী আমার মুখে এমন কথা শুনার জন্য একদম প্রস্তুত ছিল না। তুততমি তো আমাকে স্পর্শ করোনি। তবে কেমনে মা হলাম?
- একদিন ঘুমের বড়ি আর তার সাথে নেশার বড়ি মিক্সট করে দেয়। যদিও এটা অন্যায় ছিলো কিন্তু এ ছাড়া কোন উপায় ছিল না। তোমার ডাইরি পড়ে তোমার বলার আগেই। আমি জানতে পারি যে,তুমি আমার সাথে অভিনয় করেছো। আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসো।
কিন্তু বলতে চাচ্ছো না। তাই কৌশলে এ বুদ্ধি করা। কথাটা বলার আগেই বুকে কারো কিল-ঘুষি অনুভব করলাম। এই কি করছো মরে যাবো তো।
- তোকে যে আমি মরতে দিবো না। মালা বানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখবো। কথাটা বলে বুকে মুখ লোকালো।
- এই রাত শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফুলশর্য্যাটা সেরে নেয়।
- এই লুচুর হাড্ডি আমার অনুমতি ছাড়াই তো সব করে ফেলছো। দেন মহর যে বাসর রাতে দিতে হয় দিয়েছিলে আমায়?
-হি হি, আচ্ছা! কত টাকা চাও দেন মহর হিসেবে?
- যা চাই দিতে পারবে তো?
- সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই দিবো।
- আচ্ছা! দেন মহর হিসেবে তোমাকেই চাই। সারাজীবন তুমি পাশে থেকো আর কিছুই চাইনা।
নয় মাস পর.......
- হসপিটালে বসে বসে পুরোনো সব কথা গুলো ভাবছি আর চোখ থেকে পানি টপটপ করে পড়ছে। মনে মনে আল্লাহ্কে স্মরণ করছি। পাগলীটা অপারেশন থিয়েটারে। অপারেশন থিয়েটারে যেতে চাচ্ছিল না। আরোহীর চোখে চিকচিক করছিল পানি। হঠাৎ ডাক্তার সাথি অপারেশন রুম থেকে বের হয়ে বললো' মিঃ এ আর আপনার মেয়ে হয়েছে। ভেতরে যেতর পারেন।
- আমি বেডে গিয়ে দেখি আরোহীর পাশে ফুটফুটে একটা বাচ্চা কান্না করছে। মেয়েটাকে কুলে তুলে নিয়ে কপালে ভালবাসার স্পর্শ এঁকে দিলাম! হঠাৎ আরোহীর দিকে চেয়ে দেখলাম সে নড়া চড়া করছে না। বুকটা কেমন যেন ধর্ক করে উঠলো। এই আরোহী , কি হলো চোখ খুলো কথা বলছো না কেন। আরোহী কোন কথা বলছে না। আমার বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। আরোহীয মাথাটা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম। হঠাৎ বুকে কারো মৃদু কামড় অনুভব করলাম। চেয়েই দেখি পাগলীটা মিটিমিটি তারার মতো চোখ খুলছে।
- কি হলো ভয় পেয়েছো? ভয় পেয়ে লাভ নেই। আমি তোমাকে ফেলে কোথাও যাচ্ছি না। এখন আমার দল ভারী। মা মেয়ে মিলে একসাথে ঝগড়া করবো।
.
কেমন হলো জানাতে ভুলবেন না কিন্তু .
.
* * * সমাপ্ত * * *
1
13
Nice story