গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_সেপ্টেম্বর_২০২০
গল্প: সুগন্ধি
পর্ব:৩
লেখা:মার্জিয়া সুলতানা নাবিহা
সিস্টার বেক্যু আরো একবার গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ঢোক গিললেন। তাঁর ভাবতেই অবাক লাগছে এত এত সৈন্য দাঁড়িয়ে আছে তাদের ঘোড়ার গাড়ি ঘেরাও করে। পিছনে আরো ঘোড়ার পিঠে বসা সৈন্য দেখা যাচ্ছে। তাদের দেখে তো মনে হচ্ছে না তাঁরা ডিউক কার্লারের লোক।তাহলে তাঁরা কি প্রিন্সেসের কোনো ক্ষতি করতে এসেছে? নাকি লুটপাট করতে এসেছে? বেক্যু একবার তাঁর কোলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা পারিসার দিকে তাকালো। কি মায়া ছড়িয়ে আছে মুখটিতে। চোঁখের পাতার ঘন পাপড়ি গুলো যেন ভোরের শিশির ভেজা ঘাস। আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু হচ্ছে তাঁর শরীরের সুগন্ধি! এই যে বেক্যুর কোলে শুয়ে থাকার দরুন তাঁর সুগন্ধিটা যেন প্রখর ভাবে ধাক্কা খাচ্ছে ব্যেকুর নাকে! বেক্যু একজন নারী হয়েও তাঁর নিজেকে মাতাল লাগছে সে যদি পুরুষ হতো তাহলে জানি কী হতো! পারিসা থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালো বেক্যু। সামনে পারিসার খালাতো বোন পায়রো বসে আছে। সে পারিসার ছোট কালের বান্ধবী। পায়রো পারিসা থেকে বছর দুইয়ের বড় হলেও পায়রোর সাথে পারিসার আন্তরিক সখ্যতা প্রবল। পায়রোর চেহারা দেখে বেক্যুর আরো ভয় করতে শুরু করল।সে আর কিছু চিন্তা না করে আলতো হাতে পারিসার মাথা থেকে মুকুটটি পায়রোর মাথায় পরিয়ে দিলো।পায়রোর সাথে চোখে চোখে নিঃশব্দে পরিকল্পনা হয়ে গেল বেক্যুর। পারিসাকে আলগোছে উঠিয়ে বেক্যু বসে পরল পায়রোর জায়গায় আর পায়রো বসে পরল পারিসার জায়গায়। কিছুক্ষণ পরেই শোনা গেল ঘোড়ার পায়ের শব্দ কেউ দ্রুত বেগে ঘোড়া ছুটিয়ে তাদের গাড়ির দিকে ধেয়ে আসছে। শব্দ কাছাকাছি আসতেই ভয়ে পায়রো হালকা শব্দে কান্না করে দিলো। শোনা গেল ঘোড়ার থামার শব্দ সাথে কিছু পায়ের শব্দ। হঠাৎই গাড়ির দরজা খোলার শব্দে চমকে চোখ তুলে তাকালো বেক্যু।আর চোখ-মুখ খিচে বসে রইলো পায়রো। একজন সুদর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির বাহিরে গাড়ির দরজা ধরে। তাঁর চোখে বিচরণ করছে পায়রোর চোখে-মুখে।কিছু যেন খুঁজে চলেছেন পায়রোর চেহারায়। খুঁজে না পেয়ে রেগে গেল লোকটি। লাল বর্ণ ধারণ করল তাঁর গৌর বর্ণের চেহারা। মুহূর্তেই রক্ত লাল চোখ নিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো সে
-"প্রিন্সেস পারিসা কোথায়?"
চিৎকারের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল পারিসার সে মাথা উঠিয়ে দেখতে যাবে কিন্তু কিছু একটা শক্ত ভাবে বাঁধা দিয়ে রেখেছে তাঁকে। আবার শোনা গেল কারো চিৎকার। কিন্তু এটা পায়রোর গলার স্বর সে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলছে
-"আমিই প্রিন্সেস! আমিই লর্ড কার্লারের মেয়ে!"
তারপর শোনা গেল বেক্যুর গলা সে কাঁপা কাঁপা গলায় বার বার বলছে
-"আপনারা প্রিন্সেসের কোনো ক্ষতি করতে পারেন না। লর্ড কার্লার জানতে পারলে আপনাদের মৃত্যু অবধারিত!"
