একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তরঃ

আমাদের অনেক দ্বীনি ভাই-বোন ভ্রান্ত ও বাতিল আকিদা হতে সহিহ/বিশুদ্ধ আকিদার দিকে, শির্ক হতে তাওহীদ ও বিদ'আত হতে সুন্নাহ-র দিকে ফিরে আসছে, তারা অতীতে নবীর(সা) পদ্ধতিতে সলাত আদায় না করে কোনো মাজহাবের ইমামের পদ্ধতিতে সলাত আদায় করেছে

এখন প্রশ্ন হলো, অতীতের করা এসব পাপ থেকে তারা কি মুক্তি পাবে না? তাদের অতীতের অজ্ঞতাবশত ভুল ইবাদতের সাওয়াব কী তারা পাবে???

জওয়াবঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার জন্য, যিনি আমাদের সহিহ আকিদা-মানহাজের এই প্লাটফর্ম কে দিন-দিন নতুন নতুন সদস্য দ্বারা শক্তিশালী করছেন।

এই কথা সত্য যে, শির্ক ও বিদআত তথা কুরআন ও সহিহ হাদীসের দলীল-প্রমাণ বিহীন বা মনগড়া ইবাদত কবীরা গুনাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ

আল্লাহ বলেন,إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِۦ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذٰلِكَ لِمَن يَشَآءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرٰىٓ إِثْمًا عَظِيمًا

নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করবেন না। এটা ছাড়া অন্য সব যাকে ইচ্ছে মাফ করবেন এবং যে আল্লাহর সাথে শরীক করল, সে এক মহা অপবাদ আরোপ করল। (সূরা নিসা,৪/৪৮,১১৬)

উল্লেখ্য যে, শির্ক করার গুনাহ আল্লাহ মাফ করবেন না, এ ছাড়া অন্য যে-কোন গুনাহ তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করবেন এই আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা হলঃ

"দুনিয়াতে কেউ বড় শির্ক করে এবং সেই শির্ক থেকে তাওবা না করে মারা গেলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামি হবে কিন্তু অন্য কোনো কবীরা গুনাহের কারণে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামি হবে না"

এই আয়াত পড়লে অনেকের মনে হতে পারে, আমরা জীবনে অনেক শির্ক করেছি, আল্লাহকে অনেক সময় খোদা ডেকে, মাযারে বা পীরের কাছে মানত মেনে, ওরশ মাহফিল করে, তাবিজ লটকিয়ে, আল্লাহকে সর্বত্র বিরাজমান ও নিরাকার মনে করে, নবী-রাসুল ও ওলী-আউলিয়া কে জীবিত ভেবে, নবীকে নূরের তৈরি বা আল্লাহর নূর ভেবে শির্ক করেছি

এই শির্কের গুনাহ তো তাহলে আল্লাহ মাফ করবেন না।

কিন্তু বিষয়টি এমন নয়, মানুষেরই ভুল হবে সে আবার তা সংশোধন করে নিবে এটাই সুন্নাহ কিন্তু ভুলকে ভুল বলতে অস্বীকার করা, ভুলকে সঠিক, বিদ'আতকে সুন্নাহ আর শির্ককে তাওহীদ মনে করা, বাপ-দাদার বা কোনো বড় হুজুরের কোনো মাজহাবের দোহাই দিয়ে ভুলের উপর টিকে থাকার নাম ইসলাম নয় বরং এটিও এক প্রকার "শির্ক" এটা হচ্ছে গোড়ামী এবং অহংকার, অজ্ঞতা।

দুনিয়ায় কেউ যদি শির্ক-বিদআত ও ভ্রান্ত আকিদা হতে তাওহীদ ও সুন্নাহ এবং সহিহ আকিদায় ফিরে আসার পর সে তাওবা করে তবে তার অতীতের শির্ক-বিদআতের গুনাহ আল্লাফ মাফ করবেন।

আল্লাহ বলেন,আমি তো রসূলদেরকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী করে পাঠিয়েছি, অতঃপর (রসূলের আনুগত্য করে) যারা ঈমান আনে ও নিজেকে সংশোধন করে তাদের নেই কোন ভয়, নেই তাদের কোন দুঃখ। (সূরা আন'আম,৬/৪৮)

শির্কের রাস্তা থেকে ফিরে এসে আবার যেন সেই রাস্তায় বা অন্য কোনো গোমরাহীর রাস্তায় ফিরে না যায় এজন্য ইসলামে "ভুল সংশোধন" কে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহ আরো বলেন, আর যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আর মুহাম্মাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে- কারণ তা তাদের প্রতিপালকের প্রেরিত সত্য- তিনি তাদের মন্দ কাজগুলো মুছে দেবেন, আর তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটাবেন। (সূরা মুহাম্মাদ,৪৭/২)

