বিল দিয়ে বাচ্চার লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় রোগীর বাবা কান্নার গলায় বললেন,
"আব্বারা, আমার কাছে এই মুহুর্তে সব টাকা নেই। বাড়িতে আছে।
আপনারা একটা এম্বুলেন্স দেন আর একজন লোক দেন। বাচ্চার লাশ নিয়ে বাড়িতে যাই। আপনার লোক এর হাতে বিল দিয়ে ফেরত পাঠায় দিবো। এম্বুলেন্স খরচা দরকার হলে আমি দিবো।"
এরকম আব্দারে না করা যায় না। একজন ওয়ার্ড বয় দিয়ে হাসপাতালের এম্বুলেন্স পাঠানো হলো। এম্বুলেন্স এ করে তারা সাভারে তাদের বাড়ী তে নিয়ে গেলো।
বিশাল বাড়ী।
লাশ নিয়ে ভদ্রলোক ভেতরে গেলেন। এর আধা ঘন্টা পর লোকজন ডেকে এম্বুলেন্স এর ড্রাইভার আর সেই ওয়ার্ড বয় কে শক্ত মার দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। "শালারা, রোগী বাচাইতে পারলি না আবার টাকা চাস?"
ওয়ার্ড বয়ের হাত ভেঙেছিলো।
এরপর থেকে হাসপাতালের নিয়ম হলো, যতই কান্দুক, বিল না নিয়ে লাশ নিতে পারবে না, নিজেও বের হতে পারবে না।
আরেকটি গল্প,
এ রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা অতি ক্ষীন।
বাচ্চার বাবা বলছেন তিনি গরীব মানুষ, ICU এর খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন নিয়ম মাফিক ICU এর বিল তিনি ক্লিয়ার করতে পারছেন না। জমি জমা বেচে একবারে বিল দিবেন।
তার করুন অবস্থায় সবার ই মায়া হলো। "আহা বেচারা, শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করার ইচ্ছা আছে, কিন্তু সামর্থ নাই"।
হাসপাতাল থেকে তার বিল অনেক কমানো হলো। নার্স ডাক্তার রা ঔষধ ব্যবহারে নিজেদের স্টক থেকে অনেক ঔষধ দিলো। ডাক্তার রা ল্যাব এর সাথে কথা বলে অনেক টেস্ট গোপনে করে দিলো বিনে পয়সায়। নার্স-ডাক্তার রা চাদা তুলে বেশ কিছু ঔষধ ও টেস্টের বিল দিতে সাহায্য করলো। বড় স্যার কথাবার্তা বলে সরকারী হাসপাতাল এ ফ্রি সীট ব্যবস্থা করে দিতে চাইলো, কিন্তু রোগীর বাবা রাজী হলেন না। তিনি যেভাবে সম্ভব বিল দিবেন, তাও এখানের সেবাই নিবেন। বাচ্চাটা যে হয়তো বাঁচবে না তা সে বুঝতে পারছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখে ছাড়বে।
আলহামদুলিল্লাহ,
৫ দিন পর বাচ্চাটির শারিরীক উন্নতি দেখা গেলো। ৯ দিনের দিন বাচ্চা এতই সুস্থ্য হয়ে গেলো যে আমরা ছুটি দিয়ে দিলাম হাসপাতাল থেকে।
গরীব মানুষ দেখে হাসপাতাল তার বিল আরও অনেক কমিয়ে অর্ধেক করলো।
ছুটি দেবার ঘন্টাখানেক পর বাচ্চার বাবা হাসপাতাল এ একাউন্টস রুম এ অস্ত্রধারী কয়েকজন কে নিয়ে ঢুকে কি কি করলো জানি না, কিন্তু একটা পয়সা না দিয়ে চলে গেলো কিছুক্ষন পরেই।