হঠাৎই কিছু বিকট হাসির শব্দ শুনা গেল।তারপরই শোনা গেল একটি গম্ভীর স্বর
-"আমি ভার্সকোর প্রিন্স ফিরেইন্সো। আমাকেই লর্ড কার্লার পাঠিয়েছেন প্রিন্সেসকে নিয়ে যেতে। কিন্তু তাঁর বর্ণনা অনুসারে তো প্রিন্সেসের চেহারা মিলছে না!"
এইবার মনে হলো পারিসার বাঁধা দেওয়া হাতটি শিথিল হয়ে গেল। পারিসা এবার মাথা থেকে বেক্যুর কাপড় সরিয়ে মাথা উঠালো বেক্যুর কোল থেকে সদ্য ঘুম থেকে উঠা ফুলো মুখ ও ঘুম জড়ানো কন্ঠ নিয়ে বলল
-"আমিই প্রিন্সেস মাদামোয়াযেল দো লা পারিসা। আপনাকে স্বাগতম কোন্দিয়াকে প্রিন্স ফিরেইন্সো।"
চোখ উঠিয়ে প্রিন্স ফিরেইন্সোকে দেখেই হাসি পেয়ে গেল পারিসার কিভাবে হাঁ করে তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। যেন কখনও যুবতী দেখেনি সে। হাসি আটকাতে না পেরে মুচকি হেসেই দিলো পারিসা। এইবার যেন প্রিন্স ফিরেইন্সোর অজ্ঞান হবার অবস্থা। সে দিক-বিক না পেয়ে মাথা নিচু করে বো করে বলল
-"ধন্যবাদ প্রিন্সেস! অসংখ্য ধন্যবাদ।"
বলেই সে গাড়িতে ঢুকতে নিলে পায়রো হেসে বলল
-"মাই লর্ড আপনি কি এখন গাড়িতে যাবেন"
থতমত গলায় ফিরেইন্সোর জবাব
-"হ্যাঁ!না না! মানে ভুলে হয়ে গিয়েছে!আরকি।"
এবার পারিসা হাসি আটকাতে না পেরে খিলখিলিয়ে হেসে দিলো। যা দেখে বুকে হাত রেখে কিছু বিড়বিড় করলেন ফিরেইন্সো।তারপর উচ্চ শব্দে নাইটদের বলল
-"সফর শুরু করো।"
বলেই এক হাতে বুক চেপে ঘোড়ার পিঠে উঠে বসল প্রিন্স ফিরেইন্সো। তাঁর ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি।
সরাইখানায় বসে আছে বারো জন বিদেশি।এক টেবিলে চার জন করে বসা। সবচেয়ে আকর্ষণীয় যাকে লাগছে সে একেবারে কোনাকুনি টেবিলে বসে আছে। তাঁকে আকর্ষণীয় লাগার মুল কারণ তাঁর মাথার সুসজ্জিত সাদা টুপি। সম্পূর্ণ সরাইখানার মানুষ গুলো ঘুরে ঘুরে শুধু তাঁকেই দেখছে।কেউ কেউ তো বলছেন ও
-"লোকটা মনে হয় কোনো প্রিন্স অথবা কোনো বড়লোক পরিবারের সদস্য!"
কিন্তু যাঁর নামে বলছে,যাকে এতো ঘুরে ঘুরে দেখছে তাঁর কোনো হেলদোল নেই। সে হোয়াইন এর দিকে তাকিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন। উইডো এবার এসব ভাবনা বাদ দিয়ে কথা বলল
-"মাই লর্ড! তারপরের পদক্ষেপ কী হবে?"
