কষ্টের সব প্রেম কাহিনী “একটি অসমাপ্ত ভালবাসার গল্প”
স্বপ্ন ছিল কারো প্রেম হয়ে তার ভেতর জন্ম নেব। খুব জলদি তা পূরণ হয়।
আমি তখন ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী। নতুন ক্লাস নতুন নতুন ছেলে মেয়ে। ভাব টাই আলাদা। বান্ধবীরা মিলে গবেষণা করতাম ছেলেদের মধ্যে কে বেশী হ্যান্ডসাম ।
রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে আমি। আমার কোন ছেলে বন্ধু নেই । আমার পরিবার এটা গ্রহণ করে না।
একদিন ক্লাসে একটা ছেলের দিকে নজর পড়ল । কিছুক্ষনের জন্য ধাক্কা খেলাম। এত সুন্দর ছেলেটা। আমি বারবার তাকাচ্ছিলাম।
দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এরপর থেকে শুধুই চোখাচোখি হত। ছেলেটার নাম আকাশ। একটু বেশী স্মার্ট ছিল অনেক ভাব নিয়ে চলত ক্লাসে।
এভাবে ২টা বছর কেটে গেল। প্রায়ই উড়ো কথা শুনতাম যে ওর অমুক মেয়ের সাথে সম্পর্ক অমুক মেয়ে ওর বান্ধবী।
আমার ভাললাগা আর ভালবাসায় পরিণত হয় নি।
এস.এস.সি রেজাল্ট দিল। আমরা দুজনই এ+ পেলাম। আমাদের সাথের সবাই ভাল জায়গায় ভর্তি হল। পরিবারের চাপে আমি আগের জায়গায়তেই ভর্তি হলাম।
ভর্তি হয়ে জানতে পারলাম আকাশ ও এখানেই ভর্তি।
শুরু হল নতুন অধ্যায়। এইচ.এস.সি এর ক্লাস… ক্লাস শুরু করার পর আই ডি কার্ড বানানোর জন্য ফরম দেয়া হয়। সেখানে আকাশও ছিল। আমি ফরমটা ঠিক ঠাক মত পূরণ করে দেই।
এরপর কিছুদিন পর পরীক্ষা এসে গেল। পরীক্ষার ২,৩ দিন আগে আকাশ আমাকে ফোন দিল। একটু অবাক হলাম। অপ্রত্যাশিত ছিল।
বুঝলাম ফরম থেকে নম্বর নিয়েছে। টুকটাক পড়াশোনা নিয়ে কথা হল। এরপর প্রায়ই আকাশ এর সাথে কথা হত।
ও আমাকে বন্ধুত্ব করতে বলে। না না করেও পরে রাজি হয়ে যাই। ভালই চলছিল। একদিন ভালবাসা নিয়ে কথা হল।
আকাশ আমাকে জানায় যে অন্তরা নামের একজনকে ওর খুব ভাল লাগে। কিন্তু বিয়ে সম্ভব না। ওদের পরিবার মানবে না।
কিন্ত ও নাকি অনেক ভালবাসে। এর কিছুদিন পর ও আমাকে প্রোপোজ করে। অনেক আগে থেকেই এসব ব্যাপারে সতর্ক ছিলাম।
তাই ওর ফাঁদে পা দিলাম না। কিন্তু ও দক্ষ খেলোয়াড় এর মত আমাকে কনভিন্স করতে লাগল। ক্লাস ৯ থেকেই নাকি আমাকে ওর ভাল লাগে।
এসব বলে আমাকে মুগ্ধ করতে লাগল। আমি ওকে অন্তরার কথা মনে করিয়ে দিলে বলত যে ওটা এমনি। শুধু ভাল লাগা।
ভালবাসা না। আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি তবুও মানলাম না। এভাবে কেটে গেল ৭ মাস।
