আজকেও একটা মর্মান্তিক ধর্ষণের ঘটনা। একটা মেয়েকে ধর্ষণ করেছে কোনো জানোয়ার। মেয়েটাকে ধর্ষণ করে লক্ষ্মী বাজারের এই গলি রাস্তার পাশে ফেলে গেছে। মেয়েটার শরীরে রক্তের দাগ। জামা কাপড় ছেড়া। হাতে মুখে কামছির দাগ, রক্ত জমে আছে আঘাতে আঘাতে।
দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটাকে কোনো নরপশু ছিঁড়ে খেয়েছে। আহত মেয়েটার চারপাশে লোকজনের ভিড়। মৌমাছির শব্দের মতো গুনগুন শব্দ। কিন্তু কেউ ভুল করেও মেয়েটার গায়ে হাত দিচ্ছে না। বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে বুঝাও যাচ্ছে না। কেউ বুঝার চেষ্টাও করছে না। ধর্ষিত মেয়েটার নিথর দেহটা নড়ছেও না। মেয়েটার শরীরের এমন অবস্থা করা হয়েছে যে দেখেই জনতার শরীর কেঁপে উঠছে।
অথচ কে বা কারা এই মেয়েটাকে এই রাস্তায় ফেলে গিয়েছে কারো চোখেই পড়েনি। নিশ্চয় ভোরবেলা ফেলে যায় নি। কারণ তখন ফেললেও কারো না কারো নজরে আরো আগেই পড়তো। যদিও আমাদের ব্যস্ততম জীবনে কখনও চারপাশ নজরে রাখিনা। আমরা সব সময় নিজের চিন্তায় এতোটা বিভোর থাকি যে অন্যকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার বিন্দু মাত্র সময় হয়না। আমরা নিজ স্বার্থে এদেশের নাগরিক। আজ আমরা সচেতন নাগরিক হলে হয়তো কেউ দেখতো কারা এই মেয়েটাকে এই রাস্তায় কখন ফেলে গিয়েছে। রাস্তাটা এতোটাও নিরিবিলি নয়।
সব সময় লোকজনের আনাগোনা লেগেই থাকে। তবে এই রাস্তায় একটা মেয়েকে ধর্ষণ করাও সহজ নয়। সো নিশ্চিত ভাবে বলা যায় মেয়েটাকে অন্য কোথাও ধর্ষণ করে এখানে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কয়েকজন লোক পুলিশকে ইনফর্ম করেছে। কিন্তু পুলিশ এখনও উপস্থিত হয়নি।
আশিক অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এই ভরদুপুর বেলা বের হয়েছে। শরীরটা হালকা খারাপ লাগছে। সকাল থেকেই অস্থির লাগছিল। তবুও অফিসে এসেছিল সে। কিন্তু অফিসে আসলেও লাভের লাভ কিছু হলো না। কাজে মন বসছে না আজ। তাই সে হাফ ডে ছুটি নিলো। সে সহজে ছুটি নেয় না। আজ নিয়েছে। শুধু শুধু অফিসে বসে থেকে লাভ কি।
মাঝে মাঝে শরীরের ও মনের কথা চিন্তা করতে হয়। মন স্বেচ্ছায় কিছু করতে না চাইলে জোর করা উচিত নয়। বরং মন যেটা করতে ভালো লাগে তখন সেটাই করা উচিত। এতে মন সতেজ হয়। আশিক অফিস থেকে বের হয়ে অফিসের পাশে থাকা মুদির দোকানের সামনে দাঁড়ায়। দোকানদার হাশেম এই সময় আশিককে দেখে দাঁত খেলিয়ে হেসে বলে,,,,,,,
-
কি মামা। আজ এই সময়? আশিক মৃদু হেসে বলে,,,,,,
-
শরীরটা ভালো লাগছে না। ভাবলাম ছুটি নিয়ে বাসায় গিয়ে লম্বা ঘুম দিবো।
-
তাই করেন। এটাতো শরীর মামা। আপনাকে তো সারা মাসেই ডিউটি করতে দেখি। মাঝে মাঝে তো ছুটি নিয়ে বাসায় থাকতে পারেন। শরীরটা আরাম পায়। আশিক হালকা হেসে জবাব দেয়,
-
তাইতো ছুটি নিলাম। এবার এক প্যাকেট সিগারেট দেনতো। খেতে খেতে বাসায় যাই। হাশেম এক প্যাকেট সিগারেট এগিয়ে দেয়। আশিক সিগারেটের প্যাকেট খুলে একটা সিগারেট হাতে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে-
-
