অবশেষে তুমি আমার

নীল কাব্য

১৭

।। আবির নীলার রুমে গিয়ে আগে ফ্রেশ হতে চলে গেল । মাথা ওর পুরো গরম হয়ে আছে । কিছুতেই সেটা ঠান্ডা হচ্ছিল না । ওয়াশরুম থেকে প্রায় ১০ মিনিট পর বের হলো ।বাইরে বের হয়ে দেখে নীলা দাড়িয়ে । তাও আবার হাতে টাওয়েল নিয়ে । ।

  • এই নিন টাওয়েল !! এটা আপনাকে আম্মু দিতে বললো । ( মাথা নিচু করে ) । আবির কিছু না বলে টাওয়েলটা হাতে নিয়ে নিলো সাথে নীলাকেও এক টানে নিজের বুকে । ।
  • মুডটা আমার অনেক খারাপ আছে এখন । জলদী তুমি আমার মনটা ভালো করে দেও । ।
  • আ'আ' আমি কিভাবে আপনার মুড ভালো করবো !! ছাড়ুন আমায় ...( ছাড়ানোর চেষ্টা ) ।
  • এতো পালোনোর চেষ্টা করছো কেনো !! বললাম না আগে আমার মুড ঠিক করো । ( একদমঠোঁটের কাছে মুখ নিয়ে )এদিকে নীলা ভয়ে ও লজ্জায় নিজের চক্ষ বন্ধ করে ফেলেছে ।আবির কিছু না বলে অপোলোক ভাবে নীলার দিকে চেয়ে আছে । । হঠাৎ ...... ।
  • আপু....... এই এই তোমরা এসব কি করছো !!! ( মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে )কথাটা শোনার সাথে সাথে আবির নীলাকে ছেড়ে দিলো । নীলা দরজায় ওর চাচাতো বোন গুলোকে দেখে পড়ে গেল মহা লজ্জায় । একবার তাদের দিকে তাকাচ্ছে আবার আরেকবার চক্ষ রাঙ্গিয়ে আবিরের দিকে । ।
  • আরে ছোট বৌ রা "তোমরা আরেকটু পর আসতে পারলে না !! তোমাদের জন্য তোমার বোনকে একটু আদর করতে পারলাম না ।(দুষ্টুমি হাসি দিয়ে ) । -হুম সেটাই তো দেখছি । আমাদের কি দোষ বলুন আমরা কি জানতান রুমে এসেই আপনি আপুর সাথে রোমান্স শুরু করে দেবেন । জানলে কিছুক্ষণ পরেই আসতাম । এই সময় এসে আপনাদের অনেক ডিসটার্ব করে ফেলেছি । ( মেয়ে গুলো ) ।
  • না থাক !! পরে আসার দরকার নেই । তোমার আপু তো অনেক পুরাতন হয়ে গেল,, এবার আসো তো তোমরা বৌদের সাথে একটু রোমান্স করি । ।
  • এই না না আমাদের সাথে আপনার রোমান্স করার লাগবে না । রোমান্স করার জন্য আপু আছে । যা করার তার সাথেই করিয়েন । আমরা শুধু বলতে এলাম নিচে আপনাদের জন্য সবাই খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছে । আপনাদের রোমান্স শেষ করে তারাতাড়ি নিচে চলে আসিয়েন । আমরা চললাম । ।
  • আরে নিচে তো যাবই !! তার আগে আসো না তোমাদের সাথে হালকা একটু রোমান্স করি । হাজার হলেও তোমরা আমার আধা ঘর ওয়ালি । তোমার আপুর পর তোমরাই তো শুধু একমাত্র আছো আমার জন্য তাই না । । -নাহ্ আমাদের কারো আপনার সাথে রোমান্স করার ইচ্ছে নেই ।আপনি বরং আপুর সাথে যা করার সব করুন । এই চল সবাই আপুর জামাইয়ের কোনো ভরসা নেই আপাদের কেও আপুর মতো ধরে ফেলতে পারে । আমি জিজু...। (দৌড়ে পালালো ) ।