হোয়াইনের পাত্রটি নিয়ে এক চুমুক দিয়ে পাত্র খালি করে গম্ভীর কন্ঠে তরল গলায় পাত্রটি রাখতে রাখতে ভলতেয়ার এর রাজা লুই জোসেফের স্বর শোনা গেল
-"পরের পদক্ষেপ হবে মাদামোয়াযেল দো লা পারিসা।"
(বি.দ্র:এটি একটি সম্পূর্ণ ফরাসি সাহিত্যিক গল্প। এবং এটি একটি কাল্পনিক গল্প।এই গল্প দ্বারা লেখক ফারসি সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাথে মানুষকে পরিচয় করানোই তার লক্ষ্য। ফরাসি ইতিহাসকে বিকৃত করার কোনো মনো-বাসনা লেখকের নেই।)
(চলবে)
গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_সেপ্টেম্বর_২০২০
গল্প: সুগন্ধি পর্ব:৩ লেখা:মার্জিয়া সুলতানা নাবিহা
সিস্টার বেক্যু আরো একবার গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ঢোক গিললেন। তাঁর ভাবতেই অবাক লাগছে এত এত সৈন্য দাঁড়িয়ে আছে তাদের ঘোড়ার গাড়ি ঘেরাও করে। পিছনে আরো ঘোড়ার পিঠে বসা সৈন্য দেখা যাচ্ছে। তাদের দেখে তো মনে হচ্ছে না তাঁরা ডিউক কার্লারের লোক।তাহলে তাঁরা কি প্রিন্সেসের কোনো ক্ষতি করতে এসেছে? নাকি লুটপাট করতে এসেছে? বেক্যু একবার তাঁর কোলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা পারিসার দিকে তাকালো। কি মায়া ছড়িয়ে আছে মুখটিতে। চোঁখের পাতার ঘন পাপড়ি গুলো যেন ভোরের শিশির ভেজা ঘাস। আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু হচ্ছে তাঁর শরীরের সুগন্ধি! এই যে বেক্যুর কোলে শুয়ে থাকার দরুন তাঁর সুগন্ধিটা যেন প্রখর ভাবে ধাক্কা খাচ্ছে ব্যেকুর নাকে! বেক্যু একজন নারী হয়েও তাঁর নিজেকে মাতাল লাগছে সে যদি পুরুষ হতো তাহলে জানি কী হতো! পারিসা থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালো বেক্যু। সামনে পারিসার খালাতো বোন পায়রো বসে আছে। সে পারিসার ছোট কালের বান্ধবী। পায়রো পারিসা থেকে বছর দুইয়ের বড় হলেও পায়রোর সাথে পারিসার আন্তরিক সখ্যতা প্রবল। পায়রোর চেহারা দেখে বেক্যুর আরো ভয় করতে শুরু করল।সে আর কিছু চিন্তা না করে আলতো হাতে পারিসার মাথা থেকে মুকুটটি পায়রোর মাথায় পরিয়ে দিলো।পায়রোর সাথে চোখে চোখে নিঃশব্দে পরিকল্পনা হয়ে গেল বেক্যুর। পারিসাকে আলগোছে উঠিয়ে বেক্যু বসে পরল পায়রোর জায়গায় আর পায়রো বসে পরল পারিসার জায়গায়। কিছুক্ষণ পরেই শোনা গেল ঘোড়ার পায়ের শব্দ কেউ দ্রুত বেগে ঘোড়া ছুটিয়ে তাদের গাড়ির দিকে ধেয়ে আসছে। শব্দ কাছাকাছি আসতেই ভয়ে পায়রো হালকা শব্দে কান্না করে দিলো। শোনা গেল ঘোড়ার থামার শব্দ সাথে কিছু পায়ের শব্দ। হঠাৎই গাড়ির দরজা খোলার শব্দে চমকে চোখ তুলে তাকালো বেক্যু।আর চোখ-মুখ খিচে বসে রইলো পায়রো। একজন সুদর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির বাহিরে গাড়ির দরজা ধরে। তাঁর চোখে বিচরণ করছে পায়রোর চোখে-মুখে।কিছু যেন খুঁজে চলেছেন পায়রোর চেহারায়। খুঁজে না পেয়ে রেগে গেল লোকটি। লাল বর্ণ ধারণ করল তাঁর গৌর বর্ণের চেহারা। মুহূর্তেই রক্ত লাল চোখ নিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো সে
-"প্রিন্সেস পারিসা কোথায়?"
চিৎকারের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল পারিসার সে মাথা উঠিয়ে দেখতে যাবে কিন্তু কিছু একটা শক্ত ভাবে বাঁধা দিয়ে রেখেছে তাঁকে। আবার শোনা গেল কারো চিৎকার। কিন্তু এটা পায়রোর গলার স্বর সে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলছে
-"আমিই প্রিন্সেস! আমিই লর্ড কার্লারের মেয়ে!"
তারপর শোনা গেল বেক্যুর গলা সে কাঁপা কাঁপা গলায় বার বার বলছে
-"আপনারা প্রিন্সেসের কোনো ক্ষতি করতে পারেন না। লর্ড কার্লার জানতে পারলে আপনাদের মৃত্যু অবধারিত!"
