নেশা
পর্ব_১২
Tabassum_Kotha
নির্ঝর চেক বুকের একটা পাতায় সাইন করে আমার মুখের উপর ছুড়ে মারলেন। নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার অভিনয় করেই চলছি অনবরত। নিচে পরে যাওয়া চেক এর পাতা টা উঠিয়ে নিলাম। দশ লাখ টাকার এমাউন্ট সাইন করেছেন।
নির্ঝর এখনও আগের মতোই রাগের আগুনে ঝলসে যাচ্ছেন।
-- হিয়ার ইজ ইউর মানি ড্যাম ইট। এতো কিছুর পরেও তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারো নি। এখনও টাকাকেই ভালোবাসো। কেনো তৃষ্ণা? কেনো আমাকে ভালোবাসতে পারলে না তুমি?
-- ভাবছি শপিং করে আসবো।
-- আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি ড্যাম ইট! আন্সার মি! কেনো ভালোবাসতে পারলে না আমাকে? আমার ভালোবাসায় কোন ত্রটি রয়ে গেলো?
-- আচ্ছা কি কি কেনা যায় বলুন তো! ভেবেই কূল পাচ্ছি না।
আমার দুই বাহু ধরে ঝাকিয়ে নিজের মুখের সামনে আমার মুখটা নিয়ে বললেন,
-- একবার আমাকে ভালোবাসো তৃষ্ণা,, বিশ্বাস করো পৃথিবীর সব সুখ তোমার পায়ের কাছে এনে দেবো।
-- পারবেন না। আমাকে আপনি কিছুতেই সুখী করতে পারবেন না।
আমার মুখ উনার দুহাতের আজলে নিয়ে কান্না ভেজা দৃষ্টিতে বললেন,
-- একটা সুযোগ দাও তৃষ্ণা। একবার, শুধু একবার আমাকে ভালোবাসো।
তোমার টাকা চাইতো! আমার যতো টাকা আছে সব তোমার। প্রয়োজনে আমি নিজেকেও বিক্রি করে দেবো। তবুও শুধু একটা বার আমাকে ভালোবাসো!
নিজেকে নির্ঝরের কাছে থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি।
-- আপনাকে আমি ভালোবাসি না নির্ঝর। আমি টাকাকে ভালোবাসি। আর সেই সাথে তন্ময় কে।
-- তন্ময়ের মতো একটা ফ্রডকে ভালোবাসতে পারো কিন্তু আমাকে না? কেনো তৃষ্ণা?
-- ভালোবাসা জোর করে হয় না নির্ঝর! এটা একান্তই মনের ব্যাপার। আর আমার মন তন্ময় কে খুঁজেছে। এখন চাইলেই আপনাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
.
আমার কথায় মুহূর্তেই নির্ঝরের চোখ মুখ শক্ত হয়ে এসেছে। কান্না ভেজা চোখ দুটোয় আবার রাগ এসে ভর করছে। ধীরে ধীরে চোয়াল শক্ত করে, আমাকে স্বজোরে একটা ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। আচমকা টাল সামলাতে না পেরে আমি নিচে পরে গেলাম।
নির্ঝর রাগে ফেটে পরে কার এর চাবি, ওয়ালেট আর মোবাইল নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
বলার বা করার আর কিছুই বাকি নেই। এই রাগটাই আমি চেয়েছিলাম। এই এক মাসে নির্ঝর আবার আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পরেছিলেন। আজকের এই ধাক্কাটা অনেক প্রয়োজনীয় ছিল।
একটু আগে ক্ষুধায় পেট চো চো করছিল। কিন্তু এখন খাওয়ার প্রতি আর কোনো রুচি নেই। খাবার টা ট্রে তে উঠিয়ে কিচেনে রেখে ঘরে এসে পরলাম।
.
.
.
.
.
.
