গল্পঃ ভাবি যখন বউ
পর্ব_ ৯
আয়মানকে কল দিলাম, আজ রাত ওর সাথেই থাকতে হবে। কারন এতো রাতে বাসায় যাওয়া ঠিক হবে না। আয়মান বললো ওদের বাসায় যাওয়ার জন্য।
যেতে ভাবতে লাগলাম অবন্তীর জন্য আমি এতো কিছু করলাম অথচ সে এক মুহূর্তেই সব ভুলে গেলো। তাহলে ২ রাতে যে আমার সাথে ঘুমাইছে, ওটা কেন করলো???
আমি আব্বু আম্মুকে কি বলবো উনারা তো অবন্তীকে না ফেলে মারাই যাবে, অবন্তী এতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা করবে আমি তো কোনো দিন কল্পনাও করিনি।
ভাবতে ভাবতে আয়মানদের বাসায় চলে গেলাম, কলিং বেল দিলাম কিছুক্ষণ পর আয়মান বেরিয়ে আসলো……
আয়মানঃ জুয়েল আসছিস?
আমিঃ হুম।
আয়মানঃ আয় ভিতরে আয়।
আমি ভিতরে গেলাম, ওর আম্মুকে দেখে সালাম দিলাম।
আন্টিঃ আরে জুয়েল যে, কতো দিন পর আসছো। কেমন আছো বাবা?
আমিঃ জি আন্টি আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন????
আন্টিঃ আছি বাবা! বয়স হয়ে গেলে যা হয় আরকি। জুয়েল তোমার আব্বু আম্মু কেমন আছে?
আমিঃ জি আন্টি সবাই ভালো।
আর কিছু কথা বলে আয়মানের রুমে চলে গেলাম, রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মাত্র বসলাম আন্টি এসে ডেকে নিয়ে গেলো খাওয়ার জন্য।
খাওয়াদাওয়া শেষে আবার আয়মানের রুমে গেলাম,খাটে আমি আর আয়মান পাশাপাশি শুয়ে আছি এমন সময় আয়মান বললো…..
আয়মানঃ জুয়েল! এই জুয়েল”
আমিঃ হুম বল।
আয়মানঃ কি হয়েছে এবার বল।
আমিঃ…….(অবন্তীর কথা গুলো বললাম)
আয়মানঃ তোরে আমি আগেই বলেছি এই মেয়েটার মধ্যে কোনো ঘাবলা আছে।
আমিঃ দোস্ত আমার মাথায় কিছু আসছে না, অবন্তী আমার সাথে এমন করবে আমি ভাবতেই পারিনি।
আয়মানঃ দেখ জুয়েল! তোরে আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি ওই মেটার সাথে তোর হবে না। তুই ওরে ডিভোর্স দিয়ে দে।
আমিঃ ধুর তোর কাছে এই কথা ছাড়া অন্য কোনো কথা নেই? সারা দিন শুধু ডিভোর্স ডিভোর্স করস। ওরে ডিভোর্স দিলে আব্বু আম্মুকে কি বলে বুঝাবো,আমি নিজে কিভাবে থাকবো?
আয়মানঃ দেখ জুয়েল আবেগ দিয়ে তো আর জীবন চলে না, আবেগ আর বাস্তবতা এক না।
আমিঃ আবেগ দিয়ে জীবন চলবে যদি চালাতে পারিস।
আয়মানঃ কিন্তু ওতো তোকে এখনো মেনেই নিচ্ছে না, ফ্লোরে ঘুমাতে হয় তোকে।
আমিঃ দেখ ফ্লোরে ঘুমালে সমস্যা নাই, আমি চাই অবন্তী আমার সাথেই থাকুক, আব্বু আম্মুর মেয়ে হয়ে থাকুক।
আয়মানঃ কিন্তু জুয়েল! অবন্তী তো তোরে ভালোই বাসেনা।
আমিঃ ও না বাসুক, আমি তো অবন্তীকে ভালোবাসি। অবন্তী কেন আমাকে ভালোবাসে না সেটাও আমি জানি।
আয়মানঃ কেন?
আমিঃ কারন অবন্তী ভাইয়াকে কি পরিমাণ ভালোবাসতো তোরে বলে বুঝাতে পারবো না। ভাইয়ার সাথে বিয়ের পরে অবন্তী আমাকে ভাইয়ের মতোই দেখেছে। সো হুট করে আমাকে বিয়ে করে তো আর স্বামীর মর্যাদা দিয়ে দিতে পারবে না। সেটা অবন্তী কেন পৃথিবীর কোনো মেয়েই পারবে না।
ভাইয়া মারা যাওয়ার পর থেকে অবন্তী ঠিক মতো খেতো না, ঘুমাতো না, শরীরের প্রতি কোনো কেয়ার ছিলো না। কারন অবন্তীর মনটা পাথর হয়ে গেছে। যেদিন ওই পাথরে ফুল ফুটবে সেদিন অবন্তী জুয়েলকে মেনে নিবে। আমিও সেই দিনের অপেক্ষায় বসে আছি।
আমি কোনো দিনও অবন্তীকে কোনো ব্যাপারে জোর করিনি আর এখনও করবো না।
আয়মানঃ কিন্তু অবন্তী তো আজকে বলে দিছে তোকে মেনে নিবে না।
আমিঃ সেটাই তো বুঝতেছিনা হঠ্যাৎ করে অবন্তীর কি হলো? হাসপাতালে গিয়েও আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেছিলো। তারপর কিছু একটা চিন্তা করে ছেড়ে দিয়েছে।
আয়মানঃ আচ্ছা দোস্ত কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতাম।
আমিঃ হুম বল, মনে করার কি আছে?
আয়মানঃ অবন্তীর কি কারো সাথে রিলেশন আছে বা ছিলো?
আমিঃ আমার জানামতে নাই, কারন অবন্তীর আম্মু বলেছিলো অবন্তীর নাকি কোনো ছেলে ফ্রেন্ডও নাই। সে জায়াগায় বয়ফ্রেন্ড আসার তো প্রশ্নই আসেনা।
আয়মানঃ তো তুই এখন কি করবি? তোর আব্বু আম্মুকে বলে দিবি ওর ব্যাপারে?