এরপর থেকে একাউন্ট বিভাগে আরো নিষ্ঠুর লোক বসানো হলো যে কোন দয়া মায়া করবে না। সি সি ক্যামেরা লাগানো এবং থানার সাথে বন্দোবস্ত করার চিন্তাভাবনাও শুরু করলো কর্তৃপক্ষ।
ডাক্তার নার্স রা সিদ্ধান্ত নিলো, যতই গরীব হোক আর ভিখারী হোক, পয়সা ছাড়া কথা হবে না কোন।
তৃতীয় আরেকটি গল্প বলে শেষ করি,
এক বৃদ্ধ তার নাতী কে ভর্তী করেছিলেন আই.সি.ইউ তে।
মায়ের পেটে শিশু থাকে প্রায় ৯ মাস। কিন্তু তার নাতিকে সাড়ে ছয় মাস পরেই মায়ের জীবন বাঁচানোর জন্য সিজার করে বের করা লেগেছে।
ভর্তী নেওয়ার সময়ই বলে নিয়েছিলাম এরকম বাচ্চা বাঁচার খুবই কম সম্ভাবনা। সেই কম সম্ভাবনা নিয়েই রাজী হতে হবে। বৃদ্ধ রাজী হয়েছেন।
চার বছর চেষ্টা করে আল্লাহ তাকে নাতি দিয়েছে। সে বাঁচাতে চায়, সম্পত্তি বিক্রি করে দিবে, তাও চিকিৎসা থামাবে না।
বৃদ্ধর সে নাতি কে আমরা ১ মাস ৮ দিন চিকিৎসা দিয়েছি।
আগের ঘটনা গুলো থেকে হাসপাতাল শিখেছে। তাই এক পয়সাও ডিসকাউন্ট করা হয় নি বৃদ্ধ কে। কেউ তাঁর একটা পয়সা বাঁচাতে চায় নি। যখন যে টেস্ট দরকার মনে হয়েছে, নগদ টাকা নিয়ে করানো হয়েছে। নগদ জমা না দেওয়ার আগ পর্যন্ত যাতে টেস্ট না করাই সেই অর্ডার অফিস থেকে দিয়ে রাখা হয়েছে ল্যাব এ।
ডাক্তার নার্স রাও অফিসের চোখ ফাকি দিয়ে কোন সাহায্য করি নি।
প্রতিদিন বৃদ্ধ তার নাতির শারিরীক উন্নতি অবনতি শুনতেন।
একই সাথে আশান্বিত ও নিরাশ হতেন।
১ মাস ৮ দিনের দিন বাচ্চাটা মারা গেলো।
এতদিনের ICU এর বিল হলো বিশাল একটা অংক।
বৃদ্ধ অফিসে বললো, আমার হাতে টাকা নেই, আমি নিয়ে আসি।
অফিস কঠিন মুখে বলল, "না আপনি যাবেন না আর আপনার নাতির লাশ টাও ছাড়বো না। আগে টাকা দেন, তারপর যাবেন"
দু ঘন্টা পর বৃদ্ধ টাকা আনালো।
বিল তো দিলেনই, পাশাপাশি সব খালা বুয়া ওয়ার্ড বয়দের তাদে পরিশ্রমের জন্য এক্সট্রা অনেক বড় বকশিশ দিলেন। মাথায় হাত দিয়ে তাদের দোয়া করলেন । নার্স দেরও এক্সট্রা টাকা দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তারা নেয় নি।
তিনি ডাক্তারদের কে তাদের চেষ্টার জন্য হাত তুলে দোয়া দিলেন।
ছোট্ট একটা তুলার চাদরে মুড়ে চোখ মুছতে মুছতে তার একমাত্র নাতির লাশ নিয়ে গেলেন বাড়িতে দাফনের জন্য।
গল্প শেষ।
গল্পের তেমন কোন মোরাল নেই।
খালি ভাবি, দুনিয়ার নিয়ম বড়ই বিচিত্র। এক জনের ভুলের বোঝা দশজন নিষ্পাপ কে বয়ে বেড়াতে হয়।