  • এই যাহ্ পালায়ি গেল । এখন কার সাথে রোমান্স করবো বলো...!! এতো সুন্দর সুন্দর শালি গুলো ছিলো । ( নীলার দিকে তাকিয়ে )এদিকে নীলা তো রেগে আগুন । ওকে দেখে মনে হচ্ছে এখুনি আবিরকে আস্ত কাচাঁ চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে । আবিরের দিকে তাকিয়ে শুধু রাগে ফুসছে । যদিও বা ও নিজের বুজতে পারছে না ওর রাগ কেনো উঠছে !! ।
  • আপনি আসলেই একটা শয়তান , লুচ্চা । সারাক্ষণ লুচ্চামী মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ান । ( কর্কট গলায় ) ।
  • আমি আবার কি করলাম ....!! ।
  • আপনি ওদের কি বলছিলেন...!! আপনাকে কে এমন কথা বলতে বলেছে ?? । -আমি তো শুধু ..... ।
  • রাখুন তো !! আপনার কথা শোনার আমার কোনো ইচ্ছে নেই ।মাথা থেকে এই সব লুচ্চামী বুদ্ধিবাদ দিয়ে নিচে চলে আসেন । যতোসব । ( রাগ দেখিয়ে চলে গেল )এদিকে আবির শুধু হা"হয়ে নীলার যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে । দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবছে নীলার রাগের কারনটা কি...!! ও এই ভাবে রেগে গেল কেনো !! আবিরের মাথায় কোনো ভাবেই হিসাব মিলাতে পারছে না । ।
  • কি রে 'আম্মু তুই একা কেনো ..!! জামাইবাবাজী কই..!! ।
  • ও আসছে । ।
  • এটা আবার কেমন কথা ...!! তুই ওকে সঙ্গে না নিয়েই একা একা চলে এলি...!! যা ওকে নিয়ে আয় । ।
  • আম্মু........ । .- আরে ওই তো জিজু চলে এসেছে ।( নীলার চাচাতো বোন ) ।
  • আসো বসো বাবা । ।
  • জ্বী " । ।
  • নীলা খাবারটা বেড়ে দে । ।
  • হুম.....।আর কিছু না বলে চুপচাপ সবাইকে খাবার বেড়ে দিতে শুরু করলো ।তবে আবিরকে যখন খাবারটা বেড়ে দিলো তখন কেনো জানি নীলার মুখে হালকা হাসি লেগেছিলো । ব্যাপার টা প্রথমে আবির বুঝতে পারলো না ।। কিন্তু বুঝলো তখন যখন খাবারটা মুখে একবার তুললো । ।
  • কি ব্যাপার !! আপনি খাচ্ছেন না কেনো ...!! খাবারটা কি ভালো হয় নি । ( খা " না খিটকা শয়তান। এবার দেখ ঝাল কেমন লাগে )খাবারে ঝাল দেখে আবিরের আর বুঝতে বাকি নেই এটা কার কাজ । একবার রাগি চক্ষে নীলার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ খাবারটা খেতে শুরু করলো ।নীলা: ( ব্যাটা আর কোনোদিন আমার সাথে লাগতে আসবি । দেখলিনা কি অবস্থা করলাম । খাঁ খুব ভালো করে এখন গুল মরিচের গুড়োর ঝাল খা । আর কোনোদিন আমার সাথে লুচ্চামি করতে আসবি ) ।
  • একি আপনার তো খাবার শেষ হয়ে গেল । দাড়ান আরেকটু দেই !!( দুষ্টুমি হাসি দিয়ে ) । -নাহ্ আর লাগবে না । আমার খাওয়া হয়ে গেছে । একটু পানিটা দেও তো ?( অগ্নি চক্ষে ) ।
  • আরে ধুর এটা আবার কেমন কথা !! এই টুক খাবার খেয়ে আবার কারো পেট ধরতে পারে নাকী ..!! নিন আরেকটু নিন । এমনিতেই আপনার নাকি অনেক খিদে পেয়েছিলো ।( আবার খাবার তুলে দিয়ে ) ।
  • আরে আমি..... ।
  • খাও না বাবা !! লজ্জা করছো কেনো...!! নাকী এখনও আমাদের উপরে রাগ করে আছো ? acha ।
