একটা প্রাইভেট রেডিও স্টশনে আমি কথা বন্ধু হিসাবে কাজ করি। আর আমার লেখাপড়া চলছে। দুমাস পর আমার মাস্টার্সের পরিক্ষা। বাসাতে বাবা, মা থাকেন আর ভাইয়া আছেন দেশের বাইরে শান্তিরক্ষী হিসাবে। অন্যদিকে ভাবী আছেন বাবা মায়ের সাথে। আমাকে অবশ্য বাবা-মায়ের জন্য বেশি চিন্তা করতে হয়না। কারণ ভাবীই সবকিছু দেখাশোনা করে। আমার যখন ইচ্ছা করে আমি বাসা থেকে ঘুরে আসি। তাছাড়া আমার সময় কাটে খুব ব্যস্ততার মধ্যদিয়ে। আগে আমি পত্রিকাতে ম্যাগাজিন লিখতাম। তাছাড়া আমার ফিচার ছাপা হতো। তারপর আমি একদিন ভেবে নিলাম আরজে হবো। যা ভাবা তাই কাজ। সিভি আর বায়্যো নিয়ে অফিসে, যদিও অফিসমাস্টার নিজেই আমার ভালো একজন পাঠক ছিলেন এজন্য উনি আমাকে পরিক্ষা নিরিক্ষা করে তার অফিসে চাকরি দিলেন। আমার অবশ্য তাদের অফিস ভালোই লাগত। . ওখানকার সবার সাথে আমার একটা দারুণ সম্পর্ক জমে উঠলো। আমার প্রেরণাতে অফিসের ফেইসবুক পেজ থেকে ভালো কিছু সচেতনমূলক লেখা প্রকাশ পেতে শুরু করলো। তারপর পাঠকের আগ্রহ বাড়তে লাগলো অন্যদিকে ডিপ্রেশড মানুষের ঢল ছিল অঢেল। এই ডিপ্রশড মানুষ গুলো সবসময় ভালো থাকতে চায়। আর তাদের ডিপ্রেশন কাটিয়ে নিজেকে মুক্ত করতে চায়। যদিও অনেক ইতিবাচক নিউজ পোর্টাল তাদের সাহায্য করে তবুও আমরা কাজ করি। আমাদের লেখা পাঠক পড়ে। মন্তব্য করে। আমরা তাদের মন্তব্য গুলো থেকে আবার প্রশ্নের উত্তর পর্ব করি। তাছাড়া আমাদের রেডিওতে যারা কাজ করতেন তারা ছিলেন খুব দক্ষ। নিপুণ দক্ষতার সাথে তারা কাজ করতেন। কোনো কাজ যদি মুখের কথাতে না হয় তা করা হয় বুদ্ধি দিয়ে। তা করা হয় কৌশলে। . রাতভোর মানুষ জেগে জেগে আমাদের সাথে কথোপকথন করে। তাদের অব্যক্ত কথা, ভালোবাসার কথা, তাদের নানান অভিপ্রায় ব্যক্ত করে আমাদের কাছে। আমার প্রোগ্রাম থাকে গভীর রাতে। মানুষ যখন ঘুমিয়ে পরে। চারপাশ যখন নিস্থব্ধ নিবিড় তখন আমি কথার সাগরে ভাসিয়ে দেয় আমার শ্রোতা দের। তাদের মনের সব আকুতি আর হাজার ভালোবাসার কথা নিয়ে হাজির হই আমি। শ্রোতা যারা আছে তারা তাদের গভীর ভালোবাসা দিয়ে আমাকে গ্রহণ করে। তারপর তাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে আমাকে ডেকে তোলে কথার জন্য। আমি মুগ্ধ হই তাদের ডাকে। আমার রাতগুলো শুরু হয় মিষ্টিত্ব নিয়ে তারপর সারাদিনের নানান কথা তুলে আমার রাতের প্রহর শুরু হয়। . কিছুদিন আগে যখন আমি প্রোগ্রাম করি তখন আমাদের অফিসে শুরু হয় দারুণ একটা ক্যাম্পেইন তা হলো "যার প্রোগ্রামে বেশি রেসপন্স আসবে সে আগামী ২ দিন ছুটি কাটাবে" যদিও আমার প্রোগ্রামে শ্রোতার ঢল ছিলো। তবে যারা আমার থেকে সিনিয়র তারাও খুব জনপ্রিয় ছিলো। অনেকদিন থেকে শুনছে শ্রোতা, ভালোবাসা তো হবেই। ক্যাম্পেইন এর শুরুতে আমার কলিগ প্রথম হতো তারপর আমি হতে শুরু করলাম। আর যখুনি আমি প্রথম হতে শুরু করি তখন আমার মাঝে একটা অহমিকা চলে আসে। আর তারপর আমার অফিসেরছুটি বেশি যাই। আর ওই সময়ে আমি বিভিন্ন গল্প লেখার জন্য ব্যয় করি। এবং কাউকে না জানায়ে আমি একটা সমাজ সচেতনমূলক উপন্যাসে হাত দেই। আমার ছুটির দিনগুলো আমি উপন্যাসের সাথে পাঞ্জা লড়ে শুরু করি। আমি আমার শেরা টা দিয়েই শুরু করি। কারণ আমার ভেতর একটা তারণা জন্ম নেয় যেভাবেই হোক আমার বিজয়ী হতে হবে। আর ইতিহাস সবসময় বিজয়ীর নাম তার বুকে লেখে রাখে। অন্যদের ছুড়ে ফেলে দেয়। আমি বিজয়ী হতে চাই। . তারপর আমার ভেতর আবার জন্ম নেয় আমাকে আরও বড় হতে হবে এমন নেশা। আর এই নেশা আমাকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে। আমাকে খ্যাতির চূরাতে বসাবে আমি ভাবি। আমার মনে একটা খোভ কাজ করতো আমি কেন বড় হতে পারবোনা? আমি অনুধাবন করি আমার মাঝে কী নেই?? আমি ফিটনেস ধরে রাখার জন্য জিম করতে থাকি। আমি সকালে উঠে ব্যায়াম করি। গলা ভালো রাখার জন্য অনেক খাবার মেপেবুঝে খাই। আমার কাছে আমার বড় হতে হবেই এই নেশা অনেক বড় হয়ে যাই। . আমি আমার পেজে আর প্রোগ্রামে বলে দেই এটা যে আমার উপন্যাস এবার বইমেলাতে আসছে। অন্যদিকে শ্রোতার কথার সাথে উত্তর দিয়ে তাকেও জানিয়ে দেই। আমি খুব ভালো করেই জানি আমার বই প্রচুর বিক্রি করে। কারণ আরজে হবার অনেক আগে থেকেই আমি লেখক। শুধু বিজ্ঞাপন এর অভাবে আমার লেখাগুলো পাঠকের কাছে ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছিলোনা। এখন এটাকে আমি মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করি। যেমন সেলিব্রেটি হবার পর অনেক আরজে বই বের করে। নাটক করে। স্যুটিং করে এসব আর কি জনপ্রিয় একবার হবার পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবেনা। . কেন তাকাবে! এখন যুগ হচ্ছে তাল মিলিয়ে চলার জন্য। কে পিছিয়ে থাকবে?

