গল্প:-মাষ্টার_মশাই
পর্ব:- #১
""""""""""""""""
-ভাইয়া
-হুমম বল
-আমার পিকনিক এর টাকাটা??
-কত যেন??
-ভাইয়া পাঁচহাজার
-আমি স্কুল থেকে এসে দিবো নি
-ভাইয়া পুরো টাকাইই দিতে হবে
-চিন্তা করিস না, আমি স্কুল থেকে ফিরেই টাকা টা দিয়ে দিবো
-আচ্ছা ভাইয়া
,,
,,
শুভ আর তার বোন ইশিতা কথা বলছিলো। শুভ একটা প্রাইমারী স্কুল এর শিক্ষক আর ইশিতা শুভর ছোট বোন, সে এবার ইন্টারর ফার্স্ট ইয়ার এ পড়ে। শুভর পরিবার এ, শুভ, তার বাবা, আর ছোট বোন ইশিতা এই তিন জন।
,,
,,
শুভ স্কুলে গিয়ে ক্লাস নিচ্ছিল হঠাৎ তার বাবা তাকে ফোন করে জানিয়ে দেয়। আজই শহরে যেতে এবং সেখানকার একটা কলেজ এর ম্যাডাম এর সাথে দেখা করতে।
,,
শুভ দেড়ি না করে তখনই রওনা দিলো। দুপুরের একটু আগে শুভ সেই কলেজে পৌছে যায়। আর বাবার নির্দেশনা অনুযায়ী হিয়া নাম এর একজন কে খুঁজতে থাকে...
,,
সে একজন শিক্ষক কে বলল..
-হিয়া ম্যাম কোথায় আছেন?? (শুভ)
-উনি এখনন..ওহ হ্যা ৩০৪ নাম্বার রুমে ক্লাস নিচ্ছে, একটু পরেই ক্লাস শেষ হয়ে যাবে,
-ধন্যবাদ আপনাকে..
,,
শুভ ৩০৪ নাম্বার রুমের সামনে চলে আসে। এসে দেখে একটা ম্যাম ক্লাস নিচ্ছে..দেখতে কোনো বলিউড এর নায়িকা মনে হচ্ছে। শুভ ম্যাম কে দেখে ভাবছিলো..
-বাবা আমাকে এর কাছে কি জন্য পাঠালো?? এ বাইরে আসলে কিভাবে কথা বলব?? আমার তো এখনই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে (শুভ)
,,
কিছুক্ষণ পর ক্লাস শেষ হয়ে যায়। সবার আগে ম্যাম বের হয়। আর শুভ সাথে সাথে ডাক দেয়া..
-ইয়া ম্যাম (শুভ)
,,
হিয়া নাম ইয়া ভাবে ডাকায়, হিয়া শুভর কাছে এসে দাড়ায়, আর বলে..
-কি বললেন??(হিয়া)
-সরি, আপনার নাম টা সঠিক ভাবে উচ্চারণ করতে পারি নি, গলা টা শুকিয়ে গেছে, হিয়া বলতে ইয়া হয়ে গেছে..
-হুমম ঠিক আছে..আপনি কে??
-আমি শুভ বাবা আমাকে পাঠিয়েছেন
-ওহহ(হিয়া হাটতে শুরু করলো)
,,
শুভ সাথে সাথে হাটা শুরু করলো। আর বলতে লাগলো..
-বাবা আমাকে কি জন্য পাঠিয়েছেন আমি জানি না, শুধু বলল আপনার সাথে দেখা করতে (শুভ)
-আমার বাবাও বলছিলো শুভ নাম এর একজন আমার সাথে দেখা করবে, এবং তার সাথে লাঞ্চ করতে বলেছে..
-ওহহ চলেন
-কোথায়??
-লাঞ্চ করতে
-না, আমি বাসা থেকে আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসছি, আমি বাইরের খাবার খেতে পারি না
-ওহহ থ্যাংকস
-কি জন্য?
-খাবার নিয়ে আসছেন আমার জন্য তাই
-হুমমম আসুন
,,
হিয়া একটু রাগ রাগ ভাব, শুভর দিকে একবার তাকিয়ে দ্বিতীয় বার আর তাকায় নি। সেমিনার এ খেতে বসে দুজন কথা শুরু করলো..
-খাবার টা কেমন হইছে??(হিয়া)
-হুমম খুব ভালো হইছে (শুভ)
-আচ্ছা এখন বলেন, আপনি কি করেন??
-এই যে খাচ্ছি
-হুহহ কি কাজ করেন সেটা জানতে চাইছি
-সরি, আমি একটা প্রাইমারি স্কুল এর শিক্ষক
-ওহহহ। আচ্ছা আপনি কি জানেন আপনাকে কেন আমার সাথে দেখা করতে বলেছে??