শাওয়ারের পানিগুলো দ্রুত বেগে আমার শরীরের উপর আছড়ে পরছে। ওয়াশরুমের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছি। আজ চোখের পানিও আমার সাথে বেইমানি করছে। একটু কান্না করতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু চোখে পানি আসছে না। কি মুশকিল!
বেশ লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে পরলাম।
কলাপাতা রঙের শিফন জরজেটের শাড়িটি গায়ে জরিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছি। এ বাড়ি আর নির্ঝরের জীবন থেকে যাওয়ার সময় ক্রমশ এগিয়ে আসছে আমার। আবার সব বন্ধন ছিন্ন করে নির্ঝর কে কাঁদিয়ে নিজের চোখের পানি আঁড়াল করে চলে যাবো বহুদূর!
তিতলির কথা ভীষণ মনে পরছে। কেনো যানি না যখন আমি কোনো প্রকার কষ্টে থাকি তখন তিতলির মুখটা আমার চোখের সামনে ভাসে। আমার অন্ধকার জীবনে একমাত্র খুশির ঝলক আমার তিতলি। সেই তিতলিও আজ আমার থেকে কতো দূরে! ভাগ্য আমার সাথে খুব সুন্দর লুকোচুরি খেলছে। এই খেলায় কে জিতবে কে জানে!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
পুরো দিন পেরিয়ে রাত নেমেছে। রাতেরও মধ্য প্রহর চলছে। নির্ঝর এখনও বাড়ি ফেরেন নি। মোবাইলটাও বারবার সুইচড্ অফ বলছে। খুব টেনশন হচ্ছে আমার। না জানি কোথায় আছেন উনি। কালকেও মধ্যরাত পর্যন্ত বাইরে ড্রিংক করেছে। কিন্তু আজ তো ফিরেই আসছেন না।
নির্ঝর এর আব্বু ঢাকার বাইরে গেছেন। আর নয়না ম্যাম একটু অসুস্থ থাকায় আগেই শুয়ে পরেছেন। স্নিগ্ধা আমার সাথে কোনো কথাই বলে না। কি করবো আমি এই পরিস্থিতিতে? এতো রাতে উনার ঠিকানা কোথায় পাবো। কিভাবে জানবো উনি কোথায়, কেমন আছেন!
এতোটা অসহায় নিজেকে আগে কখনও মনে হয় নি। এদিকে রাতে বেড়েই চলছে। রাতের অন্ধকারের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে আমার দুশ্চিন্তা।
নির্ঝরের পথ চেয়ে একটা নির্ঘুম রাত পাড়ি দিয়ে ভোরের দিকে চোখ লেগে এলো। সারা রাত নির্ঝর আর বাড়ি ফেরেন নি।
.
হঠাত দরজায় কড়া আঘাতের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো আমার। হয়তো নির্ঝর ফিরেছেন ভাবতেই ধরফরিয়ে বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে দিলাম। কিন্তু দরজা খুলে আমাকে পুনরায় হতাশ হতে হলো।
একজন সার্ভেন্ট এসে বললো আমার জন্য ল্যান্ড লাইনে ফোন এসেছে।
শাড়ি ঠিকঠাক করে নিচে গিয়ে ফোন হাতে নিতেই ওপাশ থেকে তন্ময়ের কন্ঠের আভাস পেলাম।
রাগে ফোনটা রাখতে যাবো তখনই তন্ময় ওপাশ থেকে বলে উঠলো,
-- ফোন রেখো না তৃষ্ণা। একটাবার আমার কথা শুনো।
-- হুম বলুন।
-- আমাকে ক্ষমা করে দাও তৃষ্ণা। আমি আমার করা কাজে অনেক লজ্জিত। এই একমাসে আমি নিজের ভুল খুব ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছি।
-- আবারও নিজের ম্যান্যুপেলেট করার ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন? এবার আর আপনার জালে পা ফেলছি না।
-- বিশ্বাস করো তৃষ্ণা। আমি অনেক লজ্জিত। তিতলির কষ্ট এখন আমি হারে হারে টের পাচ্ছি। নিজের ইগোতে পরে আমি তিতলিকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। তুমি ঠিক বলেছিলে তৃষ্ণা। আমি বাবা নামের কলঙ্ক। আমার তিতলি ভালো নেই তৃষ্ণা।
-- কি হয়েছে তিতলির??
