ওটা মানুষ না

0 9
Avatar for kamal16
3 years ago

-ওগো শুনছো? আমি প্রেগন্যান্ট।

- What..? বিয়ে হয়েছে গতকাল। আর আজ তুমি প্রেগন্যান্ট? মানে কি এসবের..

- সেটা তো আমিও বুঝতে পারছিনা। আজ সকালে খারাপ লাগছিলো,তাই ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলে। তাই আর ডাক দেয়নি।

- সত্যি করে বল,বিয়ের আগে কার সাথে আকাম করেছিস।

- আরে সত্যিই বলছি, আমি কারো সাথে কিছুই করিনি। আর বিয়ের আগে তো তোমার সঙেই আমার ৪ বছরের রিলেশন ছিলো। তবে কিভাবে বলতে পারো এইটা।

- দেখো নিপা , শারীরিক সম্পর্কে যুক্ত না হলে কেও প্রেগন্যান্ট হয়না। এইটা অবশ্য তুমি ভালো করেই জানো। তবে এখানে নতুন করে কি বলবো তোমাকে।

এতক্ষণ ঝগড়া করছিলো ইমরান আর নিপা। চার বছর যাবত রিলেশন করার পর,গতকাল ফ্যামিলিগত ভাবেই বিয়েটা করে। কিন্তু বিয়ের পরেরদিন একটা মেয়ে কিভাবে প্রেগন্যান্ট হয়। এইটা সত্যিই অস্বাভাবিক একটা ব্যাপার।তাছাড়া বাসর ঘরেও তারা কোনো কিছু করেনি। আবার করেনি বলতে কিছুই করেনি তা নয়, একেবারে কিছুই করেনি ( খালি নেগেটিভ নেন কেন)

এদিকে ইমরান সাহেব চিন্তায় চিন্তায় শুকিয়ে যাচ্ছে । পরিবারের কেও জানতে পারলে তো মহা বিপদ হয়ে যাবে। সারাটা রাত তিনি চিন্তা করতে করতেই পার করে দেয়। সকাল হতেই ইমরান সাহেব বিছানা ছেড়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। নিপা কিছু বুঝে উঠার আগেই,ওর ফোনে কল আসে ইমরানের। নিপা রিসিভ করেই বলল,

- সকাল সকাল কোথায় চলে গেছো। এদিকে চিন্তায় আমি মরে যাচ্ছিলাম।

- চিন্তা করার কিছু হয়নি। তুমি খেয়েদেয়ে বাহিরে আসো।আম্মুকে বলবা আমি ডেকেছি।

- কোথায় যাবো আমরা?

- জাহান্নামে যাবো,যাবে তুমি? ( রাগ দেখিয়ে)

- রাগ করো কেনো । কোথায় আসবো বলো।

- চৌ-রাস্তার পাশে এসো।

- হুম আসছি।

নিপা কলটা কেটে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হবার পর রেডি হয়ে,চলে যায় ইমরানের কাছে। খাবারটাও খেয়ে যায়নি মেয়েটা। এই সময়ে কয়জন বা খেতে চায়। কিন্তু এইটাই ছিলো নিপার শেষ যাওয়া। দুপুর পেরিয়ে বিকেল হলো। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামলো। বাসার সবাই চিন্তায় পড়ে যায় বিষণ। ফোনেও তাদের পাওয়া যাচ্ছেনা। দুজনের ফোনই সুইচ অফ। এদিকে রাত নেমে এসেছে। চারদিক যতো অন্ধকার হচ্ছে, আবছা কালো ছায়াটা যেনো বাড়ির উপরেই এসে পড়েছে। সকাল বেলা বের হলো,আর এখন রাত ১২ টা ছুঁই ছুঁই। তাও তাদের নিশানা নেই। অবশেষে ইমরানের আব্বু পুলিশের সাহায্য নেয়। পুলিশকে কল দিয়ে জানিয়ে দেয় ব্যাপারটা। পুলিশ পুরো শহর জুড়ে তাদের খুজে চলেছে। রাত ৩:২৫ বাজে। এখনো কেও ঘুমায়নি। অপেক্ষারত হয়ে আছে সবাই, কবে মিলবে দেখা।

