ভালোবাসার_অন্যরুপ 🌸❤
সিজন_২
পর্ব_২৮
লেখিকা_Aye Sha (Koyel Banerjee)
রিখিয়া-- রাজ আমাকে ছাড়ো!
কৃশ-- ছেড়ে দিলে পরে যাবে, পরে গেলে ব্যাথা পাবে, ব্যাথা পেলে কষ্ট হবে আর তোমার কষ্ট হলে আমার কষ্ট হবে যেটা আমি চাই না।
রিখিয়া-- উফফ! তোমাকে আমি নামাতে বলেছি। ছেড়ে দিয়ে ফেলে দিতে বলিনি। গর্ধব!
কৃশ-- আমি গর্ধব?
রিখিয়া-- হ্যাঁ....এই কি করছো পরে যাবো তো নাকি? (কৃশের গলা জড়িয়ে)
কৃশ-- তুমি পরবে কি না জানি না কিন্তু আমি দমবন্ধ হয়ে মারা যাবো এটা সিওর। যেভাবে গলা ধরেছো সেভাবে থাকলে মরবো তো নিশ্চই।
কৃশের কথা শুনে রিখিয়া রেগে মুখ ফিরিয়ে নিলো। কৃশের গলা থেকে হাত সরাতে নিলেই কৃশ বলে উঠলো।
কৃশ-- হাত সরালে কিন্তু খুব খারাপ হবে। (কড়া সুরে)
রিখিয়া কৃশের কথা শুনে হাত না সরিয়ে কৃশের মুখের দিকে তাকালো আর রিখিয়া তাকাতেই কৃশ রিখিয়ার গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। রিখিয়া বড় বড় চোখ করে কৃশের দিকে তাকিয়ে আছে আর কৃশ নিজের ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে রিখিয়া কে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলোর ভিতরে। রিখিয়া কৃশের সাথে কথায় না পেরে কৃশের কাঁধে মাথা রেখে আস্তে করে বললো।
রিখিয়া-- রাজ! ড্রয়িং রূমে প্রবেশ করার আগেই নামিয়ে দিয়ো আমায়। বড়রা সবাই হয়তো ওখানেই আছে।
কৃশ-- তোমাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার সময় সব বড়দের সামনেই এভাবে কোলে করে নিয়ে গেছি তাই আসার সময় ও তুমি আমার কোলে থাকবে।
রিখিয়া-- কিন্তু ওরা কি সত্যি বাংলো তে ফিরে এসেছে?
কৃশ-- আমার মনে হয় না শুধু শুধু হসপিটালে বসে থাকবে। তোমার ফেরার হলে তো বাংলোতেই ফিরবে হসপিটালে তো না তাই না?
রিখিয়া-- হমম তাও ঠিক। আচ্ছা আমরা এসে পরেছি এবার নামিয়ে দাও প্লিজ! (অনুরোধ করে)
কৃশ একবার রাগী চোখে রিখিয়ার দিকে তাকাতেই রিখিয়া ভয়ে চুপসে গিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো আর কৃশ রিখিয়া কে নিয়ে বাংলোর ড্রয়িং রূমে প্রবেশ করলো। ওরা প্রবেশ করতেই দেখলো সবাই অপেক্ষা করে বসে আছে ওদের জন্য, ওরা প্রবেশ করতেই সবাই উঠে দাঁড়ালো। কৃশ রিখিয়া কে ওভাবে দেখে সবাই মিটিমিটি হাসছে দেখে রিখিয়ার ভীষণ লজ্জা লাগছে, সবার থেকে চোখ সরিয়ে কৃশের কানে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
রিখিয়া-- তুমি কি এখনো আমাকে নামাবে না রাজ? সারাদিন এভাবেই থাকার প্ল্যান আছে?
কৃশ-- উমম, আই লাইক ইট! এভাবে থাকলে মন্দ হয় না।
রিখিয়া রেগে বড় বড় চোখ করে তাকাতেই কৃশ হেসে ফেললো আর রিখিয়া কে গিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো। রিখিয়া কে সোফায় বসাতেই মীরা আর ইতি গিয়ে রিখিয়ার পাশে বসে পরলো।
মীরা-- ঠিক আছিস তুই?
ইতি-- ঠিক না থেকে যাবে কই? দেখছো না কার সাথে এসেছে। (মুখ টিপে হেসে)
রিখিয়া-- চুপ কর। মাম্মি, পাপা ডক্টর কে ডাকো রাজের হাত থেকে রক্ত পরছে।
রিখিয়ার কথা শুনে সবাই কৃশের দিকে তাকাতেই দেখলো কৃশের ডান হাতের কব্জির শিরার জায়গাতে একটা রুমাল বাঁধা। রুমাল টা রক্তে লাল হয়ে গেছে। আমান কৃশের কাছে গিয়ে কৃশের কাঁধে হাত রেখে বললো।
আমান-- এসব কি কৃশ? কীভাবে এভাবে হাত কাটলো তোমার?
রিখিয়া-- কোনো কিছুতে কাটেনি পাপা। ও নিজে কেটেছে। আমি আরেকটু দেরী করলে ও নিজেকে...(ছলছল চোখে কাঁপা গলায়)
রিখিয়া মীরাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো এদিকে কৃশ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, অর্ঘ্য রেগে গিয়ে কৃশের কলার ধরে ঘুরিয়ে দিলো। রাহাত গিয়ে কৃশের আরেক পাশে দাঁড়ালো আর রাফিয়া সামনে দু-হাত ভাঁজ করে দাঁড়ালো।
কৃশ-- ত..তোরা এভাবে ক..কেন আমার দিকে তাকিয়ে আছিস? (ভয়ে ভয়ে)
অর্ঘ্য-- তোর কিমা বানাবো তাই।
কৃশ-- ছেড়ে দে ভাই। মরে যাইনি আমি।
রাফিয়া-- রিখিয়া যদি আরেকটু দেরী করতো তাহলে...
কৃশ-- করেনি তো দেরী। একদম পারফেক্ট টাইমিং এ এন্ট্রি করেছে, হিহিহি ছেড়ে দে এবার।
অর্ঘ্য-- তোকে তো আজকে আমি মারবোই মারবো। তুই পালাতে পারবি না।
অর্ঘ্য কৃশ কে একটা ঘুসি মারতে নিলেই রিখিয়া চিৎকার করে ওঠে।
রিখিয়া-- অর্ঘ্যওওওও!! ছেড়ে দে ওকে। ওর হাতে আগে ব্যান্ডেজ করতে হবে। এখন মজা করার সময় নয়।
অর্ঘ্য রিখিয়ার চিৎকার শুনে ঘাবড়ে গিয়ে ছেড়ে দিয়ে একবার রিখিয়ার দিকে তাকায়, তাকিয়ে দেখে রিখিয়া ভ্রু কুঁচকে রেগে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। সেটা দেখে অর্ঘ্য কৃশের দিকে ফিরে ওর কলার ঠিক করে দিয়ে বললো।
অর্ঘ্য-- তোলা রইলো মারটা। বউয়ের জন্য বেঁচে গেলি।
অর্ঘ্য কথাটা বলে ফার্স্ট এইড বক্স আনতে চলে গেলো। কৃশ কে সোফায় বসিয়ে দিতেই কৃশ কে আমান বললো।
আমান-- তুমি ঠিক আছো তো?
কৃশ-- হ্যাঁ আঙ্কেল আমি ঠিক আছি। আমার অভ্যেস আছে এসবে। (শেষের কথাটা আস্তে করে)
রিখিয়া-- অভ্যেস আছে মানে? কি বলতে চাইছো তুমি?
সবাই শুনতে না পেলেও রিখিয়া ঠিকই শুনতে পেয়েছে কৃশের কথা, যেটা কৃশ বুঝতে পারেনি। কৃশ রিখিয়া কে কি বলবে বুঝতে না পেরে যেই কিছু বলতে যাবে তখনই রাফিয়া বলে উঠলো।
রাফিয়া-- এটা কিছুই না রাজের কাছে রিখিয়া। এরম অনেক ঘটনা ও ঘটিয়েছে। সব জানতে পারবি আস্তে আস্তে। আমিই জানাবো তোকে।
কৃশ-- দি প্লিজ!
রাফিয়া-- চুপ করে থাক। একদম কথা বলবি না আমার সাথে। (ধমক দিয়ে)
কৃশ রাফিয়ার ধমক খেয়ে চুপ করে গেলো আর মাথা নামিয়ে নিলো। আড় চোখে রিখিয়ার দিকে তাকাতেই দেখলো রিখিয়ার চোখ দিয়ে পানি পরছে। কৃশ নিজের হাত নিজেই চেপে ধরলো। অর্ঘ্য এসে তাড়াতাড়ি করে ব্যান্ডেজ করে দিলো কৃশের হাতে। সব শেষে আমান বললো।
আমান-- কৃশ মানছি আমি তুমি যা করেছো তা মিস্টার চৌধুরি কে শাস্তি দেওয়ার জন্যে করেছো। তবুও এভাবে আমাদের সবার অজান্তে ইভেন অর্ণার অজান্তে অর্ণা কে বিয়ে করাটা তোমার উচিত হয়নি।
কৃশ-- আমি জানি আঙ্কেল। কিন্তু আমার কাছে কোনো উপায় ছিলো না। আমি জানতাম আমার পরিচয় পেলেই কুহু আমাকে দুরে সরিয়ে দেবে। তাই বাধ্য হয়ে আমি কাজটা করেছি।
আঁধার-- আমরা সবটা জানতে চাই কৃশ। কি এমন হয়েছিলো তিন বছর আগে। অর্ণা আমাদের মেয়ে, আমরা কি জানতে পারি না ওর সাথে কি হয়েছিল?
