হলিডে_ট্রিপ

.

  • পর্ব এগারো -
  • মহসিন আহমেদ - . ২৪.

-' অনেক রাত হয়েছে যাও রুমে যাও?

যেতে ইচ্ছে করছেনা নাফিসার। রাত তো আর কম হলোনা! আর শীতে গা কাঁপুনি দিয়ে উঠছে বারবার। টেনশনে শীতের কাপড় ও পড়া হয়নি।

-' আপনি যাবেন না? -' তুমি যাও আমি একটুপর আসছি? -' চলুন একসাথে যায়?

এই মেয়েকে এখন বোঝাবো কিভাবে আমার ভিতর এই মুহূর্তে কি চলছে? বাবা - মাকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছি। হুট করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া কি ঠিক হলো? কিন্তু পরিস্থিতিই যে এমন ছিলো।

-' কি ভাবছেন? -' কিছুনা। -' আপনার পরিবার নিয়ে চিন্তা করছেন তাইনা? রাগের বসে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া আপনার একদম ঠিক হয়নি? আমাকে একটু ভালোভাবে বোঝালেই আমি বুঝতাম। আর আমি চলে যাবো আপনার জীবন থেকে। শুধু শুধু আপনাকে কষ্ট দিতে আসলাম। আমি যদি না আসতাম তাহলে আজ এতকিছু হতোনা। সব দোষ আমারই। -' চলে যাবে মানে? তুমি কিন্তু এখন নিজের না আমারও বটে। আরেকবার চলে যাওয়ার কথা বললে খবর আছে। বিয়ে যেহুুতু করেছি সেহুুতু আমার কাছে তুমি স্ত্রীর মর্যাদাও পাবে। আর একটা কথা মাথায় ঢুকিয়ে নাও জন্ম, বিয়ে, মৃত্যু সবটাই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় এখানে অন্যকারো হাত নেই। যাকে যার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সে তাকে পাবেই। হোক দূরে বা কাছে। দেখো যদি সেটা না হয় তাহলে তুমিই বা আমার জীবনে আসবে কেন? দুদিন আগে কেউ কাউকে চিনতাম না অথচ আজ কত আপন। এগুলো নিয়ে আর কষ্ট পাবেনা সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি তো তোমার পাশে আছি তাইনা? -' আপনি এতো ভালো কেন? এত ভালো মানুষও হয় নাকি? -' একটা কথা কি জানো? সবাই সবদিক দিয়ে পারফেক্ট হয়না। প্রতিটা মানুষের ভালো খারাপ দুটো রূপই থাকে। কেউ প্রকাশে খারাপ আবার কেউবা গোপনে। -' আপনার কোনো খারাপ দিক আমি এখনও দেখিনি? -' দেখবে? দেখাবো ? -' উহুু ! না থাক আপনার ভালো দিকটাই আমার অনেক ভালো লাগে। সবসময় এমনিই থাকবেন? -' সারারাত কি এখানেই গল্প করে কাটিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি? আমার কিন্তু ঘুম পাচ্ছে? আর এমনিতেই আজকে সারাদিন মাটি হয়ে গেছে কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনি। কাল সকাল সকাল বের হতে হবে। ঘুরলে অনেকটাই টেনশন মুক্ত থাকতে পারবো। -' কালকে কোথায় যাবেন? -' গেলেই দেখতে পাবে? -' আপনাদের সাথে থাকতে থাকতে কেমন যেন প্রকৃতি প্রেমী হয়ে গিয়েছি আমি? -' ভালোই তো, আগে যখন কোনো ট্যুরে যেতাম তখন কিছু একটা খালি খালি লাগতো এখন সেটা পূর্ণ হবে হয়তো? তার উপর বউ আমার প্রকৃতি প্রেমী।

মাহিবের মুখে বউ কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে নেই নাফিসা। কিছুতেই মাহিবের দিকে তাকাতে পারছেনা। চোখাচোখি হলেই যেন লজ্জায় মরে যাবে।

-' ঠান্ডা বাড়ছে তোমার শরীরে তো আবার শীতের জামাও নেই। ঠান্ডা লেগে গেলে পরে ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে আমায় আবার বউয়ের সেবাই ব্যস্ত হয়ে পরতে হবে।

এই লোকটা কি আমায় লজ্জায় মেরে ফেলার বুদ্ধি করছে নাকি? কি জানি বাপু। আজ এতো লজ্জায় বা কোথা থেকে আসছে?

