অণুগল্প- এক টুকরো কাহিনী
লেখনীতে- মেহুরুন্নেছা সুরভী
.
১৯৫২ সাল।
দেশে হরতাল, ১৪৪ ধারা জারি করেছে সরকার। তরুণ-তরুণীরা ক্ষিপ্র,উদ্দম্য হয়ে 'রাষ্টভাষা বাংলা চাই' মিছিল নিয়ে এগিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণের পথ ধরে।
গোধূলিবেলাকে বলা হয় রক্তিম শান্তির বেলা। রক্তিম সূর্যের আলোয়
পশ্চিমাকাশে ছেয়ে যায়, যার উজ্জ্বল রশ্মি এসে ভরিয়ে দেয় শহরের আনাচে কানাচে।
দিন ফুরিয়ে শহরে তখনো 'রাষ্টভাষা বাংলা চাই' মিছিলে আগুন জ্বলছে।
বস্তির ৩২ নম্বর বাড়িতে সদ্য জন্ম হওয়া শিশুটি মায়ের কোলে চুপটি মেরে শুয়ে আছে।অদূরের গুলিবর্ষণ আর গ্রেনেড ফাটার শব্দে বারবার কেঁপে ওঠছে শিশুটি।
"তোর নাম আদর।সাহসী আদর। ভয় পেলে একদম চলবে না, কেঁপেও ওঠবি না খোকা। তোকেও লড়তে হবে। মায়ের ভাষার জন্য, মা ডাকার অধিকার অর্জন করতে হবে । জানিস খোকা, তোর বাবা রাজপথে নেমেছে, রাষ্টভাষা বাংলা চাই মিছিলে। এই যে এক্ষুণি এসে যাবে,এসেই বুকে জড়িয়ে বলবে- আমার সাহসী ছেলে পৃথিবীতে বুকে এসে গেছে। রাষ্টভাষা বাংলা এখন হবেই হবে।"
শায়লা চোখের জল মুছে,আবারও নিশব্দে কাঁদে । দরজার বাহিরে চোখ যেন সরতেই চায় না। কখন স্বামী আসবে? এসেই ছেলে আদরকে বুকে জড়িয়ে নিবে। চুমুতে ভরিয়ে দিবে ছোট্ট গাল্টা।
"আদরের বাবা সেই যে গেল, এখনো এল না।"
"সোনাদাদু খবর নিতে গেল, ঠিক চলে আসবে দেখিস।"
শায়লার মনের ভয় তবুও যায় না। উৎকণ্ঠায় চেয়ে থাকে দরজার বাহিরে। ভয়টা ক্রমশ জেঁকে বসে মনে।
সহসাই কারো চিৎকারে শায়লারা কেঁপে ওঠে।
"পারবি না, তোর ছেলেকে ওদের হাত থেকে বাঁচাতে পারবি না। ওরা তোর ছেলেকে নিয়ে যাবে, মেরে ফেলবে,মেরে ফেলবে।"
কথাগুলো শুনে বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠল শায়লার। হাওয়া পাগলিটা এখনো লাফালাফি করছে। কিছুদিন আগে ছেলেকে হারিয়ে ভিষণ শোকাতুর ।
শায়লা, আদরকে বুকে জড়িয়ে নিল। অবুঝ শিশুটি কি আর মায়ের মনের কথা বুঝে, একটু পরপর কেঁপে ওঠছে।
বস্তির একজন দৌড়ে এসে হাঁক ডেকে বলে-
"রাস্তায় নাকি অনেককে গুলি করে মেরে ফেলছে। লাশ জিপে করে নিয়ে যাচ্ছে অন্যকোথাও। শুনেছি তাজা রক্তের গন্ধ শহরের পথে পথে ভাসছে।"
শায়লা স্তম্ভিত হয়ে যায়। এতটা নির্দয় হয় মানুষ!মানুষ হয়ে মানুষকে মারছে। ওরা মানুষ নয়, পশু, নাহ্ পশুও নয়! অন্যকিছু।
শায়লা আচমকা হেসে বলে,
"আমার আদর এখনো মরেনি। সাহসী আদর।"
সমাপ্ত।
পুনশ্চঃএকজন হাওয়া পাগলিকে একটি ঘরে আটকে দেয়। সেখান থেকে ভেসে আসে গগন বিদারি যন্ত্রনাদায়ক গলা ফাটানো চিৎকার। শায়লার খুব ইচ্ছে করে পাগলির গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে।
তার স্বামী কি তবে আর ফিরবে না?সাহসী আদরকে বুকে জড়িয়ে নিবে না?একটা চুমু দিবে না ছোট্ট গালটায়।