-না আমি জানি না
-আইডিয়া করেন তো
-মনে হয় কোনো কাজ এর জন্য হবে
-উহুমম বিয়ের জন্য
-এহহহহ
-অবাক হইছেন তাই না??
-হুমম অনেক
-আমাকে পছন্দ হয়েছে আপনার??
-হুমম হইছে
-কতটুকু..??
-....(শুভ লজ্জায় কিছু বলছে না)
-লজ্জা পাচ্ছেন, আমি বলি, আমাকে আপনার এতটাই পছন্দ হইছে, এক দেখাতে ভালবেসে ফেলেছেন এইরকম তাই না??
-হুমমম আপনি বুঝলেন কিভাবে??(শুভ মুচকি হেসে)
-অনেক ছেলেই বলেছে
-ওহহহ
-হাতটা ধুয়ে আমার ডিসিশন টা বলি??
-জ্বি
,,
,,
হিয়া হাত ধুয়ে, পানি পান করে বলল...
-আপনাকে আমার পছন্দ.... হয় নি। হয় নি মানে একদমই হয় নি। আর আপনি সাধারন একটা স্কুল শিক্ষক! আমি বুঝলাম না বাবা সব জেনেও, কেন এমন একটা ছেলের সাথে,, ধুররর আমার মেজাজ টাই গরম করে দিয়েছে...আর আপনি বা কেমন নিজের এই ছোট্ট একটা যোগ্যতা নিয়ে আমার সাথে এই ব্যাপার এ দেখা করতে আসছেন!
-আমি তো জানতাম না, বাবা শুধু আপনার সাথে দেখা করতে বলেছিলো (শুভর চোখ একদম লাল হয়ে গেছে, মনে হচ্ছে এখনই কান্না করে দিবে)
-সব কিছু জেনে আসা আপনার উচিত ছিলো
-হুমমমম সরি ম্যাম
-হুমম আপনি এখন আসতে পারেন
-জ্বি, আসসালামু আলাইকুম
-আর শোনেন
-জ্বি বলেন
-নেক্সট টাইম, আপনার বাবা বললে আসবেন না, আমি আমার বাবা কে সামলে নিবো ওকে??
-জ্বি
,,
,,
শুভ বাইরে চলে আসলো। বাইরে এসেই শুভ বাবা কে ফোন করে..
-হ্যালো বাবা (শুভ)
-হ্যা দেখা করছিস??(শুভর বাবা)
-হুমম, পছন্দ হইছে??
-হইছে, আবার হয় নি
-বুঝলাম তোর কথা
-বাড়িতে গিয়ে বলি??
-আচ্ছা আয়
,,
,,
শুভ বাড়িতে গেলো। বোন আর বাবা কে ডেকে তার রুমে আনলো। তারপর বলল
-আমার বিয়ের জন্য এত হাই লেভেল এর মেয়ে পছন্দ করছো কি জন্য??(শুভ)
-ও তোকে কিছু বলছে??(শুভর বাবা)
-উনি যা বলেছেন একদম ঠিক বলেছেন, সে একজন বি সি এস ক্যাডার, সরকারি কলেজ এর টিচার আর আমি সাধারন বি এ পাশ করা, একটা প্রাইমারি স্কুল এর টিচার!
-সে যাই হোক, তোর বউ
-বাবা কি বলো, আমি কই আর সে কই??
-আমি যা বলেছি তাই, কিভাবে তুই তাকে রাজি করবি সেটা তোর ব্যাপার, সে তোর বউ এটা মাথায় রাখিস(শুভর বাবা চলে গেলো)
-বিয়ে না করে এ কেমন বউ??(শুভ)
-ভাইয়া, ভাবি কে কেমন দেখতে??(ইশিতা)
-এ বিয়ে সম্ভব না রে! বাবা বুঝতেছে না
-বিয়ে হোক আর নাই হোক, ভাবি কেমন দেখতে??
-তার ভাষায় বলি??
-হুমম বলো
-একবার দেখে ভালবেসে ফেলার মতো
-তার মানে ভাইয়া তুমিও..
-সেটা কি আর বলতে হবে?? এত সুন্দর একটা চেহারা..
-ভাইয়া কুচ কুচ..
-ওইইইইই... (শুভ ধমক দেওয়ায় ইশিতা এক দৌড়)
-ধুরর ওরে ধমক দিতে গেলাম কেনো?? সত্যি আমি তো..কুচ কুচ..নাহহ ম্যাম এর যে অনেক যোগ্যতা..
