প্রতিশোধের_বিয়ে
পর্বঃ৯
………ল্যাবটপে নিজের কাজ শেষ করে তনয়া নিজের রুমে যাবে তখন দেখে রুমটা ভিতর থেকে লক করা। তনয়া আয়াতকে ডাক দিলো
তনয়াঃ আয়াত রুম লক করছেন কেন?
আয়াতঃ কিছু কাজ করতেছি?
তনয়াঃ কার সাথে কথা কথা বলছেন লুকিয়ে লুকিয়ে?
আয়াতঃ নতুন গার্ল ফ্রেন্ড এর সাথে।
তনয়াঃ (হাসি দিয়ে) ওকে কথা বলেন। আমি পাশের রুমে ঘুমালাম। খুব ঘুম পাচ্ছে। কথা বলা শেষ হলে আপনার গার্ল ফ্রেন্ড এক পিক কিন্তু অবশ্যই দেখাবেন!
তনয়া জানে রাত যতই হক আয়াত ওকে নিজের কাছে নিয়ে নিবেই। তনয়া গিয়ে পাশের রুমে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষন পর ঘুমিয়েও পড়লো। অনেক রাতে হিম বাতাসে ঘুমটা ভেঙে গেলো। চোখ মেলে দেখে আয়াত। আচমকা দেখায় একটু চমকে উঠলো। তারপর বুঝলো আয়াত ওকে কোলে নিয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে আছে।
আয়াতঃ তা ম্যাডামের ঘুম ভঙলো। তনয়া একটা কথা বলো দেখতে তো তুমি বেশ চিকন! কিন্তু তোমার ওজনতো কম না । হাতটা ব্যাথা হয়ে গেছে।
তনয়া রাগি চোখে আয়াতের দিকে তাকালো।
আয়াতঃ স্যরি। এখন নিচে নামো।
তনয়াঃ আমি নিজে থেকে আপনার কোলে উঠিনি। আপনিই আমায় কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। আপনি না নামালে আমি কিভাবে নামবো?
আয়াতঃ নামাবো না!
তনয়াঃ কেনো?
আয়াতঃ বাইরে তাকিয়ে দেখো চারদিকটা কেমন শান্ত। পুরো শহর ঘুমিয়ে আছে। মেঘ রাজ আর চাঁদ কন্যাও ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারন এখন মধ্য রাত। নিঃস্তব্ধ চারদিক। প্রকৃতিও এখন বিশ্রাম নিচ্ছে। কিন্তু কিছু রাতজাগা নিশাচর মানুষ এখনো জেগে আছে। কেউ তাদের ভালোবাসায় মোহীত হচ্ছে। আর কিছু মানুষ বিচ্ছেদের বেদনায় বালিশ ভেজাচ্ছে। কেউ ভালোবাসোকে আহব্বান করছে। কেউ ভিজে চলছে ভালোবাসার বৃষ্টিতে। আমিও ভিজতে চাই তোমার ভালোবাসার বৃষ্টিতে। মোহীতো হতে চাই তোমার ভালোবাসায়। হারিয়ে যেতে চাই তোমার ভালোবাসার আহব্বানে ভালোবাসার পৃথিবীতে।
হ্যাপি বার্থ ডে তনয়া। এন্ড স্যরি ফর লেট কারন এখন রাত ১:৩০ বাজে। ঠিক ১২:০০টায় উইশ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ম্যাডাম গভীর ঘুমে থাকায় জাগাতে ইচ্ছা করলো না। সেই ১১:৪৫ থেকে তোমার ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করতেছি।
তনয়াঃ কি? তারমানে গত দেড় ঘন্টা ধরে আপনি আমায় কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন?
আয়াতঃ নাহ? ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট ধরে।
তনয়াঃ কি বলছেন? নামান বলছি? আপনার হাত অনেক ব্যাথা করবে।
আয়াতঃ করুক। তাতে কি? তুমিইতো!
কেন তোমার কি ভালো লাগছে না?