বিল দিয়ে বাচ্চার লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় রোগীর বাবা কান্নার গলায় বললেন,
"আব্বারা, আমার কাছে এই মুহুর্তে সব টাকা নেই। বাড়িতে আছে। আপনারা একটা এম্বুলেন্স দেন আর একজন লোক দেন। বাচ্চার লাশ নিয়ে বাড়িতে যাই। আপনার লোক এর হাতে বিল দিয়ে ফেরত পাঠায় দিবো। এম্বুলেন্স খরচা দরকার হলে আমি দিবো।"
এরকম আব্দারে না করা যায় না। একজন ওয়ার্ড বয় দিয়ে হাসপাতালের এম্বুলেন্স পাঠানো হলো। এম্বুলেন্স এ করে তারা সাভারে তাদের বাড়ী তে নিয়ে গেলো। বিশাল বাড়ী। লাশ নিয়ে ভদ্রলোক ভেতরে গেলেন। এর আধা ঘন্টা পর লোকজন ডেকে এম্বুলেন্স এর ড্রাইভার আর সেই ওয়ার্ড বয় কে শক্ত মার দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। "শালারা, রোগী বাচাইতে পারলি না আবার টাকা চাস?" ওয়ার্ড বয়ের হাত ভেঙেছিলো।
এরপর থেকে হাসপাতালের নিয়ম হলো, যতই কান্দুক, বিল না নিয়ে লাশ নিতে পারবে না, নিজেও বের হতে পারবে না।
আরেকটি গল্প,
এ রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা অতি ক্ষীন। বাচ্চার বাবা বলছেন তিনি গরীব মানুষ, ICU এর খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন নিয়ম মাফিক ICU এর বিল তিনি ক্লিয়ার করতে পারছেন না। জমি জমা বেচে একবারে বিল দিবেন। তার করুন অবস্থায় সবার ই মায়া হলো। "আহা বেচারা, শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করার ইচ্ছা আছে, কিন্তু সামর্থ নাই"। হাসপাতাল থেকে তার বিল অনেক কমানো হলো। নার্স ডাক্তার রা ঔষধ ব্যবহারে নিজেদের স্টক থেকে অনেক ঔষধ দিলো। ডাক্তার রা ল্যাব এর সাথে কথা বলে অনেক টেস্ট গোপনে করে দিলো বিনে পয়সায়। নার্স-ডাক্তার রা চাদা তুলে বেশ কিছু ঔষধ ও টেস্টের বিল দিতে সাহায্য করলো। বড় স্যার কথাবার্তা বলে সরকারী হাসপাতাল এ ফ্রি সীট ব্যবস্থা করে দিতে চাইলো, কিন্তু রোগীর বাবা রাজী হলেন না। তিনি যেভাবে সম্ভব বিল দিবেন, তাও এখানের সেবাই নিবেন। বাচ্চাটা যে হয়তো বাঁচবে না তা সে বুঝতে পারছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখে ছাড়বে।
আলহামদুলিল্লাহ, ৫ দিন পর বাচ্চাটির শারিরীক উন্নতি দেখা গেলো। ৯ দিনের দিন বাচ্চা এতই সুস্থ্য হয়ে গেলো যে আমরা ছুটি দিয়ে দিলাম হাসপাতাল থেকে।
গরীব মানুষ দেখে হাসপাতাল তার বিল আরও অনেক কমিয়ে অর্ধেক করলো।
ছুটি দেবার ঘন্টাখানেক পর বাচ্চার বাবা হাসপাতাল এ একাউন্টস রুম এ অস্ত্রধারী কয়েকজন কে নিয়ে ঢুকে কি কি করলো জানি না, কিন্তু একটা পয়সা না দিয়ে চলে গেলো কিছুক্ষন পরেই।