বউ দেখি আমার লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে? লজ্জায় স্বামীর দিকে তাকাতেই পারছেনা?

-' এত বউ বউ করছেন কেন? -' বউকে বউ ডাকবোনা তো কি আপু ডাকবো নাকি?

মাহিবের কথায় নাফিসা বিষম খায়। কি বলে লোকটা? পাগল হয়ে গেলো নাকি? নাকি ঘুমের ঘোরে ভুল ভাল বকছে? না এখানে আর এক মুহূর্তও থাকা যাবে না।

-' চলুন যায়? ঠান্ডা লাগছে। -' হুম চলো?

-' বউ রেখে এখানে কি? বিয়ে করছিস বাসর হবেনা? -' আর বাসর! এদিকে টেনশনে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। -' তোর আবার কিসের টেনশনরে ভাই? এখন তো তোর চিল করার টাইমরে? আমার কপাল দেখ না আছে কোনো বউ আর না আছে গার্লফ্রেন্ড? -' ইশানা ভাবিকে এই কথাটা বলবো? -' আয়ান তোকে আমি? ওয়েট, আমি একবারও কি বলছি তোর আর আয়শার মধ্যে ইটিশ পিটিশ চলছে। তাহলে?

আয়ান চমকে ওঠে। ভাবছে, এটা আকাশ জানলো কিভাবে? নিজে তো বলেনি। তাহলে ?

এদিকে মাহিবের মনেও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে 'আয়ান আর আয়শার মধ্যে ইটিশ পিটিশ চলছে মানে? ওরা কি দুজন দুজনকে ভালোবাসে? কিন্তু ? যাইহোক ওরা যদি দুজন দুজনকে সত্যিই ভালোবাসে তাহলেই ভালো। আমার আর এ নিয়ে ঘাটাঘাটি করা ঠিক হবেনা।

-' আয়ান ট্রিট চায় কিন্তু? -' ধন্যবাদ তোকে। আর ট্রিট অবশ্যই দিবো? -' ধন্যবাদ কেন? আমি আবার ভালো কি করলাম? -' তোর জন্যই আমি আয়শাকে নিজের করে পেলাম। তুই আজ নাফিসা ভাবিকে বিয়ে না করলে হয়তো আয়শা কখনই আমার হতো না। -' হ্যা তোমার রাস্তা তো ক্লিয়ার কিন্তু এদিকে বিয়ে করে আমি যে কি টেনশনের মধ্যে পরছি? -' আংকেল আনটিকে নিয়ে টেনশন করছিস নাকি? কিছু হবেনা দেখিস যা হবে সব ভালোই হবে। -' সেটা তো জানি। কিন্তু ওকে নিয়ে প্রথমে বাড়ীতে ঢুকলে আম্মুর কি রিয়েকশন হবে এটা ভাবতেই ভয়ে আমার গা শিউরে উঠছে। -' তোর তো সব সিচুয়েশনে মানিয়ে নেওয়ার প্রবল সক্ষমতা আছে। আর আংকেল আনটি কেমন এটা আমি ভালোই জানি? একটা ভেঙ্গে যাওয়া পরিবারকে নিজের বাড়িতে ঠাঁই সবাই দিতে পারেনা। আর ভাবির অতীত জানলে নিশ্চয় তারাও মেনে নেবে। -' তুই আবার অতীতে ফিরে যাচ্ছিস? বলেছি না অতীতে কি হয়েছে ভুলে যা? আর আব্বু নিজের বাড়ীতে তোকে ঠাঁই দিয়েছে মানে ওটা কি তোর বাড়ি নয় কি? -' ভাই তোরা থাম পরে কি হবে সেটা পরে দেখা যাবে। আজ কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনাই সারাদিন তোর পেরাই ছিলাম কাল কোথাও যাবি নাকি নিজে একাই আমাদের রেখে উরানচন্ডির মতো বউ নিয়ে ঘুরবি? -' শুধু বউ নিয়ে গেলে তোরা তো আবার বলবি 'ঐ যে দেখো বউ পেয়ে আমাদের ভুলে গেলো? আমাদের এখানে রেখে বউকে সাথে নিয়ে ঘুরতে চলে গেলো বেহায়ার মতো?

