নেশা
পর্ব_০৮৯
বেখেয়ালি_হিমু
" আপনি আমাকে আটকে রেখে গিয়েছিলেন কেনো? আমি কি মানুষ নাকি জীব-জন্তু? এভাবে আটকে রেখে যেতে হবে কেনো?
রাতে অফিস শেষে নির্ঝর বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথে তৃষ্ণা রাগি দৃষ্টিতে কথাটা বললো।
-- তুমি নিজে বোকা নাকি আমাকে বোকা ভাবো বুঝি না!
-- মানে? কি বলতে চাইছেন?
-- তোমার কি মনে হয়? এই বাড়ি থেকে যেখানে একটা পাখি আমার অনুমতি ছাড়া বের হতে পারে না,, সেখানে তুমি তিনদিন একা বের হয়েছো, সেটা আমি জানি না!
উনার শান্ত কন্ঠের ভয়ানক কথায় আমার আত্মার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
-- কি বলতে চাইছেন আপনি? আমি ককোথায় যাই? এএকদিনই পপালিয়ে ছিলাম।
-- লাইক সিরিয়াসলি! এতোটা বোকা মনে হয় তোমার আমাকে? তৃষ্ণা আমি এতোটাও বোকা নই। মানুষ চেনার দক্ষতা আগে ছিল না। কিন্তু এখন আমি ঠিক চিনতে শিখেছি সবাইকে। শপিং এর বাহানায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে দশ লাখ টাকা কাকে দিয়েছো সেটাও জানি। কালকে আমি বাসায় না থাকার সুযোগে বাসা থেকে বেরিয়ে কোথায় গিয়েছিলে সেটাও আমি জানি। অবশ্য এসবে আমার কিছুই আসে যায় না। তোমাকে আমি কিনে নিয়েছি আর এখন তুমি আমার বউ। সো তোমার উপর আমার অধিকার দ্বিগুণ। আমি ভেবেছিলাম অন্তত কাল রাতের পর তুমি নিজেকে একটু হলেও শুধরে নেবে। বাট আই ওয়াজ রং। তুমি আগের মতোই আছো। প্রতারক!
.
নির্ঝরের এমন গা জ্বালানো কথা আমার একদম সহ্য হচ্ছে না। এমনিতেই তিতলির টেনশনে আমার মাথা নষ্ট হওয়ার উপক্রম আর উনি উনার ফালতু কথার ঝুলি খুলে বসে আছেন।
কিন্তু একটা ভাববার বিষয় আছে। সে যদি জানতো আমি লুকিয়ে কোথায় যাই তাহলে আমাকে বাঁধা কেনো দেন নি।
-- আপনি যদি জানতে তাহলে বাঁধা দেন নি কেনো?
নির্ঝর কিছুক্ষণ বাম হাত দিয়ে তার কপালে স্লাইড করতে থাকে। হয়তো সে যেই কথাটা বলেছে সেটা তার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। হয়তো সে বলতে চায় নি।
-- আমি শুধু জানতে চাচ্ছিলাম তুমি আর কতোটা নিচে নামতে পারো। তন্ময় কে টাকা দেওয়ার জন্য নিজেকে আমার কাছে বিক্রি করেছো। এতোটা ভালোবাসো তন্ময় কে! আর আমি! আমি যে তোমার স্বামী সেই খেয়ালটুকু আছে তোমার? কালকেও তুমি তন্ময়ের বাড়ি গিয়ছিলে। কেনো তৃষ্ণা? উত্তর দাও কেনো?
-- এটা আমার নিতান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনাকে বলতে বাধ্য নই।
-- তৃষ্ণা! তুমি কি একবারের জন্যও আমাকে বুঝো না?
-- ছাড়ুন আমাকে। রাতের জন্য রান্না করতে হবে। বাসায় কোনো সার্ভেন্ট নেই।
নির্ঝর আমার বাহু আঁকড়ে ধরে কিছুক্ষণ আমার স্থির দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। কিন্তু আমি তার চোখে দিকে তাকাতে পারছি না। হয়তো তিতলির ব্যাপার টা উনি জানেন না।
উনার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কিচেনে চলে গেলাম।
.
.
.১১ পর্বের জন্য নেক্সট কমেন্ট না করে আইডিটা ফলোয়ান বা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়ে রাখলে আমি পোস্ট করার সাথে সাথেই আপনাদের কাছে চলে যাবে
.
.
খাবার টেবিলে উনার সাথে ভালো মন্দো আর কোনো কথা বলি নি। তবে উনার চোখ মুখ দেখে মনে হয়েছে উনি রেগে আছেন। কিন্তু আমি নিরুপায় উনাকে তিতলির সম্পর্কে কিছুই বলতে পারবো না।
.
ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন হঠাত কেউ পিছন থেকে আমার কোমড় চেপে ধরলো। পুরো বাড়িতে একমাত্র আমি আর নির্ঝর ব্যতিত অন্য কেউ নেই। তাই লোকটা যে নির্ঝর এটা বুঝতে আর বাকি নেই। কিন্তু উনার এভাবে জরিয়ে ধরায় আমার অস্বস্তি হচ্ছে।
উনি উনার থুতুনি আমার ঘাড়ে ঠেকিয়ে দিয়ে শাড়ির নিচ দিয়ে আমার পেটে হাত রাখলেন। ইচ্ছে করছে একটা ধাক্কা দিয়ে উনাকে পিছন দিকে ফেলে দেই। কিন্তু কেনো যেনো ভাবনা কে বাস্তবায়িত করতে পারছি না।
নির্ঝরের গরম নিশ্বাস আমার ঘাড়ে পরছে। না চাইতেও শরীর বারবার কেঁপে উঠছে। উনি উনার দুহাত দিয়ে আমার পেটে স্লাইড করছেন। পরিস্থিতি ক্রমশ আরও বেশি অস্বস্তিকর হয়ে যাচ্ছে। উপায়ন্তর না পেয়ে নির্ঝরের পেটে কুনুই দিয়ে পিছন দিকে ঠেলে ঘরের দিকে ছুট লাগালাম। কিন্তু বেশি দূর আর এগুতে পারলাম না। নির্ঝর আমাকে পিছন থেকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে কোলে তুলে নেন।
-- নির্ঝর কি করছেন? ছাড়ুন আমাকে।
-- কোনো ছাড়া ছাড়ি নেই।
-- এসব একদম ঠিক হবে না বলে দিলাম।
-- কেনো?
-- আপনি আমাকে ছোবেন না।
-- কেনো? (ভ্রুঁ কুচকে তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে)
-- জানি না। নামান আমাকে।
নির্ঝর আমার কথায় বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। ভয়ে বড়সড় একটা ঢোক গিলে আবার উনাকে বললাম আমাকে ছেড়ে দিতে কিন্তু এবারো আমার কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করলেন। নিজের সমস্ত ভার আমার উপর ছেড়ে দিয়ে আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিলেন।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
এক মাস কেটে গেছে নির্ঝরের সাথে আমার বিয়ের। এই কয়েকদিনে নির্ঝর আর আমার মধ্যে সম্পর্ক অনেকটা স্বাভাবিক হলেও কোথাও না কোথাও নির্ঝরের আমার প্রতি ঘৃণার রেশ রয়েই গেছে।
যেই উদ্দেশ্যে আমাকে বিয়ে করেছিলেন উনি, প্রতি রাতে উনার শয্যা সঙ্গী হয়ে সেই উদ্দেশ্য আমি পূরণ করে চলেছি। কোনোমতে দিন কেটে যাচ্ছে আমার। কিন্তু জীবন থমকে গেছে। এতোদিনে তিতলির সাথে একবারের জন্যও দেখা বা কথা হয় নি। নির্ঝরের দৃষ্টি এড়িয়ে তিনদিন তন্ময় আর তিতলির খোঁজে বেরিয়েছি। কিন্তু প্রতিবারই হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে আমাকে। না জানি তিতলির সাথে কি করেছে ওই পশু টা। কেমন আছে তিতলি কোথায় আছে!
.
.
.
পড়ন্ত বিকেলের হালকা তির্যক রোদ, সেই সাথে হিমশীতল বাতাস।সব মিলিয়ে মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
ছাদের কার্নিশ ঘেসে হাতে এক মগ নিয়ে দাড়িয়ে আছি। গোধূলী লগ্নটা উপভোগ করতে করতে পুরোনো সব স্মৃতির মাঝে বিচরণ করছিলাম।
নির্ঝর এখনও অফিস থেকে ফিরেন নি। এখন অবশ্য ফিরবেনও না। তার ফিরতে সন্ধ্যা পার হবে। কোনো সার্ভেন্টস্ নেই বাসায়। সার্ভেন্টসদের নির্ঝর সকালেই বিদায় করে দেন। রাতে আমাদের দুজনের জন্য রান্না টা আমাকেই করতে হয়।
জীবন কখন কোন দিকে বাঁক নেয় সেটা কেউ বলতে পারে না। একদিক দিয়ে আমার ভাগ্যে সুখ দিচ্ছে তো অন্যদিক দিয়ে আমার সবচেয়ে বড় সুখ কেড়ে নিচ্ছে। ভাগ্যের খেলা টা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না।
.