রাত ঠিক ৪:৪৩ মিনিটে থানা থেকে একটা ফোনকল আসে। ইমরানের আব্বু রিসিভ করার ১ মিনিট পর মাথা ঘুরে পড়ে যায়। সবাই দৌড়ে এসে উনাকে ধরে। চোখমুখ আর মাথায় পানি দিয়ে অবশেষে উনার জ্ঞান ফিরে। সবাই কৌতূহল হয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। ইমরানের আব্বু ওদের জানায়, নিপার লাশ নাকি চৌ-রাস্তার পাশে একটা ডাস্টবিনে পড়ে আছে। আর ইমরান সাহেব নাকি,ঢাকার নাইট ক্লাবে মদ খেয়ে ফুর্তি করতেছিলো। পুলিশ সেখান থেকে ইমরানকে গ্রেপ্তার করে। বাড়ির সবাই ঘটনা শুনে দৌড়ে যায় থানায়। গিয়ে দেখে নিপার লাশ পড়ে আছে থানার বারান্দায়। আর ইমরান জেলখানায় মাতাল অবস্থায় বসে আছে। পুলিশ ইমরানের পরিবারকে আরো জানায়,যে নিপার ফোনে একটা কল রেকর্ডিং পাওয়া গেছে। যার থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়,নিপার হত্যাকারী ইমরান। ইমরানের আব্বু আম্মু কিছুতেই বিশ্বাস করলো না। বাধ্য হয়ে পুলিশ তাদের রেকর্ড শুনায়। রেকর্ড চালু হবার পর সবাই মন দিয়ে শুনছে,

-সকাল সকাল কোথায় চলে গেছো। এদিকে চিন্তায় আমি মরে যাচ্ছিলাম।

- চিন্তা করার কিছু হয়নি। তুমি খেয়েদেয়ে বাহিরে আসো । আম্মুকে বলবা আমি ডেকেছি।

- কোথায় যাবো আমরা?

- জাহান্নামে যাবো,যাবে তুমি?

- রাগ করো কেনো । কোথায় আসবো বলো।

- চৌ-রাস্তার পাশে এসো।

- হুম আসছি।

রেকর্ড শেষ হবার পর পুলিশ আরো একটা নিউজ দেয়। নিপা প্রেগন্যান্ট ছিলো,সে ব্যাপারে।বিয়ের পরেরদিন প্রেগন্যান্ট কেও হতে পারেনা। কিন্তু নিপা প্রেগন্যান্ট ছিলো। অর্থাৎ এইটা জানতে পেরেই ইমরান নিপাকে খুন করে ।

পুলিশের তথ্যবচন এতটাই গভীর যে, খুনটা যে ইমরান করেছে,এইটা সবাই শিওর। সবাই ইমরানকে থু থু মারতে থাকে। ইমরানকে এইটাও বলে" নিপার সমস্যা আছে এইটা আমাদের বলতে পারতিস। আমরা যা করার করতাম। কিন্তু তুই তো খুনি। আমি কোনো খুনিকে পেটে ধরিনি। তুই আজ থেকে আমাদের কেও না "। ইমরানের পর ইমরানের বাবা এসে আরেকটা খোচা মেরে দিলো। এভাবে এসব বলেই সবাই চলে যেতে লাগলো। পিছন থেকে ইমরান চিৎকার দিয়ে বলছিলো," আমি খুনি নয়। আমি খুন করিনি,বিশ্বাস করো কেও"।

কিন্তু কে শুনে কার কথা। ইমরানের ফাসির রায় পড়ে যায়। মাত্র ২২ দিন পর ইমরানের ফাসি। সমস্ত কিছু তার বিরুদ্ধে। কিন্তু আসলেই সে রাতে কি হয়েছিলো?