২৫.

সকালে সবাই ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে হালকা নাস্তা করে রওনা দিয়েছে রাতারগুল জলাবনের উদ্দেশ্যে। তবে এসময়ে জলের দেখা মিলবে নাকি সেটা জানা নেই কারো। চিরসবুজে ঘেরা এই বন গোয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত। বর্ষাকালে এই বন অথৈ জলে ডুবে থাকে দীর্ঘ চার থেকে পাঁচ মাস। বর্ষাকাল শেষ হতেই ছোট ছোট খালগুলো হয়ে যায় পায়ে চলা পথ।

বর্ষার মৌসুমে এখানে আসলে দেখতে পাওয়া যায় জলে নিশ্চুপ হয়ে গা ডুবিয়ে থাকা বনের ছোটবড় গাছগুলো। ছোট্ট ডিঙি নৌকায় চড়ে ভাসতে ভাসতে দেখা যায় নতুন সাজে সজ্জিত প্রকৃতির রূপ। তবে বনে ভ্রমণ করতে অনুমতি নিতে হয় রাতারগুল বন বিট অফিস থেকে।

বর্ষায় গাছের ডালে দেখা মিলে নানান প্রজাতির পাখি আবার তখন অনেক বন্যপ্রাণিও আশ্রয় নেয় গাছের ডালে। এছাড়াও শীতকালে এখানকার জলাশয়ে বসে হাজারো অতিথি পাখির মেলা। তারা দূর দূরান্ত থেকে কিচির মিচির শব্দে হাজির হয় এখানে।

বর্ষায় যায়গাটা যতই তার মিঠা পানি আর সবুজের মোহে আকৃষ্ট করুক না কেন? শীতে সেই - ই আপনাকে এক ভয়ানক নির্মমতায় দূরে ঠেলবে। শীতে প্রায় শুকিয়ে যায় রাতারগুল। তখন কেবল পানি থাকে বনের ভেতরে খনন করা বড় জলাশয়গুলোতে।

ওপরে সাদা আকাশ। নিচে বনের আঁকাবাঁকা পথে হেটে চলেছে কয়েক তরুণ - তরুণী। পায়ের নিচে পরা সুকনো পাতার মর্মর শব্দে সবার পায়েই এক অদৃশ্য শেকলের বন্ধন দৃঢ় করছে যেন। তারা এখানে পৌছাতে সকাল পার করে ফেলছে। মাথার উপর থাকা সূর্যটা গাছের ডালের ফাক দিয়ে উকিঝুকি দিচ্ছে। বর্ষায় আসলে তারা এখন ছোট্ট ডিঙি নৌকায় চড়ে ভেসে বেড়াতো।

🍁

আরও তিনদিন সিলেট থেকে বিছানাকান্দিসহ আরও কয়েক যায়গায় ঘুরে আজ সকালে রওনা দিয়েছে বাসায় ফেরার পথে। সাতদিনের জন্য এসেছিল সিলেটের বুকে। অদৃশ্য এক মায়ায় পরে গিয়েছে সবাই সিলেটের প্রতি। এক অদ্ভুদ সৌন্দর্যে ঘেরা শহরটা। বাসায় ফেরার পথে সবাই কিন্তু পিছুটানটা যেন থেকেই গেলো। .

  • চলবে........
1
$
User's avatar
@Mdemon456 posted 4 years ago

Comments