#অবুঝ মনের ভালোবাসা
#পর্বঃ১০
হিমুও মেহেরিমার দিকে তাকিয়ে আছে।
পারভেজ ও আবছার দু'জন লক্ষ্য করলো হিমু ভিতরের দরজান দিকে তাকিয়ে। ওটা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কিছু না বলে নিজেদের মধ্যে কথা বলতেছে।
মেহেরিমা আর হিমু চোখের ইশারায় নিজেদের ভিতরে কথা বলতেছে। মেহেরিমা হিমুকে বলল বিকালে কল দেওয়ার জন্য। হিমুও ইশারায় বুঝিয়ে দিলো কল করবে।
আবছার বলল, হিমু উঠ অনেক সময় হয়েগেছে এবার বাসায় চলে যেতে হবে।
হিমু অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলল, হুম চল।পারভেজ আজকে উঠি রে অনেক সময় হয়ে গেছে।
পারভেজ বলল, কি বলিস এসেছিস যখন একেবারে দুপুরের খাবার খেয়ে তারপর যাবি।
না রে বন্ধু অন্য কোন দিন আসবো।
ভিতর থেকে পারভেজের মা আসতেছে দেখে মেহেরিমা সেখান থেকে সরে গেলো।
হিমু আর আবছার পারভেজের মায়ের সাথে কথা বলে বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেলো।পারভেজ ওদের সাথে সাথে রাস্তায় আসতেছে।হিমু একটু পিছনে থেকে মেহেরিমার দিকে তাকিয়ে আছে। মেহেরিমাও আড়াল থেকে হিমুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
আবছার বলল,আচ্ছা পারভেজ এখন যাই কালকে স্কুলে দেখা হবে। আল্লাহ হাফেজ
ওকে বন্ধু।
হিমু আর আবছার সাইকেল নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলো।
এ দিকে মেহেরিমা বিকালে হিমুর কলের অপেক্ষায় বসে আসে।
হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠে দেখে ঘড়িতে সময় ৪.৩০।
তাড়াতাড়ি উঠে ওয়াসরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য। ফ্রেশ হয়ে মায়ের কথা থেকে মোবাইলটা নিয়ে মেহেরিমার নাম্বারে কল দিলে। কল দেওয়ার সাথে সাথে রিসিভ হল
হ্যালো
আসসালামু আলাইকুম।
ওয়াইলাকুম আসসালাম।
কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি কেমন আছো?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তবে আপনার উপর রেগে আছি।
কেন, আমি আবার কি করলাম?
কখন থেকে অপেক্ষা করতেছি আপনার জন্য।
সরি সুইটহার্ট, আসলে সকালে তোমাদের ঐ দিকে যাওয়া হইছে আর একটু ঘুরাঘুরি করছিলাম তাই শরীর ক্লান্ত ছিলো। খাবার খেয়ে একটু রেস্ট নেওয়ার জন্য শুয়ে ছিলাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানি না। আর ঘড়িতে এ্যার্লাম দিতেও ভুলে গেছি। তাই দেরি হয়েগেছে।
ও আচ্ছা, আপনি হঠাৎ করে সকালে কেন আসলেন।
তোমাকে দেখার জন্য।
তাই বলে বাড়ীতে আসতে হবে। কালকে তো স্কুলে যাব তখন তো দেখা হতো।
আমার ভীষণ মন চাইছিলো তাই চলে গেলাম।
মন চাইলে সব কিছুই করবে নাকি?
হুম করবো।
না আজকে থেকে আর করবে না।
কেন?
আজকে থেকে আমি যা বলবো তাই করতে হবে সেজন্য।
আচ্ছা করবো। তবে তোমাকে যখন দেখতে মন চাইবে তখন না করলেও শুনবো না।
আচ্ছা সেটা দেখা যাবে।
কি করেন?
আমার প্রেয়সীর সাথে কথা বলতেছি।
তাই
হুম।
তুমি কি করো?
আমি কিছু করি না শুধু........
কি?
একজনের সাথে প্রেম করতেছি।
কার সাথে গো?
যার সাথে এখন কথা বলতেছি।
এ কথা শুনে হিমু মনে মনে খুশি হলো। এভাবে ওরা নিজেদের মধ্যে দুষ্টুমি করতেছে।
মেহেরিমা বলল, আচ্ছা এখন রাখি কালকে সকালে কথা হবে।
আর কিছু সময় থাকো।
সরি আজকে আর হবে না মিষ্টার।
কেন?
অনেক সময় হয়েগেছে।
তো কি হইছে?
আরে আম্মু পরে সন্দেহ করতে পারে তাই মোবাইলে বেশি কথা বলা যাবে না। আর আগামী কালকে তো দেখা হচ্ছে সো এতে টেনশন করা কি আছে মিষ্টার?
সেটা তুমি বুঝবে না।
কেন বুঝবো না? বুঝিয়ে বললে তো হয়।
তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি মেহেরিমা তাই মন চায় সারাক্ষণ তোমার সাথে কথা বলতে।
ও আমি বুঝি বাসি না?
কি?
বুঝেন না?
না।
থাক আর বুঝতে হবে না। এখন রাখি ভালো থাকবেন।
তুমি রেগে যাচ্ছো কেন? সরি।
আচ্ছা ঠিক আছে, তবে সত্যি এখন রেখে দিতে হবে।
ওকে। ভালোবাসি তোমাকে অনেক বেশি।
আমিও
আমিও কি?
