বৃষ্টি_এসো_সাঁঝের_বেলা

৬_৭_৮ষ্ঠ_পর্ব

বেখেয়ালি_হিমু

' ' ' নিতুল দরজা খুলে সামনে দেখে তার পাতানো বোন মিটি মিটি করে হাসছে।নিতুল রাগে চোখ মুখ লাল লাল করে বললো,'বিন্দু কী হলো তোর? দরজায় নক করলি কেন?কী সমস্যা?' বিন্দু বললো,'কোন সমস্যা নাই। আমার মন চাইলো তাই নক করলাম। তোকে কী আমি বলেছি দরজা খুলার জন্য? তুই খুললি কেন দরজা?' 'ফাজলামু করছিস বিন্দু। এর ফল ভালো হবে না বলছি।' বিন্দু হি হি করে হেসে উঠে বললো,ফাজলামু করার ফল কতটুকু খারাপ হবে?' নিতুল কোন কথা বললো না।সে বিন্দুর মুখের উপর ঠাস করে দরজা আটকে দিলো।ও পাশ থেকে বিন্দু কী একটা যেন বললো তা আমি শুনতে পাইনি। কিন্তু ওর এমন আচরণ আমার মোটেও পছন্দ হয়নি।বাসর রাতে ভাইকে তার পাতানো বোন এসে ডিস্টার্ব করবে , কেমন কাঁটা কাঁটা কথা বলবে আর তা দেখে এবং শুনে আমি স্বাভাবিক ভাববো তা তো হতে পারে না। এখানে তো কিছু একটা আছেই। নয়তো তার অত অত বন্ধু- বান্ধবী থাকতে এই একটা মেয়ে যে কি না নিতুলের পাতানো বোন সে এসে এমন উদ্ভট আচরণ করবে কেন! আমি মন খারাপ করে বিছানা থেকে উঠে বসে আছি।নিতুল এসে টেবিল থেকে জগ নিয়ে গ্লাসে পানি ঢাললো। তারপর সেই পানি খেয়ে আমার কাছে এসে বললো,'মুডটাই নষ্ট করে দিলো।যাঃ শালা!' আমি বললাম,'ও আসছিলো কেন?' 'বিন্দুর মাথায় প্রবলেম আছে। মাঝেমধ্যে সে এমন অদ্ভুত আচরণ করে।' 'তাই বলে একজনের বাসর রাতে তাদের স্বামী স্ত্রীর একান্ত মুহূর্তে এসে এমন করবে!' 'আচ্ছা বাদ দেও তো এসব। পাগল ছাগল নিয়ে আলোচনা করতে ভালো লাগছে না আমার। এমনিতেই রাত শেষ!' তারপর আবার ঘরটা অন্ধকার হলো।নিতুল আমায় কাছে টেনে নিতে নিতে বললো,'আই লাভ ইউ পৃথু । তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ফুল।' আমি ওর প্রশংসা কিংবা শারীরিক আহ্বানে তেমন একটা সাড়া দিতে পারলাম না ‌। নিজেকে কেন জানি হঠাৎ খেলনা মনে হচ্ছে আমার। কেন জানি মনে হচ্ছে আমাকে নিয়ে কেউ খেলছে। নিষ্ঠুর ভাবে খেলছে। নিতুল আমার শরীর থেকে তার সুখ কুড়িয়ে নিচ্ছে তিল তিল করে। কিন্তু আমি মোটেও ওসবের দিকে মনোযোগ দিতে পারছি না। আমার কেবল মনে পড়ছে এই পৃথিবীতে আমি শুধুই একা একজন। আমি একজন অনাথ। আমি একজন মেয়ে। আমার কোন শক্তি নেই। আমি হাত পা বাঁধা অবস্থায় আছি। আমার ইচ্ছের কোন মূল্য নেই। এখন এই মুহূর্তে আমি যদি বলি,'নিতুল, আমার মন ভীষণ খারাপ। আমার এসব ভালো লাগছে না। প্লিজ একটু একা থাকতে দাও না আমায়!' তবে কী আমায় নিতুল আমায় ছেড়ে দিবে? কিছুতেই না।সে তার শারীরিক সুখ অর্জন করেই আমায় মুক্তি দিবে।এর আগে নয়। আচ্ছা এর নামই কী তবে ভালোবাসা? ভালোবাসা কী শরীরের ভেতর বেড়ে উঠা গোপন কিছু স্হানের নাম শুধু?