ইমান আনার পর কিন্তু আর শির্ক করা চলবে না কিন্তু আমরা অধিকাংশ বাংলাদেশের মুসলিম তাওহীদের কালেমা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" আর কালেমা শাহাদাত "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ" পড়ার পরেও আমরা শির্ক ও বিদ'আতে লিপ্ত হচ্ছি।

অথচ এই কালেমার মূল দাবী হল

"আল্লাহকেই যাবতীয় ইবাদত পাওয়ার মালিক বানানো এবং আল্লাহকে রব বা সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, বিপদ-আপদ দেওয়া ও তার থেকে উদ্ধার করার একমাত্র মালিক এবং আল্লাহর নাম ও সিফাত (গুণাবলী) তে তাকে একক মেনে নেওয়া।

মুসলিমদের আজ উন্নতি নেই কেন? অত্র আয়াতে আল্লাহ মুসলিমদের উন্নতির ৩টি শর্ত আরোপ করেছেনঃ

১.ইমান আনা ২. নেক আমল করা ৩. মুহাম্মাদ(সা) এর উপর যা নাযিল হয়েছে তার অনুসরণ করা।

এই ৩টি বিষয় খুবই সংক্ষেপে বলতে চাইঃ

১. ইমান কীঃ ইমান অর্থ স্বীকৃতি। ইমানের পরিপূর্ণতা লাভ হয় ৩টি বিষয়ের সমন্বয় হলে।

১. অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস ২. মুখে স্বীকার ৩. আমল-ইবাদত করা

একদল মানুষ মনে করে, কেউ ইমান আনার পর কবীরা গুনাহ করলেই সে " কাফের" এদের বলা হয় খারেজী।

আরেক দল ভ্রান্ত ফিরকা যারা মনে করে ইমান আনার পর কেউ কবীরা গুনাহ করলে আর তাওবা না করে মারা গেলে সে মুসলিম ও নয়, কাফের ও নয়।

আরেকদল ভ্রান্ত ফিরকা যারা হচ্ছে "মুরজিয়া" এই মুরজিয়ারা আমল-ইবাদতের কোনো গুরুত্ব দেয় না, তারা মনে করে প্রত্যেকের ইমান সমান,ইমান বাড়ে ও না, কমে ও না। তাদের দৃষ্টিতে কেউ শির্ক-বিদআত করলেও বেনামাজি হলেও সে পূর্ণ ইমানদার

অথচ সঠিক ও বিশুদ্ধ আকিদা হল

"মুখে স্বীকার ও অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস হল ইমানের মূল আর আমল-ইবাদত তার শাখা-প্রশাখা"

তাই কেউ বড় শির্ক ছাড়া অন্য কবীরা গুনাহ করলেও সে কাফের হয় না বা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে না বরং সে হয় "অপূর্ণ মুমিন বা ফাসেক/পাপিষ্ঠ মুসলিম"

ইমানের মূল দাবী হচ্ছে শির্ক না করা ও তাওহীদের উপর অটল থাকা, যাবতীয় তাগুত [আল্লাহ ছাড়া আর যার ইবাদত করা হয় আর সে তাতে সন্তুষ্ট থাকে সে-ই তাগুত] বর্জন করা।

আল্লাহ বলেন, وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُم بِاللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشْرِكُونَ

অধিকাংশ মানুষ আল্লাহতে বিশ্বাস করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে। (ইউসুফ,১২/১০৬)

সমাজের বাস্তবতা ও সেটাই যে অধিকাংশ মুসলিমরা শির্কে লিপ্ত। যেমনঃ ধর্মীয় কোনো ব্যক্তির সম্মানে বাড়াবাড়ি, আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকা, তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য মানত মানা, পশু জবাই করা, তাবিজ ঝুলানো, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ গায়েব বা অদৃশ্যের খবর জানে বলে বিশ্বাস করা।

২য় শর্ত হল নেক আমল বা আমলে সালিহ।

নেক আমলের পরিচয়ঃ এমন প্রত্যেক বিশ্বাস,কথা ও কাজ যা আল্লাহ ও তার রাসূলের(সা) মাধ্যমে কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা নির্দেশিত এবং যা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়; লোক দেখানোর জ

7
$
User's avatar
@hazrat58 posted 3 years ago

Comments

গুরুত্বপূর্ন হাদিস

$ 0.00
3 years ago