গল্পঃ মামাতো বোন যখন গার্লফ্রেন্ড

পর্বঃ ১...

√- আমার মামাতো বোনের নাম মিষ্টি । সে আমার থেকে ৪ বছরের ছোট। আমি যখন ৭ম শ্রেনীতে, মিষ্টি তখন ৪থ শ্রেনীতে পড়ে। তখন থেকেই আমার কাছে মিষ্টির হাসি, চলাচল, খেলাধুলা করা দেখা খুব ভালো লাগতো 🙂

আমি যত সময় স্কুলে বাইরে ঘুরাঘুরি করতাম, ততখানিই ওর দিকে আমার নজর বেশি থাকতো, মিষ্টি কোথায় আছে বা কি করছে । মিষ্টি ছোট বেলা থেকে চিকন চাকন, গোলাপী ফর্সা, চুল গুলো অনেক লম্বা (খেলার সময় চুল গুলো যখন বাতাসে উড়তো, আমার দেখতে খুব ভালো লাগতো) মিষ্টি দেখতেও খুব সুন্দর। কেনো যে ওর দিকে এতো তাকিয়ে থাকি তা আমি নিজেও বুঝতে পারতাম না... কিন্তু তাকিয়ে থাকলে যে মনের মধ্যে খুব আনন্দ পেতাম তা অনুভব করতে পারতাম 😊

মিষ্টিরা যখন খেলাধুলা করতো, মিষ্টি আমাকে দেখলেই দৌড়ে এসে আমার হাত টেনে নিয়ে বলতো, তাদের সাথে খেলা করতে, কিন্তু ওর বান্ধবীদের সাথে খেলা করতে লজ্জাবোধ করতাম... তাই মাঝে মাঝে খেলতাম, বেশির ভাগ সময় মানা করে দিতাম। এক স্কুলে ১ম থেকে ১০ম শ্রেণী পড়ার ব্যবস্থা থাকায় আমরা একি স্কুলে ছিলাম 🏬

এই ভাবে ৩ বছর কেটে গেলো। কিন্তু দিনে দিনে মিষ্টি কেমন যেনো হয়ে গেলো 😞 আগে ছোটকালে আমাকে দেখলে হাত ধরে খেলতে নিয়ে যেতো, কিন্তু এখন আর নেয় না। দুর থেকে মিষ্টি হাসি দিয়ে চলে যায়, তেমন কথা ও বলে না, এতে আমি মনে মনে খুব কষ্ট পেতাম 😥 কিন্তু ও আমাকে দেখা মাত্র যে হাসিটা দিতো, সেটায় দেখার জন্য আমি ওর আশেপাশে ঘুরাঘুরি করতাম। আমার কাছে খুব ভালো লাগতো ওর ওই মিষ্টি হাসি টুকু 🙂

মিষ্টি যখন ৭ম শ্রেনীতে, আমি তখন ১০ম শ্রেনীতে। দিনে দিনে ওর জন্য নিজের মনের মধ্যে চিন্তা ভাবনা বেড়ে গেলো... কিন্তু দিনে দিনে ও আমাকে পাত্তা দেওয়া বন্ধ করে দিতে লাগলো , আমার কাছে মনে হত ও হয়তো আমাকে এড়িয়ে চলে 😥 শুধু মাত্র দেখা হলে প্রথমে মিষ্টি হাসি দিতো, এই পর্যন্ত।তার পর অন্য দিকে তাকিয়ে চলে যেনো 🙄

আমাকে স্কুলে খাওয়ার জন্য বাবা ৫ টাকা করে দিতো... আমি সেই টাকা তিন দিনের তা এক সাথে করে ১৫ টাকা জমা করতাম, আর সেই ১৫ টাকা নিয়ে বেকারী থেকে বার্গার, চিংড়ি বা সিংগারা নিয়ে মিষ্টির ক্লাসে যেতাম ওই খাবার গুলো দিতে 😐

