সিনিয়র_ভাবি_যখন_বউ
পর্ব_৭
.
মেহতাব হোসেন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন। নীলার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। ওকে কাব্যকে ভুলতে হবে। না, না এটা অসম্ভব। নীলা লাফ মেরে বিছানায় শুয়ে বালিশ আকড়ে ধরে কাঁদতে লাগল।
– আব্বু এটা কি বলছে? কাব্যকে আমি ভুলব কি করে? কাব্যকে তো আমি আমার জীবনের চেয়েও বেশী ভালোবাসি। আব্বু আমাকে কাব্যর থেকে আলাদা করতে চাইছে কেনো?
নীলা ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদতে লাগল। বালিশ আঁকড়ে ধরে কাঁদতে লাগল।
.
মিরা বিছানায় শুয়ে আছে। আর কাব্য সোফায়। এটা প্রতিদিনকার ঘটনা। কাব্য এপাশ ওপাশ করছে। আর মিরা এক দৃষ্টিতে কাব্যের দিকে তাকিয়ে আছে। কি আছে ওর এই মুখে? ছেলেরা আবার মায়াবী আর সুন্দর হয় নাকি। কি করে ছাড়ি ওকে? যে আমার দুঃসময়ে পাশে থেকেছে।
– কাব্য…
কাব্য পাশ ফিরে তাকাল মিরার দিকে,
– কি? এনিথিং রং?
– নাহ।
– তাহলে…
মিরা দ্বিধা হচ্ছে কথাটা বলতে।
– কি হল বল?
– না মানে, বিছানায় এসে শুয়।
কাব্য মিরার দিকে তাকাল মিরা উৎফুল্ল দৃষ্টিতে বলছে।
– নাহ, সোফায় শুতে পারব। অসুবিধা হচ্ছে না তো। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো…
– একটাদিনইতো।
মিরার কথা শুনে কাব্যের মুখ মলিন হয়ে গেল। আসলেই তো। কাল ওরা ডিভোর্স এর জন্য এপ্লাই করবে। এটাই হয়তো শেষ রাত।
– প্লিজ…
কাব্য মিরার দিকে তাকাল। মিরা যেন খুব করে চাইছে কাব্য যেন ওর পাশে শুয়। কাব্য ওতো চাইছে।কিন্তু….
– ওক্কে…
কাব্য বালিশ নিয়ে বিছানায় রাখল। মিরার পাশে গিয়ে শুলো। মিরা চিৎ হয়ে শুলো। কাব্যও একি রকম শুলো। মাঝখানে কোনো বালিশ নেই।
.
আমার অস্বস্থি লাগছে। মিরার পাশে এরকমভাবে শুতে..
– মাঝখানে একটা বালিশ রাখি। আমি তো আবার বেশী এপাশ – ওপাশ হই। কখন আবার তোমার পেটে ডিসুম করে ঘুসি বসিয়ে দেই।
মিরা হাসল,
– লাগবে না।
– ওও।
কিছুক্ষণ নিরবতা..
– আচ্ছা কাব্য, মানুষ বড় অদ্ভুত তাই না। কখন কাকে ভালোবেসে ফেলে। বলা যায় না।
আমি মিরার দিকে তাকালাম। মিরা নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
– হুম, আসলেই…।
– একটা কাজ করবে?
মিরার আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারল।
– কি?
– আমার পেটে একবার হাত রাখবে।
আমি চমকে উঠলাম। অবাক বিষ্ময় নিয়ে মিরার দিকে তাকালাম। মিরার দৃষ্টি বরাবরের মতোই শান্ত। মেয়েটা এমন কেনো? আমাকে অবাক করিয়ে দিল। অথচ নিজে একেবারেই শান্ত।
– কি হল?
আমি ইতস্তত বোধ করলাম,
– না মানে..
– একবারই তো। তোমার ভালো না লাগলে না থাক। শুধু, একটা জিনিস অনুভব করিয়ে দিতে চাই তোমাকে। আর আমিও।
– কি?
– অনুভব করতে চাই। প্লিজ একবার হাতটা রাখো।
নিরীহ দৃষ্টিতে তাকাল আমার দিকে। এখানে নেই কোনো লোভ আর পাপ। নিষ্পাপ একটা মেয়ে যেন মিরা।
– আচ্ছা।
– হুম, প্লিজ..
মিরা সোজা হয়ে শোয়া। চোখ বন্ধ করে নিল। মিরা পেটটা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। এখানেই রয়েছে একটা দেহের অস্তিত্ব। আমি কাপা কাপা হাতটা এগিয়ে নিলাম। হাত প্রচুর কাঁপছে। আমি প্রায় ঘামছি। অবশেষে হাত রাখলাম। মিরা জোরে একটা শ্বাস নিল। যেন কিছু অনুভব করছে। আমার স্পর্শ। আর আমি অনুভ করছি একটা অস্তিত্ব। আমি মিরার দিকে তাকালাম চোখ বন্ধ করেই আছে। আর মুখমণ্ডল এ যেন মায়া ছড়িয়ে পড়ছে। একটা নেশাবোধ হচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছি মিরার মায়াবী মুখে। মিরা চোখ খুলে আমার দিকে তাকাল,
– কিছু অনুভব করছো?
চোখ কোণে খানিকটা পানি জমে আছে।
– হুম।
– কি?
