ভালোবাসার_পতিতাপল্লি।
পর্ব_৪র্থ
কিন্তু হুট করে একজনকে ভালো লাগতে শুরু করেছে।"
-" অামাকে?"
-" মনে হয়।"
-" ভালো লাগার মানুষটা নিঃসন্দেহে অামি। সেটা তোমার মুখ দেখেই বুঝা যায়। এবং সেটা অামি গতরাতেই টের পেয়েছি যখন তুমি অামাকে বলেছো অামার হাত ধরে তুমি ঘুমাতে চাও ।কারও হাত ধরে ঘুমানোর অর্থ জানো? অর্থটা হচ্ছে পাশের মানুষের মধ্যে তুমি নির্ভরতা খুঁজে পাচ্ছো।
কথা বলতে বলতে রান্না শেষ হইয়ে গেল। সোহান মায়ার প্লেটে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। খুব সুন্দর ঘ্রান বেরোচ্ছে খাবার থেকে।
-" মায়া, নাও শুরু করো।"
-" অাপনি খাবেন না?"
-" হ্যা খাবো তো। এই যে অামার প্লেটে খাবার বাড়ছি।"
প্রথম লোকমা মুখে তুলেই তিন চার সেকেন্ড থমকে ছিলো মায়া।
-" কি ব্যাপার? খাবার মুখে নিয়ে বসে অাছো কেনো?"
-" অসম্ভব ভালো হয়েছে।"
-" তোমাকে বলেছিলাম না অামি একটা মেয়ে মানুষের চেয়েও বেশি ভালো রাঁধতে পারি।"
-" হুম তাই তাো দেখছি।"
-" নেক্সট উইক তুমি রান্না করে খাওয়াবে। অামি যাস্ট তোমাকে এটা সেটা এগিয়ে দিয়ে হেল্প করবো। কিন্তু রেসিপিটি বলবো না।"
-" ঠিকাছে।"
-" কাল থেকে প্রতিদিন তোমাকে একটা দুটা করে রান্না শিখাবো। "
-" অাপনি ব্যস্ত মানুষ। অাপনার কি সময় হবে রান্না শিখানোর?"
-" এসব অামি তোমার জন্য না যতটুকু করছি তারচেয়ে বেশি করছি অামার নিজের জন্য। অামি মানুষটা খুব একা। তোমার সাথে সময় কাটাতে পারলে অামার ভালো লাগবে।"
এতদিন মায়ার ধারনা ছিলো টাকা থাকলেই বুঝি সব সুখ পায়ের কাছে পড়ে থাকে। ধারনাটা পুরোপুরি ভুল। টাকা থাকলেও মানুষের মনে কষ্টথাকে। একাকিত্বের কষ্ট টাকায় ঘুঁচে না।
-" অাপনার তো এত টাকা। তবু অাপনি একা কেনো? পয়সাওয়ালা লোকের পিছনে তো মেয়েদের লাইন লেগে থাকে।"
-" সমস্যাটা তো সেখানেই মায়া। সব টাকার পিছনে ছুটে। অামার পিছনে ছুটে না। টাকা অাছে তো অামার অস্তিত্ব অাছে, টাকা নেই তো অামার অস্তিত্বও নেই। মন থেকে কেউ কাছে টানে না। একটাবার কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে না, সোহান তুই ভালো অাছিস তো?"
কষ্ট হচ্ছে সোহানের জন্য। এত টাকা থেকে লাভ কি যদি না কেউ সুখের দেখা না পায়?
কিছুক্ষন অাগে কাজলের সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখেছে। মেয়ে হয়েছে তার। রুমে বসে থাকা দাই বাদে বাকি সবার মুখ কালো। মেয়ের অাশা তারা কেউ করেনি। বিউটি কুসুমকে নিয়ে বুদ্ধি বের করছে কিভাবে এই বাচ্চাকে এখান থেকে সরানো যায়। দাইকে না হয় টাকা পয়সা খাইয়ে মুখ বন্ধ করানো যাবে। কিন্তু ফখরুল? ওকে কি করবে? ও তো ঘরের বাইরে পায়চারি করছে। মেয়ের ছোট অাঙুলগুলো ধরে কাঁদছে কাজল। মেয়ে হওয়ার কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো? এখান থেকে বাচ্চাটাকে বের করার কোনো উপায় নেই। কাজল চায়না ফের এই পতিতাপল্লিতে কোনো মায়া অথবা কুসুম অথবা চুমকি তৈরী হোক। এই মেয়েগুলো জন্মসূত্রে পতিতা। অারও এমন অনেক অাছে এখানে যারা জন্মসূত্রে এই ব্যবসায়ী। কাজল দেখেছে তাদের মায়েদের চাপা কান্না যখন তাদের মেয়েদের ঐ লোকগুলোর হাতে একা রুমে তুলে দেয়া হতো। সবচেয়ে কম বয়সে কাজে লাগানো হয়েছিলো কুসুমকে। মাত্র বারো বছর ছিলো মেয়েটার। অাটাশ বছর বয়সী কোনো এক যুবকের তৃষ্ঞা মেটাতে তাকে পাঠানো হয়েছিলো এই বাড়ির পূর্ব দিকের ঘরটাতে। ঘরের ভিতর চিৎকার করছিলো কুসুম অার বাহিরে ওর মা। ওদের চিৎকারে চারপাশ ভারী হয়ে যাচ্ছিলো। অতটুকুন মেয়ে, যার বয়স ছিলো দুই বেনি করে বাড়ির উঠানে খেলার, সেই মেয়েকে পাঠানো হয়েছিলো কোনো এক দানবের ভোগের বস্তু হওয়ার জন্য। হ্যা দানব, সেই অাটাশ বছরের যুবকটাকে সেদিন কুসুমের কাছে দানব ছাড়া অার কিছুই মনে হয়নি। মানুষ খেঁকো দানব। না, মানুষ খেঁকো না শরীর খেঁকো দানব। টানা চার ঘন্টা কুসুমের উপর দিয়ে কোন তুফান গিয়েছিলো সেটা মনে হলে কুসুম এখনও ঘোরের মাঝে লাফিয়ে উঠে। মায়ারও একই হাল হয়েছিলো। তবে ওর বয়সটা একটু বাড়তি ছিলো যখন ওকে ধান্দায় নামানো হয়। সম্ভবত চৌদ্দ কি সাড়ে চৌদ্দ ।ওকে এক প্রকার টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো কাস্টমারের কাছে। কাজলের মেয়েরও একদিন এমন পরিস্থিতি অাসবে, কুসুমের মায়ের মতো তাকেও একদিন মেয়ের রুমের বাইরে বসে তার বাচ্চার অার্তচিৎকার শুনতে হবে। এসব সহ্য করার মতো ক্ষমতা তার নেই। খাটের পাশে থাকা ড্রেসিং টেবিলটার উপর ধারালো ব্লেড চিকচিক করছে। কিছুক্ষন অাগেই এই ব্লেডটা দিয়ে নাড়ি কেটে অালাদা করা হয়েছে ওর সন্তানকে। খুব ধীরে ধীরে উঠে বসলো কাজল। দাই, বিউটি অার কুসুম মিলে খুব ধীর অাওয়াজে কি যেনো বলা বলি করছে। টেবিলের উপর থেকে ব্লেডটা হাতেনিলো কাজল। খুব অাস্তে করে মেয়ের গলায় ব্লেডটা দিয়ে শুধু একটা অাঁচড় কাটলো। যে ব্লেড দিয়ে নাড়ি কাটা হয়েছিলো সেটা দিয়েই নিজ সন্তানের গলার রগ কাটলো কাজল। বাচ্চাটা জোরে একটা চিৎকার দিয়ে থেমে গেলো। অার কোনো অাওয়াজ তার গলা থেকে অাসছে না। কিছুটা ছটফট করছে সে। কচি হাত পা গুলো এদিক সেদিক ছড়াচ্ছে। একটা পর্যায়ে চার হাত পা লম্বা করে টেনে নিঃশ্বাসটা পুরোপুরি ছেড়ে দিলো বাচ্চাটা। এতক্ষন বাকি তিনজন চোখ বড় করে বাচ্চাটার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। বাচ্চার চিৎকার শুনে তিনজনই তাকিয়ে ছিলো বাচ্চার দিকে। তাকিয়ে দেখে কাজলের হাতে রক্তমাখা ব্লেড অার বাচ্চার গলায় রক্ত। ঘটনা চোখের সামনে একদম স্পষ্ট ছিলো তবু তাদের কাছে অস্পষ্ট লাগছিলো। সামনে এগিয়ে মৃত্যুপথযাত্রী এক শিশুকে অাগলে নিতে সাহস হচ্ছিলো না তাদের। নিঃশ্বাস ত্যাগের পর ঘোর কাটলো কুসুমের। কাজলের মুখে মাথায় এলোপাথারি চড় থাপ্পর দিচ্ছে সে।
-" * কি করলি তুই এইডা? ঐ মারলি কেন মাইয়্যাডারে তুই?"