কিন্তু মিষ্টি সব সময় প্রথমে দেখা মাত্র হাসিটা দিয়ে প্যাকেট টা আমার হাত থেকে নিয়ে খাওয়া শুরু করতো, কথা বলতে চাইলে মুখ ভেংচি কাটতো 😏😏 আর ওর বান্ধবীদের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিতো, আমি নাকি ওর আপন বড় ভাই 😟 এই কথা বলে এক এক বান্ধবী কে কম হলেও ৫০ বার পরিচয় করিয়ে দিয়েছে আমাকে 😭 তাই বলে ফুপাতো ভাইকে, যে কিনা তার জীবনের চেয়ে বেশি তাকে চায়..তাকেই সব সময় আপন ভাই বলে পরিচয় দেয় 😞 একবারো বুঝতে চায়তো না আমি ওকে কতটা চায় 😭

কিন্তু আমি ওর হাসি মুখটা দেখার জন্য নিজে না খেয়ে ওই টাকা দিয়ে ওর জন্য খাবার কিনে নিতাম। এটা যদি ভালোবাসা হয়ে থাকে তাহলে হ্যা আমি ওকে মানে মিষ্টি কে আমার জানের চেয়ে বেশি ভালোবাসি 😌

মাঝে মাঝে আমার সামনে দিয়ে মিষ্টি ওর ছেলে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতো 😖 আমি ওকে মানা করলে, মিষ্টি আরো আমাকে বলতোঃ আমি ছেলেদের সাথে ঘুরলে তোর কি?? পারলে কিছু করে দেখা 😏

যত মানা করতাম, ও আরো বেশি ঘুরতো... তাই আর কিছু বলা বাদ দিয়ে দিছি 😑

আমার মনে যে কতটা কষ্ট পেতাম বলে বুঝানো যাবে না। মন কে সান্ত্বনা দিতাম এই বলে, ও তো আর কাউকে ভালোবাসে না... মনের ঘর এখনো খালি রাখছে 😍

এখন মিষ্টি মহিলা কলেজে পড়ে, ওর জন্য ভালো ভালো বিয়ের প্রস্তাব আসে। মামী প্রস্তাব গুলো মানা করে দিতো সব সময়, বলে মেয়েকে তারা আরো পড়াতে চায়। তাতে আমার ও একটু মন টা হালকা হয়।

কারন, মিষ্টি কে যদি আমি না পাই, তাহলে আমার যে কি হবে আমি নিজেও জানি না। ওকে আমি সেই ছোট বেলা থেকে জানের চেয়ে বেশি ভালোবাসি 😍 এমন কোনো দিন নেই যে ওর কথা ভাবি নাই ☺ My Love মিষ্টি 😊

আমি মাঝে মাঝে ওর কলেজের সামনে যেতাম, দেখতাম এমনিতে অনেক ভদ্র আছে মিষ্টি ... কলেজ শেষে সরাসরি বাসায় আসতো, পথে কোথাও দাড়াতো না 🤗 আবার মাঝে মাঝে ওকে দেখার জন্য মামা বাসায় ও যেতাম। সব সময় মিষ্টি পাগলী টা এসে আমার হাত থেকে যে খাবার নিয়ে যেতাম, সেই খাবারের প্যাকেট গুলো নিয়ে চলে যেতো 🙄 আর তেমন কথা বলতো না।

মামী যদি মিষ্টি কে বলতো, তোরা দুই জনে বসে বসে গল্প কর.. আমি যায় কাজ করি 😯 ওর সেই পুরনো উত্তর... মুখ ভেংচি কেটে 😏 বলতোঃ ওর সাথে কি কথা বলবো, ও হলো আমার বড় ভাই 😏 বড় ভাইয়ের সাথে কি কথা বলে হুমম 😏😏 আর একটা কাজ ছিলো ... আমার আনা খাবার গুলো খেতো আমারই সামনে বসে বসে বসে.. আর আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু মুখ ভেংচি কাটা 😏😏

