অন্যরকম_ভালোবাসা

ফাবিহা_নওশীন

পার্ট-১

"এই চেহেরা নিয়ে এতো সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে ঘুরছিস,তোর সাহস তো কম না,৫০বার কান ধরে উঠ বস কর।"ছেলেটিকে বলেই ফারাবি মেয়েটির দিকে ঘুরে দাড়ালো।মেয়েটি ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে। ফারাবি মেয়েটিকে ঘুরে ঘুরে দেখছে।তারপর বললো, -আপু,ওহ না সুন্দরী আপু,তোমাকে বেশি কষ্ট দিবো না।তুমি ওই যে সাদা শার্ট পরা ছেলেটি দেখছো তাকে গিয়ে শুধু একটা কিস করবা, ব্যাস,,আর সাজ্জাদ তোর কাজ হবে সেটা সুন্দর করে ভিডিও করা।

মেয়েটি কাদো কাদো হয়ে বললো, দেখুন ভাইয়া প্লিজ এটা করবেন না,আমি ওইরকম মেয়ে নই।আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ,, আমি হাতজোড় করছি।আমার সাথে এটা করবেন না প্লিজ।

-সোনামণি তুমি কাদছো কেন?তোমাকে কেউ বকেছে,আমি বকেছি,সাজ্জাদ তুই বলেছিস,কেউ বকেনি।তুমি তোমার কাজ কমপ্লিট করো আর খুশি মনে ক্লাস এ যাও।

-আমি এটা করতে পারবো না।

-সিনিয়রদের মুখের উপর কথা??আমাদের কথা না মেনে চললে এই কলেজে একদিন ও টিকতে পারবে না।

"কেন কলেজ কি আপনার পারসোনাল প্রপার্টি ?" তিয়াশা এগিয়ে এসে কথাটা বললো।

আরাফ বাইকের উপর বসে মনোযোগ দিয়ে ফোন টিপছিলো,তিয়াশার কথা শুনে মাথা তুলে ওর দিকে তাকালো।মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।ও ফারাবি আর সাজ্জাতের থেকে কিছুটা দুরত্বে বসেছে। -কি হলো,কথা বন্ধ হয়ে গেলো? কলেজটা কি আপনার বাবার দেওয়া সম্পত্তি,যে আপনার কথা না শুনলে কলেজে থাকতে পারবে না,এখানে মেয়েটা পড়তে এসেছে,আপনার মতো আড্ডা মারতে কিংবা অসভ্যতা করতে আসে নি,আপনারা নিজেরা পড়াশুনা করবেননা আর অন্যদেরও পড়াশুনা করতে দিবেন না।তাই তো?

-দেখ তিয়াশা আমরা সিনিয়র, এটা অধিকার আমাদের।তুমি এর মধ্যে কথা বলতে এসো না।

-বিষয়টা যখন একটা মেয়ের সম্মানের তখন কথা তো আমাকে বলতেই হবে,নয়তো আপনাদের মতো ফালতু লোকের সাথে কথা বলে আমি সময় মোটেও নষ্ট করতাম না।সিনিয়র এসেছে, এইসব ফালতু কাজের বেলায় সিনিয়র, কই কাজের বেলায় তো খুজেও পাওয়া যায়না।নেক্স টাইমে যদি দেখি মেয়েটাকে বিরক্ত করছেন,তাহলে সোজা প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে যাবো। আর স্যারের কাছে গেলে কি হবে সেটা ভালো করেই জানেন।কথা শেষ করে মেয়েটির হাত ধরে চলে গেলো তিয়াশা।

ফারাবি আর কথা বারালো না।মনে মনে রাগে গজগজ করছে।আর সাজ্জাদকে উদ্দেশ্য করে বললো, কি মেয়ে দেখেছিস?মুডটাই দিলো খারাপ করে। আরাফ সাজ্জাদকে ধাক্কা মেরে জিজ্ঞেস করলো,,মেয়েটি কে রে?আমাদের কলেজে যে এত সুন্দরী, সাহসী একটা মেয়ে আছে আর আমিই জানি না। -খবরদার এই মেয়ের দিকে ভুলেও তাকাবি না।প্রিন্সিপাল স্যারের ধানি লংকা মেয়ে।লাইন মারার কথা কল্পনাও করিস না। -এই প্রথম কাউকে ভালো লাগলো,, সে যদি প্রিন্সিপালের মেয়ে হয় আমার কি দোষ? আমি তো একে পেয়েই ছাড়বো। -তোর যা খুশি কর,কিন্তু আমাকে এর মধ্যে জড়াবি না,তোর বাবার টাকা আছে তুই যা খুশি করতে পারিস। ফারাবি রাগান্বিত ভাবে বললো,এই মেয়ে আমাকে এইভাবে অপমান করে গেলো আর তুই আরাফ এই মেয়েকে নিয়ে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখছিস? আরাফ হেসে বললো,দোস্ত রাগ করিস কেন,,ভাবিই তো।একটু না হয় বকেছেই। -ভাবিইইই,,, -হুম ভাবি। এইবার ডিটেইলস দে। আমি এইসবে নেই বলেই ফারাবি উঠে গেলো। সাজ্জাদ উঠে যাবে সেই সময় আরাফ সাজ্জাদকে ধরে বসিয়ে দিলো। বন্ধু হয়ে শত্রুর মতো আচরণ করছিস।এ কেমন বন্ধু। একটু হেল্প করনা প্লিজ দোস্ত প্লিজ। -ওকে ঠিক আছে। নাম তিয়াশা। প্রিন্সিপালের মেয়ে। -বারবার প্রিন্সিপালের মেয়ে বলে ভয় দেখাস কেন। প্রিন্সিপালের মেয়েরা কি প্রেম, বিয়ে করেনা কখনো। -ওকে বাবা আর ভয় দেখাবো না।আমাদের সাথেই ৩য় বর্ষে পড়ে,আমাদের ডিপার্টমেন্টে। কলেজ টপার।আজ পর্যন্ত কেউ ওকে টপকাতে পারে নি। -কি বলিস আমাদের ক্লাসম্যাট আর আমিই চিনি না।৩বছরে আজ প্রথম দেখলাম।অদ্ভুত। -হ্যা,অদ্ভুত। কারন এই মেয়েকে ক্লাস আর লাইব্রেরী ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায়না।আর তুমি এই জীবনে ক্লাস আর লাইব্রেরীতে কয়বার পা রেখছো মনে করে দেখো। -আচ্ছা, আমি যাই। -কোথায়? -ক্লাসে। -কি??ক্লাসে!!! -তুই ই তো বললি ওকে ক্লাস আর লাইব্রেরী ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায়না। আজ থেকে তিয়াশা যেখানে আমি সেখানে। টাটা।