কিছুদিন পর আমার তখন মনে হল যে ও আমাকে আসলেই ভালবাসে। আস্তে আস্তে দুর্বল হতে লাগলাম। ওর প্রেমে সাড়া দিলাম।
অনেক ভালবাসা, ছোট ছোট আশা নিয়ে আমরা চলা শুরু করলাম।
অবাক করা বিষয় হল মাত্র ২০দিন পরই এই ভালবাসায় ফাটল ধরে। দুজন মানুষের মানসিকতা কখনও এক হয় না।
কিন্তু এত ভিন্ন হতে আমি দেখিনি। ওর অনেক মেয়ে বন্ধু ছিল। মেয়েদের সাথে হাত ধরে কথা বলা, ঘুরা, খেতে যাওয়া এগুলো ছিল ওর নিয়মিত ও স্বাভাবিক ব্যবহার।
আমি এগুলো মানতে পারতাম না। রাগ হত অনেক। এর কিছুদিন পরই ও আমাকে অনেক বাজে প্রস্তাব দেয়…
আমি এসবে রাজি হই না…ও বলে, বিয়ে তো আমাদের হবেই।
আমি রাজি হই নি। জমে থাকা রাগ গুলো ঘৃণায় পরিণত হল। তখন বুঝলাম প্রথম প্রেম অন্তরাকে ভুলে ক্ষণিকের পরিচয়ে যে আমাকে ভালবাসতে পারে তার দ্বারা সব সম্ভব।
এই ব্যাপার গুলো নিয়ে ও আমাকে চাপ দিতে থাকে। ও পাগল হয়ে উঠল। প্রায়ই জিজ্ঞেস করত বাসায় আমি একা নাকি।
অনেক খারাপ ব্যবহার করত আমার সাথে। ভয় দেখাত। আমি মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকি। হাত কাটা শুরু করলাম। উল্টা পাল্টা পিল নিতাম।
নিয়ে নেশাগ্রস্থের মত পরে থাকতাম। এরপর ওর চাপ সহ্য করতে না পেরে আমি ব্রেকাপ করি।
মুক্তি পাবার জন্য আমি ওকে ছাড়লাম। আমার মুক্তি হল না। ও আমাকে ছাড়ল না। ব্লেক মেইল করতে লাগল আমি গেলে ও নাকি আত্মহত্যা করবে।
আমিও ওকে ছাড়া থাকতে পারতাম না। ওকে আমি ভালবাসতাম এখনও বাসি। কিন্তু আমি না পারব ছাড়তে না পারব ভাঙ্গা জিনিস জোড়া লাগাতে।
পরিসমাপ্তিঃ
এখনও আমরা একসাথেই আছি। আমরা গার্ল ফ্রেন্ড বয় ফ্রেন্ড ও না আবার বন্ধুও না। আমরা কি হয়ে আছি নিজেরাও জানি না।
আমি সত্যিকারের ভালবাসতাম এখনও বাসি। আমার জন্য সম্ভব না ওকে ছাড়া থাকা। ওকে বিয়েও করতে পারব না।
ধোঁকাবাজ মানুষের সাথে ঘর করা যায় না। এটা আমার মনকে বুঝাতে পারছি না। এই বছরে আমার এইচ.এস.সি পরীক্ষা।
এখনো আমি জীবনের হিসাব মেলাতে পারছি না। এত অল্প সময়ে জীবনটা তিক্ত হয়ে যাবে বুঝিনি।
মানুষ আবেগের বশে ভালবাসার মানুষের জন্য কান্না করে। সে ভাবে এই মানুষটিকে ছাড়া সে বাঁচবে না। এটাই বুঝি সত্যিকারের ভালবাসা। কিন্তু সেটা সত্যিকারের ভালবাসা না।
এটা কিছু দিন/মাস/বছর পর সে নিজেই বুঝতে পারে। আমি এখন সেই দিন/মাস/বছর গুলো পার করার অপেক্ষায় আছি।
যেদিন ওকে ছাড়া থাকতে আমার একটুও কষ্ট হবে না………
pashe thakle pashe paben