কৃশ কিছু না বলে রিখিয়ার দিকে তাকাতেই রিখিয়া চোখ দিয়ে ইশারা করলো সবটা বলার জন্যে। কৃশ রিখিয়ার সম্মতি পেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করলো।
কৃশ-- আজ থেকে ১৫ বছর আগে আমি ফাস্ট টাইম ইন্ডিয়া আসছিলাম লন্ডন থেকে, আমার বয়স তখন ৬। আমার জন্ম লন্ডনে, আমি ওখানেই থাকতাম। এখানে আসছিলাম আঙ্কেল-এর কথায়। আই মিন রিখিয়ার ড্যাডি রায়হান চৌধুরির কথায়। উনি আর আমার বাবা আসিফ চৌধুরি বিসনেস পার্টনার ছিলো, মিস্টার চৌধুরি এখানেই থাকতেন আর আমি লন্ডন থাকতাম। আঙ্কেল একদিন আমাকে ফোন করে বলেন যে তিনি তার মেয়েকে খুঁজে পেয়েছেন, আমার ফ্রেন্ড কে খুঁজে পেয়েছেন সেই শুনেই আমি ইন্ডিয়া যাবো বলে ঠিক করি। মিস্টার চৌধুরিও আমাকে নিয়ে আসেন ওখান থেকে। ডুয়ার্সেই আমাদের বাংলো। এখানে যখন ফিরছিলাম তখন স্যামসিং-এর রাস্তা দিয়ে আসার সময় হঠাৎ একটা মেয়ের কান্নার আওয়াজ পাই আমি। গাড়ি থেকে নেমে অনেক খুঁজে মেয়েটাকে পাই না। তারপর জঙ্গলের দিকে একটু এগিয়ে যেতেই আবার কান্নার আওয়াজ পাই বুঝতে পারি জঙ্গলের ভিতরেই মেয়েটা আছে। আমার সাথে যেই গার্ডসরা ছিলো তাদের নিয়ে জঙ্গলে অনেক্ষন খোঁজার পর আমি খুঁজে পাই মেয়েটাকে।
মেয়েটা জঙ্গলের ভিতরে একটা বয়ে যাওয়া নদীর পাশে বেঞ্চে বসে কাঁদছিলো। আমি দেখতে পেয়ে ওর পাশে গিয়ে বসতেই ও আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে "তুমিও কি হারিয়ে গেছো আমার মতো?" আমি হেসে উত্তর দিয়েছিলাম " নাহ! আমি তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি। যাবে আমার সাথে?" উত্তরে আমার বাড়ানো হাতে মেয়েটি হাত রেখেছিল। বসন্তকালে ডুয়ার্সের মনোরম পরিবেশে ফাগুন হাওয়ায় কোকিলের গুঞ্জনের সাথে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম আমার "কুহুকে"।
কৃশের কথা শুনে সবাই হাসলো, এদিকে রিখিয়া আর কৃশ একে অপরের দিকে একপলকে তাকিয়ে আছে। হয়তো ফিরে গেছে নিজেদের অতীতে। সবার কাছে আজ পরিস্কার কৃশ কেন রিখিয়া কে "কুহু" ডাকে।
মুন-- তারপর?
কৃশ-- আমি জঙ্গল থেকে গার্ডসহ কুহু কে নিয়ে বেড়িয়ে আসি। কুহু কে জিজ্ঞেস করতেই ও বলে দেয় যে আরেকটু দূরেই ওদের বাংলো। অ্যাকচুয়লী স্যামসিং-এর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যে রাস্তাটা যায় তার শেষ প্রান্তেই ওদের বাংলো ছিলো। তাই কুহু আমার হাত ধরে টেনে ওদের বাংলোর উদ্দেশ্যে দৌঁড় দেয়। বাংলো তে ঢুকে আমিও অবাক হই কারণ এটাই ছিলো আমার আঙ্কেল-এর বাংলো। ভিতরে যেতেই কুহু দৌঁড়ে গিয়ে আঙ্কেল-এর কোলে উঠে পরে আর আমি বুঝে যাই এটাই আমার ফ্রেন্ড।
ইতি-- গার্লফ্রেন্ড হবে কথাটা। (কৃশের কানে ফিসফিসিয়ে)
ইতির কথায় কৃশ মুচকি হাসলো। তারপর আবার বলতে শুরু করলো।
কৃশ-- ওটাই ছিলো আমার আর কুহুর শেষ দেখা। কয়েকদিন পর আমি আবার লন্ডন ফিরে যাই। কারণ আমার পড়াশোনা ওখানেই। যাওয়ার সময় বলে যাই "আমি ঠিক ফিরবো ওর কাছে"। কয়েকদিনে আমাদের বন্ধুত্বটা অনেক গভীর হয়ে গেছিলো।
অর্ঘ্য-- তারপর আর তোদের দেখা হয়নি?
কৃশ-- সামনাসামনি হয়নি।
অর্ঘ্য-- মানে?
কৃশ-- আমি লন্ডন ফিরে ওখানে নিজের পড়াশোনা করতে করতে সময়ের সাথে সাথে বুঝে যাই আমি কুহু কে ভালোবেসে ফেলেছি। আর এটা বুঝতে পারায় ঠিক করে নিই যে এবার আমি ইন্ডিয়া ফিরে যাবো। দীর্ঘ ১২ বছর পর যখন আমার ১৮ বছর বয়স তখন আমি এখানে ফিরে আসে। কিন্তু এখানে ফিরে যা দেখি তা আমার ধারণার বাইরে ছিলো। এখানে এসে জানতে পারি রায়হান আঙ্কেলের বিসনেসে লস হওয়াতে আঙ্কেল বাংলো বেচে দিয়েছে। টাকার এতটাই প্রয়োজন ছিলো যে কুহু কেও একজন স্মাগলারের কাছে বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিচ্ছিল।
রিখিয়া-- এসব কি বলছো তুমি? (অবাক হয়ে)
কৃশ-- হমম। আমি এটা এখানে এসে রায়হান আঙ্কেলের মুখে শুনি। কিছু না বলে ওই স্মাগলার যার সাথে ডিল করেছিল আঙ্কেল আমি তার সাথে কথা বলি। আমি লন্ডনে নিজের খরচা নিজে চালাতাম। মিস্টার চৌধুরির (কৃশের বাবা) কোনো হেল্প আমার লাগতো না। আমার কোম্পানি ছিলো, আমার একটা ফ্রেন্ডের কোম্পানি তে জব করতাম সেখান থেকেই ভালো কাজ করার জন্যে কোম্পানি টা উনি আমার নামে করে দেয়।
রাহাত-- "চৌধুরি গ্রুপ অফ কোম্পানি'স"।
কৃশ-- আমার নিজের ইনকাম ছিলো যেটা মিস্টার চৌধুরি জানতো না। আমি ওই স্মাগলারের সাথে কথা বলে আঙ্কেল কে ও যে টাকা দিচ্ছিল আমি ওকে তার ডাবল টাকা দিয়ে কিনে ফেলি। ও কুহু কে নিজের কাছে নিতেও পারেনি, তার আগেই আমার লোক কুহু কে নিয়ে আসে। আর একটা বাংলো তে রেখে আসে।
আমান-- এর মানে মিস্টার রায়হান কে টাকা দিতে তোমার লোকেরা গেছিলো?
কৃশ-- হ্যাঁ আঙ্কেল। এরপর আমি চেষ্টা করি কি করে রায়হান আঙ্কেল কে লসের মুখ থেকে বাঁচাবো। বিসনেসটাকে আবার কি করে দাঁড় করাবো। মিস্টার চৌধুরি কেও এসব ব্যাপারে আমি কিছু জানাইনি।
আঁধার-- তুমি তোমার বাবা কে মিস্টার চৌধুরি কেন বলো?
কৃশ-- ছোটোবেলায় জ্ঞান হওয়ার পর থেকে বাবা বলে ওনাকে কখনো সন্মান করিনি। তাই আজও ওটা নেই ওনার প্রতি। আমার মা কে হারিয়ে বাবার ভালোবাসা পেতে চেয়েছিলাম উনি তার প্রতিদানে আমাকে লন্ডন পাঠিয়ে একলা করে দেন। অনেক আশা নিয়ে বলেছিলাম "আমি তোমার কাছে থাকবো। লন্ডন যাবো না, ওখানে কাওকে চিনি না আমি।" উনি বলেছিল "তোমার জন্য আমার সময় নেই। আমাকে বিসনেসে সময় দিতে হবে। তুমি লন্ডনে ঠিক বন্ধু পেয়ে যাবে।" পরিবর্তে আর কিছু বলতে পারিনি সেইদিন। মেনে নিয়েছিলাম ওনার কথা, চলে গেছিলাম লন্ডন। তারপর থেকেই আর কোনোদিন বাবা বলে সম্বোধন করা হয়নি।
রিখিয়া-- এটা কি করে সম্ভব রাজ? মিস্টার চৌধুরি তো আমাকে বললেন তুমি বাধ্য করেছিলে ড্যাডি কে কোম্পানি বিক্রি করাতে। তারপর ড্যাডি কে মিথ্যে বলে আমায় তুলে নিয়ে গিয়ে টর্চার করেছিলে। ইভেন রেহান! রেহানও আমাকে একই কথা বলেছে। তুমি আমাকে ড্যাডির কাছ থেকে মিথ্যে বলে নিয়ে গিয়ে একটা বাংলোতে রেখেছিলে যেটা কেউ জানতো না আর তারপর দিনের পর দিন আমাকে টর্চার করেছিলে। ওদের কথা কি করে অবিশ্বাস করবো? আমিও তো দেখেছিলাম তোমাকে।
কৃশ-- হমম সত্যি বলেছে রেহান।
ইয়ুগ-- হোয়াটটটট? তুই অর্ণা কে টর্চার করেছিস? (রেগে)
রাহাত-- এক মিনিট ভাইয়া! তুই রাজ কেই দেখেছিলিস রিখিয়া?
