ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর😍
---------(সিজন-২)
Writer_TaNiA[🖤]
Part_22🍁
"একটা স্নিগ্ধ সকাল,সূর্য টা উকি দিয়ে উঠে চারদিকে আলোর ঝলকানি ছড়িয়ে দিয়েছে।এ এক অপরুপ দৃশ্য।নতুন সকালের প্রথম রোদটা মিস্টি হয়।আর এই মিস্টি রোদ এসে প্রতিদিন তিশার শরীর বুলিয়ে দিয়ে যায়।
পরীক্ষা শেষ বলে এখন কলেজ নেই,তবুও সকাল সকাল উঠাটা যেনো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।তাইতো সকালের প্রথম রোদটা কখনো মিস করে না তিশা।কিন্তু বলে না,সময় তো পরিবাহী।তাকে ধরে রাখার সমর্থ নেই।তাই আস্তে আস্তে সূর্যের তীব্রতার সাথে রোদের উত্তপ্ত ও বেড়ে যায়।তখন এই তীক্ষ্ণ গরমে সূর্যটাকে অসহ্য লাগে।
রোদ ভারী হবার সাথে সাথে তিশাও বালকানি থেকে ঘরে ডুকে গেলো।এখন আর এখানে থাকা যাবে না।ঘরে প্রবেশ করার পরপরই ফোনটা বেজে উঠলো তিশার।
---হ্যালো
'ওপর পাশের ব্যক্তিটি নিরব।'(জিসান)
---ঘুম পেয়েছে, ঘুমান।পরে কথা বলবো নি।
'উঁহু....ঘুম জড়ানো কন্ঠে।'
---কি উঁহু....।
'আমি তোকে ফোন রাখতে বলেছি।'
---কথা না বললে,ফোনটাতো রাখতেই হবে।
'কথা না বলি,শুনতে তো পারি।'
---কি?
'তোর নিশ্বাস.....।যা আমার শুনতে অনেক ভালো লাগে।'
---নিশ্চুপ???
'কি হলো কথা বলিস না কেনো।'
---কি বলবো,আপনে তো বললেন নিশ্বাস শুনতে ফোন দিয়েছেন তো নিশ্বাসই শুনুন।
"হুম...।কিছুক্ষণ পর জিসানের ঘুম জড়ানো কন্ঠ ভেসে উঠে,
নিশ্বাস আমার তুমি জানে এই দুনিয়া
প্রিয়া আমার প্রিয়া
নিশ্বাস আমার তুমি জানে এই দুনিয়া
প্রিয়া আমার প্রিয়া।
কিভাবে তোমায় ছাড়া আমি বাঁচি,
যেও না দুরে থাকো কাছা কাছি
তুমি দুরে গেলে যাবে প্রানটা উড়িয়া
নিশ্বাস আমার তুমি জানে এই দুনিয়া।
জিবন দিয়ে আমি ভালোবাসি তোমাকে,
এখন বাঁচাও তুমি ভালোবেসে আমাকে
শুণ্য আমার এই ভুবন,
যদি তোমায় না পাই মন
শুণ্য আমার এই ভুবন,
যদি তোমায় না পাই মন
ধংস করবো সব কিছু,
ছাড়বো না তোমার পিছু
যতোই দুরে যাও প্রিয়া,
জেনে তুমি নাও প্রিয়া।(কপি)
---হুমমম....।
"কি হুম।"
---সকাল হয়ে গিয়েছে উঠুন এবার, ফ্রেস হন,অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হন।বায়।
'এই শুন.....।যা রেখে দিলো।কতোকাল পালাবি পাখি আমার অগোচরে,একবার ধরা দিতে দে.....তার পর বুঝাবো তোকে।জিসানও উঠে ফ্রেস হতে চলে গেলো।'
--- তিশা মায়ের সাথে রান্নার কাজে হেল্প করছে।আজকাল তিশার বেশির ভাগ সময় কাটে রান্না ঘরে,হয়তো বা পড়ার টেবিলে।মা যেনো পণ করেছে,এবার তিশাকে পাক্কা রাঁধুনি বানিয়ে ছাড়বে।তা না হলে তার একমাত্র মেয়ের জামাইর নাকি না খেয়ে মরতে হবে।
তাইতো কোমরে কাছা বেঁধে মাঠে নেমেছে।মেয়েকেও তার মতো রান্না করতে শিখতে হবে।রেনু বেগমের হাতে নাকি যাদু আছে,সবাই বলে।এমনকি তার শ্বাশুরী ও তার রান্নার গুণগান করে।
যে শ্বাশুরী মুখ ফুটে জীবনেও রেনু বেগমের সুনাম করেনি।সেই শ্বাশুরীর মুখ বন্ধ হয়ে যায় একমাত্র তার হাতের রান্না মুখে দিলে।
তাইতো নিজের এই বিশেষ গুন মেয়েকেও দিতে চায়।জাতে করে মেয়ে শ্বশুর বাড়ী গেলে,মেয়ের সুনাম শুনে সেও গর্ববোধ করতে পারে।
"তিশাকে এক বাটি পিয়াজ কাটতে বসিয়ে দিলো তিশার মা।ব্যাচারী তিশা না পাড়ছে সইতে,না পারছে রইতে।চোখের পানি মনে হয় আজ সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিবে।
চোখের পানির কারণ হয়তো পিয়াজ,কিন্তু নাক দিয়েও কেনো পানি পড়ছে তা তিশার বোধগম্য নয়।হঠাৎ জিসানের ভিডিও কল আসে।
তিশা উকি দিয়ে দেখে নেয় ওর মা কোথায়।রেনু বেগম অন্যকাজে ব্যস্ত।
-তাই তিশা ফোনটা রিসিভ করে।
'তিশাকে এভাবে কাঁদতে দেখে জিসান পাগল হয়ে যায়।জান কি হয়েছে,এভাবে কাঁদছিস কেনো।কেউ কিছু বলেছে।কে কি বলেছে,একবার নাম বল।তাকে আমি দুনিয়া থেকে উঠিয়ে ফেলবো।কি হলো বল!অস্থিরতা জিসানকে যেনো পুরো ভর করে ফেলেছে।"
---তিশা জিসানের কথা শুনে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছে।কি বলে লোকটি।পাগল নি।সব পাগল কি আজ আল্লাহ আমার কপালেই লিখে রেখেছে।
'কি বলছেন এসব।একটু শান্ত হন।'
---আরে কিসের শান্ত হবো.... জিসান চিল্লিয়ে।
'জিসানের চিল্লানিতে তিশারও রুহ কেঁপে উঠলো।
দেখুন……আমি।'
---জিসান তাকিয়ে দেখে তিশার হাতে ছুড়ি।এই তোর হাতে ছুড়ি কেনো।দেখ তিশা কোনও রকম পাগলামি করবি না বলে দিলাম।কিছু হলে আমাকে বল আমি সব সোলভ করে দেবো জান।
তবুও এমন কিছু করিস না।জিসানের করুন কন্ঠ।তিশা তাকিয়ে দেখে জিসানের চোখদু'টো ছলছল করছে।হয়তো যে কোনো সময় বর্ষণও নেমে পড়বে।
'আমি এখনি আসছি।তুই কিছু করবি না।ফোনও কাটবি না।আমি আসছি।জিসান অফিস থেকে বের হতে নিলেই।'
---আরেরে কি করছেন কি? আমার কথা শুনুন আগে।এই দেখুন আমি ছুড়ি ফেলে দিয়েছি।
'জিসান থেমে যায়,কি করছিলি ওটা দিয়ে।'
"জিসানের সামনে পিয়াজ এর বাটিটা ধরে।"
---পিয়াজ!