,,
,,
পরদিন শুভ তার স্কুল শেষে আবার কলেজে যায়... গিয়ে হিয়া কে খুঁজে বের করে। হিয়া শুভ কে দেখে রাগি লুক নিয়ে শুভর দিকে তেড়ে আসে..
-আজ আবার কি জন্য আসছেন??(হিয়া)
-আপনাকে দেখতে আসছি (শুভ)
-কাল কি বললাম?? সেগুলো বুঝতে পারেন নি??
-বুঝেছি, কিন্তু বাবা বলেছে আপনি আমার বউ
-আমি বুঝতেছি না, আমিও আমার বাবা কে বললাম, উনি বললেন যে আপনিই আমার বর
-হুমমমম
-আবার বলে হুমম?? নিজেকে দেখছেন একবার?? কিসের সাথে কি মিলাতে চান
-....(শুভ চুপ)
-আমি লাস্ট বার বলছি, এরপর থেকে আপানকে যেন না দেখি, দেখলে কিন্তু অনেক খারাপ হবে বলি দিলাম
,,
,,
শুভ বাড়িতে এসে তার বোন কে জানায়।
-ভাবি তো দেখছি সেই বদমেজাজি(ইশিতা)
-কিসের ভাবি?? ম্যাম বল, (শুভ)
-আরে ভাইয়া রাখো তো, তুমি কিচ্ছু বুঝো না
-তুইও আমার উপর বিরক্ত হইছিস??
-তো কি করব?? একটা মেয়ে কখনো দুই দিনে পটবে?? মাথায় জ্ঞান বুদ্ধি কিছু নেই??(এটা বলে হিয়া বাইরে চলে গেলো)
-সবাই দেখছি, আমার উপর ক্ষিপ্ত!
,,
,,
পরদিন..
শুভ আজকে মাথায় একটু তেল টেল দিয়ে ফুল হাতা একটা শার্ট পরে হাতে একটা চিঠি নিয়ে হিয়ার সামনে যায়..
হিয়া শুভ কে দেখে তো তার চোখ কপালে..
-এটা রাখেন (শুভ)
-কি এটা??(হিয়া)
-চিঠি
-কিসের চিঠি?? কার চিঠি??
-আপনার জন্য, আমি লিখতে পারি না, তাই আমার বোন লিখে দিয়েছে
হিয়া চিঠি টা হাতে নিয়ে বলল...
-তারপর??
-আমি আপনাকে ভালবাসি
-ঠাসস ঠাসস ঠাসসস ঠাসসস (দুই গালে চার টা চর মারে হিয়া)
,,
,,
-চর গুলো দিলাম এই চিঠি দেওয়া বা আমাকে প্রপোজ করার জন্য না। আমার কথা না শোনার জন্য। কাল কি বলেছিলাম??(হিয়া)
-আপনার সামনে যেন না আসি (শুভ)
-তো আসলেন কেনো??
-বাবা বলেছে
-তো তাকেই পাঠিয়ে দিয়েন, আপনি আসলেন কেনো?? আপনাকে মানা করি নি??
-জ্বি
-আবার বলে জ্বি।
-....(শুভ গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে)
-এই শেষ বার বলছি, আপনার মতো এই সাইজ এর ছেলে আমার পছন্দ না। এক কথায় শেষ, এখন বুঝতে পারছেন
-হুমম কিন্তু বাবা যে আসতে বলে
-আপনার বাবা কে পাঠিয়ে দিবেন
-আচ্ছা
-আর শোনেন
-হুমমম
-মাথায় তেল আর একটু দিয়ে আসলে ভালো হতো, না না তেল এর পুকুরে মাথা টা ডুবিয়ে নিয়ে আসলে ভালো হতো
-আচ্ছা পরদিন আসবো নি
-ওই, আমি আসতে মানা করছি না??
-হুমমম
-এখন এখান থেকে যান.. গোওও
,,
হিয়া চিঠি টা শুভ কে ফেরত দিতে ভুলে যায়। বাসায় এসে কি মনে করে চিঠি টা খুলে.. খুলেই তো হিয়ার শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা..
,,
হিয়া দেখতে পেলো..
তার চার টা ছবি আঁকা। একটা ক্লাস রুমে দাড়ানো অবস্থায়। একটা খাওয়ার সময়, একটা পানি পান করার সময়.. আর একটা...খুব রাগি মুড এর।
-ওয়াও, ছেলেটা তো সেই আঁকা এঁকেছে! এত টা খেয়াল করেছে আমাকে, কিন্তু এই শেষ এর ছবি টার জন্য ও মাইর খাবে, রাগলে আমাকে একদম পঁচা দেখায়, কেমন লাগছে আমাকে এ্যা এ্যা এ্যাহহহ, ওরে আচ্ছা মতো ধোলাই দিবো!
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
চলবে