রিখিয়া-- মাস্ক পরা থাকতো তাই মুখ কোনো সময় দেখতে পাইনি।
রাহাত-- তুই তো কিছুদিন আগেও রাজ কে মাস্ক পরা দেখেছিলি ঘুরতে বেড়িয়ে একইরকম লেগেছিল?
রিখিয়া-- সামনাসামনি যখন দেখতাম তখন ওরকম লাগতো না কিন্তু যখন সাইড ফেস দেখতাম তখন ওরকম লাগতো। তাও কিছু বলিনি আমি তখন ভয়ে।
কৃশ-- রাহাত! দে ওটা।
রাহাত কৃশ কে একটা মাস্ক দিলো, মাস্কটা পরতেই রিখিয়া অবাক হয়ে বললো।
রিখিয়া-- তুমি? তুমিই মাঝে মধ্যে রাতে আমার কাছে যেতে?
কৃশ-- হমম।
রিখিয়া-- তাহলে বাকি সময় যে আমাকে টর্চার করতো সে কে ছিলো?
কৃশ-- রেহান!
রিখিয়া-- কিহহহহ??
অর্ঘ্য-- মানে টা কি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
ইতি-- প্লিজ খুলে বলো কৃশ।
কৃশ-- আমি কুহু কে নিয়ে গিয়ে রেহানের বাংলাতে রেখে আসি। রেহান বলেছিল ওই বাংলো তে কেউ থাকে না তাই জন্য কুহুকে সেফ রাখার জন্য, কেউ যেন জানতে না পারে যে ও কোথায় আছে এটার জন্য আমি ওকে রেহানের বাংলাতেই রাখি। যদি নিজের বাংলো তে নিয়ে আসতাম তাহলে মিস্টার চৌধুরী জেনে যেতো যে আমি প্ল্যান করে কুহু কে নিজের কাছে নিয়ে চলে এসেছি আর রায়হান আংকেল কে বলে দিত।
রাহাত-- আসল ঘটনাটা এবার আমি বলছি। আমি আর রেহান অনেক আগে থেকেই লন্ডনে বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম কিন্তু ওর সাথে আমার ঝগড়া লেগেই থাকত কিন্তু তারপরেও আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। একদিন হঠাৎ করেই রাজ আমাদের স্কুলে আসে আর আমাদের দুজনের সাথে বন্ধুত্ব হয়। আমরা দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে তিনজন বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে উঠি। আমাদের বন্ধুত্ব এতটাই গভীর এবং ফেমাস হয়ে যায় যে স্কুল কলেজ থেকে সবাই আমাদেরকে একটা গ্রুপ নামে চিনতো, এক ডাকে চিনতো! #3R_Group। আমরা তিন বন্ধুই রাফিয়া দির কথা শুনে চলতাম সবসময়। ওখানে আপন বলতে শুধু দি ছিলো। রাজ খুব কম বয়সে বিজনেস ধরেছিল কেউ ভাবতেই পারবেনা কোন ছেলে ১৬ বছর বয়সে বিজনেস ধরতে পারে। ওর ভালো লাগতোনা বিজনেস করতে কিন্তু শুধুমাত্র নিজের বাবার টাকায় চলবে না দেখে তাই বিজনেস করত। রাজের ইচ্ছে ছিলো ও সিঙ্গার হবে এদিকে রেহানের ও তাই ইচ্ছে ছিল রেহান কোনদিনই বিজনেস এর ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড ছিলনা ইন্টারেস্টেড ছিলাম আমি।
রাফিয়া-- রাজ গান গাক এটা রেহান চাইত না কোনদিনই কারণ কলেজ ক্যাম্পাসে অলওয়েজ সব বন্ধুরা রাজকে একেক দিন একেক রকমের ইন্সট্রুমেন্ট বাজাতে বলতো।একদিন হারমোনিকা, একদিন ফ্লুট (বাঁশি) তো একদিন গিটার তার সঙ্গে গান তো আছেই। রেহানের এসব সহ্য হতো না। রাজ এটা জানত তাই কখনোই গান গাইতে চাইত না শুধুমাত্র বন্ধুদের কথাই গান গাইতো। একদিন আমাদের কলেজে একটা কম্পিটিসন হয় যেখানে স্যাররা বলে যে এই কম্পিটিশনের তিনটে রাউন্ড হবে, ফাইনালে যে জিতবে সে একজন মিউজিক ডিরেক্টর এর সাথে প্লেব্যাক করতে চান্স পাবে। আমি আর রাহাত জোর করে গিয়ে রাজের নাম কম্পিটিশনে লিখিয়ে দিয়ে আসি। এদিকে রেহান তো নিজে থেকেই নাম দিয়েছিল আর রাজ কে বলে দিয়েছিল যাতে ও নাম না দেয়। রাজ বলেছিল যে ও নাম দেবে না কিন্তু আমি সেটা শুনে নেওয়ায় রাহাতের সাথে গিয়ে কম্পিটিশনে রাজের নাম লিখিয়ে দিয়ে আসি।
রাহাত-- এই নিয়ে দির সাথে ঝামেলা না করলেও রাজ আমার সাথে অনেক ঝামেলা করে বলে যে কেন আমি নাম দিলাম কিন্তু আমি অনেক জোর করার পর রাজ রাজি হয়ে যায়। কম্পিটিশনের দুটো রাউন্ড খুব ভালোভাবেই রাজ পার্টিসিপেট করেছিল। ফাইনাল রাউন্ডে রাজ আর রেহান চান্স পেয়েছিল। সবাই জানত যে ফাইনাল রাজ জিতবে কিন্তু ঠিক সেইসময় ফাইনাল রাউন্ডে রাজ আসতে পারল না। আমি বলেছিলাম যে আমি রাজের সাথে সেদিনটা থাকবো কিন্তু রাজ বলেছিল না ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবে। ফাইনাল রাউন্ডে সঠিক সময় না পৌঁছানতে রেহান কে উইনার ঘোষণা করে দেওয়া হয়। আমি আর দি দুজনেই রেগে চলে আসি ভেবেছিলাম রাজ ইচ্ছে করে পার্টিসিপেট করল না রেহানকে জেতানোর জন্য।
রাফিয়া-- কিন্তু আমাদের ধারণা ভুল ছিল সকালে যখন রাজের বাসায় রাজের সাথে দেখা করতে গেলাম তখন দেখলাম রাজের কপালে আর পায়ে ব্যান্ডেজ করা। এসব কি করে হলো জিজ্ঞেস করাতে রাজ জানালো যখন ফাইনাল রাউন্ডে পার্টিসিপেট করার জন্য ও আসছিল রাস্তা দিয়ে তখন ওর উপরে অ্যাটাক করা হয়। প্রাণে মারতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি জাস্ট একটু চোট লেগেছিল।
রাহাত-- আমি রেহানকে সন্দেহ করেছিলাম। রাজের অজান্তে আমি খোঁজনিই, যে ছেলেগুলো রাজ কে মারতে গিয়েছিল তাদের কাছ থেকে জানতে পারি যে ওরা রেহানের কথায় কাজটা করেছে। আর রাজকে তা বলাযে রাজ আমার কথায় বিশ্বাস করে না আর সেই সময়ে রেহান কথাটা শুনে রাজের সামনে ভালোমানুষের নাটক করে। রাজ আমাকে ভুল বুঝে সেদিন আমার গায়ে হাত তুলেছিল আর আমাদের বন্ধুত্ব ভেঙে দিয়েছিল। রাজ বলেছিল আমি হয়তো রাজ আর রেহানের বন্ধুত্ব ভাঙতে চাইছি তাই এসব রেহানের নামে উল্টোপাল্টা কথা বলছি। সেদিনই আমি চলে এসেছিলাম ওখান থেকে ইন্ডিয়াতে।
রাহাত কথাটা বলেই চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নিল বোঝাই যাচ্ছে যে রাহাতের কষ্ট হচ্ছে। কৃশ দু-হাত দিয়ে মুখ ঢেঁকে বসে ছিল রাহাতের কথা শেষ হতেই সঙ্গে সঙ্গে উঠে রাহাতের কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো।
কৃশ-- স্যরি ভাই! আমি কোনোদিনই ভাবেনি যে রেহান আমার সাথে এরকম করবে তাই আমি তোর কথা বিশ্বাস করতে পারিনি ক্ষমা করে দে ভাই আমাকে।
রাহাত-- (কৃশ কে জড়িয়ে ধরে) তোর উপর অভিমান হয়েছিল তাই চলে এসেছিলাম। কিন্তু সবটা জানার পর আর কোনো মানেই নেই এসবের।
অর্ঘ্য-- তুই কি চিনতে পারিসনি কৃশ কে যখন আমাদের বাসায় ওকে দেখেছিলি?