আমিঃ এখন না, আরো কিছু দিন দেখি। এখন বলে দিলে উনারা অনেক কষ্ট পাবে।
আয়মানঃ জুয়েল আমার মাথা ঘুরতেছে। তুই তোর আব্বু আম্মুকেও বলবি না, নিজেও করবি না। তাহলে কি করবি?
আমিঃ আমার মনে হয় এখানে বিশাল একটা রহস্য আছে যেটা আমি জানি না।
আয়মানঃ তো কি করবি এখন?
আমিঃ দোস্ত তোকে একটু কষ্ট করতে হবে।
আয়মানঃ কি?
আমিঃ দেখ আমি তো অফিসে চলে যাবো, সারা দিন ওখানেই থাকতে হবে। তুই তো ফ্রি আছিস, তুই যদি অবন্তীকে ফলো করতি ও কি করে, কার সাথে যায়। তোর বাইক আছে সমস্যা হবে না। প্রয়োজনে আমি তোরে তেলের টাকা দিয়ে দিবো।
আয়মানঃ এই হারামি তুই পাগল হইছিস, তোর কাছে থেকে আমি টাকা নিবো? তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড, তোর জন্য আমি সব করতে রাজি আছি।
আমিঃ থেংক্স দোস্ত। তাহলে কালকে থেকে ওরে ফলো করা শুরু কর, আমি তোরে অবন্তীদের বাসা দেখিয়ে দিবো।
আয়মানঃ আচ্ছা ঠিক আছে। এখন ঘুমা।
তারপর একপাশ হয়ে শুয়ে গেলাম। ঘুম আসছে না। বার বার অবন্তীর কথাই মনে পড়তে লাগলো।
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে আয়মান আর আমি বাইক নিয়ে বের হলাম। আয়মানকে অবন্তীদের বাসা দেখিয়ে আমি অফিসে চলে গেলাম।
কাজ করতে লাগলাম আর আয়মানকে বার বার কল দিয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম কিন্তু কোনো খবরাখবর নাই।
অফিস শেষ করে বাসায় গেলাম। আব্বু আম্মু আমার উপর ফায়ার হয়ে আছে…..
আব্বুঃ কিরে তুই একা কেন? আমার মেয়ে কোথায়?
আমিঃ আসেনি।
আম্মুঃ আসেনি, তুই কালকে ওর সাথে ঝগড়া করে চলে আসছিস কেন?
আমিঃ কিহ! তোমাদের এসব কথা কে বলেছে?
আব্বুঃ তুই কি ভাবছিস অবন্তীর সাথে আমাদের কথা হয়না? অবন্তীই আমাদের বলেছে।
আমিঃ।……..(কি বলবো বুঝতেছিনা)
আম্মুঃ কালকে কোথায় ছিলি?
আমিঃ আয়মানদের বাসায় (মাথা নিচু করে)
আম্মুঃ অবন্তী তোরে কি বলেছে?
আমিঃ আরো কিছুদিন ওখানে থাকবে (মিথ্যা বললাম)
আম্মুঃ যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।
যাহ বাবা বেঁচে গেলাম, মনে হচ্ছে আমাকে রিমান্ডে দিয়েছে। শালা অবন্তী আব্বু আম্মুকে কি বুঝিয়েছে কে জানে! আমার সাথে একরকম করলো আর আব্বু আম্মুর সাথে অন্যরকম। বুঝলাম না।
যাইহোক খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। পরেরদিন ঘুম থেমে উঠে রেড়ি হয়ে অফিসে চলে গেলাম।
এভাবে ২ দিন গেলো, অবন্তীর সাথে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি। সেও আমাকে কোনো কল বা মেসেজ দেয়নি।
একদিন অফিসে কাজ করতেছি। ১০.৩০ বাজে এমন সময় আয়মান কল দিলো।
আয়মানঃ হ্যালো জুয়েল!
আমিঃ হুম বল।
আয়মানঃ তুই কই?
আমিঃ অফিসে। তুই কোথায়???
আয়মানঃ আমিতো অবন্তীদের বাসার সামনে।
আমিঃ কোনো খবর পাইছিস?
আয়মানঃ এইমাত্র একটা গাড়ি অবন্তীদের বাসার সামনে আসলো আর অবন্তী সেটাতে উঠে চলে যাচ্ছে।
আমিঃ গাড়িতে কে দেখছিস???
আয়মানঃ না দেখা যাচ্ছে না।
আমিঃ আচ্ছা দোস্ত তুই গাড়িটা ফলো কর, কি হয় আমাকে জানা।
আয়মানঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
কলটা কেটে দিলো, আমি একটু টেনশনে পড়ে গেলাম। অবন্তী কার সাথে ঘুরতেছে।
১১.২০ এ আয়মান আবার কল দিলো।
আয়মানঃ জুয়েল!
আমিঃ হুম বল।
আয়মানঃ ঘটনা তো কিছুই বুঝলাম না।
আমিঃ কেন কি হইছে?
আয়মানঃ তোর অবন্তী তো লিমার সাথে।
আমিঃ কোন লিমা???
আয়মানঃ আরে বেটা আমাদের ফ্রেন্ড, তোর বসের মেয়ে।
আমিঃ অবন্তী তো লিমার কথাই শুনতে পারেনা।
আয়মানঃ জানি তোর বিশ্বাস হবে না। আমি ছবি পাঠাচ্ছি তুই দেখ।
আমিঃ আমার কাছে নরমাল মোবাইল।
আয়মানঃ আচ্ছা বিকালবেলা দেখা করিস।
আমিঃ ঠিক আছে। আজকে অবন্তী লিমার সাথে কি করে?
আয়মানঃ আমি কেমনে বলমু? তুই লিমারে জিজ্ঞেস করিস।
আমিঃ আচ্ছা তুই আরেকটু ফলো কর।
আয়মানঃ ওকে।
আমিঃ হুম আমি বিকালে তোর সাথে দেখা করবো।
আয়মানঃ ওকে।
কল কেটে দিলো। কাজ শেষ করে বিকালবেলা আয়মানের সাথে দেখা করলাম। আয়মান ওর মোবাইলে তোলা ছবি গুলো আমাকে দেখাতে লাগলো, আসলেই তো এটা যে লিমা।
কিন্তু অবন্তী লিমার নামও শুনতে পারে না। আমাকে কয়েকবার হুমকি দিয়েছে যাতে লিমার সাথে দেখা না করি কিন্তু এখন দেখছি সে নিজেই লিমার সাথে হাত ধরাধরি করে হাটছে।
কাহিনী তো একটা আছে। যেটা আমি জানি না। কিন্তু আমাকে এভাবে বসে থাকলে চলবে না, এই কাহিনী টা কি সেটা বের করতে হবে।
আয়মানঃ এই জুয়েল কি ভাবতেছিস?
