মাছ ধরা এক ধরনের নেশা আর নেশা মানেই প্রতিদিনের এক নিয়ম মাফিক কাজ। সারাদিন যতই ব্যস্ততা থাকুক, যতই মনকে দৃঢ় করা হোক না কেন ঠিক সময়েই সঠিক বা বেঠিক কাজটি আপনার মাথায় চেপে বসবেই । মাছ ধরা অনেকটা অপেক্ষার পর অপেক্ষা মত , ভালো কিছুর প্রত্যাশা থাকে। হীরা কিংবা কোকেনের খনিতে খননকারীরা যেমন সহজে আঁচ করতে পারে না কোথায় বা কত কাছে অমূল্য সম্পদটি লুকায়িত। ঠিক তেমনি টেটা দিয়ে মাছ ধরাও যেন হারিয়ে যাওয়া কিছু খোঁজে বের করা। অগভীর পানির কোন এক জায়গায় সকলের অগোচরে থাকা মাছটি আপনার ভাগ্যের প্রতিক হিসেবে অপেক্ষা করছে এখন শুধু দক্ষতার প্রমান দিয়ে শিকার করতে হবে।
এটা আবার ধৈয্যের পরীক্ষাও। প্রাথমিকে পড়া বাচ্চাদের মত অস্থির স্বভাবের মানুষের জন্য এ কাজ নয়।
চৈত্রের খড়রোদে যখন নদীনালা শুকিয়ে আসে তখন বৈশাখের ঝড়োবাতাস ও বৃষ্টির পানিতে প্রকৃতিতে কিছুটা স্বস্তি ফীরে আসে।নতুন পানিতে দেশীয় মাছগুলি দিকদিশাহীন ভাবে এদিক সেদিক ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতিদিনের মত গতকাল টর্সলাইটের তীব্র আলোতে মাছ খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। চলার পথে ৪/৫ টা সাপের সাক্ষাত এখন আর তেমন ভয়ের উদ্রেক করে না। সাপ থাকাটা যেন খুব স্বাভাবিক এক প্রাকৃতিক ঘটনা।বরং যেখানে সাপ থাকেনা সেখানে মাছও তেমনটা থাকে না এটা একটা সাধারন অবজারবেশন । তবু সাবধানে চলতে হয়। মাছের দিকে নজর রেখে ভুল করে সাপের উপর পা রাখলে সাপ কিন্তু ভুল করে কামড় না দিয়ে আপনাকে ছেড়ে যাবে না।
যারা সাপের কামড় খায় তাদের যে সাপ শখ করে এসে কামড়ে দিয়ে যায় তা না বরং ব্যক্তি নিজেই সাপের কাছে যেয়ে কামড় খেয়ে আসে।
টর্সের তীব্র আলোতে পথ চলতে চলতে প্রান্তরের শেষের দিকটায় নালার কাছে তিনটা সাপ দেখতে পাই। চারদিকে তখন ঝিঝিপোকা ও ব্যাঙের ডাক শুনা যাচ্ছে । কালো অন্ধকার ভেত করে কয়েকটা জোনাকি আলো ছড়াচ্ছে। শীতল অথচ দমকা বাতাসে আশপাশের ঝোপঝাড়গুলি নুইয়ে পড়ছে।
আমার শরীলটা হঠাৎ কেমন যেন ভারি ভারি ও অবসন্ন লাগতে শুরু করে।
মনে হচ্ছিল এখানে যদি একটু বসা যেত তবে শরীরটা একটু ভালো লাগত।
কিন্তু একি!!! সাপ তিনটা এত সাদা কেন??? এমন সুরু সাদা সাপ তো কখনো দেখিনাই।
তখন আমার মনে ধারনা হতে শুরু করে হয়ত আমি এক অস্বাভাবিক পরিবেশে অস্বাভাবিক সময় অতিক্রম করে যাচ্ছি।
মোহগ্রস্ততার মাঝে মন যখন বিভিন্ন অশরীরী চিন্তায় ব্যস্ত তখন কাছেই বড়সর কোন মাছের আওয়াজ শুনতে পাই। একটু পাশফীরে মাছের দিকে আলো দেই কিন্তু কোথায় কি!!