রাহাত-- আমি রাজ কে চিনবো না এটা হতে পারে? আমি চিনেছিলাম কিন্তু কিছু বলিনি। আসলে তিন বছর আগে আমি রাজের আগেই ইন্ডিয়া তে চলে আসি। আর আমার আগে এসেছিলো রাফিয়া দি। ডুয়ার্সে এসে আমার পরিচয় হয় মুনের সাথে, কিছুদিন পরেই হঠাৎ করে মুন আমাকে বলে ওরা একটা মেয়েকে পেয়েছে রাস্তা থেকে। আমি মুনের কথা মতো মেয়েটাকে দেখতে যাই আর ওখানেই স্তব্ধ হয়ে যাই। কারণ মেয়েটা রিখিয়া ছিলো। আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না রিখিয়া কি করে মুনের কাছে এলো, ওর তো রায়হান আঙ্কেল এর কাছে থাকার কথা। আমি রিখিয়ার ব্যাপারে খোঁজ নেবো ভেবেও খোঁজ নিইনি তার কারণ রাজের উপর অভিমান। ভেবেছিলাম রাজের ভালোবাসা, রাজ বুঝবে আমার কি দরকার। কিন্তু যখন তোদের বাসায় গিয়ে রাজ কে অন্য পরিচয়ে দেখি তখনই বুঝেছিলাম যে অনেক বড়ো কিছু হয়েছে।
ইতি-- তুমি কি করে জানলে কৃশ রিখিয়া কে ভালোবাসতো।
রাহাত-- আর বলিস না লন্ডনের উমম...
কৃশ-- চুপ থাক! বহুত বকিস তুই। আর বলতে হবে না। (রাহাতের মুখ চেপে ধরে)
রাফিয়া-- রাহাত না বললেও আমি বলবো। রাজের ঘরে সিলিং আর মেঝে বাদ দিয়ে দেয়ালের কোনো অংশ ফাঁকা নেই। সব জায়গায় শুধু রিখিয়ার ছবি।
ইয়ুগ-- কোথা থেকে পেয়েছিল?
রাফিয়া-- ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম। অভাব আছে নাকি ছবি পাওয়ার।
রাহাত-- এখানে এসে রাজের সাথে দেখা হওয়ার পর আমি ওর সাথে যোগাযোগ করি তারপর জানতে পারি ওর সাথে কি কি ঘটেছিল তিন বছর আগে। যখনই রাজ বলল যে রিখিয়াকে রেহানের বাংলাতে রেখেছে তখনই আমার সন্দেহ হয়েছিল যে এসবের পেছনে অনেক বড় একটা চক্রান্ত আছে। আমি খোঁজ নিই আর খোঁজ নিতেই কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে আসে। এই সবকিছুর মাস্টারমাইন্ড ছিল মিস্টার আসিফ চৌধুরি রাজের বাবা।
কৃশ-- আমি যখন লন্ডন থেকে ইন্ডিয়াতে ফিরে আঙ্কেলের সাথে দেখা করতে যাই তখন মিস্টার চৌধুরি আমাকে বাঁধা দিয়ে একটা রেকর্ডিং শুনায় সেখানে রায়হান আঙ্কেল বলছে যে উনি উনার কোম্পানি টা বিক্রি করতে চায় আর কুহুকে বিক্রি করতে চায় একচুয়ালি ঘটনাটা সেটা নয়। মিস্টার চৌধুরীর ইচ্ছা ছিল রায়হান আঙ্কেলের কোম্পানি নিজের নামে করে নেবে।কুহুকে মিস্টার চৌধুরি কোনদিনই পছন্দ করত না তার কারণ কুহুকে রায়হান আঙ্কেল পেয়েছিল। ইচ্ছে করেই রায়হান আঙ্কেল এর বিজনেস লসের দিকে ঠেলে দেয় আর একজন স্মাগলার এর কাছে কুহুকে বেচে দিতে চায়। রায়হান আঙ্কেল কে অবশ্য সেটা বলেনি বলেছিল একজন বিজনেসম্যান কুহুকে বিয়ে করতে চায়। যেকোনো মতে আঙ্কেল কে রাজি করিয়েছিলো আর পুরো ব্যাপারটা রেকর্ড করে সেটাকে এডিট করে, সাজিয়ে আমার কাছে তুলে ধরেছিলো।
রাহাত-- রাজ জানতোই না রাজের অজান্তে রাজের দুজন কাছের মানুষ রাজকে ঠকাচ্ছে। রেহান রিখিয়াকে ভালোবাসতো। তাও আবার অনেক আগে থেকেই। একদিন লন্ডনে রাজ যখন ঘরে ছিল না তখন আমি রাজের ঘরে যাই আর ঘরে ঢুকতে গিয়ে শুনতে পাই রেহান কার সাথে যেন কথা বলছে দরজাটা একটু ফাঁক করে দেখতে দেখি রেহান রিখিয়ার ছবির উপর হাত দিয়ে বলছিল যে রেহান রিখিয়া কে ভালোবাসে। এই কথাটা আমি রাজকে তখন বলিনি তার কারণ আমার কাছে কোন প্রুফ ছিল না। যখন আমাকে পুরো ঘটনা বলল তখনই আমি রাজকে লন্ডনের ঘটনাটা বলি আর রাজ আমাকে খোঁজ নিতে বলে। খোঁজ নিয়ে এই সবকিছু জানতে পারি।
কৃশ-- আমি রেহানকে বলেছিলাম ওর খেয়াল রাখতে কিন্তু ও যে রিখিয়া কে এক মাস ধরে টর্চার করেছে তাও আবার আমার নাম নিয়ে আমি সেটা ভাবতেই পারিনি। যখন বিজনেসটা মোটামুটি ঠিক করতে পেরেছিলাম তখনই আমি আঙ্কেল এর কাছে গেছিলাম সবটা জানাতে কিন্তু ওখানে গিয়ে আঙ্কেল-আন্টী কে পাইনি। তাই ঠিক করেছিলাম এবার কুহুর কাছে যাবো। রেহান কে ফোন করে বলে দিই যে কুহুকে বলতে আমি আসছি। সঙ্গে এতোদিন যা হয়েছে সেটাও বলতে। কিন্তু বাংলো তে যখন ঢুকি তখন আমি অবাক হয়ে যাই রেহান কে আহত অবস্থায় দেখে। ও আমাকে বলে যে সবটা জানার পর কুহু বলেছে ও আমাকে ঘৃণা করে। থাকতে চায় না আমার কাছে। এটা বলেই নাকি রেহান কে ফুলদানি দিয়ে মেরে বেড়িয়ে যায়। আমিও সেইদিন কুহু কে খুঁজতে যাইনি। রাগ হয়েছিল, ভেবেছিলাম সবটা জানার পর আমাকে কি করে ভুল বুঝলো। কিন্তু কুহুকে তো সবটা জানানোই হয়নি।
রাহাত-- রেহান পুরোপুরি উল্টো কথা বলেছিল রিখিয়া কে। নিজে রাজ সেজে বলেছিল যে ও ইচ্ছে করে রিখিয়ার বাবার ক্ষতি করেছিল। শুধুমাত্র রিখিয়ার মন থেকে রাজ কে দুরে সরানোর জন্য, রাজের জন্য ঘৃণার সৃষ্টি করার জন্য। আসিফ আঙ্কেল কে রেহান নিজে থেকে ফোন করে জানিয়ে ছিলো যে রিখিয়া ওর বাংলো তে আছে। সেটা শুনেই আসিফ আঙ্কেল প্ল্যান করে ফেলেন। রেহান কে বলে দেন যাতে রিখিয়া কে রাজের নামে বিষিয়ে দেওয়া হয়। ইভেন ওরা যখন জানতে পারে যে রিখিয়া বিডি তে আছে তখনও সেইম কাজ করে। প্রথমে ক্যাফেটেরিয়া তে রেহান আসে। আর তারপর বাংলো তে আসিফ আঙ্কেল।
ইতি-- মাই গড! এতো প্ল্যানিং প্লটীং! কিন্তু তোমরা এতো কিছু জানলে কি করে?
রাহাত-- ওরা নিজের মুখে সবটা বলেছে। অ্যাকচুয়লী তোমাদের সবার মতো আমিও পুরোপুরি ঘেটে গেছিলাম। বাট ওরা নিজের মুখে যখন স্বীকার করলো তখন পুরোটা ক্লিয়ার হয়ে গেলো। আমি প্লে করছি রেকর্ডিংটা ওয়েট।
🌸
🌸
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]
নোট-- অনেক বড়ো করে পর্ব দিয়েছি তাই রহস্য সমাধান হয়ে গেছে। যারা বুঝতে পারেননি তারা পরের পর্বে আশা করছি ক্লিয়ার হয়ে যাবেন। আপনারা তো জানেনই আমার গল্পে এরকম জটিল রহস্য থাকে। আর আমি সেটা ভালো ভাবে ক্লিয়ার ও করে দিই।
আগামীকাল_গল্প_দেবো_না। আপনারা সবাই এতে বিরক্ত হবেন জানি। কিন্তু আমার কিছু করার নেই, কিছু কারণে আমি গল্প দিতে পারবো না আগামিকাল। আজকের পর্বে ৩০০০+ শব্দ আছে। আমি ১৫০০+ শব্দের ১ পর্ব লিখি সেখানে ৩০০০+ শব্দের এক পর্ব দিয়েছি। অর্থাৎ দুই পর্ব একসাথে। গল্পের আর ২ থেকে ৩ পর্ব আছে যা আমি মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি বারে মধ্যে অর্থাৎ এই সপ্তাহের মধ্যে শেষ করে দেবো।
ভালোবাসার_অন্যরুপ 🌸❤
সিজন_২
পর্ব_২৮
লেখিকা_Aye Sha (Koyel Banerjee)
রিখিয়া-- রাজ আমাকে ছাড়ো!
