আজ ১০বছর পর আরফানের পরিবারের সাথে কোর্টে দেখা।সবাইকে কেমন জানি বিষন্ন লাগছে। আরফানের বাবা অহংকারী বদমেজাজি লোকটা আজ কেমন জানি শান্ত হয়ে গেছে, দেখে মনে হচ্ছে তার মধ্যে প্রাচুর্যের অহংকার এখন আর নেই সব ধুলোয় মিশে গেছে। আরফানের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদছে অনামিকা আরফানের বোন।সুন্দর চঞ্চল, মেয়েটার সেই দেমাগি মুখটা আর নেই।শুকিয়ে চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিন ঘুমায় না,বেশিরভাগ সময় নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে না।আমাকে দেখা মাত্রই তারা সবাই থমকে দাঁড়ায়।
আমি রিদুয়ানা। পেশায় আমি উকিল।আরফানের সাথে ১০বছর আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে সবার অমতে বিয়ে করি।তখন সবেমাত্র কলেজে পড়ি আমি।আরফানের কাছে ওর পরিবার সম্পর্কে সুনাম শুনেছি।আমি দেখতে তেমন সুন্দর না, কালো খাটো,মোটা।তবুও আরফান আমাকে খুব ভালোবাসতো।আরফানের বাসায় আমাকে নিয়ে যায়,যেহেতু বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম পড়নে ছিলো আমার কমদামি জামা।আরফানের বাড়ির দরজার সামনে আমাকে ৬ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়,বাড়ির ভেতর থেকে চেচামেচির শব্দে বুঝতে পারতেছিলাম আরফানের উপর দিয়ে ঝড় ভয়ে যাচ্ছে। আরফানের চাচী এসে আমাকে ভিতরে নিয়ে যায়। কেউ আমাকে দেখতে আসেনি,সবার যার যার ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে বসে থাকে। ঘরের কোনায় বসে কাঁদতে লাগলাম,তখন পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষকে খুব মনে পড়ছিলো।এদিকে আরফান কোথায় জেনো চলে গেলো।পরেরদিন সকালে আমার শাশুড়ী আরফানের মা আমাকে বাড়ির কি কি কাজ করতে হবে বুঝিয়ে দিয়ে গেলো।বাড়িতে ১জন কাজের মহিলা ছিলো আসার জন্য না করে দেওয়া হলো।রান্না করা,ঘর মুছা,কাপড় ধোয়া সব আমি একাই করতাম।মাঝে মধ্যে একটু বিশ্রামের জন্য ঘরে আসলে আরফানের বোন অনামিকা বলতো আমি নাকি কালো বেটে মহিষ,কাজ কাম না করার জন্য ফয়দা খুঁজি।অনামিকা সারাদিন রুপ চর্চা নিয়ে আর মোবাইল নিয়ে বসে থাকতো।আরফান তখন কোনো চাকরি করতো না,তাই আরফান সারাদিন চাকরি খোঁজার জন্য বাইরে বাইরে ঘুরতো।বাড়িতে আসলেই আমার নামে তার মা আর বোন নানা রকমের অভিযোগ করতো।তা শুনে আরফান খুব বকাবকি করতো আমায়।তখন আরফানের চোখে আমার জন্য ভালোবাসা খুঁজে পেতাম না।
৬মাস পর আমি প্রেগন্যান্ট হই।বাড়ির সবাই খুশি হলেও আরফানের বাবা খুশি হয়নি।কারণ বাচ্চা হলে নাকি আমার মতই কালো খাটো হবে।সেদিন নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছিলো।আরফানের চোখে আমি সুখ দেখতে পেতাম। সে এখন তার বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করে।
২মাস পর আমার বাচ্চা টা নষ্ট হয়ে যায়।
চলবে
১ম পার্ট
0
7