"-জি পিয়াজ!আমি পিয়াজ কাটছিলাম। তার কারণে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আর ছুড়ি ছাড়া কাটা যাবে না,তাই ওটা আমার হাতে ছিলো।আপনে কোথাকার জিনিস কোথায় নিয়ে গেলেন।"
---তকে এসব ফালতু কাজ করতে কে বলেছে।দাঁতেদাঁত চেপে।
"তিশা অবাক হয়ে গেলো,এতোক্ষন কি সুন্দর করে কথা বলেছিলো, খারুসটার এখন আবার কি হলো।"
-'কি হলো কথা বলিস না কেনো।চিল্লিয়ে...।'
---তিশা কিছু বলবে তখনি মা রান্না করে প্রবেশ করে।জিসানকে না দেখেই,কি রে তিশা এখনো হয়নি,এতোক্ষন লাগে এ কয়েকটা পিয়াজ কাটতে।জামাই বাড়ী গেলেতো আমার নাক কাটিয়ে ফেলবি।ব্যাচারা জিসান,তোর হাতের রান্না মনে হয় এই জীবনেও ক্ষেতে পারবে না।
"একদম ঠিক বলছেন মা,রেনু বেগম তাকিয়ে দেখে জিসান ভিডিও কলে।
একটা কাজেরও না আপনার মেয়ে।দেখুন আমি কখন ধরে বলছি আমার মিস্টি ক্ষেতে মন চাইছে।তুই মায়ের কাছ থেকে আগে ওটা শিখে নে।কিন্তু আপনার মেয়ে কোনও কথা কানেই দেয় না।
বলে কি পারবে না।এই জনমে মনে হয় না আমার ইচ্ছা পুড়ন হবে।জিসান হতাশ ভরা কন্ঠে কথাটা বলে।"
---কেনো পুরন হবে না,অবশ্যই হবে।ও করবে,ওর বাপেও করবে।
"না না এর মধ্যে শ্বশুর মসাইকে টানা কি দরকার।ও করলেই হবে।জিসান একটু মুচকি হেসে,আচ্ছা আমি এখন রাখি,আমার একটা মিটিং আছে।তিশাকে চিপায় ফেলে জিসান চলে গেলো।কারণ জিসান ভালো করেই জানে এখন তিশার মা তিশাকে ওয়াস করবে।"
---জিসানের কথায় তিশা শোকড এর মধ্যে চলে গিয়েছিলো।এ কি বললো,এদেখি ডাহামিথ্যে কথার অস্তাদ।মা তো এখন আমাকে,কি ঝাড়াটা না ঝাড়বে।উফ!!
"তৌফিক সাহেব কিছু ইম্পোরটেন্ট ফাইল বাসায় রেখে এসেছে।আর তা দিতেই আজ নিশিকে অফিসে আসতে হলো।নিশি সাথে লাঞ্চ ও নিয়ে আসলো,বাবা আর রায়হানের জন্য।
অফিসের সবাই নিশিকে চিনে,তাই প্রবেশ করার সাথে সাথে সবাই দাঁড়িয়ে গেলো।নিশি ফাইলগুলো ও টিফিন নিয়ে সোজা বাবার রুমে চলে গেলো।"
---আজকাল খুব কমই আসা হয় অফিসে তৌফিক আহমেদের।রায়হানই সব সামলায়।ছোট ছোট ডিসিশন গুলো রায়হান নিলেও অফিসের বড় বড় ডিসিশন গুলো জন্য তৌফিক সাহেবকে হাজির হতে হয়।
নিশিকে দেখে,তো মামুনি আমার জন্য লাঞ্চ ও নিয়ে এসেছো।আজতো আমার চাঁদ কপাল।তা না হলে তোমাদের ভাইবোনদের তো আমার অফিসে দেখাও যায় না।
"কি যে বলো না বাবা।এমন করে বলছো কেনো।"
'-তো কি করবো বল মা,বড় জন ডাক্তার হয়ে নিজের পেশা বেছে নিয়েছে।ভাবলাম যাক জিসানতো আছে, এসব ও সামলাবে।
কিন্তু ও নিজের বিজনেস আলাদা করে ফেললো।এই বুড়োটাকে একা ফেলে দিলো সবাই।'
---নিশি বাবার গলা জড়িয়ে তাতে কি হয়েছে।আমিতো আছি।আমি দেখবো সব।আমি থাকতে চিন্তা কিসের।আমি দেখলে সমস্যা কোনও।
'তৌফিক সাহেব হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে,তাহলে তো টেনশনই নেই।
দু'জনেই হেসে দিলো।'
---এই সময় রায়হান কেবিনে প্রবেশ করলো।নিশিকে দেখে একটু অবাক হলো।কারণ ওদের ভাইবোন কেউই এই অফিসে তেমন আসে না।আর নিশিতো আরো না।তবে অনেকদিন পর নিশিকে দেখতে পেয়ে রায়হানের ঠোঁটে এক তৃপ্তি হাসি ফুটে উঠলো।
'ও রায়হান, কম ওন সান।এ দেখো কে এসেছে।আমাদের অফিসের বস।'
---বস!রায়হান ভ্রুটা কিঞ্চিৎ কুঁচকিয়ে।
'হে বস!আমার এ পাগল মেয়েটা নাকি অফিস সামলাবে।আমার কাঁধের বোঝা কমাবে।'
---তাহলে তো ভালোই।
"হুম আমার সব টেনশন দূর।তোমরা দু'জন মিলে অফিস সামলাবে,আর আমি ওর মাকে নিয়ে ভ্যাকেশনে ঘুড়ে বেড়াবো আইডিয়াটা কেমন।"
'-হুম ভালো।রায়হান মৃদ হেসে।'
---ঘুড়তে যাবে,নাকি হানিমুনে।
"চুপ ফাজিল মেয়ে,বাবার সাথে ফাইজলামি। হানিমুনে তো আমি তোদের পাঠাবো কানে দরে সিরিয়ালে।"
'আমার যাওয়ার শখ নেই,তুমি বরং তোমার ওই পাগল ছেলেকে পাঠাও। একপায়ে রাজি আছে।'
---তা অবশ্য ঠিকই বলছিস।আচ্ছা তোরা বস,আমি একটু আসছি ম্যানেজারের কেবিন থেকে।
তৌফিক সাহেব চলো গেলে নিশি গিয়ে বাবার চেয়ারে বসে।
"রায়হান এতোক্ষন বাবা মেয়ের কথাগুলো শুনছিলো।মেয়েটার মধ্যে এখনো বাচ্চামো আছে,তা না হলে,কেউ এভাবে হানিমুনের কথা বলতে পারে।
রায়হান ও সামনের একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো।তো মিস বস বলুন আপনার সেবায় আমি কি করতে পারি।"
---নিশিও একটু মুডে এসে,তো মিস্টার রায়হান বলুন,কেমন চলছে আজকাল অফিস।কাজকর্ম সব ঠিকমতো চলছে তো।
অলস ব্যক্তিদের কিন্ত আমার মোটেও পছন্দ না।আমার কাজ ঠিকমতো না হলে আমি কিন্তু সবাইকে ফায়ার করে দেবো।
'রায়হান মুচকি হেসে নিচের দিকে তাকিয়ে,অফিস পরে সামলাম মিস,আগে নিজের জিনিসটি সামলাতে শিখুন।'
-- রায়হানের কথা নিশির মাথার উপর দিয়ে গেলো।
"রায়হান বুঝতে পারে নিশি কিছুই বুঝেনি।হাতের কলমটা দু'আঙ্গুলে নাড়িয়ে।গোলাপির সাথে কালো রংটা বেমানান জানেন।ওয়াইট বা সেম কালার হলেও চলতো।বাট আজ ব্লাক কি মনে করে পড়লেন।"
