❤একটি বৃষ্টিভেজা রাত❤ শেষ পর্ব

নীলাম্বরী'র ঠোটের স্পর্শে নিজেকে অন্য এক জগতে আবিষ্কার করলাম।এখনো সেই ঘোরের মধ্যেই আছি।ও দ্রুত তাগাদা দিচ্ছিলো চলে যাবার জন্য।অন্ধকার থাকতেই সে চলে যেতে চায়। এখনো ভোরের আলো ফোটেনি।চারিদিকে আবছা অন্ধকার।আমি ওকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।দুজনে পাশাপাশি হাটতে হাটতে চলে আসলাম আমাদের এখানকার মোড় অব্দি।আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না,নীলাম্বরী আমার ঠোট স্পর্শ করেছে।কি যে অদ্ভুত আকর্ষণ সেই ঠোটের! উফ ভাবতে পারছি না।কেমন যেন পাগল পাগল লাগছে। মোড়ে এসে একটা রিকসা পেয়ে গেলাম।বাস স্ট্যান্ড অব্দি রিকসায় যেতে হবে।নীলাম্বরী কে নিয়ে রিকসায় উঠে পড়লাম।যতক্ষণ রিকসায় বসে ছিলাম,ও আমার হাত শক্ত করে ধরে রইলো।আমিও।ওর হাতটাকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বসে রইলাম।ধীরেধীরে সকালের আলো ফুটতে শুরু করেছে।ভোরের অন্ধকার কেটে সকাল হয়ে যাচ্ছে।নীলাম্বরী বারবার তাকাচ্ছে আমার দিকে।ও চোখে কত মায়া! আর হারানোর ভয় টাও দেখতে পাচ্ছি।আমি ওকে বারবার সান্ত্বনা দিয়ে বুঝাচ্ছি,পাশে আছি আর থাকবো ও। নীলাম্বরী বললো,আমাকে ছেড়ে যাও যদি?