এতো বলতে পারবো না। আল্লাহ হাফেজ এটা বলে মেহেরিমা কল কেটে দিলো।
হিমু বুঝতে পারলো কল কেটে দিয়েছে। তাই সেও মোবাইল থেকে নাম্বার ডিলেট করে মায়ের কাছে দিয়ে দিলো।
পরের দিক সকালে হিমু মেহেরিমা জন্য অপেক্ষা করতেছে। আজকে হিমু একা আসছে আবছারকে সাথে নিয়ে আসে নাই।
এদিকে মেহেরিমা মিষ্টি কালারের একটা জামা পড়ে সুন্দর করে হিজার করে বাহির হলো। রুমকিকে ডেকে দুজনে প্রাইভেটের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলো।
হিমু জামমুড়া ব্রিজের উপর বসে আছে। এটা দেখে রুমকি বললো দেখ হিমু ভাই তোর জন্য অপেক্ষা করতেছে।
হুম জানি।
ও আচ্ছা তাহলে আগে থেকেই সব ঠিক করা।
ওরা কাছাকাছি আসতেই হিমু দাঁড়িয়ে পড়লো। রুমকি বলল, আচ্ছা তোরা কথা বলতে বলতে আয় আমি সামনে আছি।
আচ্ছা।
হিমু মেহেরিমা দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেটা দেখে মেহেরিমা জিজ্ঞেস করলো এভাবে কি দেখেন?
আমি স্বপ্নের অপ্সরীকে দেখি। তোমাকে আজকে কতটা সুন্দর লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না। যতই সৌন্দর্যের বর্ণনা করি না কেন তাতেই কম হয়ে যাবে।
যা এসব কি বলছেন আমার বুঝি লজ্জা করে না?
লজ্জা কেন করবে?
সেটা আপনি বুঝবেন না।
এভাবে ওদের প্রেম চলতেছে। প্রতিদিন সকালে দেখা করা বিকালে কথা বলা ওদের প্রতিদিন অভ্যাস হয়ে গেছে।
এখন বর্ষা কাল শুরু হয়েছে। হিমু আজকে সকালে মেহেরিমার সাথে দেখা করার জন্য বের হয়েছে কিন্তু ছাতাটা নিয়ে আসতে ভুলে গেছে।
মেহেরিমাও প্রতিদিনের মতো প্রাইভেটে যাওয়ার জন্য বাহির হলো। রুমকি বাড়িতে যেয়ে দেখলো সে এখনো রেডি হয় নাই।
কি রে এখনো রেডি হলি না যে?
মেহেরিমা আমি আজকে যাবো না তুমি যা।
কেন?
শরীর ভালো লাগছে না।
ও আচ্ছা তাহলে আমি গেলাম। আগে কখনো এ রকম হলে একা যেত না কিন্তু এখন না যেয়ে উপায় নাই। কারণ মেহেরিমা জানে হিমু তার জন্য অপেক্ষা করতেছে।
আজকে তুমি একা কেন রুমকি কোথায়?
ওর শরীর ভালো লাগছে না তাই আসে নাই।
ও আচ্ছা।
একথা বলে দু'জনে হাঁটা শুরু করলো। এই তুমি ছাতা আনো নাই?
না মনে ছিলো না।
এখন বর্ষার সময় কখন বৃষ্টি শুরু হয় তার ঠিক নাই। আর আজকে সকাল থেকেই আকাশে অবস্থা ভালো না।
সমস্যা নাই তোমার কাছে আছে না সেটা দিয়েই হয়ে যাবে।
হুম দুজনের ভিজতে হবে।
এদিকে হঠাৎ করে গুটি গুটি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির ফোঁটা পড়তেছে দেখে মেহেরিমা ছাতা খুলে হিমুর একেবারে কাছে চলে আসলো যাতে হিমু বৃষ্টিতে না ভিজে।
মেহেরিমা বৃষ্টি তো মনে হয়ে অনেক বেশি হবে। এ কথা বলার কিছুটা পরেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
মেহেরিমা আর হিমু দু'জনে বৃষ্টিতে ছাতা নিচে পাশাপাশি হাঁটতেছে। হিমু বলল, মেহেরিমা চল এখানে দাঁড়ায়ে থাকি কিছুক্ষণ। বৃষ্টি একটু কমলে যাওয়া যাবে। আর এভাবে যদি যাই তাহলে ভিজতে হবে কারণ বাতাস শুরু হয়েছে।
মেহেরিমাও দেখ আকাশের অবস্থা আগে থেকে আরো বেশি খারাপ পর্যায়ে যাইতেছে। তাই সেও বলল আচ্ছা চল ঐখানে দাঁড়াই।
ওরা দু'জন একটা কুঁড়ে এসে দাঁড়ালো। আসলে এটা এখানে করা হয়েছে রাতে মটর পাহারা দেওয়ার জন্য। ফসলে পানি দেওয়ার জন্য এখানে পাম্প বসানো হয়েছে। যাতে কেউ মটর চুরি করতে না পারে রাতে এ কুঁড়ে ঘরে বসে পাহারা দেওয়া হয়।
হিমু আর মেহেরিমা কুঁড়ে ঘরে এসে দেখলো ভিতরে কেউ নাই। ওরা ভিতরে গিয়ে নিজেদের মধ্যে একটু দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে আছে। হিমু আর মেহেরিমাও শরীরের বেশিরভাগই বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। হিমু তাকিয়ে দেখলো মেহেরিমাকে ভেজা কাপড়ে.........
.
.
.
চলবে.....
.