---নিশি কনফিউজড হয়ে গিয়েছে রায়হান কি বলছে।কিন্তু রায়হানের মুখের দুষ্ট হাসিটা বলে দিচ্ছে কিছু একটা গণ্ডগোল ও করেছে।কি বুঝে যেনো ডান সাইডে রাখা মিরর দিকে তাকালো।লজ্জায় নিশির মাথা কাটা অবস্থা।নিশির অন্তর্বাসের কালো বেল্টটা দেখা যাচ্ছে।গোলাপি জামার সাথে সত্যিই এটা বেমানান।একদম চোখে পড়ার মতো।তাইতো এই বেহায়া মানুষটি নিচের দিকে তাকিয়ে হাসছে।আমাকে লজ্জা না দিলে এই মানুষটির পেটের ভাত হজম হয়না মনে হয়।নিশি ঝটপট আপাতত ওড়না টা দিয়ে ডেকে ফেললো।আর কপাট দৃস্টিতে রায়হানের দিকে তাকালো।
"মিস্টার রায়হান মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা মনে হা শিখেন নি।শিখে নিবেন,আর নযরটাও ঠিক রাখতে শিখুন।"
---রায়হান হেসে,নিশির সামনে এসে দাঁড়ালো।একটু ঝুকে চেয়ারের হাতলে দু'হাত রেখে।না দেখার জিনিস যদি এতো আকর্ষন করে দেখান,তাহলে নযরের কি দোষ ম্যাডাম।
দেখানোর মতো জিনিস হলে,নযর তো দেখবেই।নির্ভর তো জিনিসটির উপর করে,আর ওর মালিকের উপর।এছাড়া এমনে দেখিয়ে দেখিয়ে অফিসে যদি কাজ করেন তাহলে পুরো অফিসই সামাল দিতে কস্ট হবে আপনার।
'কি যা তা বলছেন এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট। আর কিছু না।কিছুটা রেগে।'
---ওকে,তাহলে একটু সাবধানে থাকবেন এমন এক্সিডেন্ট যাতে রোজ রোজ না হয়।এতে কিন্তু আপনার হবু বরের সাথে না ইনসাফি হবে।এমনেই ব্যাচারা আপনাকে বিয়ে করে কস্টে ভুগতে হবে।
'নিশি, ভ্রুটা কুঁচকিয়ে মানে....।'
"-এই যে হবু বরের জিনিস আপনে লোকাচরে প্রদর্শন করছেন।তা তো ব্যাচারার প্রতি না ইনসাফি,তাই না।
রায়হানের কথায় নিশি রেগে লাল হয়ে যাচ্ছে, নিশিকে আরো রাগাতে রায়হান আবারও বলা শুরু করলো।
নিশির কানের কাছে গিয়ে,আপনার যে হানিমুনের কোনও ইন্টেরেস্ট নেই।সেটা বরকে আগেই বলে দিবেন।তা না হলে,ব্যাচারার সব স্বপ্ন ভেনিস হয়ে যাবে।আপনার কারনে তার কস্টও বেরে যাবে।"
---নিশি মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে,সেটা আপনাকে ভাবতে হবে না।আমি আর আমার বর ভেবে নিবো নি।আপনি আপনার মুখে লাগাম লাগান।দিন দিন বেহায়া হয়ে যাচ্ছে।আপনার বউ আবার আপনাকে ছেড়ে না চলে যায়।
'-তাই নাকি,আমার একটা বিশেষ গুণ আছে,হাড় ভাঙ্গার।
---তার মনে কি আপনি বউ পিটাবেন।চোখ দুটো ছোট ছোট করে।
'রায়হান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মারার মতো কাজ করলে অবশ্যই পিটাবো।'
---আপনে কিন্তু মানুষটি সুবিধার না।কিঞ্চিৎ সন্দেহ নজরে তাকিয়ে নিশি।
'সুবিধা অসুবিধা বিয়ের পরে দেখা যাবে।এখন এসব বললে,রহস্য ভেঙ্গে যাবে।তাই ওয়েট করুন.....প্লিজ।সময়ই বলে দেবে সব।
রায়হানের কথায় নিশি মনে হয় বিরাট মাপের ভয় পেয়েছে।শুকনো কয়েকটা ঢোক গিলে রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে।আর রায়হান তৌফিক সাহেবের গলার শব্দ শুনে নিজের জায়গায় বসে পড়লো হেসে।
"জিসানের দেওয়া বোরকা গুলো থেকে একটা নীল কালারের বোরকা খুঁজে নিলো তিশা।এটা বোরকা হলেও,দেখতে বোরকার মতো না।অনেকটা ঘের দেওয়া লং ফ্রকের মতো।
তার উপর বোরকার কাজটাও একদম আনকোমন।বোরকার কাজের সাথে মেচিং করা হিজাব দিয়ে আপদমস্তক ঢেকে নিলো নিজেকে।একদম অন্যরকম লাগছে।এর আগেও জিসানের দেওয়া বোরকাগুলো থেকে দু'টো বোরকা পরে কলেজে গিয়েছিলো পরীক্ষা দিতে।তখন এমন মনে হয়নি।আজ যতোটা ফুটে উঠেছে।
----ব্যাগের মধ্যে ফিরনি রাখা বক্সটি ভরে বের হতে নিলে,রেনু বেগমের ডাকে দাঁড়িয়ে যায়।কোথায় যাশ।
" তিশা কিছুটা বিরক্ত হয়ে,তোমাকে কতো বার বললাম মা।কেউ যেতে নিলে পিছনে থেকে ডাক দিবে না।এটা ভালো না।"
-বুঝছি,আর জ্ঞান দিতে হবে না।বলে গেলেই তো আর ডাকতাম না।
--যার জন্য,দু'ঘণ্টা ঝেড়ে ফিরনি বানাতে শিখালে।তাকে খাওয়াতে।আর কিছু বলবে।রেনুর মুখে হাসি এনে, না..।সাবধানে যাস।তারাতারি বাসায় ফিরে আসবি কিন্তু।
'-তিশা চলে গেলো ওর গন্তব্যে।অফিসের সামনে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে।না বলে আসাটা ঠিক হয়েছে কিনা দ্বিধায় ভুগতে লাগলো।কিছুক্ষণ ভাবার পর সব দ্বিধা দন্ধ ফেলে,ভেতরে প্রবেশ করলো।রিসিপশনে দাঁড়ানোর সাথে সাথে রিনি দাঁড়িয়ে ওয়েল কাম ম্যাম।'
থ্যাংকু। এন্ড গুড ইবেনিং রিনি আপু।স্যার আছে কেবিনে।
-জি ম্যাম স্যার কেবিনেই আছে ।
আজ যেতে পারবো তো।
-রিনি হেসে পুরো অফিসটাই আপনার ম্যাম।
---নিজের কেবিনের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে লাবণি।হাতে রাখা ধোঁয়া উঠা কফিটা চুমুক দিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন।আজকাল জিসানের ইগনোরের পরিমাণটাও বেড়ে গিয়েছে।সারাদিন একই অফিসে থেকেও ওকে চোখে দেখা যায় না।
খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া আমার সাথে কথাও বলে না।হাতের এই ডিলটা বাদে বাকি সব ডিল থেকে আমাকে সরিয়ে রেখেছে।কেনো করছে জিসান এসব।
এভাবে চলতে থাকলে,জিসানকে পাওয়ার স্বপ্ন ভুলে যেতে হবে।ভাবতে গিয়ে হাতে রাখা কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেলো।
তাই লাবণি কফিটা রাখতে জানালা থেকে সরতে নিলে,হঠাৎ অফিসের গেটের দিকে নযর যায়।একটা মেয়ে সম্পূর্ণ ডেকে ডুকে অফিস বিল্ডিং এ প্রবেশ করলো।এতো উপর থেকেও লাবনির বুঝতে অসুবিধা হলো না মেয়েটা কে?