  • কোথায় যাবো শুনি? পৃথিবীর বাইরে তো আর যেতে পারবো না।
  • এ কথা বলিও না।তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেনা।
  • হ্যা যাবো না।যাওয়ার মত অবস্থাটা আর নেই।তোমার ঠোটের পরশ পাওয়ার পরও কি আর ছেড়ে যাওয়ার শক্তি থাকে? সবই তো তোমার হাতে দিয়ে দিয়েছি।
  • এই আস্তে বলো।রিক্সা ওয়ালা শুনতে পেলে কি ভাব্বে?
  • হা হা হা। আমি শব্দ করে হাসলাম।নীলাম্বর ী তাকিয়ে থেকে দেখলো।রিক্সা থেকে নেমে ওকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট এ ঢুকলাম।ইতিমধ্যেই সকাল হয়ে গেছে।দুজনে দুটো করে পরোটা খেয়ে নিলাম।আর কিছু পাওয়া গেলো না।খাওয়ার সময় ও নীলাম্বরী চেয়ে রইলো আমার দিকে।খাওয়া শেষ হবার পর ওকে নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে আসলাম।টিকেট কেটে বাসে তুলে দিলাম।বাস ছাড়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত ও আমার হাত শক্ত করে ধরে রইলো। বাস ছেড়ে দেয়ার পর অনেক্ষণ জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইলো ও।আমি হাত নেড়ে বিদায় জানালাম।যতদূর দেখা গেলো তাকিয়েই রইলাম।বুকের ভিতর টা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।অস্থিরতা অনুভব করছি।হঠাৎ এসে আমার ভিতরে ভালোবাসার রঙ লাগিয়ে আবার হঠাৎ মিলিয়ে গেলো! আবার কবে যে দেখা হবে! . ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরে আসলাম।গোসল সেরে রেডি হয়ে নিলাম বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য।নীলাম্বরী কতদূর পৌছেছে কে জানে! ভাবামাত্রই একটা জিনিস মনে পড়ে গেলো।নীলাম্বরী'র তো মোবাইল ছিলোনা।ও খালি হাতে এসেছিল।সবকিছু ঝড়েই ফেলে এসেছিল।কিন্তু আমার নাম্বার টাও তো ওকে দেয়া হয়নি।ও কতদূর গেলো, কোথায় আছে জানবো কিভাবে? আর এরপর আমাদের যোগাযোগ হবে কিভাবে? এটা কি করলাম আমি! একবার ও ওকে ফোন নাম্বার দেয়ার কথা মনে পড়েনি।রাতের মোহময় আবেশে জড়িয়ে ছিলাম দুজনে।তাই এটার কথা মনেও ছিলোনা।এবার কি হবে? খুব কষ্ট হতে লাগলো আমার।নীলাম্বরী আবার যেন ফিরে আসে।সারাদিন বসে রইলাম ঘরে।কিন্তু নীলাম্বরী আর আসলো না।ওর বাসার ঠিকানা আমি নেইনি।জানিনা কোথায় থাকে? কিন্তু নিজে তো দেখেছে আমার বাসা।তবুও একবার আসবে না? কেন এলোনা ও? এভাবে পরপর দুদিন কেটে গেলো।আমি বিয়ে বাড়িতে যাইনি।সারাদিন বাসাতেই বসে রইলাম। নীলাম্বরী এলোনা।হঠাৎ মায়া বাড়িয়ে হারিয়ে গেলো কেন! প্রচুর কষ্ট হতে লাগলো আমার।দিনরাত না খেয়ে বিছানায় পড়ে রইলাম। নীলাম্বরী এলোনা।একি দহন শুরু হয়েছে আমার হৃদয়ে! ওর কোনো ঠিকানা কিংবা নাম্বার কেন নিলাম না আমি? কেন! নিজের উপর নিজেই রাগে ক্ষোভে পাগলের মত হয়ে গেলাম।ফেসবুকে ঢুকে নীলাম্বরী নামে সার্চ দিয়ে সবগুলো আইডি তন্নতন্ন করে খুঁজলাম।কোনোটাতেই ওর ছবি দেয়া নেই।শুধু এবাউট পড়েও চেনার উপায় নেই কোনটা নীলাম্বরী! ওর কলেজের নাম এমনকি এলাকার নাম টাও শোনা হয়নি! হায় ভাগ্য আমার।হঠাৎ প্রেম এনে দিয়ে আবার ছিনিয়ে নিলে! মাত্র একটা ঝড়ের রাতের জন্য? . এভাবে পরপর এক সপ্তাহ কেটে গেলো। আমার অবস্থা ভয়াবহ।কিছুতেই মন বসাতে পারিনা।বারবার ওর বৃষ্টিস্নাত চেহারা আর সেই ঠোটের স্পর্শ মনে পড়ে যায়।ভুলতে পারিনা কিছুতেই।