৯ পর্বের জন্য নেক্সট কমেন্ট না করে আইডিটা ফলোয়ান বা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়ে রাখলে আমি পোস্ট করার সাথে সাথেই আপনাদের কাছে চলে যাবে

আমার চোখ ফেটে কোল কোল করে জল নামছে।নিতুল সেই জল দেখছে না।সে আছে তার খেয়াল নিয়ে।তার সুখের নেশায়! ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। কিন্তু কাঁদতে পারছি না আমি। কিছুতেই কাঁদতে পারছি না। আচ্ছা আমার এমন হচ্ছে কেন? আজ সন্ধ্যা বেলায়ও তো নিতুলের সব অপরাধ ক্ষমা করে তাকে আমি বর হিসেবেই গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু এখন? নাকি এখানে কিছু একটা আছে? কিছু একটা না থাকলে আমার এমন লাগবে কেন? নিতুলের ঠোঁটের স্পর্শ এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে যেন কোন গোখরার ধ্বংসন।ওর নখের আঁচড় মনে হচ্ছে কোন কাঁটার আঘাত। ওর শরীরের ভার আমার কাছে অসহ‍্য লাগছে। মনে হচ্ছে আমার শরীরের হাড়গুলো এই এখন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে! আমি ওর কাছ থেকে মুক্তি পেতে কেমন বেকুল হয়ে উঠেছি। ঠিক তখন আবার দরজায় কেউ কড়া নাড়লো। ঠক ঠক ঠক।এটা নিশ্চয় বিন্দু। বিন্দু এসেছে আবার। কেন?কী চায় ও নিতুলের কাছে? নিতুল কিন্তু এবার দরজার কড়া নাড়া শুনে উঠে গেল না সঙ্গে সঙ্গে।সে গেল খানিক পরে। যখন তার শরীর ঝিমিয়ে এলো। যখন আজকের মতো আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল তার কাছে তখন। তারপর আমার সাথে আর একটি কথাও না বলে সে ছুটে গেল দরজার পাশে। তারপর দরজার খিল খুলে দিয়ে বললো,'আবার এসেছিস।' বিন্দু হি হি করে হেসে উঠলো। আমি তাকিয়ে দেখলাম ওর হাসিটা ভীষণ ভয়ংকর। তারপর বিন্দু তার আচল দিয়ে নিতুলের মুখটা মুছে দিতে দিতে বললো,'ইশ! কীভাবে ঘেমেছে।বৌটা আদর করতেও জানে না।' নিতুল বললো,'এসব করছিস কেন তুই? মাথায় আবার ভূত চেপেছে?' বিন্দু হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো হঠাৎ। কাঁদতে কাঁদতে সে এলিয়ে পড়লো নিতুলের উপর। নিতুল বৃষ্টি_এসো_সাঁঝের_বেলা