কফি শেষ হতে না হতেই নিচে দরজায় কলিং বেল বাজা শুরু করলো। সচরাচর নির্ঝর এতো তাড়াতাড়ি আসেন না। আর উনি ব্যতিত এই বাড়িতে আর কেউ আসে না।
কফি মগটা কিচেনে রেখে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। দরজা খুলে আমি যতোটা না অবাক হলাম তার চেয়েও সামনে থাকা মানুষগুলো বেশি অবাক হলো।
খুবই সুন্দর একটা মেয়ে নীল চুড়িদারে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। তার সাথে মধ্য বয়ষ্ক একজোড়া দম্পতি। তাদের পোশাক পরিচ্ছেদ বলে দিচ্ছে তারা ভিআইপি কেউ হবেন। এই এক মাসে প্রথম আমি ভিন্ন কোনো প্রাণীর মুখ দেখলাম এ বাড়িতে।
সামনে থাকা সুন্দরী মেয়েটি আমার দিকে ভ্রুঁ কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমাকে ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেলো। তার সাথে থাকা মানুষগুলোও বাড়ির ভিতরে ঢুকে পরলো। তাদের সবার সাথেই এক গাদা করে লাগেজ। তাদের ড্রাইভার এসে সেসব লাগেজ ড্রয়িং রুমে রেখে চলে গেলো।
.
.
মেয়েটা আমাকে আপাদমস্তক দেখে বলতে শুরু করলো,
-- নির কোথায়?
-- উনি তো অফিসে।
-- হুম। কিন্তু তুমি কে? আর নির এর বাড়িতে কি করছো?
-- আমি,,, আমি!
" ও এ বাড়ির নিউ সার্ভেন্ট স্নিগ্ধা।"
-- বাড়ির সদর দরজায় দাড়িয়ে নির্ঝর স্বজোরে কথাটা বললো।
-- নির তুমি নিউ সার্ভেন্ট হায়ার করেছো আর আমাকে একবার জানাও নি! এই এক মাসেই আমাকে পর করে দিয়েছো তাই না! তোমার সাথে আর কথা বলবো না।
-- স্নিগ্ধা ডোন্ট এক্ট চাইল্ডিশ। তোমরা হঠাত করে এখানে কিভাবে এলে!
" কেনো নির তোমার বাড়িতে কি আমরা আসতে পারি না!"
-- স্নিগ্ধার সাথে থাকা মহিলা টি নির্ঝেরের উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা ছুড়লো।
-- আমি সেটা তো বলি নি আম্মু। আমার বাড়ি মানেই তো তোমাদের বাড়ি। হাও আর ইউ গাইজ?
স্নিগ্ধার সাথে আসা বয়স্ক দম্পতি হলো নির্ঝরের বাবা মা, রাজীব চৌধুরী আর নয়না চৌধুরী।
-- আমরা ঠিক আছি নির। কিন্তু তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে না তুমি ঠিক আছো। (নয়না বেগম)
-- আইম ফাইন অলসো। আম্মু তোমরা দুতলার ঘরে গিয়ে রেষ্ট নাও। লাগেজ আমি পৌঁছে দিচ্ছি।
নয়না বেগম আর রাজীব সাহেব দুতলার ঘরে যাওয়ার জন্য সিড়ি বেয়ে উঠা ধরলে স্নিগ্ধা নির্ঝর কে চেপে ধরে গালে চুমু বসিয়ে দেয়। তৃষ্ণা সেখানেই উপস্থিত ছিল। নির্ঝরকে স্নিগ্ধার চুমু দেওয়ার দৃশ্য সে স্পষ্ট দেখতে পেয়েও মাথা নিচু করে থাকে। এই মাত্র নির্ঝর তাকে সবার সামনে কাজের লোক বলে পরিচয় দিয়েছে। ভাবতেই তৃষ্ণার বুকটা মুচড়ে উঠছে। শেষ পর্যন্ত তার স্বামী তাকে তার বাবা মার সামনে কাজের লোক বানিয়ে দিলো!
স্নিগ্ধা গেষ্ট রুমে গেলে নির্ঝর তৃষ্ণার হাত ধরে তার ঘরে নিয়ে যায়।
-- তোমাকে কে বলেছিল দরজা খুলতে? প্রতিদিন আমি নিজে থেকে লক খুলে ভিতরে আসি তাহলে আজ কেনো তুমি খুলতে গেলে।
আমি কিছু বলছি না। মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছি আর নির্ঝরের বলা সব কথা শুনছি। আমাকে চুপ থাকতে দেখে নির্ঝর বিচলিত হয়ে আবার চেঁচাতে শুরু করলেন।
-- আন্সার মি ড্যাম ইট! দরজা কেনো খুলতে গিয়েছিলে? তুমি স্নিগ্ধার সামনে না এলে এতো কিছু হতোই না। তোমাকে সার্ভেন্ট বলে পরিচয় দিতে হতো না আমার।
-- আমি তো আপনার টাকায় কেনা গোলামই। তাহলে মানুষের সামনে সার্ভেন্ট বলাতে আর কি আসে যায়। এমনিতেও এই চুক্তির বিনিময়ে আমি মোটা অংঙ্কের টাকা নিচ্ছি আপনার কাছে থেকে। তাই আপনার ইচ্ছা মতোই আমাকে চলতে হবে।
তৃষ্ণার বলা কথাগুলোয় নির্ঝর নির্বাক হয়ে যায়। তৃষ্ণার কথাগুলোর পিছনে লুকিয়ে থাকা তার কষ্টটা নির্ঝর খুব ভালোই বুঝতে পারছে। কিন্তু এই মুহূর্তে তার কিছুই করার নেই। তৃষ্ণা আর তার বিয়ে আর একসাথে থাকার কথা সে তার পরিবারকে বলতে পারবে না। উপায়ন্তর না দেখেই নির্ঝর তৃষ্ণাকে সার্ভেন্ট বলে পরিচয় দিয়েছে। এখন সবার সামনে সে আর তৃষ্ণা এক ঘরে থাকতে পারবে না। কিন্তু তার মুখ দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বের হচ্ছে না তৃষ্ণাকে বলার জন্য।
কিছুক্ষণ দুজনের মধ্যে এভাবেই নীরবতা বিরাজ করে। একসময় তৃষ্ণা নিজেই সে নীরবতা ভেঙে জামা কাপড় গুছাতে থাকে।
-- কি করছো?
-- আপনার মা বাবা আর হবু স্ত্রীর সামনে তো আর আপনি পর নারীর সাথে একঘরে থাকতে পারবেন না। তাও আবার সে যদি হয় সার্ভেন্ট! তাই নিজের আসল অবস্থানে চলে যাচ্ছি।
-- মানে?
-- ঘাবড়াবেন না। কিচেনে নয়তো চিলেকোঠার ঘরে থাকবো। তিন মাসের আগে এই বাড়ি ছাড়বো না।
নির্ঝর আর কিছু বলতে পারলো না। কেনো যেনো তার মুখ দিয়ে আর কথা বের হচ্ছে না। তৃষ্ণা একে একে তার সব জিনিস গুছিয়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। নির্ঝর আগের
নেশা
পর্ব_০৯
বেখেয়ালি_হিমু
চিলে কোঠার ঘরের এক কোনায় হাটুর ভাজে মুখ গুজে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছি। আমার কষ্ট সহ্য করার সীমা ক্রমেই অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে। আর পারছি না। আর কতো কি সহ্য করবো! সহ্যেরও তো একটা সীমা থাকে! ছোট থেকে তো সহ্যই করে আসছি।
জন্মের পর মা বাবা তাদের পরিচয় দেয় নি, এতিমখানার দরজায় ফেলে দিয়ে চলে গেছে। জীবনের শুরুর দশটা বছর এতিমখানায় একা একা কেটেছে। রূপা আপু আর চাচা আমার মতো এতিমকে তাদের মেয়ে বানিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেও চাচি কখনও আমাকে আপন ভাবতে পারে নি। জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হয়েছে।
অতঃপর ভাগ্যের খেলায় প্রিয়জনকে হারিয়ে হতে হলো নিঃস্ব। প্রিয়জনের ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকার অভিশাপও পালন করে নিয়েছি।
ভাগ্যের নিষ্ঠুর জুয়া খেলায় আবার সবার হাতের পুতুল হয়ে গেলাম। যাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলাম সেই তিতলি এখন আমার থেকে ক্রোশ দূরে। যিনি আমার স্বামী সে সবার সামনে আমাকে সার্ভেন্ট বলে পরিচয় দেয়! অবশ্য তারই বা কি দোষ? বিয়ের শর্তই ছিল তিন মাসের সংসার,, বাসর রাতেই তো নিজের তালাকনামায় সই করে দিয়েছি!