মামা আজকে আকাশটা একদম অন্যরকম লাগছে। নীল রঙে ছেয়ে গেছে। হাশেম খিলখিল করে হেসে বলে,
-
হ্যাঁ মামা। আজ সকাল থেকেই সূর্যের উত্তাপ নেই। আকাশ কখনও নীল হচ্ছে কখনও মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। মেঘলা আকাশের থেকে নীল আকাশটাই বেশি সুন্দর। আশিক দুই ঠোঁটের মাঝে রেখে সিগারেট ধরায়। তারপর সিগারেটটা দুই আঙ্গুলের মাঝে এনে মিষ্টি হাসি হেসে বলে,
-
তোমরা যাকে নীলআকাশ বলছো আমি তার নাম দিলাম নীল দুপুর। নীল আকাশতো সবাই বলে। আমি না হয় অন্য কোনো নামে ডাকলাম।
' মনটা আজ বিষণ্ণতায় ভরছে রাশি রাশি
অফিস থেকে বের হয়েই চোখে পড়লো নীল দুপুরের হাসি।'
আশিক এবং হাশেম দুজন সমান তালে হাসলো। হাশেম বলল,
-মামা কি কবিতা লিখেন নাকি? খুব সুন্দর ছন্দ বললেন।
আশিক কোমল কণ্ঠে বলল,
-
না মামা। আমি কবিতা লিখি না। তবে মাঝে মাঝে কবিতা পড়ি। মামা আমি তো কবিও না যে সুন্দর ছন্দে এই দুপুরটাকে সাজাব। যেমন পারলাম তেমন একটা বললাম। হয়তো এই সুন্দর নীল, মনোমুগ্ধকর আকাশ দেখে কতো কবি কবিতা লিখে ফেলেছে পাতায় পাতায়। আমার দ্ধারা সম্ভব হবে না। তবে বুদ্ধি করে দুটো লাইন এক পাতার মাঝ বরাবর লিখে পাতাটাকে পূর্ণ করে ফেলবো। হাশেম শুধু হাসল। আশিক কথাটা শেষ করেই সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। বাসায় গিয়ে লম্বা ঘুম দিবে সে। আজ সত্যি কাজ করতে ইচ্ছে করছে না।
আশিক হাইওয়ে রাস্তা পার হয়ে বাসার গলির রাস্তায় প্রবেশ করতেই চোখ গেলো জনতার ভীড়ে। এতো লোক এখানে কি করছে? কোনো সমস্যা হলো নাকি? আশিক শেষবারের মতো সিগারেটে টান দিল। বাকি অংশটা রাস্তার পাশে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। সিগারেটটা ফেলার আগে আগুনটা নিভিয়ে নেয়। লোকজনের ভিড় ঠ্যালে সেও ভিড়ের মধ্যে ঠুকে পড়ে। চোখের সামনে একটা মেয়েকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে আশিকের সমস্ত শরীরের লোম নাড়া দিয়ে উঠে।
প্রতিদিন খবরের কাগজটায় চোখ পড়লেই যেসব ঘটনা আমাদের আহত করে তার মধ্যে একটি ঘটনা হলো ধর্ষণ। নারী পুরুষের সমান অধিকার দেওয়া হলেও আমাদের দেশের মেয়েরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেনা সর্বত্র। একটা মেয়েকে একা পেলেই রাস্তায় বসে থাকা কিছু ছেলেরা বিশ্রী ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। মানুষের বর্তমানে এতো অধপতন হয়েছে যে ৬ বছরের একটা শিশুকেও ধর্ষণ নামক নির্যাতন থেকে মুক্তি দেয় না।
আশিক বাকরুদ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ মেয়েটার দিকে চেয়ে থাকে। কি অবস্থা করেছে মেয়েটার। জানোয়ার গুলোর মনে একটু দয়াও হয়নি? মেয়েটা কি বেঁচে আছে? বেঁচে আছে কথাটা মাথায় আসতেই তার সমস্ত শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠে। আশিক এগিয়ে যায় মেয়েটার দিকে। পেছন থেকে কয়েকজন চিৎকার করে বলে উঠে,
-ভাই বডিটা টাচ করবেন না। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে। পুলিশ না আসা পর্যন্ত বডির আশেপাশেও যাবেন না। বিপদে পড়ে যাবেন। আশিক স্থির দাঁড়িয়ে পেছনে তাকিয়ে বলে,