৭ম_পর্ব

বেখেয়ালি_হিমু

' ' ' নিতুল আগলে নিলো নিজের বুকের উপর বিন্দুকে। তারপর শান্তনা দেবার গলায় বললো,'কী হয়েছে তোর? শরীর খারাপ লাগছে বিন্দু?' বিন্দু তার ভেজা গলায় বললো,'উহু!' 'তাহলে?মাথাটা কেমন করছে না?' 'না। মনটা কেমন করছে রে নিতুল। আমি না হঠাৎ করে মরে টরে যাবো দেখবি।' 'চুপ। একদম চুপ।জীবনেও এসব বলবি না আর।' নিতুল বিন্দুর মুখে হাত চেপে ধরলো। তারপর বললো,'আয়। তোকে শুইয়ে দিয়ে আসি।' আমি শুধু তাকিয়ে দেখলাম।নিতুলের কাঁধে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হাঁটছে বিন্দু।আর নিতুল তার কাঁধের উপর হাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে তার সাথে। হতে পারে ওরা পাতানো ভাইবোন। কিন্তু আমার কাছে এই দৃশ্যটা বড় ভয়ানক দেখালো। আমার ভেতরটা কেমন জমে উঠলো মুহুর্তে।ধোকপোক করে বাজতে লাগলো হৃৎপিণ্ড। কেন জানি আমার মাথায় তখন বারবার একটা বিষয় এসে ঘুরপাক খাচ্ছিল। আমার কেবল বারবার মনে হচ্ছিলো সামনে আমার মস্ত বিপদ। এই বিপদ থেকে আমি কিছুতেই বাঁচতে পারবো না। কিছুতেই না। ' নিতুল ফিরলো খানিক পর। তাকে কেমন চিন্তাশীল দেখাচ্ছিলো।সে আমার কাছে মৃদু হেসে স্বাভাবিক হওয়ার ভান করছে। আমি কোন কথা বললাম না। প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে ও পাশ ফিরে শুয়ে থাকলাম। নিতুল এসে আমার পাশে শুতে শুতে বলল,'ওর মাথার সমস‍্যাটা হঠাৎ বেড়ে গেছে। যা তা বকছে এখন। খুব কষ্টে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছি।' আমার কেন জানি জানতে ইচ্ছে করলো বিন্দুর বিষয়ে। কিন্তু আমি কিছুই জিজ্ঞেস করলাম না। ' নিতুল একটা সিগারেট ধরালো। সেই সিগারেটের ধোঁয়ায় ঘর মোহিত হয়ে গেল।কী বাজে এই সিগারেটের গন্ধ! আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমার খুব ইচ্ছে করছে ওকে বলি,নিতুল সিগারেটটা বাইরে গিয়ে ধরালে হতো না? কিন্তু সাহস হলো না। নিতুল বললো,'পৃথু,একটু ঘুমিয়ে নেই আমরা কেমন!' বলে জ্বলন্ত সিগারেট হাতেই চোখ দুটো বুঁজে ফেললো নিতুল।আর তার সিগারেট ধরা হাতটা তাল হারিয়ে আমার গালের উপর পড়ে গিয়ে গালের খানিক অংশ পুড়ে গেল। ব‍্যাথায় আমার কঁকিয়ে উঠার কথা ছিল। কিন্তু আমি এমন কিছুই করলাম না। চুপচাপ দু চোখের পাতা এক করলাম। তারপর দেখলাম ভয়ানক এক স্বপ্ন। বিন্দুর সাথে শুয়ে আছে নিতুল। ওদের দুজনের গায়ে একটা সুতো পর্যন্ত নেই।বিন্দু নিতুলের চুলে তার আঙুল দিয়ে চিড়ুনি কেটে দিতে দিতে বলছে,'বলতো আমি বেশি সুন্দর না পৃথু?' নিতুল বললো,'তুই।' 'আচ্ছা তুই কাকে সত‍্যিকার ভালোবাসিস? আমায় না পৃথুকে?' 'তোকে।' আমায় যদি ভালো বাসিস তবে পৃথুকে বিয়ে করলি কেন?' নিতুল খিলখিল করে হেসে উঠলো। বিন্দু এবার বললো,'দাঁড়া তোর হাসি আমি ছুটাচ্ছি!' বলে সে নিতুলের ঠোঁটে এমন কামড় বসালো! নিতুল একেবারে কেঁদে উঠলো। ঠিক ওই সময় আমার ঘুমটা ভেঙে গেল।ঘুম ভাঙতেই শোনা গেল দূরের মসজিদ থেকে ভেসে আসা বুড়ো মোয়াজ্জিনের শীর্ণ গলার আহ্বান। তিনি বলছেন ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম। আমার তখন খুব ইচ্ছে হচ্ছে নিতুলকে নিয়ে পবিত্র হয়ে ফজরের নামাজ আদায় করতে।