তনয়াঃ দেখুন তেমন কিছু না। আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে।
আয়াতঃ কে বললো আমার কষ্ট হচ্ছে? এই বলে তনয়াকে আরেকটু শক্ত করে ধরছে।
তনয়াঃ কিন্তু
আয়াতঃ হুসস। তোমার মনে হচ্ছে আমার কষ্ট হচ্ছে? কিন্তু না আমার কিন্তু কষ্ট হচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে আমি স্বর্গের একটা মেঘের টুকরোকে ধরে রেখেছি। যার আকার আছে কিন্তু ওজন নাই। শুধু ভালোবাসার অনুভুতি আছে।
তনয়াঃ আজ হঠাৎ এত ভালোবাসা? মতলব কি? মানে কি চাই?
আয়াতঃ মেয়েদের এই এক দোষ। সব কিছুতেই এদের মতলব মনে হয়? তবে হ্যা চাই তো অনেক কিছু। (দুষ্টমি হাসি দিয়ে)
তনয়া লজ্জা পেয়ে আয়াতের বুকে মুখ লুকালো।
আয়াতঃ তনয়া তোমার কি আমার বুকে ভালোলাগছে না?
তনয়াঃ এর থেকে সুখের আশ্রয় একটা মেয়ের জন্য আর কিছু হতে পারে?
আয়াত তনয়াকে নিয়ে নিজের রুমে নিয়ে গেলো। তনয়াতো রুম দেখে অবাক। রুমের ভিতর এত ক্যান্ডেল যে তার আলোয় রুমটা দিনের মত আলোকিত হয়ে গেছে। মাঝে টেবিলে একটা কেক রাখা। আয়াত তনয়াকে নামিয়ে দিলো। তারপর বললো।
আয়াতঃ শুভ জন্মদিন। সবাইতো বারোটার সময় উইস করে সেলিব্রেট করে আমি না হয় দুটোর সময় করলাম? কেমন লাগছে?
তনয়া ঠোঁট জোরা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো। অনেক সুন্দর। আর আমার গিফ্ট?
আয়াতঃ কেমন মেয়েরা বাবা কেউকি গিফ্ট চেয়ে নেয়?
তনয়াঃ তো! কি হয়েছে?
আয়াতঃ গিফ্টতো আছে! কিন্তু কালকে পাবে। আজকে গিফ্ট হিসাবে অনেক ভালোবাসা পাবে।
তনয়া লজ্জা পেয়ে যাহ ফাজিল।
আয়াতঃআমার বউকে আমি ভালোবাসবো তাতে ফাজিলের কি হলো!
রাতটা আয়াতের বুকে অনেক সুন্দর কাটলো। সকাল বেলা আয়াত বললো আজ অফিসে যাবো না। একটু বাইরে যাচ্ছি। ঘন্টা খানিকের মধ্যে চলে আসবো।
আয়াত চলে যাবার সাথে সাথে আয়াতের ল্যাপটপটা নিয়ে বসলো। কিন্তু ফাইলটার পাসওয়ার্ড কিভাবে জানবো? পরোক্ষনেই তনয়ার চাচাতো ভাই এর কথা মনে পরলো। সে এসব কাজে খুব এক্সপার্ট। তাকে ফোন দিলো।
তনয়াঃ ভাইয়া আমার এ কাজটা একটু করে দেনা?
-------পাগল কুত্তায় কামরাইছে আমাকে যে সিংহের গর্তের হাত দিবো? তোর বর নিজেই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এক মিনিটে ধরে ফেলবে যে তার পাসওয়ার্ড হ্যাক হয়েছে। আর তাছাড়া এত দূরে বসে
করা সম্ভব না।
তনয়াঃ দূর হ গাধা। মর গিয়া। নেংটি ইদুর, ভিতুর ডিম।
---------সে তুই আমায় যাই বলিস আমি করতে পারবো না।
তনয়া হতাস হয়ে নিজের আর আয়াতের নাম দিয়ে ট্রাই করলো কিন্তু কোন কাজ হলো না। হঠাৎ তনয়ার মাথায় একটা আইডিয়া আসলো। তখন টিভিতে একটা মুভি চলতেছিলো। সেটা দেখে আইডিয়াটা আসলো। তনয়া ভাবছে মানুষ পাসওয়ার্ড তো সেটাই দেয় যেটা সচারাচার বলে থাকে। তো সেটা দিয়ে দেখবো নাকি? যদি কাজ হয়! নাহলে আজ আর হবে না। দিয়েই দেখি
প্র_তি_শো_ধ
Oh My God. কাজ হয়ে গেছে। তনয়া পুরাই টাসকি খেয়ে গেলো। বাপের জন্মে এমন পাসওয়ার্ড দেখি নাই মানে শুনি নাই। দেখা শুনা পরে হবে আগে দেখি ফাইলে কি লিখছে?