-মেয়েটা যদি বেঁচে থাকে তাহলে তাকে ইমার্জেন্সিতে হসপিটালে নেওয়া উচিত। কখন পুলিশ আসবে তার আশায় বসে থাকলে তো মেয়েটা এখানেই মরে যাবে। জনতার ভীড় থেকে আবার শব্দ ভেসে আসে,
-মেয়েটা যদি বেঁচে থাকতো তাহলে তো নড়াচড়া করতো। আশিক আর কারো কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করলো না। সে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার পালস চেক করলো। পালস নড়ছে। তার মানে মেয়েটা বেঁচে আছে। আশিকের ভেতরে একটা আশার আলো উঁকি দিল। আশিক চিৎকার করে উঠলো,
-বেঁচে আছে। মেয়েটা এখনও বেঁচে আছে। আপনারা কেউ সাহায্য করুণ। মেয়েটাকে এক্ষণি হাসপাতালে নিতে হবে। আশিকের কথা শোনে ভীড়ের আওয়াজ আরো বেগমান হলো। কিন্তু কেউ এগিয়ে এলো না। আশিক কিছুটা রেগে বলল,
-আপনারাতো খুব আজব পাবলিক। একটা মেয়েকে হেল্প করতে বলছি। আপনারা কাজের কাজ কিছুই করছেন না ফালতু কথা বলে যাচ্ছেন। ভীড়ের মাঝ থেকে একজন লোক বলল,
-এসব কেসে পুলিশ না আসা পর্যন্ত হাত দিতে নেই। উপকার করতে গিয়ে উল্টো সমস্যায় পড়তে হয়। এবার আশিকের রাগে শিরা গুলো ফোলে গেলো। চোখ গুলো আগুনের মতো লাল আবরণ হয়ে গেলো। আশিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-এই মেয়েটার জায়গায় যদি আপনার বোন অথবা আপনার বউ থাকতো তাহলে কি আপনি এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতেন? লোকটা মাথা নিচু করে ফেললো। আশিক আবারো বলে উঠলো,
-ফ্যামিলির প্রতি সব রকম দায়িত্ব পালন করলে একজন ভালো ছেলে, ভাই, হাজবেন্ড অথবা বাবা হওয়া যায়। কিন্তু একজন ভালো নাগরিক হওয়া যায় না। ভালো নাগরিক হতে হলে দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হয়। সব সময় তো নিজের জন্যই বাঁচেন। কখনও তো অন্যের জন্য বাঁচুন। দেখবেন নিজের বেঁচে থাকাটা সার্থক মনে হবে। আশিক আর কিছু বলল না। নিজের গা থেকে শার্টটা খুলে মেয়েটার উপর দিয়ে মেয়েটাকে কোলে তুলে নেয়। লোকজন সাইটে সরে যায়। ভীড় থেকে একজন এগিয়ে এসে বলে,
-স্যার আমি সিএনজি চালক। আপনি আমার সাথে চলুন। আমার গাড়ি আছে সাথে। আমি আপনাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিব। আশিক অস্থির হয়ে বলে,
-গাড়ি কোথায়? তাড়াতাড়ি আনুন।
-এইযে স্যার। রাস্তার ওপাশে। আশিক মেয়েটাকে নিয়ে একরকম দৌঁড়ে গাড়িতে উঠে। মেয়েটাকে বাঁচাতে না পারলে নিজেকে অপরাধী মনে হবে।
মেয়েটাকে নেওয়া হয়েছে কাছাকাছি একটা ছোট হাসপাতালে। বড় বড় হাসপাতাল গুলোতে নিয়ম কানুন বেশি। রোগী মরে যাক। আগে ফর্মালিটি মেইনটেইন করতে হবে। সেক্ষেত্রে এই হাসপাতালে এরকম কোনো নিয়ম কানুন মানতে হয়নি।
রোগী আসা মাত্রই তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। আশিকের ঘাড়ে পড়েছে তৎক্ষনাৎ পুলিশকে ইনফরমেশন দেওয়া। আশিকও লেট করেনি। সাথে সাথে পুলিশকে খবর দিয়ে দিয়েছে। এখন সে অপেক্ষায় আছে। কখন একটা ভালো খবর আসবে। কখন শুনতে পাবে মেয়েটা বেঁচে যাবে।
চলবে-
নীল_দুপুর
সূচনা পর্ব
