অপরিচিতার প্রেমে

0 5
Avatar for kamal16
4 years ago

গল্পঃ অপরিচিতার প্রেমে

পর্ব_০১

ক্লাস শেষ করে বের হচ্ছি এমন সময় একটা পিচ্ছি এসে আমার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দেয়৷ তারপর এক দৌড় দিয়ে চলে যায়৷ আমি চিরকুট টা খুললাম। তাতে লেখা "" এই যে মি. জানেন আপনাকে আমার অনেক ভালো লাগে। """

এটা পড়ে আমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম, কার চিরকুট কে জানে। আমাকে দিবে না এটা সিউর। মনে হয় বাচ্ছাটা ভুল করে আমাকে দিয়ে চলে গেছে।

ইস বেচারি ওর মনে কথাটাও বলতে পারেনি। যাইহোক চিরকুট টা পকেটে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম। চিরকুট নিয়ে রাখলাম কালকে আসলে যদি পিচ্ছিটাকে পাই তাহলে ওরে আবার দিয়ে দিবো।

এবার চলেন আপনাদের পরিচয় টা দিয়ে দিই, আমি নীল। অনার্স স্টুডেন্ট। ব্যাচেলর থাকি। আব্বু আম্মু বাড়িতেই থাকে। মধ্যবিত্ত পরিবার হওয়ায় টিউশনি করিয়ে নিজের খরচ নিজেই চালাই। আর সামান্য কিছু বাড়িতে পাঠাই। এইভাবে কোনোমতে দিন যাচ্ছে।

পরিচয় দিতে দিতে বাসায় চলে আসছি।

রাতের বেলা চিরকুট আবার খুলে দেখলাম। ভালোই লাগছে, কে সেই ভাগ্যবান আল্লাই জানে। ইসস আমাকেও যদি কেউ এইভাবে চিরকুট দিতো।

ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলাম। পরের দিন ঘুম থেকে উঠে টিউশনি করিয়ে কলেজে গেলাম।

বার বার এদিকওদিক তাকাচ্ছি যদি পিচ্ছিটাকে খুজে পাই, তাহলে চিরকুট টা দিয়ে দিবো। কিন্তু না পিচ্ছির কোনো দেখাই নাই,,,

ক্লাসে চলে গেলাম, দেখলাম শাকিল আগে থেকেই বসে আছে।

শাকিলঃ কিরে এতো দেরি করলি যে?

আমিঃ টিউশনি থেকে আসতে দেরি হয় গেছে৷

শাকিলঃ ওহ।

আমিঃ রাফাত আসেনি এখনো?

শাকিলঃ না, আমি তো ভাবছি তোর সাথে একসাথে আসবে।

আমিঃ দাঁড়া কল দিয়ে দেখি।

তারপর রাফাতকে কল দিলাম। কিছুক্ষণ পর রাফাতও আসলো।

কয়েকটা ক্লাস করে ক্যান্টিনে গিয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম, তারপর বেরিয়ে গেলাম। কলেজের গেইটের সামনে আসার পর শাকিল বাইক বের করলো। রাফাত গিয়ে প্রথমে বসলো। তারপর আমি বসতে যাবো এমন সময় আজকেও একটা পিচ্ছি এসে একটা নীল কালারের চিরকুট আমার হাতে দিয়ে দৌড় দেয়। বাইবে বসে যাওয়ার কারনে ওরে আর ধরতে পারিনি। আমি চিরকুট টা পকেটে নিয়ে নিলাম।

তারপর আমরা দিঘীর পাড়ে গিয়ে বসলাম। নানান রকম ক্যাপলদের প্রেম ভালোবাসা উপভোগ করতেছি৷

হঠাৎ করে চিরকুট টার কথা মনে পড়লো, বের করলাম। ওটাতে লেখা "" এই যে মি. নীল কালারের শার্টে আপনাকে সুন্দর দেখায়""

আমি আমার নিজের গায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমিও নীল কালারের শার্ট পড়ে আছি। অবাক হয়ে বসে রইলাম। তাহলে কি আমাকে টার্গেট করেই কেউ এগুলো দিচ্ছে? এক দিন ভুল হবে, সব সময় তো আর ভুল হবে না।

রাফাত আমার হাত থেকে চিরকুট টা নিয়ে পড়লো।

রাফাতঃ কিরে এইটা কি?

আমিঃ একটা চিরকুট।

রাফাতঃ কে দিছে?

আমিঃ জানি না, একটা পিচ্ছি এসে দিয়ে গেছে৷

শাকিলঃ দেখি দেখি।

রাফাতঃ এই নে।

শাকিলঃ "" আপনাকে নীল শার্টে সুন্দর লাগে।"" এই কেরে মেয়েটা?