সেদিন রাতের কথা আমি আমার উপন্যাসের শেষ অংশ লিখা শেষ করে একটা কফি শেষ করে লাইভে গেলাম। তারপর মানুষের কাছে জানিয়ে দিলাম আমার কথা। মানুষ আমার ভালোবাসার কাছে নতজানু, এই যে মানুষ আমাকে ভালোবাসে অন্যকে না এই ব্যাপার টা থেকেই আমার কাছে অহংকারবোধ আসে। আর আমি তখন বুঝতাম আমাকে আরও বড় হতে হবে আর আমাকে প্রয়োজনে আরও অহংকারী হতে হবে। আমার মনেহতো আমি ঠিক আছি তবে অন্যরা আমাকে বলতো আমি নাকি অহংকারী হচ্ছি। তাতে অবশ্য আমার কিছুই যায় আসেনা। . কিছুদিন পরের কথা, আমি রাতে আমার প্রোগ্রাম শুরু করেছি। নানান মানুষের অভিব্যক্তি নিয়ে আমি কথা বলছি। কত কথারা জমে ছিলো আমার ভেতর। মানুষগুলো তাদের মনের কথা গুলো অকপটে বলছে। আমি তাদের কথা শুনছি তারপর কথার জবাব দিচ্ছি। যারা ভালোবাসা দিচ্ছে আমিও তাদের ভালোবাসা দিচ্ছি। যারা অনেক কষ্টে আছে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তাদের নতুন জীবন গড়ার অনুপ্রেরণা দিচ্ছি। এটাকে অবশ্য প্রেষণা বলা যাই। তারপর যখন মানুষ গুলোর ছোটছোট ছিঠির উত্তর দিচ্ছি তখন আমার বেশি ভালো লাগছিলো। তারা আমাকে ভালোবেসে চিঠি লেখে। তারা প্রিয় মানুষ কে চিঠি লেখে। আর সেসব চিঠি পড়ে তার প্রিয় ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেবার অভিপ্রায় মাত্র। . এক রাতে আমি ছাদে বসে আছি। তখন মনে হলো আমি না হয় আজকে রাতে গান গেয়ে ফেলি কেমন হয়। ভাবতে ভাবতে গেতে শুরু করলাম। তারপর অনুধাবন করলাম আমার গান গুলো তো অনেক সুন্দর হচ্ছে। নিজেই নিজের গান শুনে বিমোহিত হচ্ছি। তখন আমি চিন্তা করলাম যে, আমাকে গান নিয়েও ভাবতে হবে। আর তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমাকে প্রতিটা কাজের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। তখন অবশ্য আমি গান শেষ করে। খাতা কলমে কিছু গান লিখতে শুরু করলাম, এরপরে গানের কথার সাথে সুর মিলিয়ে আমি যখন গান করছিলাম তখন আমার এক অন্যপ্রকার ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করলো। দুদিন বাদে আমি আমার এক বন্ধুর সাথে আলোচনা করি, ওর স্টুডিও থেকে আমি গান গেতে ইচ্ছুক। বন্ধু শুনে মহাখুশি। তারপর তো ওর কথাতেই আবার গান করলাম। আর তারপর সেই গান গুলো যখন জনপ্রিয়তা পাচ্ছিলো। আমি ভেবে নিলাম আমাকে আরও গান করতে হবে। . আমি যখন গানের প্রতি ঝুকে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম আমি একাধারে অনেক কাজ করতে পারছি, আমি বই লিখছি, আমি আরজে হচ্ছি, আমি গান করছি। সবমিলিয়ে আমার কাছে নিজেকে অনবদ্য লাগতে শুরু করলো। তবে সবকিছুর উর্ধে ছিলো আমার আরজে কাজ টা। এটাতে বেশি ভালোবাসা অর্জন করা যাচ্ছিলো। . তারপর অবশ্য আমি বই বের করলাম। তাতেও বিজ্ঞাপন প্রচার করলাম। কত মেলাতে গেলাম। পাঠকের সাথে দেখা করলাম। তারা আমাকে ভালোবাসা দিলো। তারপর তাদের কেনা বইতে সিকনেচার করে দিলাম। এ যেন আমার চোখে স্বপ্নের মতো। কয়েকবছর আগেও আমাকে যারা চিনতো না। আমার কোনো মূল্য ছিলোনা তারা আজ আমাকে ডেকে কথা বলে। আমার খোঁজখবর রাখে। বইমেলা শেষে জানতে পারলাম আমার বই এবার প্রচুর পরিমাণ বিক্রি হয়েছে। এবং তা থেকে বেশ মোটা একটা অর্থ আসছে। আমিও তার অংশ পেয়েছিলাম। পাঠকের ভালোবাসা আর শ্রোতার ভালোবাসা পেয়ে যখন আমি ধন্য ঠিক তখুনি আমার জীবনে এলো আরেকটা খুশির সংবাদ। . একজন নির্মাতা আমাকে তার অফিসে ডাক দিলেন। কারণ বলতে তার নতুন নাটকে আমাকে চান তিনি। কেন প্রশ্নের উত্তরে, উনি এমন কাউকে চাচ্ছেন যিনি একাধারে অনেক গুলো কাজ পরদর্শীতার সাথে করতে পারে। এবং জনপ্রিয়। যাতে নাটক করলে বাজিমাত করতে পারে। আমার অবশ্য প্রথম স্যুটিং বলে