।
।
।
চিলে কোঠার ঘর টা তে জিনিসপত্র আর ধুলা দিয়ে আস্তরণ পরে গেছে। চোখের পানি মুছে আঁচল কোমড়ে গুজে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে নিলাম। নির্ঝরের পরিবারের জন্য রাতে রান্না করলাম।
যেহেতু বাড়ির নতুন সার্ভেন্ট আমি সেহেতু তাদের খাওয়া শেষ করিয়ে সবকিছু ধুয়ে পরিষ্কার করে রাত প্রায় সাড়ে এগারোটার পরে পুনরায় চিলে কোঠার ঘরে গেলাম। চিলে কোঠার ঘরটায় ছোট একটা জানালা আছে। আমার মতোই বিষন্ন রাতের আকাশ দেখার জন্যই হয়তো জানালা টা বানানো।
.
.
.
পুরো আকাশ মেঘে ছেয়ে আছে। ইদানিং মেঘ বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে গেছে। আকাশও আমার সাথে পাল্লা দিয়ে অশ্রু বর্ষণ করে। গুড়গুড় করে মেঘ ডাকছে। মাঝে মাঝে পুরো ধরাকে আলোকিত করে বিদ্যুত চমকাচ্ছে! আলো ছায়ার সেই খেলা আমি চিলে কোঠার মেঝেতে শুয়ে দেখে যাচ্ছি!
হঠাত দরজায় টোকা পরাতে উঠে দরজা খুলে দেখলাম নির্ঝর দাড়িয়ে আছেন।
উনাকে দেখে আমার বুক কেঁপে উঠলো। চোখমুখ লাল হয়ে আছে উনার। কেনো যেনো মনে হচ্ছে উনি এতোক্ষণ কান্না করেছেন। কিন্তু উনি কেনো কান্না করবেন!
.
দরজা খুলে দিয়ে আমি ভিতরে চলে এলাম। উনি পিছন থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলেন। উনার গরম নিশ্বাস আমার গলায় ঘাড়ে পরছে। অন্য কোনো দিন হলে হয়তো আমার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন হতো কিন্তু আজ তার প্রতিটা স্পর্শ আমার শরীরে ধারালো তীরের মতো বিঁধছে। উনি আমার গলায় ঘাড়ে অনবরত চুমু খেয়ে যাচ্ছেন। গলা থেকে উঠে ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়াতে গেলে আমি বাঁধা দেই।
-- দ্য নির্ঝর আহমেদ চৌধুরীর একটা সার্ভেন্টের সাথে এই ধরনের সম্পর্ক লোকে জানলে কি বলবে আপনাকে?
নির্ঝর আমার কথায় তব্দা মেরে দাড়িয়ে আছেন। কিন্তু আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে উনি পুনরায় আমার ঠোঁটে স্পর্শ করতে গেলে আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙে যায়।
নির্ঝর কে একটা ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছে থেকে সরিয়ে দিলাম।
-- শরীর ছাড়া আর কিছুই বোঝেন না দেখছি। যেই শরীর টা প্রতিনিয়ত ভোগ করছেন সেই শরীরেও যে একটা মন আছে সেটা কি জানেন। মানছি আপনার সাথে আমি চুক্তিবদ্ধ। টাকার বিনিময়ে সব করছি কিন্তু আমি কি করবো। আমারও যে ভীষণ কষ্ট হয়। আর সহ্য করতে পারছি না। চুক্তির বিয়ে হলেও আপনার স্ত্রী আমি। কিন্তু সবার সামনে আমার পরিচয় সার্ভেন্ট হিসেবে।
-- লুক তৃষ্ণা, স্নিগ্ধা আমার ফিয়ান্সে। ওর সামনে আমি তোমাকে স্ত্রী বলে পরিচয় দিতে পারতাম না। আর আমার বাড়িতে সার্ভেন্ট ব্যতিত অন্য কেউ থাকেও না।
-- স্নিগ্ধা আপনার হবু স্ত্রী তাহলে আমাকে কেনো বিয়ে করলেন।
নির্ঝর কোনো উত্তর না দিয়ে একপা দু পা করে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। ঘরটা এতোই ছোট যে আমি পিছাতেও পারছি না। নির্ঝর আমার কাঁধ থেকে আঁচল ফেলে দিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলেন। গভীর একটা চুমু দিয়ে কানের কাছে তার মুখটা এনে ফিসফিসিয়ে বললেন,
-- তুমি আমার নেশা তৃষ্ণা। তুমি খারাপ আমি জানি। তবুও আমার তোমাকে চাই।
-- মেরে ফেলুন আমাকে। আর কিছু বাকি নেই জীবনে। যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। এই কষ্ট আর নিতে পারছি না আমি। প্লিজ মেরে ফেলুন আমাকে। মুক্তি চাই আমি।
-- আমি তোমাকে মরতে দেবো না আর শান্তিতে বাঁচতেও দেবো না!!
.
.
.
.
.
.
.
দুচোখের কার্নিশ বেয়ে অজস্র অশ্রু কণা গড়িয়ে পরে যাচ্ছে। শুধুমাত্র রাতের ভালোবাসার পর্বটুকু শেষ করে নির্ঝর ক্লান্ত হয়ে তার সমস্ত ভার আমার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। আমার গলায় মুখ গুজে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছেন। ঘুমের ঘোরেও আমাকে শক্ত করে ধরে রেখেছেন। হয়তো তার মনে হচ্ছে বাহুর বন্ধন একটু আলগা হলেই আমি হারিয়ে যাবো।
"
"
নির্ঝরের প্রতিটি স্পর্শেই ইদানিং ভীষণ ভালো লাগা কাজ করে। এই চুক্তির বিয়ের মায়ায় পরে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। স্বামীর জন্য ভালোবাসা হয়তো প্রতিটা মেয়ের জীবনেই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু আমার যে নিজের স্বামীকে ভালোবাসার অধিকার নেই।
আর মাত্র দুইমাস সময় বাকি আছে। এর পর স্বামী নামক মানুষটাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। উনাকে যদি আমার দুচোখে বন্দী করে আমার সাথে নিয়ে যেতে পারতাম! নাহ আমি সেটা করতে পারি না।
নির্ঝরের জন্য, স্নিগ্ধার জন্য, সবার ভালোর জন্য আমাকে একাই সবার থেকে দূরে যেতে হবে।
.
.
.
.
.
.
.
.
পরদিন সার্ভেন্ট না আসায় সারাদিন তৃষ্ণার একা খাটা খাটুনি করতে হয়। সারাদিনের কাজ শেষে সবাইকে ডিনার করিয়ে দিয়ে খাবার গুছিয়ে রেখে চিলে কোঠার ঘরের দিকে পা বাড়ায় তৃষ্ণা। ঘড়িতে রাত প্রায় বারোটা। কিন্তু এখনও নির্ঝর বাড়ি ফেরে নি। সিড়ির কাছে গিয়েও তৃষ্ণা ড্রয়িং রুমে ফিরে আসে।
.
.
ডান হাতে মদের গ্লাস আর আঙুলের চিপায় জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে একটা বারে বসে আছে নির্ঝর। প্রায় দেড় ঘন্টা যাবত ড্রিংক করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে চোখে ঘোলাটে দেখা শুরু করে দিয়েছে। সে বুঝতে পারছে মদ খাওয়া বেশি হয়ে গেছে আজ। তবুও শেষ বার ভর্তি করা গ্লাস টা খালি না করে উঠার ইচ্ছে করছে না।
নির্ঝরের ঠিক সামনের টেবিলে বেশ সুন্দরী এক রমণী মিনি স্কার্ট পরে বসে ড্রিংক করছে। মেয়েটির পোশাক আশাক আর গায়ের ফ্যাকাশে রং দেখেই বোঝা যায় সে বিদেশি।
মেয়েটি ঢুলু ঢুলু পায়ে নির্ঝরের দিকে এগিয়ে এসে টেবিলে ভর দিয়ে একটু ঝুঁকে দাড়ালো।
-- ওয়ানা ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড? (মেয়েটি)
-- নট ইন্টারেষ্টেড। গো আওয়ে।
-- লুক আই এম সো হট।
-- আই এম নট ইন্টারেষ্টেড.. লিভ মি এলোন।
-- জাষ্ট লুক অ্যাট মি। ইউ উইল ফাইন্ড মি ইন্টারেষ্টিং।
-- মাই ওয়াইফ ইজ মোর হট এন্ড বিউটিফুল দ্যান ইউ। নাউ গেট লষ্ট ফ্রম হিয়ার।
নির্ঝরের কথায় মেয়েটি রেগে আগুন হয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
.
