হটাৎ পেটে কারো ছোঁয়া পেতেই চমকে উঠে কুহু। মানুষ টা কে? এটা না দেখে কুহু আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ দেখছে কিনা?

তারপর এক ঝটকায় হাত টা সরিয়ে দিয়ে পেছনে তাকাতেই চিৎকার করে উঠে....

কুহু - আপনিইইই....

রেহান - ইয়াপ জানপাখি! বলেছিলাম না তুমি যেখানেই যাবে আমি তোমার ছায়ার মতো থাকবো।

কুহু - আপনার সাহস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারছি না!!
আপনি আমায় ফলো করতে করতে আমার ভার্সিটি পর্যন্ত চলে এসেছেন? দেখেই তো মনে হচ্ছে এক নাম্বারের গুন্ডা। অবশ্য আপনাদের মতো ছেলেদের এই একটাই কাজ মেয়েদের পিছু ঘুরঘুর করে তাদের বিরক্ত করা!

রেহান - হেই স্টুপিড গার্ল জাস্ট স্টপ। কি কখন থেকে যা তা বলে যাচ্ছো তুমি!

কুহু - যা তা নয় সত্যিই তো বললাম! না হলে আপনি আমার পিছু নিলেন কেনো বলুন? আর এখন আমার ভার্সিটিতেও ঢুকে পড়েছেন? আপনি জানেন এখানে বাহিরের কাউকে ঢুকতে দেয়া হয় না। আমি চাইলে দারোয়ান কে দিয়ে এখনি আপনাকে ঘাড় ধরে বের করে দিতে পারি। সো ভালোই ভালোই বলছি নিজ থেকে বের হয়ে যায়। নয়তো আমি দারোয়ান কে গিয়ে বলছি।

প্রণয় (রেহানের ফ্রেন্ড) - ইউ ক্রেজি গার্ল। জানো তুমি কার সাথে এই ভাবে বিহেভ করছো? চেনো তুমি ওকে? (রেগে)

প্রণয় আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই রেহান হাত দিয়ে ইশারা করে প্রণয় কে থামতে বলে।

রেহানের চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। রাগে রেহানের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে।
কুহুর দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। চোখ দিয়ে যেনো আগুন বের হচ্ছে।

রেহান - তোমার সব কথার জবাব কাল পাবে। (রেগে)

রেহান আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে চলে আসে সেখান থেকে।

কুহু রেগে রেহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

কিছুক্ষন পরই সানিয়া আর রিহা (কুহুর বান্ধবী) আসে।

সানিয়া - কুহু... কি হলো তোর?

রিহা - রেগে আছিস কেনো? বল না কি হলো?

কুহু কোনো জবাব দিচ্ছে না শুধু প্রচন্ড রেগে একদৃষ্টিতে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে।

সানিয়া - রিহা তোকে বলেছিলাম তুই কুহুর সাথে থাক তা না তুইও আমার সাথে চলে গেলি। এখন কি করবো বল তো? ও কি জন্য রেগে আছে কিছুই তো বলছে না।

রিহা - আমার শাড়ির কুঁচি খুলে যাচ্ছিলো পায়ে লেগে। তোর সাথে না গেলেও পরে তো যেতেই হতো একা একা। তাই তো গেলাম তোর সাথে। ভেবেছিলাম দু'জন একসাথেই কমন রুমে চলে যাই। আর আমি তো কুহুকে বলেছিলাম আমাদের সাথে যেতে। ওইতো গেলো না।

সানিয়া - কুহু প্লিজ বল না তোর কি হয়েছে? (চিন্তিত হয়ে)

সানিয়া আর রিহা কুহুর রাগ সম্পর্কে ভালো করেই জানে। সহজে কুহুর রাগ ভাঙ্গানো সম্ভব না আর রেগে থাকলে মুখ থেকে কথা বের করাও সম্ভব না।

রিহা - সানিয়া চুপ থাক। নয়তো আরও রেগে যাবে। ও যখন কিছু বলতে চাইছে না থাক না।

কুহু - রাগবো না তো কি করবো বল! ঐ অসভ্য গুন্ডা ছেলেটা আজ ভার্সিটি পর্যন্ত চলে এসেছিলো।

রিহা - কোন অসভ্য? কার কথা বলছিস তুই?

সানিয়া - আমিও তো কিছু বুঝতে পারছি না। কুহু বুঝিয়ে বল কি হয়েছে? কে এসেছিলো?

কুহু - আরে তোদের বলেছিলাম না কাল। ঐ ছেলেটা আজও এসেছে। আর এসেই কালকের মতো আবার অসভ্যতামি করেছে। আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না ও এখানে ঢুকলো কি করে?