একটু কষ্ট করতে হয়েছিলো। তাতে অবশ্য অনেক কষ্ট না। কারণ অন্য যারা ছিলো তারা আমাকে বেশ সাহায্য করতো। এরপরে আমার নাটকের স্যুটিং শুরু হতে থাকে। নায়িকার সাথেও আমার একটা ভাব হতে থাকে। আমি ছিলাম রেড়িওজকি আর মেয়ে ছিলো একটা ডিপ্রেশনের রুগী যে আমার কণ্ঠ শুনে নতুন করে বাঁচতে শুরু করে। যে আগামীর জন্য নতুন জীবন ফিরে পেতে শুরু করে। একটা সময় মেয়েটা আমার সাথে কথা বলে তারপর মিট.. বলা চলে বন্ধুত্ব তারপর ভালোলাগা আর প্রেম এসব নিয়েই নাটকের কাহিনী। তবে ডিপ্রশনে কাটিয়ে তোলার জন্য নির্মাতা বেশ দারুণ করে গল্পটা উপস্থাপন করেন। আমিও আমার সর্বোচ্চ দিয়ে স্যুটিং টা শেষ করি। আমার অনেক ভালো লাগছিলো অভিনয় করতে। কত সরল একটা জীবন। . নাটক যখন এডিটিং শেষ করে প্রচার হতে শুরু করে আমি খেয়াল করলাম আশেপাশের মানুষ গুলো আমাকে নিয়ে বেশ প্রশংসা করতে শুরু করেছে। আর আমার ভেতর জন্ম নিয়েছে অহংকার। আমি যখন দেখছি আমি অনেক ভালো করছি। আমি কারও থেকে পিছিয়ে নেই। আমি কেন অন্যের কাছে যাবো? অন্যরা পারলে আমার কাছে আসবে। তখন আমার মাঝে অহংকার বোধ অনেক বেশি উগ্র হতে থাকে। আমি কারও কাছে ছোট হচ্ছিনা। আমার সেলারি বাড়িয়ে না দিলে আমি প্রোগ্রাম করবোনা সোজা বলে দিচ্ছি। আমার গান গুলোও বেশ প্রশংসা পাচ্ছে আমি একটর হচ্ছি আমার আর কিসের অভাব এখন? সবমিলিয়ে চারপাশ যখন আমার কাছে সব তখন অন্যের কাছে মাথা নোয়াবার কোন প্রয়োজন আমি দেখছিনা। . আর মেয়ে? এ তো আমার কাছে হাতের ময়লা এখন, প্রতি সপ্তাহে একটা করে মেয়ের সাথে রাত কাটে আমার। নতুন মেয়ের শরিরের গন্ধ না পেলে আমার ঘুম আসেনা। রাতভোর মেয়ের কাছে না থাকলে আমার নেশা কাটেনা। আমার মূল্য যতো বাড়ছে আমি ততই অহংকারী হচ্ছি। আর তার সাথে আমার মেয়েলি স্বভাব বাড়তে শুরু করছে। আজকাল মেয়ে ছাড়া একটা রাত আমি কল্পনা করতে পারিনা। মেয়েরা স্বেচ্ছা তে আমার রুমে আসছে। তারপর রাত কাটিয়ে তৃপ্তি নিয়ে আমার ঠোঁটে আলিঙ্গন করে বাড়ি যাচ্ছে। এই শহর টা যখন এই নিয়মে চলছে তখন আমাকে পিছিয়ে পড়লে চলবেনা। একটা মেয়ের সাথে থাকার ইচ্ছা আমার মাঝে নেই। আমার চাই নিত্যনতুন মেয়ে। নতুন শরীর! . শহরের উপরে একটা বাড়ি কিনেও ফেললাম তারপর আর কি। বাবা মায়ের সাথে একটা সময় সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। তারা তাদের মতো আমি আমার মতো। আমার জীবনে কোন কিছুই অভাব নেই। আর বাবা-মায়ের প্রতি অতি আবেগ দেখানোর মতন কোন অনুভূতি আমার কাজ করতো না। আমি ভালো আছি প্রচণ্ড ভালো। আমার সব অভাব আমি চারপাশ থেকে ছিনিয়ে আনছি। আমার ধারণা না খেয়ে থাকলে কেউ আমাকে ভাত দেবেনা সেহেতু আমি এই দেশকে কেন ভালোবাসব? আমার কাজ হবে এই দেশ থেকে অর্জন করা অনেক টা দেশ কে ধর্ষণ করার মতন। . আশেপাশের কোন কলিগ বা বন্ধু কেউ কোন বাজে কথা বললে আমি তাকে ছাড়ছিনা। কেন বাজে কথা বলবে? আমি কারও বাপের টাকাতে চলিনা। আমি আমার রাজ্যে রাজত্ব করি এই কথাটা আমি সবায় কে বুঝিয়ে দিতে চাই সবসময়। আমার অনেক বন্ধু আছে তারা আমাকে অনেক নীতিবাক্য দেয়। আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করে আমি ভুল পথে আছি। আমি তাদের সাথে সবরকম যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। আমি শুধু আমার কাজ কে বিশ্বাস করি। আর আমার নিজেকে। আমার মাঝে সব আছে। কাউকে তোয়াক্কা করার প্রয়োজন আমার মাঝে নেই। . দিন গুলো চলতে থাকলো স্বাভাবিক নিয়মে। একদিন হলো কী, একটা পার্সেল এলো আমার রুমে। এসেছিলো সকালের দিকে। আমি রাতের দিকে খুলে তাতে অবশ্য কিছু চিঠি আর একটা লিখা ডাইরি পেলাম। আর ব্যবহৃত মেয়েদের সামগ্রী। আর সবমিলিয়ে বলতে গেলে প্রেম নিবেদন। ওই যে সস্তা প্রেম যাকে বলে। 