মায়াজ্বাল পর্ব-২ tani_tass_ritt

হঠাৎই একটা পাগল এসে অধরার সামনে দাড়ালো।অধরার চুলের মুঠি ধরে অধরার মুখ টা উঁচু করলো।

"দেহি তোর চেহারা খানা।তোর উপর ঠাকুরাইনের আশির্বাদ আছে।তগোর বিয়া হবোই হবো।তা না হইলে কি তোরা বাঁইচা ফিরবার পারতি ঐহানতে।ঠাকুরাইন ভালোবাসার মানুষগর মিলায় দেয়।তোগর বিয়া তো উপর তে লেইখা আইছে।কি মজা তোগর বিয়া হইবো কি মজা।"

বলেই পাগল মেয়েটি লাফাতে লাগলো।

সবাই এই কান্ড দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো।রাকিব,নিবি,অধরা,আরহান,শায়ন কারো মাথায় কিছুই ঢুকলো না।এমনিতে তো এই ঝামেলা তার উপর এই পাগল আবার কি না কি বলছে।

এখন পাগল টা আবার কান্না শুরু করলো। "জানোস আমার আর ওনার উপর ও ঠাকুরাইনের আশির্বাদ ছিলো। হে চাইছিলো দেইখাই আমাগর বিয়াডা হইছিলো।কিন্তু আমি সংসার করবার পারিনাই।আমার জামাইডা মইরা গেলো।" বলেই কান্না শুরু করলো।

"তুই তোর জামাইডারে ধইরা রাহিস।তোর জামাইডা তোরে মেলা মহব্বত করে।ঠাকুরাইন নিজে তোগরে এই সুযোগ কইরা দিছে।হেতি ম্যালা ভালা।" বলেই পাগলটা সেখান থেকে চলে গেলো।

তারা কেউই বুঝতে পারছে না এই ঠাকুরাইন টা আবার কে।কাউকে জিজ্ঞেস করার মতো ও অবস্থা নাই।কেনোনা এখন তাদের যে পরিস্থিতি এই অবস্থায় কারো মাথায়ই অন্য কিছু ঢুকবে না।

"আপনারা কি বিয়া করবেন না? কহন ধইরা আমাগরে বহায় রাখছেন?"

কাজির কথা শুনে শরিফ সাহেবের টনক নরলো। "হ হ কাজি সাহেব আপনি বিয়া পড়ানো শুরু করে।সকলে রাজি। "

শেষ রক্ষাটা আর হলো না।আরহান অধরার বিয়েটা হয়ে গেলো। ৫ জনের কেউ কোনো কথা বলছে না।সবাই স্তব্ধ। এতো বড় মাশুল তাদের দিতে হবে কেউই বুঝতে পারেনি।

এই বিয়েটাকে তারা কেউই মেনে নিতে পারছে না। তারা আর এক মূহুর্ত ও দেড়ি করলো না সেই গ্রামে।এই গ্রাম টা তাদের জন্য অভিশাপ। রাকিব গাড়ি ম্যানেজ করে সেই গাড়িতে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। রাকিব ড্রাইভারের সাথের সিটে বসেছে। নিবি আরহানের সাথে চিপকে আছে।সে কোনোভাবেই এই বিয়েটা মানবেনা। অধরা চুপচাপ বসে আছে।পাশে শায়ন বসা।শায়ন এখন পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি।চোখ বন্ধ করে কপালে হাত দিয়ে হেলান দিয়ে বসে আছে।তাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে সে প্রচন্ড ভেঙে পরেছে।

অধরা হয়তোবা অনুভূতি শূন্য হয়ে গিয়েছে। আরহান চিন্তা করে কূল পাচ্ছে না এর পরের পরিস্থিতি সে কিভাবে সামাল দিবে।

★★★★★★★★★★ শরিফ সাহেব সবার চোখের আড়ালে সেই বাংলোতে প্রবেশ করলেন।শরিফ সাহেব যে বাংলো তে আশা যাওয়া করে এটা কেউই জানেনা শুধু মাত্র বাংলোর কেয়ার টেকার ছাড়া কেউ জানে না।