সানিয়া - কুহু কুল ডাউন। দেখ আজ যেহেতু অনুষ্ঠান তাই বাহিরের সবাই আসতে পারে। এটা তো কমন তাইনা। আর ছেলেটা এসেছিলো তুই দেখিস নি? তুই চলে আসতি কমন রুমে! আমরা তো ঐ খানেই ছিলাম। তখন ওরে বুঝাই দিতে পারতাম মেয়েদের পিছু করার ফল। তাছাড়া কমন রুমে তো ছেলেদের যাওয়া নিষেধ ছিলো। সো কোনো ঝামেলা হতো না।

কুহু - আমি কি ওকে আসতে দেখেছি নাকি। ও কোথা থেকে এসে হটাৎ করে আমার পেটে টাচ করেছে। ইচ্ছে করছে ওর হাত দুটো কেটে কুকুর কে খাওয়াতে।

রিহা - বলিস কি? এই ছেলে তো আসলেই একটা অসভ্য।

সানিয়া - এই যাহহহ! এই বজ্জাত ছেলেটার জন্য আমাদের আনন্দ টাই মাটি হয়ে গেলো।

রিহা - সেটাই তো। আমি তো ভেবেছি ইচ্ছে মতো পিক তুলবো। তা আর হলো না। (হতাশ হয়ে)

কুহু - কেনো তোদের আনন্দ নষ্ট হবে কেনো? (ভ্রু কুঁচকে)

রিহা - কেনো আবার? ঐ হনুমান টা তো তোকে রাগিয়ে দিয়ে গেলো। আর তোর যা রাগ! তুই রেগে থাকলে কি আমরা আনন্দ করতে পারবো বল তো?

কুহু - হুহহ হয়ছে। চল এবার।

সানিয়া - এই তোর রাগ কি চলে গেলো নাকি?

কুহু - হুম মঙ্গলগ্রহে পাঠিয়ে দিয়েছি। (হেসে)

সানিয়া আর রিহা ও হেসে দেয়।

এদিকে...

রেহান, প্রণয়, সোহান, তিয়াস পার্কে বসে আছে।

সোহান - দেখ রেহান আজ মেয়েটা তোর সাথে যে বিহেভ করলো! আমার তো মারাত্মক রাগ হচ্ছে। বলে কিনা তোকে দারোয়ান দিয়ে বের করে দিবে!!

তিয়াস - হ্যা। আমার তো ইচ্ছে হয়েছিলো কষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিই গালে। ফাজিল মেয়ে।

তিয়াসের কথা শুনে রেহান চোখ রাঙ্গিয়ে তিয়াসের দিকে তাকাতেই ভয়ে তিয়াস চুপ করে যায়।

রেহান - ভাবি হয় তোর বুঝতে পেরেছিস? নেক্সট টাইম যেনো আর এমন ভুল না হয়।

প্রণয় - ভাবি!! ঐ মেয়ে তো তোকে সহ্যই করতে পারে না আর তুই বলছিস ভাবি! হাউ ফানি!!

রেহান - মানতে পারেনি তো কি হয়েছে? মানতে তো ওকে হবেই। নিজ থেকে হোক বা জোর করে!

কুহু, রিহা আর সানিয়া একসাথে ছবি তুলায় ব্যাস্ত।

সানিয়া - ওওও ইয়ার! আজকের বসন্ত উৎসব আমার জীবনের বেস্ট বসন্ত উৎসব হবে!

রিহা - হুম!! অন্নেক ভালো লেগেছে।

কুহু - এবার চল না বাড়ি যাই। আমার ক্ষিদে পেয়েছে খুব।

সানিয়া - চল রেস্টুরেন্ট এ যাই।

কুহু - কিইই!! এই সাজে রেস্টুরেন্টে যাবো? পাগল হয়েছিস তুই?

রিহা - সো হোয়াট? চল না যাই।

সানিয়া - হুম চল প্লিজ না করিস না। আর আমাদের সাজ টা তো মন্দ না দেখেছিস না কতো কতো ছেলে আমাদের দেখছিলো! রেস্টুরেন্টে ও দেখবি সবাই আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে। (ভাব নিয়ে)

রিহা - এই তুই চুপ কর। যতো আজাইরা কথা। শাকচুন্নির দিকে নাকি সবাই তাকিয়ে আছে হুহহ।

সানিয়া - এটা কি হলো! আমি শাকচুন্নি? (রেগে)

কুহু - ওফফফ!! তোরা থাম না বাবা। চল তারাতারি।

সানিয়া - হুহহ।

রিহা, সানিয়া আর কুহু রেস্টুরেন্ট এ চলে যায়।

সানিয়া - কুহু তুই অর্ডার কর। আফটারওল তোর বেশি ক্ষিদে পেয়েছে!

কুহু - আপাতত পিৎজা অর্ডার করি। কিছুক্ষণ পর তো বাসায় যাবোই। আর বাসায় গেলে না খেয়ে থাকলে আম্মু আমার বারোটা বাজাবে।

রিহা - হুম সেই ভালো। আমার জন্যও পিৎজাই কর।

কুহু - সানিয়া তুই?