-- খুব কষ্টে আছে তোমাকে ছাড়া তোমার কলিজার টুকরা। ওকে বাঁচানোর জন্য ওর মা কে প্রয়োজন। আমাকে ক্ষমাকে করতে না পারলেও, তিতলির জন্য আমাদের কাছে ফিরে আসো তৃষ্ণা!! আমাদের তোমাকে ভীষণ প্রয়োজন,,
-- টুট টুট টুট।
কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলাম। মাথায় ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন আমার তিতলি। আর সেই তিতলি!!! কি করবো আমি? তন্ময়ের কাছে ফিরে যাবো তিতলির জন্য?
.
.
" নির কোথায়? কি করেছো ওর সাথে?"
নির্ঝরের ঘরের দরজায় দাড়িয়ে প্রশ্নটা করলো স্নিগ্ধা।
বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে কান্না করছিলাম। হঠাত স্নিগ্ধার কন্ঠ শুনে পিছনে ঘুরে তাকালাম।
-- কি হলো চুপ করে আছো যে? নির কালকে রাত থেকে বাড়ি ফেরে নি। সেই খবর কি রাখো?
-- হুম।
-- খুব তো নিজেকে নির এর বউ বানিয়ে রেখেছো! তা স্বামীর প্রতি কি কোনো দায়িত্ব নেই?
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই নয়না ম্যাম সেখানে এসে পরলেন।
-- রিল্যাক্স স্নিগ্ধা। যাও ঘরে গিয়ে একটু রেষ্ট নাও। (নয়না বেগম)
স্নিগ্ধা একটা মুখ ঝামটা দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। নয়না ম্যাম দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালেন।
-- দেড় বছর আগে যেদিন নির আমাকে এসে বলেছিল, একটা মেয়ে তাকে রাস্তায় এক্সিডেন্টের হাত থেকে বাঁচিয়েছে,, সেদিন আমি মন থেকে সেই মেয়েটার জন্য দোআ করেছিলাম। ঠিক দশদিন পর এসে নির আবার আমাকে বলেছিল সে মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছে।
জানো তো মেয়েটা কে ছিল?
-- হুম।
-- তুমি ছিলে! তুমিই নিরকে বাঁচিয়েছিলে। তারপর তোমাদর প্রতিদিন দেখা করা, সময় কাটানো সব কিছুই আমার ছেলেকে তোমার প্রেমে পরতে বাধ্য করে। এটাও জানো অবশ্যই!
-- হুম।
-- নির যখন বলেছিল সে তৃষ্ণা নামের একটি অনাথে মেয়েকে বিয়ে করতে চায় সেদিন আমি বিনাবাক্যে রাজী হয়েছিলাম।
-- এসব কথা আবার কেনো তুলছেন?
-- কারণ একবছর আগে তোমার জন্য আমার ছেলে মরতে বসেছিল। ছয় মাসের সম্পর্ক নিজ হাতে গলায় টিপে হত্যা করে বিয়ের দিন পালিয়ে গিয়েছিলে তুমি। আমার ছেলের জীবন সেদিন বিয়ের অনুষ্ঠানেই থমকে গিয়েছিল। পাগলের মতো তোমাকে খুঁজেছে। তুমি জানো নির আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল তোমাকে খুঁজে না পেয়ে।
-- হুম। (কান্না চেপে ধরে)
-- আবার নির কে সেই একই কষ্ট দেওয়ার জন্য ফিরে এসেছো এই শহরে!! আমার নির এর জীবনে!!
চলবে..