কিন্তু আমার মনের মধ্যে ওর সেই কাজ গুলো দেখে ছোট বেলার মিষ্টির কথা মনে পড়ে যেতো ☺ বড় হওয়ার পর যেনো আরো সুন্দরী হয়ে গেছে 😁 মনের মধ্যে ঢেউ খেলা শুরু করতো 😍

মামা-মামী আমাকে খুব ভালো জানতো, আমি বেড়াতে গিলেই পাগল হয়ে যেতো কি খাওয়াবে, কিভাবে আমি খুশি থাকবো এই সব চিন্তা করে 😍 শুধু মিষ্টি আমার সাথে তেমন ভালো ভাবে কথা বলতো না, সেই জন্য তাকেও অনেক রাগারাগি করতো মামী 🤗 বলা যায় মামী বাড়ি গেলে জামাই আদর পেতাম 😎

মিষ্টি এসেছে আমাদের বাসায় বেড়াতে ৩ দিনের জন্য, এখানেও এসেও এক কাজ করে.. আমাকে দেখলেই মুখ ভেংচি 😠

দুপুর বেলা এসেছে আমার কাছে, বলে ভাইয়া আমাকে ফেসবুক আইডি খুলে দেও 😇 আমি ওর আইডি খুলার কথা শুনে আমার মনটা কিছুটা খারাপ হয়ে গেলো, যে এতদিন তো আর কারো সাথে প্রেম করলো না... কিন্তু এখন মনে হয় আর আটকায় রাখা যাবে না 😣 ফেসবুকে হয়তো প্রেম করে ফেলবে।

মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি এলো 😁 বললাম আইডি খুলতে ১ ঘন্টা লাগবে, মোবাইল রেখে যা। মিষ্টি মোবাইল রেখে গেলো। মিষ্টি কে একটা আইডি খুলে দিলাম, সাথে মিষ্টির আইডি এমন সেটিংস করে দিয়েছি তাকে যেনো আর কেউ ফ্রেন্ড না হতে পারে 😁 আমিও একটা ছদ্ম নাম দিয়ে (অবুঝ ছেলে) নামে আইডি খুলে ওর আইডির সাথে ফ্রেন্ড করে দিলাম 😇 মোট অচেনা ৭/৮ টি মেয়ে ফ্রেন্ড এড করে দিলাম, যেতো আমার আইডিতে সন্দেহ না হয় 😁

আমাকে তো এমনিতে মিষ্টি পাত্তা দিতে চায় না, তাই এবার ছদ্মবেশী হয়ে মিষ্টির মন জয় করবো, মনে মনে শপথ নিলাম 🤣🤣🤣 তাও ওকে আমার জীবনে চায় 😭 না হলে আমি বাঁচবো না 😭 শত হলেও ছোট বেলার ভালবাসা ও প্রথম ভালবাসা 😍

একদিন পর থেকে শুরু হল আমার মেসেজ পাঠানো Hi লেখে... কিন্তু প্রতিদিন কত না মেসেজ দেয়, একটার ও রিপ্লাই দেয় না 😟 মনে মনে বললাম, এই বুদ্ধি মনে হয় কাজ হবে না 😥

আমাদের বাড়ির গাছের ফল দেওয়ার নাম করে চলে গেলাম ওদের বাসায়। গিয়ে দেখি মামী খিচুড়ি রান্না করছে, আর বিবি জান বসে বসে টিভি দেখছে 😯 সয়তান মিষ্টি আমাকে দেখেই আর কাজ কি... আমাকে মুখ ভেংচি দিলো অনেক গুলো 😏😏

মামী বললো খিচুড়ি রান্না হয়েছে, বস খেতে দেয়, আমি আবার খিচুড়ির কথা শুনলে লোভ সামলাতে পারি না 😋😋