আমিঃ দুজন একসাথে কি করে সেটা।
আয়মানঃ লিমাকে জিজ্ঞেস কর তাহলে কাহিনী বুঝে যাবি।
আমিঃ কিন্তু লিমা কি আমাকে বলবে?
আয়মানঃ বলবে না কেন, অবশ্যই বলবে।
আমিঃ নারে লিমার পেট থেকে সহজে কথা বের হয়না।
আয়মানঃ ওরে ইমোশনাল করে বের করতে হবে।
আমিঃ কিন্তু কিভাবে?
আয়মানঃ কিছু একটা চিন্তা কর।
আমিঃ হুম দেখি। আচ্ছা এখন কল দিবো?
আয়মানঃ তুই পাগল হইছিস,এখন দিলে ভুলেও বলবে না। তোর সাথে যখন দেখা হবে তখন সিস্টেমে জিজ্ঞেস করে নিবি।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে গেলাম। খাওয়াদাওয়া করে বসে বসে ভাবতে লাগলাম আসলে অবন্তী কি করতে চাচ্ছে।
২ দিন পর আমি অফিসে কাজ করতেছি এমন সময় লিমা আমার ডেস্কে আসলো….
লিমাঃ কিরে জুয়েল কি খবর?
আমিঃ ভালো না রে।
লিমাঃ কেন বউয়ের জন্য খারাপ লাগছে বুঝি?
এইতো ফকিন্নি মুখ দিয়ে আসল কথা বের করে দিছে, বাকি কথা গুলো বের করে নিই।
আমিঃ নারে দোস্ত বউয়ের জন্য না।
লিমাঃ তাহলে?
আমিঃ আমি আর বেশি বাঁচবো নারে।
লিমাঃ তুই এগুলো কি বলিস, পাগল হলি নাকি?
আমিঃ সত্যিই বলছি। ডাক্তার বলেছে আর বেশি দিন নাই।
লিমাঃ এই তোর শরীর ঠিক আছে তো।
আমিঃ দোস্ত আমি তো চলে যাবো, যাওয়ার আগে একটা রিকুয়েস্ট রাখবি প্লিজ,, (একেবারে নরম গলায়)
লিমাঃ তুই কি বলতেছিস এগুলো,আমার মাথা ঘুরতেছে। তোকে তো দেখে ভালোই মনে হচ্ছে।
আমিঃ নারে, বল আমার রিকুয়েস্ট টা রাখবি?
লিমাঃ কি রিকুয়েস্ট বল।
এই তো লাইনে আসছে,,,,
আমিঃ অবন্তীর সাথে কি চলতেছে বলবি, মরার আগে যানতে চাই।
লিমাঃ……. (চুপ করে আছে)
আমিঃ কি হলো বল।
লিমাঃ তুই কিভাবে জানিস?
আমিঃ তোকে আর অবন্তীকে আমি একসাথে দেখেছি। প্লিজ বল,,,
লিমাঃ তোর সাথে যখন আমি মাহির বিয়েতে হেসে হেসে কথা বলেছিলাম তখন অবন্তী এসে আমার হাত ধরে কান্না করতে লাগলো আর বললো যাতে তোর সাথে না মিশি।
আমিঃ তো তুই কি বললি?
লিমাঃ আমি বলেছি তুই আর আমি জাস্ট ফ্রেন্ড আর কোনো সম্পর্ক নেই। অবন্তীকে রাগানোর জন্যই আমরা বিয়েতে এমন করেছি। এরপর থেকে আমার আর অবন্তীর মাঝে ভালো একটা ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যায়। আমরা এখন একে অন্যকে তুই করে ডাকি।
আমিঃ তো আমাকে বলিস নি কেন?
লিমাঃ অবন্তী বলতে নিষেধ করেছে। তোরে নাকি শাস্তি দিবে।
আমিঃ কি শাস্তি?
লিমাঃ তুই যাতে অন্য মেয়ের সাথে আর জীবনে কথা না বলিস।
আমিঃ আমি যে এখানে চাকরি পেয়েছি সেটাও কি বলে দিয়েছিস?
লিমাঃ হুম, তুই জয়েন করতে আসার আগেই ওরে বলে দিয়েছি। আর সে তোর আব্বু আম্মুকে জানিয়ে দিয়েছে।
আমিঃ তারমানে আমি বলার আগেই আব্বু আম্মু আর অবন্তী জেনে গেছে?
লিমাঃ হুম।
আমিঃ আচ্ছা এখন আমাদের মধ্যে একটু ঝামেলা চলতেছে তুই সেটা জানিস?
লিমাঃ জানবো না কেন, আমার বুদ্ধি দিয়েই তো অবন্তী এগুলো করতেছে।
আমিঃ তারমানে এসবের মধ্যে তুইও আছিস।
লিমাঃ হুম রে দোস্ত আমি অনেকবার না করেছি কিন্তু অবন্তী আমাকে কিছুতেই ছাড়েনি। তাই করতে বাধ্য হলাম,,, কিন্তু আসল কথা কি জানিস?
আমিঃ কি?
লিমাঃ অবন্তী তোকে অনেক ভালোবাসে।
আমিঃ কচু বাসে। ও জীবনেও আমাকে মেনে নিবে না।
লিমাঃ নিবে দেখিস। আচ্ছা এবার বল তোর কি হয়েছে?
আমিঃ আমার আবার কি হবে???
লিমাঃ তুই না একটু আগে বললি তুই আর বেশি দিন নেই।
আমিঃ আরে ফকিন্নি এটা মিথ্যা ছিলো, তোর পেট থেকে আসল কথা বের করার জন্যই এমন করেছি।
লিমাঃ কিহ! তুই এটা করতে পারলি?
আমিঃ তুই যদি পারিস আমি কেন পারবো না?