ইমরানের কথা কেও শুনেনা। কাকে বা বলবে সেদিন রাতের কথা। এদিকে সময় পুরিয়ে যাচ্ছে। ৯ দিন পার হয়ে গেছে, হাতে আর ১৩ দিন বাকি । ১৩ দিন পরই ফাসির মঞ্চে উঠতে হবে। ঠিক তখনি থানায় ইমরান সাহেবের সাথে কেও একজন দেখা করতে আসে। ইমরান সাহেব নিজেই অবাক। ওর সাথে তো দেখা করার মত কেও নেই। ইমরান সাহেব কৌতূহল হয়েই অপেক্ষা করছে। তখনি তিনি দেখলেন,কালো জ্যাকেট পরিহিত, মাথার চুল স্টাইলিশ এমন এক মধ্যবয়সী ছেলে ওর দিকে এগিয়ে আসে। ছেলেটিকে ইমরান সাহেব চিনেনা। ছেলেটি এসেই ইমরান সাহেবের সামনে দাঁড়ায়। এরপর ছেলেটি নিজে থেকেই বলল,

- হাই, আমি রিয়াজ।

- হ্যালো,আমি ইমরাম।

- হুম জানি।

- কিভাবে? আর আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না।

- আমাকে চিনতে হবেনা। আমি আপনার কাছে কিছু প্রশ্নের জন্য এসেছি। যদি একটু সাহায্য করতেন।

- কি নিয়ে।

- সেদিন রাতে আপনার সঙে কি হয়েছিলো?

- এইটা জেনে আপনি কি করবেন। তাছাড়া কেও বিশ্বাস করছেনা আমাকে। আমার ফাসির রায় পর্যন্ত চলে এসেছে। এখন আর ঘেটে ঘুটে কি লাভ।

- দেখুন, আমি হয়তো আপনাকে ফাসি থেকে বাচাতে পারবো।যদি আপনি আমার প্রশ্নের উত্তরটা দেন তবেই।

- সত্যি বলছেন? ( খুশি হয়ে)

- হুম সত্যি বলছি। এবার বলুন সেদিন কি হয়েছিলো।

- সেদিন আমি চৌ-রাস্তার পাশে দাঁড়াই। নিপার পেটের বাচ্চাটা অপারেশন করে নষ্ট করতে চেয়েছি। নিপা আসার পর আমি, ওর সামনে যাই। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে নিপা বলল,আমার সাথে ও হসপিটাল যাবেনা। আমি অবাক হই,আমি তো এখনো নিপাকে কিছুই বলিনি । তবে বুঝলো কিভাবে। এরপর নিপা কিছু না ভেবেই আমার হাতটি ধরে টানতে থাকে। আমি ওর পিছুপিছু যাচ্ছি, কিন্তু বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে। ও আমাকে টেনে নিতে নিতে রাস্তার উপরে নিয়ে যায়। তখনি একটা ট্রাক এসে আমাকে উড়িয়ে দেয়।

- ওহ মাই গড, এরপর কি হলো?

- এরপর আমি আমাকে আবিষ্কার করলাম একটা অজানা শহরে। যে শহর আমি ঠিক মতো চিনিও না। তখন মনে পড়লো আমার এক্সিডেন্ট এর কথা। মনে পড়তেই বুকটা থরথর করে কাপতে লাগলো। আমি ভেবেছি আমি মরে গেছি । আশেপাশে লোকজনের মাঝে কাওকে আমি চিনিনা। তখনি দেখলাম নিপা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি নিপার দিকে তাকাতেই,নিপা জড়িয়ে ধরা অবস্তায় আমার বুকে কামড় দিয়ে হৃদপিন্ড খেতে থাকে।

- ইহহহ, এত খারাপ হয়েছে?

