সেই_তুমি🍁
সিজন_০২
পর্ব_০২_৩
বেখেয়ালি_হিমু
চড় বসিয়ে দিয়েই জ্বিভে কামড় পরলো আমার। তুর্য ভাইয়া ধরেছে ভেবে চড় দিলাম কিন্তু পিছনে তো রুহান ভাইয়া দাড়িয়ে আছে। আজকে যে ফুপি আম্মুর আসার কথা ছিল আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। ইশশ রে বেচারার ফর্সা গাল টা লাল হয়ে গেছে। রুহান ভাইয়া হ্যাবলা কান্তের মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আর আমি একটা লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে আমার ধবধবে সাদা দাতগুলো দেখালাম।
রুহান ভাইয়া এখনও গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছেন দেখে তার গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে সরি চাইলাম। রুহান ভাইয়া আর কোনো প্রশ্ন না করে আমাকে জরিয়ে ধরলেন। রুহান ভাইয়ার এই কাজটা আমার কাছে চরম বিরক্তির মনে হয়। যখনই দেখা হয় জরিয়ে ধরে। মানছি ফুপি আম্মুরা খুব মডার্ন কিন্তু আমার এই জিনিসটা একদম পছন্দ নয়।
রুহান ভাইয়ার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছাদ থেকে নামতে শুরু করলাম। এখন আর ছাদে থাকা সম্ভব না। মাঝে মাঝে রুহান ভাইয়ার চোখ দুটো কেমন যেনো হয়ে যায়। ছাদ থেকে নেমে আসার সময় মনে হলো একটা ছায়ামূর্তি সেখান থেকে সরে গেলো। বাসায় অনেক মানুষ হয়তো কেউ ছাদে এসেছিল।
🍁
🍁
৭ দিন পর বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে ভাবা যায়। জোড়ে সোড়ে চলছে আয়োজন। আমাদের ছাদটা অনেক বড়। হলুদ সন্ধ্যা, মেহেদি, নাচ-গান সবটা ছাদেই হবে। বিয়েটা শুধু কমিউনিটি সেন্টারে পড়ানো হবে। বাড়ির বড়রা সবাই সবটাই সামলে নিচ্ছেন কিন্তু শপিং এর দায়িত্ব পড়লো ছোটদের কাঁধে। যদিও বলে দিয়েছে ছোটরা করবে। কিন্তু এই শপিং এর কাজে আমি কোথাও নেই। হিয়া আমাকে ঘেসতেও দেবে না কাছে। হিয়া শাকচুন্নিটা সবসময় এমন করে। এখনও তুর্য ভাইয়া আর বাচ্চা পার্টির সাথে চিপকে আছে হিয়া। আমাকে তো কেউ পাত্তাই দেয় না। ওরা পাত্তা না দিলে আমার বয়েই গেলো।
তাফসি আপুর হলুদে আমি নাচবো এই ফাঁকে প্র্যাক্টিস টা করে ফেলি। মোবাইলে গান প্লে করে মাত্রই নাচ শুরু করেছিলাম তখনই মনে হলো কেউ আমার ঘরের দরজার বাইরে দাড়িয়ে আছে। ছুঁটে গিয়ে দরজা খুলে কাউকেই পেলাম না। জানি না কি হচ্ছে। আবার ভুত-পেত্নির প্রকোপ বাড়ছে নাতো! বাড়লেও আশ্চর্যের কিছুই নেই। হিয়া শাকচুন্নি যতোদিন এ বাড়িতে আছে ওর আত্মীয়স্বজনরা তো আসবেই দেখা করতে।
এ বাড়িতে এমনেই আমি সবার কাছে অবহেলিত। দেখলে মনে হয় আমাকে এরা কুড়িয়ে পেয়েছে। এখন তুর্য ভাইয়ার আগমনে আমি আরো একা পরে গেছি। আগে তো মাঝে মাঝে নিলি মিলি আসতো চকোলেট ভাগ করতে। যদিও ওদের অর্ধেক চকোলেট আমিই খেয়ে নিতাম। এখন সেটাও আসছে না। কি আর করার নিজের চকোলেট গুলোই খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
।
৪/৫ পর্বের জন্য নেক্সট কমেন্ট না করে আইডিটা ফলোয়ান বা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়ে রাখলে আমি পোস্ট করার সাথে সাথেই আপনাদের কাছে চলে যাবে
।
মাঝরাতে মনে হচ্ছে কেউ আমার গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব হচ্ছে। কিন্তু আমার উঠার কোনো ইচ্ছাই নেই। ঘুমপরী খুব যত্নসহকারে আমাকে নিজের সাথে আঁকড়ে ধরে আছে। হঠাৎ থুতনিতে কেউ একটা কামড় বসিয়ে দিলো মনে হচ্ছে। আমি চট করে চোখ খুলে ফেললাম। চিত্কার করতে যাবো তার আগেই কেউ আমার ওষ্ঠদ্বয় দখল করে নিলেন। অন্ধাকার ঘরে আমি কিছু দেখতেও পাচ্ছি না আর লোকটাকে আমার উপর থেকে সরাতেও পারছি না। এতো শক্ত করে ধরে রেখেছে আমাকে আমি এক ইঞ্চিও নড়তে পারছি না।
লোকটা মনের সুখে আমার ঠোঁট দুটো চুষে নিচ্ছেন। আবার কামড়ও দিচ্ছেন। এদিকে আমার নিশ্বাস আটকে আসছে। অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। আর মিনিট দুয়েক এভাবে থাকলে মনে হয় আমার পরাণ পাখি উড়াল দেবে। আমার নিশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে যাবে ভাব তখন লোকটা আমার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিলেন। ঠোঁটা ছাড়তেই আমি হাপানো শুরু করলাম। আমি জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছিলাম তখন লোকটা আমার উপর থেকে উঠে গেলেন।
আমি লাফ দিয়ে উঠে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে নিলাম। কিন্তু আশ্চর্য ঘরে কেউ নেই। মুহূর্তেই কেউ ঘর থেকে কিভাবে বের হতে পারে। দরজাও ভিতর থেকে লক করা। তখন আমার নজর পরলো ব্যালকোনির দিকে। ব্যালকোনির কাঁচ খোলা। তাহলে কি কেউ ব্যালকোনি দিয়ে ঘরে ঢুকেছিল! দৌড়ে ব্যালকোনিতে গেলাম কিন্তু না আশে পাশে কেউ নেই। তবে কি এতোক্ষণ আমার সাথে যা যা হয়েছে সব স্বপ্ন!!
রাতে আর ঘুম হলো না আমার! ভোরের দিকে একটু চোখ লেগে আসতেই হিয়া ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে। আমি বুঝি না আমার সাথে এই মেয়েটার কিসের শত্রুতা। হিয়ার ডাকাডাকি সহ্য করতে না পেরে উঠে পরলাম। ওয়াশরুমের আয়নায় নিজের মুখ দেখতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। আমার ঠোঁটের কোনায় রক্ত শুকিয়ে আছে। তারমানে কাল রাতে আমি ওসব স্বপ্নে দেখি নি। আসলেও কেউ আমার সাথে এমনটা করেছিল।
অজানা একটা ভয় আমাকে গ্রাস করে নিলো। তিনতলার ঘরে কে এসেছিল এতো রাতে! আর আমার সাথে ওসব কেনো করলো! অনেক ভয় করছে। আমার শত্রু কে হতে পারে! আচ্ছা লোকটা কি রুহান ভাইয়া! না না ছিহ! এসব আমি কি ভাবছি। রুহান ভাইয়া অনেক ফ্রি মাইন্ডেড কিন্তু এমন না।
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেরই কান্না পাচ্ছে। আমার সুন্দর ঠোঁট টা কেটে দিয়েছে। কিন্তু কথা হলো আমি বাইরে যাবো কিভাবে! সবাই দেখলে হাজার টা প্রশ্ন করবে। বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলাম কেউ আছে কি না। কাউকে আশেপাশে না দেখে ছুঁট লাগালাম খাবার টেবিলে। খাবার প্রায় শেষ পর্যায়ে তখনই সেখানে তুর্য ভাইয়া এলেন। আর ২ মিনিট পরে এলে কি এমন ক্ষতি হতো তার!
-- কিরে পুচকি! কি করছিস?
আমি মাথা নিচু করে আপন মনে ব্রেড গিলে যাচ্ছি।
-- এই এদিকে তাকা তো। তোর ঠোঁট এই জায়গায় লাল কেনো রে? তোর বয়ফ্রেন্ড আছে তাই না!
-- কি সব বাজে বকছেন! ঠোঁট লালের সাথে বয়ফ্রেন্ডের কি সম্পর্ক!
-- আমাকে কি নিজের মতো পুচকি ভাবিস! জানিস আমার কতোগুলো গার্লফ্রেন্ড আছে! আমার গার্লফ্রেন্ডদের ঠোঁটও অনেক সময় লাল থাকে।
তুর্য ভাইয়ার মুখে তার গার্লফ্রেন্ডদের কথা শুনে কেনো জানি না আমার কষ্ট হচ্ছে। বুকের বা পাশে নিজের অজান্তেই চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে।
-- জানিস তো ঠোঁটের কোণায় লাল কেনো হয়!
-- হুম।
-- কিভাবে জানলি!
-- মুভি তে দেখেছি।
-- এমনি এমনিই কি তোকে পুচকি বলি। তুই মুভিতে দেখেছিস আর আমি আমার গার্লফ্রেন্ডের ঠোঁটের স্বাদ নিয়েছি।
তুর্য ভাইয়ার কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। এর কারণ আমার জানা নেই। তার কথা আর শোনার ইচ্ছে হলো না তাই উঠে ঘরে চলে গেলাম। আচ্ছা একদিন হয়েছে যার সাথে দেখা হয়েছে সেই মানুষটার জন্য এই অনুভূতির অর্থ কি! আমি কি তুর্য ভাইয়াকে নিয়ে একটু বেশি চিন্তা করছি! হ্যাঁ তাই হবে। আর তাকে নিয়ে ভাববো না। কলেজে যেতে হবে, সামনে পরীক্ষা ৩ দিন পর আর যেতে পারবো না। বিয়ের ফাংশন শুরু হলে আব্বু আর কলেজে যেতে দেবে না।
কলেজের পোশাক পরে দুই বেনুণী করে কাধে ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে আছি। আজ অবশ্য হালকা একটু লিপষ্টিকও পরেছি। ঠোঁটের কাটা দাগটা ঢাকার জন্য। প্রতিদিন এই সময় এই রাস্তায় রিকশার রেস হয় আর আজকে একটা রিকশাও নেই। এতোদূরে কলেজ হেটে যেতে গেলে পায়ের দফারফা শেষ হয়ে যাবে। আনমনেই কথা গুলো ভাবছিলাম তখন সামনে একটা বাইক এসে ভিরলো।
বাইকে তুর্য ভাইয়া বসে আছেন। কিন্তু উনি বাইক পেলেন কোথায়!