লিমাঃ দাঁড়া আমি অবন্তীকে সব বলে দিবো।
আমিঃ বলে দে, তাতে তুই বাঁশ খাবি। আমার কি?
লিমাঃ ধুর আমি তোদের কারো সাথে নাই।
আমিঃ মনু মাইনক্যা ছিপায় আটকাইছো, বের হওয়ার সুযোগ নেই। বেশি চালাকি করলে এই অবস্থাই হবে।
লিমাঃ আমি আর এসবের মধ্যে নেই।
আমিঃ তুই আগে ছিলি, এখনো আছস এন্ড আগামীতেও থাকবি। শোন,,,
লিমাঃ আবার কি? আমি আর তোকে কোনো ইনফরমেশন দিবো না। তুই এতো হারামী আগে জানতাম না,,,
আমিঃ আরে আগে কথা শোন।
লিমাঃ হুম বল।
আমিঃ আমি যে সব কিছু জেনে গেছি অবন্তী যাতে না জানে।
লিমাঃ আমি ওরে বলে দিবো।
আমিঃ ওকে বলিস, আমি অবন্তীকে বলবো লিমা নিজেই এসে আমাকে সত্যি কথা বলে দিছে। তখন অবন্তীর পক্ষ থেকে খুব সুন্দর আর সাজানো একটা বাঁশ খাবি। সো অবন্তীকে কিছু বলবি না।
লিমাঃ আচ্ছা।
লিমা চলে গেলো, আমি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলাম। এবার একটু শান্তি আসলো, শালার অবন্তী জীবনটা শেষ করে দিলো।
কোথায় এসে আমার সাথে রোমান্স করবে সেটা না উলটো আমাকে বাঁশ দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
বালিকা তুমি চলো ডালে ডালে আর আমি চলি পাতায় পাতায়। জুয়েল কি জিনিষ এবার ভালো করে টের পাবা।
আয়মাইন্না হারামিরে কল দিয়ে আসার জন্য বললাম। দেখা করবো, সন্ধ্যার সময় আসলো।
আয়মানকে সব কিছু বললাম, আয়মান তো পুরা টাসকি খেয়ে বসে আছে।
আয়মানঃ আরে কি বলিস?
আমিঃ হুম সত্যিই।
আয়মানঃ অবন্তীর দিকে তাকালে তো মনে হয় নিষ্পাপ একটা মেয়ে কিছু জানে না। বাজা মাছ উলটে খেতে জানে না। কিন্তু ওর ভিতর এতো প্যাছ?
আমিঃ দাঁড়া আমি ওর প্যাচ বের করছি।
আয়মানঃ একটা জিনিষ আমার মাথায় আসছে না।
আমিঃ কি?
আয়মানঃ অবন্তী তোরে হঠ্যাৎ শাস্তি দিতে যাবে কেন?
আমিঃ আমি জানি না, সেখানেও হয়তো কোনো রহস্য আছে।
আয়মানঃ দেখ এবার কি হয়।
আমিঃ দোস্ত আমি যাই, কালকে দেখা করবো।
আয়মানঃ কোথায় যাবি?
আমিঃ এখন বাসায় যাবো। রেড়ি হয়ে অবন্তীদের বাসায় যাবো।
আয়মানঃ অবন্তীদের বাসায় কেন?
আমিঃ তুই এখনো ছোট, বুঝবি না কিছু। আরো বড় হয়ে নে তারপর নিজে নিজে বুঝে যাবি।
আয়মান আবুলের মতো তাকিয়ে রইলো, আমি বাসায় চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে আব্বুর কাছে আসলাম।
বাবাঃ কোথাও যাবি নাকি?
আমিঃ হুম।
বাবাঃ কোথায়?
আমিঃ তোমার বেয়াই মশায়ের বাসায়।
বাবাঃ এতো রাতে ওখানে কেন?
আমিঃ কেন যেতে পারি না?
বাবাঃ পারবি না কেন, শ্বশুর বাড়ি মধুর হাড়ি। যখন ভালো লাগে তখন যাবি। এখন কি অবন্তীর কথা খুব মনে পরছে?
আমিঃ আরে এগুলো কি বলো, ধুর যাবোই না।
বাবা বসে বসে হাসতেছে। আমি রান্না ঘরে গেলাম। আম্মুকে বলে বেরিয়ে গেলাম।
৩০ মিনিট পর অবন্তীদের বাসায় গেলাম। কলিং বেল চাপ দিলাম। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে দেয়। আমাকে দেখেই………
৩০ মিনিট পর অবন্তীদের বাসায় গেলাম, কলিং বেল চাপ দিলাম। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে দেয়। তাকিয়ে দেখি অবন্তীর আম্মু, আমাকে দেখেই মোটামুটি একটা টাসকি খেলো। খাওয়ার কথা যেখানে জুয়েলকে বলতে বলতে আসেনা, সেখানে নিজে থেকেই এসে হাজির তাও আবার রাতের বেলা।
শাশুড়িঃ আরে জুয়েল! আসো বাবা আসো।
আমি সালাম দিয়ে ভিতরে গেলাম। অবন্তীর বাবা বসে বসে টিভি দেখতেছে আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। আমি উনার সাথে কৌশল বিনিময় করলাম।
শ্বশুরঃ অবন্তী রুমে আছে যাও।
আমিঃ যাবো এখন না, একটু পর।
শ্বশুরঃ তাহলে বসো, গল্প করি।
আমি উনার পাশে গিয়ে বসলাম, বাবা মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলো, চাকুরীবাকরির কি খবর জিজ্ঞেস করলো।
আমিও উনার পাশে বসে সব কিছুর উত্তর দিচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর অবন্তী আসলো আমাকে দেখে ভুত দেখার মতো অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, আমি ওরে পাত্তা না দিয়ে আবারও শ্বশুরের সাথে কথা বলতে লাগলাম।
একসাথে খেয়ে আমি অবন্তীর রুমে চলে গেলাম। একটু পর অবন্তী আসলো,,,
অবন্তীঃ কি ব্যাপার তুমি এখানে আসছো কেন??
আমিঃ সেটা আপনাকে কেন বলবো????
অবন্তীঃ আজব তো! আমার রুমে এসে শুয়ে আছো অথচ আমাকেই বলবে না।
আমিঃ আমি আমার বউয়ের রুমে আসছি। আপনার সমস্যা কোথায়?