"জিসানের কেবিনের দিকে পা বাড়াতে নিলে,কারো সাথে বাধা পায় তিশা।সামনে তাকিয়ে দেখে পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছে লাবণি।
-হায় তিশা,কেমন আছো।
আলহামদুলিল্লাহ আপু।আপনে কেমন আছেন।"
---উম,ভালো থাকতে দিলে কোথায়।আমার ভালো থাকার মানুষটিকে তো তুমি বেধে রেখেছো।
"তিশা একটু হেসে,ভুল বললেন আপু।আমি কাউকে বাধিনি।সেই মানুষটি আপসে এসে আমার কাছে ছ্যারেন্ডার করেছে।আমিতো শুধু একসেপ্ট করেছি,তবে জোড় করেনি।"
"ওয়েল,বয়সের তুলনায় ভালোই কথা বলতে পারো।নিশ্চয়ই এসব কথায় জিসানকে ফাঁসিয়েছো।"
---আমি না হয় কোথাতেই ফাঁসালাম।আপনি কেনো রুপ দিয়েও জিসানকে ফাঁসাতে পারলেন না।তিশার কথা লাবনির শরীরে কাটা দিতে লাগলো।
কারণ জিসান এখনো একটা স্বপ্নের মধ্যে আছে।তা না হলে,একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীকে রেখে তোমার মতো বাচ্চাকে কেনো বিয়ে করলো।আর কি বা পাবে তোমার কাছে।
দু'দিন সংসার করার পর যখন ও বুঝবে তুমি ওকে সেই সুখটা দিতে পারছো না,যা ও একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নাড়ী থেকে পাবে।তখন এই সব ভালোবাসা গুলো পানসে হয়ে যাবে।জানোই তো চায়িদার কাছে ভালোবাসা তুচ্ছ।আর পুরুষের চায়িদা ভালোবাসা থেকে একটু বেশি।
"-এবার লাবণির কথায় তিশার গা গুলিয়ে গেলো।কি সব বলছে মেয়েটা।নিজেকে যথাসাধ্য শান্ত রেখে,ওকে আপু তখন নয় আমরা বুঝে নেবো নি।
এই নিয়ে আপনাকে টেনশন করতে হবে না।তাও আবার আমাদের বেডরুমের প্রাইভেট সময় নিয়ে।
এটা বলেই তিশা পাশ কাটিয়ে চলে গেলো জিসানের কেবিনের উদ্দেশ্যে।"
-আর লাবনি দাঁড়িয়ে তিশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।যতোটা সহয মনে করেছিলাম ওতোটা সহয না।এই মেয়েটার তেজ বলে দিচ্ছে জিসানকে নিয়ে কতোটা কনফিডেন্স। আর ওর এই কনফিডেন্সই আমাকে ভাঙ্গতে হবে।
"কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে জোড়ে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে নিলো তিশা।নক করার সাথে সাথে ভেতর থেকে গম্ভীর কন্ঠে ভেসে আসলো কাম ইন।
তিশা কেবিনে প্রবেশ করে দেখে জিসান কাজে এতোটাই ব্যস্ত যে,কেবিনে কে এসেছে তা দেখারও সময় নেই।
প্রায় ৫ মিনিট হয়ে গিয়েছে অথচ জিসান একটি বারও তাকিয়ে দেখলো না তার সামনেকে দাঁড়িয়ে আছে।"
---তিশা এবার খুব বিরক্ত হলো।কেউ কাজে এতোটা মগ্ন হতে পারে তা তো এই লোকটিকে না দেখলে জানতামই না।
জিসানের ধ্যান নিজের দিকে করার জন্য,একটু গলাটা ঝাড়লো।জিসান লেপটপ থেকে চোখ সরিয়ে সামনে একবার তাকিয়ে আবার লেপটপে মন দিলো।
তিশা হতোবম্ভ জিসান ওকে দেখেও কোনও রিয়েক্ট করলো না। কিন্তু কেনো?
তিশার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো।হয়ত এখানে আসাটা ঠিক হয়নি।তিশা চলে যেতে নিলে,হঠাৎ হাতে টান অনুভোব করে।পিছনে তাকিয়ে দেখে জিসান কেমন সন্দেহ নযরে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
"তিশা ইস ইট ইউ।তুই সত্যি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস।তিশার মাথাটা গরম হয়ে গেলো,এতোক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছে,সাহেবের নাকি এখনো বিশ্বাস হয় না।তিশা হাতটা ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে, না এটা তিশার ভূত।সকালে মাকে মিথ্যা বলে আমাকে বকা খাইয়েছেন না,তাই ঘাড় মটকাতে আসছি।"
--জিসান ভুবন ভুলানো হাসি দিলো।সামনের চেয়ারে বসে তিশাকেও টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো।তিশা উঠতে নিলে কোমড়কে শক্ত করে আকড়ে ধরে রাখে।
"ছাড়ুন আমায়।"
--স্টোপ জান।একদম নাড়বি না বলে দিলাম।জিসান রেগে।
"তিশা চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইলো।জিসান বুঝতে পারলো অজান্তেই তিশাকে কস্ট দিয়ে ফেলেছে।"
---তিশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ,সরি জান।আমি এভাবে বলতে চাইনি।বাট কি করবো,রাগ উঠে গিয়েছিলো।তিশার হাতটা নিজের গালে লাগিয়ে।আজকাল অফিসের কাজ অনেক বেশি।মাঝে মাঝে আমি একটু ফ্রাস্টেড হয়ে পরি।
তখন এক জায়গার রাগ আরেক জায়গায় ঝেড়ে ফেলি।প্লিজ তখন আমাকে ভুল বুঝিস না।
জিসান অনুতপ্ত,তার থেকে বেশি ক্লান্ত, ওর চেহারায় স্পট ফুটে উঠছে।
"তিশা মুখে হালকা হাসি এনে,ইটস ওকে।আমি কিছু মনে করেনি।"
-জিসান তিশার হাতের আঙ্গুলে নিজের আঙ্গুল ঢুকিয়ে হাতের উল্টো পিঠে একটা কিস করলো।তিশা ব্লাসিং করতে লাগলো।
"তো ম্যাডাম আজ এই অধমকে স্মরণ করলেন কি মনে করে।আমি দেখা না দিলে,আপনার দেখাতো পাওয়াই যায় না।তাহলে আমার আকাশে এই চাঁদটা দেখার কারণ কি?"
---তিশা একবার জিসানের দিকে তাকিয়ে,ব্যাগ থেকে ফিরনির বক্সটা বের করে হাতে দিলো।আপনার মিস্টি। তিশা কিছুটা রাগ দেখিয়ে,এর জন্য মা আমাকে ২ঘন্টা ননস্টোপ ঝেড়েছে।সব আপনার জন্য।
'তাই নাকি,জিসান হেসে দিলো।বাহ! আমার শ্বাশুরীর তো তুলনা হয় না।আমি কিন্তু বড়ই ইম্প্রেশ তার উপর।উনি কিন্তু তোর থেকে বেশি আমাকে আদর করে।ঠিক বলেছি।'
--তা আবার বলতে।মার মুখে তো রায়হান ভাই আর আপনার সুনামের পঞ্চমুখ। আমাকে তো চোখেই দেখে না।
"জিসান আবার হেসে দিলো।তাহলে তোর কি এখন হিংসে হয়।"
--উঁহু....।আগে হতো এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।
"কিন্ত যাই বলিস,তুই কখনো রাগ করে বাপের বাড়ী চলে আসলে,আমার শ্বাশুরী কিন্তু তোকে বাসায় ডুকতেও দিবেনা।উল্টো পায়ে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবে।"
'তিশা অসহায় দৃষ্টিতে জিসানের দিকে তাকালো।তিশার মুখটা দু'হাতে নিয়ে,আমি কখনো রাগ করে তোকে যেতেই দেবো না।যতো রাগ হোক,ঝগড়া হোক তবুও যাওয়া যাবে না।ঝগড়া শেষ হলে যেতে পারবি।কিন্তু মনোমালিন্য চলাকালিন বাসা থেকে বের হওয়া নিশেধ। বুঝলি।'
-তিশা হালকা হেসে দিলো।
---সোফায় বসে ফিরনির প্রথম চামুচ ধরলো তিশার দিকে।
"আমি খেয়ে এসেছি।"