-- উঠে বস পৌঁছে দিয়ে আসছি।
তুর্য ভাইয়ার প্রতি অনেক অভিমান হচ্ছে, তার এতোগুলো গার্লফ্রেন্ড থাকতে আমাকে কেনো বাইকে বসাবেন! কিন্তু এই অভিমানই বা কেনো হচ্ছে! তার আর আমার সম্পর্ক শুধুই কাজিন হিসেবে। অন্য কোনো সম্পর্ক তো নেই আমাদের। তুর্য ভাইয়া তুরি বাজিয়ে আবারো জিজ্ঞেস করলেন,
-- বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকবো না। আর একবার বলবো তবুও না এলে একাই যাবি এই রোদের মধ্যে।
কিছু না বলে বাইকে উঠে বসে পরলাম। এতোদূর হাটার একদম ইচ্ছে নেই। এর আগে বাইকে উঠেছি বলে মনে পরছে না। তাই ভয় হচ্ছে খুব যদি পরে যাই। তুর্য ভাইয়া যেমন মানুষ, পরে গেলেও তো ধরবে না। আমার জায়গায় তার অন্য কোনো গফ হলে ব্যাপারটা ভিন্ন হতো।
বাইক স্টার্ট দিতেই খেলাম একটা বিশাল ধাক্কা তুর্য ভাইয়ার সাথে। দোষটা আমারই ছিল। হাজারটা চিন্তায় আমি ভালোমতো বসতেই পারি নি।
-- এই পুচকি নাম তুই বাইক থেকে। নিজে তো মরবিই সাথে আমাকেও জেল এর ভাত খাওয়াবি।
-- না জেল এর ভাত খেতে হবে না। জেল এ শুকনো রুটি আর একটা পেঁয়াজ দেয়।
-- ঠাঁটিয়ে একটা চড় মারবো। অনেক বেশি বুঝিস তাই না। চুপচাপ ধরে বস।
তুর্য ভাইয়ার ধমকে আমি চুপসে গিয়েছি। এই লোককে বিশ্বাস হয় না, যদি সত্যি মেরে দেয়। কোনো কথা না বলে তুর্য ভাইয়াকে পিছন থেকে ধরে বসলাম। জীবনে প্রথমবার বাইকে উঠেছি। কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে। আমার সব বান্ধবীরা বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাইকে ঘুরতে যায় আর আমাকে গল্প শোনায়। আমিও আজকে বাইকে উঠেছি। আমিও সবাইকে শোনাবো।
কলেজের গেইটে এসে তুর্য ভাইয়া আমাকে নামিয়ে দিলেন। গেইটের আশেপাশের মেয়েরা কেমন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে তুর্য ভাইয়াকে। এতোক্ষণে ভাইয়ার দিকে ভালোমতো তাকিয়ে দেখলাম। তাকে দেখে এবার সত্যি আমি ক্রাশ খেলাম। অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে দেখতে। কালো জিন্সের সাথে হোয়াইট শার্ট পরে হাতা ফোল্ড করে রেখেছেন, চোখে সানগ্লাস। সব মিলিয়ে অসাধারণ। কিন্তু সব মেয়েরা তুর্য ভাইয়ার দিকে নজর দিচ্ছে। তুর্য ভাইয়াকে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বিদায় করে আমি ভিতরে ঢুকে গেলাম।
আমার বান্ধবীরা ভাইয়ার সাথে আমাকে দেখে ভেবেই নিয়েছেন সে আমার বয়ফ্রেন্ড। আচ্ছা তুর্য ভাইয়া যদি সত্যি আমার বয়ফ্রেন্ড হতো!! কেমন হতো! এতো হ্যান্ডসাম একটা বফ আমার থাকলে আমার সব বান্ধবীরা জ্বলে পুরে ছাই হয়ে যেতো।
।
।
।
।
আজকে রিকশাওয়ালাদের কি হয়েছে কে জানে। একটা রিকশাও নেই। একা একা হেটে আসছিলাম তখন নজর পরলো রাস্তার অপর পাশে। দুইটা ছেলে দাড়িয়ে স্মোক করছে। তাদের দেখে সুবিধার মনে হচ্ছে না। এদিকে রাস্তাটাও কেমন ফাঁকা। ভয় ভয় করছে, তাই দ্রুত পদক্ষেপে চলছি। কিন্তু বলে না যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়। ছেলে দুইটা আমার পিছনেই আসছে। শুধু যে পিছনে আসছে তাই নয়, বাজে মন্তব্যও করছে। ভয়ের তীব্রতায় আমার কান্না পাচ্ছে। আমি কোনো কিছু না ভেবে দৌড়ানো শুরু করে দিলাম। কিন্তু জন্মগত গোলটুশি হওয়াতে দ্রুত দৌড়াতেও পারছি না। ছেলে দুটো প্রায় ধরে ফেলেছে আমাকে। তখনি মনে হলো আমি একটা দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলাম। দেয়ালটা আমাকে জরিয়ে ধরেছে কিন্তু দেয়াল কিভাবে ধরলো! মুখ তুলে তাকাতেই দেখি কালো হুডি পড়া একটা লোক আমার সামনে দাড়িয়ে। তার মুখটা দেখতে পারলাম না মুখে মাস্ক থাকার দরূণ। কিন্তু যতোটুকু বুঝতে পারলাম লোকটা আমার সাহায্য করার জন্যই এসেছেন। কারণ লোকটা ছেলে দুইটাকে আচ্ছামত ধোলাই দিচ্ছে। কিন্তু আমার ভয় এখনও কাটে নি। এই লোকটাও যদি ওদের মতোই হয়! না না এইখানে আর থাকা যাবে না। আমি পিছন থেকেই দৌড়ে পালালাম।
বাসায় এসে রুমের দরজা লক করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে হাপাচ্ছি। দুদিন ধরে আমার সাথে এতো আজিব আজিব ঘটনা কেনো ঘটছে! প্রথমে তুর্য ভাইয়া তারপর আবার রাতের লোকটা এখন আবার এই সমস্যা। আমি পিচ্ছি একটা মানুষ এতো সমস্যা কিভাবে সামাল দেবো!
🍁
ব্যালকোনিতে গিটার হাতে বসে আছে তুর্য। আকাশে মেঘ করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। আজ তুর্যর মনটা অনেক ভালো। খুব খুশি খুশি লাগছে। মনে হচ্ছে হাজার বছরের পিপাসা মিটতে শুরু হয়েছে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তের বাতাস শুরু হয়ে গেছে। প্রাণ খুলে সেই বাতাস উপভোগ করছে তুর্য।
হঠাত পিছন থেকে কেউ জরিয়ে ধরায় চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়ে তুর্য। জরিয়ে ধরা ব্যক্তিটির স্পর্শ অনুভব করতে চায় সে। কিন্তু স্পর্শগুলো খুব অপরিচিত মনে হচ্ছে। চোখ খুলে নিজের ছাড়িয়ে পিছন ঘুরতেই দেখে রুহি মুচকি হেসে দাড়িয়ে আছে। রুহিকে দেখে তুর্য ভ্রু কুচকে তাকায় তার দিকে। হয়তো চিনতে পেরেছে সে।
-- কি হলো তুর্য! এভাবে কি দেখছো! চিনতে পারো নি বুঝি?
-- রুহি! না চেনার কি আছে। ফুপি আম্মু তো কালকেই এসেছেন তুমি আজকে এলে যে!
-- আব্বুর সাথে এসেছি। আম্মু আর ভাইয়া কালকেই এসে পরেছিল।
-- হুম। বসো আমি আসছি।
-- কোথায় যাচ্ছো? তোমার সাথে দেখা করতেই তো এলাম।
-- দেখা তো হয়ে গেছে। চোখের তৃষ্ণা মেটাতে যাচ্ছি।
তুর্য ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
চারিদিক অন্ধকার হয়ে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সময় টা বিকেল হলেও মনে হচ্ছে সন্ধ্যার আগ মুহূর্ত চলছে। তুর্য গিটার হাতে ছাদের দরজার সামনে এসে থমকে যায়। সে তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এই বৃষ্টির ধারায় কোনো এক পরী তাদের ছাদে দাড়িয়ে ভিজছে। সাদা চুড়িদার পরে একটা মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। মেয়েটা অন্যদিকে মুখ করে দাড়িয়ে থাকায় তুর্য মুখটা দেখতে পারছে না। সাদা চুড়িদারটা বৃষ্টির পানিতে ভেজায় মেয়েটার শরীরের প্রায় প্রতিটা ভাঁজ তুর্যর চোখে পরছে। তুর্য বারবার দৃষ্টি সরাতে চাইছে কিন্তু কোনো এক অজানা আকর্ষণ তাকে টানছে মেয়েটার দিকে।
মেয়েটা সম্ভবত মাথা নাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা মুখে নিচ্ছে আর পিছন থেকে তার লম্বা চুলগুলো কোমড়ে বারি খাচ্ছে। তুর্যর খুব ইচ্ছে করছে একটা বার মেয়েটাকে ঘুরিয়ে তার মুখটা দেখতে। তুর্য গিটার টা নিচে রেখে সামনের দিকে আগাচ্ছে। সে নিজেও জানে না সে কি করতে যাচ্ছে।
মেয়েটার একদম কাছে গিয়ে দাড়িয়ে আছে তুর্য। ভিজে একাকার হয়ে গেছে কিন্তু অপেক্ষা করছে কখন মেয়েটা পিছন দিকে ঘুরবে আর সে তাকে একনজর দেখবে।
চলবে..