অবন্তীঃ জুয়েল এসবের মানে কি?
আমিঃ মানে খুব সোজা। আমি আমার বউয়ের কাছে আসছি আর বউয়ের সাথেই থাকবো।
অবন্তীঃ দেখো জুয়েল ভালো হবে না কিন্তু। আমি কিন্তু চিৎকার করবো।
আমিঃ তো করেন, দেখি কে আসে?
অবন্তী একটু ভয় পেয়ে গেলো। তারপর আমার একটু সামনে আসলো।
অবন্তীঃ জুয়েল তুমি সত্যি করে বলো তো কেন আসছো?
আমিঃ কেউ একজন কে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। ওরে ছাড়া থাকতে পারছিনা তাই চলে আসলাম।
অবন্তী কিছুক্ষণ আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তারপর আমার পাশে এসে বসলো।
অবন্তীঃ কাকে ভালোবাসো????
আমিঃ যে এখন আমার পাশে বসে আছে।
অবন্তীর চোখে পানি টলোমলো করতেছে, আমি ওর একটা হাত ধরে বললাম….
আমিঃ আমি কি এতোই বাজে? এতোই খারাপ যে আপনি আমাকে মেনে নিতে পারছেন না?
অবন্তীঃ…….. (চুপ করে আছে)
আমিঃ এটা ঠিক যে আপনি কখনো আমাকে মন থেকে মেনে নিবেন না। আবার এটাও জানি কোনো এক কারনে আপনি আমাকে শাস্তি দিতে চেয়েছেন কিন্তু এমন শাস্তি দিচ্ছেন আর একটু হলে তো আমি এই পৃথিবী ছেড়ে……(শেষ করার আগেই মুখ হাত দিয়ে দিলো)
অবন্তীঃ না প্লিজ। এগুলো ভুলেও মুখে আনবে না। একজন কে হারিয়ে ফেলেছি, আর কাওকে হারাতে চাইনা। এই সব কিছুর জন্য আমি অনেক অনেক সরি।
আমিঃ তো কেন এমন করলেন আমার সাথে, আমার দোষটা কি ছিলো???
অবন্তীঃ তুমি যখন মাহির বিয়েতে লিমার সাথে হেসে হেসে কথা বলতেছিলে সেটা দেখে আমার ভিতর একটা মোছড় দেয়। মনে হলো আমি খুব দামি একটা জিনিষ হারিয়ে ফেলতেছি।
তোমার আড়ালে আমি লিমাকে সব বলি তখন উনি হাসি মুখে সব বলে দেয় যেটা তোমার আর ওর প্ল্যান ছিলো। তবুও আমার মনে একটা ভয় ছিলো যে তোমাকে যদি কেউ নিয়ে যায় বা তুমি যদি অন্য কারো হয়ে যাও। সেজন্য সেদিন রাতে তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিলাম।
আমিঃ সেটা নাহয় বুঝলাম কিন্তু আমি এক্সিডেন্ট হওয়ার পর একবারও যাননি কেন?
অবন্তীঃ গিয়েছি সেটা তুমি দেখার আড়ালে। তুমি যখন ঘুমে থাকতে তখন যেতাম। আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলে তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়্র আবার চলে আসতাম।
আমিঃ কিন্তু এতো নাটক করার মানে কি?
অবন্তীঃ জুয়েল! তুমি যখন চাকরিটা পাইছো তখন আমি কি পরিমাণ খুশি হয়েছি তা বলে বুঝাতে পারবো না। কিন্তু দুঃখের বিষয় তুমি তোমার চাকরির ব্যাপারে কিছুই বলো নি। উলটো লিমাই আমাকে বলেছে,,,,
আমিঃ তখন বলিনি ঠিক আছে, কিন্তু বাসায় এসেতো বলতাম। আমি ভাবছিলাম মিষ্টি কিনে নিয়ে গিয়ে আব্বু আম্মু আর আপনাকে একসাথেই খবিশ টা দিবো।
অবন্তীঃ সেটা নাহয় ঠিক আছে, কিন্তু একবার কল করে বললে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেতো?
আমিঃ ক্ষতি হতো না, ইচ্ছা ছিলো বাসায় গিয়ে বলবো। আচ্ছা সেদিন রাতে আমাকে এতো অপমান কেন করলেন তাহলে?
অবন্তীঃ জুয়েল! আমি জানি তুমি অনেক ভালো। তোমাকে হিট করার মতো কোনো কথা আমার কাছে ছিলো না। তাই সেদিন আবোলতাবোল কি বলছি নিজেও জানি না।
আমিঃ তো কেন বললেন?
অবন্তীঃ তোমার ভাইয়া যখন ছিলো তখন আমাদের মাঝে খুব ভালো একটা সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু তুমি প্রতিদিন কাজ থেকে এসে ফ্লোরে ঘুমিয়ে যেতে।
আমিঃ আপনিই তো বলেছেন আপনি আমাকে মেনে নিতে পারবেন না, সেজন্যই তো ফ্লোরে থাকতাম।
অবন্তীঃ জুয়েল জানো তোমার ভাইয়াকে এতো ভালোবেসে ছিলাম যে, তোমার ভাইয়ার জায়গায় অন্য কাওকে কোনো দিন কল্পনাও করতে পারিনা। তাই তোমাকে কথা গুলো বললাম।
কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে এইভাবে তো আর লাইফ যায় না।
আমিঃ তো আমাকে বলতেন,,,,
অবন্তীঃ সব কথা মুখে বলতে নেই, কিছু কথা বুঝে নিতে হয়। তুমি যদি ফ্লোরে না থেকে খাটে থাকতে আমি কি কিছু করতে পারতাম?
আমিঃ সেটা নাহয় পারতেন না কিন্তু পরে বলতেন সব পুরুষ সমান। শুধু মেয়েদের সাথে থাকতে চায়,,,
অবন্তীঃ মোটেও না।
আমিঃ তো এতো কিছু করার কারন টা কি????
অবন্তীঃ দেখলাম।
আমিঃ কি দেখলেন?
অবন্তীঃ আমার বরটা আমাকে ভালোবাসে কিনা!
আমিঃ তাই নাকি?
অবন্তীঃ হুম।
আমিঃ তো কি রেজাল্ট পেলেন?
