অহংকারী_মেয়ে

অভ্র_নীল

২য়_পর্ব

তিশা রেগে চলে গেলো আর আমি সেটা দেখতে থাকলাম, কেমন একটা লাগলেও আমি ভাবতে শুরু করলাম আমি তো কিছুই করিনি, এবার আমি টিউশন পড়ানোর উদ্দেশ্য বের হলাম, প্রতিদিনের রুটিনের মতো সময়মাফিক বাসায় ফিরলাম, খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়লাম, পড়তে বসলাম না। আমি যতোই খারাপ হয় কিন্তু একটা মেয়ের শরীরে হাত দিয়েছি খুব জঘন্য একটা কাজ করেছি তাই কাল তিশার কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিবো। এটা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম, কখন যে ঘুমটা লেগেছে সেটা নিজেও বুঝতে পারছিনা। এবার উঠে আমি কলেজের দিকে রওনা হলাম। কলেজে ঢুকে চারিদিকে খুঁজতে লাগলাম তিশাকে.....
অবশেষে কলেজ ক্যাম্পাসের পাশে গ্যারাজে তিশাকে দেখতে পেলাম, আমি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম, তিশাকে আমাকে দেখে মনে হয় খুব রেগে গেছে। আমি ওর সামনে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে.... -- কালকের জন্য সরি। (আমি) তিশা এবার হেসে হেসে.... -- ভিখারি তো ভিখারিই হয়, এই ওকে ব্যাগটা দিয়ে দে। (তিশা) -- আমি কারোর কাছে ভিক্ষা চাইতে বা নিতে আসিনি, আমার ভুলটা আমি শোধরাতে এসেছি। -- ও মা তাই😱 -- জ্বি। -- এই ক্ষাত পোলা শোন -- জ্বি -- তুই এমন কেন? -- কেমন? -- তোকে এতো অপমান করি আমরা তবুও তুই এখনো এই কলেজে আছিস কেন? -- জানেন তো গরীব মানুষদের অর্থ না থাকলেও স্বপ্ন হাজার, তার মধ্যে এটাও একটা স্বপ্ন যেটা আমার আম্মু দেখেছে। -- বাহ বেশ তো কথা বলতে শিখেছিস। -- জ্বি, বলতে শিখিনি তবে বাস্তব শিখিয়ে দিয়েছে। -- তা তোর নামটা কি যেন? -- জ্বি অভ্রনীল, আমি এখন আসি। আমি এবার পিছন ঘুরে চলে আসতে লাগলাম...... -- এই ক্ষাত পোলা শোন? -- জ্বি বলুন? -- তুই এতো কিউট তাহলে তুই এমন চশমা পড়িস কেন? দেখতে কতো ক্ষাত লাগে বলতো। -- জ্বি ক্ষতি নেই, কলেজে আসি আমি পড়াশোনা করতে কাউকে রূপ দেখাতে না। এটা শুনেই তিশা জ্বলে গেলো...
-- তারমানে তুই আমাদের বোঝাচ্ছিস -- না, আপনাদের বোঝানোর সাধ্য হয়তো আমার নেই আর থাকবেই বা কেন আপনারা কতো বড়লোক বাসার মেয়ে আর আমি কোথায় গেঁয়ো একটা গরীব ছেলে, যার বাসায় নুন আনতে পান্তা ফুরাই। তিশা দেখি একমনে কথা গুলা শুনছিলো..... এবার আমার কাছে এসে...
-- আমরা বন্ধু হতে পারি কি? -- না। -- কেন? -- আপনার বড়লোকদের সাথে আমার মতো গরীব ছেলের বন্ধুত্ব হয় না। -- কারোর হোক বা না হোক আমার চাই। -- সম্ভব না, আমি আসি। এটা বলে আমি চলে এলাম। দেখি সারাদিন মেয়েটা আমার পিছনে পিছনে ঘুরছে আর আমি সেটা হাল্কা করে নোটিশ করছি, জানি আবার মজা করবে। তাই be carefull, আমি কলেজ শেষ করে বাসার যাচ্ছি ঠিক তখনি দেখি গাড়ি নিয়ে আমার সামনে তিশা এলো, আর আমার হাত ধরে.... -- এই ক্ষাত পোলা গাড়িতে উঠো। কি ব্যাপার আজ এতো সম্মান, বাহ বেশ ভালোই লাগলো। -- কেন? -- কেন মানে কি একটা কাজ আছে। -- নিজের কাজ নিজে করে নিতে পারেন তো না আমাকে নিয়ে আবার মজা করার প্লান। -- না, তুমি যাবা কিনা। এবার আমার হাত ধরে টেনে আমাকে গাড়িতে বসালো, আমার অনিচ্ছাতে। এবার দেখি একটা শপিংমল এর সামনে এসে দাঁড়ালো কিন্তু আমার কাছে তো টাকা নেই। -- ক্ষাত পোলা চলো।