সুরমা-
আজকেও একটা মর্মান্তিক ধর্ষণের ঘটনা। একটা মেয়েকে ধর্ষণ করেছে কোনো জানোয়ার। মেয়েটাকে ধর্ষণ করে লক্ষ্মী বাজারের এই গলি রাস্তার পাশে ফেলে গেছে। মেয়েটার শরীরে রক্তের দাগ। জামা কাপড় ছেড়া। হাতে মুখে কামছির দাগ, রক্ত জমে আছে আঘাতে আঘাতে।
দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটাকে কোনো নরপশু ছিঁড়ে খেয়েছে। আহত মেয়েটার চারপাশে লোকজনের ভিড়। মৌমাছির শব্দের মতো গুনগুন শব্দ। কিন্তু কেউ ভুল করেও মেয়েটার গায়ে হাত দিচ্ছে না। বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে বুঝাও যাচ্ছে না। কেউ বুঝার চেষ্টাও করছে না। ধর্ষিত মেয়েটার নিথর দেহটা নড়ছেও না। মেয়েটার শরীরের এমন অবস্থা করা হয়েছে যে দেখেই জনতার শরীর কেঁপে উঠছে।
অথচ কে বা কারা এই মেয়েটাকে এই রাস্তায় ফেলে গিয়েছে কারো চোখেই পড়েনি। নিশ্চয় ভোরবেলা ফেলে যায় নি। কারণ তখন ফেললেও কারো না কারো নজরে আরো আগেই পড়তো। যদিও আমাদের ব্যস্ততম জীবনে কখনও চারপাশ নজরে রাখিনা। আমরা সব সময় নিজের চিন্তায় এতোটা বিভোর থাকি যে অন্যকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার বিন্দু মাত্র সময় হয়না। আমরা নিজ স্বার্থে এদেশের নাগরিক। আজ আমরা সচেতন নাগরিক হলে হয়তো কেউ দেখতো কারা এই মেয়েটাকে এই রাস্তায় কখন ফেলে গিয়েছে। রাস্তাটা এতোটাও নিরিবিলি নয়।
সব সময় লোকজনের আনাগোনা লেগেই থাকে। তবে এই রাস্তায় একটা মেয়েকে ধর্ষণ করাও সহজ নয়। সো নিশ্চিত ভাবে বলা যায় মেয়েটাকে অন্য কোথাও ধর্ষণ করে এখানে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কয়েকজন লোক পুলিশকে ইনফর্ম করেছে। কিন্তু পুলিশ এখনও উপস্থিত হয়নি।
আশিক অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এই ভরদুপুর বেলা বের হয়েছে। শরীরটা হালকা খারাপ লাগছে। সকাল থেকেই অস্থির লাগছিল। তবুও অফিসে এসেছিল সে। কিন্তু অফিসে আসলেও লাভের লাভ কিছু হলো না। কাজে মন বসছে না আজ। তাই সে হাফ ডে ছুটি নিলো। সে সহজে ছুটি নেয় না। আজ নিয়েছে। শুধু শুধু অফিসে বসে থেকে লাভ কি।
মাঝে মাঝে শরীরের ও মনের কথা চিন্তা করতে হয়। মন স্বেচ্ছায় কিছু করতে না চাইলে জোর করা উচিত নয়। বরং মন যেটা করতে ভালো লাগে তখন সেটাই করা উচিত। এতে মন সতেজ হয়। আশিক অফিস থেকে বের হয়ে অফিসের পাশে থাকা মুদির দোকানের সামনে দাঁড়ায়। দোকানদার হাশেম এই সময় আশিককে দেখে দাঁত খেলিয়ে হেসে বলে,,,,,,,
কি মামা। আজ এই সময়? আশিক মৃদু হেসে বলে,,,,,,
শরীরটা ভালো লাগছে না। ভাবলাম ছুটি নিয়ে বাসায় গিয়ে লম্বা ঘুম দিবো।
তাই করেন। এটাতো শরীর মামা। আপনাকে তো সারা মাসেই ডিউটি করতে দেখি। মাঝে মাঝে তো ছুটি নিয়ে বাসায় থাকতে পারেন। শরীরটা আরাম পায়। আশিক হালকা হেসে জবাব দেয়,
তাইতো ছুটি নিলাম। এবার এক প্যাকেট সিগারেট দেনতো। খেতে খেতে বাসায় যাই। হাশেম এক প্যাকেট সিগারেট এগিয়ে দেয়। আশিক সিগারেটের প্যাকেট খুলে একটা সিগারেট হাতে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে-
