আজ অফিস নেই তাই ঘুম থেকে একটু লেট্ করেই উঠলাম। উঠেই দেখি মিলি সাজুগুজু করছে, সাথে ওর কয়েকজন বান্ধবী।
মনে মনে ভাবলাম কোথাও ঘুরতে যাবে হয়ত।
মজা করে জিজ্ঞেস করলাম " কিরে তোকে দেখতে আসবে ,আর আমি কিছুই জানলাম না ! "
মিলি উত্তর দিল " তুমি আমার কোন খুঁজ রাখ ? তোমাকে জানালেই বা কি "
অবাক হলাম , তার মানে সত্যিই মিলিকে দেখতে আসছে ?
পাশের রুমে গিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলাম কেন তারা আমাকে না জানিয়ে পাত্র পক্ষকে আসতে বললেন !
মা এমন ভাবে তাকালেন যেন আমি তার কাছে পাঁচশত টাকা চেয়ে বসেছি।
কিছু না বলে চলে গেলেন।
আবার নিজের রুমের দিকে হাঁটা দিলাম। এইবার দেখি রুমে ফটোশুট হচ্ছে ! আজকালকার ট্রেন্ড সাজুগুজু করলে ছবি তুলে রাখতে হয়।
রুমে গিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম , করার মত কোন কাজ নেই তাই। কিছুক্ষন পর আচারের গন্ধ আসল নাকে। উঠে গিয়ে দেখি মা আমের আচার রান্না করছেন।
বললাম " আমি জানতাম বাড়িতে মেহমান আসলে , মোরগ পোলাও রান্না হয়। কি যুগ আসল আচার দিয়ে মেহমানি করা হবে ! "
মা এইবার খেপে গেলেন " তোদের ভাই বোনের যন্ত্রনায় আমি পাগল হয়ে যাব ! আল্লাহ এতো মানুষকে দেখে, আমারে দেখে না ! "
বললাম " মা আল্লাহ সবাইকে সমান ভাবে দেখে "
রাগের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেল " তুই তুই এখান থেকে বিদায় হ !"
মাকে মাথা ঠান্ডা করে কাজ করতে বললাম , আর আমিও একটু সাহায্য করার প্রস্তাব দিলাম।
উত্তরে মা বললেন " যার কাজ তার খবর নেই আর তিনি আসছেন সাহায্য করতে ! তুই যা এখান থেকে "
বললাম " মা, মিলিকে দেখতে আসবে সে সাজুগুজু করছে। সে কিভাবে তোমাকে সাহায্য করবে ?"
মা আমার দিকে ভয়ানক দৃর্ষ্টিতে তাকালেন , বললেন " কাকে কে দেখতে আসবে ? "
-
মিলিকে ?
-
বাড়িতে কোন দেখাদেখির প্রোগ্রাম নেই।
-
তাহলে মিলি এতো মানুষ নিয়ে সাজগুজ করছে কেন ?
-
মহারাণীকেই গিয়ে জিজ্ঞেস কর !
মাকে আর ডিস্টার্ব করলাম না ! সোজা গিয়ে মিলিকে জিজ্ঞেস করলাম
" কিরে তোকে নাকি দেখতে আসছেনা তাহলে তুই এমন সাজগুজ করছিস কেন ? বেড়াতে যাবি কোথাও "
মিলি উত্তর দিল " নো ব্রাদার ! কোথাও ঘুরতে যাচ্ছিনা। আজ আমার বিজনেস প্রমোট করতে হবে তাই সাজগুজ চলছে "
-
বিজনেস ! তোর কিসের বিজনেস ?
-
কেন ঐদিন না তোমাকে একটা পেইজের লিংক দিয়েছিলাম
" বাহারি আচার " ঐটাই আমার বিজনেস পেইজ।
-
তুই আচারের বিজনেস শুরু করেছিস ?
-
ইয়েস ব্রাদার ! অলরেডি ২টা অর্ডারও হয়েছে !এন্ড অর্ডার প্রসেসিং হচ্ছে !
-
তার মানে মা তোর অর্ডারের আচার বানাচ্ছেন ?
-
হ্যা !
-
কিন্তু বিজনেস প্রমোট করার জন্য তোকে সাজতে হবে কেন ?
-
পরিচিত ম্যান , পরিচিতি ! ব্যাবসার পরিধি বৃদ্ধির জন্য নিজের পরিচিতি বৃদ্ধি করতে হবে !