এরপর থেকে একাউন্ট বিভাগে আরো নিষ্ঠুর লোক বসানো হলো যে কোন দয়া মায়া করবে না। সি সি ক্যামেরা লাগানো এবং থানার সাথে বন্দোবস্ত করার চিন্তাভাবনাও শুরু করলো কর্তৃপক্ষ। ডাক্তার নার্স রা সিদ্ধান্ত নিলো, যতই গরীব হোক আর ভিখারী হোক, পয়সা ছাড়া কথা হবে না কোন।
তৃতীয় আরেকটি গল্প বলে শেষ করি,
এক বৃদ্ধ তার নাতী কে ভর্তী করেছিলেন আই.সি.ইউ তে। মায়ের পেটে শিশু থাকে প্রায় ৯ মাস। কিন্তু তার নাতিকে সাড়ে ছয় মাস পরেই মায়ের জীবন বাঁচানোর জন্য সিজার করে বের করা লেগেছে।
ভর্তী নেওয়ার সময়ই বলে নিয়েছিলাম এরকম বাচ্চা বাঁচার খুবই কম সম্ভাবনা। সেই কম সম্ভাবনা নিয়েই রাজী হতে হবে। বৃদ্ধ রাজী হয়েছেন। চার বছর চেষ্টা করে আল্লাহ তাকে নাতি দিয়েছে। সে বাঁচাতে চায়, সম্পত্তি বিক্রি করে দিবে, তাও চিকিৎসা থামাবে না।
বৃদ্ধর সে নাতি কে আমরা ১ মাস ৮ দিন চিকিৎসা দিয়েছি। আগের ঘটনা গুলো থেকে হাসপাতাল শিখেছে। তাই এক পয়সাও ডিসকাউন্ট করা হয় নি বৃদ্ধ কে। কেউ তাঁর একটা পয়সা বাঁচাতে চায় নি। যখন যে টেস্ট দরকার মনে হয়েছে, নগদ টাকা নিয়ে করানো হয়েছে। নগদ জমা না দেওয়ার আগ পর্যন্ত যাতে টেস্ট না করাই সেই অর্ডার অফিস থেকে দিয়ে রাখা হয়েছে ল্যাব এ। ডাক্তার নার্স রাও অফিসের চোখ ফাকি দিয়ে কোন সাহায্য করি নি।
প্রতিদিন বৃদ্ধ তার নাতির শারিরীক উন্নতি অবনতি শুনতেন। একই সাথে আশান্বিত ও নিরাশ হতেন।
১ মাস ৮ দিনের দিন বাচ্চাটা মারা গেলো।
এতদিনের ICU এর বিল হলো বিশাল একটা অংক।
বৃদ্ধ অফিসে বললো, আমার হাতে টাকা নেই, আমি নিয়ে আসি। অফিস কঠিন মুখে বলল, "না আপনি যাবেন না আর আপনার নাতির লাশ টাও ছাড়বো না। আগে টাকা দেন, তারপর যাবেন"
দু ঘন্টা পর বৃদ্ধ টাকা আনালো। বিল তো দিলেনই, পাশাপাশি সব খালা বুয়া ওয়ার্ড বয়দের তাদে পরিশ্রমের জন্য এক্সট্রা অনেক বড় বকশিশ দিলেন। মাথায় হাত দিয়ে তাদের দোয়া করলেন । নার্স দেরও এক্সট্রা টাকা দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তারা নেয় নি। তিনি ডাক্তারদের কে তাদের চেষ্টার জন্য হাত তুলে দোয়া দিলেন।
ছোট্ট একটা তুলার চাদরে মুড়ে চোখ মুছতে মুছতে তার একমাত্র নাতির লাশ নিয়ে গেলেন বাড়িতে দাফনের জন্য।
গল্প শেষ। গল্পের তেমন কোন মোরাল নেই। খালি ভাবি, দুনিয়ার নিয়ম বড়ই বিচিত্র। এক জনের ভুলের বোঝা দশজন নিষ্পাপ কে বয়ে বেড়াতে হয়।