মামা আজকে আকাশটা একদম অন্যরকম লাগছে। নীল রঙে ছেয়ে গেছে। হাশেম খিলখিল করে হেসে বলে,
হ্যাঁ মামা। আজ সকাল থেকেই সূর্যের উত্তাপ নেই। আকাশ কখনও নীল হচ্ছে কখনও মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। মেঘলা আকাশের থেকে নীল আকাশটাই বেশি সুন্দর। আশিক দুই ঠোঁটের মাঝে রেখে সিগারেট ধরায়। তারপর সিগারেটটা দুই আঙ্গুলের মাঝে এনে মিষ্টি হাসি হেসে বলে,
তোমরা যাকে নীলআকাশ বলছো আমি তার নাম দিলাম নীল দুপুর। নীল আকাশতো সবাই বলে। আমি না হয় অন্য কোনো নামে ডাকলাম।
' মনটা আজ বিষণ্ণতায় ভরছে রাশি রাশি অফিস থেকে বের হয়েই চোখে পড়লো নীল দুপুরের হাসি।'
আশিক এবং হাশেম দুজন সমান তালে হাসলো। হাশেম বলল, -মামা কি কবিতা লিখেন নাকি? খুব সুন্দর ছন্দ বললেন। আশিক কোমল কণ্ঠে বলল,
না মামা। আমি কবিতা লিখি না। তবে মাঝে মাঝে কবিতা পড়ি। মামা আমি তো কবিও না যে সুন্দর ছন্দে এই দুপুরটাকে সাজাব। যেমন পারলাম তেমন একটা বললাম। হয়তো এই সুন্দর নীল, মনোমুগ্ধকর আকাশ দেখে কতো কবি কবিতা লিখে ফেলেছে পাতায় পাতায়। আমার দ্ধারা সম্ভব হবে না। তবে বুদ্ধি করে দুটো লাইন এক পাতার মাঝ বরাবর লিখে পাতাটাকে পূর্ণ করে ফেলবো। হাশেম শুধু হাসল। আশিক কথাটা শেষ করেই সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। বাসায় গিয়ে লম্বা ঘুম দিবে সে। আজ সত্যি কাজ করতে ইচ্ছে করছে না।
আশিক হাইওয়ে রাস্তা পার হয়ে বাসার গলির রাস্তায় প্রবেশ করতেই চোখ গেলো জনতার ভীড়ে। এতো লোক এখানে কি করছে? কোনো সমস্যা হলো নাকি? আশিক শেষবারের মতো সিগারেটে টান দিল। বাকি অংশটা রাস্তার পাশে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। সিগারেটটা ফেলার আগে আগুনটা নিভিয়ে নেয়। লোকজনের ভিড় ঠ্যালে সেও ভিড়ের মধ্যে ঠুকে পড়ে। চোখের সামনে একটা মেয়েকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে আশিকের সমস্ত শরীরের লোম নাড়া দিয়ে উঠে।
প্রতিদিন খবরের কাগজটায় চোখ পড়লেই যেসব ঘটনা আমাদের আহত করে তার মধ্যে একটি ঘটনা হলো ধর্ষণ। নারী পুরুষের সমান অধিকার দেওয়া হলেও আমাদের দেশের মেয়েরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেনা সর্বত্র। একটা মেয়েকে একা পেলেই রাস্তায় বসে থাকা কিছু ছেলেরা বিশ্রী ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। মানুষের বর্তমানে এতো অধপতন হয়েছে যে ৬ বছরের একটা শিশুকেও ধর্ষণ নামক নির্যাতন থেকে মুক্তি দেয় না।
আশিক বাকরুদ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ মেয়েটার দিকে চেয়ে থাকে। কি অবস্থা করেছে মেয়েটার। জানোয়ার গুলোর মনে একটু দয়াও হয়নি? মেয়েটা কি বেঁচে আছে? বেঁচে আছে কথাটা মাথায় আসতেই তার সমস্ত শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠে। আশিক এগিয়ে যায় মেয়েটার দিকে। পেছন থেকে কয়েকজন চিৎকার করে বলে উঠে,
-ভাই বডিটা টাচ করবেন না। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে। পুলিশ না আসা পর্যন্ত বডির আশেপাশেও যাবেন না। বিপদে পড়ে যাবেন। আশিক স্থির দাঁড়িয়ে পেছনে তাকিয়ে বলে,