অবন্তীঃ সেটা জানি না তবে এটা মনে হচ্ছে পৃথিবীর ভাগ্যবতী নারীদের মধ্যে আমিই একজন। যে তোমার ভাইয়ার মতো ছেলেকে পেয়েছি। নিজের বাবা মায়ের চাইতেও ৩ গুণ ভালো শ্বশুর শাশুড়ি পেয়েছি। আর সেরা ভাগ্যবতী এই জন্য,,, সব শেষে তোমাকে পেয়েছি।
আমিঃ…….. (কি বলবো বুঝতে পারছিনা)
অবন্তীঃ খুব ভালোবাসি তোমায়, বলে বুঝাতে পারবো না।
আমিঃ কিন্তু আপনি যে বললেন অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে আমি তো আয়মানকে বলে দিছি অন্য মেয়ে খুঁজতে।
অবন্তীঃ ওই কি বললে তুমি? খুন করে ফেলবো।
আমিঃ কেন আপনিই তো বললেন।
অবন্তীঃ আমি বললেই কি করতে হবে।
আমিঃ হুম, আপনার আবদার না রেখে পারি?
অবন্তীঃ খুব ভালোবাসি তোমায়, পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে। পারবো তোমাকে অন্য কারো হতে দিতে।
আমিঃ……. (চুপ করে রইলাম)
অবন্তীঃ ভাবতেছি আপনাকে এখন কি বলে ডাকবো, ভাবী নাকি অবন্তী????
অবন্তীঃ মাইর খাবা কিন্তু, ভাবি কেন ডাকবে হুম? আচ্ছা মাঝেমাঝে ভাবি ডাকিও। ভাবি ডাক শুনার মাঝেও অন্যরকম একটা আনন্দ আছে।
আমিঃ ও তাই নাকি?
অবন্তীঃ হুম। বাট একটা শর্ত আছে!
আমিঃ কি সেটা?
অবন্তীঃ আজ থেকে আপনি নয় তুমি করে বলতে হবে।
আমিঃ হুম।…… (কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম)
অবন্তীঃ এই জুয়েল! চুপ করে আছো কেন?
আমিঃ ভাবতেছি।
অবন্তীঃ কি ভাবছো?
আমিঃ আব্বু আম্মুর ইচ্ছা টা কিভাবে পূরণ করবো। আজ থেকে কার্যক্রম শুরু করবো কিনা সেটা ভাবছি।
অবন্তীঃ কোন ইচ্ছা?
আমিঃ ওই যে নাতী/নাতনীর ইচ্ছাটা।
অবন্তী লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। তারপর বললো….
অবন্তীঃ এই একদম ফাজলামো করবে না।
আমিঃ ফাজলামো করি তাই না!!
এই কথা বলেই অবন্তীর হাতটা ধরে একটা টান দিলাম। অবন্তী নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে আমার বুকের উপর এসে পড়লো….
অবন্তীঃ এই জুয়েল শোনো শোনো।
আমিঃ হুম বলো।
অবন্তীঃ তোমার না অনেক ইচ্ছা ধুমধাম করে বিয়ে করা।
আমিঃ হুম, ছিলো বাট এখন বলে লাভ কি?
অবন্তীঃ বলে লাভ আছে। আমাদের বিয়েটা আবারও হবে এন্ড সেটা তোমার ইচ্ছা মতোই।
আমিঃ অনেক টাকা লাগবে কিন্তু পাবো কোথায়?
অবন্তীঃ সেটা তুমি জানো বাট যদি বিয়ের অনুষ্ঠান না হয় তাহলে কিন্তু আমি তোমাদের বাসায় যাবো না। আর আমাকে টাচও করতে দিবো না।
আমিঃ এটা কেমন কথা?
অবন্তীঃ যেটা বলেছি সেটাই হবে।
আমিঃ আরে ধুর, এই মুহূর্তে টাকা কই পাবো আর আব্বু আম্মুকে কি বলবো?
অবন্তীঃ আচ্ছা আব্বু আম্মুকে বোঝানোর দায়িত্ব আমার।
আমিঃ আচ্ছা দেখি কি করা যায়।
অবন্তীঃ হুম দেখো, আর এখন নিচে থাকবা।
আমিঃ মানে! সব কিছুতো ঠিক আবার নিচে কেন?
অবন্তীঃ কোনো কিছুই ঠিক নেই। বলছিনা অনুষ্ঠান ছাড়া তোমার মনের আশা পূরণ হওয়া ছাড়া খাটে উঠতে দিবো না।
আমিঃ এটা কোনো কথা, নিচে থেকে থেকে আমার সমস্যা হয়ে গেছে। প্লিজ আজকে অন্তত উপরে থাকতে দাও।
অবন্তীঃ ওকে দিবো বাট একটা শর্ত আছে।
আমিঃ আবার কি শর্ত?
অবন্তীঃ আমাকে টাচ করতে পারবে না। দুজনের মাঝখানে কোলবালিশ থাকবে।
আমিঃ আচ্ছা বাবা ঠিক আছে, তারপরও উপরে থাকি।
অবন্তীঃ ওকে ওই পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ো।
আমিঃ আপনি ঘুমাবেন না?
অবন্তীঃ বলছিনা তুমি করে বলতে।
আমিঃ ও সরি,,,
অবন্তীঃ তুমি ঘুমাও, আমি পরে ঘুমাবো।
কি আর করা মাঝখানে একটা কোলবালিশ দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। আমি আবার সব সময় কোল বালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমাই।
রাতের বেলা মনে হচ্ছে কোলবালিশ নাড়াচাড়া করছে, কিন্তু কোলবালিশ এতো নরম কিভাবে হয়। আস্তে করে তাকিয়ে দেখি কোল বালিশ নিচে পড়ে আছে আর অবন্তী আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। এইজন্যই তো বলি কোল বালিশ এতো নরম কেন!!!
এটা যে আসল কোলবালিশ, যাইহোক আমিও কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠলাম কারো মিষ্টি হাসি দেখে। বাহ! ভেজা চুল দেখে আবারও ক্রাশ খেলাম।
উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর নাস্তা করে আবার রুমে এসে অফিসের জন্য রেড়ি হয়ে নিলাম। অবন্তী রুমে আসলো….