-" মইরা গিয়া বাঁইচা গেছে অামার মাইয়্যা। অামাগো মতো পইচা মরতে হইবো না ওর।"
কাজলের চোখেমুখে বিন্দুমাত্র কষ্টের ছোঁয়া নেই। ওর চেহার স্বস্তির শান্তি দেখা যাচ্ছে।
রাতে ঘুমানোর অাগে কফি খাওয়ার অভ্যাস অাছে সোহানের। গরম কফির মগে চুমুক দিচ্ছে অার টিভি দেখছে। মায়া নিজেকে প্রস্তুত করছে সোহানের জন্য। মানুষটা এখন পর্যন্ত ওর গায়ে হাত দেয়নি। হতে পারে অসুস্থ ছিলো তাই। অাজ নিশ্চয়ই ওকে বসিয়ে রাখবে না তার অধিকারটা চাইতে অাসবে নিশ্চয়ই। ইতিমধ্যে জোনাকিকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয়া হয়ে গেছে। অার ওরপিছনে অনেক টাকাই খরচ করেছে সোহান টাকাগুলোতো এমনি এমনি অার খরচ করেনি। এগুলো তো সে অবশ্যই উসুল করবে। খানিকটা সেজেগুজে সোহানের পাশে যেয়ে বসলো মায়া। ওর দিকে একনজর দেখেই পরক্ষনে মুখ ফিরিয়ে টিভির স্ক্রিনে নিয়ে গেলো সোহান। টিভিরদিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো,
-" ফুল প্রিপারেশন নিয়ে এসেছো মনে হচ্ছে।"
-" ..............."
-" দেখো, হুট করেই কারো গায়ে হাত দেয়াটা অামার পছন্দ না। এখানে এসেছো। কিছুদিন থাকো। দুজন দুজনকে বুঝি এরপর নাহয় দেখা যাবে।"
-" অাপনি তো অনেকগুলো টাকা দিয়ে এসেছেন।"
-" তো?"
-" টাকা উসুল করবেন না?"
-" দেখো অামি কিন্তু তোমাকে এখানে শুধু ফিজিক্যাল রিলেশনের জন্য অানিনি। তোমাকে এখানে অানার মূলউদ্দেশ্য হচ্ছে একাকিত্বটা দূর করা। অামার টাকা উসুল করা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। অামার টাকা কিভাবে উসুল করবো সেটা অামারটা অামি বুঝবো।"
সোহানকে যত দেখছে তত মায়ার বিস্ময়ের মাত্রা বেড়েই যাচ্ছে। এমন মানুষও অাছে নাকি দুনিয়ায়? একটা যুবতি মেয়ে হাতের কাছে এসে ধরা দিচ্ছে অার সে কি না বলছে হুট করে কারো গায়ে হাত দেয়া তার পছন্দ না? সোহানকে বিরল প্রজাতির প্রানী মনে হচ্ছে মায়ার।
-" অামার সাথে একটু কথা বলবে মায়া?"
সোফায় পা উঠিয়ে বসতে বসতে হাসিমাখা মুখে মায়া বললো,
-" অবশ্যই বলবো। একটু কেনো? অনেক অনেক কথা বলবো।"
-" অাঠারো বছর অাগের ঘটনা। অামার রেজাল্ট দিয়েছিলো সেদিন। ফাইনাল এক্সামের রেজাল্ট। ফার্স্ট হয়েছিলাম। অাম্মুকে বলেছিলাম, অামি ফার্স্ট হয়েছি। অামি চিকেন ফ্রাই খাবো। অামাকে চিকেন ফ্রাই করে দাও। অাম্মু বললো চলো তোমাকে বাহির থেকে খাইয়ে নিয়ে অাসি। অামি বললাম, তোমার হাতেরটা খাবো। দোকানেরটা খাবো না। অাম্মু উত্তরে কি বলেছিলো জানো?"
-" কি?"
-" মুরগীতে মসলা মাখাতে গেলে হাতে মসলার দাগ বসে যাবে। মসলার বাজে স্মেল অাসবে হাত থেকে। অহেতুক হাতের চামড়া নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। অামি পাল্টা অারকিছু বলিনি। অাসলে বলার কিছুই ছিলো না। জোর করে তো অার কারো কাছ থেকে ভালোবাসা অাদায় করা যায় না। তাই অামিও অার জোর করিনি। যে ভালোবাসার সে এমনিতেই বাসবে। সোজা ফ্রিজ থেকে মুরগি নামিয়ে মসলা মেখে নিজেই ফ্রাই করেছি। তখন তো রান্না সম্পর্কে বিশেষ অাইডিয়া ছিলো না। ঘরে যত ধরনের মসলা ছিলো সবগুলো থেকে একটু একটু করে দিয়েছি। বানিয়ে এনে সবার অাগে অাম্মুকে দিয়েছি। অাম্মুকিছুক্ষন মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো।অামি বললাম, খেয়ে দেখো। মুখে নিয়ে বললো খুব ভালো হয়েছে। তখনঅামি বললাম, নাও এই সবগুলো চিকেন ফ্রাই তোমার। মসলার স্মেল অামার হাতেও লেগে অাছে । এই দেখো হাতে হলুদের দাগ ভরে গেছে। কিন্তু অামি তোমার মতো নাক ছিটকাচ্ছি না। অার কখনো তোমাকে বলবো না অামাকে কিছু বানিয়ে খাওয়াও । এখন থেকে নিজেরটা নিজেই বানিয়ে খাবো। তোমার কিছু খেতে ইচ্ছে হলে অামাকে বলো। অামি তোমাকে বানিয়ে দিবো। এরপরদিনই যেয়ে রান্নার বই কিনে এনেছিলাম। প্রতিদিন কিছু না কিছু এক্সপেরিমেন্ট করতাম। কতবার যে হাত পুড়েছি তার কোনো হিসাব নেই।"
-" একদিন রেঁধে খাওয়ালে কি হতো? একদিনে কি অার চামড়া নষ্ট হয়?"
-" উহুম। অামার মা এক সেকেন্ডও চুলার পাশে যেতে রাজি না। সে খুব চামড়া সচেতন মানুষ। প্রতিমাসে কত হাজার টাকা যে পার্লারে খরচ করে অাল্লাহ ভালো জানে। সেই হিসাব বোধহয় অাম্মুর নিজেরও জানা নেই। অাচ্ছা তোমার কি মাথা ব্যাথা করছে?"
-" কিছুটা। অাপনি জানলেন কিভাবে?"
-" তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে। তুমি যাও গিয়ে ঘুমাও।
-" না একটু গল্প করি না প্লিজ। "
-" মাথাব্যাথা নিয়ে গল্প করার দরকার নেই। মাথাব্যাথা অারও বাড়বে।"
-" অামার ভালো লাগছে অাপনার সাথে গল্প করতে।"
-" অাচ্ছা তাহলে রুমে চলো। শুয়ে গল্প করবে"
মায়ার রুমে বিছানায়বসে অাছে সোহান। পাশে শুয়ে অাছে মায়া। সোহানের হাত ধরে রেখেছে সে। সোহান গল্প বলছে। অার খুব মন দিয়ে সেই গল্প মায়া শুনছে ।
খুব ভোরে ঘুম ভেঙেছে মায়ার। চোখ মেলে দেখে সোহানের পায়ের উপর ওমাথা রেখে শুয়ে অাছে। অার সোহান হেলান দিয়ে বসে ঘুমুচ্ছে। ঘুম ভাঙার পরও সেখান থেকে সরছিলো না মায়া। ভালো লাগছে এভাবে ওর পায়ের উপর মাথা রেখেশুয়ে থাকতে। গতরাতে গল্প করতে করতে কখন ও ঘুমিয়ে পড়েছে সেটা ওর নিজের জানা নেই। হয়তোবা সোহানও কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সোহানের মুখের দিকে তাকিয়ে অাছে মায়া। মানুষটা দেখতে সুন্দর। বিশেষ করে মাথার চুলগুলো। একদম সোজা চুল। একটুও কোঁকড়া না। মাথার চুলগুলো ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে মায়ার। ধরাটা কি উচিত হবে? সোহান গতকাল বলেছিলো হুট করে কারো গায়ে হাত দেয়াটা তার অপছন্দ। তাহলে নিশ্চয়ই এভাবে চুলে হাত দেয়াটাও সে পছন্দ করবে না। অার ও যে এভাবে শুয়ে অাছে এটা কি ঠিক হচ্ছে? বোধহয় না। সোহান ঘুম থেকে উঠে যদি দেখে মায়া এভাবে ওর পায়ের উপর শুয়ে অাছে তাহলে নিশ্চয়ই খারাপ ভাববে। নাহ এভাবে শুয়ে থাকাটা ঠিক হবে না। উঠে যাওয়াটাই ভালো হবে।
ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখে সোহান রুমে নেই। বোধহয় ঘুম থেকে উঠে চলে গেছে নিজের রুমে। ফুলগাছগুলোর কাছে গেলো মায়া। সাদা গোলাপের গাছটায় একটা নতুন কলি এসেছে। দু তিন দিন বাদেই বোধহয় ফুটবে কলিটা। গত পরশু থেকে একটা কথা মাথায় বারবার ঘুরছে। সেটা হচ্ছে সংসার। সংসার শুরু করতে হবে মায়াকে। অাচ্ছা সংসার কি?সংসার কেমন হয়? এ ব্যাপারে কিছুই জানে না মায়া। তবে নতুন এক অনুভুতির সাথে পরিচিত হচ্ছে সে। সংসার নামক অনুভূতি। গত পরশু থেকে অনুভূতিটা পাচ্ছে ও। অনুভূতিটা বড্ড অদ্ভুদ। ভয় এবং ভালোবাসার সংমিশ্রনে তৈরি অনুভূতি। তবে ভয়ের চেয়ে ভালোলাগার অনুভূতিটাই বেশি। অায়নার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে মায়া। সংসারি মেয়ে মানে গৃহিনীদের দেখতে কেমন দেখা যায়? গৃহিনীদের দেখলে চট করে লোকে বলে দিতে পারে মেয়েটা একজন গৃহিনী। নাকটা ফুটো করা নেই ।মায়ার হাতে চিকন একজোড়া চুড়িও নেই। গৃহিনী হতে গেলে তো নাকে ফুল অার হাত একজোড়া চুড়ি থাকতে হবে। লোকটা বলেছিলো অাজ থেকে যা কিছু প্রয়োজন সব ওর কাছে চাইতে। সোহানকে কি বলবে কিনে দিতে? বলাটা কি উচিত হবে? নাহ। সেসব বলা যাবে না। সোহান ওকে লোভি ভাবতে পারে।
-" অায়নায় নিজেকে খুঁটে খুঁটে কি দেখছো?"
পিছনে ফিরে তাকালো মায়া। দুহাতে দুটো মগ হাতে ঘরে ঢুকছে সোহান।
-" নাও তোমার লাল চা।"
হাত বাড়িয়ে মগটা নিতে নিতে খাটে বসলো মায়া। পাশেই পা ঝুলিয়ে বসেছে সোহান।
-" বললে না তো অায়নায় ওভাবে কি দেখছিলে?"
-" নাহ তেমন কিছু না।"
-" তোমাকে তো দেখলাম গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু ভাবছিলে অায়নায় তাকিয়ে? কিছু হয়েছে?"
-" না কিছু না।"
-" কিছু বলতে চাও অামাকে?
-" না না। কিছু না।"
-" বলতে চাচ্ছো না। ঠিকাছে। জোর করবো না। চা ভালো হয়েছে?"
-" হুম।"
-" কাল থেকে তুমি অামার জন্য কফি বানাবে। অার অাস্তে অাস্তে অামার সমস্ত ব্যাপারগুলো খেয়াল দেয়া শুরু করো। অামি অফিস যাওয়ার অাগে অামার কাপড় তুমি সিলেক্ট করবে। সারাদিনে কয়েকবার অামাকে ফোন দিয়ে অামার খোঁজ নিবে। ঘরের বাজার থেকে শুরু করে কারেন্ট বিল পর্যন্ত সমস্ত হিসাব তুমি দেখবে। ঘরে কখন কি রান্না হবে সেগুলো তোমার ফরমায়েশ অনুযায়ী হবে। ঘরে যদি নতুন কোনো ফার্নিচার প্রয়োজন মনে করো তাহলে অামাকে বলো অামি কিনে দিবো।"
-" অাচ্ছা।"
-" অাজকে অফিস যাবো না। তোমাকে নিয়ে স্কুলে যাবো তোমার এডমিশনের ব্যাপারে কথা বলতে। কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়েছিলে তুমি?"
-" এইট পর্যন্ত। নাইনে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু ক্লাস অার করতে পারিনি।
-" ঠিকাছে। ইংলিশে কেমন ছিলে তুমি?"
-" হুম ভা......."
কথাটা শেষ করার অাগেই ফোন বেজে উঠলো মায়ার। ফোনটা রিসিভ করলো মায়া। ওপাশ থেকে ফুপিয়ে কাঁদার শব্দ পাচ্ছে ও।
-" কাঁদো কেনো অাম্মা?"
-" কাজলের একটা মাইয়্যা হইছিলো গতকাল রাইতে। বড় হয়া ওরেও বেশ্যাগিরি করতে হইবো এর লাইগা
কাজল ওরে মাইরা ফালাইছে।জানোস মায়া ঐটুক মাইয়্যাডার গলায় জল্লাদটা ব্লেড দিয়া কাটছে। বাচ্চাটা একটা চিৎকার দিয়া কতক্ষন ছটফট করছে এরপর মইরা গেলো। "
দম বন্ধ হয়ে অাসছে মায়ার।দুচোখ বেয়ে অঝরে পানি ঝড়ছে। সোহান কফি খাওয়া বাদ দিয়ে মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে অাছে।
-" এখন অামার কি মনে হইতাছে জানোছ? তোরেও ছোট থাকতে মাইরা ফেলার দরকার ছিলো। তাইলে তোরে অাজকা বেশ্যা হইতে হইতো না। অামাগো জিন্দেগিটা অনেক খারাপ রে মায়া। এই জিন্দেগি করার চেয়ে মইরা যাওন ভালো। অামারও মইরা যাওয়াউচিত অাছিলো। কিন্তু সাহস করতে পারি নাই। মরতে গেলে অনেক সাহস লাগে।"
-" বাচ্চাটা কি মাটি দিয়ে দিছে?"
-" হ ভোরে মাটি দিছে।"
অার কথা বাড়ালো না মায়া ফোনটা কেটে দিলো। মায়ার মাথায় হাত রেখে সোহান বললো,
-" কি হয়েছে মায়া? কেউ কি মারা গেছে?"
মায়া কাঁদছে। কোনো উত্তর দিচ্ছে না। সে বুঝতে পারছে এখন ওকে কাঁদতে দেয়া উচিত। খানিকক্ষন বাদে না হয় ওকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা যাবে। সোহান লক্ষ্য করলো মায়া ওর হাত চেপে ধরে কাঁদছে। মায়াকে জড়িয়ে ধরলো সোহান। ওর মাথায় খুব অাস্তে করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কিছুক্ষন বাদে মায়া নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো সোহানের বাহুডোর থেকে। কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে মায়া।
-" অামাকে কি বলা যায় কি হয়েছে?"