নেশা
পর্ব_১২
Tabassum_Kotha
নির্ঝর চেক বুকের একটা পাতায় সাইন করে আমার মুখের উপর ছুড়ে মারলেন। নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার অভিনয় করেই চলছি অনবরত। নিচে পরে যাওয়া চেক এর পাতা টা উঠিয়ে নিলাম। দশ লাখ টাকার এমাউন্ট সাইন করেছেন।
নির্ঝর এখনও আগের মতোই রাগের আগুনে ঝলসে যাচ্ছেন।
-- হিয়ার ইজ ইউর মানি ড্যাম ইট। এতো কিছুর পরেও তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারো নি। এখনও টাকাকেই ভালোবাসো। কেনো তৃষ্ণা? কেনো আমাকে ভালোবাসতে পারলে না তুমি?
-- ভাবছি শপিং করে আসবো।
-- আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি ড্যাম ইট! আন্সার মি! কেনো ভালোবাসতে পারলে না আমাকে? আমার ভালোবাসায় কোন ত্রটি রয়ে গেলো?
-- আচ্ছা কি কি কেনা যায় বলুন তো! ভেবেই কূল পাচ্ছি না।
আমার দুই বাহু ধরে ঝাকিয়ে নিজের মুখের সামনে আমার মুখটা নিয়ে বললেন, -- একবার আমাকে ভালোবাসো তৃষ্ণা,, বিশ্বাস করো পৃথিবীর সব সুখ তোমার পায়ের কাছে এনে দেবো।
-- পারবেন না। আমাকে আপনি কিছুতেই সুখী করতে পারবেন না।
আমার মুখ উনার দুহাতের আজলে নিয়ে কান্না ভেজা দৃষ্টিতে বললেন,
-- একটা সুযোগ দাও তৃষ্ণা। একবার, শুধু একবার আমাকে ভালোবাসো। তোমার টাকা চাইতো! আমার যতো টাকা আছে সব তোমার। প্রয়োজনে আমি নিজেকেও বিক্রি করে দেবো। তবুও শুধু একটা বার আমাকে ভালোবাসো!
নিজেকে নির্ঝরের কাছে থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি।
-- আপনাকে আমি ভালোবাসি না নির্ঝর। আমি টাকাকে ভালোবাসি। আর সেই সাথে তন্ময় কে।
-- তন্ময়ের মতো একটা ফ্রডকে ভালোবাসতে পারো কিন্তু আমাকে না? কেনো তৃষ্ণা?
-- ভালোবাসা জোর করে হয় না নির্ঝর! এটা একান্তই মনের ব্যাপার। আর আমার মন তন্ময় কে খুঁজেছে। এখন চাইলেই আপনাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
. আমার কথায় মুহূর্তেই নির্ঝরের চোখ মুখ শক্ত হয়ে এসেছে। কান্না ভেজা চোখ দুটোয় আবার রাগ এসে ভর করছে। ধীরে ধীরে চোয়াল শক্ত করে, আমাকে স্বজোরে একটা ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। আচমকা টাল সামলাতে না পেরে আমি নিচে পরে গেলাম।
নির্ঝর রাগে ফেটে পরে কার এর চাবি, ওয়ালেট আর মোবাইল নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
বলার বা করার আর কিছুই বাকি নেই। এই রাগটাই আমি চেয়েছিলাম। এই এক মাসে নির্ঝর আবার আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পরেছিলেন। আজকের এই ধাক্কাটা অনেক প্রয়োজনীয় ছিল।
একটু আগে ক্ষুধায় পেট চো চো করছিল। কিন্তু এখন খাওয়ার প্রতি আর কোনো রুচি নেই। খাবার টা ট্রে তে উঠিয়ে কিচেনে রেখে ঘরে এসে পরলাম।
. . . . . .
