ভালোবাসার_অন্যরুপ 🌸❤

সিজন_২

পর্ব_২১

লেখিকা_Aye Sha (Koyel Banerjee)

রিখিয়া সমানে এক-পা দু-পা করে পিছাচ্ছে। পিছোতে পিছোতে কখন যে পুলের কিনারায় চলে গেছে খেয়াল নেই। আর এক-পা পিছালেই রিখিয়া পুলে পরে যাবে। রিখিয়া পিছোতে নিলেই....ব্যক্তিটি রিখিয়া কে কোমর জড়িয়ে ধরে অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো। রিখিয়া আবারও ব্যক্তিটিকে ধাক্কা মেরে দুরে সরিয়ে দিলো। ব্যক্তিটি রিখিয়ার দিকে এগোতে নিলেই কেউ একজন রিখিয়ার সামনে এসে দুম! করে একটা ঘুসি মেরে দিলো ব্যক্তিটির নাকে, তারপর পেটে দুটো ঘুসি মারলো আর পা দিয়ে ঘুরিয়ে একটা লাথি মেরে দিলো ব্যক্তিটির পায়ে যার কারনে সে মাটিতে পরে গেলো। রিখিয়া অবাক হয়ে বললো।

রিখিয়া-- ইতি! তুই?

ইতি-- তুই এখানেই দাঁড়া। আমি দেখছি একে।

ইতি ব্যক্তিটির দিকে এগোতে নিলেই ব্যক্তিটি ওখান থেকে গায়েব হয়ে যায়। ইতি আর পিছন করে না, রিখিয়ার কাছে চলে আসে।

ইতি-- রিখিয়া তুই ঠিক আছিস? তোকে কিছু করেনি তো ওই লোকটা?

রিখিয়া-- তুইও মারপিট জানিস?

ইতি-- অর্নিল খানের মেয়ে আমি। শুধুমাত্র তুই কি মারতে জানিস নাকি? ড্যাডি আমাকে অনেক আগে থেকেই সেল্ফ-ডিফেন্স শিখিয়ে রেখেছে।

____তোরা দুজন এখানে কি করছিস? ঠিক আছিস তো?

ইতি-- অর্ঘ্য! রিখিয়া কে একটা আননোন পারসন ডিস্টার্ব করছিল। আমি রিখিয়া কে খুঁজতে এসে এটা দেখতেই দিয়েছি মজা বুঝিয়ে।

ইতির কথা শুনে অর্ঘ্য ভ্যাবাচাকা খেয়ে রিখিয়া কে জিজ্ঞেস করলো।

অর্ঘ্য-- রিখিয়া তুমি তো নিজেই একাই একশো। তাহলে ইতির দরকার পরলো যে? বায় দ্য ওয়ে ছেলেটার নাক ঠিক আছে আই মিন আস্ত আছে তো?

ইতি-- এই একদম বাজে কথা বলবে না বলে দিলাম। রিখিয়া ফ্রিজ হয়ে গেছিলো তাই তো আমি বাঁচালাম ওকে। হুহ!

অর্ঘ্য-- ওকে বাবা! আমি কখন তোকে বাজে বললাম। আমি তো শুধু ওই ছেলেটার কথা ভাবছিলাম দ্যাট সেট! আচ্ছা রিখিয়া তুমি ঠিক আছো তো?

____কি হচ্ছে এখানে?

রিখিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে প্রশ্ন টা ভেসে এলো।

অর্ঘ্য-- কৃশ তুই? তুই কোথায় ছিলি এতক্ষণ?

ইতি-- আমরা সবাই তোমার জন্য ওয়েট করছিলাম। স্পেশালি রিখিয়া!