সেই_তুমি🍁
সিজন_০২
পর্ব_০৩
বেখেয়ালি_হিমু
ঠাসস্ করে একটা চড় বসিয়ে দিলো তুর্য হীরের গালে। চড়ের মাত্রা টা এতোটাই তীব্র ছিল যে হীর ছিটকে নিচে পড়ে যায়। এই মুহূর্তে তুর্যর কোনো হুশ নেই। হীরের ঠোঁটের কাটা জায়গা থেকে রক্ত ঝড়ছে সেটা তুর্যর চোখে পরছে না। রাগে তার কপালের রগ ফুলে গেছে। হীরের চুলের মুঠি ধরে নিচে থেকে উঠিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো তুর্য। সে কি করছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না। এক মিনিট আগে সে হীরকে চড় মেরেছে আর এখন হীরকে বুকে জরিয়ে ধরে আছে।
এমন একটা কান্ড ঘটে যাবে সেটা আমার চিন্তা ধারার বাইরে ছিল।
কিছুক্ষণ আগে,,,,,,,
বৃষ্টি শুরু হলে, প্রতিবারের মতো ছাদে চলে আসি ভেজার জন্য। বৃষ্টির সময় কেউ ছাদে আসে না। এজন্যই মনের সুখে ভিজতে পারি। কিন্তু আজ যখন ভিজছিলাম তখন হঠাত পিছনে ঘুরতেই দেখি তুর্য ভাইয়া একদম আমার গা ঘেসে দাড়িয়ে আছেন। এভাবে আচমকা ভাইয়াকে দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই। নিজেকে সামলাতে না পেরে পিছন দিকে পরে যেতে নিলে ভাইয়া আমার কোমড় আঁকড়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি আমি। ওই চোখ দুটোয় কেমন যেনো একটা নেশা লেগে আছে। নেশার ঘোর আমাকে তার দিকে টানছে। নিজের অজান্তেই তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট দুটো ছুঁইয়ে দিলাম আমি।
।
।
।
।
।
।
।
অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি ভাইয়ার সামনে। একটু আগে যেই কাজটা করেছি তার জন্য যেরা করা হচ্ছে আমাকে। জানি না আমার কি হয়েছিল কেনো করলাম এই কাজটা। লজ্জায় আমার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।
তুর্য ভাইয়া আমার দিকে কিছুক্ষণ প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আমাকে প্রশ্ন শুরু করলো,
-- কি ছিল ওটা?
ভাইয়ার কন্ঠ শুনেই আমার পা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে। কোনোরকম কাঁপতে কাঁপতে উত্তর দিলাম,
-- সরি আসলে কিভাবে কি হলো বুঝতেই পারলাম না।
-- এটা কি ছিল হীর!
-- সে কি তুমি মানে আপনি জানেন না! ওটা চুমু ছিল।
-- সেটা আমিও জানি যে চুমু ছিল। কিন্তু কারণটা জানতে চাই।
কি উত্তর দেবো বুঝতে পারছি না। আমার এমনটা করার পিছনে যে কোনো কারণ ছিল না সেটা কি সে মানবে? আচ্ছা আমি যদি ভাইয়াকে আমার বয়ফ্রেন্ড হতে বলি কেমন হবে! রাগ করবে না তো! না না রাগ করবে কেনো। আমি কি কোনো অংশে কম নাকি! যথেষ্ট সুন্দরী আমি। সাহস করে বলেই দেখি।
-- তুর্য ভাইয়া!
-- বল।
-- আপনি,, আপনি কি,, আপ,,
-- এতো ভনিতা না করে বলতো।
-- আপনি কি আমার বয়ফ্রেন্ড হবেন? আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড হলে আমার সব বান্ধবীরা জ্বলে পুরে মরে যাবে।
কথাটা বলতে দেরি হয়েছে কিন্তু তুর্য ভাইয়ার আমাকে চড় মারতে দেরি হয় নি।
বর্তমান,,,,
পরম আবেশে তার বুকে আগলে রেখেছেন আমাকে। এখন আমার খুশি হওয়া উচিত নাকি কষ্ট পাওয়া উচিত বুঝতে পারছি না। ব্যাপারটা অনেকটা জুতা মেরে গরু দানের মতো লাগছে। অনেকটা অভিমান নিয়ে ভাইয়াকে নিজের কাছে থেকে সরিয়ে দিলাম।
-- আপনি আমাকে চড় কেনো মারলেন! আমি কি দেখতে খারাপ! আমি দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী। এজন্য আমি ভালো কাউকে ডিজার্ভ করি। আমি আপনাকে আমার বয়ফ্রেন্ড হওয়ার প্রপোজাল দিতাম না। আজকে আপনি আমাকে কলেজে দিয়ে আসাতে আমার সব ফ্রেন্ডরা ভেবে নিয়েছে আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড। তাই আমিও ভাবলাম হলে ক্ষতি কোথায়! কাজিন কি বফ হতে পারে না!
-- আমাকে কবে বুঝতে পারবি বল তো তুই? তুই আমাকে বয়ফ্রেন্ড বানাতে চাইছিস শুধুমাত্র শো অফ করার জন্য। ভালোবাসে কাছে এলে ঠিকই আপন করে নিতাম। আমাকে বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে শো অফ করতে পারবি। কিন্তু এসবকিছুর মাঝে আমার মনটা কতোটা কষ্ট পাবে ধারণা আছে তোর?
-- এখানে কষ্ট পাওয়ার কি আছে! আমিও তো আপনার গার্লফ্রেন্ড হবো তাই না। আর আমাকে ভালোমতো দেখেছেন কখনও? হিয়ার থেকেও বেশি সুন্দর আমি আব্বু বলে।
-- সব ছেলেরা বাইরের সৌন্দর্য চায় না হীর। অনেকের কাছে ভালোবাসাটাই সব।
-- হুম বুঝলাম। এখন উত্তর কি হ্যাঁ নাকি না?
-- যেদিন ভালোবেসে আমার কাছে আসবি সেদিন ঠিকই আপন করে নেবো। আপাতত দশ হাত দূরে থাকবি আমার।
কথাটা বলে ভাইয়া সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি এখনও ভেবে পাচ্ছি না আমি ভুলটা কোথায় করলাম। আমার সব বান্ধবীদের রিলেশন তো এভাবেই শুরু হয়েছিল। ভালোবেসে কাছে কিভাবে আসে সেটা তো আমার জানা নেই!!!
🍂
ছাদ থেকে নেমে সোজা বাসায় চলে গেলাম। সেখানে গিয়েও শান্তি নেই হিয়া চেচামেচি শুরু করে দিয়েছে মেঝে ভিজে যাওয়াতে। আমি নিশ্চিত এই মেয়েটা আমার বোন হতেই পারে না। হিয়ার বকবক কানে না তুলে সোজা রুমে চলে গেলাম। এখন ভেজা কাপড় না ছাড়লে জ্বর নিশ্চিত।
🍁
🍁
ব্যলকোনিতে দাড়িয়ে স্মোক করছে তুর্য। এখনও ভেজা অবস্থাতেই আছে। সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে কষ্টগুলো উড়িয়ে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে। বুকের বা পাশটা ভীষণ ব্যথা করছে। আজ হীর নিজ থেকে তার কাছে এসেছিল আর সে ফিরিয়ে দিয়েছে। নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। সে তো এটাই চাইতো হীর তার কাছে আসুক, তাকে আপন করে নিক।
কিন্তু এভাবে তো চাইতো না। আপনমনেই হেসে ফেলে তুর্য। হীর আসলেই একটা পিচ্ছি। ভালোবাসার মতো জটিল সমীকরণ সে বুঝবে না। তুর্যর এটা আশা করাও ঠিক না। তুর্যর ভালোবাসা কি আদোও হীর কখনও বুঝবে না!!
সিগারেটে শেষ টান দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো তুর্য।
বিছানায় বসে চকোলেট খাচ্ছি আর ভাইয়ার কথার মানে খুঁজছি। কি বললেন কিছুই বুঝি নি আমি। বড় হয়েছে তাই বলে এতো জটিল কথা বলতে হবে কেনো! একটু সহজ ভাবেও বোঝাতে পারতো বিষয়টা। ভালোবেসে ধরা দেওয়ার অর্থ কি! ভালোবাসা তো বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডের সম্পর্ক। এতোটুকু বিষয়কে এতো জটিল বানানোর কি দরকার।
রাতে সবাই ছাদে আড্ডা বসিয়েছে। আড্ডার মধ্যমণি তুর্য ভাইয়া। আমি চুপচাপ এক কোনায় বসে আছি। বিকেলের কাজের জন্য লজ্জা লাগছে। কেনো যেনো মনে হচ্ছে ভাইয়াকে ওভাবে বলাতে সে কষ্ট পেয়েছে। আমার নিজেরও খারাপ লাগছে। ভাইয়াকে সরি বলা উচিত। যেই ভাবা সেই কাজ। আড্ডা শেষে ভাইয়াকে ডাক দিলাম।
-- ভাইয়া! সরি! প্লিজ ক্ষমা করে দিন! আমার ওসব বলা ঠিক হয় নি।
-- Its ok. আর আমিও সরি তোকে ওভাবে চড় মারা উচিত হয় নি।
-- হ্যাঁ।
-- কি বললি!
-- না মানে আমি শুধু নিজের স্বার্থটাই দেখেছিলাম। আপনার দিকটাও ভাবা উচিত ছিল আমার।
-- যা ঘুমিয়ে পড়।
ভাইয়ার ব্যবহার আসলেই উদ্ভট। আমার কথার উত্তর না দিয়ে চলে গেলেন।
🍂
রাতে,,
হীর এলোমেলো ভাবে ঘুমিয়ে আছে আর তুর্য নেশা লাগানো চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যালকোনি দিয়েই হীরের ঘরে ঢুকেছে সে। হীরের মাথার কাছে বসে এক দৃষ্টিতে দেখছে তার ঘুমন্ত পরীর মুখখানা। আস্তে করে হীরের গালে হাত রাখতেই দেখলো গালে এখনও কালচে দাগ পরে আছে। থাপ্পড়টা দেওয়াতে হীর অনেক ব্যথা পেয়েছে বুঝতে পারছে সে। ঠোঁট টাও ফুলে গেছে। হীরের গালে আর ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে হীরকে জরিয়ে ধরলো তুর্য।
-- তুই কেনো বুঝতে পারিস না তোকে কতোটা ভালোবাসি। এতো বছর পর যেদিন তোকে প্রথম দেখলাম ইচ্ছে হয়েছিল তোকে কলিজার ভিতর ঢুকিয়ে রাখি। কিন্তু তুই তো আমাকে বুঝতেই পারিস না। তোর মনে কি একবারের জন্যও আমার চিন্তা আসে না? সবকিছু তোকে খুলে বলতেও পারি না। কিভাবে তোকে সব বলবো আমি যে নিরুপায়। তুই কি একবারের জন্যও আমাকে ভালোবাসতে পারিস নি!
কথাগুলো বলতে বলতে দুচোখ বেয়ে অশ্রু গরিয়ে পরে তুর্যর। হীরের কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো। এই মুখটার দিকে সারাজীবন তাকিয়ে থাকলেও হয়তো তার পিপাসা মিটবে না। হীরকে আষ্টে-পৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলো তুর্য।
🍁
ঘুমের মধ্যে বারবার মনে হয়েছে কেউ আমাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে। কিন্তু ঘুম ভাঙার পর কাউকেই খুঁজে পাই নি। জানি না কি হচ্ছে আমার সাথে এসব। সবসময় মনে হয় কেউ আমার উপর নজর রাখছে।
কলেজে যাওয়ার জন্য প্রস্তত হচ্ছিলাম তখন আম্মু ঘরে এলো।
-- হীর! তুর্যদের বাসায় একটু কম যাবি এখন থেকে। তাফসির সাথে দরকার হলে ফোন করে ডেকে আনিস। ওদের বাসায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
কথাটা বলে আম্মু ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমাকে আর প্রশ্ন করার সুযোগ দিলেন না। কিন্তু তুর্য ভাইয়াদের বাসায় যেতে মানা করলো কেনো? ভাবতে ভাবতে বাসা থেকে বের হলাম। এখন রিকশার জন্য দাড়িয়ে থাকতে হবে। তখন সেখানে তুর্য ভাইয়া বাইক নিয়ে হাজির হলেন। আমাকে বললেন তিনি কলেজে নামিয়ে দিবেন। আর আমিও কি মনে করে যেনো উঠে পরলাম।
-- ধরে বস ভালোমতো।
-- ধরেছি তো।
-- কালকের মতো পরে গেলে খবর আছে।
ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে বসলাম। কিন্তু ভাইয়া বাইক কবে কিনলেন!