  • আপনি যা ভাবছেন তেমন কোনো ব্যাপারি না । সত্যিই আমার পেট ভরে গেছে । আপনারা খাওয়া শেষ করুন আমি রুমে গেলাম । তোমার খাওয়া শেষ হলে একটু তাড়াতারি রুমে চলে এসোতো । ( শান্ত গলায় ) ।
  • হু......( হঠাৎ কালকের রাতের কথা মনে পড়ে গেল )আবির নীলাকে আর কিছু না বলে দ্রুত রুমে চলে গেল । এদিকে নীলা পড়লো মহা ঝামেলায় ।ওর কালকে রাতের কথা মনেই ছিলো না । এমনিতেই আবির ঝাল সহ্য করতে পারে না । তার উপর আজকে এখন তরকারীতে যতো গুলো মরিচের গুড়ো মেশানো হয়েছিলো তাতে তো আবিরের মুখ আজকে শেষ । যতো গুলো রেগে আছে না জানি আমায় একা পেলে কি করে। তার উপর এখন আবার রুমে যেতে বললো । নাহ্ আমি আর এখন রুমে যাবো না । অন্য রুমে গিয়ে থাকবো । কোনো ভাবেই গুন্ডাটার হাতে লাগা যাবে না ।নইলে আজকে আমার খবর আছে । এভাবে মনে মনে নানান কথা ভাবছে নীলা । ।
  • কি রে তোর খাওয়া এখনও শেষ হলো না !! আর কতোক্ষণ বসে থাকবি ?? খাওয়া শেষ করে তাড়াতারি রুমে যা দেখছিস না ছেলেটা একা একা বসে আছে । নতুন জামাই এভাবে একা একা বসিয়ে রাখতে নেই । ।
  • হুম যাচ্ছি । ( কেনো যে লাগতে গেলাম । এখন রুমে গেলেই খবর আছে আমার । -তো যা না । এখনও বসে আছিস কেনো !! ।
  • যাচ্ছি তো !! তোমাদের জন্য একটু শান্ত মতো খাওয়াটাও শেষ করতে পারবো না নাকী...!! (রাগ করে উঠে গিয়ে )আবির রুমে এসে চুপচাপ বসে বসে নীলার আসার অপেক্ষা করছে । পানি খেতে চাইলো কিন্তু পরে কি যেনো ভেবে খেলো না । এখন ঝালে ওর পুরো মুখ জ্বলে যাচ্ছে । মনে মনে শুধু নীলার আসার কথা ভাবছে ।আমার সাথে ফাজলামী !! আজকে শুধু একবার রুমে আসো তারপর দেখাচ্ছি তোমায় । আমার মুখে ঝাল লাগার কারণ যখন তুমি এটাকে দুর করার কারণও তুমি হবে । শুধুএকবার আমার হাতের নাগালে আসো ।নীলা অনেকক্ষণ ধরে আবিরের ভয়ে দাড়িয়ে ছিলো । কিন্তু একসময় আর বাইরে না থেকে বুকে সাহস নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো ।রুমে এসে তো পুরাই অবাক । ও এতোক্ষণ যেটা নিয়ে ভয় পাচ্ছিলো তেমন কোনো কিছুই হয় নি । নীলা ভেবে ছিলো ও রুমে ঢুকার সাথে সাথে আবির ওকে ধরে ইচ্ছে মতো শাস্তি দেবে । কিন্তু এখানে তো সব কিছু উল্টো । আবির তেমন কোনো কিছু না করে বিছানায় শুয়ে আরামে ফোন টিপছে । ব্যাপারটা কেমন যেনো নীলার পেটে হজম হচ্ছে না । ।
  • কি ব্যাপার জান পাখি ! তুমি এভাবে দরজা খোলা রেখে দাড়িয়ে আছো কেনো !! দরজাটা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ো । ( শান্ত গলায় ) ।
  • হুম...( ব্যাপার কি গুন্ডাটা কিছু বলছে না কেনো !!) ।
  • কি হলো এখনও দাড়িয়ে রইলে যে !! ? বললাম না শুয়ে পড়ো । রাত অনেক হয়ে গেছে ।নীলা আবিরকে কিছু না বলে চুপচাপ রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে নিজের বিছানায় আবিরের এক পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো । তবে মাঝখানে ইন্ডিয়া vs পাকিস্তানের বর্ডার । ।