কৃশ-- রিয়েলি? রিখিয়া! তুমি আমার জন্য ওয়েট করছিলে? (রিখিয়ার দিকে এগিয়ে এসে)

রিখিয়া শুধু রাগী দৃষ্টিতে কৃশের দিকে তাকালো আর মুখ ফিরিয়ে নিলো অন্য দিকে।

অর্ঘ্য-- আব, আমি আর ইতি ভিতরে যাচ্ছি তোরা আয়। আর হ্যাঁ মাস্ক টা পরিস।

অর্ঘ্য কৃশ কে কথাটা বললো তার কারণ কৃশের মাস্ক টা ওর হাতে ছিলো। ওরা চলে যেতেই কৃশ রিখিয়ার দিকে উদ্দেশ্য করে বললো।

কৃশ-- ওদিকে মুখ ফিরিয়ে থাকলে দেখবো কি করে তোমাকে? আর এমনিতেও তো মুখে মাস্ক পরে আছো তাই এদিকে মুখ ফেরাতেই পারো।

রিখিয়া কৃশের কথা শুনে কৃশের দিকে মুখ ফেরাতেই রিখিয়ার চোখ স্থির হয়ে গেলো কৃশের চাহুনী তে। হাল্কা চাঁদের আলোয় কৃশের সবুজ, ধুসর চোখ টা আরো বেশি মায়াবি, আর স্নিগ্ধ লাগছে। সিল্কি সামনের চুল গুলো কপালের মধ্যে পরে আছে। ব্ল্যাক প্যান্ট, ব্ল্যাক শার্ট আর গ্রে কালারের একটা ব্লেজার পরা কৃশ। রিখিয়ার অবশ্য সেদিকে খেয়াল নেই কারণ সে কৃশের চাহুনীতেই স্তব্ধ।

   কৃশ রিখিয়ার মৌনতা দেখে আলতো হাতে রিখিয়ার মাস্ক টা খুলে নিলো, রিখিয়া এখনও কৃশের দিকেই তাকিয়ে আছে। কৃশ নিজের পকেট থেকে রুমাল বাড় করে আলতো করে রিখিয়ার মুখে ছোঁয়াতেই রিখিয়ার হুঁশ এলো। রিখিয়া সঙ্গে সঙ্গে দুরে সরে যেতে নিলেই কৃশ বাম হাত দিয়ে রিখিয়ার কোমর জড়িয়ে নিজের কাছে এনে, আলতো করে রিখিয়ার চোখের পানি গুলো মুছে দিলো, ঘাম মুছে দিলো।

রিখিয়া-- কোথায় ছিলেন আপনি? (কাঁপা কণ্ঠে)

কৃশ-- এখানেই তো ছিলাম। তুমি'ই দেখতে পাওনি।

রিখিয়া-- মোটেও না। আমি আপনাকে অনেক খুঁজেছি। কোথাও পাইনি।

কৃশ-- হমম দেখলাম তো খুঁজছিলে। কিন্তু আমি যেখানে ছিলাম সেখানে খোঁজো নি তাই পাওনি।

রিখিয়া-- কোথায় ছিলেন? (ছলছল চোখে)

কৃশ-- তোমার মনে। (রিখিয়ার কানের কাছে গিয়ে স্লো ভয়েসে)

রিখিয়া-- আ..আ..আর গ..গা..গানটা?

কৃশ-- আমি'ই গাইছিলাম। বাট অ্যালাস! তুমি আমাকে খুঁজেই পেলে না। খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে এলে আর তারপর...

কৃশ আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই রিখিয়া কৃশের বুকের সাথে মিশে, কৃশ কে জড়িয়ে শব্দ করে কেঁদে দিলো। রিখিয়ার সারা শরীর কাঁপছে, কৃশ রুমাল টা নিজের পকেটে রেখে আলতো ভাবে রিখিয়া কে জড়িয়ে ধরলো কিন্তু তাতেও রিখিয়ার কান্না থামলো না। তাই বাধ্য হয়ে কৃশ রিখিয়া কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো।

কৃশ-- আমি আছি রিখিয়া। সবসময় তোমার আশেপাশেই আমি আছি। শুধু তুমি বুঝতে পারো না। তোমাকে একা ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না। মাই কুইন! (আস্তে করে বললো শেষ শব্দ দুটো)

রিখিয়া আস্তে আস্তে শান্ত হতে লাগলো আর কৃশের ঠোঁটে বাঁকা হাসি। এই হাসির কারণ কি?

কৃশ-- চলো, পার্টিতে যেতে হবে তো?