ঘোলাটে পানি ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ল না। বরং কলকল শব্দে পানি নালাতে গড়িয়ে পড়ছে।
উপায়ান্তর না ভেবে দ্রুতপায়ে হাটতে শুরু করলাম। হাঁটার সময় মনে হল পা যেন ঝিরঝির করে কাপছে ও প্রান্তের পানি আগের চেয়ে অনেকটাই বেড়ে গেছে। পানির কারনে ঠিক মত হাটা যাচ্ছে না। কেউ যেন আমার পায়ে শিকল পড়িয়ে রেখেছে।
উত্তরের আকাশে তখন ঘনঘন বিঝলি চমকাচ্ছে। বড়বড় দুইক্ষেত পেরিয়ে যখন তৃতীয় ক্ষেতে পা রাখলাম তখন ঝুম বৃষ্টি শুরু হল। টর্সলাইটের আলোতে সাদা বৃষ্টির ফোঁটা ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।
বিশাল প্রান্তরে বৃষ্টি বন্ধি হয়ে তখনো হেটে চলছি। প্রতিটা সেকেন্ড কে প্রতিটা ঘন্টা মনে হতে লাগল। মনের ভিতর নানা আশংকা শুরু হল। আমি কি ঠিক পথে এগুচ্ছি না প্রান্তেরের মাঝেই বৃত্তাকারে ঘুরছি?? পথ হারানোর শংকা কাটতে না কাটতেই পাশে কোথাও বিকট শব্দে বজ্রপাত হল।
দেশে বজ্রপাতে বছরে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। হয়তো আগামিকাল পত্রিকার কোন এক কলামে ছোট্ট করে লেখা থাকবে, অমুক জায়গায় বজ্রপাতে এক যুবকের মৃত্যু।
যাইহোক অবশেষে রাস্তায় এসে উঠলাম। তখনো অঝোর ধারায় বজ্রবৃষ্টি হচ্ছে।
পিচ্ছিল কাদায় রাস্তায় মাখামাখি অবস্থা। ক্ষণেক্ষণে পা পিছলে যাচ্ছে। আরেকটু সামনে আসতেই একটা পুকুর পড়ল। বৃষ্টির জল হুড়মুড়িয়ে পুকুরে পড়ছে । দেখলাম পুকুরের মাছগুলি যেন সব পাগল হয়ে গেছে। বন্ধি দশা থেকে মুক্তির জন্য জল চিড়ে উপরে চলে আসতে চাইছে।
অবসন্ন মন তখন বারবার বলতে লাগল এখানে থেকে যাই। মাছের জন্যই তো আসা। এইতো মাছ, চারদিকে মাছ। রাস্তায় মাছ, ছোট চরাক্ষেতে মাছ, চটি পানিতে মাছ।
এখন তো আমাকে মাছ খুঁজতে হবে না।
......
সকালে মিষ্টি রোদে পুকুড় পারে রাখা বেঞ্চিতে বসে আছি। পাশে এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ এক মুরুব্বী। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন ও অবসর সময়ে কিতাব পড়েন। গতকাল রাতের ঘটনা শুনে তিনি বললেন সাপ তিনটি ছিল মূলত জিন। জিনদের পছন্দের সুরত হল সাপের আকার ধারন করা ও খাবার হল হাড় নয়তো শুকনা গোবর। আমরা মুসলিম। আল কোরআনে জিন্ জাতি সম্পর্কে বর্ননা আছে। আমাদের এটা বিস্বাস করতে হবে।
...."""""""
মাছ ধরা এক নেশা... """"
...
NB : আমি কখনো এমন পরিস্থিতির শিকার হয়নি কিন্তু আমি প্রতিদিন মাছ ধরি। এটা একটি কল্পনা প্রসূত লেখা
6
14
মাছ ধরা এক নেশা, এই কথাটার মাঝে একটা নেশা নেশা ভাব আছে। বর্ষাকালের কাদার ভিতর নদীতে মাছ ধরার মজাই আলাদা।। তার ওপর যদি হালকা হালকা বৃষ্টি পড়ে।।