'দূরত্ব বজায় রেখে পার্কে বসা তারপর আঙুল ধরা ফোনে কথা বলা, বিয়ে করব প্লান করা' অথচ আমার মেয়ে ছাড়া রাতই কাটেনা। আমি একটা পৈশাচিক হাসি দিলাম ওই পার্সেল থেকে। তারপর লাত্থি মেরে ফেলে দিলাম। এখন রাত একটু পরেই নতুন মেয়ে আসবে আর সেখানে জেগেজেগে এইসব ট্রিপিক্যাল প্রেম আমাকে মানাবে? আমি মেঘ করব এইসব প্রেম? একটা অট্টহাসি দিলাম, হাসির শব্দে চারপাশ গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজ হতে থাকলো। . প্রোগ্রাম শেষ করা তারপর রুমে একটা মেয়ে নিয়ে আসা। ড্রিংক করা আর তার শরিরকে ক্ষতবিক্ষত করা এই আমার রাতের রুটিন ছিলো। আমার কাছে সবথেকে লোভনীয় বস্তু নারীর দেহ যা আমাকে পাগলের মতন টানে। আমাকে নেশার মতো জাগিয়ে তোলে। আমার ভেতরে তখন আর আমি থাকিনা। আমার ভেতর জন্ম নেয় অন্য এক দানব যে মেয়েটিকে কাঁদিয়ে পূর্ণতার ঢেঁকুর ছারে। আমার কাছে ভালোবাসা বলে কিছু নেই। এক সাথে থাকার কোন প্রয়োজন নেই। আমার কাছে রাত কাটানো সব। আমার সাথে রাত তোমাকে কাটাতে হবেই কারণ আমি মেঘ। . মানুষ যখন সফলতা পেয়ে যায় তখন কিন্তু আগে কী ছিলো? কোথা থেকে এসেছে? এসব ব্যর্থতা ঢেকে ফেলে। তারপর নতুন একটা পরিচয় জন্ম নেয় তার মাঝে। আর তারপর সেই পরিচয় দিয়েই কাজ হাসিল করে। আমিও আমার অতীত ভুলে গেছি। আমি 'কে ছিলাম' তা আমার কাছে বড় নয়। আমি 'কী এখন' আমার কাছে সেটা বড়। আমি 'কী করছি' সেটা বড়। কারণ যগতের থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ অর্জন করতে পারছেনা জনতা তাকে দাম দেবেনা। যখন সে অর্জন করছে জনতা তার পা চেটে দিচ্ছে। আজ আমি সফল কেন আমি নিজের অবস্থান চেঞ্জড করবোনা?? আমি আমার মতো। কাউকে আমি তোয়াক্কা করিনা। আমার উন্নতির জন্য আমি সব করতে প্রস্তুত। . কয়েকদিন পরের কথা পার্সেল যিনি রেখে গিয়েছিলেন উনি এসে আমার নাম্বার নিয়ে গেছেন। আমার কেয়ার টেকার বলল, এরপরে গত উনি একটা মিষ্টি কন্ঠের মেয়ে আমাকে কল দিয়েছিলো। যদিও প্রথমে অফিসিয়াল ভেবে কল তুলিনি। তবে মেয়েটা আমাকে বলল, 'আমি অবনি আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে' তার নাম শুনে অপরিচিত মনে হলো তখন ভাবলাম কথা বলা যেতে পারে, "হ্যালো কে বলছেন?" "আমি অবনি" "জী বলুন" "আসলে ভাইয়া আপনার সাথে মিট করে তারপর বলবো, আমি কী আজ আসতে পারি?" "আমি সারাদিন ব্যস্ত থাকি তাছাড়া লেট নাইট প্রোগ্রাম আজ এজন্য আপনি সন্ধার পর আমার বাসায় আসুন তখন আমি বাসায় থাকবো" "জী আমি আসবো" . তারপর কল রেখে দিলাম, আমি অবশ্য এতটাও বোকা না যেয়ে প্রথম অচেনা কাউকে রুমে আপ্যায়ন করব। তাতে আমার গ্লামার নষ্ট হবে। আগে আমি সুযোগ পেয়ে নেয়। তারপর আমার প্রেমের ফাদে আমি ফেলবোই এরপর আমার কাঙ্কিত বিছানা। আমার কাছে ভালোবাসা মানেই বিছানা। এর অন্য কোন ব্যাখ্যা আমার নেই। তাছাড়া আমার কলিগ নিজেই আমাকে তার বিছানাতে ডেকেছিলো। আমি যাই নি। কারণ আমি মেঘ বোকা নই। আমি তাকে আমার রুমে এনে ভোগ করেছি যদিও তারও চাহিদা ছিলো। আরজে যারা করে তাদের কন্ঠে একটা মাধুর্য থাকতে হয় তা নাহলে জমে না। আর এজন্য তারা রাতের বেলা ক্যাঁচক্যাঁচ করবে আর দিনের বেলা মাথাতে কাপড় নেবে। যগতের মানুষ কত বোকা। . এই তো সেদিন একজন কম বাজেটের প্রফিউচার আমার রুমে এসেছিলো তারপর আমাকে বলে 'মৌলিক গল্প বাজেট কম' আমি তাকে বুঝিয়ে দিলাম 'এসব কম বাজেটের গল্প নিয়ে আমাকে অফার করার স্পর্ধা কে দিয়েছে আপনাদের??' ভদ্রলোক মুখ টা কাছুমাছু করে বিদায় হলো। আমি এখন জনপ্রিয় আমার কাউকে তোয়াক্কা করার সময় নেই। . আম্মা কাল বলছিলো একবার,