--তাতে কি,আমিতো দেখিনি।এখন আমার সাথেও শেয়ার করতে হবে,নে হা কর।
"তিশা মুখে দেওয়ার সাথে সাথে লাবণি কেবিনে প্রবেশ করলো।জিসানকে এভাবে আদর করে তিশাকে খাইয়ে দেওয়ার দৃশ্য লাবণির বুকটা মোচর দিয়ে উঠে।তবুও নিজেকে সংযোত রেখে,আমাদের মিটিং আছে,তা হয়তো তুমি ভুলে গিয়েছো।"
---জিসান তিশাকে খাওয়ার সাথে সাথে নিজেও খেয়ে নিচ্ছে।লাবণি আগেও বলেছি কেবিনে প্রবেশ করার আগে অনুমতি নিয়ে নিবে।বিশেষ করে আমি যখন আমার ওয়াইফ এর সাথে থাকি।আর আজকের মিটিং ক্যানসালড করে দেও।আমি আজ ব্যস্ত।
"লাবণির মাথা বিগড়ে গেলো।মিটিং টা খুব ইম্পোরটেন্ট জিসান।আর আমি তো দেখছিনা, তুমি তেমন ব্যস্ত তাহলে।"
---জিসান উঠে দরজার সামনে গিয়ে,কেবিনের ডোরটা খুলে,আমার ওয়াইফের সাথে কাটানো মুহুর্ত থেকে ইম্পোরটেন্ট আর কিছুই নেই আমার কাছে।আমার প্রাইভেট সময়টা আমি আমার ওয়াইফ এর সাথে একা থাকতে পছন্দ করি।লাবণি কিছু বলতে নিবে,তার আগেই। তুমি এখন আসতে পারো।
'লাবণি তিশার দিকে চোখ রাগিয়ে চলে গেলো।জিসান পেছন থেকে বলেদিলো,সোমকে বলবে পরবর্তী ২ঘণ্টা কেউ জাতে আমাকে ডিস্টার্ব না করে।জিসান এটা বলেই দরজাটা লাগিয়ে লক করে দিলো।তিশার মুখে আজ বিশ্বজয়ী হাসি ফুটে উঠলো।'
চলবে...।
[ভালো সাড়া পাচ্ছি না ভালো না, তাই গল্প দিতে ভালো লাগে না ]
ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর😍
---------(সিজন-২)
Writer_TaNiA[🖤]
Part_22🍁
"একটা স্নিগ্ধ সকাল,সূর্য টা উকি দিয়ে উঠে চারদিকে আলোর ঝলকানি ছড়িয়ে দিয়েছে।এ এক অপরুপ দৃশ্য।নতুন সকালের প্রথম রোদটা মিস্টি হয়।আর এই মিস্টি রোদ এসে প্রতিদিন তিশার শরীর বুলিয়ে দিয়ে যায়। পরীক্ষা শেষ বলে এখন কলেজ নেই,তবুও সকাল সকাল উঠাটা যেনো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।তাইতো সকালের প্রথম রোদটা কখনো মিস করে না তিশা।কিন্তু বলে না,সময় তো পরিবাহী।তাকে ধরে রাখার সমর্থ নেই।তাই আস্তে আস্তে সূর্যের তীব্রতার সাথে রোদের উত্তপ্ত ও বেড়ে যায়।তখন এই তীক্ষ্ণ গরমে সূর্যটাকে অসহ্য লাগে। রোদ ভারী হবার সাথে সাথে তিশাও বালকানি থেকে ঘরে ডুকে গেলো।এখন আর এখানে থাকা যাবে না।ঘরে প্রবেশ করার পরপরই ফোনটা বেজে উঠলো তিশার।
---হ্যালো 'ওপর পাশের ব্যক্তিটি নিরব।'(জিসান) ---ঘুম পেয়েছে, ঘুমান।পরে কথা বলবো নি। 'উঁহু....ঘুম জড়ানো কন্ঠে।' ---কি উঁহু....। 'আমি তোকে ফোন রাখতে বলেছি।'
---কথা না বললে,ফোনটাতো রাখতেই হবে। 'কথা না বলি,শুনতে তো পারি।' ---কি? 'তোর নিশ্বাস.....।যা আমার শুনতে অনেক ভালো লাগে।' ---নিশ্চুপ??? 'কি হলো কথা বলিস না কেনো।'
---কি বলবো,আপনে তো বললেন নিশ্বাস শুনতে ফোন দিয়েছেন তো নিশ্বাসই শুনুন।
"হুম...।কিছুক্ষণ পর জিসানের ঘুম জড়ানো কন্ঠ ভেসে উঠে,
নিশ্বাস আমার তুমি জানে এই দুনিয়া প্রিয়া আমার প্রিয়া নিশ্বাস আমার তুমি জানে এই দুনিয়া প্রিয়া আমার প্রিয়া।
কিভাবে তোমায় ছাড়া আমি বাঁচি, যেও না দুরে থাকো কাছা কাছি তুমি দুরে গেলে যাবে প্রানটা উড়িয়া নিশ্বাস আমার তুমি জানে এই দুনিয়া।
জিবন দিয়ে আমি ভালোবাসি তোমাকে, এখন বাঁচাও তুমি ভালোবেসে আমাকে শুণ্য আমার এই ভুবন, যদি তোমায় না পাই মন শুণ্য আমার এই ভুবন, যদি তোমায় না পাই মন ধংস করবো সব কিছু, ছাড়বো না তোমার পিছু যতোই দুরে যাও প্রিয়া, জেনে তুমি নাও প্রিয়া।(কপি)
---হুমমম....। "কি হুম।"
---সকাল হয়ে গিয়েছে উঠুন এবার, ফ্রেস হন,অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হন।বায়।
'এই শুন.....।যা রেখে দিলো।কতোকাল পালাবি পাখি আমার অগোচরে,একবার ধরা দিতে দে.....তার পর বুঝাবো তোকে।জিসানও উঠে ফ্রেস হতে চলে গেলো।'
তাইতো কোমরে কাছা বেঁধে মাঠে নেমেছে।মেয়েকেও তার মতো রান্না করতে শিখতে হবে।রেনু বেগমের হাতে নাকি যাদু আছে,সবাই বলে।এমনকি তার শ্বাশুরী ও তার রান্নার গুণগান করে। যে শ্বাশুরী মুখ ফুটে জীবনেও রেনু বেগমের সুনাম করেনি।সেই শ্বাশুরীর মুখ বন্ধ হয়ে যায় একমাত্র তার হাতের রান্না মুখে দিলে। তাইতো নিজের এই বিশেষ গুন মেয়েকেও দিতে চায়।জাতে করে মেয়ে শ্বশুর বাড়ী গেলে,মেয়ের সুনাম শুনে সেও গর্ববোধ করতে পারে।
"তিশাকে এক বাটি পিয়াজ কাটতে বসিয়ে দিলো তিশার মা।ব্যাচারী তিশা না পাড়ছে সইতে,না পারছে রইতে।চোখের পানি মনে হয় আজ সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিবে। চোখের পানির কারণ হয়তো পিয়াজ,কিন্তু নাক দিয়েও কেনো পানি পড়ছে তা তিশার বোধগম্য নয়।হঠাৎ জিসানের ভিডিও কল আসে। তিশা উকি দিয়ে দেখে নেয় ওর মা কোথায়।রেনু বেগম অন্যকাজে ব্যস্ত।
-তাই তিশা ফোনটা রিসিভ করে। 'তিশাকে এভাবে কাঁদতে দেখে জিসান পাগল হয়ে যায়।জান কি হয়েছে,এভাবে কাঁদছিস কেনো।কেউ কিছু বলেছে।কে কি বলেছে,একবার নাম বল।তাকে আমি দুনিয়া থেকে উঠিয়ে ফেলবো।কি হলো বল!অস্থিরতা জিসানকে যেনো পুরো ভর করে ফেলেছে।"
---তিশা জিসানের কথা শুনে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছে।কি বলে লোকটি।পাগল নি।সব পাগল কি আজ আল্লাহ আমার কপালেই লিখে রেখেছে।
'কি বলছেন এসব।একটু শান্ত হন।'
---আরে কিসের শান্ত হবো.... জিসান চিল্লিয়ে। 'জিসানের চিল্লানিতে তিশারও রুহ কেঁপে উঠলো। দেখুন……আমি।'
---জিসান তাকিয়ে দেখে তিশার হাতে ছুড়ি।এই তোর হাতে ছুড়ি কেনো।দেখ তিশা কোনও রকম পাগলামি করবি না বলে দিলাম।কিছু হলে আমাকে বল আমি সব সোলভ করে দেবো জান। তবুও এমন কিছু করিস না।জিসানের করুন কন্ঠ।তিশা তাকিয়ে দেখে জিসানের চোখদু'টো ছলছল করছে।হয়তো যে কোনো সময় বর্ষণও নেমে পড়বে।
'আমি এখনি আসছি।তুই কিছু করবি না।ফোনও কাটবি না।আমি আসছি।জিসান অফিস থেকে বের হতে নিলেই।'
---আরেরে কি করছেন কি? আমার কথা শুনুন আগে।এই দেখুন আমি ছুড়ি ফেলে দিয়েছি।
'জিসান থেমে যায়,কি করছিলি ওটা দিয়ে।'
"জিসানের সামনে পিয়াজ এর বাটিটা ধরে।"
---পিয়াজ!