আমিঃ দোস্ত আমি সত্যিই জানি না। জানিস গত কালকেও একটা দিয়েছে।

রাফাতঃ কি বলিস আমাদের কে তো কিছুই বলিস নি।

আমিঃ আমি ভাবছিলাম কেউ ভুল করে আমাকে দিয়ে দিছে তাই আর বলিনি।

শাকিলঃ কি লেখা ছিলো ওটাতে?

আমিঃ এই যে মি. আপনাকে খুব ভালো লাগে।

রাফাতঃ মামু তোর তো হয়ে গেছে। তোর উপর কেউ ক্রাশ খেয়ে বসে আছে।

আমিঃ আরে না, হয়তো ভুল করে কেউ আমাকে দিচ্ছে।

শাকিলঃ শালা ভুল কি মানুষ সব সময় করে? আর আজকের লেখাটা তো তোর গায়ের শার্টের সাথে মিলে গেছে।

আয়োজন হুম সেটাই তো। আচ্ছা বাদ দে, আরো কয়েকদিন দেখ। আমার মনে হয় তোকে কেউ পছন্দ করে।

আমিঃ আরে ধুর আমাকে কে পছন্দ করবে?

রাফাতঃ কেন করতে পারে না?

আমিঃ পারে, বাট এতো ছেলে থাকতে আমাকে কেন করবে?

রাফাতঃ আচ্ছা বাদ দে। চল বাসায় চলে যাবো।

আমিঃ হুম, তাড়াতাড়ি চল। আজকে বুয়া আসবে না। রান্না করতে হবে।

তারপর শাকিল আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে সে বাসায় চলে যায়।

রাতের বেলা কিছুক্ষণ পড়লাম, ভালো লাগছে না দেখে হুমায়ুন আহমেদ এর একটা গল্পের বই নিয়ে বারান্দায় গেলাম।

একটা চেয়ারে বসে পড়তেছি এমন সময় একটা মেসেজ আসলো। আমি ভাবছি সিম কোম্পানি গুলোর। খেয়াল না করে পড়ার দিকে মন দিলাম।

২ মিনিট পর আবার আসলো। এরপর মোবাইল টা নিয়ে দেখি একটা নতুন নাম্বার থেকে মেসেজ আসছে।

১ম মেসেজঃ কি ব্যাপার মন খারাপ নাকি?

২য় মেসেজঃ কোনো সিম কোম্পানি থেকে মেসেজ আসেনি আমিই দিয়েছি।

মেসেজ গুলো দেখে আমি কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম৷ তারমানে সত্যিই আমার সাথে এগুলো হচ্ছে।

আমি তাড়াতাড়ি ওই নাম্বার টাতে কল দিলাম। কিন্তু ব্যস্ত দেখাচ্ছে,,, পরে আমিও একটা মেসেজ দিলাম। "" কে আপনি??

কিন্তু কোনো রিপ্লে আসলো না। যাইহোক খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে কলেজে গেলাম।

গিয়ে দেখি রাফাত শাকিল বসে আছে,,,,

রাফাতঃ কিরে আসছস।

আমিঃ হুম।

শাকিলঃ চলে ক্লাসে যাই।

আমিঃ নারে আজকে ক্লাস করতে ইচ্ছে করছেনা, চল লাইব্রেরিতে গিয়ে বসি৷

রাফাতঃ কি হইছে তোর?

আমিঃ.... (কালকে রাতের ঘটনাটা বললাম)

রাফাতঃ তারমানে তোকে কেউ ফলো করছে।

শাকিলঃ কিন্তু তোর নাম্বার ফেলো কোথায়?

আমিঃ সেটাই ভাবছি।

এমন সময় আরো একটা মেসেজ আসলো। আমি তাড়াতাড়ি করে মোবাইল বের করলাম। চেক করে দেখি ওটাতে লেখা,,,,

"" এই ক্লাস করবেন না, ওই দুই হারামির সাথে থাকলে আপনিও হারামি হয়ে যাবেন। ""

আমি মেসেজটা রাফাত শাকিল কে পড়ে শুনালাম।

রাফাতঃ তারমানে ও আমাদের আশেপাশে আছে।

শাকিলঃ এই বাইরে চল তো। তাড়াতাড়ি।

আমরা তাড়াতাড়ি করে বাইরে চলে আসলাম। অনেক খোঁজা খুঁজির পরও কাওকে দেখলাম না। সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। অতঃপর আমরা ব্যর্থ হয়ে আবারও লাইব্রেরিতে চলে আসলাম।

কিছুক্ষণ ওখানে থেকে বাইরে চলে যাবো এমন সময় রাফাত ফিদা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আমিঃ কিরে কি হইছে তোর?

রাফাতঃ দোস্ত রাত্রি আসছে।

আমিঃ কোন রাত্রি ?