আর ওদিকে স্বপ্নের বিষয়টাও গেঁথে গেছে হৃদয়ে। আমি মনে মনে বললাম,কিছু তো একটা আছে। কিন্তু সেই কিছুটা কী? সে যাইহোক। আগে নামাজটা পড়ে নেই নিতুলকে নিয়ে।সুইচ টিপে লাইট জ্বালাতেই চমকে উঠলাম আমি। এই ছোট বেলা থেকেই তো ওদের বাড়িতে থাকি আমি। কিন্তু কোনদিন খেয়াল করে দেখা হয়নি তার বুকখানি।ফর্সা বুকের উপর ঘন কালো লোমগুলো এতো সুন্দর লাগে! আমি ওর কাছে গেলাম আরো।ওর চোখ দুটো অত মায়াবী! এমন মায়াবী চোখের একটা মানুষের ভেতরে এতো রহস্য কেন? আচ্ছা নিতুল কী সত‍্যিই কোন ঠগ?সে কী আমায় ধোঁকা দিচ্ছে! আমি নিতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,'নিতুল, এই নিতুল, আজান হয়েছে আসো আমরা পবিত্র হয়ে নামাজ পড়ি!' নিতুল ঘুম জড়ানো গলায় বললো,'আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। তুমি পড়ো।' আরেকবার ডাকতে চেয়েও ডাকলাম না তাকে। শেষে সে যদি রেগে যায়! কী আর করা। নামাজ নিয়ে তো আর জোর জবরদস্তি করা যাবে না। আমি একাই পবিত্র হয়ে নামাজ আদায় করে নিলাম। তারপর জায়নামাজের উপর বসে খোদার দরবারে দু হাত তুলে বললাম,'হে মাবুদ।মাবুদগো,বড় অপরাধী গো আমি মাবুদ।শত অপরাধের পরেও তুমি তো তোমার সৃষ্টিকে ক্ষমা করো।আমায় কী তবে ক্ষমা করা যায় না? সেই ছোট বেলা থেকেই তো জ্বলছি। মাবুদ, আমার ভেতরটা পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে।আমায় একটু ভালো ভাবে বাঁচতে দাও মাবুদ।আমি একটু ভালো করে বাঁচতে চাই!' আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে গড়িয়ে পড়লো জল। সেই জল হাতের আঙুলের মাথায় তুলে নিয়ে চোখের সামনে ধরে বিরবির করে আমি বললাম, ' চোখের জলের নাম রেখেছো কান্না শোকটা শুধু একাই আমার,তার না। ' ' সকাল বেলা নিতুলকে ঘুমে রেখেই আমি বাগানের কাছে গিয়ে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম।বাগানে কত রকমের যে ফুল ফুটে আছে! সেইসব ফুল দেখে মনটা আরো বিষাদ হয়ে গেল। রাতে বাড়ি ভর্তি মানুষ ছিল। এখন বাড়িটা কেমন শূন্য খাঁ খাঁ।ওরা সবাই কী তবে চলে গেছে? বিন্দু আছে। ওকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছে নিতুল। আচ্ছা বিন্দুর সাথে নিতুলের অত কী? ' বাগানে ভালো লাগছে না বলে ফের ঘরে ফিরে এলাম। ঘরে ফিরে দেখি নিতুল বিভোর হয়ে ঘুমোচ্ছে। ঘুমিয়ে থাকা নিতুলকে দেখলে এতো মায়া হয় কেন?কাল যে নিতুলের প্রতি এতো ক্ষোভ,রাগ ছিল সেই নিতুলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অন‍্য একটা মেয়ে হাঁটলে আমার ভেতর পুড়তে থাকে কেন? নাকি এর নামই ভালোবাসা। ভালোবাসা কী না চাইলেও আপনা আপনি হয়ে যায়! আমার খুব ইচ্ছে করছে নিতুলকে আমার জ্বলতে থাকা বুকটায় ধরে এক করে ফেলতে। ইচ্ছে করছে কান্নায় কাঁপতে থাকা ঠোঁট দুটোকে ওর থেমে থাকা ঠোঁট দুটোর ভেতর আবদ্ধ করে রাখতে।চোখ থেকে টপটপ করে ঝরতে থাকা জলে ওর বুকের রূমকূপ ভিজিয়ে চুপসে দিতে। তারপর চিৎকার করে বলতে,'নিতুল, এখন তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নাই। তুমি আমায় ঠকিয়ো না নিতুল। তুমি আমায় ঠকালে মৃত্যু ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না আমার।' আমি আস্তে আস্তে ওর কাছে বসলাম। তারপর ওর একটা হাত---- '