রিখিয়া-- হমম। (আস্তে করে)

কৃশ এবার রিখিয়ার চোখের পানি নিজের আঙুল দিয়ে মুছিয়ে মাস্ক টা পরিয়ে দিলো আর তারপর চলে গেলো পার্টির ভিতর। অর্ঘ্য আর ইতি কিছুক্ষণ আগের ঘটনার ব্যাপারে কাওকে কিছু জানায়নি। ওরা সবার সাথে দাঁড়িয়ে গল্প করছে, কিন্তু রাহাত নেই তাই মুনের মনটা খারাপ। ঠিক সে সময় আবারও পার্টির লাইট অফ হয়ে গেলো। বেজে উঠলো " মেইন আগার কাহুণ " এর সুর।

🎶তুমকো পায়া হেইন তো জেইসে খোঁয়া হুন🎶 🎶কেহনা চাহুন ভি তো তুমসে ক্যায়া কাহুণ🎶

[স্পট লাইট পরতেই দেখা গেলো কৃশ আর রিখিয়া বল ডান্স পজিশনে দাঁড়িয়ে আছে আর কৃশ গাইছে]

🎶তুমকো পায়া হেইন তো জেইসে খোঁয়া হুন🎶 🎶কেহনা চাহুন ভি তো তুমসে ক্যায়া কাহুণ🎶

[অর্ঘ্য ইতির কোমর ধরে কৃশ আর রিখিয়ার কাছে গাইতে গাইতে চলে গেলো]

🎶কিসি জাবান মেন ভি🎶 🎶ভো লাবস হি নাহি🎶

[ইয়ুগ রাফিয়ার হাতের আঙুল ধরে একবার ঘুরিয়ে এগিয়ে গেলো]

🎶কে জিনমে তুম হো🎶 🎶ক্যায়া তুমহে মেইন বাতা সাকু🎶

[রাহাত মুনের হাত ধরে টেনে একবার আঙুল ধরে ঘুরিয়ে এগিয়ে গেলো]

🎶মেইন আগার কাহুণ, তুমসা হাসিন🎶 🎶কায়ানাত মেইন, নাহি হেইন কাহি🎶

🎶তারিফ ইয়ে ভি তো, সাচ মেইন কুছ ভি নাহি🎶 🎶তুমকো পায়া হেইন তো জেইসে খোঁয়া হুন🎶

[কৃশ রিখিয়ার আঙুল ধরে দু-বার ঘুরিয়ে বল ডান্স পজিশনে ডান্স করতে লাগলো]

🎶সোখিঁয়ো মেইন ডুবি ইয়েহ আদায়েন🎶 🎶চেহরে সে ঝালকি হুই হেইন🎶

[অর্ঘ্য ইতির দু-হাত ধরে টান করে আবার নিজের কাছে নিয়ে আসলো]

🎶জুলফ কি ঘানি ঘানি ঘাটায়েন🎶 🎶শান সে ঢালকি হুই হেইন🎶

[রাহাত মুন কে নিজের সামনে পিছন করে দাঁড় করিয়ে চুল গুলো সরিয়ে কোমরে হাত আবদ্ধ করলো]

🎶লেহরাতা আঁচাল হ্যা জেইসে বাদাল🎶 🎶বাহোন মেইন ভারি হ্যা জেইসে চান্দনি🎶 🎶রুপ কি চান্দনি🎶

[ইয়ুগ রাফিয়ার শাড়ির আঁচল একবার হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে ডান হাত দিয়ে পিছন থেকে রাফিয়ার বাম কাঁধে হাত রাখলো।]

🎶মেইন আগার কাহুণ ইয়েহ দিলকাশি🎶 🎶হ্যা নাহি কাহি না হোগি কাভি🎶

[অর্ঘ্য ইতি কে পিছন থেকে জড়িয়ে গাইলো]

🎶তারিফ ইয়ে ভি তো সাচ মেইন কুছ ভি নাহি🎶 🎶তুমকো পায়া হেইন তো জেইসে খোঁয়া হুন🎶

[রাহাত মুনের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে রাখলো]

🎶তুম হুয়ে মেহেরবান🎶 🎶তো হ্যা ইয়েহ দাস্তান🎶

[ইতি অর্ঘ্যের সামনে ঘুরে ওর বুকে হাত রেখে গাইলো]

🎶হো..তুম হুয়ে মেহেরবান🎶

[মুন রাহাতের গলা জরিয়ে গাইলো]

🎶তো হ্যা ইয়েহ দাস্তান🎶

[রাফিয়া ইয়ুগের গালে হাত রেখে গাইলো]