-
আচ্ছা ! তা তুই ব্রায়ান চেসি কে চিনিস ?
-
না , কে সে ?
-
কেভিন সিস্ট্রম কে
-
না , এদের চিনে কি হবে !
-
তারা হলেন বিখ্যাত বিখ্যাত স্টার্টআপ এর প্রতিষ্টাতা । এয়ার বিএনবি এন্ড ইনস্টাগ্রাম এর ! তোর মত মানুষ তাদেরকে না চিনলেও তাদের প্রোডাক্ট ঠিকই ব্যবহার করিস। তারা তাদের তাদের চেহারার বিজ্ঞাপন না করে প্রোডাক্টের কোয়ালিটিতে ফোকাস করেছেন। যার জন্য মানুষ তাদের না চিনলেও তাদের প্রোডাক্ট ব্যবহার করে।
মিলির সাথে কথা বলতে বলতে নাকে আচারের পুরা গন্ধ লাগল ! ঐদিকে মার চিৎকার
" এতো করে বললাম আমার সাথে একটু থাক , না তিনি আছেন নিজের সাজুগুজু নিয়ে। নে এবার পুরা আচার বিক্রি কর। "
মা একটুর জন্য ওয়াশ রুমে গিয়েছেন এরই মধ্যে কারবার সারা হয়ে গেছে !
মিলি সাজুগুজু রেখে দৌড়ে গেল রান্না ঘরে।গিয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে।
বললাম " বেশি কাঁদিস না , মেকআপ খারাপ হয়ে যাবে "
বলার সাথে সাথে কান্না শেষ, শত হলেও এত কষ্ট করে মেকাপ করেছে ! মাকে অনুরুধ করছে আবার রান্না করে দিতে।
মায়ের অগ্নিমূর্তি দেখে ভাই বোন আর সেখানে থাকতে পারলাম না।
রুমে এসে মিলিকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম যে , বিজনেস করতে হলে প্রথম বিজনেস স্ট্রেটিজি শিখতে হবে। এর জন্য প্রথমে নিজের প্রোডাক্টের দিকে ফোকাস করতে হবে। অন্যের হাতে প্রোডাক্ট দিয়ে যতই নিজের ব্র্যান্ডিং করিস না কেন ফলাফল এরকমই হবে, যেমন আজ হল।
আরো কিছুক্ষণ বুঝলাম। হটাৎ মিলি বলল ভাইয়া প্লিজ তুমি মাকে একটু বোঝাও না , এইটা আমার প্রথম অর্ডার। যদি না দিতে পারি তাহলে আমার বিজনেস শেষ !
ও আমার কথা কানে দিল কি দিলনা বুঝতে পারলাম না। ওর চেহারা দেখে একটু দয়া হল। আমি গেলাম মাকে বুঝাতে । আর এইদিকে মিসেস মিলি আবার ফটোশুট এ ব্যস্ত হয়ে পড়ল !
বিকেলের দিকে দ্বিতীয়বারের মত আচার বানানো শেষ হলে মহারানী আচারের ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
কিছুক্ষন পর দেখি মিলির ছবি সহ আচারে একটা পোস্ট আমার ওয়াল এ।
ছবির ক্যাপশন দেখে আমি অবাক !
" সারা দিন হার ভাঙা পরিশ্রমের পর আমার প্রথম অর্ডার তৈরী ! এখন রেস্ট নেয়ার পালা। আগামী কাল অর্ডার পৌঁছে যাবে নির্দিষ্ট ঠিকানায় !"
আমি কতক্ষন থ মেরে বসে আছি ! সাজুগুজুতে কিসের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম সেটা আমার বুঝে আসছে না ! মা যদি এই স্ট্যাটাস দেখে তাহলে আর রক্ষে নেই , ভাগ্য ভাল মা ফেইসবুক ব্যাবহার করেন না।
"বাহারি আচার"
এমন একজন কিশোরের প্রতি ফুটবল সম্রাট পেলেসহ এতো মানুষের নেইমারের প্রতি ভালোবাসাই প্রমাণ করে দিয়েছিলো এই কিশোরই হতে চলেছে ব্রাজিলের পরবর্তী মহাতারকা! তার ফলস্বরূপ, ২০১০ সালের দলে সু্যোগ না পেলেও সেই বিশ্বকাপের পর থেকে তিনিই হয়ে ওঠেন দলের প্রাণভোমরা