রবীন্দ্রনাথ সময়কে কেটেছিলেন, আর সময় কেটেছিল কাদম্বরীকে।

12 18
Avatar for tariqmahmud0
3 years ago

BOOK

একজন আরব দার্শনিক, নামটা ঠিক ঠাওর করতে পারছি না, বলেছিলেন, ‘সময় হলো খোলা তলোয়ারের মতো, তুমি যদি সময়কে না কাটো, তবে ঠিক যেন সময় তোমাকে কাটবে।’ রবীন্দ্রনাথ সময়কে কেটেছিলেন, আর সময় কেটেছিল কাদম্বরীকে।

১২০ পৃষ্ঠাজুড়ে কাদম্বরী তাঁর সুইসাইড-নোট লিখেছেন প্রাণের রবিকে উদ্দেশ্য করে। ‘এটা ঠিক সুইসাইড-নোট নয়, এক সুদীর্ঘ চিঠি!...না, চিঠিও নয়।...এক হতভাগ্য তরুণীর বেদনাবিধুর উপাখ্যান, যিনি রবীন্দ্রনাথের প্রাণের সখা নতুন বউঠান কাদম্বরী দেবী।’ সেখানে উঠে এসেছে জ্যোতিদার সঙ্গে তাঁর ১৬ বছরের দাম্পত্য জীবনের কষ্ট আর অবহেলা। কাদম্বরী ছিলেন ঠাকুরবাড়ির বাজার সরকার শ্যাম গাঙ্গুলির তিন নম্বর মেয়ে। আইসিএস সেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথ আর তাঁর বিলেত-ফেরত স্ত্রী জ্ঞানদানন্দী মনে করতেন কাদম্বরী কখনই জ্যোতিরিন্দ্রের যোগ্য নয়। ঠাকুরবাড়িতে কাদম্বরীর বাবা আত্মীয় হিসেবে কখনোই সম্মান পাননি। সামাজিক লজ্জার ভয়ে একসময় বাবা শ্যাম গাঙ্গুলিকে ঠাকুরবাড়ি থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গাজীপুরের বাড়িতে। এসবই কাদম্বরীকে দহন করত। ঠাকুরবাড়িতে চিরকালই তাঁকে ‘আদরের উপবাস’ সইতে হয়েছে। বইটিতে কাদম্বরীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গীতল প্রেমের দারুণ কাহিনি আছে, বাড়তি আছে দুজনের তুমুল শ্রাবণের চাষবাস আর তার বুককাঁপানো বর্ণনা! আছে কাদম্বরীর সঙ্গে বিহারীলালের মিষ্টি প্রেমের আভাস। কাদম্বরী গান পারতেন, অভিনয় পারতেন, সাহিত্য আর কবিতার দারুণ সমঝদার ছিলেন। ঠাকুরবাড়ির অবহেলা-অপমান থেকে যিনি তাঁকে আগলে রাখতেন, যাঁর প্রেম তাঁর যাপিত জীবনের সব দুঃখ ভুলিয়ে দিত, সেই রবীন্দ্রনাথ যখন বিয়ে করে ফেললেন, তখনই তিনি সত্যিকারের নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন। বইটি দারুণ, কিন্তু তার চেয়ে দারুণ বইটির ভূমিকা। রবীন্দ্রনাথের তখন ২৩, কাদম্বরী দেবীর ২৫; ১৮৮৪ সালের ১৯ এপ্রিল আফিম খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন নতুন বউঠান, মারা যান ঠিক দুই দিন পরে। কেন আত্মহত্যা করেছিলেন রবির প্রাণের সখা কাদম্বরী? কাদম্বরী কি কোনো সুইসাইড-নোট লিখেননি, নাকি লিখেছিলেন, যা পুড়িয়ে ফেলা হয়..? লেখক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ভূমিকায় জানিয়েছেন, ‘চিঠির সর্বাঙ্গ ঝলসে গেছে আগুনে।...ঝলসানো চিঠিটাকে কে বাঁচিয়েছিলেন আগুন থেকে? রবীন্দ্রনাথ?’ ১২৭ বছর আগের সেই রহস্যাবৃত সময়ে আলো ফেলেছেন লেখক। রবীন্দ্রনাথের বিয়ের মাত্র চার মাস পরেই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্ত্রী, রবির নতুন বউঠানকে কেন আত্মহননের পথ বেছে নিতে হলো? ঠাকুরবাড়ির বউ হয়ে আসার পর কেমন কাটছিল তাঁর জীবন? ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের নারীরা কেন তাঁকে সহজভাবে নিলেন না? রবীন্দ্রনাথ কি পারতেন তাঁকে আত্মহত্যা থেকে বাঁচাতে? উপন্যাসটি লেখার আগ পর্যন্ত একটি প্রশ্নে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন লেখক, কাদম্বরী তাঁর সুইসাইড-নোটে ‘কী’ লিখতে পারতেন? কার উদ্দেশে তিনি তাঁর সুইসাইড-নোট লিখতেন? লেখক তাঁর সৃজনশীলতায় দেখতে পেয়েছেন, কাদম্বরীর আত্মহননের ১২৭ বছর পর সুইসাইড-নোটটি হঠাৎ উদ্ধার হলো; পিতৃ-আদেশ অমান্য করে সেটিকে আগুনে ছাই হতে যিনি দেননি তিনি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ; কল্পনার মিশেলে সেই ঝলসানো চিঠির করুণ পাঠোদ্ধার করার দাবি করেছেন রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।
মরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় কাদম্বরীর আফিম খাওয়ার আবছা দুই দিন সম্পর্কে লেখক জানিয়েছেন, তাঁর শেষ চিকিৎসার জন্য সাহেব ডাক্তার ডি বি স্মিথকে আনা হয়েছিল ৪০০ টাকা খরচ করে, ওষুধ কেনা হয়েছিল ২৫ টাকায়, ডাক্তারকে টাকা দেওয়া হয়েছিল চেকে; সঙ্গে বাঙালি ডাক্তার ছিলেন নীলমাধব হালদার আর সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়; তেতলার ঘরে রাখা হয়েছিল তাঁকে, যে ঘরে কেউ থাকতেন না; অন্ধকার সেই ঘরে দেড় টাকা খরচ করে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল; কিন্তু বাতির আলোয় নিসাড় পড়ে ছিলেন কাদম্বরী, তাঁর শরীর থেকে প্রাণের আলো ক্রমেই চলে যাচ্ছিল। সবার সমবেত প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে ২১ এপ্রিল মারা গেলেন কাদম্বরী। লোপাট করা হলো সব প্রমাণ; কোথাও ছাপা হলো না তাঁর মৃত্যুর খবর।
কাদম্বরী দেবীর সুইসাইড-নোট একটানে পড়ে ফেলার মতো এক দুর্ধর্ষ বই, ভাষা দারুণ প্রাঞ্জল। বইটি শেষ করলে ১২৭ বছর আগের এক বঞ্চিত-লাঞ্ছিত নারী কাদম্বরীর জন্য আপনার হূদয়ে প্রেম, কষ্ট আর ভালোবাসা একাকার হয়ে দলা পাকিয়ে উঠবে। শেষ পৃষ্ঠায় কাদম্বরী প্রাণের রবিকে লিখেছেন, ‘ঠাকুরপো, আমার মৃত্যুর জন্যে দায়ী আমার অমোঘ নির্বোধ নিয়তি। পাপ যাকে বিদ্ধ করে না। পুণ্য যাকে বদলাতে পারে না। আমাকে মনে রেখো—এ কথাটুকু বলার স্পর্ধাও আমার নেই। আমার সব গেছে গো সব গেছে। রবি—শুধু ভালোবাসাটুকু যায়নি। আজও তোমাকে খুব ভালোবাসি। এইটুকু বিশ্বাস কোরো।’
—ইতি তোমার নতুন বউঠান।