🎶আব তুমহারা মেরা এক হ্যা কারওয়ান🎶 🎶তুম জাহান মেইন ওয়াহান🎶

[রিখিয়া কৃশের দিকে তাকাতেই কৃশ রিখিয়ার কোমর দু-হাতে জড়িয়ে ধরলো আর রিখিয়া কৃশের গলা জড়িয়ে পিছন দিকে ঢলে পরলো]

🎶মেইন আগার কাহুণ হামসাফার মেরি🎶 🎶আপ্সারা হো তুম ইয়া কোই পরী🎶 🎶তারিফ ইয়ে ভি তো সাচ মেইন কুছ ভি নাহি🎶 🎶তুমকো পায়া হেইন তো জেইসে খোঁয়া হুন🎶 🎶কেহনা চাহুন ভি তো তুমসে ক্যায়া কাহুণ🎶 🎶কিসি জাবান মেন ভি🎶 🎶ভো লাবস হি নাহি🎶 🎶কে জিনমে তুম হো🎶 🎶ক্যায়া তুমহে মেইন বাতা সাকু🎶 🎶মেইন আগার কাহুণ, তুমসা হাসিন🎶 🎶কায়ানাত মেইন, নাহি হেইন কাহি🎶 🎶তারিফ ইয়ে ভি তো, সাচ মেইন কুছ ভি নাহি🎶 🎶তুমকো পায়া হেইন তো জেইসে খোঁয়া হুন🎶

[সবাই একসাথে গাইলো আর গান শেষ করলো। গান শেষ হতেই সবাই জোরে জোরে হাত তালি দিতে থাকলো। হলে শুধুমাত্র ইয়ং ছেলে-মেয়েরাই আছে, অন্যদিকে রয়েছে বড়রা।]

     বাংলো তে ফিরে রাতের বেলা রিখিয়া বেডে একটা বালিশ বুকে জড়িয়ে সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছে। চোখের কোণা বেয়ে টুপ টুপ করে পানি পরছে। বালিশ টা ভিজে গেছে চোখের পানি তে। রিখিয়ার ঠোঁট দুটো মৃদু কাঁপছে। আজ নিজের অতীত টা আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।

রিখিয়া-- যতো এই অতীতের থেকে দুরে পালাতে চাই ততোই বার বার এই অতীত আমার সামনে চলে আসে। আজ আবারও ওই স্পর্শ! (চোখ বন্ধ করে নিলো) এই স্পর্শটার কথা অনুভব করলেই আমার শরীরে জ্বালা পোড়া করে। আই, আই জাস্ট হেইট হিম! যাকে ছোটো থেকে মনে প্রাণে ভালোবাসলাম, বিশ্বাস করলাম সেই আমার সাথে...

রিখিয়ার কলার টিউন বেজে উঠতেই রিখিয়া ফোনের দিকে তাকালো। স্ক্রিনে "কৃশ" নামটা স্পষ্ট ভেসে উঠেছে। কেন জানো রিখিয়ার ঠোঁটে এক চিলটে হাসি ফুটে উঠলো। রিখিয়া ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ঝাঁঝালো কন্ঠ ভেসে এলো।

কৃশ-- হোয়াট দ্য হেল আর ইউ ডুয়িং? কতক্ষণ লাগে একটা কল রিসিভ করতে?

রিখিয়া-- আসলে আমি..

কৃশ-- আই সেইড কতক্ষণ লাগে কল রিসিভ করতে?

রিখিয়া-- (একটু কেঁপে) স্যরি!

কৃশ-- কি এতো ভাবছিলে কল রিসিভ করতে গিয়ে? (নিজেকে স্বাভাবিক করে)

রিখিয়া-- তেমন কিছু না।

কৃশ-- তেমন কিছু না হলে মুড অফ করে থাকতে না তুমি।

রিখিয়া-- আই অ্যাম ফাইন নাও।

কৃশ-- নাও? কিছুক্ষণ আগে তারমানে মুড অফ ছিলো?

রিখিয়া-- হমম। একজনের ধমক খেয়ে মুড অফ জানলা দিয়ে ফুরুত! হয়ে গেছে।

কৃশ-- (হেসে) রিয়েলি?