  • জানু ওই দিকে মুখ করে শুয়ে আছো কেনো !! আমার দিকে ফিরে শোও । ।
  • নাহ্ আমি এভাবেই ঠিক আছি । ।
  • কালকের কথা মনে হয় তুমি ভুলে গেছো !! কি বলেছিলাম তোমায় মনে আছে নাকী আবার বলতে হবে ! ! । -.....( নিশ্চুপ).......... ।
  • কি হলো আসো আমার বুকে আসো । নাকী আমি নিজেই যাবো । ।
  • নাহ্ আপনাকে আসতে হবে না । আমি নিজেই ...... ।
  • হুম......নীলার ইচ্ছে না থাকার পরেও আবিরের একদম কাছে গিয়ে শুয়ে পড়লো । তারপর আবিরকে আস্তে করে জড়িয়ে ধরলো । কারণ আবির ওকে আগেই বলে দিয়েছে রাতে ঘুমানোর আগে নীলা আবওরকে জড়িয়ে ধরতে হবে । না হলে নীলার খবর আছে । ।
  • বাবু তরকারীরে ঝালটা একটু বেশি হয়ে গেছিল না !! ।
  • মা ' মা' মানে....? কি 'কিসের কথা বলছেন আপনি !!( কাপা কাপা গলায় ) ।
  • কিছুই না । শুধু জানতে চাইছি আমায় ইচ্ছে করে ঝাল কে খাইয়ে দিল!! ।
  • .....(নিশ্চুপ ).......... ।
  • ঝাল আমার এমনিতেই সহ্য হয় না সেটা আমি তোমায় কালকে বলেও ছিলাম । তারপরেও তরকারিতে এতো ঝাল কে দিলো...!! পুরো মুখে আমার এখন শুধু আগুন জ্বলছে । ( শান্ত গলায় ) ।
  • স্য" স্যরি " ॥ ( ভয়ে ভয়ে ) ।
  • স্যরি"বলে তো কাজ হবে না জানু !! তোমাকে বার বার বারন করার পরও তুমি আমায় ঝাল খাওয়ালে ।এখন এর শাস্তি তো তোমায় পেতে হবেই । ।
  • মা" মা" মানে....?? । ।- কালকে মুখে ঝাল লাগার কারণে কি করেছিলাম তুমি তো জানোই । আজকে তার চেয়েদিগুন ঝাল লেগেছে মুখে । এখন আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি সেটা কি বুঝতে পারছো নাকী আমি নিজেই আরেকবার বুঝিয়ে দেবো । ( রাগি গলায় ) ।
  • স্যরি " আমি এটা পারবো না । তবে চাইলে ফ্রিজ থেকে মিষ্টি এনে দিতে পারি । ।
  • ঊহু ...সেথা কোনো ভাবেই সম্ভব না । তুমি নিজে থেকেই আসবে নাকী আমি বিছানা থেকে উঠবো !! আমি যদি এখন বিছানা থেকে উঠি তাহলে কিন্তু এর ফলাফল তোমার জন্য ভালো হবে না । আর ভেবো না এখান থেকে দৌড়ে পালাবে । যদি পালিয়েও যাও তারপরেও আমি তোমায় সেখান থেকেও তুলে নিয়ে আসবো । আশা করি তুমি আমায় একটু হলেও চেনো । ।
  • দেখুন তখনকার কাজের জন্য আমি অনেক স্যরি " । প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন ।এমন কাজ আর দ্বিতীয় বার হবে না । । -তুমি আসবে নাকী আমি বিছানা থেকে উঠবো ? ।
  • নাহ্ আমি আপনার কাছে যাবো না । ( আরো পিছিয়ে গিয়ে ) ।
  • ঠিক আছে যা তোমার ইচ্ছে । ( বিছানা থেকে উঠতে যাবে ) ।
  • এই নাহ্ নাহ্ প্লিজ আপনি ওখান থেকে উঠবেন না । ( ভয়ে ভয়ে ) ।
  • তুমি কি আসবে নাকি..!! ।
  • যাচ্ছি..... ।
  • হুম....তারপর নীলা রাগে গজগজ করতে করতে আবার আবির পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো । চলবে😘
5
$
User's avatar
@Mdemon456 posted 4 years ago

Comments