শাওয়ারের পানিগুলো দ্রুত বেগে আমার শরীরের উপর আছড়ে পরছে। ওয়াশরুমের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছি। আজ চোখের পানিও আমার সাথে বেইমানি করছে। একটু কান্না করতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু চোখে পানি আসছে না। কি মুশকিল!
বেশ লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে পরলাম।
কলাপাতা রঙের শিফন জরজেটের শাড়িটি গায়ে জরিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছি। এ বাড়ি আর নির্ঝরের জীবন থেকে যাওয়ার সময় ক্রমশ এগিয়ে আসছে আমার। আবার সব বন্ধন ছিন্ন করে নির্ঝর কে কাঁদিয়ে নিজের চোখের পানি আঁড়াল করে চলে যাবো বহুদূর!
তিতলির কথা ভীষণ মনে পরছে। কেনো যানি না যখন আমি কোনো প্রকার কষ্টে থাকি তখন তিতলির মুখটা আমার চোখের সামনে ভাসে। আমার অন্ধকার জীবনে একমাত্র খুশির ঝলক আমার তিতলি। সেই তিতলিও আজ আমার থেকে কতো দূরে! ভাগ্য আমার সাথে খুব সুন্দর লুকোচুরি খেলছে। এই খেলায় কে জিতবে কে জানে!
. . . . . . . . . . . .
পুরো দিন পেরিয়ে রাত নেমেছে। রাতেরও মধ্য প্রহর চলছে। নির্ঝর এখনও বাড়ি ফেরেন নি। মোবাইলটাও বারবার সুইচড্ অফ বলছে। খুব টেনশন হচ্ছে আমার। না জানি কোথায় আছেন উনি। কালকেও মধ্যরাত পর্যন্ত বাইরে ড্রিংক করেছে। কিন্তু আজ তো ফিরেই আসছেন না। নির্ঝর এর আব্বু ঢাকার বাইরে গেছেন। আর নয়না ম্যাম একটু অসুস্থ থাকায় আগেই শুয়ে পরেছেন। স্নিগ্ধা আমার সাথে কোনো কথাই বলে না। কি করবো আমি এই পরিস্থিতিতে? এতো রাতে উনার ঠিকানা কোথায় পাবো। কিভাবে জানবো উনি কোথায়, কেমন আছেন!
এতোটা অসহায় নিজেকে আগে কখনও মনে হয় নি। এদিকে রাতে বেড়েই চলছে। রাতের অন্ধকারের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে আমার দুশ্চিন্তা।
নির্ঝরের পথ চেয়ে একটা নির্ঘুম রাত পাড়ি দিয়ে ভোরের দিকে চোখ লেগে এলো। সারা রাত নির্ঝর আর বাড়ি ফেরেন নি।
. হঠাত দরজায় কড়া আঘাতের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো আমার। হয়তো নির্ঝর ফিরেছেন ভাবতেই ধরফরিয়ে বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে দিলাম। কিন্তু দরজা খুলে আমাকে পুনরায় হতাশ হতে হলো।
একজন সার্ভেন্ট এসে বললো আমার জন্য ল্যান্ড লাইনে ফোন এসেছে।
শাড়ি ঠিকঠাক করে নিচে গিয়ে ফোন হাতে নিতেই ওপাশ থেকে তন্ময়ের কন্ঠের আভাস পেলাম।
রাগে ফোনটা রাখতে যাবো তখনই তন্ময় ওপাশ থেকে বলে উঠলো, -- ফোন রেখো না তৃষ্ণা। একটাবার আমার কথা শুনো।
-- হুম বলুন।
-- আমাকে ক্ষমা করে দাও তৃষ্ণা। আমি আমার করা কাজে অনেক লজ্জিত। এই একমাসে আমি নিজের ভুল খুব ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছি।
-- আবারও নিজের ম্যান্যুপেলেট করার ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন? এবার আর আপনার জালে পা ফেলছি না।
-- বিশ্বাস করো তৃষ্ণা। আমি অনেক লজ্জিত। তিতলির কষ্ট এখন আমি হারে হারে টের পাচ্ছি। নিজের ইগোতে পরে আমি তিতলিকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। তুমি ঠিক বলেছিলে তৃষ্ণা। আমি বাবা নামের কলঙ্ক। আমার তিতলি ভালো নেই তৃষ্ণা।
-- কি হয়েছে তিতলির??