- হুম

- আচ্ছা তারপর বলুন।

- এরপর আমি বুকের ব্যাথায় চটপট করতে করতে সেখানেই পড়ে যাই।আবার চোখ মেলে দেখি,আমি একটা রুমে বন্দি আছি। এরপর রুমটা থেকে বের হবার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখি, আমার পিছনে নিপা একটি ধারালো ছুরি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। বুঝে গেছিলাম, এবারও নিপা আমাকে খুন করবে। তা ভেবে আমি নিজেই,পাশে থাকা ফুলদানিটা ছুড়ে মারি নিপার দিকে। নিপা তখনি ফ্লোরে কাতরাতে কাতরাতে লুটিয়ে পড়ে। আমার খুব মায়া হয়। আর আমি ততক্ষনাৎ নিপার পাশে যেতেই,নিপা হুট করে উঠে আমার গলায় ছুরি চালিয়ে দেয়। আবারও চটপট করতে করতে আমি মরে যাই। এরপর আবার চোখ মেলে দেখি, আমি নাইট ক্লাবের সামনে পড়ে আছি। ঠিক তখনি একটি লোক এসে আমাকে বলল" এই বোতল এর সব পানি গিলে খাও, তোমার সব সমস্যা সমাধান হবে"। আমি বুঝিনি লোকটি আমায় কেনো এই কথা বলেছে। কিন্তু উনি কোনোভাবে তো নিশ্চয় কিছু জানে। তাই আমিও উনার কথামত বোতলের সব পানি খেয়ে ফেললাম। খাওয়ার পর মাথাটা একটু ঝিম ধরে আমার। আর কিছু মনে নেই। এরপর চোখ মেলে দেখি পুলিশ নাইট ক্লাবে এসে আমাকে গ্রেপ্তার করে। তাও নাকি নিপার হত্যাকারী হিসেবে। কিন্তু আমি সত্যিই বলছি, নিপাকে আমি মারিনি।

- হুম বুঝলাম। কিন্তু এই কথাগুলো আপনি আর কাওকেই বলবেন না। এইটা জাস্ট আপনি আর আমি জানি। এছাড়া শুধু ও জানে।

- আরেকজন কে?

- সেটা তো এখনো জানতে পারিনি। সেটার সন্ধানেই আমার এতটুকু আসা।

- আচ্ছা একটা কথা, এসবে কোনো ভূত প্রেত নেইতো?

- হতেও পারে,আবার নাও হতে পারে। এইটা একটা গোলকার চক্রদার। যা প্রতিনিয়ত, সব পরিস্থিতিকে গুলিয়ে দেয়। তবে এর পিছনে একজন আছেই,আর সে ভূত নাকি প্রেত সেটা না জানলেও,এইটা আমি শিওর দিয়ে বলতে পারি, ওটা মানুষ না।

- তাহলে..?

- ওয়েট এন্ড সি ব্রো, আমি আর্লি ব্যাক করবো আপনার কাছে। তখন বুঝতে পারবেন সব কিছু।

- আমি ফাসি থেকে বাচবো তো?

- সঠিক না। হয়তো আমার ফিরতে দেরি হলে,আপনার সময় শেষ হয়ে যাবে।

- ঠিক আছে, আপনি দেখুন কি করা যায়।

- হুম,আর শেষে একটা কথা বলে যাই আপনাকে, আপনি কিভাবে নিবেন জানিনা। তবে এই কথাটা শুনলে আপনি শক খাবেন শিওর।

- কি কথা..?

- নিপা বেচে আছে।

- মানে..? নিপার লাশ আমি নিজের চোখে দেখেছি। তাহলে কিভাবে সম্ভব ?

- ঐ যে বললাম..? ওয়েট এন্ড সি, নাও বায়।

- আরে ভাই,আগে তো নিপার ব্যাপারটা বলে যান।

রিয়াজ মুচকি একটা হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। রিয়াজ এখন ছুটবে।অনেক দূর ছুটবে। তাকে জয়ী হতেই হবে। আর এদিকে ইমরান সাহেব বিশাল বড় এক চিন্তায় পড়ে যায়। নিপা কিভাবে বেচে আছে..?

চলবে......?

গল্প- ওটা মানুষ না ( পর্ব-০১)

( কমেন্টে জানান।

1
$ 0.00
Avatar for kamal16
3 years ago

Comments