শাকিলঃ আমাদের ডিপার্টমেন্টের রাত্রি নাকি?

রাফাতঃ হুম।

আমিঃ ও আসছে তো কি হইছে?

রাফাতঃ জানিস ওরে দেখলে আমার ভিতরে লাড্ডু ফুলে। ওর গাল দুটো টেনে দিতে ইচ্ছা করে।

শাকিলঃ শুধু তোর না, ও এই কলেজের মোটামুটি সবার ক্রাশ।সিনিয়ররা সবাই ওর পিছে পিছে ঘুরে। খামোখা সময় নষ্ট না করে চল।

বাইরে আসলাম। এসে যেই গেইটের সামনে গেলাম, তখনি একটা পিচ্ছি এসে চিরকুট আমার হাতে দিয়ে চলে গেলো, আমি চিরকুট টা না পড়ে এক দৌড় দিয়ে ছেলেটাকে ধরলাম।

আমিঃ ওই দাঁড়া!!

ছেলেঃ জ্বি ভাইয়া বলেন।

আমিঃ তোকে এইটা কে দিছে?

ছেলেঃ একটা আপু দিছে৷

আমিঃ কোন আপু?

ছেলেঃ আমি উনাকে ছিনি না। উনি আমাকে ৫০ টাকা দিয়েছে৷ তারপর বললো এইটা আপনাকে দিয়ে দৌড় দিতে।

আমিঃ ওরে দেখলে ছিনবি?

ছেলেঃ না উনি হিজাব পড়া ছিলো।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে যা।

ছেলেটা কে বিদায় দিয়ে আমি চিরকুট টা পড়লাম। * এই প্রতিদিন একটা শার্ট পড়েন কেন? *

শুধু এতো টুকুই লেখা। তারপর রাফাত শাকিলের কাছে চলে আসলাম। ওদের সাথে বেরিয়ে গেলাম।

রাতে পড়তেছি এমন সময় সেই আগের নাম্বার থেকে মেসেজ আসলো। * আমি আপনাকে ২ টা শার্ট কিনে দিবো *

আমি রিপ্লাই দিলাম। কেন, আমি ফকির নাকি? যে আপনার দেওয়া শার্ট পড়বো?

ও রিপ্লাই দিলো,, আর একবার কথা বললে মেরে পানিতে ফেলে দিবো, যেটা বলছি সেটা।

আমি সাথে সাথে কল দিলাম, কিন্তু না কল যাচ্ছে না।

সকালবেলা ঘুমিয়ে আছি এমন সময় আমার রুমমেট + বন্ধু রিয়াদ আসলো।

রিয়াদঃ ওই নীল ওঠ। তোর পার্সেল আসছে।

আমিঃ আমার আবার কিসের পার্সেল?

রিয়াদঃ আমি কেমনে জানি, খুলে দেখ।

আমি তাড়াতাড়ি করে খুলে দেখলাম ওটাতে দুইটা শার্ট আছে। বুঝতে বাকি রইলো না কালকে রাতের কথাটা ও রেখেছে।

কিছুক্ষণ পর একটা মেসেজ আসলো,, আজকে এখান থেকে একটা পড়ে কলেজে আসবেন

আমিঃ দোস্ত তোকে এই টা কে দিলো?

রিয়াদঃ একটা ছেলে দিয়ে গেছে।

আমিঃ ছেলেটাকে ছিনিস?

রিয়াদঃ আরে না, পিচ্ছি একটা ছেলে এসে দিয়ে গেছে। আর বলছে এইটা নীল কে দিবেন।

আমিঃ ওহ।

রিয়াদঃ কেসটা কি?

আমিঃ কিসের কেস?

রিয়াদঃ আমার সাথে মিথ্যা বলিস না।

আমিঃ আচ্ছা বলছি শোন...(পুরো ঘটনা শেয়ার করলাম)

রিয়াদঃ তলে তলে এতো টুকু করে ফেলেছিস অথচ আমাকে কিছু বললিও না।

আমিঃ আমি ভাবছি হয়তো ভুল করে দিয়েছে, তাই বলনি। তবে তোকে আর আবিরকে এমনিতেই আজকে বলতাম।

রিয়াদঃ আচ্ছা আজকে কলেজে যাবি না?

আমিঃ হুম। আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসি।

তারপর ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে ওখান থেকে একটা শার্ট পড়ে কলেজে চলে গেলাম।

কলেজের গেইট দিয়ে ঢুকার সময় আবারও মেসেজ আসলো৷

"" বাহ! খুব সুন্দর লাগছে। ""

তারমানে আমার আশেপাশেই আছে। আমি তাড়াতাড়ি করে আশেপাশে খুঁজতে লাগলাম। গেইটের দিকে তাকাতেই....

wait

1
$ 0.00
Avatar for kamal16
4 years ago

Comments