রিকশা থেকে নেমে ১০০ টাকার একটা নোট বাড়িয়ে দিলাম রিকশাওয়ালার দিকে।
রিকশা ভাড়া ৩৫ টাকা। আমার প্ল্যান ছিল আগামীকাল ঈদ ; তাই পাঁচ টাকা বাড়িয়ে রিকশাওয়ালা'কে ৪০ টাকা দিবো।
১০০ টাকার নোট হাতে নিয়ে রিকশাওয়ালা পকেট খুঁজে ভাঙ্গতি টাকা পেলো না।
সে বলছে, ঘণ্টাখানেক আগে দুই জন মহিলা রিকশায় উঠেছিল। ১০০ টাকা ভাড়া হয়েছিল। আর, ঐ মহিলারা ৫০০ টাকার নোট দেয়াতে, ভাংগতি যা ছিল সব দিয়ে দিয়েছে।
আশেপাশে সব দোকান বন্ধ,আম্মা ঘুমিয়ে গেছে । তাই আম্মাকে ডেকে যে খুচরা ৪০ টাকা নিবো সেই উপায় নাই।
প্রায় ১০ মিনিট টাকা নিয়ে এদিক সেদিক খুঁজে কোন দোকান খোলা পেলাম না।
কি করবো চিন্তা করছিলাম।এর মধ্যে আমাকে অবাক করে দিয়ে রিকশাওয়ালা বললেন।
- মামা থাউক! রাইত মেলা হইছে। টাকা দেয়া লাগবে না। এখন রাত ১২ টা বাইজা গেছে। এইদিকে ভাঙ্গতি টেহা পামু না। আগামীকাল যেহেতু ঈদ ! তাই মনে করুম, আমি আর আমার মামা রিকশায় ঘুরতে গেছেলাম। কোন সমিস্যা নাই! আপনি যান।
আমি অবাক হয়ে রিকশাওয়ালার ( হারুন) দিকে তাকিয়ে আছি। ওর বয়স হবে আনুমানিক ১৭ থেকে ১৮ বছর। শরীর থেকে টপটপ করে ঘাম ঝরছে। এই রিকশা চালিয়ে যে টাকা পাবে, সেই টাকা দিয়ে আগামীকাল ঈদের সকালে তার বাসায় ভাত রান্না হবে। তারপরেও আমাকে এত রাতে 'দায় মুক্ত' করতে সে এক কেজি চালের দাম মাফ করে দিচ্ছে হাসি মুখে!
হাতের ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি বারোটা ৫ বাজে। আমি হারুন কে বললাম।
-মামা আমি তোমার সাথে কোলাকুলি করি?
একটু আগে ও যখন ভাড়ার টাকা মাফ করে দিবে বলছিল। আমি তখন যেভাবে অবাক হয়েছি। ঠিক সেভাবেই হারুন আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে!
হারুন বললো, মামা আমার শইলে ঘাম, কিভাবে কোলাকুলি করবেন?
এবার আমি ওর মত করেই বললাম...
_ আরে সমিস্যা নাই !
হারুন রিকশা নিয়ে চলে যাচ্ছে।ওর পকেটে আমি জোর করে একশো টাকার নোট'টা ঢুকিয়ে দিয়েছি। ৪০ টাকার ভাড়া ৬০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েও আমার কাছে কোন আফসোস লাগছে না।
কারন এই একশো টাকার বিনিময়ে আমি হারুনের কাছে কোটি টাকার 'শিক্ষা' পেয়েছি। আর সেই শিক্ষার নাম হচ্ছে মানবতা।