"বাবা তোর খুব বেশি কাজ না থাকলে একবার এসে দেখে যা"

"না আম্মা আমার কাজের খুব চাপ এখন যাওয়া যাবেনা, আমি টাকা পাঠায়ে দিচ্ছি লাগলে আরও দিবো আমি যেতে পারবোনা এখন রাখি"

একটা সময় আমি দাড়ি কামানোর জন্য যখন টাকা চেয়েছি আমার পরিবার আমাকে বেকার বলে অনেক কথা শুনিয়েছে আমার কোনো কালেই কথা সহ্য হয়না। এজন্য আমি অতীত সম্পর্ক ঝালাই করার প্রয়োজন মনে করছিনা। আমার কাছে আমার বর্তমান আর আমার বানানো ভবিষ্যৎ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কে কী হয় আমার এসব আমার কাছে তুচ্ছ। যদি এই মানুষ গুলোকে আমি গুরুত্ব দিতে বসি তবে আমার এই ইমেজ আর থাকবেনা। মিডিয়াতে টিকে থাকতে হলে অনেক কিছু লুকাতে হয়। মাঝেমাঝে জীবিত বাবা-মা কে মৃত বানাতে হয়। তারপর সাংবাদিক দের উপর দোষ চাপিয়ে বলতে হয় 'আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা' পাগল ভক্ত আমাকে শুনবে আমার পাগল তারা হলুদ সাংবাদিক দের না' তখন অবশ্য আমার পৈশাচিক আনন্দ হয়। আমার সাথে কোন সাংবাদিক লাগতে আসেনা। তারা জানে মেঘ এক চুল ছাড় দেবেনা। প্রয়োজনে চাকরি খেয়ে নেবে। এতটুক ক্ষমতা অর্জন করেছে। . পার্সেল দেওয়া মেয়েটা যখন এলো আমার রুমে তখন অবশ্য আমার কাজের চাপ ছিলোনা। আমি উপর থেকে তাকে একবার দেখে নিলাম, দেখতে চিকণ তাছাড়া সুন্দর নয়। আমার ভোগের জন্য একদম যায়না। আমি কেয়ার টেকার কে টেক্সট করে "বলো উনাকে আমি বাসায় নেই" মেয়েটা কথাটা শুনে কেমন যেন শুকনা মুখে বিদায় হলো, তাতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসেনা। আমি আমি এসবসব গায়ে মাখিনা। এসব আবেগ এসব মন খারাপ মানুষের কষ্ট গায়ে মাখলে জীবনে বড় হওয়া যায় না। আমাকে বড় হতে হবে। অনেক বড় যতটা বড় হলে কাউকে আর বড় মনে হয়না। নিজেকে আসমানের চাঁদ হতে হবে। অনেক বড় হতে হবে। . আমি কারও সাথে সেধে কথা বলতে যাই না। ইন্ডাস্ট্রি তে আমার অনেক নামডাক আছে। তবে সবায় জানে আমি অহংকারী। আমাকে দিয়ে পা চাটা হবেনা। আমি আমার মতো। এজন্য আমাকে অবশ্য কারও সাথে মিলিয়ে রাখা হয়না। কেন আমি অন্যের কাছে ছোট হবো? ও মানুষ আমিও মানুষ। আমার কাছে আমিই বড়। টাকাপয়সা? সম্মান? খ্যাতি? কী কম আছে আমার? . মাস দুয়েক পরের কথা, তখন অবশ্য আমার অনেক গুলো গান আর নাটক পরপর রিলিজ হতে থাকে। আর আমিও যেন স্বর্নের চাঁদ হাতে পেয়েছিলাম। আকাশচুম্বী আমার মূল্য তখন। তাছাড়া আরজে প্রোগ্রাম থেকেও আমার অনেক অফার আসে, সবায় দাওয়াত করে তাদের চ্যানেলে কাজ করতে। ব্রান্ড এম্বাসেডর হতে বলে কিছু কোম্পানি। আমি বলি 'না' এসব ছোটকাজ আমাকে মানাবেনা। যখন আমি অনেক সফলতা পেয়ে ধন্য তখন আম্মা একদিন আমাকে কল দিলো,