"-জি পিয়াজ!আমি পিয়াজ কাটছিলাম। তার কারণে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আর ছুড়ি ছাড়া কাটা যাবে না,তাই ওটা আমার হাতে ছিলো।আপনে কোথাকার জিনিস কোথায় নিয়ে গেলেন।"
---তকে এসব ফালতু কাজ করতে কে বলেছে।দাঁতেদাঁত চেপে।
"তিশা অবাক হয়ে গেলো,এতোক্ষন কি সুন্দর করে কথা বলেছিলো, খারুসটার এখন আবার কি হলো।"
-'কি হলো কথা বলিস না কেনো।চিল্লিয়ে...।'
---তিশা কিছু বলবে তখনি মা রান্না করে প্রবেশ করে।জিসানকে না দেখেই,কি রে তিশা এখনো হয়নি,এতোক্ষন লাগে এ কয়েকটা পিয়াজ কাটতে।জামাই বাড়ী গেলেতো আমার নাক কাটিয়ে ফেলবি।ব্যাচারা জিসান,তোর হাতের রান্না মনে হয় এই জীবনেও ক্ষেতে পারবে না।
"একদম ঠিক বলছেন মা,রেনু বেগম তাকিয়ে দেখে জিসান ভিডিও কলে। একটা কাজেরও না আপনার মেয়ে।দেখুন আমি কখন ধরে বলছি আমার মিস্টি ক্ষেতে মন চাইছে।তুই মায়ের কাছ থেকে আগে ওটা শিখে নে।কিন্তু আপনার মেয়ে কোনও কথা কানেই দেয় না। বলে কি পারবে না।এই জনমে মনে হয় না আমার ইচ্ছা পুড়ন হবে।জিসান হতাশ ভরা কন্ঠে কথাটা বলে।"
---কেনো পুরন হবে না,অবশ্যই হবে।ও করবে,ওর বাপেও করবে। "না না এর মধ্যে শ্বশুর মসাইকে টানা কি দরকার।ও করলেই হবে।জিসান একটু মুচকি হেসে,আচ্ছা আমি এখন রাখি,আমার একটা মিটিং আছে।তিশাকে চিপায় ফেলে জিসান চলে গেলো।কারণ জিসান ভালো করেই জানে এখন তিশার মা তিশাকে ওয়াস করবে।"
---জিসানের কথায় তিশা শোকড এর মধ্যে চলে গিয়েছিলো।এ কি বললো,এদেখি ডাহামিথ্যে কথার অস্তাদ।মা তো এখন আমাকে,কি ঝাড়াটা না ঝাড়বে।উফ!!
"তৌফিক সাহেব কিছু ইম্পোরটেন্ট ফাইল বাসায় রেখে এসেছে।আর তা দিতেই আজ নিশিকে অফিসে আসতে হলো।নিশি সাথে লাঞ্চ ও নিয়ে আসলো,বাবা আর রায়হানের জন্য। অফিসের সবাই নিশিকে চিনে,তাই প্রবেশ করার সাথে সাথে সবাই দাঁড়িয়ে গেলো।নিশি ফাইলগুলো ও টিফিন নিয়ে সোজা বাবার রুমে চলে গেলো।"
---আজকাল খুব কমই আসা হয় অফিসে তৌফিক আহমেদের।রায়হানই সব সামলায়।ছোট ছোট ডিসিশন গুলো রায়হান নিলেও অফিসের বড় বড় ডিসিশন গুলো জন্য তৌফিক সাহেবকে হাজির হতে হয়।
নিশিকে দেখে,তো মামুনি আমার জন্য লাঞ্চ ও নিয়ে এসেছো।আজতো আমার চাঁদ কপাল।তা না হলে তোমাদের ভাইবোনদের তো আমার অফিসে দেখাও যায় না।
"কি যে বলো না বাবা।এমন করে বলছো কেনো।"
'-তো কি করবো বল মা,বড় জন ডাক্তার হয়ে নিজের পেশা বেছে নিয়েছে।ভাবলাম যাক জিসানতো আছে, এসব ও সামলাবে। কিন্তু ও নিজের বিজনেস আলাদা করে ফেললো।এই বুড়োটাকে একা ফেলে দিলো সবাই।'
---নিশি বাবার গলা জড়িয়ে তাতে কি হয়েছে।আমিতো আছি।আমি দেখবো সব।আমি থাকতে চিন্তা কিসের।আমি দেখলে সমস্যা কোনও। 'তৌফিক সাহেব হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে,তাহলে তো টেনশনই নেই। দু'জনেই হেসে দিলো।'
---এই সময় রায়হান কেবিনে প্রবেশ করলো।নিশিকে দেখে একটু অবাক হলো।কারণ ওদের ভাইবোন কেউই এই অফিসে তেমন আসে না।আর নিশিতো আরো না।তবে অনেকদিন পর নিশিকে দেখতে পেয়ে রায়হানের ঠোঁটে এক তৃপ্তি হাসি ফুটে উঠলো।
'ও রায়হান, কম ওন সান।এ দেখো কে এসেছে।আমাদের অফিসের বস।'
---বস!রায়হান ভ্রুটা কিঞ্চিৎ কুঁচকিয়ে।
'হে বস!আমার এ পাগল মেয়েটা নাকি অফিস সামলাবে।আমার কাঁধের বোঝা কমাবে।'
---তাহলে তো ভালোই।
"হুম আমার সব টেনশন দূর।তোমরা দু'জন মিলে অফিস সামলাবে,আর আমি ওর মাকে নিয়ে ভ্যাকেশনে ঘুড়ে বেড়াবো আইডিয়াটা কেমন।"
'-হুম ভালো।রায়হান মৃদ হেসে।'
---ঘুড়তে যাবে,নাকি হানিমুনে। "চুপ ফাজিল মেয়ে,বাবার সাথে ফাইজলামি। হানিমুনে তো আমি তোদের পাঠাবো কানে দরে সিরিয়ালে।"
'আমার যাওয়ার শখ নেই,তুমি বরং তোমার ওই পাগল ছেলেকে পাঠাও। একপায়ে রাজি আছে।'
---তা অবশ্য ঠিকই বলছিস।আচ্ছা তোরা বস,আমি একটু আসছি ম্যানেজারের কেবিন থেকে। তৌফিক সাহেব চলো গেলে নিশি গিয়ে বাবার চেয়ারে বসে।
"রায়হান এতোক্ষন বাবা মেয়ের কথাগুলো শুনছিলো।মেয়েটার মধ্যে এখনো বাচ্চামো আছে,তা না হলে,কেউ এভাবে হানিমুনের কথা বলতে পারে। রায়হান ও সামনের একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো।তো মিস বস বলুন আপনার সেবায় আমি কি করতে পারি।"
---নিশিও একটু মুডে এসে,তো মিস্টার রায়হান বলুন,কেমন চলছে আজকাল অফিস।কাজকর্ম সব ঠিকমতো চলছে তো। অলস ব্যক্তিদের কিন্ত আমার মোটেও পছন্দ না।আমার কাজ ঠিকমতো না হলে আমি কিন্তু সবাইকে ফায়ার করে দেবো।
'রায়হান মুচকি হেসে নিচের দিকে তাকিয়ে,অফিস পরে সামলাম মিস,আগে নিজের জিনিসটি সামলাতে শিখুন।' -- রায়হানের কথা নিশির মাথার উপর দিয়ে গেলো।
"রায়হান বুঝতে পারে নিশি কিছুই বুঝেনি।হাতের কলমটা দু'আঙ্গুলে নাড়িয়ে।গোলাপির সাথে কালো রংটা বেমানান জানেন।ওয়াইট বা সেম কালার হলেও চলতো।বাট আজ ব্লাক কি মনে করে পড়লেন।"