বেশকিছুক্ষণ পুরো ড্রয়িং রুমে পায়চারি করে উনার ফেরার অপেক্ষা করলাম। কিন্তু উনার ফিরে আসার কোনো লক্ষণ না দেখে ড্রয়িং রুমে রাখা ল্যান্ড লাইন ফোন টা হাতে নিলাম উনাকে ফোন করার জন্য। ঠিক তখনই কলিং বেল টা বেজে উঠলো। ফোনের স্পিকারটা নিচে রেখে দরজার কাছে ছুটে গেলাম।
নির্ঝরের বডিগার্ড নির্ঝরকে ধরে রেখেছে। আর উনি মাতাল হয়ে আছেন।
উনার বডিগার্ডকে বিদায় করে দিয়ে উনাকে জরিয়ে ধরে ধীরে ধীরে ঘরে এনে শুইয়ে দিলাম। উনার শরীর থেকে মদের বিশ্রী গন্ধ আসছে। না জানি কতো মদ গিলেছেন।
উনার শার্ট খুলে দিয়ে উঠে আসতে গেলে উনি আমার হাত ধরে হেঁচকা টেনে নিজের বুকের উপর ফেলে দিলেন।
নেশার ঘোরে নির্ঝর বারবার আমার নাম নিচ্ছেন। আচ্ছা উনি কি আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পরছেন? না আমি তো সেটা হতে দিতে পারি না। উনার মনে আমার জন্য শুধু ঘৃণা থাকবে। উনার ভালোবাসার যোগ্য আমি নই, কিছুতেই উনার মনে আমার জন্য ভালোবাসা তৈরি হতে পারে না।
নির্ঝর কে ছেড়ে উঠতে গিয়েও উঠতে পারলাম না। কেনো যেনো আজকে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে উনাকে আমি হারিয়ে ফেলবো। যদিও কিছুদিন পর এটাই সত্যি হবে। তবুও মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।
উনার বুকের উপর মাথা রেখে দুহাতে উনাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলাম।
.
.
.
.
দরজায় কারো জোরে ধাক্কা দেওয়ার শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলতেই নিজেকে নির্ঝরের বুকে পেলাম। বাইরে অনেক বেলা হয়ে গেছে আর আমার চোখই খুলে নি। নিজেকে সামলে উঠে বসলাম। দরজায় ধাক্কার পরিমাণ ক্রমশ বেড়েই চলছে। শাড়ির আঁচল ঠিক করে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।
দরজার বাইরে স্নিগ্ধা চোখ মুখ গরম করে তাকিয়ে আছে।
-- তুমি আমার নির এর ঘরের ভিতরে কি করছো? তাও আবার বন্ধ দরজার আড়ালে নির এর অবচেতন হওয়ার সুযোগ নিচ্ছিলে তাই না!
-- না না ছিঃ! এসব কি বলছেন। আমি তো এই ঘরে!
-- তুমি তো,, এই ঘরে,, কি? বলো? বলো! মুখে তালা মেরেছো নাকি?
-- আসলে আপনি ভুল ভাবছেন।
-- ভুল! আমি একদম ঠিক ভাবছি। আমার তো কালকেই সন্দেহ হয়েছিল তোমাকে এই বাড়িতে দেখে।
-- না,,
-- তোমার মতো লো ক্লাসদের আমি ভালোই জানি। আমার নির কে ফাঁসানোর জন্যই এসব করেছো তাই না!
-- আপনি ভুল ভাবছেন।
-- ওহ জাষ্ট শাট আপ। আই নো ওয়েল। তুমি একটা ক্যারেক্টারলেস মেয়ে। নিজের রূপ দেখিয়ে আমার নির এর টাকা হাতাতে চাও। এতো টাকার লোভ তোমার। তুমি তোমার মোটিভে সাকসেসফুল হতে পারবে না।
-- দেখুন আপনি আমার কথা টা তো শুনুন।
-- কি শুনবো? তুমি আমার নির এর নেশার ঘোরে হওয়ার সুযোগ নিয়ে ওর সাথে এক ঘরে থেকেছো সারা রাত। এখন কিছুদিন পরেই প্রেগন্যান্ট হওয়ার নাটক করে টাকা ডিমান্ড করবে তাই তো।
-- ছিঃ! কি বলছেন এসব?
-- তোমার সব খেলা আমি আজকেই শেষ করে দেবো। বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে।
স্নিগ্ধা আমার হাত ধরে আমাকে টানতে লাগলেন। ঠিক তখনই পিছন থেকে অন্য নেশা
পর্ব_১০
বেখেয়ালি_হিমু
" হাউ ডেয়ার ইউ স্নিগ্ধা? তৃষ্ণাকে এভাবে অপমান করার সাহস তোমাকে কে দিয়েছে?"
তৃষ্ণার হাত ধরে ভিতরের দিকে টেনে নিয়ে নির্ঝর কথাটা বললো।
.
স্নিগ্ধার চেচামেচিতে নির্ঝরের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে স্নিগ্ধার বলা কথাগুলো সে শুনে ফেলে।
-- তুমি জানো না নির এই ছোটলোকটা কতো ডেঞ্জারাস প্ল্যানিং করেছে তোমাকে ফাঁসানোর। (স্নিগ্ধা)
-- মাইন্ড ইউর ওয়ার্ডস্ স্নিগ্ধা। তৃষ্ণাকে ছোটলোক বলার রাইটস্ তোমাকে কে দিয়েছে? (নির্ঝর)
-- নির! তুমি এই কাজের লোকটার জন্য আমার সাথে কড়া গলায় কথা বলছো? আমি তোমার উড বি ওয়াইফ আমার ভ্যালিউ এই লো ক্লাস মেয়েটার থেকে অনেক বেশি।
-- আই টোল্ড ইউ স্নিগ্ধা মাইন্ড ইউর ওয়ার্ডস। নয়তো আমি এমন কিছু বলতে বাধ্য হবো যেটা শুনলে তুমি কষ্ট পাবে।
-- নির তুমি একটা কাজের লোকের জন্য আমার সাথে মিসবিহেভ করছো!
-- জাষ্ট শাট আপ স্নিগ্ধা। তৃষ্ণা কাজের লোক নয়। আর তুমি এভাবে তৃষ্ণাকে অপমান করতে পারো না।
-- তুমি আমাকে এই কথা বলতে পারলে? তোমার কাছে আমার চেয়ে এই কাজের লোকটা বেশি হয়ে গেলো?
-- তোমাকে বারবার ওয়ার্ন করছি যে তৃষ্ণাকে অপমান করো না। তৃষ্ণা কোনো কাজের লোক নয়। হোয়াই ডোন্ট ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড ড্যাম ইট?
-- এই মেয়েটা যদি তোমার বাড়ির সার্ভেন্ট না হয় তাহলে ওর সাথে তোমার কি সম্পর্ক? সারা রাত তোমার ঘরে এই মেয়েটা কি করছিল? কি সম্পর্ক তোমাদের দুজনের? বলো নির চুপ করে আছো কেনো?
-- তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া প্রয়োজনীয় মনে করি না।
-- তোমাকে উত্তর দিতেই হবে। তোমার স্ত্রী আমি।
-- লাইক সিরিয়াসলি স্নিগ্ধা! তোমার আর আমার বিয়ে জাষ্ট ঠিক হয়েছে। এখনও বিয়ে হয় নি। সো বি ইন ইউর লিমিট।
-- তুমি এই থার্ড ক্লাস মেয়েটার জন্য আমাকে অপমান করছো!!
নির্ঝর আর স্নিগ্ধার চেচামেচিতে নয়না বেগম তার ঘর থেকে নির্ঝরের ঘরে ছুটে আসেন।
-- কি হয়েছে স্নিগ্ধা? তুমি কাঁদছো কেনো? (নয়না বেগম)
-- আম্মু,, আজ এই কাজের মেয়েটার জন্য নির আমাকে ইনসাল্ট করলো। আমি নির কে এতো ভালোবাসি আর সেই নির আমার সাথে এমনটা করতে পারলো!
-- নির! এসব কি শুনছি? তুমি স্নিগ্ধার সাথে মিসবিহেভ করেছো! কেনো?
-- আম্মু মিসবিহেভ সবার আগে স্নিগ্ধা শুরু করেছে তৃষ্ণার সাথে। আমি শুধু উত্তর দিয়েছি।
-- তুমি একটা কাজের লোকের জন্য চৌধুরী বাড়ির হবু বউকে অপমান করছো!
-- তৃষ্ণা কাজের লোক নয়।তৃষ্ণা আমার স্ত্রী। তৃষ্ণার সম্পর্কে একটা বাজে কথা আমি মেনে নিতে পারবো না।
.
.
.
.
.
.
নির্ঝরের কথায় সেখানে উপস্থিত সবার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরলো। মুহূর্তেই নীরব একটা ঝড় সেখান দিয়ে বয়ে গেলো।
.
পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে পুরো বাড়িতে। নয়না বেগম আর স্নিগ্ধা বাকরুদ্ধ দৃষ্টিতে নির্ঝর আর আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এমন একটা পরিস্থিতির জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
প্রায় ২০ মিনিট অতিক্রম হয়ে গেছে কিন্তু উনি এখনও আমার বাম হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছেন। মনে হচ্ছে হাত ছেড়ে দিলেই বুঝি আমি হারিয়ে যাবো।
আমার ঠিক সামনে দাড়িয়ে স্নিগ্ধা নিঃশব্দে কান্না করে যাচ্ছে। মুহূর্তেই মেয়েটার দুনিয়া উলোট পালোট হয়ে গেলো। কোথায় সে বিয়ের স্বপ্ন দেখছিল, সংসার জীবন নিয়ে নতুন কল্পনার জগত সাজাচ্ছিল! সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দিলাম আমি। সব কিছুর জন্য আমি দায়ী। আমার দ্বারা কখনও কারো ভালো হয় নি। হয়তো হবেও না।
চলবে..