অবন্তীঃ এই তুমি কি এখন চলে যাবে?
আমিঃ হুম।
অবন্তীঃ আচ্ছা সাবধানে যেও, আর যাওয়ার পর আমাকে একটা কল দিও। ওকে.???
আমিঃ ওকে, ওইটা কি দেখেন তো?
অবন্তীঃ কোনটা?
এ কথা বলে আমি যেদিকে ইশারা করেছি অবন্তী সেদিকে তাকালো আর আমি এই সুযোগে ওর গালে একটা ভালোবাসার স্পর্শ একে দিলাম।
অবন্তী লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
অবন্তীঃ এটা কি করলে?
আমিঃ কোনটা?
অবন্তীঃ এই যে এক্ষুনি দিলা।
আমিঃ আমার বউকে আমি দিয়েছি, আপনার সমস্যা কোথায়?
অবন্তী হাসতে শুরু করলো।
আমিঃ এই রাতে আসবো?
অবন্তীঃ জি না মশাই, আপনি আর এই বাসায় আসবেন না। আবার বিয়ের জন্য প্রিপারেশন নেন। নতুন বউ সেজে আপনাদের বাসায় যাবো। তখন পেট ভরে আদর করিয়েন। এর আগে যাতে আপনার চেহারাও না দেখি।
আমিঃ আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে?
অবন্তীঃ না পারার কি আছে? এই তুই বকবক না করে অফিসে যাও। দেরি হয়ে যাচ্ছে,,, আর হে আমি আব্বু আম্মুকে আবার বলে দিবো।
আমিঃ ওকে,,
অবন্তীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। আজকে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করতেছে।
তারপর অফিসে চলে গেলাম, সারা দিন অফিসে কাজ করলাম এর মধ্যে বেশ কয়েকবার অবন্তীর সাথে কথা হলো।
বিকালবেলা আয়মানকে কল দিয়ে আসতে বললাম, ওর সাথে দেখা করে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। অবন্তীর কথা গুলো বলতে লাগলাম।
আয়মানঃ যাক বাবা, বেঁচে গেলাম। জানিস জুয়েল আমি কতো টেনশনে ছিলাম।
আমিঃ আরে আমিও তো অনেক টেনশনে ছিলাম। যে অবন্তী আব্বু আম্মুকে ছাড়া কিছু বুঝে না সে কি করে আবভ আম্মুকে ছাড়া থাকবে।
আয়মানঃ হুম সেটাই। যাইহোক সব কিছু মিটমাট হয়েছে।
আমিঃ নারে আরো বড় একটা প্যারায় ফেলেছে আমাকে।
আয়মানঃ আবার কি?
আমিঃ আমাদের বিয়ের তো কোনো অনুষ্ঠান হয়নি, আবার অনেকে জানেও না। তাই অবন্তী চাইছে বড় করে অনুষ্ঠান করে ওরে আবার নতুন করে বউ সাজিয়ে নিয়ে যেতে।
আয়মানঃ ভালো তো। তোরও তো ইচ্ছা ছিলো ভালোভাবে বিয়েটা করা।
আমিঃ হুম ইচ্ছা তো ছিলো, কিন্তু এখন টাকা কোথায় পাবো? অনেক টাকার দরকার,,,,
আয়মানঃ টাকা তো লাগবেই, টাকা ছাড়া কিছুই হবে না।
আমিঃ আগামী ১ বছর টাকা জমাতে হবে যদি অনুষ্ঠান করতে চাই।
আয়মানঃ আরে না, এটা পসিবল হবে না। তুই কি এই একবছর অবন্তীকে ওর বাবা বাসায় রেখে দিবি? এটা কিছুতেই হয় না।
আমিঃ সেটাই তো ভাবছি।
আয়মানঃ জুয়েল! আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে।
আমিঃ কি?
আয়মানঃ তুই তোর অফিস থেকে লোন নে। তাহলে তোর বেতন থেকে প্রতি মাসে একটা করে পার্সেন্টিস ওরা রেখে দিবে। এতে করে তোর উপর খুব বেশি প্রেশার পরবেনা।
আমিঃ জয়েন করেছি অল্প কিছু দিন হলো, এখন কি লোন দিবে? পুরাতন চাকুরীজীবী ছাড়া লোন দেয়না।
আয়মানঃ আরে বেটা, তুই লিমার সাথে কথা বল। দেখনা কিছু একটা হয় কিনা।
আমিঃ হুম দেখি।
এরপর আর কিছু কথাবার্তা বলে বাসায় চলে আসলাম। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সোফা রুমে গেলাম। আব্বু বসে বসে টিভি দেখতেছে। আমি গিয়ে বাবার পাশে বসলাম।
বাবাঃ কিরে কি অবস্থা, চাকরি কেমন চলছে।
আমিঃ এইতো ভালোই।
বাবাঃ আমার মেয়ে কেমন আছে?
আমিঃ ভালো। তোমাদের সাথে কথা হয়নি?
বাবাঃ হুম সব সময় হয়। তুই নাকি মহা ধুমধামে বিয়ে করতে চাস?
আমিঃ এগুলো কি বলো! (লজ্জায় আমার অবস্থা শেষ)
বাবাঃ ঠিকই তো বললাম। তোর নাকি সেই ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন মহা ধুমধাম করে বিয়ে করবি। এখন আবার সেই ইচ্ছাটা জেগে উঠেছে।
আমিঃ ধুর এখানে বসবোই না।
আমি উঠে চলে গেলাম। বাবা বসে বসে হাসছে, আমি আম্মুর কাছে গেলাম, আম্মু রান্না করতেছে।
আম্মুঃ কিরে বাবার কাছ থেকে চলে আসলি কেন?
আমিঃ আরে ধুর আব্বু শুধু উল্টাপাল্টা কথা বলে।
আম্মুঃ ঠিকই তো বলছে।
আমিঃ আম্মু তুমিও বলছো। ধুর আমি রুমে গেলাম,,,,
রুমে এসে বসে রইলাম, চারপাশে যেন অবন্তীর স্মৃতি গুলো ছড়িয়ে আছে। আমি অবন্তীকে কল দিলাম।
আমিঃ কি করেন!