-- বাইকটা কার ভাইয়া?
-- কার মানে কি! আমার বাইক।
-- আপনি তো তাফসি আপুর বিয়ের পর চলে যাবেন তাহলে কেনো কিনলেন?
-- কে বলেছে চলে যাবো? এখন থেকে দেশেই থাকবো। খুব শীঘ্রই বিজনেস দেশে সেট করে ফেলবো।
-- ওহ। হুম ভালোই হবে। ভাইয়া! আপনি কি এখনও কালকের জন্য রাগ করে আছেন?
-- রাগ করে থাকলে তোকে নিয়ে এতোদূর আসতাম না। রাস্তার মাঝে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতাম।
ভাইয়ার কথা শুনে আমার চোখ কপালে উঠে গেছে। এই লোক বলে কি!
আমাকে কলেজের গেইটে নামিয়ে দিয়ে ভাইয়া চুল ঠিক করছেন। কালকের মতো আজকেও মেয়েরা ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েগুলোও না মাত্রাতিরিক্ত ছ্যাঁচড়া। কোনো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই চোখ দিয়ে গিলে খায়। কেনো যেনো খুব হিংসা হচ্ছে মেয়েগুলোর এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে।
আচমকা আমার গালে চুমু বসিয়ে দিলেন তুর্য ভাইয়া। এভাবে সবার সামনে এমন কাজটা করায় আমি থ মেরে দাড়িয়ে আছি। ঘটনা এখানেই শেষ হলে পারতো। কিন্তু না ঘটনা ঘটা আরো বাকি ছিল। বাইক থেকে নেমে ভাইয়া আমার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেলেন। আমি পিছন থেকে আমার হাত টেনে ধরছি কিন্তু ভাইয়া সজোড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমার বান্ধবীদের সামনে নিয়ে আমাকে দাড় করিয়ে দিলেন।
নিশ্চিত সবাইকে বলে দেবেন তিনি আমার বফ নয় বরং কাজিন। সবার সামনে আমার এতোটুকু সম্মাণ আর থাকবে না। চোখমুখ খিচে ধরে বার বার দোআ করছি যাতে ভাইয়া হাটে হাড়ি না ভাঙে। কিন্তু ভাইয়া যা করলেন তাতে আমি অবাকের শেষ সীমায় পৌঁছে গেলাম। ভাইয়া সবার সামনে আমাকে হাটুতে বসে প্রপোজ করলেন।
এখনও ভাইয়া আগের পজিশনেই বসে আছেন আর আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। পুরো কলেজ থ মেরে দাড়িয়ে আমাদের দেখছে। আমিও ফ্রিজ হয়ে সবটা দেখছি।
-- জান হাতটা দাও না!
ভাইয়ার মুখে জান কথাটা শুনে আমার জান গলা অব্দি এসে পরেছে। যেকোনো সময় বেরিয়ে যাবে। আমি হাত দিচ্ছি না দেখে ভাইয়া নিজেই আমার হাত টা নিয়ে একটা রিং পরিয়ে দিলেন। রিং পরানো অব্দিও মানা যেতো কিন্তু এর পর ভাইয়া আমার হাতে একটা চুমু খেলেন। আমি এখনও মূর্তির ন্যায় দাড়িয়ে আছি। আমার বান্ধবীরা সবাই তুর্য ভাইয়ার সাথে ভাব জমাচ্ছে কিন্তু এখন আমি সেটা দেখছি না। আমি শুধু ভাবছি হলো টা কি।
ভাইয়া সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে আমাকে সেখান থেকে নিয়ে চলে এলেন। বাইক চলছে আপন গতিতে। আর আমি পিছনে চিন্তামনির মতো বসে আছি।
একটা রেষ্টুরেন্টের সামনে এসে ভাইয়া বাইক থামালেন। এবারো হাত ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে গেলেন। লোকটা কি করতে চাইছেন বুঝতে পারছি না। একটা টেবিলে আমাকে বসিয়ে খাবার অর্ডার করলেন। আমার ফেভারেট বিরিয়ানি অর্ডার করেছেন। আচ্ছা সে কিভাবে জানলো বিরিয়ানি আমার পছন্দ!!
-- আপনি কিভাবে জানলেন আমার বিরিয়ানি পছন্দ?
-- নিজেকে আয়নায় দেখেছিস? কেমন গোলটুশি তুই! দেখলেই বোঝা যায় রিচ ফুড পছন্দ করিস।
ভাইয়া আমার ইগো নামক পাখিটাকে আহত করেছেন। একটু স্বাস্থ্য ভালো আমার তাই বলে এভাবে বলতে পারে না সে।
-- কলেজে ওগুলো কি ছিল হ্যাঁ! আপনি না বললেন বয়ফ্রেন্ড হবেন না তাহলে এখন কেনো হ্যাঁ করলেন?
-- আমি হ্যাঁ কখন করলাম! ওগুলো তো অভিনয় ছিল।
-- মানে!
-- মানে তোকে তো আর সবার সামনে অপমানিত হতে দিতে পারি না তাই না। তাই একটা নাটক ছিল এটা। এখন সবাইকে বলবি তোরও বফ আছে।
ভাইয়ার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। এই লোকটা আসলেই উদ্ভট। কখন কি করে কেউ বুঝতে পারে না। আমি তো একদমই না। তখনই সেখানে বিরিয়ানি চলে এলো। আর আমি দীন দুনিয়া ভুলে বিরিয়ানির উপর হামলে পরলাম।
পেট ভরে খাওয়া শেষে আবার শুরু হলো বাইক রাইড। ভাইয়ার সাথে আজকে কাটানো দিনটা আমার সবসময় মনে থাকবে। হয়তো এতোটা খুশি আমি আগে কখনও হই নি। বাসায় সবাই আমাকে আদর করে। কিন্তু একমাত্র আব্বু ছাড়া তেমন কেউ একটা করে না। বড় চাচি, আম্মু, ছোট চাচা-চাচি সবাই আমার থেকে একটু দুরত্ব বজায় রাখে। এই জিনিসটা আমায় ভীষণ কষ্ট দেয়। কিন্তু আমি এর কারণ জানি না। খুব ভালো লাগছে আজ ভাইয়ার সাথে। মনে হচ্ছে আমি খোলা আকাশের কোনো মুক্ত পাখি।
তুর্য ভাইয়ার মায়ায় পরে যাচ্ছি আমি। তার উদ্ভট কাজ গুলোও এখন আমাকে তার দিকে টানে। আচ্ছা এই মানুষটা কি সারাজীবন এভাবেই আমাকে সুখে রাখবে?
কলেজ আওয়ার শেষ হওয়ার সময়ে ভাইয়া আমাকে বাড়ির গেইটে নামিয়ে দিলেন। ভাইয়া বাইক ঘুরিয়ে চলে যেতে নিলে আমি পিছন থেকে ডাক দিলাম।
-- ভাইয়া! কালকেও কি এভাবে ঘুরতে নিয়ে যাবেন?
-- কেনো ক্লাস নেই তোর?
-- আছে। কিন্তু এভাবে কেউ কখনও আমাকে সময় দেয় নি। আপনার সাথে কাটানো আজকের দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিল। আমি কি আপনার কাছে আরেকটা দিন চাইতে পারি?
হীরের আকুতি ভরা কন্ঠে তুর্যর চোখ ভরে এসেছে। কিন্তু সে তার চোখের পানি হীরকে দেখাতে চায় না। তাই হু হা কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলো। হীর তুর্যর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। নিজের অজান্তেই এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো হীরের চোখ দিয়ে।
বিকেলে কোনো কারণ ছাড়াই বেশ কিছুক্ষণ কান্না করলাম আমি। মাঝে মাঝেই আমার সাথে এমন হয়। কোনো কারণ ছাড়াই চোখে পানি এসে পরে।
সন্ধ্যার পর তুর্য ভাইয়াদের বাসায় সবাই বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে। আম্মু আগেই আমাকে মানা করে দিয়েছে সেখানে যেতে। খুব কষ্ট হচ্ছে। বরাবরের মতো এবারো আমাকে বাড়ির সবার থেকে আলাদা করে দেওয়া হলো। ছাদের এক কোনায় দাড়িয়ে আছি, চোখ দিয়ে আপনা আপনিই পানি পরছে। হঠাত কেউ একজন একটা কফি মগ এগিয়ে দিলেন। সেদিক ঘুরতেই দেখি তুর্য ভাইয়া হাতে দুইটা কফি নিয়ে দাড়িয়ে আছেন।
-- এভাবে চোখের পানি ফেললে তো শরীরে লবন কমে যাবে। কফি খেয়ে মুডটা ঠিক কর।
-- আপনি এমন উদ্ভট কথা কেনো বলেন সবসময়?
-- আমার উদ্ভট কথায় তুই বিরক্ত হয়ে যাস যে তাই বলি।
-- কফিটা ভালো হয়েছে কে বানিয়েছে।
-- আমি।
-- আপনি এতো ভালো কফি বানাতে পারেন জানা ছিল না।
-- এমন অনেক কিছু আছে যা তুই জানিস না।
-- মানে!
-- এখানে কি করছিলি?
-- নাচছিলাম।
-- তাই নাকি আমাকে একটু নেচে দেখা তো।
-- আপনি সত্যি উদ্ভট একটা মানুষ।
-- হীর!
-- হুম!
-- আমাকে ভালোবাসিস?
-- এটা কেমন প্রশ্ন?
-- বাসিস না তো! মগটা দে নিচে যাবো।
তুর্য ভাইয়া আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন। আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি এক দৃষ্টিতে। তার এভাবে চলে যাওয়ায় আমার কষ্ট হচ্ছে। আচ্ছা ভাইয়া কি আমাকে ভালোবাসেন? এজন্যই কি আমার এতো কেয়ার করছেন? না না সে আমার কেয়ার করে না। সে তো,,, তাকে তো আমি বুঝতেই পারি না। তার সবকাজ উল্টো আমাকে কনফিউজ করে দেয়।
চলবে..