-" অামার পাড়াতে একটা অাপা ছিলো। কাজল অাপা। উনি প্রেগনেন্ট ছিলেন। গতরাতে উনার মেয়ে হয়েছিলো। উনি মেরে ফেলেছে মেয়েটাকে।"
-" কেনো মেরেছে জানো? কারন ও চায়নি ওর মেয়েটারও ওর মতো হাল হোক।"
-" অাপনি কিভাবে জানেন?"
-" এমন গল্প অামি অাগেও শুনেছি। এমন ঘটনা অারও দুজন ঘটিয়েছিলো।"
-" একদিকে ভালোই হয়েছে। অামাদের মতো বাচ্চাটাকে একটুএকটু করে শেষ হতে হবে না। মরার অাগেই নরকের শাস্তি ভোগ করতে হয় অামাদের। মাঝে মাঝে এমন কিছু কাস্টমার অাসে এদের অাচরন দেখলে মনেহয় অামরা মুরগি অথবা খাসীর রানের পিস। মনের খায়েশ মিটিয়ে শরীরের যেখানে সেখানে কামড়াতে থাকে। একবার তো এক কাস্টমারের কামড়ে অামার হাতে ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিলো। দাগ এখনও যায়নি। এমন জীবন কাটানোর চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো। উচিত কাজ করেছে কাজল। ওর জায়গায় অামি হলে ঠিক এই কাজটাই করতাম।"
-" পানি খাবে?"
-" না।"
-" যা হয়ে গেছে তা তো বদলাতে পারবে না মায়া। সামনে দেখি তোমাদের মতো মানুষের জন্য কিছু করতে পারি কিনা।"
কথাটা বলেই সেখান থেকে সরে গেলো সোহান। সেখানে অার বসতে ইচ্ছে হচ্ছে না তার। কারো কষ্ট সহ্য করতে পারে না সে। তবে মনের কষ্ট মনে রাখতেই ভালোবাসে। লোকের সামনে প্রকাশ করাটা তার কাছে খুবই লজ্জাজনক মনে হয়। সবারসামনে ভাবখানা এমনদেখায় মনে হয় কিছুই হয়নি ।
অাজ দুপুরে মায়াকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে এসেছে সোহান। ওর জন্য দুটো টিচার রাখা হয়েছে। বিকালে একজন পড়িয়ে গেছে। এখন অারেকজন পড়াচ্ছে। কিছুক্ষন অাগে অফিসের একজন স্টাফ এসেছে সোহানের বাসায়। অার্জেন্ট কিছু ফাইল সিগনেচার করাতে এসেছেন তিনি। ড্রইং রুমে বসে সোহান ফাইল দেখছে অার স্টাফ সাঈদ মায়ার রুমে একনজরে তাকিয়ে অাছে। ব্যাপারটা চোখে পড়লো সোহানের।
-" ওদিকে কি দেখছেন সাঈদ সাহেব?"
-" স্যার এই মেয়েটা কি হয় অাপনার?"
-" অামার ওয়াইফ। কেনো?"
-" এটা ওয়াইফ?"
-" কোনো সমস্যা?"
-" স্যার অাপনি ভালো করে খোঁজ নিয়ে বিয়ে করেছেন তো?"
-" হ্যা করেছি।"
-" এটা কি করে হয়? স্যার অাপনাকে বোধহয় মিথ্যা বলে বিয়ে করেছে এই মেয়ে।"
-" সমস্যাটা কি সেটা তো বলবেন।"
-" এ তো.... ইয়ে মানে.... এই মেয়েটা প্রস্টিটিউট স্যার।"
-' অাপনি জানেন কিভাবে?"
-" অামি ওদের ওখানে প্রায়ই যাই। ও ভালো না স্যার।"
-" অাপনি ভালো?"
-" জ্বি?"
-" জিজ্ঞেস করলাম অাপনি ভালো কি না? ভাব তো এমন দেখাচ্ছেন মনে হচ্ছে অাপনি পবিত্র পুরুষ। একটা মেয়ে প্রস্টিটিউট হয় কিভাবে জানেন? একটা পুরুষের সাথে টাকার বিনিময়ে এক বিছানায় শুয়ে। এক মেয়ে অারেক মেয়ের সাথে ঘেষাঘেষি করে তো অার প্রস্টিটিউট হয়নি। অাপনার মতো অতিমাত্রার পবিত্র পুরুষের সংস্পর্শে এসেই এরা প্রস্টিটিউট হয়। অার অামি নিজে ওকে ঐ পাড়া থেকে তুলে এনেছি। ঐ পাড়ায় তো ভালো লোক যায় না। যায় খারাপ লোকেরা। তারমানে অামিও খারাপ। ওর অার অামার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই সাঈদ সাহেব। তবে অাপনার ক্ষেত্রে উল্টোটা হয়েছে। অাপনার বউটা কিন্তু খুব ভালো। কিন্তু অাপনি?"
-" স্যার অাজ অামি অাসি। বাসায় যেয়ে বাকি কাজটা কমপ্লিট করতে হবে।"
কথাটা বলে সাঈদসাহেব ফাইল হাতে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। পিছন থেকে সোহান ডেকে বললো,
-" সাঈদ সাহেব, অাজকের কথাগুলো অাপনার অামার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেই খুশি হবো।"
-" জ্বি স্যার। কথা বাহিরে যাবে না।"
মায়ার রুমে যেয়ে ওর নতুন টিচারকে সোহান জিজ্ঞেস করলো,
-" স্টুডেন্ট কেমন মাহিন?"
-" বেশ শার্প। এত অাগের পড়া গ্রামারগুলো এখনও মুখস্ত রেখেছে। একবছর প্র্যাক্টিস না করলেই সাধারনত মনে থাকে না। কিন্তু ও দেখছি সবমনে রেখেছে।"
-" কি মনে হয়? মাস দুই তিনেকের মধ্যে দৌড়ে ইংলিশ বলতে পারবে তো?"
-" অাশা করছি হবে।"
-" পড়ানো শেষ?"
-" না অারো পনেরো বিশ মিনিট লাগবে।"
-" অাজকে ওকে ছুটি দিয়ে দাও। একটু বাহিরে যাবো।"
-" জ্বি ভাইয়া।"
-" মায়া, যাও গিয়ে রেডি হও। অামি ওর সাথে কথা বলি।"
-" ভাইয়া বিয়ে করলেন, অথচ কিছুই জানালেন না?"
-" রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হুট করে দেখলাম একটা সুন্দর পরী পৃথিবীর রাস্তায় হাটাহাটি করছে। অামি ভাবলাম ডানা ভেঙে পড়ে টরে গেলো কিনা। দৌড়ে গেলাম হেল্প করতে। যেয়ে বললাম, অাপনার ভাঙা ডানাটা কোথায় পড়েছে বলেন। অামি এনে জোড়া লাগিয়ে দিচ্ছি। মেয়ে তো অামার মুখের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে অাছে। চিন্তা করলাম পৃথিবীতে নতুন তাই হয়তো অামাকে উদ্ভট লাগছে। ফের বলতে লাগলাম, অাপনি তো পরী। ডানা ছাড়া বেশিক্ষন থাকলে ঝামেলা হতে পারে। জলদি বলুন ডানা কোথায়? কিছুক্ষন পর পরী মুখ খুলে বললো, সে নাকি পরী না। সে মানুষ। অামাকে অার পায় কে? পরদিনই ধরে বেঁধে ওকে বিয়ে করে ফেলেছি।"
-" হা হা হা। জানিনা কতটুক সত্যি বলেছেন। তবে গল্পটা মজার ছিলো।"
-" শোনো বিয়ের বয়স হয়েছে অামার। অার কত একা ঘুমাবো? অফিস থেকে ঘরে ফিরলে ঘরটা খালি লাগে। তাই মেয়ে পছন্দ হওয়ার সাথে সাথে বিয়েটা করে ফেললাম।"
দরজার অাড়াল থেকে কথাগুলো শুনেছে মায়া। কাপড় হাতে নিয়ে সোহানের রুমে যাচ্ছে অার ভাবছে, সোহান সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে ও সোহানের বউ। কাজটা কি ঠিক করছে সোহান?