কৃশ-- ছেড়ে দিলে পরে যাবে, পরে গেলে ব্যাথা পাবে, ব্যাথা পেলে কষ্ট হবে আর তোমার কষ্ট হলে আমার কষ্ট হবে যেটা আমি চাই না।
রিখিয়া-- উফফ! তোমাকে আমি নামাতে বলেছি। ছেড়ে দিয়ে ফেলে দিতে বলিনি। গর্ধব!
কৃশ-- আমি গর্ধব?
রিখিয়া-- হ্যাঁ....এই কি করছো পরে যাবো তো নাকি? (কৃশের গলা জড়িয়ে)
কৃশ-- তুমি পরবে কি না জানি না কিন্তু আমি দমবন্ধ হয়ে মারা যাবো এটা সিওর। যেভাবে গলা ধরেছো সেভাবে থাকলে মরবো তো নিশ্চই।
কৃশের কথা শুনে রিখিয়া রেগে মুখ ফিরিয়ে নিলো। কৃশের গলা থেকে হাত সরাতে নিলেই কৃশ বলে উঠলো।
কৃশ-- হাত সরালে কিন্তু খুব খারাপ হবে। (কড়া সুরে)
রিখিয়া কৃশের কথা শুনে হাত না সরিয়ে কৃশের মুখের দিকে তাকালো আর রিখিয়া তাকাতেই কৃশ রিখিয়ার গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। রিখিয়া বড় বড় চোখ করে কৃশের দিকে তাকিয়ে আছে আর কৃশ নিজের ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে রিখিয়া কে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলোর ভিতরে। রিখিয়া কৃশের সাথে কথায় না পেরে কৃশের কাঁধে মাথা রেখে আস্তে করে বললো।
রিখিয়া-- রাজ! ড্রয়িং রূমে প্রবেশ করার আগেই নামিয়ে দিয়ো আমায়। বড়রা সবাই হয়তো ওখানেই আছে।
কৃশ-- তোমাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার সময় সব বড়দের সামনেই এভাবে কোলে করে নিয়ে গেছি তাই আসার সময় ও তুমি আমার কোলে থাকবে।
রিখিয়া-- কিন্তু ওরা কি সত্যি বাংলো তে ফিরে এসেছে?
কৃশ-- আমার মনে হয় না শুধু শুধু হসপিটালে বসে থাকবে। তোমার ফেরার হলে তো বাংলোতেই ফিরবে হসপিটালে তো না তাই না?
রিখিয়া-- হমম তাও ঠিক। আচ্ছা আমরা এসে পরেছি এবার নামিয়ে দাও প্লিজ! (অনুরোধ করে)
কৃশ একবার রাগী চোখে রিখিয়ার দিকে তাকাতেই রিখিয়া ভয়ে চুপসে গিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো আর কৃশ রিখিয়া কে নিয়ে বাংলোর ড্রয়িং রূমে প্রবেশ করলো। ওরা প্রবেশ করতেই দেখলো সবাই অপেক্ষা করে বসে আছে ওদের জন্য, ওরা প্রবেশ করতেই সবাই উঠে দাঁড়ালো। কৃশ রিখিয়া কে ওভাবে দেখে সবাই মিটিমিটি হাসছে দেখে রিখিয়ার ভীষণ লজ্জা লাগছে, সবার থেকে চোখ সরিয়ে কৃশের কানে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
রিখিয়া-- তুমি কি এখনো আমাকে নামাবে না রাজ? সারাদিন এভাবেই থাকার প্ল্যান আছে?
কৃশ-- উমম, আই লাইক ইট! এভাবে থাকলে মন্দ হয় না।
রিখিয়া রেগে বড় বড় চোখ করে তাকাতেই কৃশ হেসে ফেললো আর রিখিয়া কে গিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো। রিখিয়া কে সোফায় বসাতেই মীরা আর ইতি গিয়ে রিখিয়ার পাশে বসে পরলো।
মীরা-- ঠিক আছিস তুই?
ইতি-- ঠিক না থেকে যাবে কই? দেখছো না কার সাথে এসেছে। (মুখ টিপে হেসে)
রিখিয়া-- চুপ কর। মাম্মি, পাপা ডক্টর কে ডাকো রাজের হাত থেকে রক্ত পরছে।
রিখিয়ার কথা শুনে সবাই কৃশের দিকে তাকাতেই দেখলো কৃশের ডান হাতের কব্জির শিরার জায়গাতে একটা রুমাল বাঁধা। রুমাল টা রক্তে লাল হয়ে গেছে। আমান কৃশের কাছে গিয়ে কৃশের কাঁধে হাত রেখে বললো।
আমান-- এসব কি কৃশ? কীভাবে এভাবে হাত কাটলো তোমার?
রিখিয়া-- কোনো কিছুতে কাটেনি পাপা। ও নিজে কেটেছে। আমি আরেকটু দেরী করলে ও নিজেকে...(ছলছল চোখে কাঁপা গলায়)
রিখিয়া মীরাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো এদিকে কৃশ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, অর্ঘ্য রেগে গিয়ে কৃশের কলার ধরে ঘুরিয়ে দিলো। রাহাত গিয়ে কৃশের আরেক পাশে দাঁড়ালো আর রাফিয়া সামনে দু-হাত ভাঁজ করে দাঁড়ালো।
কৃশ-- ত..তোরা এভাবে ক..কেন আমার দিকে তাকিয়ে আছিস? (ভয়ে ভয়ে)
অর্ঘ্য-- তোর কিমা বানাবো তাই।
কৃশ-- ছেড়ে দে ভাই। মরে যাইনি আমি।
রাফিয়া-- রিখিয়া যদি আরেকটু দেরী করতো তাহলে...
কৃশ-- করেনি তো দেরী। একদম পারফেক্ট টাইমিং এ এন্ট্রি করেছে, হিহিহি ছেড়ে দে এবার।
অর্ঘ্য-- তোকে তো আজকে আমি মারবোই মারবো। তুই পালাতে পারবি না।
অর্ঘ্য কৃশ কে একটা ঘুসি মারতে নিলেই রিখিয়া চিৎকার করে ওঠে।
রিখিয়া-- অর্ঘ্যওওওও!! ছেড়ে দে ওকে। ওর হাতে আগে ব্যান্ডেজ করতে হবে। এখন মজা করার সময় নয়।
অর্ঘ্য রিখিয়ার চিৎকার শুনে ঘাবড়ে গিয়ে ছেড়ে দিয়ে একবার রিখিয়ার দিকে তাকায়, তাকিয়ে দেখে রিখিয়া ভ্রু কুঁচকে রেগে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। সেটা দেখে অর্ঘ্য কৃশের দিকে ফিরে ওর কলার ঠিক করে দিয়ে বললো।
অর্ঘ্য-- তোলা রইলো মারটা। বউয়ের জন্য বেঁচে গেলি।
অর্ঘ্য কথাটা বলে ফার্স্ট এইড বক্স আনতে চলে গেলো। কৃশ কে সোফায় বসিয়ে দিতেই কৃশ কে আমান বললো।
আমান-- তুমি ঠিক আছো তো?
কৃশ-- হ্যাঁ আঙ্কেল আমি ঠিক আছি। আমার অভ্যেস আছে এসবে। (শেষের কথাটা আস্তে করে)
রিখিয়া-- অভ্যেস আছে মানে? কি বলতে চাইছো তুমি?
সবাই শুনতে না পেলেও রিখিয়া ঠিকই শুনতে পেয়েছে কৃশের কথা, যেটা কৃশ বুঝতে পারেনি। কৃশ রিখিয়া কে কি বলবে বুঝতে না পেরে যেই কিছু বলতে যাবে তখনই রাফিয়া বলে উঠলো।
রাফিয়া-- এটা কিছুই না রাজের কাছে রিখিয়া। এরম অনেক ঘটনা ও ঘটিয়েছে। সব জানতে পারবি আস্তে আস্তে। আমিই জানাবো তোকে।
কৃশ-- দি প্লিজ!
রাফিয়া-- চুপ করে থাক। একদম কথা বলবি না আমার সাথে। (ধমক দিয়ে)
কৃশ রাফিয়ার ধমক খেয়ে চুপ করে গেলো আর মাথা নামিয়ে নিলো। আড় চোখে রিখিয়ার দিকে তাকাতেই দেখলো রিখিয়ার চোখ দিয়ে পানি পরছে। কৃশ নিজের হাত নিজেই চেপে ধরলো। অর্ঘ্য এসে তাড়াতাড়ি করে ব্যান্ডেজ করে দিলো কৃশের হাতে। সব শেষে আমান বললো।
আমান-- কৃশ মানছি আমি তুমি যা করেছো তা মিস্টার চৌধুরি কে শাস্তি দেওয়ার জন্যে করেছো। তবুও এভাবে আমাদের সবার অজান্তে ইভেন অর্ণার অজান্তে অর্ণা কে বিয়ে করাটা তোমার উচিত হয়নি।
কৃশ-- আমি জানি আঙ্কেল। কিন্তু আমার কাছে কোনো উপায় ছিলো না। আমি জানতাম আমার পরিচয় পেলেই কুহু আমাকে দুরে সরিয়ে দেবে। তাই বাধ্য হয়ে আমি কাজটা করেছি।
আঁধার-- আমরা সবটা জানতে চাই কৃশ। কি এমন হয়েছিলো তিন বছর আগে। অর্ণা আমাদের মেয়ে, আমরা কি জানতে পারি না ওর সাথে কি হয়েছিল?