শরিফ সাহেব সরাসরি সেই রুমটাতে গেলেন যেখানে গত কাল অধরা আর আরহান ছিলো। রুমটার দেয়ালে বড় করে একজনের ছবি লাগানো।সে সেই ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইলেন।তার মনে কি চলছে এটা জানার উপায় কারো নেই।

বাংলোর কেয়ারটেকার রফিক আজ অব্দি বুঝলো না শফিক সাহেব এখানে কেনই বা আসে। তার মাঝে মাঝে খুব কৌতূহল হয় জানার।কিন্তু পরক্ষণেই আবার নিজেকে গুটিয়ে নেন।কেনোনা শরিফ সাহেব একদম পছন্দ করেন না তার কোনো কিছু নিয়ে কেউ ঘাটাঘাটি করুক।

শরিফ সাহেব কে দেখতে যতই কঠিন মনে হোক না কেনো ভিতর থেকে সে বড্ড নরম।তার হয়তোবা কোনো গভীর অতীত আছে যা তাকে আজ এমন করে দিয়েছে।

শরিফ সাহেবের চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো।সে ছবিটাকে একটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখলেন।তারপর সবার চোখের আড়ালে সেই বাংলো থেকে বেড়িয়ে এলেন।

বাংলোটাকে সবাই অভিসপ্ত বলে তাইতো এখানে মানুষের আনাগোনা নাই বললেই চলে। ★★★★★★★★★★★★★★

রাকিব পরিস্থিতি ঠিক করতে চাইলেও পারছে না।কেউ কোনো কথাই বলছে না।সে ঠিক করলো সবাইকে তার বাসায় নিয়ে যাবে যেহেতু সে একা থাকে। রাত থেকে সন্ধ্যা হতে চললো কারো পেটে এখন পর্যন্ত কোনো খাবার পরেনি।

গল্পটা সবার আগে পড়তে চাইলে আমার গ্রুপে জয়েন করুন,নিচে কমেন্ট বক্সে লিনক দেওউয়া হয়েছে,,,,,

রাকিব ড্রাইভারকে বললো গাড়ি তার বাসার দিকে নিতে। বাসায় পৌছে রাকিব সবাইকে রুমে রেখে শায়নকে নিয়ে হোটেলে চলে গেলো খাবার কিনতে।

"শায়ন তুই এতো চুপচাপ কেন? আমি জানি অনেক বড় কান্ড ঘটে গিয়েছে।কিন্তু আমাদের তো কিছু করতে হবে নাকি। তুই এমন চুপচাপ হলে আমি একা কি করবো। যা হবার তো ওদের সাথে হয়েছে।তুই এমন কেন করছিস? আমি মানলাম ওরা তোর অনেক ক্লোজ। তোকেই তো সামাল দিতে হবে নাকি।"

শায়ন ফ্যালফ্যাল করে রাকিবের দিকে তাকিয়ে রইলো।

রাকিব ভ্রু কুঁচকে শায়নকে দেখছে।যে কোনোভাবেই আন্দাজ করতে পারছেনা এই শায়নের মনে চলছে টা কি।সে আর কথা বাড়ালো না।খাবার দাবার নিয়ে নিজের বাসার দিকে রওনা দিকে হলো।

এইদিকে নাবা আরহানের এক হাত জড়িয়ে ধরে যে আছে তো আছেই।সে কোনোভাবেই আরহানকে ছাড়ছে না।

যতযাই হোক আরহান তো এখন অধরার স্বামী।কিন্তু অধরার এতে কোনো মাথা ব্যাথাই নেই।সে ঘরের কোনায় চুপটি করে বসে আছে।সে আকিব কে কিভাবে ফেইস করবে।কিভাবে তাকে সবটা বুঝাবে।আকিব যদি তাকে ছেড়ে দেয়।নাহ তার মাথায় প্রচুর যন্ত্রণা হচ্ছে।

আরহান অনেক কষ্ট করে নিবিকে ছাড়িয়ে অধরার সামনে গিয়ে দাড়ালো।কিছু বলতে যাবে তখনি কলিং বেল বেজে উঠলো।