আরাফ ক্লাসে ঢুকে পিছে গিয়ে বসে পড়ল।পিছন থেকে তিয়াশাকে পর্যবেক্ষন করছে।স্যার ও চলে এলো।আরাফ কিছুটা ভয়ে আছে কেননা কোন সাবজেক্টের ক্লাস, কি লেকচার চলছে কিছুই জানেনা। স্যার যদি কিছু জিজ্ঞাসা করে এসব ভাবতে ভাবতেই স্যার আরাফকে দাড়াতে বলল,আরাফ মনে মনে ভাবছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত্রি হয়,,,,ইজ্জতের ১২টা বাজলো। স্যার দাড় করিয়ে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করলো, আরাফ কিছুই বলতে পারলোনা মাথা নিচু করে ইজ্জতের জলাঞ্জলি দিলো। তিয়াশা কে জিজ্ঞেস করতেই তিয়াশা সুন্দর করে সব গুলোর উত্তর দিয়ে দিলো।আরাফের মাথায় সুন্দর একটা প্লান চলে এলো তিয়াশার কাছাকাছি যাওয়ার।

অফ পিরিয়ডে তিয়াশা লাইব্রেরীতে বসে বই পড়ছে।আরাফ তিয়াশার পাশে গিয়ে বসলো। তিয়াশার সেদিকে খেয়াল নেই,,আরাফ তিয়াশার মনোযোগ পাওয়ার জন্য কাশি দিলো।তিয়াশা চোখ তুলে আরাফের দিকে একবার তাকিয়ে আবার পড়ায় মনোযোগ দিলো। আরাফ না পেরে এবার নিজেই কথা শুরু করলো, -এক্সকিউজ মি. -আমাকে বলছেন? -হ্যা,আসলে কিভাবে বলব বুঝতে পারছিনা।আসলে আমার আপনার হেল্প প্রয়োজন। -কি হেল্প? -আমি আপনার ক্লাসম্যাট।আপনি হয়ত খেয়াল করেন নি আজকে স্যার এর কোন প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারিনি।তবে আমি খেয়াল করেছি আপনি সবগুলো উত্তর খুব সুন্দর করে দিয়েছেন।অন্যদের কাছে জানতে পারলাম আপনি পড়াশোনা তে খুব ভালো।আমাকে প্লিজ হেল্প করুন নয়তো এই সেমিস্টারে নিশ্চিত ফেইল। -তিয়াশা ভ্রু কুচকে বললো,এতদিন কই ছিলেন? ক্লাসে ও তো দেখিনি কোনোদিন, এখন হুট করে কোত্থেকে এলেন? আরাফ ঢুক গিলে বললো, না মানে,ফ্যামিলি প্রব্লেম ছিলো, তাই কলেজ,ক্লাস কিছুই করতে পারিনি,অনেক ঝামেলায় ছিলাম।আপনি যদি হেল্প করতে না চান ইটস ওকে। তিয়াশা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,ঠিক আছে ৮-৯ টা।আর হ্যাঁ বই খাতা অন্তত নিয়ে আসবেন।বলেই আবার পড়ায় মনোযোগ দিলো। -রাত ৮টা? -জ্বি না।সকাল ৮টা।8 A.M -কিহ!!এই ভোর বেলায় পড়াবেন আমায়? -সকাল ৮টা ভোর? কোন গ্রহে থাকেন? -আসলে এত সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস আমার নেই। -তাহলে আসবেন না।সিম্পল। -না না তা নয়,টাইম টা চেঞ্জ করা যায়না? তিয়াশা রাগান্বিত ভাবে বললো, না যায়না,যদি আসার হয় আসবেন,নয়ত মানা করে দিন,অযথা আমার সময় কেন নষ্ট করছেন?পরবেন আপনি,লাভ আপনার, আমার কিছুইনা।সব কিছু তো আর আপনার মন মতো হবে না তাই না। -ওকে ওকে আসব। -এক মিনিট এদিক সেদিক যেন না হয়।কাল দেখা হচ্ছে। নাও বায়। -হুম।বায়।

তিয়াশাকে সকাল সকাল বাসা থেকে বের হতে দেখেই তিয়াশার মা বললেন, এত সকালে কই যাস? -মামনি কালই তো বললাম।ভুলে গেছো? -ওহ,হ্যাঁ আজ থেকে তো টিউশন শুরু। তা টিউশনের ফিস হিসেবে কি দিচ্ছে?মন নয় তো? -উফফ,মামনি আমি চললাম।কেন্টিনে নাস্তা করে নিবো।বায়। -আচ্ছা খেয়ে নিস কিন্তু।

চলবে,,,

2
$
User's avatar
@Mdemon456 posted 3 years ago

Comments