অণুগল্প- এক টুকরো কাহিনী
লেখনীতে- মেহুরুন্নেছা সুরভী
. ১৯৫২ সাল। দেশে হরতাল, ১৪৪ ধারা জারি করেছে সরকার। তরুণ-তরুণীরা ক্ষিপ্র,উদ্দম্য হয়ে 'রাষ্টভাষা বাংলা চাই' মিছিল নিয়ে এগিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণের পথ ধরে। গোধূলিবেলাকে বলা হয় রক্তিম শান্তির বেলা। রক্তিম সূর্যের আলোয় পশ্চিমাকাশে ছেয়ে যায়, যার উজ্জ্বল রশ্মি এসে ভরিয়ে দেয় শহরের আনাচে কানাচে। দিন ফুরিয়ে শহরে তখনো 'রাষ্টভাষা বাংলা চাই' মিছিলে আগুন জ্বলছে। বস্তির ৩২ নম্বর বাড়িতে সদ্য জন্ম হওয়া শিশুটি মায়ের কোলে চুপটি মেরে শুয়ে আছে।অদূরের গুলিবর্ষণ আর গ্রেনেড ফাটার শব্দে বারবার কেঁপে ওঠছে শিশুটি। "তোর নাম আদর।সাহসী আদর। ভয় পেলে একদম চলবে না, কেঁপেও ওঠবি না খোকা। তোকেও লড়তে হবে। মায়ের ভাষার জন্য, মা ডাকার অধিকার অর্জন করতে হবে । জানিস খোকা, তোর বাবা রাজপথে নেমেছে, রাষ্টভাষা বাংলা চাই মিছিলে। এই যে এক্ষুণি এসে যাবে,এসেই বুকে জড়িয়ে বলবে- আমার সাহসী ছেলে পৃথিবীতে বুকে এসে গেছে। রাষ্টভাষা বাংলা এখন হবেই হবে।" শায়লা চোখের জল মুছে,আবারও নিশব্দে কাঁদে । দরজার বাহিরে চোখ যেন সরতেই চায় না। কখন স্বামী আসবে? এসেই ছেলে আদরকে বুকে জড়িয়ে নিবে। চুমুতে ভরিয়ে দিবে ছোট্ট গাল্টা।
"আদরের বাবা সেই যে গেল, এখনো এল না।" "সোনাদাদু খবর নিতে গেল, ঠিক চলে আসবে দেখিস।" শায়লার মনের ভয় তবুও যায় না। উৎকণ্ঠায় চেয়ে থাকে দরজার বাহিরে। ভয়টা ক্রমশ জেঁকে বসে মনে। সহসাই কারো চিৎকারে শায়লারা কেঁপে ওঠে। "পারবি না, তোর ছেলেকে ওদের হাত থেকে বাঁচাতে পারবি না। ওরা তোর ছেলেকে নিয়ে যাবে, মেরে ফেলবে,মেরে ফেলবে।" কথাগুলো শুনে বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠল শায়লার। হাওয়া পাগলিটা এখনো লাফালাফি করছে। কিছুদিন আগে ছেলেকে হারিয়ে ভিষণ শোকাতুর । শায়লা, আদরকে বুকে জড়িয়ে নিল। অবুঝ শিশুটি কি আর মায়ের মনের কথা বুঝে, একটু পরপর কেঁপে ওঠছে।
বস্তির একজন দৌড়ে এসে হাঁক ডেকে বলে- "রাস্তায় নাকি অনেককে গুলি করে মেরে ফেলছে। লাশ জিপে করে নিয়ে যাচ্ছে অন্যকোথাও। শুনেছি তাজা রক্তের গন্ধ শহরের পথে পথে ভাসছে।" শায়লা স্তম্ভিত হয়ে যায়। এতটা নির্দয় হয় মানুষ!মানুষ হয়ে মানুষকে মারছে। ওরা মানুষ নয়, পশু, নাহ্ পশুও নয়! অন্যকিছু। শায়লা আচমকা হেসে বলে, "আমার আদর এখনো মরেনি। সাহসী আদর।"
সমাপ্ত।
পুনশ্চঃএকজন হাওয়া পাগলিকে একটি ঘরে আটকে দেয়। সেখান থেকে ভেসে আসে গগন বিদারি যন্ত্রনাদায়ক গলা ফাটানো চিৎকার। শায়লার খুব ইচ্ছে করে পাগলির গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে। তার স্বামী কি তবে আর ফিরবে না?সাহসী আদরকে বুকে জড়িয়ে নিবে না?একটা চুমু দিবে না ছোট্ট গালটায়।