versity

0 3
Avatar for mobile
Written by
4 years ago

ভার্সিটিতে প্রথম যেদিন ক্লাস করতে যাই সেদিন স্যার একে একে সবার সাথে পরিচিত হচ্ছিলো।

আমি যখন দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় দিবো তখন স্যার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

- তুমি কি আই এসের সদস্য? এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছো জঙ্গি হামলা করার জন্য না কি?

স্যারের কথা শুনে ক্লাসের সবাই হাসতে লাগলো।

আমি মাথাটা নিচু করে স্যারকে বললাম,

-- স্যার, আপনার কথাটা ঠিক বুঝলাম না।

স্যার আবারও হাসতে হাসতে বললো,

- তোমার মুখ ভর্তি দাড়ি দেখে তো এটাই মনে হলো।

সেদিনের পর কেউ আমাকে আবুল বাশার বলে ডাকে না। সবাই জঙ্গি বাশার বলেই ডাকে...

স্যারকে দেখতাম মাঝে মাঝেই মজার চলে আমাকে নানা রকম অপমান করতো। সেদিন স্যার আমাকে দেখিয়ে সবাইকে বললো,

- বাশারের থেকে কিছু শিখো তোমরা। ৩ দিন পর পর সেভ করলে নাপিতকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা দিতে হয়।কিন্তু বাশারের দিতে হয় না কারণ সে দাড়ি রেখে দিয়েছে৷ একটা ভালো জিন্স প্যান্ট কিনতে গেলে ২৫০০ টাকা লাগে একটা ভালো শার্ট কিনতে গেলে ১৫০০ টাকা লাগে কিন্তু বাশারের এইসব কিছুই লাগে না। সে ৫০০ টাকা দিয়ে পাঞ্জাবি পায়জামা বানিয়ে ফেলতে পারে। তোমরা ছেলেরা সবাই খরচ কমাতে বাশারকে ফলো করো।

স্যারের মুখ থেকে এইসব কথা শুনে ক্লাসের সবাই হাসতে লাগলো। আর আমিও সেদিন প্রথম স্যারের চোখে চোখ রেখে মুচকি হাসে স্যারকে বললাম,

-- স্যার, দুইদিন পর যখন মারা যাবেন তখন কিন্তু ক্লিন সেভ করা, উন্নত মানের জিন্স প্যান্ট আর শার্ট পরিহিত কেউ এসে আপনার জানাজার নামাজ পড়বে না। তখন কিন্তু আমারি মত দাড়িওয়ালা ৫০০ টাকার পাঞ্জাবি পায়জামা পরিহিত কেউ এসে আপনার জানাযার নামাজটা পড়বে।

এইবার স্যারকে দেখলাম মাথা নিচু করে আছে। ক্লাসের সবাই নিরব। আর আমি তখন মুচকি হেসে ক্লাস থেকে বের হয়ে আসলাম...

ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে সানজিদা নামের একটা মেয়েকে টিউশনি করাতাম।

১মাস পড়ানোর পর ছাত্রীর বাবা বেতনের টাকাটা আমার হাতে দিয়ে বললো,

- কাল থেকে তোমার আর আসতে হবে না।

আমি অবাক হয়ে বললাম,

-- আংকেল, কারণটা কি জানতে পারি?

আংকেল তখন রেগে গিয়ে বলতে লাগলো,

- তুমি আমার মেয়েকে সব সময় মরার ভয় দেখাও কেন? পর্দা না করলে আখিরাতে এই হবে ঐ হবে এইসব বলে আমার মেয়ের মাথা নষ্ট করে দিয়েছো। আমার মেয়ে মাথায় ওড়না দিলো কি দিলো না তাতে তোমার কি? তোমার এইসব হুজুরগিরি অন্য কোথাও গিয়ে দেখাও। মৃত্যুর ভয় আমার মেয়েকে দেখাতে এসো না।

একটু পর ছাত্রীর মা এসে বললো,

~ নজর ঠিক তো সব ঠিক। নজর ঠিক থাকলে এইসব পর্দা করার কোন দরকার নেই।

আমি মুচকি হেসে ছাত্রীর বাবা মার দিকে তাকিয়ে বললাম,

-- সবচেয়ে বড় শিক্ষক হলো বাবা মা। যে ঘরে আপনাদের মত বাবা মা আছে সেই ঘরের মেয়েরা বেপর্দা হবে এটাই স্বাভাবিক। আপনারা কত বড় ভুল করেছেন সেটা এখন না কয়দিন পর হয়তো বুঝবেন...

৭ মাস পর খবরের কাগজে একটা ছবি দেখে চমকে উঠলাম। আমার ছাত্রী সানজিদার বাবা মার আর্তনাদের ছবি। ছবির উপরে লাল কালি দিয়ে বড় বড় অক্ষরে লেখা, অন্তরঙ্গ ভিডিও ফাঁস হওয়ার জন্য তরুণীর আত্মহত্যা।

আমি খবরের কাগজটা বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবতে লাগলাম, এই মৃত্যুর জন্য মা বাবাও দায়ী। মেয়েকে সঠিক শিক্ষা দিলে হয়তো এমনটা হতো না...