কেন ও আর এলোনা? কেন এলোনা? আমাকে কষ্টই যখন দেবে তবে এভাবে মায়া বাড়িয়ে গেলো কেন? এর উত্তর আমার জানা নেই! দিনরাত ফেসবুকের আইডি গুলো ঘুরে ঘুরে দেখি।নীলাম্বরী নামে বাংলা আর ইংলিশে যত আইডি আছে,সব খুঁজে দেখি।সবার এবাউট দেখি।দু একজন কে মেসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস ও করেছিলাম, তার বাসা কোথায়? বৃষ্টিতে কোথাও বিপদে পড়েছিলো কিনা! এভাবে দিনের পর দিন কেটে যেতে লাগলো। একদিন হঠাৎ একটা পোস্ট এ চোখ আটকে গেলো, "জানিনা কে তুমি,জানিনা তোমার নাম,তোমার ঠিকানা।শুধু জানি ওই বৃষ্টিভেজা একটি রাতে দুজনের দুজনের হয়েছিলাম।আমাদের আলাদা করার সাধ্য তখন কোনো ঝড়ের ই ছিলোনা।একে অপরকে কাছে পেয়েও স্পর্শ করিনি,শুধু হাত ধরেই কাটিয়ে দিয়েছি সারাটি রাত।এতটা মর্যাদা দিয়েছিলে তুমি আমায়! আর তোমাকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলাম এই নীলাম্বরী'র সবটুকু ভালোবাসা! আমি কখনো কাউকে ভালবাসিনি,তাই এর যন্ত্রণা টুকু এত ভয়াবহ সেটা জানতাম না।আমি এক মুহুর্তের জন্যও পারিনা তোমাকে ভুলে থাকতে।কিন্তু আমি যে তোমার নাম জানিনা,আমি যে চিনতে পারিনি তোমার বাড়ির পথ।কিভাবে পাবো তোমায় বলতে পারো? একটি বার খুঁজবে কি আমায়? আরেকবার হাতটা বাড়াও,কোনোদিনও ছাড়বো না।" পোস্ট টা দেখে আমার দুগাল বেয়ে অঝোর ধারায় জল পড়তে লাগলো।বুক ফেটে কান্না আসছে।মনে হচ্ছে আমার বোধহয় আরেকবার জন্ম হলো।মরতে বসেছিলাম প্রায়! সাথে সাথেই পোস্ট এ কমেন্ট করলাম- আমিই তোমার সেই Neer Nilavro (নীলাভ্র) আমাকে চিনতে পারছো কি নীলাম্বরী? সাথে সাথেই ইনবক্সে মেসে আসল,নাম্বার টা দাও তাড়াতাড়ি।নাম্বার দিতেই কল আসলো ফোনে।রিসিভ করতেই শুনতে পেলাম নীলাম্বরী'র কান্না ভেজা কণ্ঠ!
  • তুমিই সেই! আমি তোমার নাম জানতাম না।প্রোফাইল পিক টা দেখেই চিনলাম।
  • আর আমি তোমার নামে কত হাজার বার ঘুরেছি এই ওয়ালে! কিন্তু প্রোফাইল এ তোমার ছবি নেই বলে চিনতে পারিনি! নীলাম্বরী শব্দ করে কাঁদতে লাগলো। আমিও কেঁদে ফেললাম। ও বলল,জানো অনেক টা পথ আসার পর আমার মনে হয়েছিল তোমার নাম্বার নিয়ে আসিনি।আমি বাস থেকে নেমে গিয়ে আবারো ওই স্ট্যান্ডে চলে যাই।কিন্তু তোমাদের মোড় টার নাম বলতে পারিনি।আন্দাজে অনেক দূর চলে গিয়েছিলাম।কিন্তু পরে মনে হলো রাস্তা ভুল।অনেক গুলো রাস্তায় গিয়ে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি তোমার বাসার পথ কোন দিকে? কিন্তু আমরা তো অন্ধকারে বেড়িয়ে এসেছিলাম।আর আমি তোমাকেই দেখছিলাম শুধু।কিছুতেই আর পথ চিনতে পারিনি।দু একটা পথ চিনলেও বাড়ি খুঁজে পাইনি।তোমার নাম টাও আমি জানতাম না। বলতে বলতে ও কাঁদতে লাগলো। আমিও কেঁদে বললাম, জানো আমি সারাদিন রাত তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।ভেবেছিলাম তুমি আসবে।সেদিন ফোন নাম্বার দেয়ার কথা মনে ছিলনা।আর তুমিতো আমার নামও জানতে চাওনি।কত খুঁজেছি আমি তোমায়!
  • আমিও অনেক খুঁজেছি তোমায়! নীলাম্বরী কাঁদতে ই লাগলো। অনেক্ষণ পর কান্না থামিয়ে বলল,আমায় ভালোবাসো তো?
  • নয়ত দিনরাত সব নীলাম্বরী'র প্রোফাইলে কেন পড়ে থাকি? তোমাকে খুঁজে বের করার জন্যই তো।
  • I love you... আমি হেসে বললাম,আমিও ভালোবাসি তোমায় নীলাম্বরী, অনেক ভালোবাসি সোনাবাবুনি!

★সমাপ্ত★

4
$
User's avatar
@Mdemon456 posted 3 years ago

Comments