আরহান জোরে একটা শ্বাস নিয়ে দরজার দিকে আগালো।দরজা খুলে দেখলো শায়ন এবং রাকিব দাড়ানো।

রাকিব অনেক চেষ্টা করেও কাউকে কিছু খাওয়াতে পারলো না।তবুও হাল ছাড়ার পাত্র সে নয়।যেভাবেই হোক। সবটা নরমাল তাকে করতেই হবে।

রাকিব সবাইকে একসাথে বসালো। "দেখ যা হবার তা তো হয়েই গিয়েছে।এখন আগে কি করবি তা ভাবতে হবে।এভাবে চুপ করে বসে থেকে কিছু ঠিক হবে না।"

"কি করতে হবে আবার কি? এই বিয়ের কোনো মানে নেই।আমরা কেউ ই এই বিয়ে মানিনা। আরহান আমাকে ভালোবাসে।আর আকিব ভাইয়া অধরা আপুর বিয়ে ঠিকঠাক।তো এই বিয়ে মিথ্যে।এর কোনো মূল্য নেই।" নিবি বললো।

রাকিব আরহানের দিকে তাকালো।নাহ আরহান কিছু বলছে না।

"অধরা তুমি কি চাও?"

আমি এই বিয়ে মানি না।এই কথাটা কেন যেনো অধরা বলতে পারছে না।কিছু একটা তাকে বাধা দিচ্ছে।সে কিছুক্ষণ সময় নিলো।

"আমার কাছেও এই বিয়ের কোনো মানে নেই।জোড় করে এটা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে।"অধরা বলনো।

আরহান এক নজর অধরার দিকে তাকালো। তারপর চোখ সরিয়ে নিলো।

" আরহান তুই কিছু বলছিস না কেন?" শায়ন বললো।

"সবাই সবটা বলেই দিয়েছে।আমি আর এক্সট্রা করে কি ই বা বলবো।"

আরহানের এমন উত্তরের মানে কেউ বুঝলো না।

ঐদিন রাতটা ওরা রাকিবের বাসায় থেকে গেলো।ওদের মধ্যে ডিসিশন হলো এই বিয়ের খবর কেউ জানবে না কোনোদিন। আরহান তার লইয়ার ফ্রেন্ডকে বলে ডিভোর্সের ব্যাবস্থা করবে। সবাই যাতে এটাকে একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যায়।

সব থেকে বেশি খুশি হলো নিবি।সে তার আরহানকে কোনোভাবেই হারাতে রাজি নয়।

পরের দিন সবাই যে যার যার মতো বেড়িয়ে পরলো।ঐদিন থেকে অধরা আরহানের সাথে একটা কথাও বলেনি। আরহানও চেষ্টা করেনি কথা বলতে।কেমন যেনো অদ্ভুত লাগছে সব।

আরহান বাসায় পৌছাতেই তার মা দৌড়ে এলো।

আকিব, আকিবের বাবা দেখো আরহান এসেছে। সবাই রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।

"আরু তোর এমন হাল হয়েছে কেন? মায়া তলিতে যেয়ে এমন বিদ্ধস্ত হয়ে এসেছিস কেনো?"

আরহান আকিবের দিকে তাকাতে পারছে না।তার মনে হচ্ছে সে অনেক বড় অপরাধ করেছে।

আরহান কিছু না বলেই রুমে চলে গেলো। আকিবের কেমন যেনো খটকা লাগলো।তাও কিছু বললো না।হয়তোবা আরহান টায়ার্ড অনেক।সে অধরাকে ফোন দিলো। কিন্তু না অধরার ফোন এখনো অফ।

আরহান শাওয়ার নিলো।সে চাইলেও কিছুই ভুলতে পারছে না। তার কেমন যেনো ঘুম পাচ্ছে।সে লম্বা একটা ঘুম দিলো।

কথা বার্তার আওয়াজে তার ঘুম ভেঙে গেলো।সে রুম থেকে বের হতেই স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে গেলো।

চলবে......

(কেমন হচ্ছে গল্পটা জানাবেন।)

3
$
User's avatar
@Mdemon456 posted 3 years ago

Comments