অবন্তীঃ একজনের কথা ভাবতেছিলাম আর উনিই কল দিলো।
আমিঃ আমিও, খুব মিস করছি। প্লিজ চলে আসো, অনুষ্ঠান পরে করবো।
অবন্তীঃ জ্বি না সাহেব, সেটা হচ্ছে না।
আমিঃ আমার উপর বেশি প্রেশার হয়ে যাচ্ছে না?
অবন্তীঃ আমার বরের উপর প্রেশার পরবে এতে আপনার সমস্যা কোথায়!
আমিঃ সত্যিই মিস করছি
অবন্তীঃ হুম, আমিও করছি
আমিঃ ওকে রাখি।
কল কেটে দিলাম। অবন্তীর কথা ভাবতেছি এমন সময় আম্মু রুমে আসলো, ডেকে নিয়ে গেলো খাওয়ার জন্য।
আমি আব্বু আর আম্মু একসাথে খাচ্ছি এমন সময় আব্বু বললো….
বাবাঃ জানিস জুয়েল!
আমি উনার দিকে তাকালাম….
বাবাঃ আমাদের মানে তোর আম্মুর আর আমারও অনেক ইচ্ছা ছিলো আমাদের ছোট ছেলের বিয়েটা অনেক সুন্দর হবে। সবাই অনেক আনন্দ করবে, কিন্তু দেখ কেমন বাবা হলাম আমি সেই ইচ্ছাটাও পূরণ করতে পারলাম না।
আমিঃ আব্বু এগুলো কি বলো? টাকা হলে সব করা যাবে। এতে টেনশন করার দরকার নেই।
আব্বুর মন খারাপ দেখে আমি উঠে চলে গেলাম। রাতের বেলা আব্বু আম্মু ঘুমিয়ে গেছে। আমি উঠে বের হয়ে গেলাম।
ভাইয়ার কাছে যাবো, কয়েকদিন ভাইয়ার কাছে যেতে পারিনি। আমার ভাইটা মন খারাপ করবে। বাইরে চাঁদের আলো ছিলো। আমি হেটে হেটে ভাইয়ার কবরের কাছে গেলাম। কবরের মাথা বরাবর গিয়ে বসলাম।
ভাইয়ার কবরের পাশে কয়েকটা গাঁদাফুল গাছ লাগিয়ে ছিলাম সেগুলোতে ফুল ফুটেছে। দেখে মনে হচ্ছে ভাইয়া হাসতেছে।
“ভাইয়া কেমন আছিস? তুই হয়তো ভাবছিস আমি তোকে ভুলে গেছি। নারে ভাই আমি তোকে ভুলিনি,সময় পাইনি তোর কাছে আসার।
তোর কর্তব্য গুলো আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করতেছি কিন্তু তোর মতো পারছিনা। তবুও চেষ্টা করতেছি।
ভাইয়া যেখানেই যাইনা কেন তোর অভাব টা আমি অনুভব করি, তোর স্মৃতি গুলো আমাকে ঘুমাতে দেয়না। ঘুমাতে গেলে তোর সাথে ঘুমানোর কথা মনে পড়ে, খেতে গেলে তোর সাথে ভাগাভাগি করে খাওয়ার কথা মনে পড়ে।
খেলা দেখতে গেলে তোর দলের বিরোধিতা করার কথা গুলো মনে পড়ে।
আজ সব আছে, ভালো একটা চাকরিও পেয়েছি, টাকা এখন নেই হয়তো ভবিষ্যৎ এ হবে। সব কিছু হয়তো পাবো কিন্তু তোকে পাবো না।
ভাই আমি জানি তুই আমার উপর অভিমান করে আছিস, ভাই বিশ্বাস কর ১ সেকেন্ডের জন্যও আমি তোকে ভুলিনি। তোর অবন্তীকে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি ভালো রাখার। পড়ালেখা করানোর, আমি সফল হয়েছি।
জানিস ভাইয়া প্রতি রাতেই আমি মায়ের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই, কিন্তু আমি মাকে শান্তনা দিই না। তুই আবার এটা ভাবিস না আমি স্বার্থপর। আমি আম্মুকে শান্তনা দিই না এইজন্য যে আম্মুকে সান্তনা দেওয়ার মতো ভাষা আমার নেই।
অবন্তী এখনো তোকে অনেক ভালোবাসে। আমাকে মেনে নিলেও অবন্তীর মনে তুই যে জায়গাটা করে নিয়েছিস সেটাতে তুই সারা জীবন থাকবি।
ভাই আজকে সব আছে শুধু তুই নেই, আর একবারের জন্য আমাদের মাঝে ফিরে আয়। দেখে যা ওদের আমি ঠিকমতো রাখতে পারছি কিনা আর একবার এসে আমার সাথে ঝগড়া করে যা। এবার আর তোর সাথে মারামারি করবো না। তুই শুধু একবার আয়। “””
চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেছে আর কোনো কথাই আসছে না আমার মুখ দিয়ে। আরো কিছুক্ষণ ওখানে বসে কবর জিয়ারত করে বাসায় চলে আসলাম।
পরের দিন ঘুম থেকে উঠে, ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে গেলাম।
১১ টার দিকে লিমা আসলো…
লিমাঃ দুলাভাই জুয়েল নাকি এইটা?
আমিঃ মনে হয়।
লিমাঃ কি অবস্থা?
আমিঃ ভালো নারে। বিপদে আছি,,,
লিমাঃ কেন আবার কি হইছে। এবার তো সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে। অবন্তী আমাকে সব কিছু বলেছে। তুই তো হারামি কিছুই বলবি না। এখন বল আবার কি হইছে?
আমিঃ…… (সব কিছু বললাম)
লিমাঃ ওরে অনেক টাকা লাগবে।
আমিঃ হুম। লোন ওতো দিবে না, কারন নতুন জয়েন করেছি
লিমাঃ হুম, আচ্ছা আমি ম্যানেজারকে বলে দিবো, দেখ কিছু হয় কিনা।
আমিঃ থেংক্স দোস্ত!
লিমাঃ এক
0
7
আলোচ্য গল্পটি পড়ে আমার খুব ভালো লাগলো। গল্পটি খুবই ভালো। ভাবি যখন হবে তখন সবারই ভাল লাগবে এটাই তো প্রত্যাশা। গল্পটা আমার মন ছুঁয়ে গেছে।