গুন্ডী মেয়ে vs দুষ্টু ছেলে
পার্টঃ-৯
রাহি আমার সামনে ওর ওড়নাটা ছুড়ে ফেলে দিলো।
-এসব কি করছো রাহি,,
রাহি কিছু না বলে ওর জামাটাও খুলে ফেললো,রাহি এখন অর্ধ নগ্ন হয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, আমি লজ্জায় হাত দিয়ে আমার চোখটা বন্ধ করে ফেললাম।
-প্লিজ রাহি জামাটা পড়ে নাও,এরকম ছেলেমানুষীর কোনো মানে হয়না।
রাহি এক টানে আমার হাতটা ছাড়িয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে জরিয়ে ধরে কিস করতে লাগলো,দুজনের শরীরটা একেবারে মিশে গেছে,রাহির গরম স্পর্শে আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পাড়লাম না,কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক সেটা ভুলে আমি রাহির ঠোঁটে কিস করতে লাগলাম,রাহি নখ দিয়ে আমার পিঠটা খামচে ধরলো,আমিও হারিয়ে গেলাম ওর ভালোবাসায়,,,
প্রায় ঘন্টা খানেক পর ক্লান্ত হয়ে দু'জনে আলাদা হয়ে গেলাম, রাহির দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখে মুখে দুষ্টুমির হাসি।
.
কেনো জানি না এই মুহুর্তে নিজেকে সবচেয়ে নিম্ন শ্রেণির একটা জীব বলে মনে হচ্ছে,কখনও ভাবতেও পারিনি এরকম একটা কাজ আমার দ্বারা হবে,আমি শার্টটা গায়ে দিয়ে সোজা রুমে চলে আসলাম।
ঘড়িতে দেখলাম রাত একটা বাজে।
এসিটা ছেড়ে দিলাম কিন্তু কিছুুতেই যেনো ভালো লাগছে না, শরীর থেকে ঘাম সব চুইয়ে পড়ছে। বাথরুমে গিয়ে শাওয়ারটা ছেড়ে দিলাম।
.
প্রায় এক ঘন্টা ধরে শাওয়ার নিচ্ছি তবুও ঠান্ডা লাগছে না, বুকের ধুকধুকানিটা যেনো বেড়েই চলছে।
গা টা মুছে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসসলাম, বিছানায় শুতেই রাহির নাম্বার থেকে কল আসলো।
রিসিভ করবো কি? নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম।
তিনবারের সময় রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মিষ্টি গলায় ভেসে আসলো,
-ঘুমিয়ে পড়েছো?
আজ রাহির কন্ঠটাও কেমন যেন অচেনা লাগছে, ভীষণ মিষ্টি আর লজ্জা মিশ্রিত।
এই প্রথম আমি রাহির সাথে কথা বলতে দ্বিধায় পড়ে যাচ্ছি, একটু লজ্জাও লাগছে, কি বলবো বুঝতে পারছি না সবকিছুই কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে।
আমি আস্তে করে বললাম,
-না,,
-ঘুম আসছে না?
-না,,
-তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো?
-লজ্জা পাবো কেনো?
-তাহলে কিছু বলছো না যে।
-আচ্ছা রাহি আমরা কি কাজটা ঠিক করলাম?
-কোন কাজটা?
-একটু আগে যেটা করলাম।
-কি করলাম একটু আগে?
-বিয়ের আগে এসব ঠিক না এখন যদি তোমার পেটে বাচ্চা হয়ে যায়।
-তাতে কি আমি তো তোমাকেই বিয়ে করবো।
-কিন্তু আমাদের পরিবার যদি এই সম্পর্কটা মেনে না নেয়?
কথাটা শুনে রাহি চুপ হয়ে গেলো।
-কি হলো চুপ হয়ে গেলে যে?
-যদি না মানে তাহলে আমি তোমার সাথে পালিয়ে যাবো। তুমি নিবে না আমায়?
-হুমম,,,নিবো তো।
-ঠিক আছে,,,,, এখন তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে কাল তো আবার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান, তোমাকে অনেক কাজ করতে হবে।
-হুমম,,,বাই।
-বাই,,,
-রাহি একটা কথা,,,
-হুমম,,বলো
-আই লাভ ইউ
রাহি একটা হাসি দিয়ে বললো,
-আই লাভ ইউ টু ইমন,,,গুড নাইট
-হুমম,,,গুড নাইট।
.