ফাইলের মধ্যে বেশ কয়েকটা ফোল্ডার! তনয়া কয়েকটা ফোল্টার ওপেন করার পর মাথা গরম হয়ে গেলো। কারন আয়াতের কাজের প্রজেক্ট মনে হয়।
নকশা আঁকা, ইংলিশে কোন কচু লিখছে। ধুর বুঝি না এসব। তারপর আরো কয়েকটা ওপেন করার পর দেখলো। একটার মধ্যে তনয়ার প্রায় পাঁচ হাজরের উপরে ছবি। ছবি গুলো দেখে তনয়ার ভিমরি খাওয়ার অবস্থা। এর মধ্যে অনেক ছবি আয়াতের চিঠি দেবারও অনেক দিন আগে। তনয়া ভাবছে তারমানে বেটা সাইকো আমায় অনেক আগে থেকে ফলো করতো। ছবি দেখেই বোঝা যায় যে লুকিয়ে লুকিয়ে তোলা। আর প্রত্যেকটা ছবির নিচে তনয়াকে নিয়ে সুন্দর সুন্দর ক্যাপসন দেয়া। আর প্রত্যেকটা ছবিতে লেখা I love u তনয়া।
এসব দেখে তনয়ার মনটা ভালো হয়ে গেলো। যাক সাইকো হলেও সাইকোটা আমায় অসম্ভব সাইকোর মত ভালোবাসে।
তারপর তনয়া অন্য ফোল্ডারে ডুকে ওর চোখ ছানা বড়া হয়ে গেলো। আয়াত আর তনয়ার মাঝে দেড় বছর আগে থেকে যে মেসেস এ কথা হতো। সব কপি পেস্ট করা বা স্ক্রিন শর্ট করে সেখানে রাখা। কিন্তু কিছু মেসেস দেখে তনয়া কিছু বুঝতে পারছে না এগুলো কোথা এলো? তনয়া ফোনটা হাতে নিয়ে অনু কে ফোন দিয়ে বললো।
তনয়াঃ অনু যত সমস্যা সমাধান করতে চাই ততই সমস্যাটা জালের মত পেঁচিয়ে যায়।
অনুঃ কেন কি হলো?
তনয়াঃ জানিস আয়াতের ল্যাপটপে এমন কিছু দেখলাম যেগুলে দেখে বুঝতে পারছি না এগুলো কোথা থেকে এলো? আর কিভাবে কি?অনুঃ কেন কি দেখেছিস?
তনয়াঃ দেখেছি,,,
এর মধ্যে ডোর বেল বেজে উঠলো।
তনয়াঃ অনু তোর সাথে পরে কথা বলি। বাই।
তনয়া দ্রুত ল্যাপটপ অফ করে স্বাভাবিক হয়ে দরজা খুলে দেখে আয়াত।
তনয়াঃ বলে গেলেন এক ঘন্টা আর আসলেন দু ঘন্টা পর? কার সাথে ছিলেন এতক্ষন?
আয়াতঃ দেখছেন মা আপনার মেয়ে আমার ওপর কেমন খবরদারি করে?
তনয়ার মাঃ হুমম। দেখলাম মেয়েটা খুব পাজি হয়েছে।
তনয়াঃ মা তুমি! তনয়া দেখলো ওর বাবা মা, আয়াতের বাবা মা, আয়াতের বোন আনিকা, তনয়ার বড় ভাই তনয়। সবাই একসাথে বলে উঠলো হ্যাপি বার্থডে তনয়া। তনয়া সবাইকে দেখে ভিষন খুশি হলো। নীরব ঘরটা মূহুর্তেই কলরবে ভরে উঠলো। তনয়া সবাইকে পেয়ে ভিষন খুশি। তনয়া আয়াতকে বললো ধন্যবাদ।
আয়াতঃ এখানে আসার পর সবাইকে খুব মিস করছিলে তাই না?