নেশা
পর্ব_০৮৯
বেখেয়ালি_হিমু
" আপনি আমাকে আটকে রেখে গিয়েছিলেন কেনো? আমি কি মানুষ নাকি জীব-জন্তু? এভাবে আটকে রেখে যেতে হবে কেনো? রাতে অফিস শেষে নির্ঝর বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথে তৃষ্ণা রাগি দৃষ্টিতে কথাটা বললো।
-- তুমি নিজে বোকা নাকি আমাকে বোকা ভাবো বুঝি না!
-- মানে? কি বলতে চাইছেন?
-- তোমার কি মনে হয়? এই বাড়ি থেকে যেখানে একটা পাখি আমার অনুমতি ছাড়া বের হতে পারে না,, সেখানে তুমি তিনদিন একা বের হয়েছো, সেটা আমি জানি না!
উনার শান্ত কন্ঠের ভয়ানক কথায় আমার আত্মার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
-- কি বলতে চাইছেন আপনি? আমি ককোথায় যাই? এএকদিনই পপালিয়ে ছিলাম।
-- লাইক সিরিয়াসলি! এতোটা বোকা মনে হয় তোমার আমাকে? তৃষ্ণা আমি এতোটাও বোকা নই। মানুষ চেনার দক্ষতা আগে ছিল না। কিন্তু এখন আমি ঠিক চিনতে শিখেছি সবাইকে। শপিং এর বাহানায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে দশ লাখ টাকা কাকে দিয়েছো সেটাও জানি। কালকে আমি বাসায় না থাকার সুযোগে বাসা থেকে বেরিয়ে কোথায় গিয়েছিলে সেটাও আমি জানি। অবশ্য এসবে আমার কিছুই আসে যায় না। তোমাকে আমি কিনে নিয়েছি আর এখন তুমি আমার বউ। সো তোমার উপর আমার অধিকার দ্বিগুণ। আমি ভেবেছিলাম অন্তত কাল রাতের পর তুমি নিজেকে একটু হলেও শুধরে নেবে। বাট আই ওয়াজ রং। তুমি আগের মতোই আছো। প্রতারক!
. নির্ঝরের এমন গা জ্বালানো কথা আমার একদম সহ্য হচ্ছে না। এমনিতেই তিতলির টেনশনে আমার মাথা নষ্ট হওয়ার উপক্রম আর উনি উনার ফালতু কথার ঝুলি খুলে বসে আছেন। কিন্তু একটা ভাববার বিষয় আছে। সে যদি জানতো আমি লুকিয়ে কোথায় যাই তাহলে আমাকে বাঁধা কেনো দেন নি।
-- আপনি যদি জানতে তাহলে বাঁধা দেন নি কেনো?
নির্ঝর কিছুক্ষণ বাম হাত দিয়ে তার কপালে স্লাইড করতে থাকে। হয়তো সে যেই কথাটা বলেছে সেটা তার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। হয়তো সে বলতে চায় নি।
-- আমি শুধু জানতে চাচ্ছিলাম তুমি আর কতোটা নিচে নামতে পারো। তন্ময় কে টাকা দেওয়ার জন্য নিজেকে আমার কাছে বিক্রি করেছো। এতোটা ভালোবাসো তন্ময় কে! আর আমি! আমি যে তোমার স্বামী সেই খেয়ালটুকু আছে তোমার? কালকেও তুমি তন্ময়ের বাড়ি গিয়ছিলে। কেনো তৃষ্ণা? উত্তর দাও কেনো?
-- এটা আমার নিতান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনাকে বলতে বাধ্য নই।
-- তৃষ্ণা! তুমি কি একবারের জন্যও আমাকে বুঝো না?
-- ছাড়ুন আমাকে। রাতের জন্য রান্না করতে হবে। বাসায় কোনো সার্ভেন্ট নেই।
নির্ঝর আমার বাহু আঁকড়ে ধরে কিছুক্ষণ আমার স্থির দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। কিন্তু আমি তার চোখে দিকে তাকাতে পারছি না। হয়তো তিতলির ব্যাপার টা উনি জানেন না।
উনার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কিচেনে চলে গেলাম।
. . .১১ পর্বের জন্য নেক্সট কমেন্ট না করে আইডিটা ফলোয়ান বা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়ে রাখলে আমি পোস্ট করার সাথে সাথেই আপনাদের কাছে চলে যাবে . .
খাবার টেবিলে উনার সাথে ভালো মন্দো আর কোনো কথা বলি নি। তবে উনার চোখ মুখ দেখে মনে হয়েছে উনি রেগে আছেন। কিন্তু আমি নিরুপায় উনাকে তিতলির সম্পর্কে কিছুই বলতে পারবো না।
.
ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন হঠাত কেউ পিছন থেকে আমার কোমড় চেপে ধরলো। পুরো বাড়িতে একমাত্র আমি আর নির্ঝর ব্যতিত অন্য কেউ নেই। তাই লোকটা যে নির্ঝর এটা বুঝতে আর বাকি নেই। কিন্তু উনার এভাবে জরিয়ে ধরায় আমার অস্বস্তি হচ্ছে।
উনি উনার থুতুনি আমার ঘাড়ে ঠেকিয়ে দিয়ে শাড়ির নিচ দিয়ে আমার পেটে হাত রাখলেন। ইচ্ছে করছে একটা ধাক্কা দিয়ে উনাকে পিছন দিকে ফেলে দেই। কিন্তু কেনো যেনো ভাবনা কে বাস্তবায়িত করতে পারছি না।
নির্ঝরের গরম নিশ্বাস আমার ঘাড়ে পরছে। না চাইতেও শরীর বারবার কেঁপে উঠছে। উনি উনার দুহাত দিয়ে আমার পেটে স্লাইড করছেন। পরিস্থিতি ক্রমশ আরও বেশি অস্বস্তিকর হয়ে যাচ্ছে। উপায়ন্তর না পেয়ে নির্ঝরের পেটে কুনুই দিয়ে পিছন দিকে ঠেলে ঘরের দিকে ছুট লাগালাম। কিন্তু বেশি দূর আর এগুতে পারলাম না। নির্ঝর আমাকে পিছন থেকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে কোলে তুলে নেন।
-- নির্ঝর কি করছেন? ছাড়ুন আমাকে।
-- কোনো ছাড়া ছাড়ি নেই।
-- এসব একদম ঠিক হবে না বলে দিলাম।
-- কেনো?
-- আপনি আমাকে ছোবেন না।
-- কেনো? (ভ্রুঁ কুচকে তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে)
-- জানি না। নামান আমাকে।
নির্ঝর আমার কথায় বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। ভয়ে বড়সড় একটা ঢোক গিলে আবার উনাকে বললাম আমাকে ছেড়ে দিতে কিন্তু এবারো আমার কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করলেন। নিজের সমস্ত ভার আমার উপর ছেড়ে দিয়ে আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিলেন।
. . . . . . . . . . . . . . . এক মাস কেটে গেছে নির্ঝরের সাথে আমার বিয়ের। এই কয়েকদিনে নির্ঝর আর আমার মধ্যে সম্পর্ক অনেকটা স্বাভাবিক হলেও কোথাও না কোথাও নির্ঝরের আমার প্রতি ঘৃণার রেশ রয়েই গেছে।
যেই উদ্দেশ্যে আমাকে বিয়ে করেছিলেন উনি, প্রতি রাতে উনার শয্যা সঙ্গী হয়ে সেই উদ্দেশ্য আমি পূরণ করে চলেছি। কোনোমতে দিন কেটে যাচ্ছে আমার। কিন্তু জীবন থমকে গেছে। এতোদিনে তিতলির সাথে একবারের জন্যও দেখা বা কথা হয় নি। নির্ঝরের দৃষ্টি এড়িয়ে তিনদিন তন্ময় আর তিতলির খোঁজে বেরিয়েছি। কিন্তু প্রতিবারই হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে আমাকে। না জানি তিতলির সাথে কি করেছে ওই পশু টা। কেমন আছে তিতলি কোথায় আছে!
. . .