---নিশি কনফিউজড হয়ে গিয়েছে রায়হান কি বলছে।কিন্তু রায়হানের মুখের দুষ্ট হাসিটা বলে দিচ্ছে কিছু একটা গণ্ডগোল ও করেছে।কি বুঝে যেনো ডান সাইডে রাখা মিরর দিকে তাকালো।লজ্জায় নিশির মাথা কাটা অবস্থা।নিশির অন্তর্বাসের কালো বেল্টটা দেখা যাচ্ছে।গোলাপি জামার সাথে সত্যিই এটা বেমানান।একদম চোখে পড়ার মতো।তাইতো এই বেহায়া মানুষটি নিচের দিকে তাকিয়ে হাসছে।আমাকে লজ্জা না দিলে এই মানুষটির পেটের ভাত হজম হয়না মনে হয়।নিশি ঝটপট আপাতত ওড়না টা দিয়ে ডেকে ফেললো।আর কপাট দৃস্টিতে রায়হানের দিকে তাকালো।
"মিস্টার রায়হান মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা মনে হা শিখেন নি।শিখে নিবেন,আর নযরটাও ঠিক রাখতে শিখুন।"
---রায়হান হেসে,নিশির সামনে এসে দাঁড়ালো।একটু ঝুকে চেয়ারের হাতলে দু'হাত রেখে।না দেখার জিনিস যদি এতো আকর্ষন করে দেখান,তাহলে নযরের কি দোষ ম্যাডাম। দেখানোর মতো জিনিস হলে,নযর তো দেখবেই।নির্ভর তো জিনিসটির উপর করে,আর ওর মালিকের উপর।এছাড়া এমনে দেখিয়ে দেখিয়ে অফিসে যদি কাজ করেন তাহলে পুরো অফিসই সামাল দিতে কস্ট হবে আপনার।
'কি যা তা বলছেন এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট। আর কিছু না।কিছুটা রেগে।'
---ওকে,তাহলে একটু সাবধানে থাকবেন এমন এক্সিডেন্ট যাতে রোজ রোজ না হয়।এতে কিন্তু আপনার হবু বরের সাথে না ইনসাফি হবে।এমনেই ব্যাচারা আপনাকে বিয়ে করে কস্টে ভুগতে হবে।
'নিশি, ভ্রুটা কুঁচকিয়ে মানে....।'
"-এই যে হবু বরের জিনিস আপনে লোকাচরে প্রদর্শন করছেন।তা তো ব্যাচারার প্রতি না ইনসাফি,তাই না। রায়হানের কথায় নিশি রেগে লাল হয়ে যাচ্ছে, নিশিকে আরো রাগাতে রায়হান আবারও বলা শুরু করলো।
নিশির কানের কাছে গিয়ে,আপনার যে হানিমুনের কোনও ইন্টেরেস্ট নেই।সেটা বরকে আগেই বলে দিবেন।তা না হলে,ব্যাচারার সব স্বপ্ন ভেনিস হয়ে যাবে।আপনার কারনে তার কস্টও বেরে যাবে।"
---নিশি মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে,সেটা আপনাকে ভাবতে হবে না।আমি আর আমার বর ভেবে নিবো নি।আপনি আপনার মুখে লাগাম লাগান।দিন দিন বেহায়া হয়ে যাচ্ছে।আপনার বউ আবার আপনাকে ছেড়ে না চলে যায়।
'-তাই নাকি,আমার একটা বিশেষ গুণ আছে,হাড় ভাঙ্গার। ---তার মনে কি আপনি বউ পিটাবেন।চোখ দুটো ছোট ছোট করে। 'রায়হান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মারার মতো কাজ করলে অবশ্যই পিটাবো।' ---আপনে কিন্তু মানুষটি সুবিধার না।কিঞ্চিৎ সন্দেহ নজরে তাকিয়ে নিশি। 'সুবিধা অসুবিধা বিয়ের পরে দেখা যাবে।এখন এসব বললে,রহস্য ভেঙ্গে যাবে।তাই ওয়েট করুন.....প্লিজ।সময়ই বলে দেবে সব।
রায়হানের কথায় নিশি মনে হয় বিরাট মাপের ভয় পেয়েছে।শুকনো কয়েকটা ঢোক গিলে রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে।আর রায়হান তৌফিক সাহেবের গলার শব্দ শুনে নিজের জায়গায় বসে পড়লো হেসে।
"জিসানের দেওয়া বোরকা গুলো থেকে একটা নীল কালারের বোরকা খুঁজে নিলো তিশা।এটা বোরকা হলেও,দেখতে বোরকার মতো না।অনেকটা ঘের দেওয়া লং ফ্রকের মতো। তার উপর বোরকার কাজটাও একদম আনকোমন।বোরকার কাজের সাথে মেচিং করা হিজাব দিয়ে আপদমস্তক ঢেকে নিলো নিজেকে।একদম অন্যরকম লাগছে।এর আগেও জিসানের দেওয়া বোরকাগুলো থেকে দু'টো বোরকা পরে কলেজে গিয়েছিলো পরীক্ষা দিতে।তখন এমন মনে হয়নি।আজ যতোটা ফুটে উঠেছে।
----ব্যাগের মধ্যে ফিরনি রাখা বক্সটি ভরে বের হতে নিলে,রেনু বেগমের ডাকে দাঁড়িয়ে যায়।কোথায় যাশ।
" তিশা কিছুটা বিরক্ত হয়ে,তোমাকে কতো বার বললাম মা।কেউ যেতে নিলে পিছনে থেকে ডাক দিবে না।এটা ভালো না।" -বুঝছি,আর জ্ঞান দিতে হবে না।বলে গেলেই তো আর ডাকতাম না।
--যার জন্য,দু'ঘণ্টা ঝেড়ে ফিরনি বানাতে শিখালে।তাকে খাওয়াতে।আর কিছু বলবে।রেনুর মুখে হাসি এনে, না..।সাবধানে যাস।তারাতারি বাসায় ফিরে আসবি কিন্তু।
'-তিশা চলে গেলো ওর গন্তব্যে।অফিসের সামনে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে।না বলে আসাটা ঠিক হয়েছে কিনা দ্বিধায় ভুগতে লাগলো।কিছুক্ষণ ভাবার পর সব দ্বিধা দন্ধ ফেলে,ভেতরে প্রবেশ করলো।রিসিপশনে দাঁড়ানোর সাথে সাথে রিনি দাঁড়িয়ে ওয়েল কাম ম্যাম।' থ্যাংকু। এন্ড গুড ইবেনিং রিনি আপু।স্যার আছে কেবিনে। -জি ম্যাম স্যার কেবিনেই আছে । আজ যেতে পারবো তো। -রিনি হেসে পুরো অফিসটাই আপনার ম্যাম।
---নিজের কেবিনের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে লাবণি।হাতে রাখা ধোঁয়া উঠা কফিটা চুমুক দিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন।আজকাল জিসানের ইগনোরের পরিমাণটাও বেড়ে গিয়েছে।সারাদিন একই অফিসে থেকেও ওকে চোখে দেখা যায় না। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া আমার সাথে কথাও বলে না।হাতের এই ডিলটা বাদে বাকি সব ডিল থেকে আমাকে সরিয়ে রেখেছে।কেনো করছে জিসান এসব। এভাবে চলতে থাকলে,জিসানকে পাওয়ার স্বপ্ন ভুলে যেতে হবে।ভাবতে গিয়ে হাতে রাখা কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেলো। তাই লাবণি কফিটা রাখতে জানালা থেকে সরতে নিলে,হঠাৎ অফিসের গেটের দিকে নযর যায়।একটা মেয়ে সম্পূর্ণ ডেকে ডুকে অফিস বিল্ডিং এ প্রবেশ করলো।এতো উপর থেকেও লাবনির বুঝতে অসুবিধা হলো না মেয়েটা কে?