-মেয়েটা যদি বেঁচে থাকে তাহলে তাকে ইমার্জেন্সিতে হসপিটালে নেওয়া উচিত। কখন পুলিশ আসবে তার আশায় বসে থাকলে তো মেয়েটা এখানেই মরে যাবে। জনতার ভীড় থেকে আবার শব্দ ভেসে আসে,
-মেয়েটা যদি বেঁচে থাকতো তাহলে তো নড়াচড়া করতো। আশিক আর কারো কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করলো না। সে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার পালস চেক করলো। পালস নড়ছে। তার মানে মেয়েটা বেঁচে আছে। আশিকের ভেতরে একটা আশার আলো উঁকি দিল। আশিক চিৎকার করে উঠলো,
-বেঁচে আছে। মেয়েটা এখনও বেঁচে আছে। আপনারা কেউ সাহায্য করুণ। মেয়েটাকে এক্ষণি হাসপাতালে নিতে হবে। আশিকের কথা শোনে ভীড়ের আওয়াজ আরো বেগমান হলো। কিন্তু কেউ এগিয়ে এলো না। আশিক কিছুটা রেগে বলল,
-আপনারাতো খুব আজব পাবলিক। একটা মেয়েকে হেল্প করতে বলছি। আপনারা কাজের কাজ কিছুই করছেন না ফালতু কথা বলে যাচ্ছেন। ভীড়ের মাঝ থেকে একজন লোক বলল,
-এসব কেসে পুলিশ না আসা পর্যন্ত হাত দিতে নেই। উপকার করতে গিয়ে উল্টো সমস্যায় পড়তে হয়। এবার আশিকের রাগে শিরা গুলো ফোলে গেলো। চোখ গুলো আগুনের মতো লাল আবরণ হয়ে গেলো। আশিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-এই মেয়েটার জায়গায় যদি আপনার বোন অথবা আপনার বউ থাকতো তাহলে কি আপনি এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতেন? লোকটা মাথা নিচু করে ফেললো। আশিক আবারো বলে উঠলো,
-ফ্যামিলির প্রতি সব রকম দায়িত্ব পালন করলে একজন ভালো ছেলে, ভাই, হাজবেন্ড অথবা বাবা হওয়া যায়। কিন্তু একজন ভালো নাগরিক হওয়া যায় না। ভালো নাগরিক হতে হলে দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হয়। সব সময় তো নিজের জন্যই বাঁচেন। কখনও তো অন্যের জন্য বাঁচুন। দেখবেন নিজের বেঁচে থাকাটা সার্থক মনে হবে। আশিক আর কিছু বলল না। নিজের গা থেকে শার্টটা খুলে মেয়েটার উপর দিয়ে মেয়েটাকে কোলে তুলে নেয়। লোকজন সাইটে সরে যায়। ভীড় থেকে একজন এগিয়ে এসে বলে,
-স্যার আমি সিএনজি চালক। আপনি আমার সাথে চলুন। আমার গাড়ি আছে সাথে। আমি আপনাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিব। আশিক অস্থির হয়ে বলে,
-গাড়ি কোথায়? তাড়াতাড়ি আনুন। -এইযে স্যার। রাস্তার ওপাশে। আশিক মেয়েটাকে নিয়ে একরকম দৌঁড়ে গাড়িতে উঠে। মেয়েটাকে বাঁচাতে না পারলে নিজেকে অপরাধী মনে হবে।
মেয়েটাকে নেওয়া হয়েছে কাছাকাছি একটা ছোট হাসপাতালে। বড় বড় হাসপাতাল গুলোতে নিয়ম কানুন বেশি। রোগী মরে যাক। আগে ফর্মালিটি মেইনটেইন করতে হবে। সেক্ষেত্রে এই হাসপাতালে এরকম কোনো নিয়ম কানুন মানতে হয়নি।
রোগী আসা মাত্রই তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। আশিকের ঘাড়ে পড়েছে তৎক্ষনাৎ পুলিশকে ইনফরমেশন দেওয়া। আশিকও লেট করেনি। সাথে সাথে পুলিশকে খবর দিয়ে দিয়েছে। এখন সে অপেক্ষায় আছে। কখন একটা ভালো খবর আসবে। কখন শুনতে পাবে মেয়েটা বেঁচে যাবে।
চলবে-
নীল_দুপুর
সূচনা পর্ব সুরমা-