সেই_তুমি🍁
সিজন_০২
পর্ব_০২_৩
বেখেয়ালি_হিমু
চড় বসিয়ে দিয়েই জ্বিভে কামড় পরলো আমার। তুর্য ভাইয়া ধরেছে ভেবে চড় দিলাম কিন্তু পিছনে তো রুহান ভাইয়া দাড়িয়ে আছে। আজকে যে ফুপি আম্মুর আসার কথা ছিল আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। ইশশ রে বেচারার ফর্সা গাল টা লাল হয়ে গেছে। রুহান ভাইয়া হ্যাবলা কান্তের মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আর আমি একটা লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে আমার ধবধবে সাদা দাতগুলো দেখালাম।
রুহান ভাইয়া এখনও গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছেন দেখে তার গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে সরি চাইলাম। রুহান ভাইয়া আর কোনো প্রশ্ন না করে আমাকে জরিয়ে ধরলেন। রুহান ভাইয়ার এই কাজটা আমার কাছে চরম বিরক্তির মনে হয়। যখনই দেখা হয় জরিয়ে ধরে। মানছি ফুপি আম্মুরা খুব মডার্ন কিন্তু আমার এই জিনিসটা একদম পছন্দ নয়।
রুহান ভাইয়ার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছাদ থেকে নামতে শুরু করলাম। এখন আর ছাদে থাকা সম্ভব না। মাঝে মাঝে রুহান ভাইয়ার চোখ দুটো কেমন যেনো হয়ে যায়। ছাদ থেকে নেমে আসার সময় মনে হলো একটা ছায়ামূর্তি সেখান থেকে সরে গেলো। বাসায় অনেক মানুষ হয়তো কেউ ছাদে এসেছিল।
🍁 🍁
৭ দিন পর বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে ভাবা যায়। জোড়ে সোড়ে চলছে আয়োজন। আমাদের ছাদটা অনেক বড়। হলুদ সন্ধ্যা, মেহেদি, নাচ-গান সবটা ছাদেই হবে। বিয়েটা শুধু কমিউনিটি সেন্টারে পড়ানো হবে। বাড়ির বড়রা সবাই সবটাই সামলে নিচ্ছেন কিন্তু শপিং এর দায়িত্ব পড়লো ছোটদের কাঁধে। যদিও বলে দিয়েছে ছোটরা করবে। কিন্তু এই শপিং এর কাজে আমি কোথাও নেই। হিয়া আমাকে ঘেসতেও দেবে না কাছে। হিয়া শাকচুন্নিটা সবসময় এমন করে। এখনও তুর্য ভাইয়া আর বাচ্চা পার্টির সাথে চিপকে আছে হিয়া। আমাকে তো কেউ পাত্তাই দেয় না। ওরা পাত্তা না দিলে আমার বয়েই গেলো।
তাফসি আপুর হলুদে আমি নাচবো এই ফাঁকে প্র্যাক্টিস টা করে ফেলি। মোবাইলে গান প্লে করে মাত্রই নাচ শুরু করেছিলাম তখনই মনে হলো কেউ আমার ঘরের দরজার বাইরে দাড়িয়ে আছে। ছুঁটে গিয়ে দরজা খুলে কাউকেই পেলাম না। জানি না কি হচ্ছে। আবার ভুত-পেত্নির প্রকোপ বাড়ছে নাতো! বাড়লেও আশ্চর্যের কিছুই নেই। হিয়া শাকচুন্নি যতোদিন এ বাড়িতে আছে ওর আত্মীয়স্বজনরা তো আসবেই দেখা করতে।
এ বাড়িতে এমনেই আমি সবার কাছে অবহেলিত। দেখলে মনে হয় আমাকে এরা কুড়িয়ে পেয়েছে। এখন তুর্য ভাইয়ার আগমনে আমি আরো একা পরে গেছি। আগে তো মাঝে মাঝে নিলি মিলি আসতো চকোলেট ভাগ করতে। যদিও ওদের অর্ধেক চকোলেট আমিই খেয়ে নিতাম। এখন সেটাও আসছে না। কি আর করার নিজের চকোলেট গুলোই খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। । ৪/৫ পর্বের জন্য নেক্সট কমেন্ট না করে আইডিটা ফলোয়ান বা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়ে রাখলে আমি পোস্ট করার সাথে সাথেই আপনাদের কাছে চলে যাবে
। মাঝরাতে মনে হচ্ছে কেউ আমার গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব হচ্ছে। কিন্তু আমার উঠার কোনো ইচ্ছাই নেই। ঘুমপরী খুব যত্নসহকারে আমাকে নিজের সাথে আঁকড়ে ধরে আছে। হঠাৎ থুতনিতে কেউ একটা কামড় বসিয়ে দিলো মনে হচ্ছে। আমি চট করে চোখ খুলে ফেললাম। চিত্কার করতে যাবো তার আগেই কেউ আমার ওষ্ঠদ্বয় দখল করে নিলেন। অন্ধাকার ঘরে আমি কিছু দেখতেও পাচ্ছি না আর লোকটাকে আমার উপর থেকে সরাতেও পারছি না। এতো শক্ত করে ধরে রেখেছে আমাকে আমি এক ইঞ্চিও নড়তে পারছি না।
লোকটা মনের সুখে আমার ঠোঁট দুটো চুষে নিচ্ছেন। আবার কামড়ও দিচ্ছেন। এদিকে আমার নিশ্বাস আটকে আসছে। অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। আর মিনিট দুয়েক এভাবে থাকলে মনে হয় আমার পরাণ পাখি উড়াল দেবে। আমার নিশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে যাবে ভাব তখন লোকটা আমার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিলেন। ঠোঁটা ছাড়তেই আমি হাপানো শুরু করলাম। আমি জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছিলাম তখন লোকটা আমার উপর থেকে উঠে গেলেন।
আমি লাফ দিয়ে উঠে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে নিলাম। কিন্তু আশ্চর্য ঘরে কেউ নেই। মুহূর্তেই কেউ ঘর থেকে কিভাবে বের হতে পারে। দরজাও ভিতর থেকে লক করা। তখন আমার নজর পরলো ব্যালকোনির দিকে। ব্যালকোনির কাঁচ খোলা। তাহলে কি কেউ ব্যালকোনি দিয়ে ঘরে ঢুকেছিল! দৌড়ে ব্যালকোনিতে গেলাম কিন্তু না আশে পাশে কেউ নেই। তবে কি এতোক্ষণ আমার সাথে যা যা হয়েছে সব স্বপ্ন!!
রাতে আর ঘুম হলো না আমার! ভোরের দিকে একটু চোখ লেগে আসতেই হিয়া ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে। আমি বুঝি না আমার সাথে এই মেয়েটার কিসের শত্রুতা। হিয়ার ডাকাডাকি সহ্য করতে না পেরে উঠে পরলাম। ওয়াশরুমের আয়নায় নিজের মুখ দেখতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। আমার ঠোঁটের কোনায় রক্ত শুকিয়ে আছে। তারমানে কাল রাতে আমি ওসব স্বপ্নে দেখি নি। আসলেও কেউ আমার সাথে এমনটা করেছিল।
অজানা একটা ভয় আমাকে গ্রাস করে নিলো। তিনতলার ঘরে কে এসেছিল এতো রাতে! আর আমার সাথে ওসব কেনো করলো! অনেক ভয় করছে। আমার শত্রু কে হতে পারে! আচ্ছা লোকটা কি রুহান ভাইয়া! না না ছিহ! এসব আমি কি ভাবছি। রুহান ভাইয়া অনেক ফ্রি মাইন্ডেড কিন্তু এমন না।
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেরই কান্না পাচ্ছে। আমার সুন্দর ঠোঁট টা কেটে দিয়েছে। কিন্তু কথা হলো আমি বাইরে যাবো কিভাবে! সবাই দেখলে হাজার টা প্রশ্ন করবে। বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলাম কেউ আছে কি না। কাউকে আশেপাশে না দেখে ছুঁট লাগালাম খাবার টেবিলে। খাবার প্রায় শেষ পর্যায়ে তখনই সেখানে তুর্য ভাইয়া এলেন। আর ২ মিনিট পরে এলে কি এমন ক্ষতি হতো তার!
-- কিরে পুচকি! কি করছিস?
আমি মাথা নিচু করে আপন মনে ব্রেড গিলে যাচ্ছি।
-- এই এদিকে তাকা তো। তোর ঠোঁট এই জায়গায় লাল কেনো রে? তোর বয়ফ্রেন্ড আছে তাই না!
-- কি সব বাজে বকছেন! ঠোঁট লালের সাথে বয়ফ্রেন্ডের কি সম্পর্ক!
-- আমাকে কি নিজের মতো পুচকি ভাবিস! জানিস আমার কতোগুলো গার্লফ্রেন্ড আছে! আমার গার্লফ্রেন্ডদের ঠোঁটও অনেক সময় লাল থাকে।
তুর্য ভাইয়ার মুখে তার গার্লফ্রেন্ডদের কথা শুনে কেনো জানি না আমার কষ্ট হচ্ছে। বুকের বা পাশে নিজের অজান্তেই চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে।
-- জানিস তো ঠোঁটের কোণায় লাল কেনো হয়!
-- হুম।
-- কিভাবে জানলি!
-- মুভি তে দেখেছি।
-- এমনি এমনিই কি তোকে পুচকি বলি। তুই মুভিতে দেখেছিস আর আমি আমার গার্লফ্রেন্ডের ঠোঁটের স্বাদ নিয়েছি।
তুর্য ভাইয়ার কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। এর কারণ আমার জানা নেই। তার কথা আর শোনার ইচ্ছে হলো না তাই উঠে ঘরে চলে গেলাম। আচ্ছা একদিন হয়েছে যার সাথে দেখা হয়েছে সেই মানুষটার জন্য এই অনুভূতির অর্থ কি! আমি কি তুর্য ভাইয়াকে নিয়ে একটু বেশি চিন্তা করছি! হ্যাঁ তাই হবে। আর তাকে নিয়ে ভাববো না। কলেজে যেতে হবে, সামনে পরীক্ষা ৩ দিন পর আর যেতে পারবো না। বিয়ের ফাংশন শুরু হলে আব্বু আর কলেজে যেতে দেবে না।
কলেজের পোশাক পরে দুই বেনুণী করে কাধে ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে আছি। আজ অবশ্য হালকা একটু লিপষ্টিকও পরেছি। ঠোঁটের কাটা দাগটা ঢাকার জন্য। প্রতিদিন এই সময় এই রাস্তায় রিকশার রেস হয় আর আজকে একটা রিকশাও নেই। এতোদূরে কলেজ হেটে যেতে গেলে পায়ের দফারফা শেষ হয়ে যাবে। আনমনেই কথা গুলো ভাবছিলাম তখন সামনে একটা বাইক এসে ভিরলো।
বাইকে তুর্য ভাইয়া বসে আছেন। কিন্তু উনি বাইক পেলেন কোথায়!