আমার বিয়ের ঠিক দুইদিন পর আমার স্ত্রী অহনা আমায় বললো, আমার সাথে আর একদিনও সংসার করতে পারবে না। ও স্বাধীনতা চায়, পর্দার আড়ালে নিজেকে আবদ্ধ করতে পারবে না। অনেক বুঝানোর পরেও সে বুঝলো না। তাই বাধ্য হয়ে অহনাকে ডিভোর্স দিলাম...

বছর দুয়েক পর,

ফুলের দোকানের সামনে যখন আমি দাঁড়িয়ে আছি। তখন কে যেন আমায় পিছন থেকে ডাকলো। পিছন ফিরে দেখি অহনা। অহনা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

- কেমন আছেন?

আমি হেসে উত্তর দিলাম,

-- আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি?

আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে অহনা বলবো,

- ফুলের দোকানে কেন?

এমন সময় ফুলের দোকানের কর্মচারী ছেলেটা কোথা থেকে যেন দৌড়ে আমার কাছে এসে বললো,

- হুজুর আজ তো বেলী ফুল পাই নি। আশে পাশের দোকানেও খুঁজে পেলাম না। তবে একজনকে ফোন দিয়েছি। ২০ মিনিট পর নিয়ে আসবে আপনি একটু অপেক্ষা করেন...

আমি অহনাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম। অহনা অবাক হয়ে বললো,

- দোকানের ছেলেটা এত উতলা হয়ে আপনার জন্য বেলীফুল খুঁজছে কেন?

আমি মুচকি হেসে উত্তর দিলাম,

-- আমি প্রতিদিন বাসায় ফেরার সময় আমার স্ত্রী শ্রাবণীর জন্য এই দোকান থেকে বেলী ফুল কিনে নিয়ে যায়। শ্রাবণীর খুব পছন্দ বেলীফুল...

আমার আর অহনার জন্য যখন খাবার অর্ডার করলাম তখন আমি ওয়েটারকে বললাম, আমায় যে খাবারটা দিবে তার থেকে অর্ধেক যেন আমায় পার্সেল করে দেয়।

অহনা অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

- হঠাৎ পার্সেল কেন?

আমি মাথাটা নিচু করে হেসে বললাম,

-- আমি তোমার সাথে এইখাবারটা খাবো আর শ্রাবণী এই খাবারটা খাবে না সেটা হয় না। তাই ওর জন্য আমার অর্ধেক খাবার নিয়ে যাবো...

খাওয়া শেষ করে যখন আমি পার্সেলটা হাতে নিয়ে বের হবো তখন অহনা বললো,

- আমি ভালো নেই। আপনার সাথে ডিভোর্সের পর আমি খুব স্মার্ট আর হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে বিয়ে করি। কিন্তু বিয়ের পর দিন থেকে আমি একটুও সুখে নেই। স্বামীর চোখে আমি শারিরীক ক্ষুধা মেটানোর যন্ত্রবাদে আর কিছুই না। আমি খুব বড় ভুল করে ফেলেছি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে...

আমি আর কিছু না বলে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আসলাম। আমার একহাতে খাবারের প্যাকেট আরেক হাতে বেলিফুল। আমি হেটে যাচ্ছি আর ভাবছি,

জীবনের একটা সময় আমরা সবাই উপলব্ধি করতে পারি। কিন্তু যখন উপলব্ধি করতে পারি তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যায়।।।

1
$ 0.00
Avatar for mobile
Written by
4 years ago

Comments

Thank you very much for your information. This article is about university. Versity is one of the most important thing of our life. Keeping your writing. I am waiting for your writing.

$ 0.00
4 years ago

versity time is very important of everyones life. It is the kye time of our life. If we are not proper use this time we can't Shine in life. Thank you.

$ 0.00
4 years ago

Your article is very unique and it's very helpful for us. I think vercity is the most important part in our student life. Keep writing this kind of article and thank you..

$ 0.00
4 years ago

আমিতো ভার্সিটির প্রথমদিন ক্লাস করতে গিয়ে ম্যানেজমেন্টের ম্যাম এর উপর ত্রুাস খাইছি তারপর থেকে শুধু মাত্র ম্যাম রে দেখতেই ভার্সিটিতে গেছি হিহি

$ 0.00
4 years ago

অনেক সুন্দর একটা গল্প লিখলেন। খুব ভালো লাগলো। এরকম আর ও সুন্দর রিড ক্যাশের মাধ্যমে উপস্থাপন করবেন বলে আশা রাখছি।

$ 0.00
4 years ago