রিখিয়া-- হমম রিয়েলি।

কৃশ আর রিখিয়া এভাবেই কথা বলতে লাগলো। কথা বলতে বলতে অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় রিখিয়া ঘুমিয়ে পরলো ফোন কানে ধরেই। কৃশ যখন রিখিয়ার আর কোনো সাড়া পেলো না তখন বুঝলো রিখিয়া ঘুমিয়ে গেছে। তাই কৃশ আর কোনো কথা না বলে ফোনটাকে ওভাবেই কানে ধরে রাখলো।

রিখিয়া সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ বসে রইলো। হঠাৎই ওর মনে পরলো যে কালকে রাতে ও কৃশের সাথে কথা বলছিলো। রিখিয়া সঙ্গে সঙ্গে নিজের ফোন নিয়ে কল লগসে গিয়ে দেখলো কল ডিউরেশন আড়াই ঘন্টার। 

রিখিয়া-- আমরা তো কালকে রাতে মোটে এক ঘন্টা কথা বলেছি। তাহলে বাকি দেড় ঘন্টা কৃশ শুধু শুধু ফোন ধরে রেখেছিলো আমি কথা বলবো ভেবে? ওহ শিট!

রিখিয়া সঙ্গে কল ব্যাক করলো কৃশ কে আর একবার রিং হতে না হতেই কৃশ কল রিসিভ করে বললো।

কৃশ-- হাউ গুড বয় আই অ্যাম রাইট? একবার রিং হতে না হতেই আমি রিসিভ করে নিলাম। ওয়াও! (ভাব নিয়ে)

রিখিয়া-- কৃশ আই অ্যাম স্যরি!

কৃশ-- তুমি তো আমাকে কালকে রাতেই স্যরি বলেছো, আবার কেন বলছো?

রিখিয়া-- আমি কালকে রাতে তোমাকে না বলে ঘুমিয়ে পরেছিলাম বলে।

কৃশ-- এক মিনিট! আবার বলো কথাটা।

রিখিয়া-- হ্যাঁ? বললাম আমি কালকে রাতে তোমাকে না বলে ঘুমিয়ে ঠিক করিনি। তুমি... (থেমে গেলো)

কৃশ-- আজকে কার মুখ দেখে উঠলাম ঘুম থেকে? সকাল সকাল এতো বড় অ্যাচিভমেন্ট। গ্রেট!

রিখিয়া-- আব এতে এমন কি আছে?

কৃশ-- আছে, আছে। তুমি বুঝবে না।

রিখিয়া-- হুহ। আচ্ছা তুমি দেড় ঘন্টা ধরে ফোন ধরে রেখেছিলে কেন?

কৃশ-- ট্রাই করছিলাম কাওর নাক ডাকা শুনে ঘুমানো যায় কি না।

রিখিয়া-- ওহ! এই কি বললে? আমি নাক ডাকি?

কৃশ-- কোথায় বললাম তুমি নাক ডাকো? পাশের বাসার কাকিমা নাক ডাকে। (মুখ টিপে হেসে)

রিখিয়া-- তোমাকে, তোমাকে তো আমিইইইই...

কৃশ-- কি করবে আমাকে?

রিখিয়া-- পাহাড় দিয়ে চাপা দিয়ে দেবো।

কৃশ-- (ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে) অ্যা? কিহ? পাহাড় কি তোমার হাতের খেলনা না...

টুট, টুট, টুট।

ফোন কেটে দিলো রিখিয়া আর কৃশ কিছুক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হাসতে শুরু করলো। এদিকে রিখিয়া ফোন টা বেডের মধ্যে ঠাস! করে ফেলে দিয়ে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বললো।

রিখিয়া-- ওই কৃশ কে আমি ক্রুশ কাঠে ঝুলিয়ে পিটাবো। উফফফ! (মেঝেতে পা দিয়ে বারি মেরে)

        রিখিয়া ফ্রেশ হয়ে নীচে গিয়ে সবার সাথে ব্রেকফাস্ট করে নিয়ে ঘরে চলে এসেছে। কিছুক্ষণ আগে কৃশের উপর রেগে থাকলেও এখন নিজের হাসি পাচ্ছে। রিখিয়া ডেস্কের মধ্যে বসে একতা পেন নিয়ে কাগজের মধ্যে বোলাচ্ছে আর কৃশের কথা ভাবছে, গতকাল রাতের নিজেদের ডান্সের কথা ভাবছে। ঠিক সে সময় রিখিয়া নিজের কাঁধে গরম নিশ্বাস আর হাতে কাওর স্পর্শ অনুভব করলো। ডান দিকে মাথা ঘোরাতেই দেখলো কৃশ সামনের কাগজটার দিকে তাকিয়ে আছে। কৃশ কে দেখে রিখিয়া আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলো।

রিখিয়া-- তুমি?