(তিশা) -- কইই যাবো।(আমি) -- দেখতে পারছো না কোথায় এসেছি। -- না আমি যেতে পারবো না। -- যাবে কিনা। -- না বলেছি তো। -- ওই চলো। এবার আমার হাতটা ধরতে গেলো, আমি হাত না ধরতে দিয়ে.... -- আমার হাত ধরবেন না প্লিজ। -- কেন? -- আমি গরীব, আমার শরীরে হাত দিলে হয়তো আপনাকে গোসল করতে হবে, আর সেটা আমি চাই না। -- উফ আল্লাহ, তুমি সেই আগের কথা গুলাকে নিয়ে পড়ে আছো। -- না, এটা বাস্তব। -- চলো তো। এবার মলে ঢুকলাম, দেখি সব জামাকাপড় ও জেন্টসদের দেখছে, মনে হয় বফের জন্য কিনবে। দেখি অনেকগুলো ড্রেস পছন্দ করলো, এবার আমার দিকে তাকিয়ে..... -- যাও এগুলা ট্রাই করা আসো। (তিশা) -- কেন? -- আরে বাবা দেখতে হবে তো কেমন লাগবে দেখতে। -- ওহ বুঝলাম আপনার বফের সাইজ আর আমার সাইজ এক নাকি! -- আরে না না। -- তবে। -- কিছু না, যাও তাড়াতাড়ি। সব ড্রেস ট্রাই করতে করতে পুরাই এক ঘন্টা চলে গেলো, এবার চয়েজ হলো ড্রেস। আমি এবার ওগুলা খুলে আমার নিজের ড্রেস পড়ে নিলাম, এবার কাউন্টারে তিশা টাকা দিয়ে গাড়ির কাছে এলো, আর গাড়ির কাছে এসেই আমার দিকে ব্যাগটা তুলে..... -- এই ক্ষাত পোলার তোমার জন্য এটা। (তিশা) -- সরি আপু আমি ভিক্ষা নেই না। -- ওই কুত্তার বাচ্ছা আপু কাকে বলিস? আর ভিক্ষা মানে😡😡😡 তিশা দেখি রেগে গেছে, মুখটা অনেক মায়াবী, যতোই হোক বড়লোকের মেয়ে, আর বড়লোকের মেয়েরা একটু দেখতে সুন্দরি হয় তবে মনটা সবার সুন্দর না। -- সরি, আপনি তো কাল বললেন আমার মতো গরীবকে সাহায্য করে আল্লাহ এর কাছে পূর্নতা লাভ করবেন। -- কাল রেগে উল্টাপাল্টা বলে দিয়েছি। -- আপনাদের মতো আমি বড়লোকের ছেলেমেয়েদের আমি বিশ্বাস করি না। -- আচ্ছা তোমার প্রব্লেমটা কোথায়, আমি বড়োলোক তো কি হয়েছে। -- দেখছেন তো আপনি বড়লোক সেটা গর্ব করে বলছেন, কই কাউকে কোনোদিন কিছু দিয়ে সাহায্য করেছেন। টাকা নিয়ে মানুষ কখনো বাঁচতে পারে না, অন্যের সুখের জন্য নিজের অর্থ যদি সামান্য রূপে বিলিয়ে দেওয়া হয় তাতে এমনকি ক্ষতি হবে শুনি। কিন্ত না আপনাদের মতো বড়োলোকদের একটাই স্বভাব আরো চাই আরো চাই। শুধু টাকার পাহাড় চাই। তিশা এবার মাথা নিচু করে আমার সব কথাগুলা শুনছে..... -- তোমার বড়লোকদের উপর এতো রাগ কেন? -- এটা রাগ না বুঝলেন -- তো কি? -- কিছু না, আর এসব আপনাদের মতো বড়লোকের ছেলেমেয়েরা বুঝবে না। -- তো কারা বুঝবে শুনি? -- আমাদের মতো গরীব মানুষেরা, জানেন টাকার মূল্য আমাদের কাছে কতটা প্রয়োজনীয়। -- কতটা? আমার চোখের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে তিশা গালে হাত দিয়ে হাসছে আর আমার কথা গুলা শুনছে। -- আপনারা প্রতিদিনের হাত খরচ যেভাবে খুশি উড়িয়ে দেন কিন্তু আমাদের ভাবতে হয় কালকের কথাটাও কিভাবে হাত খরচ চলবে। হাত খরচের কথা বাদ দেন আপনি যে প্রতিদিম এই লাক্সারি গাড়িটা নিয়ে আসেন শুধুমাত্র একা বসে কই কোনোদিন কোনো বৃদ্ধা