"হ্যালো, বাবা কেমন আছিস??"

"হুম আম্মা বলো?"

"তোর কী কাজের চাপ অনেক?"

"আছে চাপ কেন?"

"তোর ভাবীর তো বাচ্চা পেটে তোকে অনেক দেখতে ইচ্ছা করছে তুই কী আসবি??"

"কেন টিভি খুললেই তো আমাকে দেখা যায় সামনে দেখার কী আছে?"

"তোর বাবাও বলছিল কয়েকবছর বাড়ি আসিস না"

"তাকে বলে দিও আমি যখন ঢাকাতে আসি সে আমাকে বলেছিলো আমি অযোগ্য। আজ আমি যোগ্য বলে দিও"

"এখনো রেগে আছিস আমাদের উপর??"

"আমার কারও উপর কোন রাগ নেই। আমি আমার মতো, আমার কেউ নেই আম্মা"

"আমি তো তোর মা আমাকে দেখে যা"

"আমার আসা লাগবেনা। তার জন্য তোমার বড় ছেলে আছে। যে অনেক টাকা আয় করে। তার বাবা আছে যার কাছে নিজের ইগোর অনেক দাম। তোমার বেটারবউ আছে তারা তোমাকে দেখবে আমি আসবোনা"

"তোর ভাইয়ের শরিরটা ভাল না"

"ঠিক আছে আমি টাকা পাঠিয়ে দেবো, আমি আর বাড়ি ফিরবো না"

"কিন্তু বাবা"