সানিয়া - পিৎজাই। সাথে কোল্ড কফি।

কুহু ওদের খাবারের অর্ডার দিয়ে দেয়।

সানিয়া - কুহু একটা কথা বলি? রাগ করিস না প্লিজ।

কুহু - রাগ করার মতো কিছু বলিস না তবেই হলো।

সানিয়া - না মানে... ঐ ছেলেটার সাথে তোর কিভাবে দেখা হয়েছিলো সব বল না প্লিজ।

কুহু - দেখ এই সব এখন না বলাই ভালো। শুধু শুধু মাথা গরম করতে চাইনা আমি বুঝতে পেরেছিস।

রিহা - সানিয়া প্লিজ চুপ কর। আবার রেগে গেলে তো আমার পিৎজা খাওয়া টাই মাটি হয়ে যাবে।

সানিয়া - ওকে তোর ইচ্ছে। বলতে হবে না শুধু জানতে চেয়েছিলাম তাই আরকি।

কুহু - আচ্ছা বাবা বলছি। তোদের বলেছিলাম না জেরিনের (কুহুর কাজিন) সাথে ঘুরতে যাবো। একটা পার্কে গিয়েছিলাম। আসলে আমাকে একা তো বের হতে দেয় না তাছাড়া একা ঘুরতেও মজা নেই তাই জেরিন কে নিয়ে বের হয়েছিলাম। আমি আর জেরিন একসাথেই ছিলাম। জেরিন এতোদিন আমেরিকা ছিলো তো ও এতো দিন কিভাবে কাটিয়েছে ঐ খান কার মানুষজন এই সব নিয়েই গল্প করছিলো। ( জেরিন - আপি জানো আমার না এখানে তোমাদের সাথে থাকতেই বেশি ভালো লাগে। বাট বেড লাক থাকতে পারিনা। তবে আই উইশ স্টাডি শেষ হলে আমি তোমাদের এখানেই চলে আসবো।

কুহু - হ্যা। তুই আসলে আমারও অন্নেক ভালো লাগে। এমনিতে তো ভার্সিটিতে গেলে সানিয়া আর রিহার সাথেই শুধু আড্ডা হয় তাছাড়া বাসায় আর কেউ নেই যে আড্ডা দিতে পারবো অনেক বোরিং লাগে রে জানু।

জেরিন - আমার ওতো। ---- এই আপি দেখো না।

কুহু - কী দেখবো? (অবাক হয়ে)

জেরিন - আরে সামনে দেখো না।

কুহু - সামনে কী দেখবো বলবি তো? ভুত দেখবো নাকি? (কিছুটা রেগে)

জেরিন - ধুরর বাবা তুমিও না! এই সময় এমন একটা জায়গায় ভুত আসবে কোথা থেকে শুনি? সামনে ঐ ছেলেটাকে দেখো ব্ল্যাক শার্ট কনুই অব্দি ফোল্ড করা, ব্ল্যাক জিন্স, চোখে সানগ্লাস, হাতে ব্ল্যাক ঘড়ি.... এতো মনে হচ্ছে ব্ল্যাক কিং। এতো হ্যান্ডসাম ছেলেও কি আছে আপি। আমর তো মনে হই এ নিশ্চয় কোনো হিরো। শুটিং করতে করতে এই পার্কে চলে এসেছে।

কুহু - এই তুই থামবি? কী কখন থেকে আরেক ছেলের গুনগান করে যাচ্ছিস। এই সব ছেলেদের দেখতে হ্যান্ডসাম হলে এরা ভেজালযুক্ত।

জেরিন - ভেজাল, ফরমালিন যাই বলো আপি আমি তো এই ছেলের উপর ৩০ কেজি ক্রাশ খাইছি। এই ছেলে তো আমার রাতের ঘুম হারাম করে দিলো গো!! (ঢ্যং করে)

কুহু - রাতের ঘুম হারাম করলো কিভাবে শুনি? কয়টা রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছিস শুনি? (ধমক দিয়ে)

জেরিন - আপি তুমি এতো আনরোমান্টিক কেনো বলো তো? এমন একটা ছেলে কে দেখে তো যে কেউ পাগল হবে আর তুমি এইসব কথা শুনাচ্ছো।

কুহু - তোর মতো তার ছিঁড়ে মেয়েই পাগল হবে।

জেরিন - আপি এই ছেলে তো দেখি এদিকে আসছে। কি হলো বলো তো!

কুহু - নে এবার ঠ্যালা সামলা। তখন থেকে বক বক করে যাচ্ছিস নিশ্চয় ছেলে শুনে ফেলেছে। এখন তোর বারোটা বাজাবে। যদি ছেলের গার্লফ্রেন্ড থাকে তাহলে তো কথাই নেই!!

জেরিন - আপি এইসব বলো কেনো? আমি তো এখানেই কথা বলছি এই ছেলে শুনবে কিভাবে এতো দূর থেকে।

কুহু - সেটাই তো ভাবছি।

চলবে...

প্রেমপিপাসা

প্রথম পর্ব

শিফা_আফরিন

3
$
User's avatar
@Mdemon456 posted 3 years ago

Comments