নিকোলা টেসলার হারানো ফাইলগুলোর রহস্য: ১৯৪৩ এর জানুয়ারি মাস। নিউ ইয়র্কের একটি হোটেল রুম থেকে উদ্ধার করা হয় ৮৬ বছর বয়সী বিখ্যাত বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার মরদেহ। তৎক্ষণাৎ তার রুম থেকে সকল নথি-পত্র গায়েব করে দেয় আমেরিকান সরকার। কিন্তু কেন? কি ছিল সেই রহস্যময় নথিগুলোতে? তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের দিকে। নিকোলা টেসলা দাবী করে বসলেন, তিনি ডেথ-রে নামে এমন এক অস্ত্র আবিষ্কার করতে যাচ্ছেন, যা তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গের সাহায্যে মুহূর্তেই মানুষকে মেরে ফেলতে পারে! আমেরিকানরা চিন্তায় পড়লো; এরকম মারণাস্ত্রের আবিষ্কার যদি সত্যিই হয়, তাহলে যুদ্ধের ধারণাই পাল্টে যাবে! যদিও তখন পর্যন্ত টেসলা তার আবিষ্কার সম্পর্কিত কিছুই প্রকাশ করেননি, তাও তার মৃত্যুর পর আমেরিকান সরকার বেশ সতর্ক হয়ে গেলো। তাদের ছিলো একটাই চিন্তা, যদি সত্যিই টেসলা এমন কিছু আবিষ্কারের পরিকল্পনা করে থাকেন আর এ আবিষ্কারের নকশা যদি প্রতিপক্ষের হাতে কোনোমতে পড়ে যায়, প্রায় জিতে যাওয়া যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ যে হাত ফসকে যাবে! তাই তার মৃত্যুর পর তার রুমের যেখানে যা কাগজপত্র পাওয়া গেলো, সব জব্দ করা হলো। কিন্তু আসলেই কি সেই নথিপত্রে চমকপ্রদ কিছু ছিলো? ২০১৬ সালে টেসলার সেই নথিপত্র বিষয়ক কিছু রিপোর্ট প্রকাশ করে এফবিআই। তাতে বলা হয়, টেসলার নথিগুলো বিশ্লেষণের দায়িত্ব প্রদান করা হয় তখনকার ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) এর ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার ডক্টর জন জি ট্রাম্পকে। তার উপর দায়িত্ব ছিলো নথিপত্রগুলোর মধ্যে বিশেষ গুরুত্ববহ কিছু ছিলো কিনা তা দেখা। মজার ব্যাপার হলো, ডক্টর জন ট্রাম্প হলেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আপন চাচা। যাই হোক ডক্টর ট্রাম্প রিপোর্ট করলেন, টেসলার ফাইলগুলো প্রাথমিকভাবে আকর্ষণীয় মনে হলেও তাতে আসলে নতুন কিছু ছিলো না। অন্তত টেসলা যেমনটা দাবি করেছিলেন তেমনটা তো নয়ই। কিন্তু তাতেও আমেরিকান প্রশাসনের সন্দেহ পুরোপুরি দূর হয়নি।

নিকোলা টেসলা ছিলেন সার্বিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান বিজ্ঞানী। তার মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সবকিছুর উত্তরাধিকার হন টেসলার সার্বিয়ান ভাইপো সাভা কোভানোভিচ। কোভানোভিচ তখন ছিলেন আমেরিকায় কর্মরত যুগোস্লাভিয়ান রাষ্ট্রদূত। এফবিআই এর কিছু কিছু কর্মকর্তা মনে করতে লাগলেন, টেসলার মৃত্যুর পর তার নথিপত্র উত্তরাধিকারসূত্রে যদি কোভানোভিচ এর কাছে চলে যায়, তাহলে তার মাধ্যমে সেগুলো শত্রুপক্ষের কাছে চলে যেতে পারে। এজন্য অনেকে তাকে গ্রেফতার এর সুপারিশও করেন।

১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত কোভানোভিচকে টেসলার ন্যায়সঙ্গত উত্তরসূরি হিসেবে ঘোষণা করেন। কোভানোভিচ তখন থাকতেন সার্বিয়ার বেলগ্রেডে। সেখানে তখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নিকোলা টেসলা মিউজিয়াম। কিন্তু টেসলার ফাইলগুলো যখন জব্দ করা হয়, তখন সেখানে মোট ৮০ টি ট্রাংক ছিলো। কিন্তু সার্বিয়ায় টেসলা মিউজিয়ামে সেগুলো পাঠানোর সময় ৬০টি ট্রাংক পাঠানো হয়। বাকি ২০টি ট্রাংকের হদিস মেলেনি। ধারণা করা হয়, ৮০ ট্রাংক এর সব ফাইল ৬০টি ট্রাংকে ভরে পাঠানো হয়েছিলো, আবার অনেকে বলেন ২০টি ট্রাংকের সব ফাইল চিরতরে জব্দ করা হয়। তবে টেসলার ডেথ-রে নামক মারণাস্ত্রের আবিষ্কারের আসল সূত্র পেতে এখনো মুখিয়ে আছে আমেরিকান সেনাবাহিনী।

নিকোলা টেসলার গোপন আবিষ্কারের সূত্র আবিষ্কারের জন্য তার কলোরডোর গবেষণাগার থেকে নিউইয়র্কের সেই হোটেল রুম, তার নির্মিত রহস্যময় ওয়াইরলেস টাওয়ার- সব জায়গাতেই চষে বেড়ানো হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো টেসলার জীবদ্দশায় তার অনেক আবিষ্কারকে ফালতু মনে করা হলেও এখন সেগুলোই সিলিকন ভ্যালির বিভিন্ন প্রজেক্টের চালিকাশক্তি।

যাই হোক, টেসলার অনেক সংবেদনশীল আবিষ্কার যদিও এখন পর্যন্ত গোপনই রয়ে গেছে, তারপরো তার বহু অবদান আমরা আমাদের পকেটে ও ব্যাগে রাখা ডিভাইসগুলোতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি এবং এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, ভবিষ্যতের প্রযুক্তি দুনিয়াতেও বহাল থাকবে নিকোলা টেসলার রাজত্ব। টেসলা ছিলেন ওয়াইরলেস প্রযুক্তির আবিষ্কারক। আজকের দুনিয়ার ব্যাপক ওয়াইরলেস যোগাযোগ বিপ্লবের তিনিই ছিলেন পথিকৃৎ।

1
$
User's avatar
@suraiyakter posted 3 years ago

Comments