"রাখি আমার অফিস আছে" . সেদিন অবশ্য আমার অতিরিক্ত মেজাজ খারাপ ছিলো এজন্য বাসায় যাবার কথা বলিনি। আমার খারাপ লাগেনা তা না। যখন ড্রিংক করি তখন মাঝেমাঝে বাড়ির কথা মনে পড়ে। গ্রামের ছেলে ছিলাম আমি। অনেক প্রতিভা থাকার পরেও আম্মা আর ভাইয়া ছিলেন ইসলামী মাইন্ডে আর বাবা ছিলেন ঈমাম। এজন্য আমার স্বপ্ন আর পূরণ হতে দেইনি। রাগ দেখিয়ে একদিন ঢাকাতে এলাম। তারপর পড়ালেখা আর তারপর রেডিওতে। এখন আমি স্বচ্ছল। এই সমাজে চলার মতো টাকা আমার হয়েছে। আমি এখন নিজে বাঁচতে পারি। আমি নিজেও একটা সময় বাবার সাথে মসজিদের চারপাশ পরিষ্কার করেছি। বাবার সাথে মসজিদের মেঝে পরিষ্কার করেছি। তারপর মানুষের ব্যবহার করা টুপি আর গামছা গুলো ধুয়ে দিয়েছি। অনেক কাজ করেছি আমি অতীতে। তবে এতকিছুর মধ্যে বড় হবার স্বপ্ন সবসময় ছিলো আমার। বাড়ি থেকে কেউ চায়তো না আমি মিডিয়াতে কাজ করি। এজন্য আমার রাগ। তারপর আর বাড়ির দিকে ফিরিনি। . আজকাল আম্মা বেশিই কল করে। তাতে কী! আমি বাড়ি ফিরবো না। আমার কাছে এখন এই স্বার্থপর ঢাকাশহর অনেক ভালো। এখানে আমার কাপড় অন্য কেউ ধুয়ে দেয়। আমার কাজের লোক আছে তারা আমার সব কাজ করে দেয়। অন্যের মসজিদে কাজ করার ছেলে ছিলাম আমি। গ্রামে থাকলে এখনো ওই রকমি থাকতাম। এখন আমি আমার জীবনের রং বদলে ফেলেছি। এজন্য আর গ্রামে যাবার ইচ্ছা আমার মাঝে নেই। . সেদিনের অফিসের বসের সাথে আমার খুব কথা কাটাকাটি হয়। সে আমাকে থ্রেড দিয়েছিল। আমিও ছেড়ে কথা বলিনি। আমার জবের অভাব নেই। বাড়ির সামনে লাইন মারে জবের জন্য। এই বলে যখন বাড়ি ফিরেছি আর দুদিন অফিসে যাচ্ছিনা। তখন ল্যান্ড ফোনে বস কল দিয়ে স্যরি বলেছে। আর আমি হাসছি। আর ফিরবো না বলে দিয়েছি। আমার মাঝে ক্ষমার কোন লক্ষণ আমি খুঁজে পাইনি আজও.. . জীবনের পথ সবসময় সরল হয়না। মাঝেমাঝে পথ অনেক বাকা হয়। মাঝেমাঝে আমরা যা চাই তা যেন পূরণ হয়না। আবার আমাদের অজানা এমন কিছু কাজ হয় আমাদের সাথে যা আমরা কল্পনা করিনা। আমাদের জমিয়ে রাখা এতবছররের সব খ্যাতি সব যেন তখন তুচ্ছ। আমার জীবনে এমন একটা সময় আসবে। আজ আমার কাছে তা মূল্যহীন মনে হয় জীবন কে। সেদিন অফিস থেকে লেট নাইট প্রোগ্রাম শেরে একটা কলগার্লের সাথে রুমে আসবো বলে তাকে কল দিলাম। তারপর আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে আনমনে রাস্তা দিয়ে সামনে আগাচ্ছি। মনের মাঝে একটা অজানা সুর বেজে উঠেছে। কত বছরের খুধার্ত যেন আমার মন। আমার শরির যেন কতবছর অন্য শরির কে ছুঁয়ে দেইনি। কতগুলো রাত আমি জাগিনি। এমন ভাবতে ভাবতে আমি রাস্তার মাঝামাঝি এসে দাঁড়িয়েছি। আমার মুখে একটা সিগারেট আর কানে হেডফোন। চোখমুখ বুজে আমি অনুভব করছি গানের কথা গুলো। আজ আমি উপভোগ করব এই নগ্ন রাত কে। .. হঠাৎ একটা বিকট আলো আমার মুখে পড়লো। কিসের আলো? আর এতো তিব্র আলো কেন আমার মুখে। আমি কী করব কেমন যেন মূহুর্তের মাঝে দিশেহারা হয়ে গেলাম। তারপর কিছু বুঝে উঠবার আগেই আমার শরিরে একটা গাড়ি এসে ঠেকল। আর আমি ছিটকে বারি খেলাম ল্যাম্পপোস্টে প্রচণ্ড জোরে ব্যথা পাবার কারণে আমি আমি চিৎকার করতে লাগলাম। তবে আশেপাশে কেউ ছিলোনা। প্রচণ্ড কষ্টে আমি ছটফট করতে থাকি। আমি যেন এতো কষ্ট এর আগে কখনো পাইনি। আমি সহ্য করতে পারছিনা। আমি চিৎকার করছি। তবে আশেপাশে কাউকে পাচ্ছিনা। আমি সাহায্যের জন্য মেয়েটিকে কল দিলাম। সে আমার কান্না শুনে সিম বন্ধ করে দিলো। আমি তখনো ব্যথার চটে কাতরাচ্ছি। তারপর অবশ্য আমার মনে নেই। সকালে চোখ মেলে দেখি আমি হসপিটলের বেডে আর আমাকে বাঁচিতেছে এক পুলিশ ভাই। উনি আমাকে চিনতো নাটক দেখে। আর তাছাড়া রাস্তাতে বিপদগ্রস্থ হবার পর। আমি ভালো মতো কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা। ব্যথার জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে। আমার পা দুটো উপরে বেধে রাখা হয়েছে। তাছাড়া এই খবর জানার পর দুচারজন দেখতে এলেও। যারা আমার কাছের মানুষ ছিলো তাদের কারোর পাত্তা পেলাম না। বুকের মাঝে আমার একটা দহন শুরু হলো। মানুষ কত বেঈমান কত স্বার্থপর হতে পারে? অদ্ভুত কান্ড ঘটলো আমার সাথে সেই দেখতে কালো অবনি নামের মেয়েটা আমাকে দেখতে