তনয়াঃ হুমম।
আয়াতঃ কি গিফ্ট পছন্দ হইছে?
তনয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে আয়াতের গালে একটা চুমো দিয়ে দৌড় দিতে যাবে ওমনি আয়াত তনয়ার হাতটা ধরে ফেলে বলে
আয়াতঃ আমি কারো ধার বাকি রাখি না! কেউ কিছু দিলে রির্টান গিফ্ট দিয়ে দেই। দুষ্টমি হাসি দিয়ে
তনয়াঃ আমার চাইনা!
আয়াতঃ বললেই হলো চাইনা ? তুমি কি দেয়ার আগে আমার অনুমোতি নিছিলা? তবে এখন আমিও নিবো না। বলে তনয়াকে কাছে টেনে নিলো। এর মধ্যে আনিকা বললো
আনিকাঃ আমি কিন্তু সব দেখছি।
তনয়া নিজেকে ছাড়িয়ে লজ্জা পেয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।
আয়াতঃ তোর ভাবির চোখে ময়লা গেছিলো তো সেটা দেখছিলাম।
আনিকাঃ ওহ তাহলে তোমার ঠোট চোখের কাছে না গিয়ে গালের কাছে কেন গেছিলো?
আয়াত কোন কথা না বলে লজ্জা পেয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।
আনিকা তা দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা।
তনয়া সবার সাথে কথা বলছে আর ভাবছে মিঃ সাইকোর কদিন ধরে কি হলো? আমার সাথে একটুও খারাপ ব্যবহার করে না। বিশেষ করে সেদিন মানে যেদিন রাতে আমাকে চড় মেরেছিলো সেদিনের পর থেকে আমাকে কোন কষ্ট দিচ্ছে না। কোন খারাপ ব্যবহার করছে না উল্টে অনেক ভালোবাসতেছে। কি হলো ওনার? নাকি আবার নতুন করে মনে মনে কোন ফন্দি আটছে আমাকে কষ্ট দেয়ার। হুমমম জানতে হবে?
সাইকো টাপের লোকদের একদম বিশ্বাস করতে নাই। এরা যখন তখন সাইকোর মত কষ্ট দিবে আবার যখন তখন সাইকোর মতোই ভালোবাসবে।
তনয়া এসব ভাবছে আর রান্না ঘরে কাজ করছে। হঠাৎ আয়াত এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
তনয়াঃ কি করছেন ছাড়ুন? কেউ দেখে ফেলবে?
আয়াতঃ না ছাড়বো না। আগে আমার পাওনা বুঝে নিতে দাও।
তনয়াঃ মানে?
আয়াতঃ তখন আমাকে যেটা দিয়েছিলে সেটার রিটার্ন দিতে এসেছি।
তনয়াঃ এখন! কেউ দেখে ফেলবে।
আনিকাঃ দেখে ফেলবে না ফেলেছে। তোমাদের দুজনকে একজায়গা রাখা তো মুশকিল! চুম্বকের মত একে অপরকে আকর্ষন করো।
আয়াতঃ আর তুই জোকের মত আমাদের সাথে আটকে রয়েছিস। লজ্জা করেনা অন্যের রোমান্স দেখতে?
আনিকাঃ লে হালুয়া! তোমরা করতে পারবে আর আমি দেখলেই দোষ।
আয়াত রাগ দেখিয়ে চলে গেলো তনয়া আর আনিকা তা দেখে ভিষন হাসছে।
তনয়া ভাবছে ইস সাইকোটা যদি সবসময় এমন থাকতো! নাহ অনেক লুকোচুরি হয়েছে আর নাহ। এবার যা করবো সরাসরি করবো? মানে আয়াতের কাছে জানতে চাইবো ? বাবা মা যাবার পরই আয়াতের কাছে চিঠি থেকে শুরু করে ল্যাপটপের সব কথা জানতে চাইবো?