ফোনটা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
হঠাৎ কারও গরম নিঃশ্বাস অনুভব করতে লাগলাম আমার মুখের ওপর,,,মনে হচ্ছে কেউ আমার মুখের একেবারে কাছে ঝুকে আছে।
আমি চোখটা মেলতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো,আমি লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম,
-প্রিয়া তুই এখানে কি করছিস?
-ত,,ত,,তোমার জন্য চা নিয়ে আসছি।
-সেটা টেবিলে রাখবি কিন্তু আমার ওপর ঝুকে কি করছিলি?
-ম,,ম,,মশা ছিলো তো তাই,,,
-তাই বলে তুই একটা ছেলের এতো কাছে চলে আসবি?যদি কিছু একটা হয়ে যেতো।
আমার কথা শুনে প্রিয়া আস্ত আস্তে কি যেনো বিড়বিড় করতে লাগলো,
-কি ব্যাপার?তুই মিনমিন করে কি বলছিস?
-ক,,ক,,কই কিছু নাতো।
-তাহলে এখানে হা করে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?যা বাইরে যা,,,
প্রিয়া একটু মন খারাপ করে বাইরে গেলো। এই মেয়ের মতলবটা কি? এখানে আসার পর থেকেই দেখছি ওর আচরণটা কেমন পরিবর্তন হয়ে গেছে।
আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম। আজ বৃষ্টির গায়ে হলুদ, বাসা ভর্তি মেহমান। বর্ষাকে দেখলাম খুব ছুটোছুটি করছে,মনে হয় ভীষণ ব্যাস্ত আছে। খালামণি আমাকে দেখেই বললো,
-ইমন তুই একটু দেখতো মেহমানদের খাবারের জিনিসপত্র সব ঠিকঠাক আছে কিনা আর ওদের সাথে কথা বলে জেনে নে কখন আসবে। আমি একা একা আর কতদিক সামলাবো বল।
-তুমি কোনো টেনশন করো না তো খালামণি আমি সব দেখছি,,,,
একাই সব কাজ দেখতে লাগলাম, মেহমানদের খাবারের জিনিসপত্র সব কমপ্লিট। আসলে খালামণি বাইরের কোনো রেস্টুরেন্টের খাবার আনবে না, বাসায়ই বাবুর্চি রেখে রান্না করাবেন। আমি ফোন করে জেনে নিলাম মেহমানরা নাকি বিকেলের দিকে আসবে।
প্রচুর ব্যাস্ততার মাঝে আছি, কাজ করতে করতে দুপুর হয়ে গেলো কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো সকাল থেকে একবারের জন্যও রাহিকে দেখতে পায়নি। মেয়েটা ঘরে বসে করছেটা কি?আমি রাহির রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই প্রিয়া সামনে এসে বললো,
-ইমন ভাইয়া তোমার সাথে আমার কথা আছে।
-কি কথা?
-এখানে সবার সামনে বলা যাবে না তুমি ছাদে চলো,,
-একটু পর শুনি এখন আমার একটা জরুরি কাজ আছে।
-না,এক্ষুনিই শুনতে হবে,তুমি প্লিজ ছাদে চলো।
প্রিয়ার জোরাজুরিতে রাহির রুমে আর যাওয়া হলো না,আমি প্রিয়াকে নিয়ে ছাদে গিয়ে বললাম,
-এখন বল কি এমন কথা যা সবার সামনে বলা যাবে না।
-তুমি কি কাউকে পছন্দ করো?
-আজিব! এটা বলার জন্য তুই আমাকে ছাদে নিয়ে আসছিস?
-বলো না,,,পছন্দ করো কাউকে?
-প্রিয়া তোর কথা আমি কিছু বুঝতে পারছি না,,,আমি কাউকে পছন্দ করি বা না করি তাতে তোর কি?তুই আসলে কি বলতে চাইছিস স্পষ্ট করে বলতো।
-আমি তোমাকে ভালোবাসি,,,,
-হোয়াট!!! তুই কি ফান করছিস?