মানুষকে কি চাপিয়েছেন? এতো রোদে চলাফেরা করছে। -- ছি, তাদের গোটা শরীরে কি দুর্গন্ধ। -- দেখলেন তো এটাই আপনাদের মতো বড়োলোকের ছেলেমেয়েদের প্রব্লেম, আরে একটু সাহায্য করেতে শিখেন, আমাকে একটা ড্রেস দিয়ে আল্লাহ এর কাছে পুর্নতা লাভ করবেন বলছেন কিন্তু জানেন পথেঘাটে মানুষদের সাহায্য করা কতটা ভালো। আপনাদের মতো বড়োলোকরা এসব বুঝবেন না, কারন আপনারা টাকা রোজগার করেন AC রুমে বসে বা শুট বুট পড়ে, কিন্তু গরীবরা মাঠে লাঙল নিয়ে এতো রোদে জ্বলে পুড়ে চাষ করে আপনাদের মুখে অন্ন জোগায়। শুধুমাত্র কয়েকটা টাকার লোভে। আমাদের মতো গরীবরা যদি না থাকতো না তাহলে আপনাদের মতো বড়লোকরা বাঁচতো না। তিশা এইসব কথা গুলা শোনার পর আমায় হঠাৎ জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো, আমাকে জড়িয়ে ধরতেই আমি ওকে ছাড়িয়ে দিলাম আর বললাম...... -- গরীবের সাথে বড়লোকের মিল হয় না প্লিজ শরীরে স্পর্শ করবেন। -- তুমি এমন কেন? -- জ্বি আমি একটু এমনই। -- আমি বড়োলোক বলে তোমার জ্বলন হচ্ছে। -- জ্বি না। -- হচ্ছে। এসব কথা বলতে বলতে আমার বাসায় আমাকে পৌছে দিয়ে গেলো, কিন্তু আমি ওর দেওয়া ব্যাগ ওকেই ফিরিয়ে দিলাম। এবার আমার কলার ধরে.... -- এই ব্যাগ না নিলে তোকে আমি নারী নির্যাতন কেসে ফাঁসাবো। -- মামামামানে😱,(আমি পুরাই ভয়ে থরথর করে কেঁপে) -- জ্বি, -- এই নিচ্ছি নিচ্ছি, প্লিজ এসব করবেন না। শুনেছি নাকি পুলিশের খাতায় নাম উঠে গেলে নিজের মানসম্মান কিচ্ছু থাকে না, আর তিশা খুব জেদি মেয়ে। -- এই নাও, আর হ্যাঁ আমি যা বলবো এবার থেকে তাই করবে। আমি এবার মাথা নামিয়ে... -- জ্বি, কি করতে হবে বলুন। -- সময় বলে দেবে, বাই ক্ষাত পোলা এবার হেসে হেসে চলে গেলো, মোবাইল নাম্বারো আছে ওর কাছে যদি নাম্বারটা থানায় দিয়ে দেই😭😭😭, এবার আমি রুমে এসে বসলাম, এটা নিয়ে চিন্তা করছি ঠিক তখনি তিশার নাম্বার থেকে..
-- এই ক্ষাত পোলা 143 143 মানে কি? আমি সব বই একে একে খুঁজতে থাকলাম, কোনো প্রশ্নের উত্তর চাইছে হয়তো তাই ম্যাসেজ দিয়েছে, না উত্তর বলে দিলে সোজা হয় তো থানায় নাম্বারটা দিয়ে দেবে। প্রায় ৩ ঘন্টা খুঁজতে লাগলাম, কিন্তু কোনো বইই এ পেলাম না, দেখি তিশা এখন কল দিয়েছে, আমার কপালে এখন ঘামের বিন্দু টপাটপ করে গাল বেয়ে নীচে নেমে আসছে, আমি এবার ফোনটা রিসিভ করতেই..... -- ওই ক্ষাত পোলা আমার উত্তর কইই। আমার বুকটা এবার ধরধর করে কাঁপছে। -- না না না মানে কোনো বইই এ তো পেলাম না তাই। -- কি তাই, উফ আল্লাহ, তোকে না আমি গিলে খাবো। -- কে কে ন ন ন? -- কিছু না রাখছি বাই। মুডটাই অফ করে দিলো। -- আচ্ছা। -- এসব গরীবের পোলাদের না বলাই উচিত, কিছুই বুঝে না ক্ষাত এক একটা। এই কথাটা শুনে খুব কষ্ট লাগলো, আচ্ছা আমি গরীব বলে কি আমি মানুষ না😞 আমি আবার বইই এর পাতা উল্টাতে থাকলাম যা হোক করে আমি উত্তর খুঁজে দেবোই। চলবে নাকি.............! সাড়া পেলে আগামী পর্ব লেখার জন্য আগ্রহী হবো। like cmnt nd shre mst w8ng 4 nxt prt........

3
$
User's avatar
@Mdemon456 posted 3 years ago

Comments