তারপর ওর যা ইচ্ছা করবে? এভাবে লুকোচুরি আর ভালো লাগে না।
অনেক হইছে? আর না----------
চলবে,,,,,
প্রতিশোধের_বিয়ে
পর্বঃ৯
………ল্যাবটপে নিজের কাজ শেষ করে তনয়া নিজের রুমে যাবে তখন দেখে রুমটা ভিতর থেকে লক করা। তনয়া আয়াতকে ডাক দিলো
তনয়াঃ আয়াত রুম লক করছেন কেন? আয়াতঃ কিছু কাজ করতেছি? তনয়াঃ কার সাথে কথা কথা বলছেন লুকিয়ে লুকিয়ে? আয়াতঃ নতুন গার্ল ফ্রেন্ড এর সাথে। তনয়াঃ (হাসি দিয়ে) ওকে কথা বলেন। আমি পাশের রুমে ঘুমালাম। খুব ঘুম পাচ্ছে। কথা বলা শেষ হলে আপনার গার্ল ফ্রেন্ড এক পিক কিন্তু অবশ্যই দেখাবেন!
তনয়া জানে রাত যতই হক আয়াত ওকে নিজের কাছে নিয়ে নিবেই। তনয়া গিয়ে পাশের রুমে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষন পর ঘুমিয়েও পড়লো। অনেক রাতে হিম বাতাসে ঘুমটা ভেঙে গেলো। চোখ মেলে দেখে আয়াত। আচমকা দেখায় একটু চমকে উঠলো। তারপর বুঝলো আয়াত ওকে কোলে নিয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে আছে।
আয়াতঃ তা ম্যাডামের ঘুম ভঙলো। তনয়া একটা কথা বলো দেখতে তো তুমি বেশ চিকন! কিন্তু তোমার ওজনতো কম না । হাতটা ব্যাথা হয়ে গেছে।
তনয়া রাগি চোখে আয়াতের দিকে তাকালো।
আয়াতঃ স্যরি। এখন নিচে নামো। তনয়াঃ আমি নিজে থেকে আপনার কোলে উঠিনি। আপনিই আমায় কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। আপনি না নামালে আমি কিভাবে নামবো?
আয়াতঃ নামাবো না! তনয়াঃ কেনো? আয়াতঃ বাইরে তাকিয়ে দেখো চারদিকটা কেমন শান্ত। পুরো শহর ঘুমিয়ে আছে। মেঘ রাজ আর চাঁদ কন্যাও ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারন এখন মধ্য রাত। নিঃস্তব্ধ চারদিক। প্রকৃতিও এখন বিশ্রাম নিচ্ছে। কিন্তু কিছু রাতজাগা নিশাচর মানুষ এখনো জেগে আছে। কেউ তাদের ভালোবাসায় মোহীত হচ্ছে। আর কিছু মানুষ বিচ্ছেদের বেদনায় বালিশ ভেজাচ্ছে। কেউ ভালোবাসোকে আহব্বান করছে। কেউ ভিজে চলছে ভালোবাসার বৃষ্টিতে। আমিও ভিজতে চাই তোমার ভালোবাসার বৃষ্টিতে। মোহীতো হতে চাই তোমার ভালোবাসায়। হারিয়ে যেতে চাই তোমার ভালোবাসার আহব্বানে ভালোবাসার পৃথিবীতে।
হ্যাপি বার্থ ডে তনয়া। এন্ড স্যরি ফর লেট কারন এখন রাত ১:৩০ বাজে। ঠিক ১২:০০টায় উইশ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ম্যাডাম গভীর ঘুমে থাকায় জাগাতে ইচ্ছা করলো না। সেই ১১:৪৫ থেকে তোমার ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করতেছি।
তনয়াঃ কি? তারমানে গত দেড় ঘন্টা ধরে আপনি আমায় কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন? আয়াতঃ নাহ? ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট ধরে। তনয়াঃ কি বলছেন? নামান বলছি? আপনার হাত অনেক ব্যাথা করবে। আয়াতঃ করুক। তাতে কি? তুমিইতো!