-- উঠে বস পৌঁছে দিয়ে আসছি।
তুর্য ভাইয়ার প্রতি অনেক অভিমান হচ্ছে, তার এতোগুলো গার্লফ্রেন্ড থাকতে আমাকে কেনো বাইকে বসাবেন! কিন্তু এই অভিমানই বা কেনো হচ্ছে! তার আর আমার সম্পর্ক শুধুই কাজিন হিসেবে। অন্য কোনো সম্পর্ক তো নেই আমাদের। তুর্য ভাইয়া তুরি বাজিয়ে আবারো জিজ্ঞেস করলেন,
-- বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকবো না। আর একবার বলবো তবুও না এলে একাই যাবি এই রোদের মধ্যে।
কিছু না বলে বাইকে উঠে বসে পরলাম। এতোদূর হাটার একদম ইচ্ছে নেই। এর আগে বাইকে উঠেছি বলে মনে পরছে না। তাই ভয় হচ্ছে খুব যদি পরে যাই। তুর্য ভাইয়া যেমন মানুষ, পরে গেলেও তো ধরবে না। আমার জায়গায় তার অন্য কোনো গফ হলে ব্যাপারটা ভিন্ন হতো।
বাইক স্টার্ট দিতেই খেলাম একটা বিশাল ধাক্কা তুর্য ভাইয়ার সাথে। দোষটা আমারই ছিল। হাজারটা চিন্তায় আমি ভালোমতো বসতেই পারি নি।
-- এই পুচকি নাম তুই বাইক থেকে। নিজে তো মরবিই সাথে আমাকেও জেল এর ভাত খাওয়াবি।
-- না জেল এর ভাত খেতে হবে না। জেল এ শুকনো রুটি আর একটা পেঁয়াজ দেয়।
-- ঠাঁটিয়ে একটা চড় মারবো। অনেক বেশি বুঝিস তাই না। চুপচাপ ধরে বস।
তুর্য ভাইয়ার ধমকে আমি চুপসে গিয়েছি। এই লোককে বিশ্বাস হয় না, যদি সত্যি মেরে দেয়। কোনো কথা না বলে তুর্য ভাইয়াকে পিছন থেকে ধরে বসলাম। জীবনে প্রথমবার বাইকে উঠেছি। কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে। আমার সব বান্ধবীরা বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাইকে ঘুরতে যায় আর আমাকে গল্প শোনায়। আমিও আজকে বাইকে উঠেছি। আমিও সবাইকে শোনাবো।
কলেজের গেইটে এসে তুর্য ভাইয়া আমাকে নামিয়ে দিলেন। গেইটের আশেপাশের মেয়েরা কেমন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে তুর্য ভাইয়াকে। এতোক্ষণে ভাইয়ার দিকে ভালোমতো তাকিয়ে দেখলাম। তাকে দেখে এবার সত্যি আমি ক্রাশ খেলাম। অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে দেখতে। কালো জিন্সের সাথে হোয়াইট শার্ট পরে হাতা ফোল্ড করে রেখেছেন, চোখে সানগ্লাস। সব মিলিয়ে অসাধারণ। কিন্তু সব মেয়েরা তুর্য ভাইয়ার দিকে নজর দিচ্ছে। তুর্য ভাইয়াকে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বিদায় করে আমি ভিতরে ঢুকে গেলাম।
আমার বান্ধবীরা ভাইয়ার সাথে আমাকে দেখে ভেবেই নিয়েছেন সে আমার বয়ফ্রেন্ড। আচ্ছা তুর্য ভাইয়া যদি সত্যি আমার বয়ফ্রেন্ড হতো!! কেমন হতো! এতো হ্যান্ডসাম একটা বফ আমার থাকলে আমার সব বান্ধবীরা জ্বলে পুরে ছাই হয়ে যেতো। । । । । আজকে রিকশাওয়ালাদের কি হয়েছে কে জানে। একটা রিকশাও নেই। একা একা হেটে আসছিলাম তখন নজর পরলো রাস্তার অপর পাশে। দুইটা ছেলে দাড়িয়ে স্মোক করছে। তাদের দেখে সুবিধার মনে হচ্ছে না। এদিকে রাস্তাটাও কেমন ফাঁকা। ভয় ভয় করছে, তাই দ্রুত পদক্ষেপে চলছি। কিন্তু বলে না যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়। ছেলে দুইটা আমার পিছনেই আসছে। শুধু যে পিছনে আসছে তাই নয়, বাজে মন্তব্যও করছে। ভয়ের তীব্রতায় আমার কান্না পাচ্ছে। আমি কোনো কিছু না ভেবে দৌড়ানো শুরু করে দিলাম। কিন্তু জন্মগত গোলটুশি হওয়াতে দ্রুত দৌড়াতেও পারছি না। ছেলে দুটো প্রায় ধরে ফেলেছে আমাকে। তখনি মনে হলো আমি একটা দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলাম। দেয়ালটা আমাকে জরিয়ে ধরেছে কিন্তু দেয়াল কিভাবে ধরলো! মুখ তুলে তাকাতেই দেখি কালো হুডি পড়া একটা লোক আমার সামনে দাড়িয়ে। তার মুখটা দেখতে পারলাম না মুখে মাস্ক থাকার দরূণ। কিন্তু যতোটুকু বুঝতে পারলাম লোকটা আমার সাহায্য করার জন্যই এসেছেন। কারণ লোকটা ছেলে দুইটাকে আচ্ছামত ধোলাই দিচ্ছে। কিন্তু আমার ভয় এখনও কাটে নি। এই লোকটাও যদি ওদের মতোই হয়! না না এইখানে আর থাকা যাবে না। আমি পিছন থেকেই দৌড়ে পালালাম।
বাসায় এসে রুমের দরজা লক করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে হাপাচ্ছি। দুদিন ধরে আমার সাথে এতো আজিব আজিব ঘটনা কেনো ঘটছে! প্রথমে তুর্য ভাইয়া তারপর আবার রাতের লোকটা এখন আবার এই সমস্যা। আমি পিচ্ছি একটা মানুষ এতো সমস্যা কিভাবে সামাল দেবো!
🍁
ব্যালকোনিতে গিটার হাতে বসে আছে তুর্য। আকাশে মেঘ করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। আজ তুর্যর মনটা অনেক ভালো। খুব খুশি খুশি লাগছে। মনে হচ্ছে হাজার বছরের পিপাসা মিটতে শুরু হয়েছে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তের বাতাস শুরু হয়ে গেছে। প্রাণ খুলে সেই বাতাস উপভোগ করছে তুর্য।
হঠাত পিছন থেকে কেউ জরিয়ে ধরায় চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়ে তুর্য। জরিয়ে ধরা ব্যক্তিটির স্পর্শ অনুভব করতে চায় সে। কিন্তু স্পর্শগুলো খুব অপরিচিত মনে হচ্ছে। চোখ খুলে নিজের ছাড়িয়ে পিছন ঘুরতেই দেখে রুহি মুচকি হেসে দাড়িয়ে আছে। রুহিকে দেখে তুর্য ভ্রু কুচকে তাকায় তার দিকে। হয়তো চিনতে পেরেছে সে।
-- কি হলো তুর্য! এভাবে কি দেখছো! চিনতে পারো নি বুঝি?
-- রুহি! না চেনার কি আছে। ফুপি আম্মু তো কালকেই এসেছেন তুমি আজকে এলে যে!
-- আব্বুর সাথে এসেছি। আম্মু আর ভাইয়া কালকেই এসে পরেছিল।
-- হুম। বসো আমি আসছি।
-- কোথায় যাচ্ছো? তোমার সাথে দেখা করতেই তো এলাম।
-- দেখা তো হয়ে গেছে। চোখের তৃষ্ণা মেটাতে যাচ্ছি।
তুর্য ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
চারিদিক অন্ধকার হয়ে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সময় টা বিকেল হলেও মনে হচ্ছে সন্ধ্যার আগ মুহূর্ত চলছে। তুর্য গিটার হাতে ছাদের দরজার সামনে এসে থমকে যায়। সে তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এই বৃষ্টির ধারায় কোনো এক পরী তাদের ছাদে দাড়িয়ে ভিজছে। সাদা চুড়িদার পরে একটা মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। মেয়েটা অন্যদিকে মুখ করে দাড়িয়ে থাকায় তুর্য মুখটা দেখতে পারছে না। সাদা চুড়িদারটা বৃষ্টির পানিতে ভেজায় মেয়েটার শরীরের প্রায় প্রতিটা ভাঁজ তুর্যর চোখে পরছে। তুর্য বারবার দৃষ্টি সরাতে চাইছে কিন্তু কোনো এক অজানা আকর্ষণ তাকে টানছে মেয়েটার দিকে।
মেয়েটা সম্ভবত মাথা নাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা মুখে নিচ্ছে আর পিছন থেকে তার লম্বা চুলগুলো কোমড়ে বারি খাচ্ছে। তুর্যর খুব ইচ্ছে করছে একটা বার মেয়েটাকে ঘুরিয়ে তার মুখটা দেখতে। তুর্য গিটার টা নিচে রেখে সামনের দিকে আগাচ্ছে। সে নিজেও জানে না সে কি করতে যাচ্ছে।
মেয়েটার একদম কাছে গিয়ে দাড়িয়ে আছে তুর্য। ভিজে একাকার হয়ে গেছে কিন্তু অপেক্ষা করছে কখন মেয়েটা পিছন দিকে ঘুরবে আর সে তাকে একনজর দেখবে।
চলবে..