চলবে_কি??
ভালোবাসার_পতিতাপল্লি। পর্ব_৪র্থ কিন্তু হুট করে একজনকে ভালো লাগতে শুরু করেছে।" -" অামাকে?" -" মনে হয়।" -" ভালো লাগার মানুষটা নিঃসন্দেহে অামি। সেটা তোমার মুখ দেখেই বুঝা যায়। এবং সেটা অামি গতরাতেই টের পেয়েছি যখন তুমি অামাকে বলেছো অামার হাত ধরে তুমি ঘুমাতে চাও ।কারও হাত ধরে ঘুমানোর অর্থ জানো? অর্থটা হচ্ছে পাশের মানুষের মধ্যে তুমি নির্ভরতা খুঁজে পাচ্ছো। কথা বলতে বলতে রান্না শেষ হইয়ে গেল। সোহান মায়ার প্লেটে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। খুব সুন্দর ঘ্রান বেরোচ্ছে খাবার থেকে। -" মায়া, নাও শুরু করো।" -" অাপনি খাবেন না?" -" হ্যা খাবো তো। এই যে অামার প্লেটে খাবার বাড়ছি।" প্রথম লোকমা মুখে তুলেই তিন চার সেকেন্ড থমকে ছিলো মায়া। -" কি ব্যাপার? খাবার মুখে নিয়ে বসে অাছো কেনো?" -" অসম্ভব ভালো হয়েছে।" -" তোমাকে বলেছিলাম না অামি একটা মেয়ে মানুষের চেয়েও বেশি ভালো রাঁধতে পারি।" -" হুম তাই তাো দেখছি।" -" নেক্সট উইক তুমি রান্না করে খাওয়াবে। অামি যাস্ট তোমাকে এটা সেটা এগিয়ে দিয়ে হেল্প করবো। কিন্তু রেসিপিটি বলবো না।" -" ঠিকাছে।" -" কাল থেকে প্রতিদিন তোমাকে একটা দুটা করে রান্না শিখাবো। " -" অাপনি ব্যস্ত মানুষ। অাপনার কি সময় হবে রান্না শিখানোর?" -" এসব অামি তোমার জন্য না যতটুকু করছি তারচেয়ে বেশি করছি অামার নিজের জন্য। অামি মানুষটা খুব একা। তোমার সাথে সময় কাটাতে পারলে অামার ভালো লাগবে।" এতদিন মায়ার ধারনা ছিলো টাকা থাকলেই বুঝি সব সুখ পায়ের কাছে পড়ে থাকে। ধারনাটা পুরোপুরি ভুল। টাকা থাকলেও মানুষের মনে কষ্টথাকে। একাকিত্বের কষ্ট টাকায় ঘুঁচে না। -" অাপনার তো এত টাকা। তবু অাপনি একা কেনো? পয়সাওয়ালা লোকের পিছনে তো মেয়েদের লাইন লেগে থাকে।" -" সমস্যাটা তো সেখানেই মায়া। সব টাকার পিছনে ছুটে। অামার পিছনে ছুটে না। টাকা অাছে তো অামার অস্তিত্ব অাছে, টাকা নেই তো অামার অস্তিত্বও নেই। মন থেকে কেউ কাছে টানে না। একটাবার কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে না, সোহান তুই ভালো অাছিস তো?" কষ্ট হচ্ছে সোহানের জন্য। এত টাকা থেকে লাভ কি যদি না কেউ সুখের দেখা না পায়? কিছুক্ষন অাগে কাজলের সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখেছে। মেয়ে হয়েছে তার। রুমে বসে থাকা দাই বাদে বাকি সবার মুখ কালো। মেয়ের অাশা তারা কেউ করেনি। বিউটি কুসুমকে নিয়ে বুদ্ধি বের করছে কিভাবে এই বাচ্চাকে এখান থেকে সরানো যায়। দাইকে না হয় টাকা পয়সা খাইয়ে মুখ বন্ধ করানো যাবে। কিন্তু ফখরুল? ওকে কি করবে? ও তো ঘরের বাইরে পায়চারি করছে। মেয়ের ছোট অাঙুলগুলো ধরে কাঁদছে কাজল। মেয়ে হওয়ার কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো? এখান থেকে বাচ্চাটাকে বের করার কোনো উপায় নেই। কাজল চায়না ফের এই পতিতাপল্লিতে কোনো মায়া অথবা কুসুম অথবা চুমকি তৈরী হোক। এই মেয়েগুলো জন্মসূত্রে পতিতা। অারও এমন অনেক অাছে এখানে যারা জন্মসূত্রে এই ব্যবসায়ী। কাজল দেখেছে তাদের মায়েদের চাপা কান্না যখন তাদের মেয়েদের ঐ লোকগুলোর হাতে একা রুমে তুলে দেয়া হতো। সবচেয়ে কম বয়সে কাজে লাগানো হয়েছিলো কুসুমকে। মাত্র বারো বছর ছিলো মেয়েটার। অাটাশ বছর বয়সী কোনো এক যুবকের তৃষ্ঞা মেটাতে তাকে পাঠানো হয়েছিলো এই বাড়ির পূর্ব দিকের ঘরটাতে। ঘরের ভিতর চিৎকার করছিলো কুসুম অার বাহিরে ওর মা। ওদের চিৎকারে চারপাশ ভারী হয়ে যাচ্ছিলো। অতটুকুন মেয়ে, যার বয়স ছিলো দুই বেনি করে বাড়ির উঠানে খেলার, সেই মেয়েকে পাঠানো হয়েছিলো কোনো এক দানবের ভোগের বস্তু হওয়ার জন্য। হ্যা দানব, সেই অাটাশ বছরের যুবকটাকে সেদিন কুসুমের কাছে দানব ছাড়া অার কিছুই মনে হয়নি। মানুষ খেঁকো দানব। না, মানুষ খেঁকো না শরীর খেঁকো দানব। টানা চার ঘন্টা কুসুমের উপর দিয়ে কোন তুফান গিয়েছিলো সেটা মনে হলে কুসুম এখনও ঘোরের মাঝে লাফিয়ে উঠে। মায়ারও একই হাল হয়েছিলো। তবে ওর বয়সটা একটু বাড়তি ছিলো যখন ওকে ধান্দায় নামানো হয়। সম্ভবত চৌদ্দ কি সাড়ে চৌদ্দ ।ওকে এক প্রকার টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো কাস্টমারের কাছে। কাজলের মেয়েরও একদিন এমন পরিস্থিতি অাসবে, কুসুমের মায়ের মতো তাকেও একদিন মেয়ের রুমের বাইরে বসে তার বাচ্চার অার্তচিৎকার শুনতে হবে। এসব সহ্য করার মতো ক্ষমতা তার নেই। খাটের পাশে থাকা ড্রেসিং টেবিলটার উপর ধারালো ব্লেড চিকচিক করছে। কিছুক্ষন অাগেই এই ব্লেডটা দিয়ে নাড়ি কেটে অালাদা করা হয়েছে ওর সন্তানকে। খুব ধীরে ধীরে উঠে বসলো কাজল। দাই, বিউটি অার কুসুম মিলে খুব ধীর অাওয়াজে কি যেনো বলা বলি করছে। টেবিলের উপর থেকে ব্লেডটা হাতেনিলো কাজল। খুব অাস্তে করে মেয়ের গলায় ব্লেডটা দিয়ে শুধু একটা অাঁচড় কাটলো। যে ব্লেড দিয়ে নাড়ি কাটা হয়েছিলো সেটা দিয়েই নিজ সন্তানের গলার রগ কাটলো কাজল। বাচ্চাটা জোরে একটা চিৎকার দিয়ে থেমে গেলো। অার কোনো অাওয়াজ তার গলা থেকে অাসছে না। কিছুটা ছটফট করছে সে। কচি হাত পা গুলো এদিক সেদিক ছড়াচ্ছে। একটা পর্যায়ে চার হাত পা লম্বা করে টেনে নিঃশ্বাসটা পুরোপুরি ছেড়ে দিলো বাচ্চাটা। এতক্ষন বাকি তিনজন চোখ বড় করে বাচ্চাটার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। বাচ্চার চিৎকার শুনে তিনজনই তাকিয়ে ছিলো বাচ্চার দিকে। তাকিয়ে দেখে কাজলের হাতে রক্তমাখা ব্লেড