এসেছেন। আমি তার চোখে দিব্যি জ্বল দেখতে পাচ্ছি। আর দেখছি আমার জন্য তার ভেতরে যে ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে সেটা। অথচ আমি জানি আমি আর হাটতে পারবোনা। আমার দুইটা পা অকেজো হয়ে গেছে। আমার এখন হুইলচেয়ার ছাড়া আর কোন গতি নেই। আমার জীবন এখন থমকে গেছে। অথচ এই মেয়েটা আমার সাথে দেখা করতে এসেছে। . মাস খানেক আমার প্রচণ্ড কষ্টের পর বাসাতে পাঠিয়ে দেয়। এখানে আমাকে দেখতে আমার বাবা-মা-ভাইয়া এসেছেন। ভাবীর নাকি একটা ছেলে হয়েছে নাম 'সিয়াম আহমেদ' ভাইয়া আমার কাধে মাথা রেখে কাঁদছেন। বাবাও আমার পাশে দাঁড়িয়ে চোখ মুসছেন। আম্মা পাগলের মতো বিলাপ বকছেন। পরে জানলাম অবনি বাবা মাকে বলেছে আমার কথা। আজকাল আম্মা আমার সাথে থাকেন। আর অবনি আমার কাছে সবসময় থাকে। আমার কিছু লাগলে; বা একটু ব্যথাতে উহু করে উঠলে সে ছুটে আসে। তারপর আমার চোখে তাকিয়ে থাকে। আমি তার চোখে ভালোবাসা দেখি। অথচ আমি সুস্থ থাকা সময় তাকে পাত্তা দেইনি। আমার ঘরে আসতে দেইনি। কত বাজে মেয়ে আমার বিছানাতে এসেছে আজ কারও পাত্তা নেই। আমি আজ অকেজো এজন্য। আমি হাটতে পারবোনা এজন্য। আমার সব প্রতিভা নষ্ট হয়ে গেছে এজন্য। আজ আমার জায়গাতে অন্য কেউ প্রোগ্রাম করছে। আমার জায়গা অন্য কেউ গান করছেন। শূন্য স্থান সবসময় থাকেনা। অথচ আমি পড়ে আছি হুইলচেয়ারে। আমার জীবন এখন অন্ধকার। আমার অনেক টাকা আছে। তা দিয়ে আমি হয়ত দিব্যি চলে যেতে পারব। তবে আমার সেই ক্যারিয়ার তার কী হবে? যার জন্য আমার এত দেমাগ? যার জন্য আমার এতো অহংকার তার কী হবে? আজ সব হারিয়ে আমি নিঃস্ব। আমার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকলো না। শয়নের পাশে শুয়ে আম্মা কাঁদে। অবনি নামের মেয়েটা একটু দূরে দাঁড়িয়ে চোখের জ্বল মোছে। যদিও ওর আসল নাম মায়া। আমাকে বলেছে অবনি। যে মানুষ টা আমাকে ভালোবাসে। আমার এই অসহায় দিনে যে আমার পাশে আছে। . আচ্ছা আমার তো কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাহলে কেন ভালোবাসে? আর আমি তো এখন পঙ্গু। আচ্ছা এটা কিসের শাস্তি আমার? পাপের নাকি অহংকারের? কই আমি যখন নামায পড়তাম মসজিদে পড়ে থাকতাম তখন তো এতো বড় বিপদ আসেনি। তবে আজ কেন আমি এতো বড় সেলিব্রেটি হবার পর এমন বিপদ এলো? 'হায় ঈশ্বর এ কোন পাপের শাস্তি দিলে আমাকে?' . আজকালকার আমার জীবন কাটে বসেবসে। আমি আর কখনওই ভালো হবোনা। আমার বাড়িতে এখন আর সাংবাদিক ইন্টার্ভিউ নিতে আসেনা। জবের জন্য আর কেউ কল করেনা। কেউ আমাকে আর স্যার বলে ডাকেনা। কেউ আর আমার জন্য ব্যাকুল হয়ে বিছানাতে শীৎকার করেনা। কারও পিঠে আমার স্পর্শ ছুঁয়ে যায়না। আজ আমি পঙ্গু। কেন এমন হলো আমার সাথে? "পাপে বাপের ছাড়েনা" আমার পাপের শাস্তি আমার সাথে এভাবে হলো? আজ আমি বিছানাতে বসে থাকি নিজে উঠে এক গ্লাস পানি খাবার ক্ষমতা আমার নেই। কেন আমার সাথে এমন হলো? আমি এসব ভেবে অশ্রুজলে সিক্ত হই। তাতে অবশ্য কারোর কিছু যায় আসেনা। কেউ আমাকে আর তোয়াক্কা করেনা। সবায় সবার মতো। ব্যস্ত নগরির সবায় ব্যস্ত। কেউ কারও জন্য না। কেউ আমার জন্য না। আর আমি সেই আগের লেখক মেঘ নেই। ভেবেছি এখন লেখক মেঘ হয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেবো। আমার জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো পৌঁছে দেবো পাঠকের কাছে। আচ্ছা এই পঙ্গু লেখকের বই কে পড়বে?
. আমার আর অনেক বড় হওয়া হলোনা। আমার আর অহংকার নিয়ে বেঁচে থাকা হলোনা। আজ আমি পঙ্গু। আচ্ছা পঙ্গুদের আবার অহংকার কিসের? জীবন রং বদলায়। জীবন অনেক কিছু বুঝিয়ে দেয়। প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়। কেউ বুঝতে পারেনা। তবে যে পাপ করেছে সে ঠিক বুঝতে পারে।কাল আমি পাপ করেছি ইসলাম থেকে দূরে থেকেছি আমি আজ তার শাস্তি পাচ্ছি। আমি ইসলামের সাথে থাকলে আমার মাঝে কোন অহংকার থাকতো না। আর আমি আজ পঙ্গুদের খাতাতে থাকতাম না। আজ আমার জীবন অহংকারশূন্য এক পঙ্গুত্ব জীবন………… . ~ অহংকার ~simul _____simul____

7
$
User's avatar
@Simul152 posted 3 years ago

Comments

nice article,,, good job brother

$ 0.00
3 years ago