পড়ন্ত বিকেলের হালকা তির্যক রোদ, সেই সাথে হিমশীতল বাতাস।সব মিলিয়ে মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
ছাদের কার্নিশ ঘেসে হাতে এক মগ নিয়ে দাড়িয়ে আছি। গোধূলী লগ্নটা উপভোগ করতে করতে পুরোনো সব স্মৃতির মাঝে বিচরণ করছিলাম। নির্ঝর এখনও অফিস থেকে ফিরেন নি। এখন অবশ্য ফিরবেনও না। তার ফিরতে সন্ধ্যা পার হবে। কোনো সার্ভেন্টস্ নেই বাসায়। সার্ভেন্টসদের নির্ঝর সকালেই বিদায় করে দেন। রাতে আমাদের দুজনের জন্য রান্না টা আমাকেই করতে হয়।
জীবন কখন কোন দিকে বাঁক নেয় সেটা কেউ বলতে পারে না। একদিক দিয়ে আমার ভাগ্যে সুখ দিচ্ছে তো অন্যদিক দিয়ে আমার সবচেয়ে বড় সুখ কেড়ে নিচ্ছে। ভাগ্যের খেলা টা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না।
. কফি শেষ হতে না হতেই নিচে দরজায় কলিং বেল বাজা শুরু করলো। সচরাচর নির্ঝর এতো তাড়াতাড়ি আসেন না। আর উনি ব্যতিত এই বাড়িতে আর কেউ আসে না।
কফি মগটা কিচেনে রেখে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। দরজা খুলে আমি যতোটা না অবাক হলাম তার চেয়েও সামনে থাকা মানুষগুলো বেশি অবাক হলো। খুবই সুন্দর একটা মেয়ে নীল চুড়িদারে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। তার সাথে মধ্য বয়ষ্ক একজোড়া দম্পতি। তাদের পোশাক পরিচ্ছেদ বলে দিচ্ছে তারা ভিআইপি কেউ হবেন। এই এক মাসে প্রথম আমি ভিন্ন কোনো প্রাণীর মুখ দেখলাম এ বাড়িতে।
সামনে থাকা সুন্দরী মেয়েটি আমার দিকে ভ্রুঁ কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমাকে ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেলো। তার সাথে থাকা মানুষগুলোও বাড়ির ভিতরে ঢুকে পরলো। তাদের সবার সাথেই এক গাদা করে লাগেজ। তাদের ড্রাইভার এসে সেসব লাগেজ ড্রয়িং রুমে রেখে চলে গেলো।
. . মেয়েটা আমাকে আপাদমস্তক দেখে বলতে শুরু করলো, -- নির কোথায়?
-- উনি তো অফিসে।
-- হুম। কিন্তু তুমি কে? আর নির এর বাড়িতে কি করছো?
-- আমি,,, আমি!
" ও এ বাড়ির নিউ সার্ভেন্ট স্নিগ্ধা।" -- বাড়ির সদর দরজায় দাড়িয়ে নির্ঝর স্বজোরে কথাটা বললো।
-- নির তুমি নিউ সার্ভেন্ট হায়ার করেছো আর আমাকে একবার জানাও নি! এই এক মাসেই আমাকে পর করে দিয়েছো তাই না! তোমার সাথে আর কথা বলবো না।
-- স্নিগ্ধা ডোন্ট এক্ট চাইল্ডিশ। তোমরা হঠাত করে এখানে কিভাবে এলে!
" কেনো নির তোমার বাড়িতে কি আমরা আসতে পারি না!" -- স্নিগ্ধার সাথে থাকা মহিলা টি নির্ঝেরের উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা ছুড়লো।
-- আমি সেটা তো বলি নি আম্মু। আমার বাড়ি মানেই তো তোমাদের বাড়ি। হাও আর ইউ গাইজ?
স্নিগ্ধার সাথে আসা বয়স্ক দম্পতি হলো নির্ঝরের বাবা মা, রাজীব চৌধুরী আর নয়না চৌধুরী।
-- আমরা ঠিক আছি নির। কিন্তু তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে না তুমি ঠিক আছো। (নয়না বেগম)
-- আইম ফাইন অলসো। আম্মু তোমরা দুতলার ঘরে গিয়ে রেষ্ট নাও। লাগেজ আমি পৌঁছে দিচ্ছি।
নয়না বেগম আর রাজীব সাহেব দুতলার ঘরে যাওয়ার জন্য সিড়ি বেয়ে উঠা ধরলে স্নিগ্ধা নির্ঝর কে চেপে ধরে গালে চুমু বসিয়ে দেয়। তৃষ্ণা সেখানেই উপস্থিত ছিল। নির্ঝরকে স্নিগ্ধার চুমু দেওয়ার দৃশ্য সে স্পষ্ট দেখতে পেয়েও মাথা নিচু করে থাকে। এই মাত্র নির্ঝর তাকে সবার সামনে কাজের লোক বলে পরিচয় দিয়েছে। ভাবতেই তৃষ্ণার বুকটা মুচড়ে উঠছে। শেষ পর্যন্ত তার স্বামী তাকে তার বাবা মার সামনে কাজের লোক বানিয়ে দিলো!
স্নিগ্ধা গেষ্ট রুমে গেলে নির্ঝর তৃষ্ণার হাত ধরে তার ঘরে নিয়ে যায়।
-- তোমাকে কে বলেছিল দরজা খুলতে? প্রতিদিন আমি নিজে থেকে লক খুলে ভিতরে আসি তাহলে আজ কেনো তুমি খুলতে গেলে।
আমি কিছু বলছি না। মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছি আর নির্ঝরের বলা সব কথা শুনছি। আমাকে চুপ থাকতে দেখে নির্ঝর বিচলিত হয়ে আবার চেঁচাতে শুরু করলেন।
-- আন্সার মি ড্যাম ইট! দরজা কেনো খুলতে গিয়েছিলে? তুমি স্নিগ্ধার সামনে না এলে এতো কিছু হতোই না। তোমাকে সার্ভেন্ট বলে পরিচয় দিতে হতো না আমার।
-- আমি তো আপনার টাকায় কেনা গোলামই। তাহলে মানুষের সামনে সার্ভেন্ট বলাতে আর কি আসে যায়। এমনিতেও এই চুক্তির বিনিময়ে আমি মোটা অংঙ্কের টাকা নিচ্ছি আপনার কাছে থেকে। তাই আপনার ইচ্ছা মতোই আমাকে চলতে হবে।
তৃষ্ণার বলা কথাগুলোয় নির্ঝর নির্বাক হয়ে যায়। তৃষ্ণার কথাগুলোর পিছনে লুকিয়ে থাকা তার কষ্টটা নির্ঝর খুব ভালোই বুঝতে পারছে। কিন্তু এই মুহূর্তে তার কিছুই করার নেই। তৃষ্ণা আর তার বিয়ে আর একসাথে থাকার কথা সে তার পরিবারকে বলতে পারবে না। উপায়ন্তর না দেখেই নির্ঝর তৃষ্ণাকে সার্ভেন্ট বলে পরিচয় দিয়েছে। এখন সবার সামনে সে আর তৃষ্ণা এক ঘরে থাকতে পারবে না। কিন্তু তার মুখ দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বের হচ্ছে না তৃষ্ণাকে বলার জন্য।
কিছুক্ষণ দুজনের মধ্যে এভাবেই নীরবতা বিরাজ করে। একসময় তৃষ্ণা নিজেই সে নীরবতা ভেঙে জামা কাপড় গুছাতে থাকে।
-- কি করছো?
-- আপনার মা বাবা আর হবু স্ত্রীর সামনে তো আর আপনি পর নারীর সাথে একঘরে থাকতে পারবেন না। তাও আবার সে যদি হয় সার্ভেন্ট! তাই নিজের আসল অবস্থানে চলে যাচ্ছি।
-- মানে?
-- ঘাবড়াবেন না। কিচেনে নয়তো চিলেকোঠার ঘরে থাকবো। তিন মাসের আগে এই বাড়ি ছাড়বো না।
নির্ঝর আর কিছু বলতে পারলো না। কেনো যেনো তার মুখ দিয়ে আর কথা বের হচ্ছে না। তৃষ্ণা একে একে তার সব জিনিস গুছিয়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। নির্ঝর আগের নেশা
পর্ব_০৯
বেখেয়ালি_হিমু
চিলে কোঠার ঘরের এক কোনায় হাটুর ভাজে মুখ গুজে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছি। আমার কষ্ট সহ্য করার সীমা ক্রমেই অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে। আর পারছি না। আর কতো কি সহ্য করবো! সহ্যেরও তো একটা সীমা থাকে! ছোট থেকে তো সহ্যই করে আসছি।
জন্মের পর মা বাবা তাদের পরিচয় দেয় নি, এতিমখানার দরজায় ফেলে দিয়ে চলে গেছে। জীবনের শুরুর দশটা বছর এতিমখানায় একা একা কেটেছে। রূপা আপু আর চাচা আমার মতো এতিমকে তাদের মেয়ে বানিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেও চাচি কখনও আমাকে আপন ভাবতে পারে নি। জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হয়েছে।
অতঃপর ভাগ্যের খেলায় প্রিয়জনকে হারিয়ে হতে হলো নিঃস্ব। প্রিয়জনের ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকার অভিশাপও পালন করে নিয়েছি।
ভাগ্যের নিষ্ঠুর জুয়া খেলায় আবার সবার হাতের পুতুল হয়ে গেলাম। যাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলাম সেই তিতলি এখন আমার থেকে ক্রোশ দূরে। যিনি আমার স্বামী সে সবার সামনে আমাকে সার্ভেন্ট বলে পরিচয় দেয়! অবশ্য তারই বা কি দোষ? বিয়ের শর্তই ছিল তিন মাসের সংসার,, বাসর রাতেই তো নিজের তালাকনামায় সই করে দিয়েছি! । । ।
চিলে কোঠার ঘর টা তে জিনিসপত্র আর ধুলা দিয়ে আস্তরণ পরে গেছে। চোখের পানি মুছে আঁচল কোমড়ে গুজে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে নিলাম। নির্ঝরের পরিবারের জন্য রাতে রান্না করলাম।
যেহেতু বাড়ির নতুন সার্ভেন্ট আমি সেহেতু তাদের খাওয়া শেষ করিয়ে সবকিছু ধুয়ে পরিষ্কার করে রাত প্রায় সাড়ে এগারোটার পরে পুনরায় চিলে কোঠার ঘরে গেলাম। চিলে কোঠার ঘরটায় ছোট একটা জানালা আছে। আমার মতোই বিষন্ন রাতের আকাশ দেখার জন্যই হয়তো জানালা টা বানানো।
. . .