কৃশ-- হমম আমি।

রিখিয়া-- এখন এখানে কি করছো?

কৃশ-- পারমিশন নিয়েই এসেছি। চিন্তা করার কিছু নেই।

রিখিয়া-- কেন এসেছো?

কৃশ-- তোমাকে দেখতে। (রিখিয়ার চোখে চোখ মিলিয়ে)

কৃশ রিখিয়ার চোখে চোখ মেলাতেই রিখিয়া চোখ নামিয়ে লাজুক হাসলো। কৃশ সেটা দেখে রিখিয়ার কানের কাছে একতা ছোট্ট ফুঁ দিয়ে পাশের চেয়ারে বসলো। এদিকে রিখিয়া তো ফ্রিজ হয়ে বসে আছে কৃশের দিকে তাকিয়ে।

কৃশ-- কাগজের উপর পেন বুলিয়ে কি করছিলে?

রিখিয়া-- ক..কিছু না।

কৃশ-- রিখিয়া! আই ওয়ান্ট টু সী ইউর হ্যান্ড রাইটিং।

রিখিয়া-- হঠাৎ?

কৃশ-- শুনেছি যারা সাইকোলজি নিয়ে পরে তাদের হ্যান্ড রাইটিং ভালো হয়। আর হ্যান্ড রাইটিং দিয়েও তো মানুষের ব্যক্তিত্ব বোঝা যায় তাই না?

রিখিয়া-- হমম যায় তো। বাট ওটা গ্রাফোলজি। তুমি কি গ্রাফোলজি নিয়ে পড়ছো নাকি? (হেসে)

কৃশ-- নাহ। দেখাতে না চাইলে নো প্রব্লেম।

রিখিয়া-- দেখাচ্ছি।

কৃশ-- এইখানে। (কাগজ এগিয়ে দিয়ে)

রিখিয়া নিজের নাম টা লিখছে কাগজে আর কৃশ সেটার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে। রিখিয়া নাম টা লিখে কাগজ টা কৃশের হাতে দিলো।

কৃশ-- ওয়াও! তোমার থেকেও বাজে তোমার হ্যান্ড রাইটিং।

রিখিয়া-- থ্যাংক ইউ। (দাঁতে দাঁত চেপে)

রিখিয়া কথাটা বলে উঠে গেলেই কৃশ ওর হাত টেনে ধরলো আর নিজে রিখিয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পিছন থেকে কানে কানে বললো।

কৃশ-- তোমার হ্যান্ড রাইটিং তোমার মতোই সুন্দর। রেডি হয়ে আসো। বেড়াবো আমরা। আই অ্যাম ওয়েটিং ফর ইউ।

রিখিয়া-- কোথায়?

কৃশ-- দেখি কোথায় যাওয়া যায়। কেন যাবে না?

রিখিয়া আর কিছু না বলে রেডি হতে চলে গেলো। রেডি হয়ে এসে কৃশ আর রিখিয়া বেড়িয়ে গেলো ঘুরতে।

দুপুরে.....................................

মীরা-- ইতিইই!

ইতি-- হ্যাঁ বলো।

মীরা-- রিখিয়া কোথায় রে?

ইতি-- ঘুরতে বেরিয়েছে তো।

মীরা-- এই বৃষ্টির মধ্যে?

ইতি-- সকালে বৃষ্টি ছিলো না তো তাই গেছে। চলে আসবে।

ইসমি-- ইতিইইইই! কলিং বেল বাজালো কেউ। খুলে দে তো।

ইতি চলে গেলো দরজা খুলতে, দরজা খুলতেই ইতি স্তব্ধ হয়ে গেলো।

🌸 🌸

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

নোট:- আগামীকাল গল্প না'ও দিতে পারি কারণ আমাকে বই চেঞ্জ করতে যেতে হবে। তবুও চেষ্টা করবো দেওয়ার।

5
$
User's avatar
@Mdemon456 posted 3 years ago

Comments