সেই_তুমি🍁
সিজন_০২
পর্ব_০৩
বেখেয়ালি_হিমু
ঠাসস্ করে একটা চড় বসিয়ে দিলো তুর্য হীরের গালে। চড়ের মাত্রা টা এতোটাই তীব্র ছিল যে হীর ছিটকে নিচে পড়ে যায়। এই মুহূর্তে তুর্যর কোনো হুশ নেই। হীরের ঠোঁটের কাটা জায়গা থেকে রক্ত ঝড়ছে সেটা তুর্যর চোখে পরছে না। রাগে তার কপালের রগ ফুলে গেছে। হীরের চুলের মুঠি ধরে নিচে থেকে উঠিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো তুর্য। সে কি করছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না। এক মিনিট আগে সে হীরকে চড় মেরেছে আর এখন হীরকে বুকে জরিয়ে ধরে আছে।
এমন একটা কান্ড ঘটে যাবে সেটা আমার চিন্তা ধারার বাইরে ছিল।
কিছুক্ষণ আগে,,,,,,,
বৃষ্টি শুরু হলে, প্রতিবারের মতো ছাদে চলে আসি ভেজার জন্য। বৃষ্টির সময় কেউ ছাদে আসে না। এজন্যই মনের সুখে ভিজতে পারি। কিন্তু আজ যখন ভিজছিলাম তখন হঠাত পিছনে ঘুরতেই দেখি তুর্য ভাইয়া একদম আমার গা ঘেসে দাড়িয়ে আছেন। এভাবে আচমকা ভাইয়াকে দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই। নিজেকে সামলাতে না পেরে পিছন দিকে পরে যেতে নিলে ভাইয়া আমার কোমড় আঁকড়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি আমি। ওই চোখ দুটোয় কেমন যেনো একটা নেশা লেগে আছে। নেশার ঘোর আমাকে তার দিকে টানছে। নিজের অজান্তেই তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট দুটো ছুঁইয়ে দিলাম আমি। । । । । । । । অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি ভাইয়ার সামনে। একটু আগে যেই কাজটা করেছি তার জন্য যেরা করা হচ্ছে আমাকে। জানি না আমার কি হয়েছিল কেনো করলাম এই কাজটা। লজ্জায় আমার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।
তুর্য ভাইয়া আমার দিকে কিছুক্ষণ প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আমাকে প্রশ্ন শুরু করলো,
-- কি ছিল ওটা?
ভাইয়ার কন্ঠ শুনেই আমার পা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে। কোনোরকম কাঁপতে কাঁপতে উত্তর দিলাম,
-- সরি আসলে কিভাবে কি হলো বুঝতেই পারলাম না।
-- এটা কি ছিল হীর!
-- সে কি তুমি মানে আপনি জানেন না! ওটা চুমু ছিল।
-- সেটা আমিও জানি যে চুমু ছিল। কিন্তু কারণটা জানতে চাই।
কি উত্তর দেবো বুঝতে পারছি না। আমার এমনটা করার পিছনে যে কোনো কারণ ছিল না সেটা কি সে মানবে? আচ্ছা আমি যদি ভাইয়াকে আমার বয়ফ্রেন্ড হতে বলি কেমন হবে! রাগ করবে না তো! না না রাগ করবে কেনো। আমি কি কোনো অংশে কম নাকি! যথেষ্ট সুন্দরী আমি। সাহস করে বলেই দেখি।
-- তুর্য ভাইয়া!
-- বল।
-- আপনি,, আপনি কি,, আপ,,
-- এতো ভনিতা না করে বলতো।
-- আপনি কি আমার বয়ফ্রেন্ড হবেন? আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড হলে আমার সব বান্ধবীরা জ্বলে পুরে মরে যাবে।
কথাটা বলতে দেরি হয়েছে কিন্তু তুর্য ভাইয়ার আমাকে চড় মারতে দেরি হয় নি।
বর্তমান,,,,
পরম আবেশে তার বুকে আগলে রেখেছেন আমাকে। এখন আমার খুশি হওয়া উচিত নাকি কষ্ট পাওয়া উচিত বুঝতে পারছি না। ব্যাপারটা অনেকটা জুতা মেরে গরু দানের মতো লাগছে। অনেকটা অভিমান নিয়ে ভাইয়াকে নিজের কাছে থেকে সরিয়ে দিলাম।
-- আপনি আমাকে চড় কেনো মারলেন! আমি কি দেখতে খারাপ! আমি দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী। এজন্য আমি ভালো কাউকে ডিজার্ভ করি। আমি আপনাকে আমার বয়ফ্রেন্ড হওয়ার প্রপোজাল দিতাম না। আজকে আপনি আমাকে কলেজে দিয়ে আসাতে আমার সব ফ্রেন্ডরা ভেবে নিয়েছে আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড। তাই আমিও ভাবলাম হলে ক্ষতি কোথায়! কাজিন কি বফ হতে পারে না!
-- আমাকে কবে বুঝতে পারবি বল তো তুই? তুই আমাকে বয়ফ্রেন্ড বানাতে চাইছিস শুধুমাত্র শো অফ করার জন্য। ভালোবাসে কাছে এলে ঠিকই আপন করে নিতাম। আমাকে বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে শো অফ করতে পারবি। কিন্তু এসবকিছুর মাঝে আমার মনটা কতোটা কষ্ট পাবে ধারণা আছে তোর?
-- এখানে কষ্ট পাওয়ার কি আছে! আমিও তো আপনার গার্লফ্রেন্ড হবো তাই না। আর আমাকে ভালোমতো দেখেছেন কখনও? হিয়ার থেকেও বেশি সুন্দর আমি আব্বু বলে।
-- সব ছেলেরা বাইরের সৌন্দর্য চায় না হীর। অনেকের কাছে ভালোবাসাটাই সব।
-- হুম বুঝলাম। এখন উত্তর কি হ্যাঁ নাকি না?
-- যেদিন ভালোবেসে আমার কাছে আসবি সেদিন ঠিকই আপন করে নেবো। আপাতত দশ হাত দূরে থাকবি আমার।
কথাটা বলে ভাইয়া সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি এখনও ভেবে পাচ্ছি না আমি ভুলটা কোথায় করলাম। আমার সব বান্ধবীদের রিলেশন তো এভাবেই শুরু হয়েছিল। ভালোবেসে কাছে কিভাবে আসে সেটা তো আমার জানা নেই!!!
🍂
ছাদ থেকে নেমে সোজা বাসায় চলে গেলাম। সেখানে গিয়েও শান্তি নেই হিয়া চেচামেচি শুরু করে দিয়েছে মেঝে ভিজে যাওয়াতে। আমি নিশ্চিত এই মেয়েটা আমার বোন হতেই পারে না। হিয়ার বকবক কানে না তুলে সোজা রুমে চলে গেলাম। এখন ভেজা কাপড় না ছাড়লে জ্বর নিশ্চিত।
🍁 🍁
ব্যলকোনিতে দাড়িয়ে স্মোক করছে তুর্য। এখনও ভেজা অবস্থাতেই আছে। সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে কষ্টগুলো উড়িয়ে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে। বুকের বা পাশটা ভীষণ ব্যথা করছে। আজ হীর নিজ থেকে তার কাছে এসেছিল আর সে ফিরিয়ে দিয়েছে। নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। সে তো এটাই চাইতো হীর তার কাছে আসুক, তাকে আপন করে নিক।
কিন্তু এভাবে তো চাইতো না। আপনমনেই হেসে ফেলে তুর্য। হীর আসলেই একটা পিচ্ছি। ভালোবাসার মতো জটিল সমীকরণ সে বুঝবে না। তুর্যর এটা আশা করাও ঠিক না। তুর্যর ভালোবাসা কি আদোও হীর কখনও বুঝবে না!! সিগারেটে শেষ টান দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো তুর্য।
বিছানায় বসে চকোলেট খাচ্ছি আর ভাইয়ার কথার মানে খুঁজছি। কি বললেন কিছুই বুঝি নি আমি। বড় হয়েছে তাই বলে এতো জটিল কথা বলতে হবে কেনো! একটু সহজ ভাবেও বোঝাতে পারতো বিষয়টা। ভালোবেসে ধরা দেওয়ার অর্থ কি! ভালোবাসা তো বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডের সম্পর্ক। এতোটুকু বিষয়কে এতো জটিল বানানোর কি দরকার।
রাতে সবাই ছাদে আড্ডা বসিয়েছে। আড্ডার মধ্যমণি তুর্য ভাইয়া। আমি চুপচাপ এক কোনায় বসে আছি। বিকেলের কাজের জন্য লজ্জা লাগছে। কেনো যেনো মনে হচ্ছে ভাইয়াকে ওভাবে বলাতে সে কষ্ট পেয়েছে। আমার নিজেরও খারাপ লাগছে। ভাইয়াকে সরি বলা উচিত। যেই ভাবা সেই কাজ। আড্ডা শেষে ভাইয়াকে ডাক দিলাম।
-- ভাইয়া! সরি! প্লিজ ক্ষমা করে দিন! আমার ওসব বলা ঠিক হয় নি।
-- Its ok. আর আমিও সরি তোকে ওভাবে চড় মারা উচিত হয় নি।
-- হ্যাঁ।
-- কি বললি!
-- না মানে আমি শুধু নিজের স্বার্থটাই দেখেছিলাম। আপনার দিকটাও ভাবা উচিত ছিল আমার।
-- যা ঘুমিয়ে পড়।
ভাইয়ার ব্যবহার আসলেই উদ্ভট। আমার কথার উত্তর না দিয়ে চলে গেলেন।
🍂
রাতে,,
হীর এলোমেলো ভাবে ঘুমিয়ে আছে আর তুর্য নেশা লাগানো চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যালকোনি দিয়েই হীরের ঘরে ঢুকেছে সে। হীরের মাথার কাছে বসে এক দৃষ্টিতে দেখছে তার ঘুমন্ত পরীর মুখখানা। আস্তে করে হীরের গালে হাত রাখতেই দেখলো গালে এখনও কালচে দাগ পরে আছে। থাপ্পড়টা দেওয়াতে হীর অনেক ব্যথা পেয়েছে বুঝতে পারছে সে। ঠোঁট টাও ফুলে গেছে। হীরের গালে আর ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে হীরকে জরিয়ে ধরলো তুর্য।
-- তুই কেনো বুঝতে পারিস না তোকে কতোটা ভালোবাসি। এতো বছর পর যেদিন তোকে প্রথম দেখলাম ইচ্ছে হয়েছিল তোকে কলিজার ভিতর ঢুকিয়ে রাখি। কিন্তু তুই তো আমাকে বুঝতেই পারিস না। তোর মনে কি একবারের জন্যও আমার চিন্তা আসে না? সবকিছু তোকে খুলে বলতেও পারি না। কিভাবে তোকে সব বলবো আমি যে নিরুপায়। তুই কি একবারের জন্যও আমাকে ভালোবাসতে পারিস নি!
কথাগুলো বলতে বলতে দুচোখ বেয়ে অশ্রু গরিয়ে পরে তুর্যর। হীরের কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো। এই মুখটার দিকে সারাজীবন তাকিয়ে থাকলেও হয়তো তার পিপাসা মিটবে না। হীরকে আষ্টে-পৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলো তুর্য।
🍁
ঘুমের মধ্যে বারবার মনে হয়েছে কেউ আমাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে। কিন্তু ঘুম ভাঙার পর কাউকেই খুঁজে পাই নি। জানি না কি হচ্ছে আমার সাথে এসব। সবসময় মনে হয় কেউ আমার উপর নজর রাখছে।
কলেজে যাওয়ার জন্য প্রস্তত হচ্ছিলাম তখন আম্মু ঘরে এলো।
-- হীর! তুর্যদের বাসায় একটু কম যাবি এখন থেকে। তাফসির সাথে দরকার হলে ফোন করে ডেকে আনিস। ওদের বাসায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
কথাটা বলে আম্মু ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমাকে আর প্রশ্ন করার সুযোগ দিলেন না। কিন্তু তুর্য ভাইয়াদের বাসায় যেতে মানা করলো কেনো? ভাবতে ভাবতে বাসা থেকে বের হলাম। এখন রিকশার জন্য দাড়িয়ে থাকতে হবে। তখন সেখানে তুর্য ভাইয়া বাইক নিয়ে হাজির হলেন। আমাকে বললেন তিনি কলেজে নামিয়ে দিবেন। আর আমিও কি মনে করে যেনো উঠে পরলাম।
-- ধরে বস ভালোমতো।
-- ধরেছি তো।
-- কালকের মতো পরে গেলে খবর আছে।
ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে বসলাম। কিন্তু ভাইয়া বাইক কবে কিনলেন!