পুরো আকাশ মেঘে ছেয়ে আছে। ইদানিং মেঘ বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে গেছে। আকাশও আমার সাথে পাল্লা দিয়ে অশ্রু বর্ষণ করে। গুড়গুড় করে মেঘ ডাকছে। মাঝে মাঝে পুরো ধরাকে আলোকিত করে বিদ্যুত চমকাচ্ছে! আলো ছায়ার সেই খেলা আমি চিলে কোঠার মেঝেতে শুয়ে দেখে যাচ্ছি!
হঠাত দরজায় টোকা পরাতে উঠে দরজা খুলে দেখলাম নির্ঝর দাড়িয়ে আছেন।
উনাকে দেখে আমার বুক কেঁপে উঠলো। চোখমুখ লাল হয়ে আছে উনার। কেনো যেনো মনে হচ্ছে উনি এতোক্ষণ কান্না করেছেন। কিন্তু উনি কেনো কান্না করবেন!
. দরজা খুলে দিয়ে আমি ভিতরে চলে এলাম। উনি পিছন থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলেন। উনার গরম নিশ্বাস আমার গলায় ঘাড়ে পরছে। অন্য কোনো দিন হলে হয়তো আমার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন হতো কিন্তু আজ তার প্রতিটা স্পর্শ আমার শরীরে ধারালো তীরের মতো বিঁধছে। উনি আমার গলায় ঘাড়ে অনবরত চুমু খেয়ে যাচ্ছেন। গলা থেকে উঠে ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়াতে গেলে আমি বাঁধা দেই।
-- দ্য নির্ঝর আহমেদ চৌধুরীর একটা সার্ভেন্টের সাথে এই ধরনের সম্পর্ক লোকে জানলে কি বলবে আপনাকে?
নির্ঝর আমার কথায় তব্দা মেরে দাড়িয়ে আছেন। কিন্তু আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে উনি পুনরায় আমার ঠোঁটে স্পর্শ করতে গেলে আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙে যায়।
নির্ঝর কে একটা ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছে থেকে সরিয়ে দিলাম।
-- শরীর ছাড়া আর কিছুই বোঝেন না দেখছি। যেই শরীর টা প্রতিনিয়ত ভোগ করছেন সেই শরীরেও যে একটা মন আছে সেটা কি জানেন। মানছি আপনার সাথে আমি চুক্তিবদ্ধ। টাকার বিনিময়ে সব করছি কিন্তু আমি কি করবো। আমারও যে ভীষণ কষ্ট হয়। আর সহ্য করতে পারছি না। চুক্তির বিয়ে হলেও আপনার স্ত্রী আমি। কিন্তু সবার সামনে আমার পরিচয় সার্ভেন্ট হিসেবে।
-- লুক তৃষ্ণা, স্নিগ্ধা আমার ফিয়ান্সে। ওর সামনে আমি তোমাকে স্ত্রী বলে পরিচয় দিতে পারতাম না। আর আমার বাড়িতে সার্ভেন্ট ব্যতিত অন্য কেউ থাকেও না।
-- স্নিগ্ধা আপনার হবু স্ত্রী তাহলে আমাকে কেনো বিয়ে করলেন।
নির্ঝর কোনো উত্তর না দিয়ে একপা দু পা করে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। ঘরটা এতোই ছোট যে আমি পিছাতেও পারছি না। নির্ঝর আমার কাঁধ থেকে আঁচল ফেলে দিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলেন। গভীর একটা চুমু দিয়ে কানের কাছে তার মুখটা এনে ফিসফিসিয়ে বললেন,
-- তুমি আমার নেশা তৃষ্ণা। তুমি খারাপ আমি জানি। তবুও আমার তোমাকে চাই।
-- মেরে ফেলুন আমাকে। আর কিছু বাকি নেই জীবনে। যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। এই কষ্ট আর নিতে পারছি না আমি। প্লিজ মেরে ফেলুন আমাকে। মুক্তি চাই আমি।
-- আমি তোমাকে মরতে দেবো না আর শান্তিতে বাঁচতেও দেবো না!!
. . . . . . . দুচোখের কার্নিশ বেয়ে অজস্র অশ্রু কণা গড়িয়ে পরে যাচ্ছে। শুধুমাত্র রাতের ভালোবাসার পর্বটুকু শেষ করে নির্ঝর ক্লান্ত হয়ে তার সমস্ত ভার আমার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। আমার গলায় মুখ গুজে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছেন। ঘুমের ঘোরেও আমাকে শক্ত করে ধরে রেখেছেন। হয়তো তার মনে হচ্ছে বাহুর বন্ধন একটু আলগা হলেই আমি হারিয়ে যাবো।
" " নির্ঝরের প্রতিটি স্পর্শেই ইদানিং ভীষণ ভালো লাগা কাজ করে। এই চুক্তির বিয়ের মায়ায় পরে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। স্বামীর জন্য ভালোবাসা হয়তো প্রতিটা মেয়ের জীবনেই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু আমার যে নিজের স্বামীকে ভালোবাসার অধিকার নেই।
আর মাত্র দুইমাস সময় বাকি আছে। এর পর স্বামী নামক মানুষটাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। উনাকে যদি আমার দুচোখে বন্দী করে আমার সাথে নিয়ে যেতে পারতাম! নাহ আমি সেটা করতে পারি না।
নির্ঝরের জন্য, স্নিগ্ধার জন্য, সবার ভালোর জন্য আমাকে একাই সবার থেকে দূরে যেতে হবে।
. . . . . . . .
পরদিন সার্ভেন্ট না আসায় সারাদিন তৃষ্ণার একা খাটা খাটুনি করতে হয়। সারাদিনের কাজ শেষে সবাইকে ডিনার করিয়ে দিয়ে খাবার গুছিয়ে রেখে চিলে কোঠার ঘরের দিকে পা বাড়ায় তৃষ্ণা। ঘড়িতে রাত প্রায় বারোটা। কিন্তু এখনও নির্ঝর বাড়ি ফেরে নি। সিড়ির কাছে গিয়েও তৃষ্ণা ড্রয়িং রুমে ফিরে আসে।
. . ডান হাতে মদের গ্লাস আর আঙুলের চিপায় জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে একটা বারে বসে আছে নির্ঝর। প্রায় দেড় ঘন্টা যাবত ড্রিংক করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে চোখে ঘোলাটে দেখা শুরু করে দিয়েছে। সে বুঝতে পারছে মদ খাওয়া বেশি হয়ে গেছে আজ। তবুও শেষ বার ভর্তি করা গ্লাস টা খালি না করে উঠার ইচ্ছে করছে না।
নির্ঝরের ঠিক সামনের টেবিলে বেশ সুন্দরী এক রমণী মিনি স্কার্ট পরে বসে ড্রিংক করছে। মেয়েটির পোশাক আশাক আর গায়ের ফ্যাকাশে রং দেখেই বোঝা যায় সে বিদেশি।
মেয়েটি ঢুলু ঢুলু পায়ে নির্ঝরের দিকে এগিয়ে এসে টেবিলে ভর দিয়ে একটু ঝুঁকে দাড়ালো।
-- ওয়ানা ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড? (মেয়েটি)
-- নট ইন্টারেষ্টেড। গো আওয়ে।
-- লুক আই এম সো হট।
-- আই এম নট ইন্টারেষ্টেড.. লিভ মি এলোন।
-- জাষ্ট লুক অ্যাট মি। ইউ উইল ফাইন্ড মি ইন্টারেষ্টিং।
-- মাই ওয়াইফ ইজ মোর হট এন্ড বিউটিফুল দ্যান ইউ। নাউ গেট লষ্ট ফ্রম হিয়ার।
নির্ঝরের কথায় মেয়েটি রেগে আগুন হয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
. বেশকিছুক্ষণ পুরো ড্রয়িং রুমে পায়চারি করে উনার ফেরার অপেক্ষা করলাম। কিন্তু উনার ফিরে আসার কোনো লক্ষণ না দেখে ড্রয়িং রুমে রাখা ল্যান্ড লাইন ফোন টা হাতে নিলাম উনাকে ফোন করার জন্য। ঠিক তখনই কলিং বেল টা বেজে উঠলো। ফোনের স্পিকারটা নিচে রেখে দরজার কাছে ছুটে গেলাম।
নির্ঝরের বডিগার্ড নির্ঝরকে ধরে রেখেছে। আর উনি মাতাল হয়ে আছেন।
উনার বডিগার্ডকে বিদায় করে দিয়ে উনাকে জরিয়ে ধরে ধীরে ধীরে ঘরে এনে শুইয়ে দিলাম। উনার শরীর থেকে মদের বিশ্রী গন্ধ আসছে। না জানি কতো মদ গিলেছেন।
উনার শার্ট খুলে দিয়ে উঠে আসতে গেলে উনি আমার হাত ধরে হেঁচকা টেনে নিজের বুকের উপর ফেলে দিলেন।
নেশার ঘোরে নির্ঝর বারবার আমার নাম নিচ্ছেন। আচ্ছা উনি কি আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পরছেন? না আমি তো সেটা হতে দিতে পারি না। উনার মনে আমার জন্য শুধু ঘৃণা থাকবে। উনার ভালোবাসার যোগ্য আমি নই, কিছুতেই উনার মনে আমার জন্য ভালোবাসা তৈরি হতে পারে না।
নির্ঝর কে ছেড়ে উঠতে গিয়েও উঠতে পারলাম না। কেনো যেনো আজকে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে উনাকে আমি হারিয়ে ফেলবো। যদিও কিছুদিন পর এটাই সত্যি হবে। তবুও মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।
উনার বুকের উপর মাথা রেখে দুহাতে উনাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলাম।
. . . .