 কাদম্বরী দেবী

Collected from wikipidia: ⬇⬇⬇⬇⬇⬇⬇⬇⬇⬇⬇⬇

কাদম্বরী দেবী

  • জন্ম

মাতঙ্গিনী, কাদম্বরী গঙ্গোপাধ্যায়
৫ জুলাই ১৮৫৯
কলকাতা , পশ্চিমবাংলা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে ভারত)

  • মৃত্যু

এপ্রিল ২১, ১৮৮৪ (বয়স ২৪)
ঠাকুরবাড়ি, কলকাতা

  • মৃত্যুর কারণ: আত্মহত্যা

  • জাতীয়তা: ভারতীয়

  • নাগরিকত্ব: ভারতীয়

  • আদি নিবাস: কলকাতা

  • দাম্পত্য সঙ্গী : জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর (বি. ১৮৬৮)

  • পিতা-মাতা:

    শ্যাম গাঙ্গুলি (পিতা)

    ত্রৈলোক্যসুন্দরী (মাতা)

আত্মীয়: ঠাকুর পরিবার

বইটি পড়তে চাইলে কমেন্ট করুন....

stay cool stay safe and forget to subcribe

15
$ 0.00
Avatar for tariqmahmud0
3 years ago

Comments

জানা ছিল না। অনেক কিছু জানলাম পোস্ট টা পড়ে। সুন্দর 💖💖

$ 0.00
3 years ago

Ok vaia.. Tnx for sharing.. 💖

$ 0.00
3 years ago

Welcome apu.😍

$ 0.00
3 years ago

এই বইটি আমার পড়া হইনি। আপনি কি সম্পূর্ণ পড়েছেন?

$ 0.00
3 years ago

yes brother... You have to cry after reading this book.

$ 0.00
3 years ago

Don't afraid 🥺

$ 0.00
3 years ago

thanks dear

$ 0.00
3 years ago

welcome my dear brother😍😍

$ 0.00
3 years ago

Informative article

$ 0.00
3 years ago

thanks ❤

$ 0.00
3 years ago