-না,,,আই এম সিরিয়াস।
-দেখ প্রিয়া, এটা কখনও সম্ভব না, আমি তোকে ভালোবাসতে পারবো না,,,
-কেনো পারবে না?আমি কি দেখতে খুব খারাপ।
-কে বললো তুই দেখতে খারাপ?তুই দেখতে অনেক সুন্দর ।
-তাহলে ভালোবাসবে না কেনো?
-কারণ আমি তোকে সবসময় আমার ছোটো বোন হিসেবেই ভেবেছি।
-আমি তো তোমার আপন বোন না,,,,
-এসব ভালোবাসার ভুত মাথা থেকে নামিয়ে মন দিয়ে এখন পড়াশোনা কর,,,
প্রিয়া আমার হাতটা ধরে বললো,আমি কি খুব খারাপ? আমাকে একটু ভালোবাসা যায় না?
-তুই খুবই ভালো আর লক্ষ্মী একটা মেয়ে, আমার থেকেও অনেক ভালো একটা ছেলে তুই পাবি আগে পড়াশোনাটা মন দিয়ে কর।
-কিন্তু আমার যে তোমার চেয়ে ভালো ছেলে চাই না,আমার শুধু তোমাকেই চায়।
আমি প্রিয়ার হাতটা ছাড়িয়ে বললাম,আমি তোকে ভালোবাসতে পারবো না কারণ আমি রাহিকে ভালোবাসি।
-রাহি আপুকে..!!!
-হুমম,,,
প্রিয়া মন খারাপ করে মাথাটা নিচু করে ফেললো,উড়নাটা দিয়ে একবার চোখটা মুছে নিলো,
-প্রিয়া এভাবে মন খারাপ করিস না,,,তুই এখন আবেগের বসে এসব বলছিস কিছুদিন পর দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
-আমি মন খারাপ করিনি, সবার ভাগ্যে তো আর সবকিছু থাকে না। হয়তো কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু আমি নিছক আবেগের মোহে তোমাকে ভালোবাসিনি,,,
কথাটা বলেই প্রিয়া দৌড়ে ছাদ থেকে চলে গেলো। আমি পিছনে ঘুড়তেই দেখি রাহি আমার সামনে দাঁড়িয়ে,
-রাহি তুমি এখানে?
-ভালোই তো প্রেম করছিলে দু'জন।
-প্রেম করছিলাম মানে?
-হুমম প্রেম,,,,এখানে না আসলে তো তোমার আসল রূপটা আমি ধরতেই পারতাম না,,,
-রাহি তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।
-কোনটা ভুল?আমি নিজের চোখে যেটা দেখলাম সেটা?
-তুমি যেটা দেখেছো সব সত্যি কিন্তু প্রিয়ার সাথে আমার কোনো রিলেশন নেই আসলে,,,
-থাক, তোমাকে আর বানিয়ে বানিয়ে কিছু বলতে হবে না যা বোঝার আমি সব বুঝে গেছি।
-আমি তোমাকে বানিয়ে বানিয়ে বলছি?
-তা নইতো কি? আমাকে তো আর ভালোলাগে না স্বার্থ হাসিল হয়ে গেছে যে।
-তুমি কিন্তু তোমার লিমিট ক্রস করে ফেলছো রাহি,,
-আমি আমার লিমিট ক্রস করছি নাকি তুমি?ভালোবাসার নাম করে আমাকে ভোগ করে এখন অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করছো এটা কি সীমার মধ্যে পড়ে?
রাহির কথা শুনে আমার প্রচন্ড রাগ উঠে গেলো, ঠাসস করে ওর গালে একটা থাপ্পড় মারলাম,
রাহি আমার থাপ্পড় খেয়ে বেশ অবাক হয়েছে,ও হয়তো কখনও কল্পনাও করেনি যে আমি ওকে এভাবে থাপ্পড় মারবো, রাহি আর কোনো কথা না বলে কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলে গেলো।
.
যাকে এতোটা ভালোবাসলাম আজ সেই আমাকে অবিশ্বাস করছে?সন্দেহ করছে? রাহি তো একটাবার আমার কথাগুলো শুনতে পারতো,আমাকে একটা বার জিজ্ঞেস করতে পারতো। আমার ওপর কি একটুও বিশ্বাস নেই রাহির?
রুমে বসে বসে এসব ভাবছিলাম তখনই,,,,,,,,,,
-
-
-
***চলবে