কৃশ কিছু না বলে রিখিয়ার দিকে তাকাতেই রিখিয়া চোখ দিয়ে ইশারা করলো সবটা বলার জন্যে। কৃশ রিখিয়ার সম্মতি পেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করলো।
কৃশ-- আজ থেকে ১৫ বছর আগে আমি ফাস্ট টাইম ইন্ডিয়া আসছিলাম লন্ডন থেকে, আমার বয়স তখন ৬। আমার জন্ম লন্ডনে, আমি ওখানেই থাকতাম। এখানে আসছিলাম আঙ্কেল-এর কথায়। আই মিন রিখিয়ার ড্যাডি রায়হান চৌধুরির কথায়। উনি আর আমার বাবা আসিফ চৌধুরি বিসনেস পার্টনার ছিলো, মিস্টার চৌধুরি এখানেই থাকতেন আর আমি লন্ডন থাকতাম। আঙ্কেল একদিন আমাকে ফোন করে বলেন যে তিনি তার মেয়েকে খুঁজে পেয়েছেন, আমার ফ্রেন্ড কে খুঁজে পেয়েছেন সেই শুনেই আমি ইন্ডিয়া যাবো বলে ঠিক করি। মিস্টার চৌধুরিও আমাকে নিয়ে আসেন ওখান থেকে। ডুয়ার্সেই আমাদের বাংলো। এখানে যখন ফিরছিলাম তখন স্যামসিং-এর রাস্তা দিয়ে আসার সময় হঠাৎ একটা মেয়ের কান্নার আওয়াজ পাই আমি। গাড়ি থেকে নেমে অনেক খুঁজে মেয়েটাকে পাই না। তারপর জঙ্গলের দিকে একটু এগিয়ে যেতেই আবার কান্নার আওয়াজ পাই বুঝতে পারি জঙ্গলের ভিতরেই মেয়েটা আছে। আমার সাথে যেই গার্ডসরা ছিলো তাদের নিয়ে জঙ্গলে অনেক্ষন খোঁজার পর আমি খুঁজে পাই মেয়েটাকে।
কৃশের কথা শুনে সবাই হাসলো, এদিকে রিখিয়া আর কৃশ একে অপরের দিকে একপলকে তাকিয়ে আছে। হয়তো ফিরে গেছে নিজেদের অতীতে। সবার কাছে আজ পরিস্কার কৃশ কেন রিখিয়া কে "কুহু" ডাকে।
মুন-- তারপর?
কৃশ-- আমি জঙ্গল থেকে গার্ডসহ কুহু কে নিয়ে বেড়িয়ে আসি। কুহু কে জিজ্ঞেস করতেই ও বলে দেয় যে আরেকটু দূরেই ওদের বাংলো। অ্যাকচুয়লী স্যামসিং-এর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যে রাস্তাটা যায় তার শেষ প্রান্তেই ওদের বাংলো ছিলো। তাই কুহু আমার হাত ধরে টেনে ওদের বাংলোর উদ্দেশ্যে দৌঁড় দেয়। বাংলো তে ঢুকে আমিও অবাক হই কারণ এটাই ছিলো আমার আঙ্কেল-এর বাংলো। ভিতরে যেতেই কুহু দৌঁড়ে গিয়ে আঙ্কেল-এর কোলে উঠে পরে আর আমি বুঝে যাই এটাই আমার ফ্রেন্ড।
ইতি-- গার্লফ্রেন্ড হবে কথাটা। (কৃশের কানে ফিসফিসিয়ে)
ইতির কথায় কৃশ মুচকি হাসলো। তারপর আবার বলতে শুরু করলো।
কৃশ-- ওটাই ছিলো আমার আর কুহুর শেষ দেখা। কয়েকদিন পর আমি আবার লন্ডন ফিরে যাই। কারণ আমার পড়াশোনা ওখানেই। যাওয়ার সময় বলে যাই "আমি ঠিক ফিরবো ওর কাছে"। কয়েকদিনে আমাদের বন্ধুত্বটা অনেক গভীর হয়ে গেছিলো।
অর্ঘ্য-- তারপর আর তোদের দেখা হয়নি?
কৃশ-- সামনাসামনি হয়নি।
অর্ঘ্য-- মানে?
কৃশ-- আমি লন্ডন ফিরে ওখানে নিজের পড়াশোনা করতে করতে সময়ের সাথে সাথে বুঝে যাই আমি কুহু কে ভালোবেসে ফেলেছি। আর এটা বুঝতে পারায় ঠিক করে নিই যে এবার আমি ইন্ডিয়া ফিরে যাবো। দীর্ঘ ১২ বছর পর যখন আমার ১৮ বছর বয়স তখন আমি এখানে ফিরে আসে। কিন্তু এখানে ফিরে যা দেখি তা আমার ধারণার বাইরে ছিলো। এখানে এসে জানতে পারি রায়হান আঙ্কেলের বিসনেসে লস হওয়াতে আঙ্কেল বাংলো বেচে দিয়েছে। টাকার এতটাই প্রয়োজন ছিলো যে কুহু কেও একজন স্মাগলারের কাছে বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিচ্ছিল।
রিখিয়া-- এসব কি বলছো তুমি? (অবাক হয়ে)
কৃশ-- হমম। আমি এটা এখানে এসে রায়হান আঙ্কেলের মুখে শুনি। কিছু না বলে ওই স্মাগলার যার সাথে ডিল করেছিল আঙ্কেল আমি তার সাথে কথা বলি। আমি লন্ডনে নিজের খরচা নিজে চালাতাম। মিস্টার চৌধুরির (কৃশের বাবা) কোনো হেল্প আমার লাগতো না। আমার কোম্পানি ছিলো, আমার একটা ফ্রেন্ডের কোম্পানি তে জব করতাম সেখান থেকেই ভালো কাজ করার জন্যে কোম্পানি টা উনি আমার নামে করে দেয়।
রাহাত-- "চৌধুরি গ্রুপ অফ কোম্পানি'স"।
কৃশ-- আমার নিজের ইনকাম ছিলো যেটা মিস্টার চৌধুরি জানতো না। আমি ওই স্মাগলারের সাথে কথা বলে আঙ্কেল কে ও যে টাকা দিচ্ছিল আমি ওকে তার ডাবল টাকা দিয়ে কিনে ফেলি। ও কুহু কে নিজের কাছে নিতেও পারেনি, তার আগেই আমার লোক কুহু কে নিয়ে আসে। আর একটা বাংলো তে রেখে আসে।
আমান-- এর মানে মিস্টার রায়হান কে টাকা দিতে তোমার লোকেরা গেছিলো?
কৃশ-- হ্যাঁ আঙ্কেল। এরপর আমি চেষ্টা করি কি করে রায়হান আঙ্কেল কে লসের মুখ থেকে বাঁচাবো। বিসনেসটাকে আবার কি করে দাঁড় করাবো। মিস্টার চৌধুরি কেও এসব ব্যাপারে আমি কিছু জানাইনি।
আঁধার-- তুমি তোমার বাবা কে মিস্টার চৌধুরি কেন বলো?
কৃশ-- ছোটোবেলায় জ্ঞান হওয়ার পর থেকে বাবা বলে ওনাকে কখনো সন্মান করিনি। তাই আজও ওটা নেই ওনার প্রতি। আমার মা কে হারিয়ে বাবার ভালোবাসা পেতে চেয়েছিলাম উনি তার প্রতিদানে আমাকে লন্ডন পাঠিয়ে একলা করে দেন। অনেক আশা নিয়ে বলেছিলাম "আমি তোমার কাছে থাকবো। লন্ডন যাবো না, ওখানে কাওকে চিনি না আমি।" উনি বলেছিল "তোমার জন্য আমার সময় নেই। আমাকে বিসনেসে সময় দিতে হবে। তুমি লন্ডনে ঠিক বন্ধু পেয়ে যাবে।" পরিবর্তে আর কিছু বলতে পারিনি সেইদিন। মেনে নিয়েছিলাম ওনার কথা, চলে গেছিলাম লন্ডন। তারপর থেকেই আর কোনোদিন বাবা বলে সম্বোধন করা হয়নি।
রিখিয়া-- এটা কি করে সম্ভব রাজ? মিস্টার চৌধুরি তো আমাকে বললেন তুমি বাধ্য করেছিলে ড্যাডি কে কোম্পানি বিক্রি করাতে। তারপর ড্যাডি কে মিথ্যে বলে আমায় তুলে নিয়ে গিয়ে টর্চার করেছিলে। ইভেন রেহান! রেহানও আমাকে একই কথা বলেছে। তুমি আমাকে ড্যাডির কাছ থেকে মিথ্যে বলে নিয়ে গিয়ে একটা বাংলোতে রেখেছিলে যেটা কেউ জানতো না আর তারপর দিনের পর দিন আমাকে টর্চার করেছিলে। ওদের কথা কি করে অবিশ্বাস করবো? আমিও তো দেখেছিলাম তোমাকে।
কৃশ-- হমম সত্যি বলেছে রেহান।
ইয়ুগ-- হোয়াটটটট? তুই অর্ণা কে টর্চার করেছিস? (রেগে)
রাহাত-- এক মিনিট ভাইয়া! তুই রাজ কেই দেখেছিলিস রিখিয়া?