চলবে

বৃষ্টি_এসো_সাঁঝের_বেলা

৮ম_পর্ব

বেখেয়ালি_হিমু

' ' ' তারপর নিতুলের একটা হাত ধরে ওর কাছাকাছি গিয়েছি আমি।নিতুলের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ গুলো আমার ভেতর আন্দোলিত হচ্ছে খুব করে। এবার আমি তার ঠোঁটের কাছাকাছি হলাম। ঠিক তখন পেছন থেকে কারোর গলা শুনে চমকে উঠলাম আমি। বিন্দু। সে এসে ডাকছে নিতুলকে। 'নিতুল, এই নিতুল?' আমি লজ্জায় এবং রাগে ছিটকে পড়লাম গিয়ে দূরে। তারপর মাথা নত করে বসে রইলাম। বিন্দু এবার নিতুলের কাছে এসে বসলো। তারপর নিতুলের চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে সে ডাকলো,'নিতুল, এই নিতুল?' নিতুল ঘুম ঘুম চোখে ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো,'ঘুম হয়েছে তোর?' 'হুম।' 'এখন শরীরটা একটু ভালো লাগছে তাই না?' 'না মোটেও ভালো লাগছে না!' 'কেন?' 'নিতুল, আমার কেমন জানি একটা ভয় ভয় করছে বুঝলে! আমার না পেটের ভেতর--' নিতুল ধড়পড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে বিন্দুর মুখে চেপে ধরলো। তারপর বললো,'গাধা।' বিন্দু কেমন করে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে সে বললো,'নিতুল, আমার না সব লজ্জা শরম উবে গেছে বুঝলে। আমার এখন ইচ্ছে করে সব লোকের কাছে বলে বেড়াতে এসবকিছু!' নিতুল ওকে একটানে দাঁড় করিয়ে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো ঘরের বাইরে। আমি অদ্ভুত চোখে শুধু তাকিয়ে দেখলাম দৃশ‍্যটি। শেষে কি না আমার সন্দেহ ঠিক হতে চলেছে! আমার সব ভয় ডর কেমন কেটে যাচ্ছে হঠাৎ। আমার এখন শুধু মনে হচ্ছে যে করেই হোক পৃথিবীতে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে। নিজেকে কিছুতেই দূর্বল করা চলবে না। ওরা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে আমিও ওদের পেছন পেছন ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। তারপর সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম যখন ওরা দুজন একটা ঘরে ঢুকে ভেতর থেকে দরজাটা আটকে দিলো। আমি খুব দ্রুত হেঁটে সেই দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। ভেতর থেকে তখন ওদের যে কথাবার্তা গুলো শুনতে পেলাম তাতে আমার পিলে চমকে গেছে।মাথা ভণভণ করে ঘুরে উঠেছে। আমি তখন আর নিজের পায়ের নিচে কোন মাটি খুঁজে পাচ্ছি না। নিতুল ওকে বলছে,'তোর কী আক্কেল জ্ঞান বলতে কিছু নাই নাকি রে? এইসব কথা কী কারোর সামনে বলতে আছে!' বিন্দু হি হি করে হেসে উঠে বললো,'বলতে নেই কেন? আমি সবার কাছেই বলবো।এক এক করে সকলকে জানিয়ে দেবো।' নিতুল মনে হয় ওর গাল খসে চড় বসিয়েছে। বাইরে থেকে সেই আওয়াজ স্পষ্ট শুনা গেছে। বিন্দু হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছে। কেঁদে কেঁদে তখন সে বলছে,'নিতুল, আমার সব শেষ হয়ে গেছে রে! আমার পেটের বাচ্চাটার কী হবে বল তো?ও কী জারজ হবে?ও যদি কোনদিন জিজ্ঞেস করে আমার পিতা কে? তখন?' 'অ‍্যাবরেশন করে ফেল। আমি তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।' 'কী! আমার সন্তানকে আমি ডাক্তার দিয়ে খুন করাবো?নিতুল, এই নিতুলের বাচ্চা? তুই আমার সন্তানটাকে মেরে ফেলার কথা বলস?' নিতুল ওকে তখন ধমক দিয়ে বললো,'আস্তে।পৃথু শুনতে পাবে।' এমন কথাবার্তা শুনার পর বুঝতে আর কী বাকী থাকে যে ওদের দুজনের সম্পর্ক টা আসলে কী? কিন্তু আমি কিছুতেই এটা মানতে পারছিলাম না।নিতুল আমায় বিয়ের আগে জোর করে আমার শরীর ছুঁয়েছে,জোর করে বিয়েও করেছে এরপরেও তাকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছিলাম এই ভেবে যে সে তো আমায় ভালোবাসে।আমায় জীবন সাথী করে পেতেই তো এসব করেছে। কিন্তু এখন যা শুনলাম! এখন আমি কী করবো? কোথায় যাবো? কার কাছে যাবো?

'

চলবে

2
$
User's avatar
@Mdemon456 posted 3 years ago

Comments