-- বাইকটা কার ভাইয়া?
-- কার মানে কি! আমার বাইক।
-- আপনি তো তাফসি আপুর বিয়ের পর চলে যাবেন তাহলে কেনো কিনলেন?
-- কে বলেছে চলে যাবো? এখন থেকে দেশেই থাকবো। খুব শীঘ্রই বিজনেস দেশে সেট করে ফেলবো।
-- ওহ। হুম ভালোই হবে। ভাইয়া! আপনি কি এখনও কালকের জন্য রাগ করে আছেন?
-- রাগ করে থাকলে তোকে নিয়ে এতোদূর আসতাম না। রাস্তার মাঝে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতাম।
ভাইয়ার কথা শুনে আমার চোখ কপালে উঠে গেছে। এই লোক বলে কি!
আমাকে কলেজের গেইটে নামিয়ে দিয়ে ভাইয়া চুল ঠিক করছেন। কালকের মতো আজকেও মেয়েরা ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েগুলোও না মাত্রাতিরিক্ত ছ্যাঁচড়া। কোনো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই চোখ দিয়ে গিলে খায়। কেনো যেনো খুব হিংসা হচ্ছে মেয়েগুলোর এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে।
আচমকা আমার গালে চুমু বসিয়ে দিলেন তুর্য ভাইয়া। এভাবে সবার সামনে এমন কাজটা করায় আমি থ মেরে দাড়িয়ে আছি। ঘটনা এখানেই শেষ হলে পারতো। কিন্তু না ঘটনা ঘটা আরো বাকি ছিল। বাইক থেকে নেমে ভাইয়া আমার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেলেন। আমি পিছন থেকে আমার হাত টেনে ধরছি কিন্তু ভাইয়া সজোড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমার বান্ধবীদের সামনে নিয়ে আমাকে দাড় করিয়ে দিলেন।
নিশ্চিত সবাইকে বলে দেবেন তিনি আমার বফ নয় বরং কাজিন। সবার সামনে আমার এতোটুকু সম্মাণ আর থাকবে না। চোখমুখ খিচে ধরে বার বার দোআ করছি যাতে ভাইয়া হাটে হাড়ি না ভাঙে। কিন্তু ভাইয়া যা করলেন তাতে আমি অবাকের শেষ সীমায় পৌঁছে গেলাম। ভাইয়া সবার সামনে আমাকে হাটুতে বসে প্রপোজ করলেন।
এখনও ভাইয়া আগের পজিশনেই বসে আছেন আর আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। পুরো কলেজ থ মেরে দাড়িয়ে আমাদের দেখছে। আমিও ফ্রিজ হয়ে সবটা দেখছি।
-- জান হাতটা দাও না!
ভাইয়ার মুখে জান কথাটা শুনে আমার জান গলা অব্দি এসে পরেছে। যেকোনো সময় বেরিয়ে যাবে। আমি হাত দিচ্ছি না দেখে ভাইয়া নিজেই আমার হাত টা নিয়ে একটা রিং পরিয়ে দিলেন। রিং পরানো অব্দিও মানা যেতো কিন্তু এর পর ভাইয়া আমার হাতে একটা চুমু খেলেন। আমি এখনও মূর্তির ন্যায় দাড়িয়ে আছি। আমার বান্ধবীরা সবাই তুর্য ভাইয়ার সাথে ভাব জমাচ্ছে কিন্তু এখন আমি সেটা দেখছি না। আমি শুধু ভাবছি হলো টা কি।
ভাইয়া সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে আমাকে সেখান থেকে নিয়ে চলে এলেন। বাইক চলছে আপন গতিতে। আর আমি পিছনে চিন্তামনির মতো বসে আছি।
একটা রেষ্টুরেন্টের সামনে এসে ভাইয়া বাইক থামালেন। এবারো হাত ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে গেলেন। লোকটা কি করতে চাইছেন বুঝতে পারছি না। একটা টেবিলে আমাকে বসিয়ে খাবার অর্ডার করলেন। আমার ফেভারেট বিরিয়ানি অর্ডার করেছেন। আচ্ছা সে কিভাবে জানলো বিরিয়ানি আমার পছন্দ!!
-- আপনি কিভাবে জানলেন আমার বিরিয়ানি পছন্দ?
-- নিজেকে আয়নায় দেখেছিস? কেমন গোলটুশি তুই! দেখলেই বোঝা যায় রিচ ফুড পছন্দ করিস।
ভাইয়া আমার ইগো নামক পাখিটাকে আহত করেছেন। একটু স্বাস্থ্য ভালো আমার তাই বলে এভাবে বলতে পারে না সে।
-- কলেজে ওগুলো কি ছিল হ্যাঁ! আপনি না বললেন বয়ফ্রেন্ড হবেন না তাহলে এখন কেনো হ্যাঁ করলেন?
-- আমি হ্যাঁ কখন করলাম! ওগুলো তো অভিনয় ছিল।
-- মানে!
-- মানে তোকে তো আর সবার সামনে অপমানিত হতে দিতে পারি না তাই না। তাই একটা নাটক ছিল এটা। এখন সবাইকে বলবি তোরও বফ আছে।
ভাইয়ার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। এই লোকটা আসলেই উদ্ভট। কখন কি করে কেউ বুঝতে পারে না। আমি তো একদমই না। তখনই সেখানে বিরিয়ানি চলে এলো। আর আমি দীন দুনিয়া ভুলে বিরিয়ানির উপর হামলে পরলাম।
পেট ভরে খাওয়া শেষে আবার শুরু হলো বাইক রাইড। ভাইয়ার সাথে আজকে কাটানো দিনটা আমার সবসময় মনে থাকবে। হয়তো এতোটা খুশি আমি আগে কখনও হই নি। বাসায় সবাই আমাকে আদর করে। কিন্তু একমাত্র আব্বু ছাড়া তেমন কেউ একটা করে না। বড় চাচি, আম্মু, ছোট চাচা-চাচি সবাই আমার থেকে একটু দুরত্ব বজায় রাখে। এই জিনিসটা আমায় ভীষণ কষ্ট দেয়। কিন্তু আমি এর কারণ জানি না। খুব ভালো লাগছে আজ ভাইয়ার সাথে। মনে হচ্ছে আমি খোলা আকাশের কোনো মুক্ত পাখি। তুর্য ভাইয়ার মায়ায় পরে যাচ্ছি আমি। তার উদ্ভট কাজ গুলোও এখন আমাকে তার দিকে টানে। আচ্ছা এই মানুষটা কি সারাজীবন এভাবেই আমাকে সুখে রাখবে?
কলেজ আওয়ার শেষ হওয়ার সময়ে ভাইয়া আমাকে বাড়ির গেইটে নামিয়ে দিলেন। ভাইয়া বাইক ঘুরিয়ে চলে যেতে নিলে আমি পিছন থেকে ডাক দিলাম।
-- ভাইয়া! কালকেও কি এভাবে ঘুরতে নিয়ে যাবেন?
-- কেনো ক্লাস নেই তোর?
-- আছে। কিন্তু এভাবে কেউ কখনও আমাকে সময় দেয় নি। আপনার সাথে কাটানো আজকের দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিল। আমি কি আপনার কাছে আরেকটা দিন চাইতে পারি?
হীরের আকুতি ভরা কন্ঠে তুর্যর চোখ ভরে এসেছে। কিন্তু সে তার চোখের পানি হীরকে দেখাতে চায় না। তাই হু হা কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলো। হীর তুর্যর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। নিজের অজান্তেই এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো হীরের চোখ দিয়ে।
বিকেলে কোনো কারণ ছাড়াই বেশ কিছুক্ষণ কান্না করলাম আমি। মাঝে মাঝেই আমার সাথে এমন হয়। কোনো কারণ ছাড়াই চোখে পানি এসে পরে।
সন্ধ্যার পর তুর্য ভাইয়াদের বাসায় সবাই বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে। আম্মু আগেই আমাকে মানা করে দিয়েছে সেখানে যেতে। খুব কষ্ট হচ্ছে। বরাবরের মতো এবারো আমাকে বাড়ির সবার থেকে আলাদা করে দেওয়া হলো। ছাদের এক কোনায় দাড়িয়ে আছি, চোখ দিয়ে আপনা আপনিই পানি পরছে। হঠাত কেউ একজন একটা কফি মগ এগিয়ে দিলেন। সেদিক ঘুরতেই দেখি তুর্য ভাইয়া হাতে দুইটা কফি নিয়ে দাড়িয়ে আছেন।
-- এভাবে চোখের পানি ফেললে তো শরীরে লবন কমে যাবে। কফি খেয়ে মুডটা ঠিক কর।
-- আপনি এমন উদ্ভট কথা কেনো বলেন সবসময়?
-- আমার উদ্ভট কথায় তুই বিরক্ত হয়ে যাস যে তাই বলি।
-- কফিটা ভালো হয়েছে কে বানিয়েছে।
-- আমি।
-- আপনি এতো ভালো কফি বানাতে পারেন জানা ছিল না।
-- এমন অনেক কিছু আছে যা তুই জানিস না।
-- মানে!
-- এখানে কি করছিলি?
-- নাচছিলাম।
-- তাই নাকি আমাকে একটু নেচে দেখা তো।
-- আপনি সত্যি উদ্ভট একটা মানুষ।
-- হীর!
-- হুম!
-- আমাকে ভালোবাসিস?
-- এটা কেমন প্রশ্ন?
-- বাসিস না তো! মগটা দে নিচে যাবো।
তুর্য ভাইয়া আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন। আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি এক দৃষ্টিতে। তার এভাবে চলে যাওয়ায় আমার কষ্ট হচ্ছে। আচ্ছা ভাইয়া কি আমাকে ভালোবাসেন? এজন্যই কি আমার এতো কেয়ার করছেন? না না সে আমার কেয়ার করে না। সে তো,,, তাকে তো আমি বুঝতেই পারি না। তার সবকাজ উল্টো আমাকে কনফিউজ করে দেয়।
চলবে..