"জিসানের কেবিনের দিকে পা বাড়াতে নিলে,কারো সাথে বাধা পায় তিশা।সামনে তাকিয়ে দেখে পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছে লাবণি। -হায় তিশা,কেমন আছো। আলহামদুলিল্লাহ আপু।আপনে কেমন আছেন।"
---উম,ভালো থাকতে দিলে কোথায়।আমার ভালো থাকার মানুষটিকে তো তুমি বেধে রেখেছো। "তিশা একটু হেসে,ভুল বললেন আপু।আমি কাউকে বাধিনি।সেই মানুষটি আপসে এসে আমার কাছে ছ্যারেন্ডার করেছে।আমিতো শুধু একসেপ্ট করেছি,তবে জোড় করেনি।"
"ওয়েল,বয়সের তুলনায় ভালোই কথা বলতে পারো।নিশ্চয়ই এসব কথায় জিসানকে ফাঁসিয়েছো।"
---আমি না হয় কোথাতেই ফাঁসালাম।আপনি কেনো রুপ দিয়েও জিসানকে ফাঁসাতে পারলেন না।তিশার কথা লাবনির শরীরে কাটা দিতে লাগলো।
কারণ জিসান এখনো একটা স্বপ্নের মধ্যে আছে।তা না হলে,একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীকে রেখে তোমার মতো বাচ্চাকে কেনো বিয়ে করলো।আর কি বা পাবে তোমার কাছে। দু'দিন সংসার করার পর যখন ও বুঝবে তুমি ওকে সেই সুখটা দিতে পারছো না,যা ও একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নাড়ী থেকে পাবে।তখন এই সব ভালোবাসা গুলো পানসে হয়ে যাবে।জানোই তো চায়িদার কাছে ভালোবাসা তুচ্ছ।আর পুরুষের চায়িদা ভালোবাসা থেকে একটু বেশি।
"-এবার লাবণির কথায় তিশার গা গুলিয়ে গেলো।কি সব বলছে মেয়েটা।নিজেকে যথাসাধ্য শান্ত রেখে,ওকে আপু তখন নয় আমরা বুঝে নেবো নি। এই নিয়ে আপনাকে টেনশন করতে হবে না।তাও আবার আমাদের বেডরুমের প্রাইভেট সময় নিয়ে। এটা বলেই তিশা পাশ কাটিয়ে চলে গেলো জিসানের কেবিনের উদ্দেশ্যে।" -আর লাবনি দাঁড়িয়ে তিশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।যতোটা সহয মনে করেছিলাম ওতোটা সহয না।এই মেয়েটার তেজ বলে দিচ্ছে জিসানকে নিয়ে কতোটা কনফিডেন্স। আর ওর এই কনফিডেন্সই আমাকে ভাঙ্গতে হবে।
"কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে জোড়ে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে নিলো তিশা।নক করার সাথে সাথে ভেতর থেকে গম্ভীর কন্ঠে ভেসে আসলো কাম ইন। তিশা কেবিনে প্রবেশ করে দেখে জিসান কাজে এতোটাই ব্যস্ত যে,কেবিনে কে এসেছে তা দেখারও সময় নেই। প্রায় ৫ মিনিট হয়ে গিয়েছে অথচ জিসান একটি বারও তাকিয়ে দেখলো না তার সামনেকে দাঁড়িয়ে আছে।"
---তিশা এবার খুব বিরক্ত হলো।কেউ কাজে এতোটা মগ্ন হতে পারে তা তো এই লোকটিকে না দেখলে জানতামই না। জিসানের ধ্যান নিজের দিকে করার জন্য,একটু গলাটা ঝাড়লো।জিসান লেপটপ থেকে চোখ সরিয়ে সামনে একবার তাকিয়ে আবার লেপটপে মন দিলো। তিশা হতোবম্ভ জিসান ওকে দেখেও কোনও রিয়েক্ট করলো না। কিন্তু কেনো? তিশার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো।হয়ত এখানে আসাটা ঠিক হয়নি।তিশা চলে যেতে নিলে,হঠাৎ হাতে টান অনুভোব করে।পিছনে তাকিয়ে দেখে জিসান কেমন সন্দেহ নযরে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
"তিশা ইস ইট ইউ।তুই সত্যি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস।তিশার মাথাটা গরম হয়ে গেলো,এতোক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছে,সাহেবের নাকি এখনো বিশ্বাস হয় না।তিশা হাতটা ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে, না এটা তিশার ভূত।সকালে মাকে মিথ্যা বলে আমাকে বকা খাইয়েছেন না,তাই ঘাড় মটকাতে আসছি।" --জিসান ভুবন ভুলানো হাসি দিলো।সামনের চেয়ারে বসে তিশাকেও টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো।তিশা উঠতে নিলে কোমড়কে শক্ত করে আকড়ে ধরে রাখে। "ছাড়ুন আমায়।" --স্টোপ জান।একদম নাড়বি না বলে দিলাম।জিসান রেগে। "তিশা চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইলো।জিসান বুঝতে পারলো অজান্তেই তিশাকে কস্ট দিয়ে ফেলেছে।"
---তিশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ,সরি জান।আমি এভাবে বলতে চাইনি।বাট কি করবো,রাগ উঠে গিয়েছিলো।তিশার হাতটা নিজের গালে লাগিয়ে।আজকাল অফিসের কাজ অনেক বেশি।মাঝে মাঝে আমি একটু ফ্রাস্টেড হয়ে পরি। তখন এক জায়গার রাগ আরেক জায়গায় ঝেড়ে ফেলি।প্লিজ তখন আমাকে ভুল বুঝিস না। জিসান অনুতপ্ত,তার থেকে বেশি ক্লান্ত, ওর চেহারায় স্পট ফুটে উঠছে। "তিশা মুখে হালকা হাসি এনে,ইটস ওকে।আমি কিছু মনে করেনি।" -জিসান তিশার হাতের আঙ্গুলে নিজের আঙ্গুল ঢুকিয়ে হাতের উল্টো পিঠে একটা কিস করলো।তিশা ব্লাসিং করতে লাগলো।
"তো ম্যাডাম আজ এই অধমকে স্মরণ করলেন কি মনে করে।আমি দেখা না দিলে,আপনার দেখাতো পাওয়াই যায় না।তাহলে আমার আকাশে এই চাঁদটা দেখার কারণ কি?" ---তিশা একবার জিসানের দিকে তাকিয়ে,ব্যাগ থেকে ফিরনির বক্সটা বের করে হাতে দিলো।আপনার মিস্টি। তিশা কিছুটা রাগ দেখিয়ে,এর জন্য মা আমাকে ২ঘন্টা ননস্টোপ ঝেড়েছে।সব আপনার জন্য।
'তাই নাকি,জিসান হেসে দিলো।বাহ! আমার শ্বাশুরীর তো তুলনা হয় না।আমি কিন্তু বড়ই ইম্প্রেশ তার উপর।উনি কিন্তু তোর থেকে বেশি আমাকে আদর করে।ঠিক বলেছি।' --তা আবার বলতে।মার মুখে তো রায়হান ভাই আর আপনার সুনামের পঞ্চমুখ। আমাকে তো চোখেই দেখে না। "জিসান আবার হেসে দিলো।তাহলে তোর কি এখন হিংসে হয়।" --উঁহু....।আগে হতো এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। "কিন্ত যাই বলিস,তুই কখনো রাগ করে বাপের বাড়ী চলে আসলে,আমার শ্বাশুরী কিন্তু তোকে বাসায় ডুকতেও দিবেনা।উল্টো পায়ে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবে।"
'তিশা অসহায় দৃষ্টিতে জিসানের দিকে তাকালো।তিশার মুখটা দু'হাতে নিয়ে,আমি কখনো রাগ করে তোকে যেতেই দেবো না।যতো রাগ হোক,ঝগড়া হোক তবুও যাওয়া যাবে না।ঝগড়া শেষ হলে যেতে পারবি।কিন্তু মনোমালিন্য চলাকালিন বাসা থেকে বের হওয়া নিশেধ। বুঝলি।' -তিশা হালকা হেসে দিলো।
---সোফায় বসে ফিরনির প্রথম চামুচ ধরলো তিশার দিকে। "আমি খেয়ে এসেছি।" --তাতে কি,আমিতো দেখিনি।এখন আমার সাথেও শেয়ার করতে হবে,নে হা কর। "তিশা মুখে দেওয়ার সাথে সাথে লাবণি কেবিনে প্রবেশ করলো।জিসানকে এভাবে আদর করে তিশাকে খাইয়ে দেওয়ার দৃশ্য লাবণির বুকটা মোচর দিয়ে উঠে।তবুও নিজেকে সংযোত রেখে,আমাদের মিটিং আছে,তা হয়তো তুমি ভুলে গিয়েছো।" ---জিসান তিশাকে খাওয়ার সাথে সাথে নিজেও খেয়ে নিচ্ছে।লাবণি আগেও বলেছি কেবিনে প্রবেশ করার আগে অনুমতি নিয়ে নিবে।বিশেষ করে আমি যখন আমার ওয়াইফ এর সাথে থাকি।আর আজকের মিটিং ক্যানসালড করে দেও।আমি আজ ব্যস্ত।
"লাবণির মাথা বিগড়ে গেলো।মিটিং টা খুব ইম্পোরটেন্ট জিসান।আর আমি তো দেখছিনা, তুমি তেমন ব্যস্ত তাহলে।" ---জিসান উঠে দরজার সামনে গিয়ে,কেবিনের ডোরটা খুলে,আমার ওয়াইফের সাথে কাটানো মুহুর্ত থেকে ইম্পোরটেন্ট আর কিছুই নেই আমার কাছে।আমার প্রাইভেট সময়টা আমি আমার ওয়াইফ এর সাথে একা থাকতে পছন্দ করি।লাবণি কিছু বলতে নিবে,তার আগেই। তুমি এখন আসতে পারো। 'লাবণি তিশার দিকে চোখ রাগিয়ে চলে গেলো।জিসান পেছন থেকে বলেদিলো,সোমকে বলবে পরবর্তী ২ঘণ্টা কেউ জাতে আমাকে ডিস্টার্ব না করে।জিসান এটা বলেই দরজাটা লাগিয়ে লক করে দিলো।তিশার মুখে আজ বিশ্বজয়ী হাসি ফুটে উঠলো।'
চলবে...।
[ভালো সাড়া পাচ্ছি না ভালো না, তাই গল্প দিতে ভালো লাগে না ]