কেন তোমার কি ভালো লাগছে না? তনয়াঃ দেখুন তেমন কিছু না। আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে। আয়াতঃ কে বললো আমার কষ্ট হচ্ছে? এই বলে তনয়াকে আরেকটু শক্ত করে ধরছে। তনয়াঃ কিন্তু আয়াতঃ হুসস। তোমার মনে হচ্ছে আমার কষ্ট হচ্ছে? কিন্তু না আমার কিন্তু কষ্ট হচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে আমি স্বর্গের একটা মেঘের টুকরোকে ধরে রেখেছি। যার আকার আছে কিন্তু ওজন নাই। শুধু ভালোবাসার অনুভুতি আছে।
তনয়াঃ আজ হঠাৎ এত ভালোবাসা? মতলব কি? মানে কি চাই? আয়াতঃ মেয়েদের এই এক দোষ। সব কিছুতেই এদের মতলব মনে হয়? তবে হ্যা চাই তো অনেক কিছু। (দুষ্টমি হাসি দিয়ে) তনয়া লজ্জা পেয়ে আয়াতের বুকে মুখ লুকালো।
আয়াতঃ তনয়া তোমার কি আমার বুকে ভালোলাগছে না? তনয়াঃ এর থেকে সুখের আশ্রয় একটা মেয়ের জন্য আর কিছু হতে পারে?
আয়াত তনয়াকে নিয়ে নিজের রুমে নিয়ে গেলো। তনয়াতো রুম দেখে অবাক। রুমের ভিতর এত ক্যান্ডেল যে তার আলোয় রুমটা দিনের মত আলোকিত হয়ে গেছে। মাঝে টেবিলে একটা কেক রাখা। আয়াত তনয়াকে নামিয়ে দিলো। তারপর বললো।
আয়াতঃ শুভ জন্মদিন। সবাইতো বারোটার সময় উইস করে সেলিব্রেট করে আমি না হয় দুটোর সময় করলাম? কেমন লাগছে?
তনয়া ঠোঁট জোরা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো। অনেক সুন্দর। আর আমার গিফ্ট?
আয়াতঃ কেমন মেয়েরা বাবা কেউকি গিফ্ট চেয়ে নেয়? তনয়াঃ তো! কি হয়েছে? আয়াতঃ গিফ্টতো আছে! কিন্তু কালকে পাবে। আজকে গিফ্ট হিসাবে অনেক ভালোবাসা পাবে।
তনয়া লজ্জা পেয়ে যাহ ফাজিল। আয়াতঃআমার বউকে আমি ভালোবাসবো তাতে ফাজিলের কি হলো! রাতটা আয়াতের বুকে অনেক সুন্দর কাটলো। সকাল বেলা আয়াত বললো আজ অফিসে যাবো না। একটু বাইরে যাচ্ছি। ঘন্টা খানিকের মধ্যে চলে আসবো।
আয়াত চলে যাবার সাথে সাথে আয়াতের ল্যাপটপটা নিয়ে বসলো। কিন্তু ফাইলটার পাসওয়ার্ড কিভাবে জানবো? পরোক্ষনেই তনয়ার চাচাতো ভাই এর কথা মনে পরলো। সে এসব কাজে খুব এক্সপার্ট। তাকে ফোন দিলো।
তনয়াঃ ভাইয়া আমার এ কাজটা একটু করে দেনা? -------পাগল কুত্তায় কামরাইছে আমাকে যে সিংহের গর্তের হাত দিবো? তোর বর নিজেই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এক মিনিটে ধরে ফেলবে যে তার পাসওয়ার্ড হ্যাক হয়েছে। আর তাছাড়া এত দূরে বসে করা সম্ভব না।
তনয়াঃ দূর হ গাধা। মর গিয়া। নেংটি ইদুর, ভিতুর ডিম।
---------সে তুই আমায় যাই বলিস আমি করতে পারবো না।
তনয়া হতাস হয়ে নিজের আর আয়াতের নাম দিয়ে ট্রাই করলো কিন্তু কোন কাজ হলো না। হঠাৎ তনয়ার মাথায় একটা আইডিয়া আসলো। তখন টিভিতে একটা মুভি চলতেছিলো। সেটা দেখে আইডিয়াটা আসলো। তনয়া ভাবছে মানুষ পাসওয়ার্ড তো সেটাই দেয় যেটা সচারাচার বলে থাকে। তো সেটা দিয়ে দেখবো নাকি? যদি কাজ হয়! নাহলে আজ আর হবে না। দিয়েই দেখি
প্র_তি_শো_ধ
Oh My God. কাজ হয়ে গেছে। তনয়া পুরাই টাসকি খেয়ে গেলো। বাপের জন্মে এমন পাসওয়ার্ড দেখি নাই মানে শুনি নাই। দেখা শুনা পরে হবে আগে দেখি ফাইলে কি লিখছে?