রিখিয়া-- মাস্ক পরা থাকতো তাই মুখ কোনো সময় দেখতে পাইনি।
রাহাত-- তুই তো কিছুদিন আগেও রাজ কে মাস্ক পরা দেখেছিলি ঘুরতে বেড়িয়ে একইরকম লেগেছিল?
রিখিয়া-- সামনাসামনি যখন দেখতাম তখন ওরকম লাগতো না কিন্তু যখন সাইড ফেস দেখতাম তখন ওরকম লাগতো। তাও কিছু বলিনি আমি তখন ভয়ে।
কৃশ-- রাহাত! দে ওটা।
রাহাত কৃশ কে একটা মাস্ক দিলো, মাস্কটা পরতেই রিখিয়া অবাক হয়ে বললো।
রিখিয়া-- তুমি? তুমিই মাঝে মধ্যে রাতে আমার কাছে যেতে?
কৃশ-- হমম।
রিখিয়া-- তাহলে বাকি সময় যে আমাকে টর্চার করতো সে কে ছিলো?
কৃশ-- রেহান!
রিখিয়া-- কিহহহহ??
অর্ঘ্য-- মানে টা কি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
ইতি-- প্লিজ খুলে বলো কৃশ।
কৃশ-- আমি কুহু কে নিয়ে গিয়ে রেহানের বাংলাতে রেখে আসি। রেহান বলেছিল ওই বাংলো তে কেউ থাকে না তাই জন্য কুহুকে সেফ রাখার জন্য, কেউ যেন জানতে না পারে যে ও কোথায় আছে এটার জন্য আমি ওকে রেহানের বাংলাতেই রাখি। যদি নিজের বাংলো তে নিয়ে আসতাম তাহলে মিস্টার চৌধুরী জেনে যেতো যে আমি প্ল্যান করে কুহু কে নিজের কাছে নিয়ে চলে এসেছি আর রায়হান আংকেল কে বলে দিত।
রাহাত-- আসল ঘটনাটা এবার আমি বলছি। আমি আর রেহান অনেক আগে থেকেই লন্ডনে বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম কিন্তু ওর সাথে আমার ঝগড়া লেগেই থাকত কিন্তু তারপরেও আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। একদিন হঠাৎ করেই রাজ আমাদের স্কুলে আসে আর আমাদের দুজনের সাথে বন্ধুত্ব হয়। আমরা দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে তিনজন বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে উঠি। আমাদের বন্ধুত্ব এতটাই গভীর এবং ফেমাস হয়ে যায় যে স্কুল কলেজ থেকে সবাই আমাদেরকে একটা গ্রুপ নামে চিনতো, এক ডাকে চিনতো! #3R_Group। আমরা তিন বন্ধুই রাফিয়া দির কথা শুনে চলতাম সবসময়। ওখানে আপন বলতে শুধু দি ছিলো। রাজ খুব কম বয়সে বিজনেস ধরেছিল কেউ ভাবতেই পারবেনা কোন ছেলে ১৬ বছর বয়সে বিজনেস ধরতে পারে। ওর ভালো লাগতোনা বিজনেস করতে কিন্তু শুধুমাত্র নিজের বাবার টাকায় চলবে না দেখে তাই বিজনেস করত। রাজের ইচ্ছে ছিলো ও সিঙ্গার হবে এদিকে রেহানের ও তাই ইচ্ছে ছিল রেহান কোনদিনই বিজনেস এর ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড ছিলনা ইন্টারেস্টেড ছিলাম আমি।
রাফিয়া-- রাজ গান গাক এটা রেহান চাইত না কোনদিনই কারণ কলেজ ক্যাম্পাসে অলওয়েজ সব বন্ধুরা রাজকে একেক দিন একেক রকমের ইন্সট্রুমেন্ট বাজাতে বলতো।একদিন হারমোনিকা, একদিন ফ্লুট (বাঁশি) তো একদিন গিটার তার সঙ্গে গান তো আছেই। রেহানের এসব সহ্য হতো না। রাজ এটা জানত তাই কখনোই গান গাইতে চাইত না শুধুমাত্র বন্ধুদের কথাই গান গাইতো। একদিন আমাদের কলেজে একটা কম্পিটিসন হয় যেখানে স্যাররা বলে যে এই কম্পিটিশনের তিনটে রাউন্ড হবে, ফাইনালে যে জিতবে সে একজন মিউজিক ডিরেক্টর এর সাথে প্লেব্যাক করতে চান্স পাবে। আমি আর রাহাত জোর করে গিয়ে রাজের নাম কম্পিটিশনে লিখিয়ে দিয়ে আসি। এদিকে রেহান তো নিজে থেকেই নাম দিয়েছিল আর রাজ কে বলে দিয়েছিল যাতে ও নাম না দেয়। রাজ বলেছিল যে ও নাম দেবে না কিন্তু আমি সেটা শুনে নেওয়ায় রাহাতের সাথে গিয়ে কম্পিটিশনে রাজের নাম লিখিয়ে দিয়ে আসি।
রাহাত-- এই নিয়ে দির সাথে ঝামেলা না করলেও রাজ আমার সাথে অনেক ঝামেলা করে বলে যে কেন আমি নাম দিলাম কিন্তু আমি অনেক জোর করার পর রাজ রাজি হয়ে যায়। কম্পিটিশনের দুটো রাউন্ড খুব ভালোভাবেই রাজ পার্টিসিপেট করেছিল। ফাইনাল রাউন্ডে রাজ আর রেহান চান্স পেয়েছিল। সবাই জানত যে ফাইনাল রাজ জিতবে কিন্তু ঠিক সেইসময় ফাইনাল রাউন্ডে রাজ আসতে পারল না। আমি বলেছিলাম যে আমি রাজের সাথে সেদিনটা থাকবো কিন্তু রাজ বলেছিল না ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবে। ফাইনাল রাউন্ডে সঠিক সময় না পৌঁছানতে রেহান কে উইনার ঘোষণা করে দেওয়া হয়। আমি আর দি দুজনেই রেগে চলে আসি ভেবেছিলাম রাজ ইচ্ছে করে পার্টিসিপেট করল না রেহানকে জেতানোর জন্য।
রাফিয়া-- কিন্তু আমাদের ধারণা ভুল ছিল সকালে যখন রাজের বাসায় রাজের সাথে দেখা করতে গেলাম তখন দেখলাম রাজের কপালে আর পায়ে ব্যান্ডেজ করা। এসব কি করে হলো জিজ্ঞেস করাতে রাজ জানালো যখন ফাইনাল রাউন্ডে পার্টিসিপেট করার জন্য ও আসছিল রাস্তা দিয়ে তখন ওর উপরে অ্যাটাক করা হয়। প্রাণে মারতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি জাস্ট একটু চোট লেগেছিল।
রাহাত-- আমি রেহানকে সন্দেহ করেছিলাম। রাজের অজান্তে আমি খোঁজনিই, যে ছেলেগুলো রাজ কে মারতে গিয়েছিল তাদের কাছ থেকে জানতে পারি যে ওরা রেহানের কথায় কাজটা করেছে। আর রাজকে তা বলাযে রাজ আমার কথায় বিশ্বাস করে না আর সেই সময়ে রেহান কথাটা শুনে রাজের সামনে ভালোমানুষের নাটক করে। রাজ আমাকে ভুল বুঝে সেদিন আমার গায়ে হাত তুলেছিল আর আমাদের বন্ধুত্ব ভেঙে দিয়েছিল। রাজ বলেছিল আমি হয়তো রাজ আর রেহানের বন্ধুত্ব ভাঙতে চাইছি তাই এসব রেহানের নামে উল্টোপাল্টা কথা বলছি। সেদিনই আমি চলে এসেছিলাম ওখান থেকে ইন্ডিয়াতে।
রাহাত কথাটা বলেই চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নিল বোঝাই যাচ্ছে যে রাহাতের কষ্ট হচ্ছে। কৃশ দু-হাত দিয়ে মুখ ঢেঁকে বসে ছিল রাহাতের কথা শেষ হতেই সঙ্গে সঙ্গে উঠে রাহাতের কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো।
কৃশ-- স্যরি ভাই! আমি কোনোদিনই ভাবেনি যে রেহান আমার সাথে এরকম করবে তাই আমি তোর কথা বিশ্বাস করতে পারিনি ক্ষমা করে দে ভাই আমাকে।
রাহাত-- (কৃশ কে জড়িয়ে ধরে) তোর উপর অভিমান হয়েছিল তাই চলে এসেছিলাম। কিন্তু সবটা জানার পর আর কোনো মানেই নেই এসবের।
অর্ঘ্য-- তুই কি চিনতে পারিসনি কৃশ কে যখন আমাদের বাসায় ওকে দেখেছিলি?