অার বাচ্চার গলায় রক্ত। ঘটনা চোখের সামনে একদম স্পষ্ট ছিলো তবু তাদের কাছে অস্পষ্ট লাগছিলো। সামনে এগিয়ে মৃত্যুপথযাত্রী এক শিশুকে অাগলে নিতে সাহস হচ্ছিলো না তাদের। নিঃশ্বাস ত্যাগের পর ঘোর কাটলো কুসুমের। কাজলের মুখে মাথায় এলোপাথারি চড় থাপ্পর দিচ্ছে সে। -" * কি করলি তুই এইডা? ঐ মারলি কেন মাইয়্যাডারে তুই?" -" মইরা গিয়া বাঁইচা গেছে অামার মাইয়্যা। অামাগো মতো পইচা মরতে হইবো না ওর।" কাজলের চোখেমুখে বিন্দুমাত্র কষ্টের ছোঁয়া নেই। ওর চেহার স্বস্তির শান্তি দেখা যাচ্ছে। রাতে ঘুমানোর অাগে কফি খাওয়ার অভ্যাস অাছে সোহানের। গরম কফির মগে চুমুক দিচ্ছে অার টিভি দেখছে। মায়া নিজেকে প্রস্তুত করছে সোহানের জন্য। মানুষটা এখন পর্যন্ত ওর গায়ে হাত দেয়নি। হতে পারে অসুস্থ ছিলো তাই। অাজ নিশ্চয়ই ওকে বসিয়ে রাখবে না তার অধিকারটা চাইতে অাসবে নিশ্চয়ই। ইতিমধ্যে জোনাকিকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয়া হয়ে গেছে। অার ওরপিছনে অনেক টাকাই খরচ করেছে সোহান টাকাগুলোতো এমনি এমনি অার খরচ করেনি। এগুলো তো সে অবশ্যই উসুল করবে। খানিকটা সেজেগুজে সোহানের পাশে যেয়ে বসলো মায়া। ওর দিকে একনজর দেখেই পরক্ষনে মুখ ফিরিয়ে টিভির স্ক্রিনে নিয়ে গেলো সোহান। টিভিরদিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো, -" ফুল প্রিপারেশন নিয়ে এসেছো মনে হচ্ছে।" -" ..............." -" দেখো, হুট করেই কারো গায়ে হাত দেয়াটা অামার পছন্দ না। এখানে এসেছো। কিছুদিন থাকো। দুজন দুজনকে বুঝি এরপর নাহয় দেখা যাবে।" -" অাপনি তো অনেকগুলো টাকা দিয়ে এসেছেন।" -" তো?" -" টাকা উসুল করবেন না?" -" দেখো অামি কিন্তু তোমাকে এখানে শুধু ফিজিক্যাল রিলেশনের জন্য অানিনি। তোমাকে এখানে অানার মূলউদ্দেশ্য হচ্ছে একাকিত্বটা দূর করা। অামার টাকা উসুল করা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। অামার টাকা কিভাবে উসুল করবো সেটা অামারটা অামি বুঝবো।" সোহানকে যত দেখছে তত মায়ার বিস্ময়ের মাত্রা বেড়েই যাচ্ছে। এমন মানুষও অাছে নাকি দুনিয়ায়? একটা যুবতি মেয়ে হাতের কাছে এসে ধরা দিচ্ছে অার সে কি না বলছে হুট করে কারো গায়ে হাত দেয়া তার পছন্দ না? সোহানকে বিরল প্রজাতির প্রানী মনে হচ্ছে মায়ার। -" অামার সাথে একটু কথা বলবে মায়া?" সোফায় পা উঠিয়ে বসতে বসতে হাসিমাখা মুখে মায়া বললো, -" অবশ্যই বলবো। একটু কেনো? অনেক অনেক কথা বলবো।" -" অাঠারো বছর অাগের ঘটনা। অামার রেজাল্ট দিয়েছিলো সেদিন। ফাইনাল এক্সামের রেজাল্ট। ফার্স্ট হয়েছিলাম। অাম্মুকে বলেছিলাম, অামি ফার্স্ট হয়েছি। অামি চিকেন ফ্রাই খাবো। অামাকে চিকেন ফ্রাই করে দাও। অাম্মু বললো চলো তোমাকে বাহির থেকে খাইয়ে নিয়ে অাসি। অামি বললাম, তোমার হাতেরটা খাবো। দোকানেরটা খাবো না। অাম্মু উত্তরে কি বলেছিলো জানো?" -" কি?" -" মুরগীতে মসলা মাখাতে গেলে হাতে মসলার দাগ বসে যাবে। মসলার বাজে স্মেল অাসবে হাত থেকে। অহেতুক হাতের চামড়া নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। অামি পাল্টা অারকিছু বলিনি। অাসলে বলার কিছুই ছিলো না। জোর করে তো অার কারো কাছ থেকে ভালোবাসা অাদায় করা যায় না। তাই অামিও অার জোর করিনি। যে ভালোবাসার সে এমনিতেই বাসবে। সোজা ফ্রিজ থেকে মুরগি নামিয়ে মসলা মেখে নিজেই ফ্রাই করেছি। তখন তো রান্না সম্পর্কে বিশেষ অাইডিয়া ছিলো না। ঘরে যত ধরনের মসলা ছিলো সবগুলো থেকে একটু একটু করে দিয়েছি। বানিয়ে এনে সবার অাগে অাম্মুকে দিয়েছি। অাম্মুকিছুক্ষন মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো।অামি বললাম, খেয়ে দেখো। মুখে নিয়ে বললো খুব ভালো হয়েছে। তখনঅামি বললাম, নাও এই সবগুলো চিকেন ফ্রাই তোমার। মসলার স্মেল অামার হাতেও লেগে অাছে । এই দেখো হাতে হলুদের দাগ ভরে গেছে। কিন্তু অামি তোমার মতো নাক ছিটকাচ্ছি না। অার কখনো তোমাকে বলবো না অামাকে কিছু বানিয়ে খাওয়াও । এখন থেকে নিজেরটা নিজেই বানিয়ে খাবো। তোমার কিছু খেতে ইচ্ছে হলে অামাকে বলো। অামি তোমাকে বানিয়ে দিবো। এরপরদিনই যেয়ে রান্নার বই কিনে এনেছিলাম। প্রতিদিন কিছু না কিছু এক্সপেরিমেন্ট করতাম। কতবার যে হাত পুড়েছি তার কোনো হিসাব নেই।" -" একদিন রেঁধে খাওয়ালে কি হতো? একদিনে কি অার চামড়া নষ্ট হয়?" -" উহুম। অামার মা এক সেকেন্ডও চুলার পাশে যেতে রাজি না। সে খুব চামড়া সচেতন মানুষ। প্রতিমাসে কত হাজার টাকা যে পার্লারে খরচ করে অাল্লাহ ভালো জানে। সেই হিসাব বোধহয় অাম্মুর নিজেরও জানা নেই। অাচ্ছা তোমার কি মাথা ব্যাথা করছে?" -" কিছুটা। অাপনি জানলেন কিভাবে?" -" তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে। তুমি যাও গিয়ে ঘুমাও। -" না একটু গল্প করি না প্লিজ। " -" মাথাব্যাথা নিয়ে গল্প করার দরকার নেই। মাথাব্যাথা অারও বাড়বে।" -" অামার ভালো লাগছে অাপনার সাথে গল্প করতে।" -" অাচ্ছা তাহলে রুমে চলো। শুয়ে গল্প করবে" মায়ার রুমে বিছানায়বসে অাছে সোহান। পাশে শুয়ে অাছে মায়া। সোহানের হাত ধরে রেখেছে সে। সোহান গল্প বলছে। অার খুব মন দিয়ে সেই গল্প মায়া শুনছে । খুব ভোরে ঘুম ভেঙেছে মায়ার। চোখ মেলে দেখে সোহানের পায়ের উপর ওমাথা রেখে শুয়ে অাছে। অার সোহান হেলান দিয়ে বসে ঘুমুচ্ছে। ঘুম ভাঙার পরও সেখান থেকে সরছিলো না মায়া। ভালো লাগছে এভাবে ওর পায়ের উপর মাথা রেখেশুয়ে থাকতে। গতরাতে গল্প করতে করতে কখন ও ঘুমিয়ে পড়েছে সেটা ওর নিজের জানা নেই। হয়তোবা সোহানও কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সোহানের মুখের দিকে তাকিয়ে অাছে মায়া। মানুষটা দেখতে সুন্দর। বিশেষ করে মাথার চুলগুলো। একদম সোজা চুল। একটুও কোঁকড়া না। মাথার চুলগুলো ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে মায়ার। ধরাটা কি উচিত হবে? সোহান গতকাল বলেছিলো হুট করে কারো গায়ে হাত দেয়াটা তার অপছন্দ। তাহলে নিশ্চয়ই এভাবে চুলে হাত দেয়াটাও সে পছন্দ করবে না। অার ও যে এভাবে শুয়ে অাছে এটা কি ঠিক হচ্ছে? বোধহয় না। সোহান ঘুম থেকে উঠে যদি দেখে মায়া এভাবে ওর পায়ের উপর শুয়ে অাছে তাহলে নিশ্চয়ই খারাপ ভাববে। নাহ এভাবে শুয়ে থাকাটা ঠিক হবে না। উঠে যাওয়াটাই ভালো হবে। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখে সোহান রুমে নেই। বোধহয় ঘুম থেকে উঠে চলে গেছে নিজের রুমে। ফুলগাছগুলোর কাছে গেলো মায়া। সাদা গোলাপের গাছটায় একটা নতুন কলি এসেছে। দু তিন দিন বাদেই বোধহয় ফুটবে কলিটা। গত পরশু থেকে একটা কথা মাথায় বারবার ঘুরছে। সেটা হচ্ছে সংসার। সংসার শুরু করতে হবে মায়াকে। অাচ্ছা সংসার কি?সংসার কেমন হয়? এ ব্যাপারে কিছুই জানে না মায়া। তবে নতুন এক অনুভুতির সাথে পরিচিত হচ্ছে সে। সংসার নামক অনুভূতি। গত পরশু থেকে অনুভূতিটা পাচ্ছে ও। অনুভূতিটা বড্ড অদ্ভুদ। ভয় এবং ভালোবাসার সংমিশ্রনে তৈরি অনুভূতি। তবে ভয়ের চেয়ে ভালোলাগার অনুভূতিটাই বেশি। অায়নার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে মায়া। সংসারি মেয়ে মানে গৃহিনীদের দেখতে কেমন দেখা যায়? গৃহিনীদের দেখলে চট করে লোকে বলে দিতে পারে মেয়েটা একজন গৃহিনী। নাকটা ফুটো করা নেই ।মায়ার হাতে চিকন একজোড়া চুড়িও নেই। গৃহিনী হতে গেলে তো নাকে ফুল অার হাত একজোড়া চুড়ি থাকতে হবে। লোকটা বলেছিলো অাজ থেকে যা কিছু প্রয়োজন সব ওর কাছে চাইতে। সোহানকে কি বলবে কিনে দিতে? বলাটা কি উচিত হবে? নাহ। সেসব বলা যাবে না। সোহান ওকে লোভি ভাবতে পারে। -" অায়নায় নিজেকে খুঁটে খুঁটে কি দেখছো?" পিছনে ফিরে তাকালো মায়া। দুহাতে দুটো মগ হাতে ঘরে ঢুকছে সোহান। -" নাও তোমার লাল চা।" হাত বাড়িয়ে মগটা নিতে নিতে খাটে বসলো মায়া। পাশেই পা ঝুলিয়ে বসেছে সোহান। -" বললে না তো অায়নায় ওভাবে কি দেখছিলে?" -" নাহ তেমন কিছু না।" -" তোমাকে তো দেখলাম গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু ভাবছিলে অায়নায় তাকিয়ে? কিছু হয়েছে?" -" না কিছু না।" -" কিছু বলতে চাও অামাকে? -" না না। কিছু না।" -" বলতে চাচ্ছো না। ঠিকাছে। জোর করবো না। চা ভালো হয়েছে?" -" হুম।" -" কাল থেকে তুমি অামার জন্য কফি বানাবে। অার অাস্তে অাস্তে অামার সমস্ত ব্যাপারগুলো খেয়াল দেয়া শুরু করো। অামি অফিস যাওয়ার অাগে অামার কাপড় তুমি সিলেক্ট করবে। সারাদিনে কয়েকবার অামাকে ফোন দিয়ে অামার খোঁজ নিবে। ঘরের বাজার থেকে শুরু করে কারেন্ট বিল পর্যন্ত সমস্ত হিসাব তুমি দেখবে। ঘরে কখন কি রান্না হবে সেগুলো তোমার ফরমায়েশ অনুযায়ী হবে। ঘরে যদি নতুন কোনো ফার্নিচার প্রয়োজন মনে করো তাহলে অামাকে বলো অামি কিনে দিবো।" -" অাচ্ছা।" -" অাজকে অফিস যাবো না। তোমাকে নিয়ে স্কুলে যাবো তোমার এডমিশনের ব্যাপারে কথা বলতে। কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়েছিলে তুমি?" -" এইট পর্যন্ত। নাইনে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু ক্লাস অার করতে পারিনি। -" ঠিকাছে। ইংলিশে কেমন ছিলে তুমি?" -" হুম ভা......." কথাটা শেষ করার অাগেই ফোন বেজে উঠলো মায়ার। ফোনটা রিসিভ করলো মায়া। ওপাশ থেকে ফুপিয়ে কাঁদার শব্দ পাচ্ছে ও। -" কাঁদো কেনো অাম্মা?" -" কাজলের একটা মাইয়্যা হইছিলো গতকাল রাইতে। বড় হয়া ওরেও বেশ্যাগিরি করতে হইবো এর লাইগা কাজল ওরে মাইরা ফালাইছে।জানোস মায়া ঐটুক মাইয়্যাডার গলায় জল্লাদটা ব্লেড দিয়া কাটছে। বাচ্চাটা একটা চিৎকার দিয়া কতক্ষন ছটফট করছে এরপর মইরা গেলো। " দম বন্ধ হয়ে অাসছে মায়ার।দুচোখ বেয়ে অঝরে পানি ঝড়ছে। সোহান কফি খাওয়া বাদ দিয়ে মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে অাছে। -" এখন অামার কি মনে হইতাছে জানোছ? তোরেও ছোট থাকতে মাইরা ফেলার দরকার ছিলো। তাইলে তোরে অাজকা বেশ্যা হইতে হইতো না। অামাগো জিন্দেগিটা অনেক খারাপ রে মায়া। এই জিন্দেগি করার চেয়ে মইরা যাওন ভালো। অামারও মইরা যাওয়াউচিত অাছিলো। কিন্তু সাহস করতে পারি নাই। মরতে গেলে অনেক সাহস লাগে।" -" বাচ্চাটা কি মাটি দিয়ে দিছে?" -" হ ভোরে মাটি দিছে।" অার কথা বাড়ালো না মায়া ফোনটা কেটে দিলো। মায়ার মাথায় হাত রেখে সোহান বললো, -" কি হয়েছে মায়া? কেউ কি মারা গেছে?" মায়া কাঁদছে। কোনো উত্তর দিচ্ছে না। সে বুঝতে পারছে এখন ওকে কাঁদতে দেয়া উচিত। খানিকক্ষন বাদে না হয় ওকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা যাবে। সোহান লক্ষ্য করলো মায়া ওর হাত চেপে ধরে কাঁদছে। মায়াকে জড়িয়ে ধরলো সোহান। ওর মাথায় খুব অাস্তে করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কিছুক্ষন বাদে মায়া নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো সোহানের বাহুডোর থেকে। কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে মায়া। -" অামাকে কি বলা যায় কি হয়েছে?" -" অামার পাড়াতে একটা অাপা ছিলো। কাজল