ফাইলের মধ্যে বেশ কয়েকটা ফোল্ডার! তনয়া কয়েকটা ফোল্টার ওপেন করার পর মাথা গরম হয়ে গেলো। কারন আয়াতের কাজের প্রজেক্ট মনে হয়।
নকশা আঁকা, ইংলিশে কোন কচু লিখছে। ধুর বুঝি না এসব। তারপর আরো কয়েকটা ওপেন করার পর দেখলো। একটার মধ্যে তনয়ার প্রায় পাঁচ হাজরের উপরে ছবি। ছবি গুলো দেখে তনয়ার ভিমরি খাওয়ার অবস্থা। এর মধ্যে অনেক ছবি আয়াতের চিঠি দেবারও অনেক দিন আগে। তনয়া ভাবছে তারমানে বেটা সাইকো আমায় অনেক আগে থেকে ফলো করতো। ছবি দেখেই বোঝা যায় যে লুকিয়ে লুকিয়ে তোলা। আর প্রত্যেকটা ছবির নিচে তনয়াকে নিয়ে সুন্দর সুন্দর ক্যাপসন দেয়া। আর প্রত্যেকটা ছবিতে লেখা I love u তনয়া।
এসব দেখে তনয়ার মনটা ভালো হয়ে গেলো। যাক সাইকো হলেও সাইকোটা আমায় অসম্ভব সাইকোর মত ভালোবাসে।
তারপর তনয়া অন্য ফোল্ডারে ডুকে ওর চোখ ছানা বড়া হয়ে গেলো। আয়াত আর তনয়ার মাঝে দেড় বছর আগে থেকে যে মেসেস এ কথা হতো। সব কপি পেস্ট করা বা স্ক্রিন শর্ট করে সেখানে রাখা। কিন্তু কিছু মেসেস দেখে তনয়া কিছু বুঝতে পারছে না এগুলো কোথা এলো? তনয়া ফোনটা হাতে নিয়ে অনু কে ফোন দিয়ে বললো।
তনয়াঃ অনু যত সমস্যা সমাধান করতে চাই ততই সমস্যাটা জালের মত পেঁচিয়ে যায়। অনুঃ কেন কি হলো? তনয়াঃ জানিস আয়াতের ল্যাপটপে এমন কিছু দেখলাম যেগুলে দেখে বুঝতে পারছি না এগুলো কোথা থেকে এলো? আর কিভাবে কি?অনুঃ কেন কি দেখেছিস? তনয়াঃ দেখেছি,,,
এর মধ্যে ডোর বেল বেজে উঠলো। তনয়াঃ অনু তোর সাথে পরে কথা বলি। বাই।
তনয়া দ্রুত ল্যাপটপ অফ করে স্বাভাবিক হয়ে দরজা খুলে দেখে আয়াত।
তনয়াঃ বলে গেলেন এক ঘন্টা আর আসলেন দু ঘন্টা পর? কার সাথে ছিলেন এতক্ষন? আয়াতঃ দেখছেন মা আপনার মেয়ে আমার ওপর কেমন খবরদারি করে? তনয়ার মাঃ হুমম। দেখলাম মেয়েটা খুব পাজি হয়েছে। তনয়াঃ মা তুমি! তনয়া দেখলো ওর বাবা মা, আয়াতের বাবা মা, আয়াতের বোন আনিকা, তনয়ার বড় ভাই তনয়। সবাই একসাথে বলে উঠলো হ্যাপি বার্থডে তনয়া। তনয়া সবাইকে দেখে ভিষন খুশি হলো। নীরব ঘরটা মূহুর্তেই কলরবে ভরে উঠলো। তনয়া সবাইকে পেয়ে ভিষন খুশি। তনয়া আয়াতকে বললো ধন্যবাদ। আয়াতঃ এখানে আসার পর সবাইকে খুব মিস করছিলে তাই না? তনয়াঃ হুমম। আয়াতঃ কি গিফ্ট পছন্দ হইছে?