-- খুব কষ্টে আছে তোমাকে ছাড়া তোমার কলিজার টুকরা। ওকে বাঁচানোর জন্য ওর মা কে প্রয়োজন। আমাকে ক্ষমাকে করতে না পারলেও, তিতলির জন্য আমাদের কাছে ফিরে আসো তৃষ্ণা!! আমাদের তোমাকে ভীষণ প্রয়োজন,,
-- টুট টুট টুট।
কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলাম। মাথায় ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন আমার তিতলি। আর সেই তিতলি!!! কি করবো আমি? তন্ময়ের কাছে ফিরে যাবো তিতলির জন্য?
. .
" নির কোথায়? কি করেছো ওর সাথে?" নির্ঝরের ঘরের দরজায় দাড়িয়ে প্রশ্নটা করলো স্নিগ্ধা।
বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে কান্না করছিলাম। হঠাত স্নিগ্ধার কন্ঠ শুনে পিছনে ঘুরে তাকালাম।
-- কি হলো চুপ করে আছো যে? নির কালকে রাত থেকে বাড়ি ফেরে নি। সেই খবর কি রাখো?
-- হুম।
-- খুব তো নিজেকে নির এর বউ বানিয়ে রেখেছো! তা স্বামীর প্রতি কি কোনো দায়িত্ব নেই?
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই নয়না ম্যাম সেখানে এসে পরলেন।
-- রিল্যাক্স স্নিগ্ধা। যাও ঘরে গিয়ে একটু রেষ্ট নাও। (নয়না বেগম)
স্নিগ্ধা একটা মুখ ঝামটা দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। নয়না ম্যাম দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালেন।
-- দেড় বছর আগে যেদিন নির আমাকে এসে বলেছিল, একটা মেয়ে তাকে রাস্তায় এক্সিডেন্টের হাত থেকে বাঁচিয়েছে,, সেদিন আমি মন থেকে সেই মেয়েটার জন্য দোআ করেছিলাম। ঠিক দশদিন পর এসে নির আবার আমাকে বলেছিল সে মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছে। জানো তো মেয়েটা কে ছিল?
-- হুম।
-- তুমি ছিলে! তুমিই নিরকে বাঁচিয়েছিলে। তারপর তোমাদর প্রতিদিন দেখা করা, সময় কাটানো সব কিছুই আমার ছেলেকে তোমার প্রেমে পরতে বাধ্য করে। এটাও জানো অবশ্যই!
-- হুম।
-- নির যখন বলেছিল সে তৃষ্ণা নামের একটি অনাথে মেয়েকে বিয়ে করতে চায় সেদিন আমি বিনাবাক্যে রাজী হয়েছিলাম।
-- এসব কথা আবার কেনো তুলছেন?
-- কারণ একবছর আগে তোমার জন্য আমার ছেলে মরতে বসেছিল। ছয় মাসের সম্পর্ক নিজ হাতে গলায় টিপে হত্যা করে বিয়ের দিন পালিয়ে গিয়েছিলে তুমি। আমার ছেলের জীবন সেদিন বিয়ের অনুষ্ঠানেই থমকে গিয়েছিল। পাগলের মতো তোমাকে খুঁজেছে। তুমি জানো নির আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল তোমাকে খুঁজে না পেয়ে।
-- হুম। (কান্না চেপে ধরে)
-- আবার নির কে সেই একই কষ্ট দেওয়ার জন্য ফিরে এসেছো এই শহরে!! আমার নির এর জীবনে!!
চলবে..