রাহাত-- আমি রাজ কে চিনবো না এটা হতে পারে? আমি চিনেছিলাম কিন্তু কিছু বলিনি। আসলে তিন বছর আগে আমি রাজের আগেই ইন্ডিয়া তে চলে আসি। আর আমার আগে এসেছিলো রাফিয়া দি। ডুয়ার্সে এসে আমার পরিচয় হয় মুনের সাথে, কিছুদিন পরেই হঠাৎ করে মুন আমাকে বলে ওরা একটা মেয়েকে পেয়েছে রাস্তা থেকে। আমি মুনের কথা মতো মেয়েটাকে দেখতে যাই আর ওখানেই স্তব্ধ হয়ে যাই। কারণ মেয়েটা রিখিয়া ছিলো। আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না রিখিয়া কি করে মুনের কাছে এলো, ওর তো রায়হান আঙ্কেল এর কাছে থাকার কথা। আমি রিখিয়ার ব্যাপারে খোঁজ নেবো ভেবেও খোঁজ নিইনি তার কারণ রাজের উপর অভিমান। ভেবেছিলাম রাজের ভালোবাসা, রাজ বুঝবে আমার কি দরকার। কিন্তু যখন তোদের বাসায় গিয়ে রাজ কে অন্য পরিচয়ে দেখি তখনই বুঝেছিলাম যে অনেক বড়ো কিছু হয়েছে।
ইতি-- তুমি কি করে জানলে কৃশ রিখিয়া কে ভালোবাসতো।
রাহাত-- আর বলিস না লন্ডনের উমম...
কৃশ-- চুপ থাক! বহুত বকিস তুই। আর বলতে হবে না। (রাহাতের মুখ চেপে ধরে)
রাফিয়া-- রাহাত না বললেও আমি বলবো। রাজের ঘরে সিলিং আর মেঝে বাদ দিয়ে দেয়ালের কোনো অংশ ফাঁকা নেই। সব জায়গায় শুধু রিখিয়ার ছবি।
ইয়ুগ-- কোথা থেকে পেয়েছিল?
রাফিয়া-- ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম। অভাব আছে নাকি ছবি পাওয়ার।
রাহাত-- এখানে এসে রাজের সাথে দেখা হওয়ার পর আমি ওর সাথে যোগাযোগ করি তারপর জানতে পারি ওর সাথে কি কি ঘটেছিল তিন বছর আগে। যখনই রাজ বলল যে রিখিয়াকে রেহানের বাংলাতে রেখেছে তখনই আমার সন্দেহ হয়েছিল যে এসবের পেছনে অনেক বড় একটা চক্রান্ত আছে। আমি খোঁজ নিই আর খোঁজ নিতেই কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে আসে। এই সবকিছুর মাস্টারমাইন্ড ছিল মিস্টার আসিফ চৌধুরি রাজের বাবা।
কৃশ-- আমি যখন লন্ডন থেকে ইন্ডিয়াতে ফিরে আঙ্কেলের সাথে দেখা করতে যাই তখন মিস্টার চৌধুরি আমাকে বাঁধা দিয়ে একটা রেকর্ডিং শুনায় সেখানে রায়হান আঙ্কেল বলছে যে উনি উনার কোম্পানি টা বিক্রি করতে চায় আর কুহুকে বিক্রি করতে চায় একচুয়ালি ঘটনাটা সেটা নয়। মিস্টার চৌধুরীর ইচ্ছা ছিল রায়হান আঙ্কেলের কোম্পানি নিজের নামে করে নেবে।কুহুকে মিস্টার চৌধুরি কোনদিনই পছন্দ করত না তার কারণ কুহুকে রায়হান আঙ্কেল পেয়েছিল। ইচ্ছে করেই রায়হান আঙ্কেল এর বিজনেস লসের দিকে ঠেলে দেয় আর একজন স্মাগলার এর কাছে কুহুকে বেচে দিতে চায়। রায়হান আঙ্কেল কে অবশ্য সেটা বলেনি বলেছিল একজন বিজনেসম্যান কুহুকে বিয়ে করতে চায়। যেকোনো মতে আঙ্কেল কে রাজি করিয়েছিলো আর পুরো ব্যাপারটা রেকর্ড করে সেটাকে এডিট করে, সাজিয়ে আমার কাছে তুলে ধরেছিলো।
রাহাত-- রাজ জানতোই না রাজের অজান্তে রাজের দুজন কাছের মানুষ রাজকে ঠকাচ্ছে। রেহান রিখিয়াকে ভালোবাসতো। তাও আবার অনেক আগে থেকেই। একদিন লন্ডনে রাজ যখন ঘরে ছিল না তখন আমি রাজের ঘরে যাই আর ঘরে ঢুকতে গিয়ে শুনতে পাই রেহান কার সাথে যেন কথা বলছে দরজাটা একটু ফাঁক করে দেখতে দেখি রেহান রিখিয়ার ছবির উপর হাত দিয়ে বলছিল যে রেহান রিখিয়া কে ভালোবাসে। এই কথাটা আমি রাজকে তখন বলিনি তার কারণ আমার কাছে কোন প্রুফ ছিল না। যখন আমাকে পুরো ঘটনা বলল তখনই আমি রাজকে লন্ডনের ঘটনাটা বলি আর রাজ আমাকে খোঁজ নিতে বলে। খোঁজ নিয়ে এই সবকিছু জানতে পারি।
কৃশ-- আমি রেহানকে বলেছিলাম ওর খেয়াল রাখতে কিন্তু ও যে রিখিয়া কে এক মাস ধরে টর্চার করেছে তাও আবার আমার নাম নিয়ে আমি সেটা ভাবতেই পারিনি। যখন বিজনেসটা মোটামুটি ঠিক করতে পেরেছিলাম তখনই আমি আঙ্কেল এর কাছে গেছিলাম সবটা জানাতে কিন্তু ওখানে গিয়ে আঙ্কেল-আন্টী কে পাইনি। তাই ঠিক করেছিলাম এবার কুহুর কাছে যাবো। রেহান কে ফোন করে বলে দিই যে কুহুকে বলতে আমি আসছি। সঙ্গে এতোদিন যা হয়েছে সেটাও বলতে। কিন্তু বাংলো তে যখন ঢুকি তখন আমি অবাক হয়ে যাই রেহান কে আহত অবস্থায় দেখে। ও আমাকে বলে যে সবটা জানার পর কুহু বলেছে ও আমাকে ঘৃণা করে। থাকতে চায় না আমার কাছে। এটা বলেই নাকি রেহান কে ফুলদানি দিয়ে মেরে বেড়িয়ে যায়। আমিও সেইদিন কুহু কে খুঁজতে যাইনি। রাগ হয়েছিল, ভেবেছিলাম সবটা জানার পর আমাকে কি করে ভুল বুঝলো। কিন্তু কুহুকে তো সবটা জানানোই হয়নি।
রাহাত-- রেহান পুরোপুরি উল্টো কথা বলেছিল রিখিয়া কে। নিজে রাজ সেজে বলেছিল যে ও ইচ্ছে করে রিখিয়ার বাবার ক্ষতি করেছিল। শুধুমাত্র রিখিয়ার মন থেকে রাজ কে দুরে সরানোর জন্য, রাজের জন্য ঘৃণার সৃষ্টি করার জন্য। আসিফ আঙ্কেল কে রেহান নিজে থেকে ফোন করে জানিয়ে ছিলো যে রিখিয়া ওর বাংলো তে আছে। সেটা শুনেই আসিফ আঙ্কেল প্ল্যান করে ফেলেন। রেহান কে বলে দেন যাতে রিখিয়া কে রাজের নামে বিষিয়ে দেওয়া হয়। ইভেন ওরা যখন জানতে পারে যে রিখিয়া বিডি তে আছে তখনও সেইম কাজ করে। প্রথমে ক্যাফেটেরিয়া তে রেহান আসে। আর তারপর বাংলো তে আসিফ আঙ্কেল।
ইতি-- মাই গড! এতো প্ল্যানিং প্লটীং! কিন্তু তোমরা এতো কিছু জানলে কি করে?
রাহাত-- ওরা নিজের মুখে সবটা বলেছে। অ্যাকচুয়লী তোমাদের সবার মতো আমিও পুরোপুরি ঘেটে গেছিলাম। বাট ওরা নিজের মুখে যখন স্বীকার করলো তখন পুরোটা ক্লিয়ার হয়ে গেলো। আমি প্লে করছি রেকর্ডিংটা ওয়েট।
🌸 🌸
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]
নোট-- অনেক বড়ো করে পর্ব দিয়েছি তাই রহস্য সমাধান হয়ে গেছে। যারা বুঝতে পারেননি তারা পরের পর্বে আশা করছি ক্লিয়ার হয়ে যাবেন। আপনারা তো জানেনই আমার গল্পে এরকম জটিল রহস্য থাকে। আর আমি সেটা ভালো ভাবে ক্লিয়ার ও করে দিই।
আগামীকাল_গল্প_দেবো_না। আপনারা সবাই এতে বিরক্ত হবেন জানি। কিন্তু আমার কিছু করার নেই, কিছু কারণে আমি গল্প দিতে পারবো না আগামিকাল। আজকের পর্বে ৩০০০+ শব্দ আছে। আমি ১৫০০+ শব্দের ১ পর্ব লিখি সেখানে ৩০০০+ শব্দের এক পর্ব দিয়েছি। অর্থাৎ দুই পর্ব একসাথে। গল্পের আর ২ থেকে ৩ পর্ব আছে যা আমি মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি বারে মধ্যে অর্থাৎ এই সপ্তাহের মধ্যে শেষ করে দেবো।