তনয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে আয়াতের গালে একটা চুমো দিয়ে দৌড় দিতে যাবে ওমনি আয়াত তনয়ার হাতটা ধরে ফেলে বলে
আয়াতঃ আমি কারো ধার বাকি রাখি না! কেউ কিছু দিলে রির্টান গিফ্ট দিয়ে দেই। দুষ্টমি হাসি দিয়ে তনয়াঃ আমার চাইনা! আয়াতঃ বললেই হলো চাইনা ? তুমি কি দেয়ার আগে আমার অনুমোতি নিছিলা? তবে এখন আমিও নিবো না। বলে তনয়াকে কাছে টেনে নিলো। এর মধ্যে আনিকা বললো
আনিকাঃ আমি কিন্তু সব দেখছি।
তনয়া নিজেকে ছাড়িয়ে লজ্জা পেয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।
আয়াতঃ তোর ভাবির চোখে ময়লা গেছিলো তো সেটা দেখছিলাম। আনিকাঃ ওহ তাহলে তোমার ঠোট চোখের কাছে না গিয়ে গালের কাছে কেন গেছিলো?
আয়াত কোন কথা না বলে লজ্জা পেয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।
আনিকা তা দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা।
তনয়া সবার সাথে কথা বলছে আর ভাবছে মিঃ সাইকোর কদিন ধরে কি হলো? আমার সাথে একটুও খারাপ ব্যবহার করে না। বিশেষ করে সেদিন মানে যেদিন রাতে আমাকে চড় মেরেছিলো সেদিনের পর থেকে আমাকে কোন কষ্ট দিচ্ছে না। কোন খারাপ ব্যবহার করছে না উল্টে অনেক ভালোবাসতেছে। কি হলো ওনার? নাকি আবার নতুন করে মনে মনে কোন ফন্দি আটছে আমাকে কষ্ট দেয়ার। হুমমম জানতে হবে? সাইকো টাপের লোকদের একদম বিশ্বাস করতে নাই। এরা যখন তখন সাইকোর মত কষ্ট দিবে আবার যখন তখন সাইকোর মতোই ভালোবাসবে।
তনয়া এসব ভাবছে আর রান্না ঘরে কাজ করছে। হঠাৎ আয়াত এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
তনয়াঃ কি করছেন ছাড়ুন? কেউ দেখে ফেলবে? আয়াতঃ না ছাড়বো না। আগে আমার পাওনা বুঝে নিতে দাও। তনয়াঃ মানে? আয়াতঃ তখন আমাকে যেটা দিয়েছিলে সেটার রিটার্ন দিতে এসেছি। তনয়াঃ এখন! কেউ দেখে ফেলবে। আনিকাঃ দেখে ফেলবে না ফেলেছে। তোমাদের দুজনকে একজায়গা রাখা তো মুশকিল! চুম্বকের মত একে অপরকে আকর্ষন করো।
আয়াতঃ আর তুই জোকের মত আমাদের সাথে আটকে রয়েছিস। লজ্জা করেনা অন্যের রোমান্স দেখতে?
আনিকাঃ লে হালুয়া! তোমরা করতে পারবে আর আমি দেখলেই দোষ।
আয়াত রাগ দেখিয়ে চলে গেলো তনয়া আর আনিকা তা দেখে ভিষন হাসছে।
তনয়া ভাবছে ইস সাইকোটা যদি সবসময় এমন থাকতো! নাহ অনেক লুকোচুরি হয়েছে আর নাহ। এবার যা করবো সরাসরি করবো? মানে আয়াতের কাছে জানতে চাইবো ? বাবা মা যাবার পরই আয়াতের কাছে চিঠি থেকে শুরু করে ল্যাপটপের সব কথা জানতে চাইবো? তারপর ওর যা ইচ্ছা করবে? এভাবে লুকোচুরি আর ভালো লাগে না। অনেক হইছে? আর না----------
চলবে,,,,,