আজকের সমাজে যৌতুক শব্দের ব্যবহার প্রায় কমেই গেছে। এখন একটি বাক্য খুব প্রচলিত " মেয়েকে খুশি করার জন্য মেয়ের সাথে কিছু দিতে চাইলে দিবেন। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। " এই বাক্যটা যৌতুক শব্দটা থেকে অনেক বেশি ভয়ংকর আর এর অর্থটাও অনেক কঠিন। যৌতুক শব্দ প্রচলনকালে ছেলের বাড়ি থেকে বলে দেওয়া হতো কি কি লাগবে। কিন্তু নতুন এই বাক্যে তেমন কোনো জিনিসের কথা উল্লেখ না থাকায় পাত্রপক্ষের মন-মর্জি বুঝে তাদের বিভিন্ন জিনিসপত্র দিতে হয়। আবার তাদের মন-মর্জি বুঝতে না পারলে হয় আরেক কেলেংকারী। শুরু হয় নিত্য দেখে আসা কিছু ঝামেলা। অবশ্য বাঙালি মেয়েদের এসব অভ্যাস আছে। ঊর্মিলার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটবে বলে মনে হয় না। লেখাপড়া শেষ করে চাকরির আবেদনে তার দিন কাটতো। আর আজ তার বিয়ে। সে তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিল যে তার কোনোদিন বিয়ে হবে। চেহারা মাশাল্লাহ। কিন্তু সে তো শ্যামলা। তার উপর একটু খাটোও বটে। আমাদের সমাজে কি একসাথে এতো ত্রুটি মেনে নেওয়া যায় বলুন। কম পাত্র তাকে দেখতে আসেনি। শত খানেক তো হবেই। শেষ পর্যন্ত এক বিকেলের আয়োজনের মাধ্যমে পাত্রপক্ষ তাকে পছন্দ করেছিল। না না...... তারা মুখে একবারো বলেনি যে মেয়ে তাদের পছন্দ হয়েছে। দেখতে এসে বলেছে মেয়ে তো শ্যামলা আবার খাটোও। হাতের আঙ্গুলগুলোও কেমন জানি। ছোট আবার তেরাবেকাও। বাসায় গিয়ে ছেলের সাথে কথা বলে জানাব না হয়।
তারপর মোবাইল কলে বাকি কথা।ঘটকের মাধ্যমে জানানো হয় ছেলে মেয়ে দুজকে খুশি রাখার জন্য মেয়ের সাথে কিছু দিয়ে দিলে ভালো হবে।একটা ফ্লেট পছন্দ হয়েছে ছেলের।কিন্তু ছেলে মাত্র চাকরিতে জয়েন দিয়েছে। ফ্লেটের অর্ধেক টাকা যদি মেয়ের বাড়ি থেকে দেওয়া হয় তাহলেই বিয়েটা হবে আর কি। মেয়ের বাবা তো এতেই রাজি। আজকাল মেয়েদের গুণ দেখে নয় বরং ত্রুটি বা দুর্বলতা দেখেই তাদের বিয়ে করা হয়। ঊর্মিলা ঘরের সব কাজই পারে। ভালো গান গাইতে জানে, হাতের কাজও করতে পারে। কিন্তু এসব কথার মধ্যে শুধু বাসার কাজ পারে কি না তাই জানতে চাওয়া হয়েছিল তার কাছে। যাক এসব নিয়ে ঊর্মিলার মনে তেমন কোনো দুঃখ নেই। বিয়ের আগে তার হবু বরের সাথে কথা বলতে গিয়ে সে বুঝতে পারলো তার হবু বর তার পরিবারের কাছ থেকে ডায়মন্ডের রিং আশা করে। ঊর্মিলা তার মা বাবাকে বলে আজ তার বরের জন্য এই রিং এর ব্যবস্থাও করে। ঊর্মিলার ছোট আরও ২ বোন আছে।তারা আজ খুব খুশি। বোনের বিয়ে বলে কথা। ঊর্মিলা কাগজ কলমে সাক্ষর দিতেই তার বর ফ্ল্যাটের কাগজে স্বাক্ষর করে ফ্ল্যাট টিকে নিজের করে নেয়।
ঊর্মিলা আজ অনেক কাদছে। স্বাভাবিক মেয়েরা কাদবেই। তার মা বাবাও কাদছে। কিন্তু তার মা বাবা যতই কাদুক না কেন, সে জানে তাদের ভিতর আজ অনেক শান্তি লাগছে।
মেয়েকে বিদায় দেওয়ার পর ঊর্মিলার মা বাবা যখন একটু নিশ্চিন্ত মনে বিশ্রাম নিচ্ছিল, তখনি ছেলের বাবা কল দিয়ে বলে, "বেয়াই মশাই ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা তো হলো, এবার ফ্ল্যাটে উঠার একটা ব্যবস্থা করে দিলে তো ভালো হয়। ছেলে আর বৌমা আরামে থাকতে পারত "
বুঝলেন না বুঝি । ফার্নিচার, বাসার বিভিন্ন জিনিসপত্র এইসবের কথাই বলেছে আর কি। মা বাবাও তো অসহায়। কি করবে বলুন....মেয়ের সুখ বলে কথা!
আসলে যৌতুক প্রথা আমাদের ইসলামে নেই।এগুলা হিন্দুদের প্রথা যেটা আমাদের মুসলমানরা ব্যাবহার করে থাকি।এখন আর আগের মতো যৌতুক প্রথা আরো বেশি আছে শুধু যৌতুক চাওয়ার সুর চেন্জ হয়ে গেছে বাট চাহিদা কমেনি।আসলে এসব ব্যাপারে আওয়াজ তুলতে হবে না হলে এই প্রথা দূর করা সম্ভব হবেনা।