মোবাইল টিভির পাশে রেখে চলে গেলাম খিচুড়ি খেতে 😋 খাওয়া দাওয়া করে এসে দেখি মিষ্টি আমার মোবাইল নিয়ে হাতাহাতি করছে 🙄

আমিঃ তুই আমার মোবাইল নিয়েছিস কেনো?? (মনের মধ্যে একটু রাগ আছে, মেসেজের রিপ্লাই দেয় নাই কেনো তাই )

মিষ্টিঃ দেখছিলাম তোর মোবাইলে কি কি আছে 😐

আমিঃ তাহলে কি কি পেলি?? 🙃

মিষ্টিঃ কিছু না। তুই তো আমারই বড় ভাই, তাই আমার মত ভদ্র 😝

আবার সেই ওর মুখে বড় ভাই শুনে মেজাজ টা গরম করে চলে এলাম 😖

রাতে হল আবাক করা কান্ড 😦

দেখি মিষ্টি আমার ছদ্মবেশী আইডিতে Hi লেখে মেসেজ দিয়েছে 😲 আমি গত ২০ দিনে কম হলে ৫০০ মেসেজ দিয়েছিলাম, আজ রিপ্লাই পেলাম 😯 মনে খুশি খুশি লাগলো 😁 আমিও রিপ্লাই দিলাম...

আমিঃ হ্যালো, কেমন আছেন??

মিষ্টিঃ ভালো। আপনি?

আমিঃ ভালো। কি করেছেন?

মিষ্টিঃ বসে আছি।

শুরু হলো মিষ্টি মিষ্টি গল্প... সারাদিন ওকে মেসেজ দিতাম, মিষ্টি ও আমাকে রিপ্লাই দিতো 😘 সম্পর্ক টা আসতে আসতে ভালোবাসার দিক নেওয়া শুরু করলাম 🙂

আমার পরিচয় দিতাম, আমি ওদের পাশের গ্রামের ছেলে । মাঝে মাঝে ওর জন্য গিফট ও ফুচকা কিনে ছোট বাচ্চাদের হাতে পাঠিয়ে দিতাম আমি 😍

মিষ্টি কথা শুনে মনে হতে লাগলো আমার প্রেমে পরেছে, আমি ও মনে মনে ভাবলাম ওর সাথে একদিন দেখা করে সব বলে দিবো ওকে ☺

মিষ্টি একদিন বললো পরিক্ষার রেজাল্ট দিবে ২৮ তারিখ, আমরা ২৯ তারিখ দেখা করবো 😐 আমি নার্ভাস ছিলাম, তাও রাজি হলাম 🙂 ঠিক হল সিটি পার্কে দেখা করবো।

২৮ তারিখ রেজাল্ট দিলো, খুব ভালো করেছে রেজাল্ট করেছে মিষ্টি । আমি ফুপাতো ভাই হিসেবে একটা নীল শাড়ি ও নীল কানের দুল কিনে দিলাম রেজাল্ট ভালো হওয়াতে মিষ্টি কে 🙂 সাথে বললাম শাড়ি পরে আমাকে দেখাতে... কিন্তু মিষ্টি বললো, ওর নাকি নীল রং পছন্দ হয় না 😖 আর ওই শাড়িও কখনো পরবে না। এই কথা শুনে মনটা খুব খারাপ হল 😰

অবশেষে সেই ২৯ তারিখ সকালে....... বাকিটা পর্ব- ২ ও ৩ থাকবে...

বিঃদ্রঃ এটা আমার অনেক আগের লেখা গল্প। এই গল্প আরো অনেক আগে আমার পুরাতন আইডিতে পোস্ট করা হয়েছিল।

এই পর্বটি ভালো লাগলে প্লিজ ছোট একটা কমেন্ট করুন

7
$
User's avatar
@Mdemon456 posted 4 years ago

Comments