অাপা। উনি প্রেগনেন্ট ছিলেন। গতরাতে উনার মেয়ে হয়েছিলো। উনি মেরে ফেলেছে মেয়েটাকে।" -" কেনো মেরেছে জানো? কারন ও চায়নি ওর মেয়েটারও ওর মতো হাল হোক।" -" অাপনি কিভাবে জানেন?" -" এমন গল্প অামি অাগেও শুনেছি। এমন ঘটনা অারও দুজন ঘটিয়েছিলো।" -" একদিকে ভালোই হয়েছে। অামাদের মতো বাচ্চাটাকে একটুএকটু করে শেষ হতে হবে না। মরার অাগেই নরকের শাস্তি ভোগ করতে হয় অামাদের। মাঝে মাঝে এমন কিছু কাস্টমার অাসে এদের অাচরন দেখলে মনেহয় অামরা মুরগি অথবা খাসীর রানের পিস। মনের খায়েশ মিটিয়ে শরীরের যেখানে সেখানে কামড়াতে থাকে। একবার তো এক কাস্টমারের কামড়ে অামার হাতে ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিলো। দাগ এখনও যায়নি। এমন জীবন কাটানোর চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো। উচিত কাজ করেছে কাজল। ওর জায়গায় অামি হলে ঠিক এই কাজটাই করতাম।" -" পানি খাবে?" -" না।" -" যা হয়ে গেছে তা তো বদলাতে পারবে না মায়া। সামনে দেখি তোমাদের মতো মানুষের জন্য কিছু করতে পারি কিনা।" কথাটা বলেই সেখান থেকে সরে গেলো সোহান। সেখানে অার বসতে ইচ্ছে হচ্ছে না তার। কারো কষ্ট সহ্য করতে পারে না সে। তবে মনের কষ্ট মনে রাখতেই ভালোবাসে। লোকের সামনে প্রকাশ করাটা তার কাছে খুবই লজ্জাজনক মনে হয়। সবারসামনে ভাবখানা এমনদেখায় মনে হয় কিছুই হয়নি । অাজ দুপুরে মায়াকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে এসেছে সোহান। ওর জন্য দুটো টিচার রাখা হয়েছে। বিকালে একজন পড়িয়ে গেছে। এখন অারেকজন পড়াচ্ছে। কিছুক্ষন অাগে অফিসের একজন স্টাফ এসেছে সোহানের বাসায়। অার্জেন্ট কিছু ফাইল সিগনেচার করাতে এসেছেন তিনি। ড্রইং রুমে বসে সোহান ফাইল দেখছে অার স্টাফ সাঈদ মায়ার রুমে একনজরে তাকিয়ে অাছে। ব্যাপারটা চোখে পড়লো সোহানের। -" ওদিকে কি দেখছেন সাঈদ সাহেব?" -" স্যার এই মেয়েটা কি হয় অাপনার?" -" অামার ওয়াইফ। কেনো?" -" এটা ওয়াইফ?" -" কোনো সমস্যা?" -" স্যার অাপনি ভালো করে খোঁজ নিয়ে বিয়ে করেছেন তো?" -" হ্যা করেছি।" -" এটা কি করে হয়? স্যার অাপনাকে বোধহয় মিথ্যা বলে বিয়ে করেছে এই মেয়ে।" -" সমস্যাটা কি সেটা তো বলবেন।" -" এ তো.... ইয়ে মানে.... এই মেয়েটা প্রস্টিটিউট স্যার।" -' অাপনি জানেন কিভাবে?" -" অামি ওদের ওখানে প্রায়ই যাই। ও ভালো না স্যার।" -" অাপনি ভালো?" -" জ্বি?" -" জিজ্ঞেস করলাম অাপনি ভালো কি না? ভাব তো এমন দেখাচ্ছেন মনে হচ্ছে অাপনি পবিত্র পুরুষ। একটা মেয়ে প্রস্টিটিউট হয় কিভাবে জানেন? একটা পুরুষের সাথে টাকার বিনিময়ে এক বিছানায় শুয়ে। এক মেয়ে অারেক মেয়ের সাথে ঘেষাঘেষি করে তো অার প্রস্টিটিউট হয়নি। অাপনার মতো অতিমাত্রার পবিত্র পুরুষের সংস্পর্শে এসেই এরা প্রস্টিটিউট হয়। অার অামি নিজে ওকে ঐ পাড়া থেকে তুলে এনেছি। ঐ পাড়ায় তো ভালো লোক যায় না। যায় খারাপ লোকেরা। তারমানে অামিও খারাপ। ওর অার অামার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই সাঈদ সাহেব। তবে অাপনার ক্ষেত্রে উল্টোটা হয়েছে। অাপনার বউটা কিন্তু খুব ভালো। কিন্তু অাপনি?" -" স্যার অাজ অামি অাসি। বাসায় যেয়ে বাকি কাজটা কমপ্লিট করতে হবে।" কথাটা বলে সাঈদসাহেব ফাইল হাতে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। পিছন থেকে সোহান ডেকে বললো, -" সাঈদ সাহেব, অাজকের কথাগুলো অাপনার অামার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেই খুশি হবো।" -" জ্বি স্যার। কথা বাহিরে যাবে না।" মায়ার রুমে যেয়ে ওর নতুন টিচারকে সোহান জিজ্ঞেস করলো, -" স্টুডেন্ট কেমন মাহিন?" -" বেশ শার্প। এত অাগের পড়া গ্রামারগুলো এখনও মুখস্ত রেখেছে। একবছর প্র্যাক্টিস না করলেই সাধারনত মনে থাকে না। কিন্তু ও দেখছি সবমনে রেখেছে।" -" কি মনে হয়? মাস দুই তিনেকের মধ্যে দৌড়ে ইংলিশ বলতে পারবে তো?" -" অাশা করছি হবে।" -" পড়ানো শেষ?" -" না অারো পনেরো বিশ মিনিট লাগবে।" -" অাজকে ওকে ছুটি দিয়ে দাও। একটু বাহিরে যাবো।" -" জ্বি ভাইয়া।" -" মায়া, যাও গিয়ে রেডি হও। অামি ওর সাথে কথা বলি।" -" ভাইয়া বিয়ে করলেন, অথচ কিছুই জানালেন না?" -" রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হুট করে দেখলাম একটা সুন্দর পরী পৃথিবীর রাস্তায় হাটাহাটি করছে। অামি ভাবলাম ডানা ভেঙে পড়ে টরে গেলো কিনা। দৌড়ে গেলাম হেল্প করতে। যেয়ে বললাম, অাপনার ভাঙা ডানাটা কোথায় পড়েছে বলেন। অামি এনে জোড়া লাগিয়ে দিচ্ছি। মেয়ে তো অামার মুখের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে অাছে। চিন্তা করলাম পৃথিবীতে নতুন তাই হয়তো অামাকে উদ্ভট লাগছে। ফের বলতে লাগলাম, অাপনি তো পরী। ডানা ছাড়া বেশিক্ষন থাকলে ঝামেলা হতে পারে। জলদি বলুন ডানা কোথায়? কিছুক্ষন পর পরী মুখ খুলে বললো, সে নাকি পরী না। সে মানুষ। অামাকে অার পায় কে? পরদিনই ধরে বেঁধে ওকে বিয়ে করে ফেলেছি।" -" হা হা হা। জানিনা কতটুক সত্যি বলেছেন। তবে গল্পটা মজার ছিলো।" -" শোনো বিয়ের বয়স হয়েছে অামার। অার কত একা ঘুমাবো? অফিস থেকে ঘরে ফিরলে ঘরটা খালি লাগে। তাই মেয়ে পছন্দ হওয়ার সাথে সাথে বিয়েটা করে ফেললাম।" দরজার অাড়াল থেকে কথাগুলো শুনেছে মায়া। কাপড় হাতে নিয়ে সোহানের রুমে যাচ্ছে অার ভাবছে, সোহান সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে ও সোহানের বউ। কাজটা কি ঠিক করছে সোহান? চলবে_কি??