দরজায় কারো জোরে ধাক্কা দেওয়ার শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলতেই নিজেকে নির্ঝরের বুকে পেলাম। বাইরে অনেক বেলা হয়ে গেছে আর আমার চোখই খুলে নি। নিজেকে সামলে উঠে বসলাম। দরজায় ধাক্কার পরিমাণ ক্রমশ বেড়েই চলছে। শাড়ির আঁচল ঠিক করে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।
দরজার বাইরে স্নিগ্ধা চোখ মুখ গরম করে তাকিয়ে আছে।
-- তুমি আমার নির এর ঘরের ভিতরে কি করছো? তাও আবার বন্ধ দরজার আড়ালে নির এর অবচেতন হওয়ার সুযোগ নিচ্ছিলে তাই না!
-- না না ছিঃ! এসব কি বলছেন। আমি তো এই ঘরে!
-- তুমি তো,, এই ঘরে,, কি? বলো? বলো! মুখে তালা মেরেছো নাকি?
-- আসলে আপনি ভুল ভাবছেন।
-- ভুল! আমি একদম ঠিক ভাবছি। আমার তো কালকেই সন্দেহ হয়েছিল তোমাকে এই বাড়িতে দেখে।
-- না,,
-- তোমার মতো লো ক্লাসদের আমি ভালোই জানি। আমার নির কে ফাঁসানোর জন্যই এসব করেছো তাই না!
-- আপনি ভুল ভাবছেন।
-- ওহ জাষ্ট শাট আপ। আই নো ওয়েল। তুমি একটা ক্যারেক্টারলেস মেয়ে। নিজের রূপ দেখিয়ে আমার নির এর টাকা হাতাতে চাও। এতো টাকার লোভ তোমার। তুমি তোমার মোটিভে সাকসেসফুল হতে পারবে না।
-- দেখুন আপনি আমার কথা টা তো শুনুন।
-- কি শুনবো? তুমি আমার নির এর নেশার ঘোরে হওয়ার সুযোগ নিয়ে ওর সাথে এক ঘরে থেকেছো সারা রাত। এখন কিছুদিন পরেই প্রেগন্যান্ট হওয়ার নাটক করে টাকা ডিমান্ড করবে তাই তো।
-- ছিঃ! কি বলছেন এসব?
-- তোমার সব খেলা আমি আজকেই শেষ করে দেবো। বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে।
স্নিগ্ধা আমার হাত ধরে আমাকে টানতে লাগলেন। ঠিক তখনই পিছন থেকে অন্য নেশা
পর্ব_১০
বেখেয়ালি_হিমু
" হাউ ডেয়ার ইউ স্নিগ্ধা? তৃষ্ণাকে এভাবে অপমান করার সাহস তোমাকে কে দিয়েছে?" তৃষ্ণার হাত ধরে ভিতরের দিকে টেনে নিয়ে নির্ঝর কথাটা বললো।
.
স্নিগ্ধার চেচামেচিতে নির্ঝরের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে স্নিগ্ধার বলা কথাগুলো সে শুনে ফেলে।
-- তুমি জানো না নির এই ছোটলোকটা কতো ডেঞ্জারাস প্ল্যানিং করেছে তোমাকে ফাঁসানোর। (স্নিগ্ধা)
-- মাইন্ড ইউর ওয়ার্ডস্ স্নিগ্ধা। তৃষ্ণাকে ছোটলোক বলার রাইটস্ তোমাকে কে দিয়েছে? (নির্ঝর)
-- নির! তুমি এই কাজের লোকটার জন্য আমার সাথে কড়া গলায় কথা বলছো? আমি তোমার উড বি ওয়াইফ আমার ভ্যালিউ এই লো ক্লাস মেয়েটার থেকে অনেক বেশি।
-- আই টোল্ড ইউ স্নিগ্ধা মাইন্ড ইউর ওয়ার্ডস। নয়তো আমি এমন কিছু বলতে বাধ্য হবো যেটা শুনলে তুমি কষ্ট পাবে।
-- নির তুমি একটা কাজের লোকের জন্য আমার সাথে মিসবিহেভ করছো!
-- জাষ্ট শাট আপ স্নিগ্ধা। তৃষ্ণা কাজের লোক নয়। আর তুমি এভাবে তৃষ্ণাকে অপমান করতে পারো না।
-- তুমি আমাকে এই কথা বলতে পারলে? তোমার কাছে আমার চেয়ে এই কাজের লোকটা বেশি হয়ে গেলো?
-- তোমাকে বারবার ওয়ার্ন করছি যে তৃষ্ণাকে অপমান করো না। তৃষ্ণা কোনো কাজের লোক নয়। হোয়াই ডোন্ট ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড ড্যাম ইট?
-- এই মেয়েটা যদি তোমার বাড়ির সার্ভেন্ট না হয় তাহলে ওর সাথে তোমার কি সম্পর্ক? সারা রাত তোমার ঘরে এই মেয়েটা কি করছিল? কি সম্পর্ক তোমাদের দুজনের? বলো নির চুপ করে আছো কেনো?
-- তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া প্রয়োজনীয় মনে করি না।
-- তোমাকে উত্তর দিতেই হবে। তোমার স্ত্রী আমি।
-- লাইক সিরিয়াসলি স্নিগ্ধা! তোমার আর আমার বিয়ে জাষ্ট ঠিক হয়েছে। এখনও বিয়ে হয় নি। সো বি ইন ইউর লিমিট।
-- তুমি এই থার্ড ক্লাস মেয়েটার জন্য আমাকে অপমান করছো!!
নির্ঝর আর স্নিগ্ধার চেচামেচিতে নয়না বেগম তার ঘর থেকে নির্ঝরের ঘরে ছুটে আসেন।
-- কি হয়েছে স্নিগ্ধা? তুমি কাঁদছো কেনো? (নয়না বেগম)
-- আম্মু,, আজ এই কাজের মেয়েটার জন্য নির আমাকে ইনসাল্ট করলো। আমি নির কে এতো ভালোবাসি আর সেই নির আমার সাথে এমনটা করতে পারলো!
-- নির! এসব কি শুনছি? তুমি স্নিগ্ধার সাথে মিসবিহেভ করেছো! কেনো?
-- আম্মু মিসবিহেভ সবার আগে স্নিগ্ধা শুরু করেছে তৃষ্ণার সাথে। আমি শুধু উত্তর দিয়েছি।
-- তুমি একটা কাজের লোকের জন্য চৌধুরী বাড়ির হবু বউকে অপমান করছো!
-- তৃষ্ণা কাজের লোক নয়।তৃষ্ণা আমার স্ত্রী। তৃষ্ণার সম্পর্কে একটা বাজে কথা আমি মেনে নিতে পারবো না।
. . . . . .
নির্ঝরের কথায় সেখানে উপস্থিত সবার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরলো। মুহূর্তেই নীরব একটা ঝড় সেখান দিয়ে বয়ে গেলো।
. পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে পুরো বাড়িতে। নয়না বেগম আর স্নিগ্ধা বাকরুদ্ধ দৃষ্টিতে নির্ঝর আর আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এমন একটা পরিস্থিতির জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
প্রায় ২০ মিনিট অতিক্রম হয়ে গেছে কিন্তু উনি এখনও আমার বাম হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছেন। মনে হচ্ছে হাত ছেড়ে দিলেই বুঝি আমি হারিয়ে যাবো।
আমার ঠিক সামনে দাড়িয়ে স্নিগ্ধা নিঃশব্দে কান্না করে যাচ্ছে। মুহূর্তেই মেয়েটার দুনিয়া উলোট পালোট হয়ে গেলো। কোথায় সে বিয়ের স্বপ্ন দেখছিল, সংসার জীবন নিয়ে নতুন কল্পনার জগত সাজাচ্ছিল! সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দিলাম আমি। সব কিছুর জন্য আমি দায়ী। আমার দ্বারা কখনও কারো ভালো হয় নি। হয়তো হবেও না।
চলবে..