– একটা অস্তিত্ব যেটা আস্তে আস্তে বেড়ে উঠছে। খুব ভালো লাগছে।
– তাহলে আর কিছুক্ষণ রাখো। আর অনুভব করো।
– হুম।
আমি হাসলাম। মিরাও। মিরা হাতটা আমার মাথায় নিয়ে এল। চুলে বিলি কেটে দিতে লাগল।
– কাল কটায় যাচ্ছি?
– একজন লয়ারে কাছে যেতে হবে। বিকেলে..
– হুম।
আমি পেট থেকে হাত সরিয়ে নিলাম। এখন ঘুমাও মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
– আচ্ছা।
আমি মিরার চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। বাতাসে চুলগুলো উড়ে এসে আমার মুখে পড়ছে। মিষ্টি একটা ঘ্রান। মিরা চোখ আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে এলো। আমিও ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম।
.
ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভেঙে গেলে চোখ খুলে দেখলাম সকাল হয়ে গেছে। পাশে হাত দিয়ে দেখলাম মিরা বিছানায় নেই। গেল কোথায়? আমি উঠে বসলাম। এমন সময় দরজা ঠেলে রুমে ডুকল মিরা।
– গুড মর্নিং। কফি..
এগিয়ে এসে কফির মগ টেবিলে রাখল। আমি ভ্রু কুচকালাম।
– তুমি রান্নাঘরে গিয়েছিলে?
– এমনি শুধু গিয়েছিলাম। আম্মু কফি বানিয়ে দিল তোমার জন্য।
– একা একা নিচে যাওয়ার কি দরকার? যদি কোনো অঘটন ঘটে?
– আরে কিচ্ছু হবে না। এতো ভেবো না তো।
– এহ! উনি জানেন কিছু হবে না। চুপটি করে এখানে বসো। আমি ওয়াসরুম থেকে আসছি।
ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলাম। এসে কফি খেয়ে নিলাম।
– কাব্য
– হুম।
মিরার দিকে তাকালাম,
– একটা কথা বলি?
– বলো। যতটা মন চায়।
মিরা হাসল,
– ডিভোর্স এর পরেও কি আমার যত্ন নিবে?
আমি চোখ তুলে মিরার দিকে তাকালাম। শুধু দ্বিধা ফেলে দেয় মেয়েটা।
– হুম। তখন তো তোমার কেয়ার করার জন্য ভাইয়া থাকবে।
– কোথায় তোমার ভাইয়া?
এই ফেসে গেলাম। এখন কি বলি?
– না, মানে তুমি যখন দেখেছ। তখন এখানেই কোথাও আছে। খুব তাড়াতাড়ি বের করে নিবে
আব্বু খোজার জন্য লোকজন পাটিয়ে দিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়।
– হুম।
মুখ উদাস হয়ে গেল।
– ভুল কিছু বলে ফেললাম?
– নাহ।
– তাহলে উদাস কেনো?
– এমনি..
সকালের খাবার মিরাকে খাইয়ে দিলাম। আস্তে আস্তে বিকেল গড়িয়ে এলো। মিরা রেডি আমিও রেডি। আম্মুকে বেড়ানোর কথা বলে বেরিয়েছি। আমি নিশ্চুপ গাড়ি চালাচ্ছি। মিরাও। গাড়ির বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে প্রতিদিনের মতো উৎফুল্ল নয়।আমি মোবাইল নিয়ে নীলাকে কল করলাম। প্রথম বার রিসিভ করল না। পরে নিজেই ফোন করল,
– হ্যালো নীলা।
ওপাশ থেকে,
– হুম।
– আমি ডিসিশন নিয়ে নিয়েছি।
– কি?
– মিরাকে নিয়ে এখন একজন লয়ারের কাছে যাচ্ছি। ডিভোর্সের এপ্লাই করার জন্য।
আমি মিরার দিকে তাকালাম। মিরা গাড়ির বাইরের দিকেই তাকিয়ে আছে।
– তো..
– মানে! তুমি খুশি না?
– নাহ, তোমার মতো ছেলেকে আমি ভালো না বাসলেই খুশি হতাম।
– মানে কি বলছো এসব?
– কেনো? ভুল কিছু বললাম নাকি? তুমি কি ভেবেছো, আমি কচি খুকি যে কিছু বুঝিনা। তোমরা স্বামী -স্ত্রী এক ছাদের নিচে থাকো তোমাদের মাঝে কিছু হয়নি। এটার কোনো গ্যারান্টি আছে?
– নীলা বিলিভ মি..। সত্যি আমাদের মাঝে কিছু হয়নি। তুমি মিরাকে জিজ্ঞেস করো।
– ওকে আর কি জিজ্ঞেস করব? তোমাদের মতো ছেলেদেরকে আমার চেনা আছে। আর আমি তো কখনো তোমাকে ভালোবাসিনি। শুধু টাইম পাস ছিল। কি ভেবেছিলে তুমি বিয়ে করেছো এতে আমি কষ্ট পেয়েছি। আরে এটাতো ইম্পসিবল। আমি শুধু অভিনয় করেছিলাম এতদিন। এখন তো তুমি বিবাহিত আর আমার আপদও বিদায়।
– নীলা তুমি এতোটা নিচে নামতে পারলে।
– আরে রাখ তোর ডায়লগ......
#_চলবে
কেমন লাগলো জানিয়ে যাবেন প্লিজ?