হঠাৎই কিছু বিকট হাসির শব্দ শুনা গেল।তারপরই শোনা গেল একটি গম্ভীর স্বর
-"আমি ভার্সকোর প্রিন্স ফিরেইন্সো। আমাকেই লর্ড কার্লার পাঠিয়েছেন প্রিন্সেসকে নিয়ে যেতে। কিন্তু তাঁর বর্ণনা অনুসারে তো প্রিন্সেসের চেহারা মিলছে না!"
এইবার মনে হলো পারিসার বাঁধা দেওয়া হাতটি শিথিল হয়ে গেল। পারিসা এবার মাথা থেকে বেক্যুর কাপড় সরিয়ে মাথা উঠালো বেক্যুর কোল থেকে সদ্য ঘুম থেকে উঠা ফুলো মুখ ও ঘুম জড়ানো কন্ঠ নিয়ে বলল
-"আমিই প্রিন্সেস মাদামোয়াযেল দো লা পারিসা। আপনাকে স্বাগতম কোন্দিয়াকে প্রিন্স ফিরেইন্সো।"
চোখ উঠিয়ে প্রিন্স ফিরেইন্সোকে দেখেই হাসি পেয়ে গেল পারিসার কিভাবে হাঁ করে তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। যেন কখনও যুবতী দেখেনি সে। হাসি আটকাতে না পেরে মুচকি হেসেই দিলো পারিসা। এইবার যেন প্রিন্স ফিরেইন্সোর অজ্ঞান হবার অবস্থা। সে দিক-বিক না পেয়ে মাথা নিচু করে বো করে বলল
-"ধন্যবাদ প্রিন্সেস! অসংখ্য ধন্যবাদ।"
বলেই সে গাড়িতে ঢুকতে নিলে পায়রো হেসে বলল
-"মাই লর্ড আপনি কি এখন গাড়িতে যাবেন"
থতমত গলায় ফিরেইন্সোর জবাব
-"হ্যাঁ!না না! মানে ভুলে হয়ে গিয়েছে!আরকি।"
এবার পারিসা হাসি আটকাতে না পেরে খিলখিলিয়ে হেসে দিলো। যা দেখে বুকে হাত রেখে কিছু বিড়বিড় করলেন ফিরেইন্সো।তারপর উচ্চ শব্দে নাইটদের বলল
-"সফর শুরু করো।"
বলেই এক হাতে বুক চেপে ঘোড়ার পিঠে উঠে বসল প্রিন্স ফিরেইন্সো। তাঁর ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি।
সরাইখানায় বসে আছে বারো জন বিদেশি।এক টেবিলে চার জন করে বসা। সবচেয়ে আকর্ষণীয় যাকে লাগছে সে একেবারে কোনাকুনি টেবিলে বসে আছে। তাঁকে আকর্ষণীয় লাগার মুল কারণ তাঁর মাথার সুসজ্জিত সাদা টুপি। সম্পূর্ণ সরাইখানার মানুষ গুলো ঘুরে ঘুরে শুধু তাঁকেই দেখছে।কেউ কেউ তো বলছেন ও -"লোকটা মনে হয় কোনো প্রিন্স অথবা কোনো বড়লোক পরিবারের সদস্য!"
কিন্তু যাঁর নামে বলছে,যাকে এতো ঘুরে ঘুরে দেখছে তাঁর কোনো হেলদোল নেই। সে হোয়াইন এর দিকে তাকিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন। উইডো এবার এসব ভাবনা বাদ দিয়ে কথা বলল -"মাই লর্ড! তারপরের পদক্ষেপ কী হবে?"
হোয়াইনের পাত্রটি নিয়ে এক চুমুক দিয়ে পাত্র খালি করে গম্ভীর কন্ঠে তরল গলায় পাত্রটি রাখতে রাখতে ভলতেয়ার এর রাজা লুই জোসেফের স্বর শোনা গেল
-"পরের পদক্ষেপ হবে মাদামোয়াযেল দো লা পারিসা।"
(বি.দ্র:এটি একটি সম্পূর্ণ ফরাসি সাহিত্যিক গল্প। এবং এটি একটি কাল্পনিক গল্প।এই গল্প দ্বারা লেখক ফারসি সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাথে মানুষকে পরিচয় করানোই তার লক্ষ্য। ফরাসি ইতিহাসকে বিকৃত করার কোনো মনো-বাসনা লেখকের নেই।)
(চলবে)